চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মার্কেট। পৌর এলাকার রাজারামপুরে মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধ কম্পিউটার-ফটোকপির দোকানের সাইনবোর্ড। এসব দোকানে ফটোকপির পাশাপাশি প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট দালালদের কারবার। পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকান ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে ঘুরে বিভিন্ন সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে তৈরি হয় পাসপোর্ট। বাইরে থেকে দালালেরা নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিস। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলেই পড়তে হয় হয়রানিতে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনে গড়ে ওঠা মার্কেটেই পাসপোর্ট দালালদের আনাগোনা। দোকানের সামনে ফেস্টুনে লেখা নতুন পাসপোর্ট প্রসেসিং ও নবায়নের কাজ করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের সামনের মার্কেটে ছয়টি এবং ডান পাশের মার্কেটে দুই দোকানে পাসপোর্ট দালালির কারবার চলে। বেশির ভাগ পাসপোর্টপ্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেন দালালেরা।
পাসপোর্ট-সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অঙ্ক ভিন্ন। সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ২ হাজার, নামের বানান এবং জন্মতারিখ সংশোধনে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসকেন্দ্রিক দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী মো. নাজমুল ইসলাম।
সেবাগ্রহীতা শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আকবর আলী জানান, আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকার নির্ধারিত ফি (ব্যাংক চালান) জমা দিয়ে চালানপত্র দেওয়ার পরও অফিসের কর্মকর্তারা নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত করেন এবং তা সংশোধন করে অন্যদিন জমা দেওয়ার কথা বলেন। তবে ঘুষ দিলেই জমা রাখা হয় আবেদন ফরম।
সদর উপজেলার সইবুর রহমান বলেন, অফিসের ভেতরে সার্ভার নষ্ট, অফিসার আসেননি, ছবিতে সমস্যা, জন্মতারিখ ভুল—এমন হাজারো সমস্যা তুলে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় পাসপোর্ট ডেলিভারি। তবে টাকা দিলেই দ্রুত মেলে পাসপোর্ট।
গতকাল দুপুরে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মো. হারুন রশিদ ও রবিউল ইসলাম তাঁদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি। হতাশ হয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।
মোবাইল ফোনে হারুন রশিদ বলেন, ‘গ্রাম থেকে এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও আবেদন ফরম জমা নেওয়া হয়নি। আমার বিয়ের কাবিননামা কাগজ নিয়ে পরের দিন আসতে বলেছেন। আগামীকাল আবার যাব; জানি না আবার কী ভুল ধরে।’
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাবার ভোটার আইডি কার্ডের মূল কপি লাগবে বলে আবেদন ফরম ফেরত দিয়েছেন। আবার কাল যাব; দেখি কী হয়।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী মো. নাজমুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। দালালদের কোনো প্রশ্রয় নেই।’ তবে অভিযোগকারীদের অফিসে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে