Ajker Patrika

বড় পরিবার ভেঙে এখন বহু পরিবার

বড় পরিবার ভেঙে এখন বহু পরিবার

আমাদের ছেলেবেলায় বোদায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবার ছিল দত্ত পরিবার। এই দত্ত পরিবারের এক সদস্য আবার আমার বন্ধু। ফলে এই পরিবারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল সেই ছেলেবেলাতেই। 

দত্তবাড়ির অভিভাবক ছিলেন রাধিকা কিশোর দত্ত। ১০ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের পিতা ছিলেন তিনি। বিয়ে করেছিলেন দুটি। প্রথম পক্ষের ছয় পুত্র সন্তান। তাঁরা হলেন—হৃদয় কিশোর দত্ত (ডাক নাম ছিল ডালু), প্রফুল্ল কিশোর দত্ত, অনিল কিশোর দত্ত, সুকুমার দত্ত, শিবেন কিশোর দত্ত ও সনৎ কিশোর দত্ত। প্রথম স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এই ঘরে চার ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলেদের নাম যথাক্রমে তারাপদ দত্ত (ডাক নাম মঙ্গল), বিজন বিহারী দত্ত (ডাক নাম বাবুল), শ্যামল কিশোর দত্ত ও অমল কিশোর দত্ত। মেয়েদের নাম অঞ্জলি, জ্যোৎস্না, মঞ্জু ও ইতি। ১৪ ছেলেমেয়ে নিয়ে বিরাট সংসার, বড় পরিবার। বাড়িটাও ছিল অনেক বড়। বিরাট ছিল বাড়ির চৌহদ্দি। 

দত্ত পরিবারের বিজন বিহারী আমার বন্ধু। একেবারে প্রথম শ্রেণি থেকেই বিজন আমার বন্ধু নয়। ও ছোট থাকতে ওর দাদার সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে চলে গিয়েছিল। তাই ওর শিক্ষাজীবন শুরু হয় আশ্রমে। পরে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বোদা প্রাইমারি স্কুলে এসে ভর্তি হয় এবং বলা যায় একেবারে প্রথম দিন থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব পাকাপাকি হয়ে যায়। তার আগে অবশ্য সামান্য ভূমিকা আছে। চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়ে বিজন ছুটি কাটাতে বোদা এসেছিল। কিন্তু ছুটি শেষে ও আর আশ্রমে ফিরে যেতে চায় না। জোর করে পাঠানোর চেষ্টা করা হলে বিজনের সে কি চিৎকার করে কান্না! টেনেহিঁচড়েও ওকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত নেওয়া যায়নি। আমাদের বাসা ছিল কাছাকাছি। আমার প্রয়াত বন্ধু ইউসুফ মন্টুর বাসায় আমরা তখন ভাড়া থাকতাম। ওই বাসার সামনে দিয়েই রাস্তা। বিজনকে যখন জোর করে বাসে ওঠানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ওর কান্না শুনে আমরা আশপাশে যারা ওর সমবয়সী ছিলাম, তারা সঙ্গ নিলাম। আমাদের সঙ্গে ওর আগে থেকেই আলাপ-পরিচয় ছিল। আমাদের দেখে বিজনের কান্নার বেগ বেড়ে গিয়েছিল। ওকে জোর করে আশ্রমে না পাঠানোর জন্য আমরা খুদে বাহিনী জোর সুপারিশ করেছিলাম। বিজন বোদায় থেকে গেল। বিজনের আশ্রমে যাওয়ার কারণ ওর দাদা সুকুমার দত্ত। তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই সংসারত্যাগী হয়ে সন্ন্যাস জীবন বেছে নিয়েছিলেন। আমরা তাঁকে বলতাম সাধু দাদা। 

বিজনের বাবা, আমাদের জ্যাঠা মশাই, রাধিকা কিশোর দত্ত ছিলেন আপাদমস্তক একজন নির্বিরোধ ভালো মানুষ। তিনি কখনো কারও সঙ্গে কোনো ঝুটঝামেলায় জড়িয়েছেন বলে শোনা যায়নি। নিজের জায়গাজমির তদারকি ও সন্তানদের সময় দেওয়া ছাড়া তাঁকে আর কিছু করতে দেখেছি বলে মনে হয় না। তবে জায়গাজমি নিয়ে কেউ কোনো সমস্যায় পড়ে তাঁর কাছে এলে তিনি সৎ পরামর্শ দিতেন। জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো তিনি ভালো বুঝতেন। তিনি সেকালের ‘মাইনর’ পাস ছিলেন। তিনি এবং সিরাজউদ্দিন আহমেদ একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। দুজনে ভালো বন্ধু ছিলেন। জমিজমার কাগজপত্র বিষয়ে দুজনেরই যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। সিরাজ সরকার সাহেব ‘দেউনিয়াগিরি’ করতেন, রাধিকা বাবু দেউনিয়া হিসেবে ততটা খ্যাতি পাননি। দেউনিয়াগিরি হলো আসলে মাতব্বরি। 

আগের দিনের মানুষ কতগুলো মূল্যবোধ মেনে চলতেন। নিজের সন্তানকে যেমন স্নেহ করতেন, সন্তানের বন্ধুদেরও একই চোখে দেখতেন। বিজনের বাবা এবং মায়ের কাছে বিজন, আর আমি আলাদা ছিলাম না। বিজনের দাদাদের কাছেও আমি ছোট ভাই-ই ছিলাম। 

বিজনের বাবা রাধিকা জ্যেঠামশাই একজন পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তিনি হাড় ভাঙার ভালো চিকিৎসা জানতেন। কারও হাত-পা ভেঙে বা মচকে গেলে তিনি তেল মালিশ করে ভালো করে তুলতেন। এক ধরনের ফিজিওথেরাপি। অনেকেই তাঁর ব্যবস্থাপনায় উপকার পেয়েছে। কিন্তু এই সেবাদানের বিনিময়ে তিনি কারও কাছে কোনো পয়সা নিতেন না। কেউ সেধে দিতে গেলেও রাগ করতেন। 

বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও তিনি ভেতরে-ভেতরে একটু রাগী মানুষই হয়তো ছিলেন। তবে সে রাগের প্রকাশ কখনো ঘটত না। তিনি বৈলাঅলা খড়ম পায়ে পরতেন। সে সময় বাড়িতে খড়ম পরারই নিয়ম ছিল। কেউ পরতেন ফিতাঅলা খড়ম। একটু বয়স্করা বৈলাঅলা খড়ম। তো, পুত্রসন্তানরা কখনো অবাধ্য হলে ওই খড়ম দিয়েই তাদের শায়েস্তা করতেন জ্যেঠামশাই। বিজনের পিঠেও দু-চার ঘা পড়েছে। 

আমরা পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। এখনকার মতো তখন তো আর কোচিং বাণিজ্য ছিল না। আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন শৈলেন কুমার মোদক। ভীষণ রাগী। একটু এদিক-ওদিক হলেই আর রক্ষে ছিল না। তাঁর হাতে মার খায়নি—এমন ছাত্র পাওয়া যাবে না। আমি ছিলাম ব্যতিক্রম। আমাকে পিটুনি দেওয়ার কোনো উপলক্ষ স্যার পাননি। একবার এক উপলক্ষ তিনি তৈরি করেছিলেন, প্রয়োগ করার সুযোগ আমি তাঁকে দিইনি। ছাত্র খুব একটা খারাপ ছিলাম না। শৈলেন স্যার মনে করলেন, তিনি একটু গাইড করলে বৃত্তি পাওয়া সহজ হবে। তিনি আমাকে আর বিজনকে প্রতি সন্ধ্যায় দত্তবাড়িতে গিয়ে পড়ানো শুরু করলেন, কোনো টাকাপয়সা না নিয়ে। শুধু রাতের খাবার খেতে হলো জ্যেঠিমার হাতে। জ্যেঠিমা তাদের বড় ঘরের মেঝেতে কী যত্নে যে পিঁড়ি পেতে বসতে দিয়ে আমাদের সুস্বাদু সব খাবার পরিবেশন করতেন! সব শেষে ঘন জ্বালের এক বাটি দুধ, যার ওপরে ভাসত পুরু সর। আমার আবার ছিল দুধ-ভাতে ভীষণ লোভ। আমি যতটা না পড়ার আগ্রহে ও বাড়ি যেতাম, তার চেয়ে বেশি যেতাম দুধের বাটির লোভে। 

লোভের কথায় আরেকটি বিষয় মনে পড়ল। একবার আমার খ্রিষ্টান হওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল। আমার তখন ধারণা ছিল খ্রিষ্টান হলে বুঝি মিশনারিরা বিদেশ নিয়ে যাবে। বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা থেকেই খ্রিষ্টান হওয়ার আগ্রহ। দিনাজপুর মিশনে গিয়ে খ্রিষ্টান হওয়া যাবে বলে কারও কাছে হয়তো শুনেছিলাম। আমি বিজনকে পটালাম। ওকে পটানো সহজ কাজ ছিল না। ও আশ্রমে ছিল, দাদা ‘সাধু’। ও নিজেও একটু ‘ধার্মিক’ টাইপের ছিল (এখনো আছে। আমি ওকে সে জন্য গোসাই বলি)। তাই হিন্দুত্ব বাদ দিতে ও রাজি হচ্ছিল না। আবার আমাকে অখুশি করতেও চাচ্ছিল না। যা হোক, মূলত আমার চাপাচাপিতেই বিজন আমার সঙ্গে দিনাজপুর যেতে রাজি হলো। একদিন ভোরে আমরা বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে খ্রিষ্টান হওয়ার জন্য পালালাম। তখন দিনাজপুর যেতেও অনেক সময় লাগত। আমরা দিনাজপুর পৌঁছে গেলাম খ্রিষ্টান মিশনে। একজন ফাদার এসে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। কিছু হয়তো খেতেও দিয়েছিলেন। জানতে চাইলেন আমাদের মিশনে যাওয়ার উদ্দেশ্য। আমি অকপটে বলি, খ্রিষ্টান হতে চাই। তিনি আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া দুই কিশোরের নির্দোষ চোখমুখ দেখে ফাদার আর কতটুকু কি অনুমান করতে পারলেন, জানি না। বললেন, কেন তোমরা খ্রিষ্টান হতে চাও? 

আমি চটপট জবাব দিই, বিদেশ যাওয়ার জন্য। জবাব শুনে পাদ্রি বাবা খুশি হলেন বলে মনে হলো না। তিনি একটু গম্ভীর মুখে বললেন, বালক তোমার ভেতর লোভ ঢুকেছে। তুমি প্রভু যিশুর প্রতি ভালোবাসা থেকে খ্রিষ্টান হতে চাও না। বিদেশ যাওয়ার লোভে খ্রিষ্টান হতে চাও। 

যাক, আমার আর খ্রিষ্টান হওয়া হলো না। সে রাতটা দিনাজপুরে বিজনের দাদার বাসায় কাটিয়ে পরদিন বাড়ি ফিরে আসি। বিজনের দাদা-প্রফুল্ল কিশোর দত্ত পড়াশোনার জন্য দিনাজপুরে গিয়ে ওখানেই স্থায়ী হয়েছিলেন। খ্রিষ্টান হতে না গেলে তাঁর সঙ্গে হয়তো পরিচয়ও হতো না। প্রফুল্লদাও খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ওই এক রাত থেকেই বুঝেছিলাম, তিনি কতটা সংবেদনশীল মনের অধিকারী ছিলেন। মনে আছে, গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল কারও ডাকাডাকিতে। হারিকেনের মৃদু আলোতে দেখলাম, বৌদি দাদাকে ঠেলছেন আর বলছেন, ‘অ্যাই ওঠো না গো।’ দাদা ঘুম জড়ানো কণ্ঠেই জানতে চান, ‘কেন, কী হয়েছে?’ বৌদি বলেন, ‘তেষ্টা পেয়েছে। এক গ্লাস জল গড়িয়ে দাও।’ 

দাদা ধড়ফড় করে উঠলেন এবং কলসি থেকে গ্লাসে জল ঢেলে বৌদিকে দিলেন। তৃষ্ণা নিবারণ করে বৌদি আবার শুয়ে পড়লেন। স্ত্রীরাই শুধু স্বামীর সেবা করে না, স্বামীরাও স্ত্রী সেবা করে—প্রফুল্লদার কাছ থেকে সেই বালকবেলায় সেটা শিখেছিলাম। 

দত্তবাড়ির ১০ পুত্র সন্তানের মধ্যে বেঁচে আছেন পাঁচজন। পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন পাঁচজন। সবচেয়ে যে ছোট, সেই অমলের অকাল বিদায় সবাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, ব্যথিত করেছে। অমন হাসিখুশি, প্রাণবন্ত ছেলেটা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জীবনযুদ্ধে পরাজিত হলো। বিএ পাস করে সোনালী ব্যাংকে চাকরি নিয়েছিল। ২৪-২৫ বছরের টগবগে যুবক, বন্ধুবৎসল, সদালাপী অমলকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। 

হৃদয়দা, প্রফুল্লদা, সনৎদা পরিণত বয়সেই চলে গেছেন। কিন্তু তারাপদদার বিদায়টাও কিছুটা অকালেই হয়েছে। বোনদের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট, সে-ই চলে গেছে সবার আগে। ওর নাম ছিল ইতি। নামটা রাখার পেছনেও বুঝি বিশেষ তাৎপর্য ছিল। ১৪ সন্তানের শেষ জন। তাই কি ইতি? বাবা-মা হয়তো আর সন্তান কামনা করেননি! ইতি আমাদের ছোট বোনের মতোই ছিল। ওর বিয়ে হলো বোদারই সুনীল কর্মকারের সঙ্গে। সুনীল আবার সম্পর্কে আমার মামা। বয়সে আমার ছোট। আমার ছোট কাকার নাম ছিল সুনীল সরকার। সে জন্য, নাকি অন্য কোনো কারণে ঠিক মনে নেই, আমার ছোট কাকিমা সুনীল কর্মকারের মাকে ‘মা’ ডাকতেন। এভাবে দুই পরিবারের মধ্য আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়ে যায়। এভাবে ইতি আমার মামি। ওকে আমি মামি বললে রাগ করত। কারণ, আমি তো ছিলাম ওর দাদা। সুনীল এবং ইতি মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ইহলোক ত্যাগ করে। 

বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অঞ্জলিদির বিয়ে হয়েছে কুড়িগ্রামে। তাঁর ছোট জ্যোৎস্নাদির দিনাজপুরে বিয়ে হলেও এখন তারা ভারতে চলে গেছেন। তার পরের বোন মঞ্জু সম্ভবত এখন বোদায়ই আছে। 

দত্তবাড়ির অন্তত চার সদস্য ভালো অভিনয় করতেন। একসময় বোদা ছিল সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বেশ অগ্রসর। গান-বাজনা, অভিনয় ইত্যাদির প্রতি অনেকেরই অনুরাগ ছিল। প্রতিবছর এক বা একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হতো। দত্তবাড়ির শিবেনদা, সনৎদা এবং তারাপদদা অভিনয় করে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তাঁদের পিসতুতো দাদা দয়াল চন্দ্র ঘোষও ভালো অভিনয় করতেন। তিনি দত্তবাড়ির চৌহদ্দিতেই বসবাস করতেন। 

সে সময় পুরুষেরাই নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। সনৎদা এবং তারাপদদা নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। নায়িকা হিসেবে তারাপদদাকে মানাতোও ভালো। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে, নারী চরিত্রে অভিনয় করে বোদার আরও দুজন খুব জনপ্রিয় হয়েছিলেন। তাঁদের একজন বোদা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল আলম সাবুলের বাবা আব্দুল চাচা এবং আরেকজন আমার পিসতুতো দাদা কার্তিক সরকার। এরা দুজনই প্রয়াত। 

নাটকের এই ধারাটা আমরাও অব্যাহত রেখেছিলাম। ক্লাস ফাইভ থেকে শুরু করে ক্লাস নাইন পর্যন্ত আমরা বন্ধুরাও প্রতিবছরই নাটক করতাম। ক্লাস এইটে উঠে তো আমাদের নাটকের ভূতে পেয়েছিল। সে বছর আমরা চারটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিলাম। হুলুস্থুল কাণ্ড আর কি! অভিভাবক এবং শিক্ষকদের শাসানি ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনে বেশি জড়িয়ে পড়ায় নাটক থেকে আমরা দূরে সরে আসি। 

আমরা অবশ্য নারী চরিত্র বর্জিত নাটকই করতাম। একটু কম নাটকীয়তা থাকলেও আমাদের আনন্দে কোনো ঘাটতি থাকত না। 

দত্তবাড়ির অনিল দত্ত, শিবেন দত্ত, বিজন এবং শ্যামল, যার যার মতো করে জীবন ও সংসার নিয়ে আছেন। সুকুমার দত্ত, অর্থাৎ স্বামী পরদেবানন্দজির কথা আগে বলেছি। তিনি এখন ঢাকায় শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে আছেন। তিনি ‘তীর্থের পথে পথে’ নামে দুই খণ্ডের বড় দুটি বইও লিখেছেন। 

শিবেনদা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এখন সম্ভবত ‘ধর্মকর্ম’ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। 

বিজনের সুবাদে ও বাড়ির সবাইকে দাদা বললেও অনিল বাবুর বেলায় ব্যতিক্রম। তাঁকে কখনো দাদা বলেছি কি-না, মনে করতে পারছি না। আমার বাবার নাম অনিল। দুই অনিল ছিলেন আবার বন্ধুস্থানীয়। তাই আমি দত্তবাড়ির অনিল বাবুকে দাদা-কাকা কিছু না বলে ‘ভাবে সপ্তমী’ চালিয়ে দিতাম। দত্ত পরিবার এখন ভেঙে অনেক পরিবার হয়েছে। বাড়িগুলো প্রায় এক চৌহদ্দিতেই আছে। 

বিজনের সঙ্গে যোগাযোগটা এখনো অটুট আছে। আমাদের দুজনের আগ্রহেই এটা হয়েছে। 

লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শান্ত হোন

সম্পাদকীয়
শান্ত হোন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।

তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।

দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না

অরুণ কর্মকার
শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।

মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।

ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।

জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।

আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।

তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।

অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যা এবং আগামী নির্বাচন

এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫১
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’

অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।

বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।

এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?

এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।

শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।

সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশের অর্থনীতির দ্বৈত বাস্তবতা

ড. মো. শফিকুল ইসলাম
দেশের অর্থনীতির দ্বৈত বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত