Ajker Patrika

প্রেম করে খালাতো ভাইকে বিয়ে, খালার হাতে প্রাণ গেল বাবার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ মে ২০২২, ১৯: ১১
প্রেম করে খালাতো ভাইকে বিয়ে, খালার হাতে প্রাণ গেল বাবার

মাসখানেক আগে ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা এলাকার খালাতো ভাই উসমানের (২৭) সঙ্গে প্রেম করেন তাসলিমা আক্তার (১৯)। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি উসমানের মা রানু বেগম। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে চলছিল দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের জেরে গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় মেয়ের বাবা রফিকুল ইসলামকে (৪০)। 

এ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে তাসলিমার খালা রানু বেগমের বিরুদ্ধে। ওই দিন গভীর রাতে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রানু বেগম (৪০) ও তাঁর ভাই আনিসুর রহমান (২০), সাদ্দাম হোসেন (১৮), উমেদ আলী (৪৮) এবং তাঁদের বাবা মন্তাজ আলী (৭০)। 

এ ঘটনার পর আজ সোমবার বিকেলে নিহতের বড় ভাই বাদল মিয়া বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনসহ আরও চার/পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। 

জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল পরিবারের অমতে খালাতো ভাই উসমানকে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় সংসার পাতেন তাসলিমা আক্তার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এক হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি উসমানের মা রেনু বেগম। সেই জেদে গতকাল রোববার সন্ধ্যার দিকে নগরীর মাসকান্দা দক্ষিণপাড়া শাহী মসজিদের পাশের একটি দোকানের ভেতর তাসলিমার বাবা রফিকুল ইসলামকে ডাকেন। এরপর ছুরিকাঘাত করে তাঁকে হত্যা করেন রেনু বেগম ও তাঁর দুই ভাই আনিসুর রহমান ও সাদ্দাম হোসেন। 

স্থানীয়দের বর্ণনায় উঠে আসে রফিকুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সেই ভয়াবহ দৃশ্য। প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান জানান, রোজার মধ্যে প্রবাসী উসমানকে বিয়ে করেন তাসলিমা। তাঁরা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই-বোন। বিয়েটি সবাই মেনে নিলেও ছেলের মা রানু বেগম কোনোভাবেই তা মানতে চাননি। প্রায় সময় এ নিয়ে তাঁদের দুই পরিবারের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হতো। গতকাল সন্ধ্যার দিকে রফিকুল ইসলামকে দোকানে ডেকে এনে প্রথমে রানু বেগম ময়লা রাখার ঝুড়ি দিয়ে মারধর শুরু করেন। পরে রানু বেগমের দুই ভাই আনিসুর রহমান ও সাদ্দাম হোসেন দৌড়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় রানু বেগমও ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। পরে রফিকুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে নেন। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

নিজের ছোট বোনের জামাইকে মানুষ এভাবে হত্যা করে ভাবতেও অবাক লাগছে জানিয়ে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন স্থানীয় আকবর আলী। 

এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বিলাপ থামছে না নিহতের পরিবারের সদস্যদের। হত্যায় জড়িত নিজের খালা ও মামাদের ফাঁসি চান এতিম হওয়া চার ভাইবোন। 

এ বিষয়ে তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করাটা কি খুব অন্যায় হয়েছে? মানুষ কি তা করছে না! এর জন্য আমার বাপকে মেরে ফেলতে হবে এভাবে?’ এই বলে অঝোরে কান্না শুরু করেন তাসলিমা। 

তাসলিমার স্বামী মো. উসমান বলেন, ‘আমার মা, মামারা এমনভাবে আমার শ্বশুরকে হত্যা করবে কল্পনা করতে পারছি না। আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি সেটা তো অন্যায় করিনি। আমি তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’ 

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে অভিযুক্ত রানু বেগম বলেন, ‘আমরা রফিকুলকে মারার জন্য মারিনি। তবে কীভাবে কি হয়ে গেল বুঝতে পারিনি।’ 

জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, ‘মূলত বিয়েকে কেন্দ্র করেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত রানু বেগমসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে আরও অন্যকোনো রহস্য আছে কি না, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...