Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

আল মামুন জীবন ও শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ১ দিন পেরিয়ে গেলেও পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে এখন পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে অফিসের ফাইলপত্র জ্বলছে, উঠছে ধোঁয়া। 

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় জেলা শহরের প্রবেশদ্বার করতোয়া বীজ সংলগ্ন পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। এ দিকে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বেশ কিছু ব্যক্তির বাড়িতে এখন পর্যন্ত কয়লা থেকে ধোয়া উড়তে দেখা গেছে। 

দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিম পাশে পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের পুলিশ বক্স পুড়ে গেছে। ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করা জানালার কাচ বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অফিসের ভেতরে থাকা মোটরসাইকেল, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবপত্র এবং ফাইল পুড়ে গেছে। 

ট্রাফিক অফিসে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রট্রাফিক অফিসে এসব ভাঙচুর ও পুড়ে যাওয়া কয়লা দেখছিলেন নিমনগর গ্রামের শাওন আলী নামে এক যুবক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরপরে আমরা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি ভয়ে। সকাল থেকেও আতঙ্কে ছিলাম। বিকেলের পর পুলিশ, বিজিবিকে রাস্তায় দেখে বের হয়েছি। শুনেছিলাম ট্রাফিক পুলিশের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন এসে দেখলাম আগুন এখনো জ্বলছে, ফাইলপত্র পুড়ছে। কিছু ফাইলপত্র এখনো রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কেউ আসেনি।’

ট্রাফিক অফিস দেখতে আসা রহিমুল্লাহ নামের অপর এক যুবক বলেন, ‘আমি এখানে আসার আধা ঘণ্টা হলো। অফিসের কাউকে দেখিনি। অফিসের সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দেয়াল আর টিন ছাড়া কিছুই বাদ যায়নি।’

পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী কামরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ৭টি মোটরসাইকেল,১টি কম্পিউটারসহ ৬টি কক্ষে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র, সরকারি ফাইল এবং কাপড়চোপড় পুড়ে গেছে। গতকাল থেকে সকলেই অফিসের বাইরে। আমি এখন অফিসের দিকে যাচ্ছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরপঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আমরা পুরো টিম সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। কোনো স্থানে আগুনের খবর দিলে আমরা যাব, যদি পুলিশের নিরাপত্তা পাই।’ 

এ দিকে পঞ্চগড় শহর থেকে ‍দুই কিলোমিটার দুরে আহমাদিয়া গ্রাম, শালসিড়ি ও ফুলতলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাড়ির সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। অনেক বাড়ির আংশিক জ্বললেও ভেঙে ফেলা হয়েছে টিনের বেড়া, দরজা ও জানালা। কিছু বাড়ির পোড়া কয়লা থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। 

ফুলতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হানিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা, তখন আমরা সবাই সালানা জলসার মাঠে ছিলাম। ভয়ে বের হয়নি। সকাল ১০টার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এলাকায় আসার পর আমরা নিজ বাড়িতে ফিরেছি। যে কাপড় পড়ে সালানা জলসায় গিয়েছিলাম। সেটা ছাড়া সবই পুড়ে গেছে। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ 
 
তাঁর মতো ওই এলাকার প্রত্যেকটি বাড়ি সবকিছু পুড়ে গেছে। অনেকের গরু-ছাগল, নগদ টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যেসব নিতে পারেনি সেগুলো জ্বালিয়ে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে শনিবার বিকেল ৪টায় পঞ্চগড়ের সালানা জলসার মাঠে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আহমদিয়া মুসলিম জমা’ত এর গণযোগাযোগ, প্রেস ও মিডিয়া বিভাগের বহিঃসম্পর্ক সম্পাদক আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ির কোনো কিছুই রক্ষা করা যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে। সেটা আমরা লোক পাঠিয়ে নিরূপণ করছি। পরে আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারব।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরশনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও শহরের চৌরঙ্গীর মোড়, ধাক্কামারার মোড়, গোল চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যান চলাচলসহ লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে বেরোচ্ছেন না কেউ। আর কঠোর টহলে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও যাত্রীসংকটে অলস সময় পার করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ রিকশা ও ইজিবাইকের চালকেরা। 

উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩) নামের দুই তরুণ নিহত হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ৯ সদস্য ও ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। 

নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়লে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন আরিফুরকে উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার বিকেলে তাঁর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

অপর দিকে নিহত জাহিদ হাসান নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলার চিরোইল নোটাবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাঁকে করতোয়া নদীর ধারে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া জামাতের সালানা। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত