Ajker Patrika

প্রাণী উদ্ধার যাঁর জীবনের লক্ষ্য

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ৩৫
প্রাণী উদ্ধার যাঁর জীবনের লক্ষ্য

সম্ভবত নারীরাই পারে ‘মায়ের মমতা’ শব্দ দুটির আবেশ ছড়িয়ে দিতে। এ আবেশ ছড়িয়ে যায় মানুষ থেকে প্রাণী—সবখানে। নিগার সুলতানাকে দেখলে এ কথার সারমর্ম বোঝা যায় খুব ভালোভাবে। পরিসংখ্যান দিয়ে বলা যায়, দেশের ১৭টি জেলায় ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিগার সুলতানা প্রায় ৩০০টি অভিযান চালিয়ে ৫ হাজারের বেশি প্রাণী উদ্ধার করেছেন। সঙ্গে ছিল ট্রফি অর্থাৎ বন্য প্রাণীর চামড়া, শিং, নখ, কান, দাঁত। শুধু কি তাই?  

অনুমোদন পাওয়া পোষা পাখির সঙ্গে অনুমোদনহীন কোটি কোটি টাকার পাখি নিয়ে আসেন আমদানিকারকেরা। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১টি শিপমেন্টে আমদানি করা এনওসি-বহির্ভূত ৪১৯টি পোষা পাখি আটক করা হয়। এ জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসব পাখি আটকের অভিযানে নিগার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। 

ছোটবেলা ও বড়বেলায় 
ছোটবেলা থেকে প্রকৃতি ও জীবন তাঁকে আকৃষ্ট করত। বড়বেলায় প্রাণিবিদ্যা পড়াশোনার বিষয় হলে সে আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পায়। পড়তে গিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রাণী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। সুযোগ হয় তাদের কাছাকাছি যাওয়ার। নিগার সুলতানা ইডেন মহিলা কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ও মৎস্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বন্য প্রাণী অপরাধবিষয়ক এমফিল স্তরে গবেষণা করছেন। তিনি স্বামী হাসান মাহমুদ জিলানী, স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে ঢাকার মহাখালী এলাকায় বসবাস করেন।

স্নাতক শেষ করার পর ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে নিগার সুলতানা বন্য প্রাণী পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। নিগারসহ সারা দেশে এ পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন মানুষ। 

নিগার সুলতানাছুটে বেড়ানো যখন কাজ
ঢাকা বিভাগের ১৩টি এবং আশপাশের আরও ৪টি জেলাসহ মোট ১৭টি জেলায় নিগার বন্য প্রাণীসংক্রান্ত কাজে তৎপর থাকেন। এ ছাড়া প্রাণীর অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়, লালন-পালন ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য তিনি ছুটে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জায়গায়। হরিণ, হাতি ও পাখি লালন-পালনের খামার নিয়মিত পরিদর্শন করা তাঁর অন্যতম কাজ। বিধি মেনে বিদেশ থেকে পোষা পাখি আমদানি করা হলো কি না, তাও দেখভাল করেন তিনি। কাঁকড়ার খামার থেকে নীতিমালার আলোকে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে কি না, সেটাও তিনি তদারকি করেন। 

গুরুত্বপূর্ণ অভিযান
১৮ এপ্রিল ২০১২। চাকরিতে ঢোকার অল্প কয়েক দিন হয়েছে মাত্র। যেতে হলো অভিযানে, পান্থপথের বসুন্ধরা মার্কেটের তৃতীয় তলায়। সেখান থেকে একটি মেছো বাঘের চামড়া ও একটি হরিণের শিং জব্দ করেন তিনি। 

বন্য প্রাণী রক্ষায় নিগারের উল্লেখযোগ্য অভিযানের মধ্যে আছে ২০১৩ সালের ১১ জুনে রামপুরা থেকে র‌্যাবের সহায়তায় ৫০টি তক্ষক জব্দ, ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল র‌্যাবের সঙ্গে যৌথ অভিযানে সদর রেঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ১৮টি অবৈধ বন্য প্রাণী জব্দ, ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর কাস্টমস, বন বিভাগসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিত্যক্ত লাগেজ থেকে ৫১০টি কাছিম উদ্ধার, ১৯ মে ২০২৩ তারিখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেলজিয়াম থেকে আমদানি করা এনওসিবহির্ভূত বিভিন্ন প্রজাতির ৬৯টি পোষা পাখি আটক এবং ৭২ লাখ টাকা জরিমানা করা। 

নিগারের সবচেয়ে বড় অভিযান ছিল ২৬ জুন ২০১৭ সালে। কিশোরগঞ্জ কটিয়াদী উপজেলার আসমিতার ভোগ বেতাল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা ও পাখিমেলায় তিনি ২০০টির বেশি পাখি জব্দ করেছিলেন। সে ঘটনার মধ্য দিয়ে এ মেলায় দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা বন্য পাখি বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। 

চ্যালেঞ্জ ভয় পান না
যেকোনো বিষয়ের মতো বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণে আছে চ্যালেঞ্জ। নিগার এসবে এখন আর ভয় পান না। বন্য প্রাণী সম্পর্কে মানুষের অসচেতনতা, দক্ষ জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব, অপরাধীদের সীমিত শাস্তি, বন্য প্রাণী ও মানুষের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয় নিগারকে।

অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দেশে বন্য প্রাণীর জন্য অনেক বেশি কাজ হচ্ছে বলে মনে করেন নিগার। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বন্য প্রাণীর গুরুত্ব মানুষ এখন বুঝতে পারে। বন বিভাগের পাশাপাশি বেশ কিছু সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী এবং অন্যান্য দপ্তর, সংবাদমাধ্যম বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন নিগার।  

বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় ২০১২ সালের জুন মাসে বন্য প্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট তৈরি হয়। এ ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী জানান, এই ইউনিট এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি বন্য প্রাণী উদ্ধার করেছে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি
বন্য প্রাণী নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিগারের ঝুলিতে আছে অনেক পুরস্কার। ২০২২ সালের ৬ জুলাই বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ঢাকা বন্য প্রাণী উদ্ধার ও সংরক্ষণের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সম্মাননা স্মারক পান তিনি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, ঢাকা শুদ্ধাচার পুরস্কার, সম্মাননা সনদ তাঁর অনন্য অর্জন। 

নিগার সুলতানাপ্রয়োজনে সহায়তা
কাজের প্রয়োজনে নিগার ৫০টির বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেনিং ও ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছেন। সেসব থেকে শিখেছেন বিস্তর। ফলে বন্য প্রাণী উদ্ধার করেই তাঁর কাজ শেষ হয় না। এদের কেন প্রয়োজন, কীভাবে তারা ইকো সিস্টেমের চেইন মেইনটেইন করে ইত্যাদি বিষয় তিনি উৎসুক মানুষকে বুঝিয়ে বলেন। এ ছাড়া সরাসরি কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি বন্য প্রাণী সম্পর্কিত যেকোনো সাহায্য করে থাকেন। অসুস্থ কোনো প্রাণী পেলে তিনি পরম মমতায় সুস্থ করে বনে ছেড়ে দেন। এক হাজারের বেশি অসুস্থ প্রাণী তিনি উদ্ধার করেছেন ইতিমধ্যে। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অতীতের মতো মেধা, মনন ও অভিজ্ঞতা দিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে আরও জোরালোভাবে কাজ করবেন নিগার, এটাই এখন পর্যন্ত ভাবনা। স্থানীয় পর্যায়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করার চিন্তা আছে তাঁর। পাশাপাশি অ্যাডভান্স টুলস ও নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে বন্য প্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০৫
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের জন্য অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন নারীরা। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের জন্য অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন নারীরা। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।

কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া

বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

'কুইন অব ক্রিসমাস' মারিয়া কেরি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
'কুইন অব ক্রিসমাস' মারিয়া কেরি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।

ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।

চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন

বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

‘স্যান্টা বেবি’ গানটির নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। ছবি: উইকিপিডিয়া
‘স্যান্টা বেবি’ গানটির নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। ছবি: উইকিপিডিয়া

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া

কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ছবি: রোলিং স্টোন
অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ছবি: রোলিং স্টোন

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।

বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।

সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট

এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।

এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’

কেন কমছে মেলার সংখ্যা

নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’

রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন

মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’

অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।

সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি

হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আল আমিন
রোজাইয়া রাব্বি রোজ
রোজাইয়া রাব্বি রোজ

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।

২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।

খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।

রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

ফিচার ডেস্ক
আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।

চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই

মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।

ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা

২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।

সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।

আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।

অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য

মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।

ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা

মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন

মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।

সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

মাকে দেখতে মাঝরাতে হাসপাতালে তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র মাহফুজ আলম, এনসিপির পক্ষে মনোনয়নপত্র নিলেন বড় ভাই মাহবুব

এনসিপির নির্বাচনকালীন কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ালেন নুসরাত তাবাসসুম

ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিলসহ ৪ দফা দাবি ঘোষণা করল ইনকিলাব মঞ্চ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত