Ajker Patrika

জব্বার শহীদ মিনারে যাওয়ার নেই রাস্তা, স্মৃতি রক্ষায় নেই উদ্যোগ

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
জব্বার শহীদ মিনারে যাওয়ার নেই রাস্তা, স্মৃতি রক্ষায় নেই উদ্যোগ

‘আমাদের এই বাড়িতে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বাড়ির পাশে জেলা পরিষদের উদ্যোগে দাদার নামে একটি শহীদ মিনার করা হয়েছে। তাও এখন জরাজীর্ণ। শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই এখানে লোকজন কষ্ট করে আসেন। এরপর সারা বছর খোঁজ রাখে না কেউ। বাড়ির পাশের জমিতে দাদার নামে একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স করার স্বপ্ন দেখতেন বাবা। বাবার ইচ্ছা ছিল দাদার নামে পাওয়া পদক ও সম্মাননাগুলো সেই কমপ্লেক্স রাখবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই বাবা মারা গেলেন। আমরা চাই বাবার স্বপ্নটা পূর্ণতা পাক।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুল জব্বারের নাতনি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মেয়ে আফরোজা বেগম। 

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় শিমুলকুচি গ্রামে ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুল জব্বারের নামে করা শহীদ মিনার বেদিতে যাতায়াতে নেই কোনো সড়ক। অজপাড়া গ্রামে জব্বারের মা, ভাই, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের কবর পড়ে আছে অযত্নে। কেউ দেখিয়ে না দিলে চেনার উপায় নেই। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কবরের পাশে ছোট করে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাষা সৈনিক শহীদ আবদুল জব্বারের জন্মস্থান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। ১৯৫০ সালের শেষ দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী গাজিরভিটা ইউনিয়নের শিমূলকুচি গ্রামে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসেন। তখন আবদুল জব্বার আনসার বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে আবদুল জব্বার শহীদ হন। 

ভাষা সৈনিক শহীদ আব্দুল জব্বারের ছেলে বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র পথ খেতের আইলজব্বারের স্মৃতি রক্ষায় শিমুলকুচি গ্রামে ১৯৯৫ সালে এক একর জমিতে ‘শহীদ আবদুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই বিদ্যালয়টি এখন ‘শহীদ আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ উন্নীত করা হয়েছে। শিমুলকুচি গ্রামে ২০০০ সালে জব্বারের ছোট ভাই আবদুল কাদিরের দেওয়া ২০ শতাংশ জমিতে ‘ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার জামে মসজিদ ও পাঠাগার’ নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে গড়ে তোলা হয় ‘ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার ফাউন্ডেশন’। ২০১০ সালে আবদুল জব্বার ফাউন্ডেশন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পায়।

৯ সদস্যের কার্যকরী কমিটির মাধ্যমে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি টিনের চালা ঘরে ফাউন্ডেশনের কাজ চলত। ওই ঘরটি ঝড়ে ভেঙে পড়ায় সেখানে এখন খড়ের ঢিবি রয়েছে। বাড়ির পাশে ২০০৮ সালে জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুন স্বামীর স্মরণে ৮ হাজার টাকা খরচে ছোট আকারে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। পরে জব্বারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম একটি শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করেন। পরে ২০১০ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে শিমুলকুচি গ্রামে জব্বারের ছেলের বাড়ির পাশের জমিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। সেই শহীদ মিনারটিও এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। 

শহীদ জব্বারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়িতে যাওয়ার নেই কোনো রাস্তা। বাড়িতে যেতে হয় খেতের আইল ধরে। ২০২১ সালে নুরুল ইসলামের মৃত্যু হলে সেই বাড়িতেই কবর দেওয়া হয়। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে জব্বার জামে মসজিদের পাশেই সমাহিত করা হয়েছে জব্বারের স্ত্রী আমেনা খাতুনকে। ১৯৭৮ সালে সামাজিক কবর স্থানে জব্বারের মা সাফাতুন্নেছাকে কবর দেওয়া হয়। মায়ের কবরটি পাকা করা হলেও জব্বারের স্ত্রী ও সন্তানের কবর গুলো সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাঁশের বেড়া দিয়ে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের স্ত্রী ও তাঁর চার ভাইয়ের কবর দেখাচ্ছেন তাঁর ভাতিজা আতিক উল্লাহএলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে জব্বারের নামে করা বিভিন্ন স্থাপনাগুলো সংস্কার করার দাবি করেন। এ ছাড়া ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের স্মরণে শহীদ মিনার পর্যন্ত যাতায়াতের ৮১০ মিটার সড়ক পাকা করে দিয়ে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত গ্রামকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দাবি জানান। 

সরেজমিনে শিমুলকুচি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, শিমুলকুচি গ্রামে সীমান্ত সড়কের পাশেই শহীদ আবদুল জব্বার স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ। তাঁর ১০০ মিটার পূর্ব দিকে সামাজিক কবরস্থানে জব্বারের মায়ের কবর। সেখান থেকে ৩০০ মিটার মাটির রাস্তা পেরিয়ে গেলে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার জামে মসজিদ। পুরোনো টিনে গড়া মসজিদটা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাঁর পাশে জব্বারের স্ত্রী ও চার ভাইয়ের কবর। কবরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। শুধু জব্বারের স্ত্রীর কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

জব্বারের কবর থেকে ছেলের বাড়ির দূরত্ব ৫০০ মিটার। এ পথ অতিক্রম করতে দুটি বাড়ির আঙিনা হয়ে ১০০ মিটার খেতের আইল মাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। সেখানে জব্বারের স্মরণে একটি শহীদ মিনার যা জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে। বেদিতে বিভিন্ন গাছ জন্ম নিয়েছে। তার উত্তর পাশে জব্বার ফাউন্ডেশনের নির্ধারিত জায়গা। ঝড়ে ঘরটি পড়ে যাওয়ায় সেখানে এখন খড়ের গাদা করা হয়েছে। তার দক্ষিণ পাশেই জব্বারের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের বাড়ি। ২০২১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করায় বাড়ির আঙিনার অদূরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 

শিমুলকুচি গ্রামের বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া বলেন, জব্বারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম তাঁর বাবার নামে এখানে একটা বড় আকারে প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন দেখতেন। বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সহযোগিতা না পাওয়ায় সেটা আর হয়নি। পরে তিনি ২০২১ সালে মারা যান। 

জব্বার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও জব্বারের ভাতিজা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘দুইবার ঝড়ে ফাউন্ডেশনের ঘরটি ভেঙে পড়েছে। কার্যক্রম পরিচালনায় হালুয়াঘাট শহরে একটি ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুই বছর ধরে অনুদান বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে ওখানে আমাদের জমিতে ভাষা সৈনিক আবদুল জব্বারের নামে একটি বড় করে কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে চাই। যেখানে পাঠাগার, জাদুঘরসহ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালনা হবে। যেখানে দেশ বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা যাবে। এ ছাড়া দেশের মানুষ ও নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এই ভাষা শহীদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।’ 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা হাসান বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনের প্রস্তুতি সভায় ভাষা শহীদ আবদুল জব্বারের ভাতিজা আতিক উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সমস্যার কথা উপস্থাপন করেছেন। পর্যায়ক্রমে সেগুলো নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে ভৈরব নদ: খননেও মেলেনি সুফল বাধা ওয়াসার পাইপ

  • ২০২০ সালে নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পাউবো।
  • পাঁচ বছরের মধ্যে নদটির বিভিন্ন অংশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি 
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের ফকিরহাটে ভৈরব নদের মাঝামাঝি স্থানে ওয়াসার পাইপলাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ খননের পরও সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার ফকিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে নেওয়া খুলনা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে নৌচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক নাব্যতাসংকট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের একটি সেতুর নিচে ভৈরব নদের মাঝ বরাবর বড় পানির পাইপ রয়েছে। পাইপটি রক্ষায় নদীর ভেতর আড়াআড়িভাবে লোহার খাম্বা বসিয়ে বেড়া দেওয়ায় নদীটিতে বাঁধ তৈরি হয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে নদীগর্ভে দ্রুত পলি জমছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌচলাচল।

স্থানীয়রা বলেন, ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ নৌপথ সচল রাখতে ২০২০ সালে ভৈরব নদের সাড়ে ১৭ কিমি পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে খননের সুফল কাজে আসেনি। মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপন করা ওয়াসার পাইপলাইনের কারণে নদীটিতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় ফকিরহাট এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী মুকুন্দ পাল বলেন, নৌচলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। নৌপথ চালু থাকলে খুলনা, মোংলা বন্দর, বাগেরহাট ও বরিশালের সঙ্গে স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহন সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ওয়াসার পাইপটি ফকিরহাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক বলেন, ওই স্থানে পাইপলাইনের মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি চীন থেকে আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যন্ত্রপাতি এলে পাইপলাইনটি নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিচার পেতে জীবনের ঝুঁকি

মো. হোসাইন আলী কাজী
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএডিসির জরাজীর্ণ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনের আশ্রয় নিতে এসে ভয় নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে আদালতে। অর্ধশত বছরের পুরোনো দুটি পরিত্যক্ত ভবনের মাঝ দিয়েই বরগুনার আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল প্রবেশপথ। জরাজীর্ণ ভবন দুটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী ও আদালতের কর্মচারীরা ওই পথ ব্যবহার করছেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ভবন দুটি দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলী উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে মেশিনারিজ যন্ত্রাংশ ও কৃষি উপকরণ সংরক্ষণের জন্য দুটি দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করে। প্রায় ১৫ বছর আগে উপজেলা প্রশাসন ভবন দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলো অপসারণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

পরিত্যক্ত ওই ভবন দুটির মাঝখান দিয়েই আদালতের প্রধান প্রবেশদ্বার নির্মিত। প্রতিদিন বিচারকাজে অংশ নিতে হাজারো মানুষ ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের নিচ দিয়ে আদালতে যাতায়াত করেন। স্থানীয়দের দাবি, ভবন দুটি এতটাই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে যে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবন দুটির বিভিন্ন অংশ থেকে ইট, পাথর ও বিম খসে পড়ছে। দেয়ালজুড়ে জন্মেছে পরগাছা। ভেতরের অবস্থা এমন যে দিনের বেলায়ও সেখানে ঢুকতে ভয় পান মানুষ। ভবন দুটি ভুতুড়ে অবস্থায় পরিণত হওয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে।

বিচারপ্রার্থী আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আদালতের সামনে এভাবে দুটি পরিত্যক্ত ভবন থাকা যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি তা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. আবুবকর বলেন, আদালতের প্রবেশপথের দুই পাশে পরিত্যক্ত দুটি ভবন পড়ে আছে। ভবন ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।

জেলা বার সদস্য ও অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত ভবন দুটি অপসারণ করা জরুরি।

জানতে চাইলে আমতলী উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন দুটি বহু আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এখনো সেগুলো অপসারণ করা হয়নি, তা আমারও বোধগম্য নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত ভবন দুটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপসারণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্ল্যাটের ভেতর অন্তঃকোন্দলে এনসিপির মোতালেবকে গুলি, মাদক ও গুলির খোসা উদ্ধার: পুলিশ

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

বেনজীরের ফ্ল্যাট থেকে জব্দ ২৪৬ ধরনের মালামাল প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত