Ajker Patrika

দাম্পত্যে রোমা‌ন্টিক প্রত্যাশার চাপ কতটা

তাপস বড়ুয়া
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ১১: ০১
দাম্পত্যে রোমা‌ন্টিক প্রত্যাশার চাপ কতটা

স্বামী-সন্তান নিয়ে ভরভরন্ত সংসার। সুখী সম্পর্ক; শান্তিময় নিরাপদ জীবন। সম্পর্কগুলো স্টেডি, ডিগনিটিতে ঘাটতি নেই, টাকাপয়সার টানাপোড়েন নেই। সুখী দম্পতি বলে অন্যরা হিংসাও করে। 

এরই মধ্যে হঠাৎ ফেসবুকে, ‘বন্ধু কী খবর বল?’ খবরাখবর বলা হলো। কিন্তু কথা ফুরোল না। ‘কথার ওপর কেবল কথা আকাশ ছুঁতে চায়’। দিনের পর দিন। নিয়মিত। অবসরে তার মেসেজের জন্য ছটফট; এক ধরনের মানসিক নির্ভরতা তার প্রতি। চ্যাট, কলের জন্য অপেক্ষার প্রহরকে আরও দীর্ঘতর মনে হচ্ছে। আপনি প্রেমে পড়ে গেছেন! 

বন্ধুটিও আপনারই মতো। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। সেটা আপনাকে বলেনও তিনি; যেমন বলেন আপনিও। আপনার স্বামী বা স্ত্রী অসাধারণ ভালো মানুষ, আপনার সাথে তার কেমিস্ট্রিও দারুণ—এসব কথা বলেন আপনি তাকে। সেও বলে। কোথাও কোনো কোণে একটু ফাঁকা জায়গা আছে, তবু আছে। বুকের মধ্যে চিন চিন তৃতীয় মানুষটির জন্য আপনার; আর আপনার জন্য তার। 

কারও কারও ক্ষেত্রে সম্পর্কটা ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে সেটা ভার্চুয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে চলে আসে বাস্তব জীবনে। 

রোমান্টিক একগামী দৃষ্টিতে ওপরের সম্পর্কটা মারাত্মক। এতে জড়িত ব্যক্তিরাও সেটাকে মারাত্মক বলে মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়তো অপরাধবোধে ভোগেন। যিনি অপরাধবোধে ভোগেন না, তিনিও জানেন সমাজের চোখে এই সম্পর্ক নিষিদ্ধ। আরও বেশি ভয় স্বামী বা স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ার, যা আপনাকে ‘ডিফেন্সিভ’ করতে করতে ‘অফেন্সিভ’ করে ফেলে। সর্বক্ষণ ভয়—‘ও এ রকম আচরণ করছে কেন? ও কি কিছু আঁচ করছে?’ সুতরাং তার এমন একটা কিছু খুঁজে তাকে চাপে রাখতে হবে, যাতে সে এটা নিয়ে কথা বলতে না পারে। ফলত পারিবারিক কোন্দল। মূল ঘটনা বা ঘটনা নিয়ে যে উদ্বেগ, সেটার সাথে অন্যান্য বিষয় যুক্ত হয়ে দাম্পত্য সম্পর্ককে ক্রমশ আরও বিষিয়ে তোলে। 

অবশ্যই এ রকম পরিস্থিতি আছে, যেখানে নারীটি তার স্বামীর সাথে বা পুরুষটি তার স্ত্রীর সাথে সুখী নয়। অথবা দুজনেই নিজ নিজ জীবনে অসুখী। সে ক্ষেত্রে তো ‘আমার ব্যথা যখন আনে আমায় তোমার দ্বারে’। 

দুই. 
প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে তৃতীয় কাউকে ভালো লাগা বা সম্পর্কে জড়ানোকে খারাপ বা নিষিদ্ধ ভাবা, এই বিষয়টির সাথে রোমান্টিসিজমের বিরোধ কোথায়? 

রোমান্টিসিজম নিয়ে আমাদের যে ভাবনা সেটাও ভীষণরকম রোমান্টিক। কিন্তু রোমান্টিসিজম, বিশেষত রোমান্টিক প্রত্যাশা, যে রোমান্সের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে, এটা আমরা সাধারণত ভাবি না। বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর রোমান্টিক প্রত্যাশা কখনো কখনো সম্পর্কের জন্যই হতে পারে ক্ষতিকর। কারণ অস্বাভাবিক প্রত্যাশা ডেকে আনতে পারে অস্বাভাবিক হতাশা। 

এই আলোচনায় যাওয়ার আগে দেখা দরকার চিন্তার ধারা হিসেবে রোমান্টিসিজম আসলে কী, রোমান্টিসিজম আমাদের কেমন ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে, মনের গভীরে কোন কোন বিশ্বাস গেঁথে দেয় এবং ব্যক্তি-সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার অনিবার্য ফলাফল হয় কোন প্রত্যাশাগুলো? 

রেনেসাঁ ও শিল্প বিপ্লবের পর তৈরি হওয়া কাঠামোবাদ ও উত্তর-কাঠামোবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিল রোমান্টিসিজম। কাঠামো এবং ঠাসবুনটের যুক্তির প্রাচীর ডিঙিয়ে মানবিক আবেগকে প্রাধান্য দেওয়াই ছিল এর মূলে। সাহিত্য, শিল্প, সংগীত থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পর্যায়কেই এই ধারা প্রভাবিত করে। ব্যক্তিজীবনও এর বাইরে নয়। ফলে ব্যক্তিগত সম্পর্কও এর আওতায় চলে আসে। এই ধারার এক অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অসম্ভব কল্পনা; সঙ্গে আছে অতীতচারিতাও। ফলে কোনো অতীত গৌরবের জন্য লড়ে যাওয়া, কোনো বিশেষ আদর্শের জন্য প্রাণপণ বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য জীবন বাজি রাখা, কিংবা ক্যানভাসে বা কবিতায় অসম্ভব সব চিত্রকল্পের রচনা—এই সবই রোমান্টিসিজমের লক্ষণ। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সীমায় ঢুকে এই রোমান্টিসিজম হয়ে ওঠে সাত জনম বা শত জনমের প্রেম। টেলিপ্যাথি থেকে শুরু করে হাজারটা উপাদান দিয়ে গড়ে ওঠে এই ব্যক্তিগত প্রণয় কাঠামো। 

Romantic-4তিন. 
বিবাহিত দুজন মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে এক হয়ে মিশে যাবে—এ ধরনের ভাবনা এবং মূল্যবোধের সূচনা রোমান্টিক ভাবধারা কর্তৃক প্রভাবিত আমাদের মননে। রোমান্টিসিজমই প্রথম এমন ভাবনা এনেছিল ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে ইউরোপীয় সাহিত্য, শিল্পকলায়। মূলত তখন থেকেই ‘ম্যারেজ অব রিজন’ এর বদলে ‘ম্যারেজ অব ইন্সটিংক্ট’-এর ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক বন্ধনটি মনের বন্ধন দিয়েই নির্ধারিত হবে এটাই ম্যারেজ অব ইন্সটিংক্টের বড় কথা। আর শারীরিক সম্পর্ককে এখানে মানসিক সম্পর্ক বা ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। 

রোমান্টিসিজমে মনে করা হয়, আমার জন্য ‘অবধারিত একজন’ আছে। সে একান্ত আমার জন্য; তার জন্যই একান্ত আমি। তার সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষা মাত্র। সুতরাং চোখ-মন, ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পিছে খুঁজতে থাকে ‘কোথায় সেই আমার অফুরান একজন, সেই আমার একটিমাত্র’। তার সাথে দেখা হলে ইন্সটিংক্টই বলে দেবে, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। ‘চারি চক্ষুতে মিলন হবে’ এবং সাথে সাথে পৃথিবীর অন্য সবকিছু ফিকে হয়ে যাবে। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে দিনযাপন করতে থাকবেন। 

ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায় প্রায় সাথে সাথেই ইউরোপের এই ঢেউ এসে পড়ে ভারতবর্ষ; তথা বাংলাতেও। রোমান্টিসিজমের ধারণা এর পর থেকে আমাদের চিন্তা, মনন ও জীবনাচরণে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে; এখনো রাখছে। 

কেউ কেউ বলে থাকেন, ইউরোপীয় সাহিত্যে রোমান্টিসিজম এতটা প্রভাবশালী যে, শুধু ট্রেনে চকিত চাহনিতে প্রেম হয়ে গেল এবং একে অন্যের সেই ‘অবধারিত জন’-কে খুঁজে পেলেন এ রকম ঘটনার সাহিত্য দিয়ে একটা গোটা লাইব্রেরি গড়া সম্ভব। পাশ্চাত্যে প্রচুর রোমান্টিক উপন্যাসে পাওয়া যায় ট্রেনে নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা, সাথে সাথে হৃদয়ের তন্ত্রীতে সুর বেজে ওঠা এবং বাকি জীবন মধুর সংগীত বেজে চলা। বাংলা সাহিত্যে ও চলচ্চিত্রেও এই ধারা সবচেয়ে শক্তিশালী, যেখানে ‘অবধারিত’ প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে মিলিত হতে পারাই মূল লক্ষ্য এবং সেটার পরে গল্প শেষ। 

অর্থাৎ একে অন্যের জন্য ‘ফর গ্রান্টেড’। জীবনেও অন্য কারও দিকে তাকানো যাবে না। অন্য কাউকে ভালো লাগার তো প্রশ্নই আসছে না। অন্য কারও সাথে প্রেম-টেম দূর অস্ত। এ ধরনের ভালোবাসা ভালোই। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছ থেকে যে প্রত্যাশাটা তৈরি হয়, সেটাও মারাত্মক। অর্থাৎ, প্রেমিক বা প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রী ভাবছেন অন্যজনের আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালো লাগতে পারবে না। ‘সব পথ এসে মিলে গেলো শেষে’ আমার পথে। দুজনের দুটি আলাদা পথ এখানেই শেষ। জীবনের যদিও বহু পথ বাকি, পুরোটা চলতে হবে পায়ে পা মিলিয়ে একই পথে। একটুও এদিকে-ওদিকে পা পড়তে পারবে না; ‘হৃদয়ে যে পথ কেটেছি’ সেটাই শেষ কথা। এই প্রত্যাশা, অন্য আরেকটা সমগ্র সত্তার ওপরে এই অধিকারবোধ সেই মানুষটার ওপর জগদ্দল এক পাথরের চাঁই হয়ে বসতে পারে। চলতি পথে কারও মধ্যে ভালো কিছু দেখলে সে বিমোহিত আর হতে পারবে না! কারণ সে সম্মোহিত একজনেরই প্রতি। 

এটা সব সময় সঙ্গী বা সঙ্গিনী চাপিয়ে দেবে, তা নয়। বরং রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণও। রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত প্রেমিক বা প্রেমিকা ভালোবাসা বা প্রেমের অংশ হিসেবে নিজের ভালো লাগার ক্ষমতা, বিমোহিত হওয়ার স্বাধীনতা প্রেমাস্পদর কাছে সমর্পণ করে; অন্যজনের কাছ থেকেও সেটাই প্রত্যাশা করে। সুতরাং এই লেখার গোড়ার উদাহরণের মতো কোনো কিছু সেখানে ঘটতেই পারবে না। ঘটে গেলে মনে করতে হবে, সে তার সঙ্গীকে যথেষ্ট ভালোবাসে না। অথবা ভালোবাসার সম্পর্ক শেষ না হলেও ফিকে হয়ে গেছে। 

চার. 
রোমান্টিসিজম চাইলেও বাস্তবে কি হৃদয়ের বীণা একবারই বাজে? ছোটবেলা থেকে জীবনের বিভিন্ন পর্বে অসংখ্যবার কি মানুষ প্রেমে পড়ে না? কখনো ফাল্গুনের মৃদু হাওয়ার মতো ছুঁয়ে যায়; কখনো-বা ঝড়ের বাতাস ‘আগল ধরে’ নাড়া দিয়ে যায়। অতএব একজনের সাথে মিলন ‘অনুভূতির সকল দুয়ার বন্ধ করে’ দেয় না। আর কাউকে কোনো দিন ভালো লাগবে—এমন সকল সম্ভাবনা বা ভাবনার পথে দরজা এঁটে দেয়? রোমান্টিক যুগের সাহিত্যেও বিখ্যাত চরিত্র মাদাম বোভেয়া বা আন্না কারেনিনার মতো চরিত্র কেন তাহলে অন্যের কথা ভাবলেন? এসব চরিত্র বহুগামিতার পথ নিয়েছে রোমান্টিসিজমের আঁটসাঁট বাঁধনকে ফাঁকি দিয়ে। 

কারণ, রোমান্টিকতা একটা স্বপ্নের জগতে নিয়ে যায়, যেখানে দুজন মানুষ আর তাদের ‘প্রাণের আকুতি’-ই শুধু ধ্রুব। পৃথিবীর আর সব তাদের ‘মধুর মিলন ঘটাতে’ বসে আছে ‘মধুর বসন্ত নিয়ে’। রোমান্টিক জুটি পরস্পরকে প্রচুর সময় দেবে; অনন্তকাল কেটে যাবে চোখে চোখ রেখে। প্রকৃতিও তার দুহাত ভরা দান নিয়ে হাজির হবে। ‘ঝর ঝর ঝরনা’ ঝরবে, ‘শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটি’ বয়ে যাবে, পাখি গান গাইবে, কণে-দেখা-আলোয় পরস্পরকে অপরূপ মনে হবে। বিহ্বল স্বর্গীয় অনুভূতি হবে। ভালোবাসায় ভুবন ভরে যাবে। ঢাকা শহরের জ্যাম থাকবে না, অফিসে বসের অহেতুক চোখ রাঙানি থাকবে না, অফিস ফেরতা থালাবাসন মাজা বা ঘর পরিষ্কার থাকবে না। 

কিন্তু ব্যস্ত জীবনে কাপড় কাঁচা থাকে, মাছ কাটা থাকে, আরও অনেক অনেক কাজ থাকে। সন্তানদের নিয়ে চিন্তা থাকে, অসুস্থতা থাকে, আর্থিক অনিশ্চয়তা থাকে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ঘটনাবলি থাকে চারপাশে। নটা-পাঁচটার চাকরির পর অথবা সারা দিন অন্যান্য জীবিকা-অন্বেষণী প্রয়াসের পর এসবের চিন্তা যখন মাথার মধ্যে কাজ করে, তখন ঝরনা, নদী, পাখি, কণে-দেখা-আলো আস্তে আস্তে দূরে চলে যায়। অথবা অন্তত সার্বক্ষণিক উপস্থিতি হারায়। খুনসুটি, ঝগড়া-ঝাঁটি আস্তে আস্তে শুরু হয়। কারণ ধরণি কোন স্বর্গ নয়; এখানকার অধিবাসীরাও দেবদূত নয়। ভালো-মন্দ মিলিয়ে সাধারণ মানুষ। জীবনের অন্য সব অনুষঙ্গও চলতে থাকে দুই মানুষের সম্পর্কের সাথে সাথে। 

রোমান্টিসিজমে আক্রান্ত মানুষের প্রত্যাশার সাথে অমিল হলেই প্রথম চিন্তা মাথায় আসে, সে যে প্রেমে ততটা গদগদ নয়, প্রেম কি যথেষ্ট অটুট নেই? আমরা কি পরস্পরকে যথেষ্ট ভালোবাসছি না? 

প্রতীকী ছবিপাঁচ. 
রোমান্টিসিজমে ধারণা করা হয়, ভালোবাসার মানুষটির মনের কথা, তার ভালো লাগা, রাগ, দুঃখ অভিমান অন্য মানুষটি সম্পূর্ণ বুঝবে। বলার বা প্রকাশ করার দরকার হবে না। ধরুন ভীষণ কষ্ট পেলেন আপনি। কিছু বললেন না। বাথরুমে গিয়ে কাঁদলেন দরজা বন্ধ করে। ভাবলেন আপনার আবেগ বাথরুমের দরজা পেরিয়ে তার কাছে পৌঁছাবে এবং সে বুঝবে, ভালো যেহেতু বাসে। 

ভালোবাসলেই মন পড়তে পারা, কোনো প্রকাশ ছাড়া কি আসলেই সম্ভব? মানুষ কি নিজের মনকে নিজে জানে? নিজের আবেগকেও নিজে সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা যেখানে সম্ভব নয়, সেখানে অন্যে কীভাবে বুঝবে? ততটা প্রত্যাশা থাকলে হতাশ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভাষা দিয়ে, সেটা মুখের ভাষাই হোক আর শারীরিক ভাষাই হোক, ভাবটা প্রকাশ করতে হবে। কেবল তারপরই অন্যজন বুঝবে। ‘না-বলা বাণী’ বুঝতে গিয়ে অতি সংবেদনশীল মানুষেরও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। অথবা কিছু একটা যে বুঝতে হবে, এটাই বা বুঝবে কী করে অন্যজন? 

ছয়. 
রোমান্টিসিজমের আরেকটি দিক হচ্ছে সঙ্গী বা সঙ্গিনী আপনার মধ্যে কোনো দোষ দেখবে না। পুরোটা, যা কিছু নিয়ে আপনি, তার সবই তার ভালো লাগতে হবে। আপনার ব্যক্তিত্বের টুকরোগুলোর সবগুলোকে ভালোবাসতে হবে, আবার সমগ্র আপনাকেও ভালোবাসতে হবে। আপনিও তাকে সেরকমই ভালোবাসবেন। আলাদা আলাদা করে তার সবগুলো দিককে এবং সমগ্রতাকে। সেটা না হলে ধরে নিতে হবে ভালোবাসা জমেনি। সুতরাং তার খারাপ দিকগুলোকেও ভালো লাগতে হবে। এবং সেগুলোর প্রতিও ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। এ এক কঠিন সমীকরণ। মনে মনে জানেন, সঙ্গীর কিছু একটা খারাপ, তবু ভালো বলতে হবে। খারাপ বৈশিষ্ট্যটাকে ভালো না বাসতে পারলে মনে মনে কষ্টও হবে। কারণ, আপনি রোমান্টিসিজমে ‘আক্রান্ত’। 

এই অর্থে রোমান্টিসিজম মিথ্যা করে অনুভূতি প্রকাশ করতে শেখায়; যদিও রোমান্টিসিজমের মূল জিনিসগুলোর একটা সততা। ধরুন, আপনার প্রেমিক সর্বক্ষণ সিগারেট খান এবং তার মুখে গন্ধ থাকে। চুমু খাওয়ার সময় এই গন্ধ ভালো লাগার কোনো কারণ নেই। কিন্তু আপনি ভাবছেন এটাও ভালো লাগা উচিত। কারণ, আপনি আপনার প্রেমিককে ভালোবাসেন। আপনার প্রেমিকও প্রত্যাশা করছে, তার বৈশিষ্ট্য হিসেবে মুখে সিগারেটের গন্ধ ভালো লাগাটা আপনার জন্য স্বাভাবিক। এর অন্যথা হলে ভালোবাসা আর হলো কই! রোমান্টিকতা সঙ্গীর কাছ থেকে সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সুতরাং সঙ্গীর নেতিবাচক দিকগুলোকে সংশোধন করার ক্ষেত্রে সঙ্গীর কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না। 

রোমান্টিসিজমের ধারণার হাজার বছর আগে প্লেটো বলেছিলেন, ভালোবাসা একজনকে অন্যের ভালো দিকগুলোর প্রতি অনুরক্ত করে। এবং সেগুলোকে আরও ভালো করতে সহায়তা করে। এর মধ্য দিয়ে একজন আরেকজনকে তার ভালো দিকগুলোকে আরও শাণিত করে সেই মানুষটারই আরও ভালো এক সংস্করণ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। ধারণা করা যায়, সেই প্রক্রিয়ায় তার খারাপ দিকগুলো যে খারাপ, সেটা অনুধাবন করা ও সংশোধনের চেষ্টাটা গুরুত্বপূর্ণ। 

সাত. 
মানুষ হিসেবে আমরা কেউই ধোয়া তুলসী পাতা নই। কিন্তু রোমান্টিসিজম দাবি করে, আমরা ফুলের মতো নিষ্পাপ অথবা শিশুর মতো সরল হই। যেন প্রেমাষ্পদের কোনো খারাপ দিক নেই। 

কিন্তু মনের গহিনে আমরা কি একেবারে সৎ, একেবারে সুশীল? আমাদের সবার মধ্যে নানা খারাপ চিন্তা, খারাপ ইচ্ছে আসে, এসেছে। ধরেন কাউকে মেরে ফেলব, লাথি মারা দরকার—এ রকম চিন্তা অথবা কোনো যৌন চিন্তাও মনে আসে না তা তো নয়! সেগুলো আমরা প্রকাশ করি না। শুধু নিজেই জানি। আবেগের এবং ভালো-মন্দ—দুটোরই নিয়ন্ত্রিত প্রকাশ সভ্যতার লক্ষণ। নিয়ন্ত্রিত আবেগের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে প্রেম হয় আরেকটি নিয়ন্ত্রিত আবেগের ব্যক্তিত্বের। সব মনোভাব, মনোবাঞ্ছা ও আবেগ কাঁচা অবস্থায় যদি কোথাও লিস্ট করা যায়, তাহলে দেখা যাবে আপনি-আমি খুবই ভয়ংকর এক-একটা জন্তু; সুশীল নই মোটেও। কিন্তু রোমান্টিসিজম আশা করে আপনার সঙ্গী আপনাকে সব খুলে বলবেন; একান্ত আবেগ অনুভূতি, ইচ্ছাও। আপনিও আপনারটা বলবেন তাকে। 

কিন্তু বাস্তবে ‘পরিপূর্ণ ব্যক্তিটি’ প্রকাশিত হওয়ার পর আপনি নিজেও নিজের সাথে ঘর করতে পারবেন বলে মনে হয় না। আপনার মনের সকল ভাবনার খোঁজ পুরোটা পেলে আপনার সঙ্গী দৌড়ে পালাবে আপনার কাছ থেকে। একইভাবে আপনার সঙ্গীর মনের সকল ভাবনার পুরোটা খোঁজ পেলে আপনিও পালাবেন আপনার সঙ্গীর কাছ থেকে। কিন্তু রোমান্টিসিজমে সঙ্গীর কাছে নিজের পরিপূর্ণ প্রকাশ কাঙ্ক্ষিত, যেটা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। 

প্রতীকী ছবিআট. 
রোমান্টিসিজমের দৃষ্টিতে খুব সমস্যা হয়ে যায় যখন সম্পর্কটি অভিসার পর্যন্ত গড়ায়। কারণ, রোমান্টিসিজমে শারীরিক সম্পর্ককে মানসিক সম্পর্কের চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দুই-দুয়ারি যে ঘরের সৃষ্টি হয়, ‘সেইখানে বাস করে অশ্রু কারিগর’। সে জন্য একজনের মনে রোমান্টিক প্রত্যাশা উসকে দিয়ে তাকে মাঝপথে রেখে আপনি পথ বদল করবেন কি-না, সেটা ভাবা উচিত রোমান্টিক প্রত্যাশাগুলো তৈরির আগেই। তা না হলে আশাভঙ্গ হয়; বিশ্বাসভঙ্গের প্রশ্ন আসে। 

সুতরাং আবেগকে কতটা প্রশ্রয় দিয়ে আপনি কত দূর যাবেন, এই বিবেচনা জরুরি। ঘর আর বাহির নিয়ে অন্তরে দ্বন্দ্ব হলে এ দুটোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাহলে প্রবঞ্চনার প্রশ্নটি আসে না। এই লেখার একদম শুরুর পরিস্থিতি মাথায় নিলে বলা যায়, ওই দুজনের দুটো সংসারে আরও দুজন মানুষ আছেন, তারা হয়তো ভেবে বসে আছেন, আর যাই হোক সঙ্গীটি চূড়ান্ত বিশ্বাসভঙ্গের কাজটি করবে না। সুতরাং কাউকে ভালো লেগে গেলেই সেই বিশ্বাস ভাঙবেন কি-না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। 

এ বিষয়ে হলিউডের অভিনেত্রী শার্লিজ থেরনের অবস্থানটি মনে করা যেতে পারে। থেরন তাঁর ছোটবেলায় বাবা-মায়ের অসুখী দাম্পত্য দেখেছেন। তিনি নিজের জীবনে এমন ঘটার আশঙ্কায় কখনোই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিয়ে না করলেও তাঁর জীবনে আসা ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে তিনি সব সময় দাম্পত্যের মতনই যত্নবান থাকেন। 

বন্ধনের বিশ্বাস রাখতে পারব না—এমন আশঙ্কা থাকলে শার্লিজ থেরনের মতো চিরদিনের প্রতিশ্রুতিবিহীন, বন্ধনহীন সম্পর্কের কথা ভাবাটা হয়তো একটা পথ হতে পারে। 

[লেখাটি তৈরিতে অ্যালেইন ডি বটন-এর ‘অন লাভ’ উপন্যাসকে মূল পাঠ হিসেবে ধরা হয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর কিছু বক্তৃতা। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট আরও কিছু সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতার সহায়তাও নেওয়া হয়েছে। ]

এই সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।

গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।

মিলার কী বলেছেন

গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’

মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।

মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।

২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।

অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে

২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।

১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।

পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।

কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে

না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।

১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।

তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।

২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।

শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৪
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।

ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।

শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।

ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’

ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।

ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।

তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।

যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।

বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে
২০২৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারের পর থেকে ইমরান খান কারাগারে আছেন। ছবি: শাটারস্টকের সৌজন্যে

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’

ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।

কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’

কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’

কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। ছবি: এএফপি

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো

পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।

মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি
১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। ছবি: এএফপি

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’

এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।

ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খানের দুই ছেলে কাসিম খান ও সুলাইমান ইসা খান। ছবি: সংগৃহীত

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।

অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।

কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’

ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’

শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪২
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
খামেনির ইরান ও নেতানিয়াহুর ইসরায়েল নতুন করে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করেছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।

হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।

গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?

গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।

সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।

আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত