Ajker Patrika

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের ওপর আঘাত: ক্র্যাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকায় হামলার মধ্য দিয়ে মতপ্রকাশ, বাক্‌স্বাধীনতা ও সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে (ভয়েস অব ডিসেন্স) দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই আক্রমণ সরাসরি গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের ধারণার ওপর আঘাত হানা হয়েছে। তবে দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আজ শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

মানববন্ধনে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন দেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে। এটি সেই উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা। যদিও ঘটনার সব কারণ এখনো জানা যায়নি এবং অনেক অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হননি, তবুও গণমাধ্যমের ওপর যে আঘাত হানা হয়েছে, তা স্পষ্ট। গণমাধ্যমের মূল কাজই হলো তর্ক ও মতপার্থক্য প্রকাশ করা; গণতন্ত্র মানেই ভিন্নমতকে সম্মান করা।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিকের কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুধু দুটি গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ নয়; এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাক্‌স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত। গত ১৬ বছরে দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছে, হাজার হাজার আহত হয়েছে। সেই রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পরিবর্তনের পরও আজ সাংবাদিকদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে। পুলিশকে জানানো হলেও তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অতীতের ফ্যাসিবাদী আমলে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও গণমাধ্যম বন্ধের বহু ঘটনার বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যাসহ অন্তত ৬৫ সাংবাদিক হত্যার বিচার আজও অধরা। অতীতে গণমাধ্যম বন্ধ এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারার খেসারত আজ দিতে হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। যতক্ষণ না দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে।’

ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘সংকটময় পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং সংবাদপত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে কর্মরত সাংবাদিকদের পুড়িয়ে মারার লক্ষ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছিল। শুধু এই দুটি পত্রিকায় নয়, যখন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে যান, তাঁর ওপরও হামলা করা হয়। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

ক্র্যাবের সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এর আগেও গণমাধ্যমের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু বারবার গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়িয়েছে; এবারও দাঁড়াবে। শুধু হামলাকারী নয়, নেপথ্যের উসকানিদাতা ও পরিকল্পনাকারীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে দায়ীদের গ্রেপ্তার না করলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

মানববন্ধনে ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি, হেড অব ক্রাইম অ্যান্ড পলিটিকস টিপু সুলতান, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি মধুসূদন মণ্ডল, খায়রুজ্জামান কামাল, কামরুজ্জামান খান, ডিআরইউর সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল, ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম, আলাউদ্দিন আরিফ, আসাদুজ্জামান বিকু, ক্র্যাবের সহসভাপতি উমর ফারুক আলহাদী, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নজরুল ইসলাম, ডিআরইউর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র‍্যাক) সভাপতি শাফি উদ্দিন আহমদ, ক্র্যাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নেহাল হাসনাইন, কার্যনির্বাহী সদস্য জিয়া খান, ক্র্যাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ক্র্যাবের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য আমানুর রহমান রনি প্রমুখ।

বক্তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং হামলায় দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ওপর জোর দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ