শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

সেকশন

 
ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তি

এত নিষেধাজ্ঞা দিয়েও যে কারণে রাশিয়াকে দমানো যাচ্ছে না

আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:১৭

 রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এএফপি ফাইল ছবি ভিন্নমতের ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে শায়েস্তা করতে নানা ধরনের অবরোধ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এসব অর্থনৈতিক ও সামরিক অবরোধ কার্যকর করতে মিত্রদেশগুলোকে নির্দেশনা মানতে নানাভাবে চাপও দেওয়া হয়। গত বছর রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর একই কৌশলে এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করতে এশিয়া ও ইউরোপের মিত্রদেশগুলোকে বারবার চাপ দিয়েছে। 

রাশিয়াকে চাপে ফেলতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মেলালেও বাস্তবে জোটটির কোনো দেশই পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটেনি। এশিয়াতেও নিরঙ্কুশ সাড়া পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের খরচ এবং সেই সঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে যেভাবে কাবু করে ফেলবে বলে আশা করা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেই আশার গুঁড়ে বালি!

পুতিনের ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের এক বছর পরও পুতিনের রাশিয়া বহাল তবিয়তে টিকে আছে। রাশিয়ার অর্থনীতিও একেবারে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়নি। উল্টো রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে! বরং যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে ভোগান্তি বাড়িয়েছে সবার। 

যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বেশ কয়েকটি দেশ মস্কোর সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বের জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বাজারে রাশিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে। এখনো বিশ্বের বৃহত্তম রাসায়নিক সার রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। রাশিয়ার নিয়মিত ক্রেতারা হঠাৎ নতুন বাজার থেকে পণ্য কিনতে উৎসাহী হয়নি, কারণ তাতে খরচ বেড়ে যায়। 

ভারত এর প্রধান উদাহরণ। যখন পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে অগ্রসর হয়েছে, ভারত তখন রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, ভারত এখন প্রতি মাসে ১২ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এক বছরের আগের তুলনায় যা ৩৩ গুণ বেশি। 

ন্যাটো মিত্র তুরস্কও মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ডিসেম্বরে দেশটি প্রতিদিন ২ লাখ ১৩ হাজার ব্যারেল রুশ ডিজেল আমদানি করেছে। ২০১৬ সালের পর থেকে এটিই সবচেয়ে বেশি। 

রাশিয়ার আমদানিও যে কোনো পরিস্থিতিতে আরও বেশি স্থিতিস্থাপক প্রমাণিত হয়েছে। কারণ মস্কো চীন এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ডিসেম্বরে তুরস্ক থেকে রাশিয়ায় আমদানি ১৩০ কোটি ডলারের বেশি। যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। 

এমনকি ইউরোপেও রুশ পণ্য আমদানি একেবারে বন্ধ হয়নি। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহাদেশটির নেতারা। কিন্তু ক্লাইমেট ক্যাম্পেইন গ্রুপ ইউরোপ বিয়ন্ড কোল–এর অনুমান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানিতে ১৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে! 

বাইডেন প্রশাসন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে এত কিছু করার পরও পুতিনকে কেন দমানো যাচ্ছে না—এর ব্যাখ্যায় ওপরের তথ্যগুলোই স্মরণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) ল্যারি সামারস। তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ এক বছর পূর্ণ হলো। এখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সর্বাধিক করতে হলে রাশিয়ার জ্বালানির দামের সীমার ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া উচিত। 

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামারস গত রোববার সিএনএনের ফরিদ জাকারিয়া জিপিএস অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পুতিনের জন্য কঠিন হয়নি। কারণ, বিশ্বের মোট জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশে অবদান রাখা চীন, ভারত এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো এতে অংশ নেয়নি। 

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, রাশিয়ার অর্থনীতি চলতি বছর দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। নিষেধাজ্ঞা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ জব্দ হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য বা জার্মানির চেয়ে ভালো করবে রাশিয়া। যেখানে তারা গত বছর রাশিয়ার অর্থনীতি ২ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে হয়েছিল। এখন বলা হচ্ছে, রাশিয়ার অর্থনীতির সম্প্রসারণ ধারাবাহিকভাবে বাড়বে। ২০২৪ সালে বাড়বে ২ দশমিক ১ শতাংশ। যেখানে ইউরোপের পাওয়ার হাউসগুলো উল্টো সংকুচিত হতে থাকবে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এ বছর দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে। জার্মানির জন্যও সুখবর নেই। এ বছর প্রবৃদ্ধি দশমিক ১ শতাংশেই থাকবে। 

সামারস বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য গত বছর যথেষ্ট বেড়েছে। এতে বোঝা যায়, এই দেশগুলো রাশিয়ায় পণ্য আনা–নেওয়ার স্টেশন হিসেবে কাজ করছে। সামারস বলেন, যে সংঘাত এখন একটি ‘অ্যাট্রিশনের যুদ্ধ’ হয়ে উঠেছে। এর অর্থ হলো—এমন একটি সামরিক কৌশল যেখানে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ক্লান্তিকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই যুদ্ধের অর্থনৈতিক বিজয় নিশ্চিত করার উপায় হলো ইউক্রেনের অর্থনীতিকে সমর্থন করা। যেখানে বিপুল বোমা হামলায় দেশটির বহু শহর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যে যুদ্ধ লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। 

সামারসের মতে, ইউক্রেন পুনর্গঠনের ব্যয় পরিশোধের চূড়ান্ত উৎস হওয়া উচিত রাশিয়ার সম্পদ। ইউক্রেন ছাড়াও, রাশিয়ার সম্পদ উন্নয়নশীল বিশ্বকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা উচিত যারা রুশ আগ্রাসনের কারণে খাদ্য এবং জ্বালানির উচ্চ দামের কারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এটি রাশিয়ার মতো আন্তসীমান্ত আগ্রাসনে জড়িত দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় সম্পদ হারানোর একটি ‘স্বাস্থ্যকর নজির’ হতে পারে। 

রাশিয়ার তহবিলগুলো আন্তর্জাতিক সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাখা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর কোষাগারের কাছে দায়বদ্ধ। এই দায়বদ্ধতা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা। ইরাক যুদ্ধের সময় এ ধরনের ‘স্পষ্ট নজির’ রয়েছে। 

তথ্য সূত্র: সিএনএন, ভয়েস অব আমেরিকা, আল জাজিরা, আইএমএফ, গ্রিড

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    এলাকার খবর

     
     

    চীন-যুক্তরাষ্ট্র নয়, ভূরাজনীতির ভবিষ্যৎ এই ৬ দেশের হাতে

    হোয়াইট হাউসে মোদির সঙ্গে কী আলাপ হবে বাইডেনের

    সহযোগিতায় আগ্রহী সৌদি–চীন

    যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি: উগান্ডা, সোমালিয়া ও নাইজেরিয়ায় কেমন প্রভাব পড়ল

    এরদোয়ানের জয়ে চিন্তার ভাঁজ পশ্চিমাদের কপালে

    এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক

    এ বছর ডেঙ্গু রোগীদের মৃত্যুর কারণ ‘শক সিনড্রোম’: স্বাস্থ্যের ডিজি

    মদের দাম চাওয়ায় বারে ভাঙচুর, মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন ছাত্রলীগ নেতা

    বরিশাল সিটি নির্বাচন

    ভোট নিয়ে শঙ্কামুক্ত নই: ফয়জুল করিম

    আন্ডারডগ মুচোভার বৈচিত্র্যতাকে ভয় সিয়াতেকের 

    খুলনায় বিএনপির ভাঁওতাবাজি শুনবে না জনগণ: তালুকদার আব্দুল খালেক