Ajker Patrika

প্রান্তিক নারীদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ

ইন্টারনেট ব্যবহার ও ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে প্রান্তিক নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে গ্রামীণফোনের উদ্যোগ ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’। ২০২৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক নারীরা জানতে পারছেন অনলাইন কার্যক্রম সম্পর্কে। সেসব বিষয় নিয়ে ‘আজকের পত্রিকা’ মুখোমুখি হয়েছে গ্রামীণফোনের হেড অব ইএসজি ফারহানা ইসলাম-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোস্তাফিজ মিঠু

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ১২
গ্রামীণফোনের উদ্যোগ ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’-এর কার্যক্রম
গ্রামীণফোনের উদ্যোগ ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’-এর কার্যক্রম

শুরুতে সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্টের উদ্দেশ্য জানতে চাই।

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যে সুফল পাওয়া যায়, সেই জায়গায় তাঁরা পিছিয়ে আছেন এখনো। যেমন এখন অনলাইনে সরকারি বিভিন্ন কাজ, কেনাকাটা, আর্থিক লেনদেন করা যায়। কিন্তু সঠিক তথ্য ও ব্যবহারের অভাবে প্রান্তিক নারীরা এসব সুবিধা নিতে পারছেন না। সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্টের মাধ্যমে আমরা প্রান্তিক নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি; যাতে দৈনন্দিন জীবনে তাঁরা সেগুলো প্রয়োগ করতে পারেন।

প্রকল্পটি শুরুর আগে এ বিষয়ে কি আপনাদের কোনো জরিপ ছিল?

২০২৪ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ডিজিটাল চাহিদা বোঝার জন্য আমরা একটা জরিপ করেছিলাম। সেই জরিপের তথ্য থেকে পুরো প্রকল্প সাজানো হয়। সেটি মার্চ মাসে শেষ হয়। এপ্রিল থেকে মূল কার্যক্রম শুরু করি।

প্রান্তিক নারীরা কীভাবে এই প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছেন?

এই প্রজেক্টের পার্টনার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। তাদের কারণে এই কাজ অনেক সহজ হয়েছে। তাদের মাধ্যমে স্থানীয় অনেক সংগঠন পেয়েছি, যাদের এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা সেখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছে। আমরা দুইভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করি। প্রথমত, সেখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উঠান বৈঠকের মতো করে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ ছাড়া কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এখানে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটি রেডিও অ্যাসোসিয়েশন।

এ ধরনের কার্যক্রম প্রান্তিক পর্যায়ে পরিচালনা করতে গেলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আপনাদের এমন অভিজ্ঞতা আছে কি?

আসলে প্রান্তিক পর্যায়ে এ ধরনের কাজ করা খুব সহজ বিষয় নয়। যেসব নারী এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে আমাদের বোঝাতে হয়েছে, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন থেকে আমাদের অনুমতি নিতে হয়েছে। আমরা তাঁদের সহযোগিতা পেয়েছি। যেহেতু বিষয়টি নতুন, তাই সবাইকে এ ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কেন, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। যেন বিষয়টির গুরুত্ব তাঁরা সহজে বুঝতে পারেন।

কোন ধরনের বিষয়গুলো তাঁদের শেখানো হচ্ছে?

আমরা বেসিক বিষয়গুলো তাঁদের কয়েকটি ধাপে প্রশিক্ষণ দিই। অনেকে আছেন স্মার্টফোন চালাতে পারেন না। সেখান থেকেই আমরা শুরু করি। এরপর ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাঁরা ঘরে বসে যে সুবিধাগুলো পেতে পারেন, সেগুলো শেখানো হয়। যেমন এখন সরকারি অনেক কাজ অনলাইনে করা যায়, ই-কমার্সের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কীভাবে আর্থিক লেনদেন করা যায়। সর্বশেষ আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করি। মূলত প্রান্তিক নারীরা প্রশিক্ষণে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং নিরাপত্তার গুরুত্ব জানতে পারেন।

ফারহানা ইসলাম। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
ফারহানা ইসলাম। ছবি: জাহিদুল ইসলাম

প্রশিক্ষণের পর নারীরা কোন ধরনের উপকার পাচ্ছেন? সেগুলো তাঁদের জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি?

আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের নারীদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চা-বাগানের শ্রমিক, বেদে, ট্রান্সজেন্ডারসহ অনেকে। তাঁদের অনেকের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা রয়েছে। কেউ হয়তো ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অর্থ হারিয়েছেন।

এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই বিষয়গুলোতে তাঁরা সচেতন হচ্ছেন। নির্দিষ্ট করে বলতে হলে একজন ট্রান্সজেন্ডারের কথা বলা যায়। তিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন। একটি পারলার চালান। অনলাইনে সে বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করলে তিনি বুলিংসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন। এখন তিনি শিখেছেন, বাজে মন্তব্য এলে কীভাবে রিপোর্ট করতে হয়। অনলাইনে ব্যবসা প্রসারের জন্য কীভাবে প্রচার চালাতে হয়। এমনকি তাঁর ব্যবসার জন্য পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পেজ কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, সে বিষয়গুলো জেনে তিনি এখন স্বচ্ছন্দে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

আপনাদের এ কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমাদের কাজটি যেহেতু এখনো নতুন, তাই ভবিষ্যতে এটিকে আরও বড় পরিসরে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু আমরা ইন্টারনেট প্রোভাইড করছি, সেটি যেন প্রান্তিক গোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীরা নিরাপদে ব্যবহার করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে আরও এগিয়ে যাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত