Ajker Patrika

পদ্মা সেতু, স্যাটেলাইট ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৭: ৩৫
পদ্মা সেতু, স্যাটেলাইট ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী

দেশের বড় প্রকল্পগুলো নিয়ে অনেক সমালোচকেরা অর্বাচীনের মতো মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে সংযতভাবে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘তাঁরা অর্বাচীনের মতো একেকটা কথা বলবে আর মিথ্যে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। এটা কিন্তু গ্রহণ করা যায় না।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হন তিনি। 

জরুরি অবস্থাকালীন সরকারের পদলেহনকারীরা বেশি সমালোচনা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাই বেশি কথা বলে, তারাই সমালোচনা বেশি করে, যারা ইমার্জেন্সি সরকারের পদলেহন করেছে, চাটুকারিতা করেছে, তারাই সমালোচনা বেশি করে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। যাই হোক কে কী বলল সেটা নিয়ে আমি কখনো ঘাবড়াইও না, চিন্তাও করি না। দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষের জন্য যেটা করা ন্যায় সংগত সেটাই করি।’ 

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ নিয়ে সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা। তারপর আসলো পদ্মা সেতুর রেললাইন। ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা সেতুর রেললাইন করার কী দরকার ছিল। কারা চলবে এই রেল লাইনে? আমি অপেক্ষা করছি রেললাইন যখন চালু হবে তখন কেউ চলে কি না। তখন এই মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ধরে নিয়ে দেখানো দরকার যে এই রেল সেতুতে মানুষ চড়ে কি না।’ 

পদ্মা খরস্রোতা নদী উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেইখানে...রেললাইন নিয়েও তাদের সমালোচনা, এত টাকা কেন খরচ করা হলো। কিন্তু এই একটা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা আসবে, এই মানুষগুলোর চলাচল, পণ্য পরিবহন থেকে সর্বক্ষেত্রে সেটা তারা একবার ভেবে দেখছেন না। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আর এখন রেলে করে তারা চলে আসবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই রেলসেতু তো সেই মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত হচ্ছে। কাজেই ভবিষ্যতে এটা আমরা পায়রা পোর্ট যখন আমরা করব পায়রা পোর্ট পর্যন্ত যাতে সংযুক্ত হয় সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন নেই বলে আমরা একটু ধীর গতিতে যাচ্ছি।’ 

পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজের টাকায় করা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের সমালোচনা ৪০ হাজার কোটি টাকা নাকি আমরা ধার করেছি। এখানে যারা এই কথাগুলো বলছে তাদের স্পষ্ট বলতে চাই যে পদ্মা সেতুর একটি টাকাও আমরা কারও কাছ থেকে ঋণ নেয়নি, ধার নেয়নি। এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা তাদের জানা উচিত। একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি।’ 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমনকি যখন আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করলাম তখনো তারা বলল এটার কী দরকার ছিল। মানে যাই করবেন তাতেই বলবে এটার কী দরকার ছিল। তাদের জন্য দরকার না থাকতে পারে আমাদের দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের মতো দুই চারজন যারা দেশের অর্থ সম্পদ ভোগ করে তাদের কথা ভাবি না। ভাবি দেশের তৃণমূলের মানুষ যারা অসহায়, যারা শোষিত, যারা বঞ্চিত, আমি তাদের কথা ভাবি। তাদের কল্যাণ যাতে হয় আমরা সেটা দেখি। শুধু বড়লোকদের দুই চারটা ছেলে মেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করবে আর আমার গ্রামের ছেলে মেয়েরা ব্যবহার করবে না সেটা তো হয় না।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যাতে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, সমস্ত তথ্য আদান প্রদান করতে পারে, বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ করতে পারে, বিশ্বটাকে তাদের নিজের হাতের মুঠোয় আনতে পারে আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নেই।’ 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ দেখলাম ইদানীং একটা কথা খুব বেশি প্রচার করার চেষ্টা করছে। একটা হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তারা টাকার অঙ্ক দিয়ে দেখাতে চাচ্ছেন যে এত টাকা খরচ করার দরকারটা কী ছিল?’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলব, আমরা যখন সরকার গঠন করে আমরা রেন্টে পাওয়ার প্ল্যান্ট এনে কাজ শুরু করলাম তখনো এরা বলছেন এটার দরকারটা কি ছিল। এতে নাকি ভীষণ দুর্নীতি হচ্ছে। আর আজকে আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট যেটা সব থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব, কোনো পলিউশন নেই, আনাতে খরচ বেশি কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী আর তা ছাড়া আমরা তো এটা একটি দেশের সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়েই এটা করেছি। সেখানে আমাদের টাকার অঙ্ক কম। আমরা টাকা পেয়েছি এবং সেটা আমাদের শোধ দিতে হবে ৫০ বছরে।’ 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটাই করতে গিয়েছি সেখানেই তাদের সমালোচনা। কাজেই কিছু লোক আছে তাদের সব সময় সমালোচনা করাটা অভ্যাসই থাকে। যত ভালো কাজ করেন না কেন নিজেদেরটা তারা দেখে, নিজেদেরটা তারা বোঝে। কিন্তু জনগণের ভালো মন্দ বোঝে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি বলে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট সচল। কাজেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পেরেছি যেটা সেই একষট্টি সালে করার কথা। আইয়ুব খানের আমলে তখন ১৯৬২ সালে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। একটা তখনকার পূর্ব বাংলায়, আরেকটা পশ্চিম পাকিস্তানে। আমাদের সেই মুলোটা ঝুলিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে আমাদের এখানে করা হলো না, দ্বিতীয়টাও পশ্চিম পাকিস্তানে করা হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের একটা লক্ষ্যই ছিল। আজকে আমরা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। এর বিদ্যুৎটা যখন আসবে সেটা তো আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। অর্থনীতি আরও সচল হবে, আরও চাঙা হবে এবং এটাতো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কাজেই এটা নিয়ে এতে সমালোচনা কেন। এটা নিয়ে কারা কথা বলছেন? গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ গেছে সেটা তাদের পছন্দ না। তারাই খাবেন, ভালো থাকবেন আর আমার গরিব মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরবে। এটাই তারা চায়।’ 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ যাবে তাতে যে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তিটা কতটা তৈরি হবে, মজবুত হবে সেটা তারা চিন্তা করেন না। এর থেকে যে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে এটাও তারা ভাবেন না। কারণ তারা তো এখন বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। যখন ১০ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেতেন না তখন হয়তো বিদ্যুতের চাহিদাটা তারা বুঝতেন।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। আর সেই বিদ্যুতে ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলছে আর এই বেসরকারি খাতে টেলিভিশন আমিই উন্মুক্ত করে দিয়েছি আর সেখানে বসেই তারা সমালোচনা করে যাচ্ছেন।’

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা

  • ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক।
  • নিরাপত্তার কারণে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা বিএনপির এক প্রার্থীর।
  • প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও পুলিশ।
  • প্রার্থীর ঝুঁকি বিবেচনায় ক্যাটাগরি করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রস্তুতি।
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৭
জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় প্রার্থীরা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টা এবং সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রচারের মাঠে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্রার্থীদের পুলিশের নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে পুলিশ বলেছে, প্রার্থীর ঝুঁকি বিবেচনায় ‘ক্যাটাগরি করে’ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলি করে দু্র্বৃত্তরা। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর ওপর প্রকাশ্যে হামলার ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি জুলাই যোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান। প্রচারে নিরাপত্তাঝুঁকি ও শঙ্কার কথাও বলছেন অনেকে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণ কম হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে।

অবশ্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঝুঁকি বিবেচনায় নিরাপত্তার বিধান করা হবে। কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন ও ঝুঁকিতে আছেন মনে করেন, তিনি পুলিশের কাছে আসবেন, আমরা তাঁর ঝুঁকি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেব।’

নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, পারিবারিক ও নিরাপত্তাসহ একাধিক কারণে তিনি এই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সিকিউরিটি কনসার্ন হচ্ছে আমার পরিবার। আমার পরিবারের সঙ্গে এই জায়গায় নেগোসিয়েশন করতে পারছি না। তবে বিষয়টা এমন না যে সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেই কারণে সরে যাচ্ছি।’

তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থী, ভোটারসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনানুষ্ঠানিক গণসংযোগেও নেমেছিলেন। কিন্তু হাদির ওপর হামলার পর তাঁরা মাঠে নামতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে নির্বাচনী মাঠে এখন প্রার্থীদের তেমন তৎপরতা নেই বললেই চলে।

জানতে চাইলে গতকাল কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী আমির হামজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনার পর আমরা সতর্ক রয়েছি। পুলিশ সুপার, ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা হয়তো সামনে নিরাপত্তা দেবে। প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকায় এখন বাইরে কোথাও যাই না। এখন যখনই কোথাও যাই, অন্তত ১৫ জন সঙ্গে নিয়ে যাই।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনে করছেন, বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন এনসিপির প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধারা। হাদি সম্মুখসারির জুলাই যোদ্ধা। এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা।

নরসিংদী-২ আসনে এনসিপির মনোনীত প্রার্থী সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ, তবে আমরা ভীত নই। আমি যে আসন থেকে নির্বাচন করব, সেখানে নিয়মিত আমাকে ও আমার নেতা-কর্মীদের, এমনকি সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতি ছেড়ে দিতে আমার নেতা-কর্মীদের ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে।’

এর আগে ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের চালিতাতলীতে বিএনপির প্রার্থী এরশাদউল্লাহর গণসংযোগের গুলির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা নিহত এবং এরশাদউল্লাহসহ দুজন আহত হন। বাবলাকে হত্যার জন্য ওই হামলা হলেও আতঙ্ক ছড়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

এদিকে হাদির ওপর হামলার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করেন। সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। গত সোমবার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের অনুকূলে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং তাঁদের জন্য সশস্ত্র ব্যক্তি (রিটেইনার) নিয়োগ নীতিমালা-২০২৫ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৪।

সূত্র জানায়, রোববার ও সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে করণীয় ঠিক করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। করণীয় ঠিক করতে প্রতিটি রেঞ্জ ও মহানগর পুলিশকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন আইজিপি।

তবে ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রফিকুল ইসলাম জামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, অদৃশ্য একটি ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, অনেকেই নির্বাচন করতে দিতে চাইছে না। স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুরা এখনো সক্রিয়। তারা পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছে, এটি আরও ভয় তৈরি করছে।

একই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ফয়জুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বস্তি বোধ করছেন না। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক করতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ঝুঁকি বিবেচনায় প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে নিশ্চিত করা হবে। এগুলো হলো, অতিঝুঁকিতে, মাঝারি ঝুঁকিতে ও কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তি। ঝুঁকিতে থাকা প্রত্যেক প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধার সঙ্গে আলোচনা করে, যেভাবে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সেই অনুযায়ী নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ জানায়, ইউনিফর্ম পরা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, যা নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকবে। প্রার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রনেতা, জুলাই যোদ্ধা, শিক্ষকসহ আরও কয়েকটি শ্রেণির ব্যক্তিও এই নিরাপত্তার আওতায় থাকবেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ইতিমধ্যে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং এ বিষয়ে কাজ চলছে।

যেসব প্রার্থীর নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি, তাঁরা সার্বক্ষণিক গানম্যান পাবেন। প্রয়োজনে বাসা ও অফিসে স্থায়ীভাবে গানম্যান নিয়োজিত থাকবে। এক্ষেত্রে জুলাই যোদ্ধা ও অতিঝুঁকিতে থাকা প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল্যায়নে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হলে প্রার্থীরা নিজেরা সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতে পারবেন, না পারলে পুলিশের পক্ষ থেকে দেহরক্ষী দেওয়া হবে। বাসা, অফিস ও যাতায়াতের সময় এ নিরাপত্তা কার্যকর থাকবে।

ঝুঁকিতে থাকা প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধাদের গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও চলাচলের সময়সূচি সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে আগাম জানাতে বলা হয়েছে, যাতে পুলিশ আগে থেকেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিতে পারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং থানার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী গণসংযোগ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি একটি সমন্বিত ‘নিরাপত্তা প্রটোকল’ তৈরি করছে, যেখানে প্রার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা থাকবে।

আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, প্রার্থী ও জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সব ইউনিট ও থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনিরাপদবোধ করলে যে কেউ পুলিশের সহায়তা চাইতে পারবেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কেউ ক্ষমতা চায়। তাই দেশে এই অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোরও উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের সদাচরণ করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। প্রার্থী ও ভোটারদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল

সাম্য-ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার শপথ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি, সাভার
মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেউ আসেন দল বেঁধে, কেউ একা। গতকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে মানুষের ঢল। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেউ আসেন দল বেঁধে, কেউ একা। গতকাল জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে মানুষের ঢল। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

মহান বিজয় দিবসে (১৬ ডিসেম্বর) পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতি।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল মঙ্গলবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে। শহীদদের স্মরণে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে তারা।

এরপর পর্যায়ক্রমে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

মঙ্গলবার সকাল থেকে স্মৃতিসৌধ এলাকায় মানুষের ঢল নামে। হাতে লাল-সবুজের পতাকা, মুখে বিজয়ের গান, হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা—শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একত্র হয়।

স্বাধীনতার ৫৫তম বছরে প্রবেশের এই ঐতিহাসিক দিনে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ‘শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে দেশকে ন্যায়, সাম্য ও মানবিকতার পথে এগিয়ে নিতে হবে।’

সাভারের উত্তরপাড়া থেকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন কলেজছাত্র বিশাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখতে চাই।’

ব্যবসায়ী সুমন ঘোষ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় আজও আমাদের প্রেরণা।’

বিএনপির পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, জামায়াত ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দেশের শান্তি কামনা করেনি, এমনকি এখনো করে না। তারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, এখনো চায় না। তারা চায় দেশটা একটা বিপাকে পড়ুক, একটা খারাপ অবস্থায় চলে যাক, অশান্তিময় থাকুক।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার ও পুলিশের ওপর নির্ভর করে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। আমাদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে।’

এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণসংহতি আন্দোলন প্রভৃতি দলও জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানায়।

বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন থেকে আমরা স্বাধীন হলাম, তখন থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটা গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার। অনেক বছর পর এখন আবার মনে হচ্ছে, ওই জিনিসগুলো আমরা অর্জন করতে পারিনি। পারিনি বলেই তো গণ-অভ্যুত্থান হলো, বিপ্লব হলো।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। আমরা আশা করি, এ নির্বাচনের মাধ্যমে একটা ভিত্তি স্থাপন হবে। যে ভিত্তি গণতন্ত্রকে যেমন সুদৃঢ় করবে, তেমনি জনগণের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বরের যে প্রত্যয়, সেটা আমাদের মধ্যে ছিল দেখেই আমরা ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনর্নির্মাণের একটা সুযোগ করে নিতে পেরেছি। এখানে এলে ভালো লাগে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা আছেন, আহত মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা আছেন, যাঁরা ওই সময়ে নানান আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মন সিক্ত হয়।’

এদিকে বিজয় দিবস ঘিরে সাভারে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। গত সোমবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত আমিনবাজার থেকে স্মৃতিসৌধ এবং বাইপাইল থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ ত্যাগের পর সড়কের ওই অংশে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও দর্শনার্থীদের জন্য চার স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। সাভারের আমিনবাজার থেকে শুরু করে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি পোশাকে এবং সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৪ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবসে উদীচীসহ তিন সংগঠনের পতাকা মিছিল ও মুক্তির গান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩০
‘কণ্ঠে ধরো বিজয়ের গান, হাতে নাও মুক্তির পতাকা’ স্লোগানে মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
‘কণ্ঠে ধরো বিজয়ের গান, হাতে নাও মুক্তির পতাকা’ স্লোগানে মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবস, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে হারিয়ে বিজয় অর্জনের ৫৪তম বার্ষিকীতে পতাকা মিছিল ও মুক্তির গান পরিবেশন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন।

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেটের সামনে থেকে শুরু হয়ে পতাকা মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন উদীচী সংগীত বিভাগের শিল্পীরা। তাঁরা পরিবেশন করেন—‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’, ‘মাগো ভাবনা কেন’, ‘গেরিলা আমরা, আমরা গেরিলা’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’সহ বেশ কিছু গান। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ সেলিম, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ও বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে।

সমাবেশে মাহমুদ সেলিম বলেন, বিজয়ের ৫৪ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থামায়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধের নিত্যনতুন ইতিহাস তৈরি করে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব মিথ্যাবাদী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে না দিতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না। এসব অপশক্তিকে রুখে দিতে প্রয়োজনে একাত্তরের মতোই প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান মাহমুদ সেলিম।

মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস, স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসে মুক্তি, আত্মত্যাগ ও অগ্রযাত্রার প্রতীক। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য পতাকা মিছিল ও মুক্তির গান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা বিজয়ের চেতনাকে ধারণ করে সাম্য, মানবিকতা ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্নকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।’

এর আগে বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয়ের দিনে বর্ণিল সাজে লাল–সবুজের দেশ

মহান বিজয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালি জাতি নিজেদের জন্য বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংযোজন করেছিল এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে। দিবসটির প্রথম প্রহরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা। দিবসটিকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী মনোজ্ঞ ফ্লাই পাস্ট, প্যারা জাম্প ও বিশেষ অ্যারোবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। বিজয় দিবস উদ্‌যাপনে নানা আয়োজন নিয়ে এই ছবির গল্প:

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৮
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।

আকাশে লাল-সবুজ আর নীল ধোঁয়ার রেখা ও অ্যারোবেটিক ফ্লাই পাস্টে এয়ার শো।
আকাশে লাল-সবুজ আর নীল ধোঁয়ার রেখা ও অ্যারোবেটিক ফ্লাই পাস্টে এয়ার শো।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।

সশস্ত্র বাহিনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সশস্ত্র বাহিনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মোট ৫৪ প্যারাট্রুপার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে পতাকা বহন করে স্কাই ডাইভ প্রদর্শন করেন।

মহান বিজয় দিবসে শিশুর মুখে বিজয়ের রং।
মহান বিজয় দিবসে শিশুর মুখে বিজয়ের রং।

মহান বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান।
মহান বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান।

বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের কুশল বিনিময়।
বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের কুশল বিনিময়।

বিজয় দিবসে পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল।
বিজয় দিবসে পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল।

শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
শহীদদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার স্মরণে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বিজয় দিবসে পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল।
বিজয় দিবসে পতাকা হাতে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত