Ajker Patrika

স্কটল্যান্ডের হ্রদে সত্যি কি দানোর বাস

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৫৬
স্কটল্যান্ডের হ্রদে সত্যি কি দানোর বাস

স্কটল্যান্ডের লখ্ নেসকে ঘিরে আছে এক জলদানবের কিংবদন্তি, যার নাম নেসি। শত শত বছর ধরে রহস্যময় এই প্রাণীকে ডালপালা মেলেছে অনেক গল্প। সত্যি কি লখ্নেসে কোনো দানোর আবাস? ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে আর নানা যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সেটাই জানার চেষ্টা করছি।

আইরিশ ও স্কটিশরা লেক এমনকি সাগর থেকে বেরিয়ে আসা খাঁড়িকে লখ্ বলে। স্কটিশ হাইল্যান্ড এলাকায় প্রায় ২৩ মাইল লম্বা লখ্নেস নামের হ্রদের অবস্থান। বলা হয়, এতেই আবাস বিশালাকায় এক প্রাণীর। লখ্নেসের নাম থেকেই দানোটার নাম নেসি।

 ১৯৩৩ সাল। লেক পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরির কাজ সবে শেষ হয়েছে। ফলে জলাধারটাকে আরও ভালোভাবে দেখার সুযোগ মিলে গেল। এপ্রিলে জর্জ স্পিচার নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী বিশাল একটা জন্তুকে দেখার কথা বলেন, ড্রাগন কিংবা প্রাগৈতিহাসিক কোনো প্রাণীর সঙ্গে যার তুলনা করেন। তাঁদের বর্ণনা মেনে নিলে ওটা দৈর্ঘ্যে ২৫ ফুট, উচ্চতা ৪ ফুট, ঢেউ খেলানো একটা লম্বা গলাও আছে। তাঁদের গাড়ির সামনে দিয়ে চলে গিয়ে জংলা জায়গা পেরিয়ে লেকে নেমে পড়ে ওটা। কারও কারও ধারণা, রাস্তা বানাতে গিয়ে যে বিকট শব্দ হয়, তা-ই দানবটাকে হ্রদের তলদেশ থেকে ওপরে টেনে আনে। স্কটিশ এক সংবাদপত্রে খবরটা ছাপা হয়, এরপর অনেকেই দেখার দাবি তুলতে থাকেন।

এ ঘটনার জেরে পুরোনো কয়েকটা ঘটনার বিবরণও সামনে আসে। যেমন ১৮৭১-৭২ সালের দিকে ড. ম্যাকেঞ্জি হ্রদের জলে আশ্চর্য এক বস্তু দেখেছিলেন, অনেকটা কাঠের একটা গুঁড়ি কিংবা উল্টানো নৌকার মতো মনে হয়েছিল তাঁর একে। শুরুতে জিনিসটা ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল, তারপর গতি বাড়িয়ে পানির তলে অদৃশ্য হয়।

লখ্নেসের দৈর্ঘ্য ২৩ মাইল১৮৮৮ সালে রাজমিস্ত্রি আলেকজান্ডার ম্যাকডোনাল্ড খাটো পায়ের বড় একটা প্রাণীকে উঠে আসতে দেখেন লেকের তল থেকে তীরে। যেখানে ম্যাকডোনাল্ড দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে গজ পঞ্চাশেক দূরে জল কেটে কেটে এগোচ্ছিল জন্তুটা।

 ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে ঘটনায় নতুন মোড় এল, যখন যুক্তরাজ্যের নামী পত্রিকা ডেইলি মেইল মারমাডিউক ওয়েদারেল নামের এক শিকারিকে দায়িত্ব দিল এই জলদানোকে খুঁজে বের করার! তদন্তের শুরুতেই হ্রদের তীরে বিশাল কিছু পায়ের ছাপ আবিষ্কার করে বসলেন ওয়েদারেল। তাঁর ধারণা, ওগুলো বিশ ফুট লম্বা কোনো নরম পায়ের জন্তুর। তবে ভালোভাবে পরীক্ষা করে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষকেরা রায় দিলেন, কোনো ধরনের কারসাজি ফলিয়ে ছাপগুলো বানানো হয়েছে।

১৯৩৪ সালের গোড়ার দিকেই দানো কাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ হলো। জানুয়ারির ৫ তারিখ। রাত ১টা। চাঁদের আলোয় বাইক চালিয়ে লেকের কিনারা ধরে যাচ্ছিলেন আর্থার গ্র্যান্ট নামের এক ব্যক্তি। ওই সময়ই জন্তুটাকে দেখেন। আরেকটু হলে ওটার গায়ে বাইক তুলেই দিয়েছিলেন। গ্র্যান্টের বর্ণনা অনুযায়ী ওটার লম্বা ঘাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত একটা ছোট মাথা ছিল। সিল আর প্লেসিওসরাসের শংকর বলে মনে হয় তাঁর ওটাকে। জুরাসিক যুগের প্রথম দিককার বিশালদেহী সরীসৃপ এই প্লেসিওসরাস। তবে তাঁকে দেখে সতর্ক হয়ে যায় জন্তুটা, রাস্তা অতিক্রম করে লেকে নেমে যায়।

তবে সবচেয়ে চমক জাগানো ঘটনা ঘটল ১৯৩৪ সালেরই এপ্রিলে। এ সময় প্রখ্যাত ইংরেজ চিকিৎসক রবার্ট কেনেথ উইলসন রহস্যময় জন্তুটার ছবি তুলে ফেললেন। গোটা দুনিয়া নাড়িয়ে দেওয়া ছবিটিতে, যেটা পরে পরিচিত পায় সার্জন’স ফটোগ্রাফ নামে, দানবটির ছোট্ট মাথা ও গলা দেখা যাচ্ছিল।

ডেইলি মেইলে ছবিটি ছাপার সঙ্গে পৃথিবীময় হুলুস্থুল পড়ে যায়। এবার অনেকে অনুমান করেন, এটা একটা প্লেসিওসরাস। সমস্যা হলো, সাড়ে ছয় থেকে সাত কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এরা। যদি ধরে নেওয়া হয় এটি উষ্ণ রক্তের প্রাণী, তবেও হয় লখ্নেসে বিশাল প্রাণীটার জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকার কথা নয়! তা ছাড়া একে শ্বাস নেওয়ার জন্য জলের ওপর কয়েকবার মাথা তুলতে হতো দিনে, সে ক্ষেত্রে আরও বেশি মানুষ দেখত। অবশ্য বিশ্বাসীদের দাবি, প্লেসিওসরাস থেকে বিবর্তনে জন্ম নেওয়া এক জন্তু এই নেসি, যে কিনা স্কটিশ পরিবেশে মানিয়ে নিতে জলের ওপর না উঠেই শ্বাস নেওয়ার কৌশল রপ্ত করেছে।

মিউজিয়াম অব নেসিতে নেসির প্রতিক্রিয়াএরপর থেকে লখ্নেস দানব শিকারি বা সন্ধানীদের রীতিমতো হট স্পটে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে এক মাছধরা নৌকার সোনার রিডিংয়ে সাগর সমতলের ৫০০ ফুট লম্বা একটা কিছুর উপস্থিতির আলামত মেলে।

১৯৬০ সালে লখ্নেস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো দশ বছরব্যাপী এক জরিপ চালায়, এতে প্রতিবছর অন্তত ২০ বার করে একে দেখা যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ করা হয়। পরের বছরগুলোতে চালানো হয় অনেকগুলোর সোনার (শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে জলের নিচে কিছুর অবস্থান নির্ণয়) অভিযান। এর মধ্যে ১৯৮৭-২০০৩ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা চালানো হয়। ওই সময় এমনকি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সোনার যন্ত্রপাতিসহ ছোট ছোট সাবমেরিনও শামিল হয় অভিযানে। উদ্দেশ্য একটাই, নেসিকে খুঁজে বের করা। তবে সফল হয়নি কেউই। এর মধ্যে নেসির ছবি তোলার অসংখ্য দাবি আসে। বেশির ভাগই বানানো ছবি নতুবা অন্য কোনো প্রাণীকে নেসির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়।

একটা দলের যেমন দাবি, গ্রিনল্যান্ড হাঙরকেই নেসির সঙ্গে গুলানো হচ্ছে। এরা স্বাদু পানিতেও থাকতে সক্ষম। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে পরিস্থিতি জটিল করে দিল নতুন খবর, উইলসনের তোলা ছবিটি আসলে একটা ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়, খলনায়ক প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত ওয়েদারেল। খেলনা সাবমেরিনের সঙ্গে কাঠ-প্লাস্টিকের মাথা জুড়ে দিয়ে এটা তৈরি করেন তিনি। ওটারই ছবি তোলেন চিকিৎসক।

গবেষকেরা বসে থাকলেন না। নেসির ভিডিও ধারণের চেষ্টাও শুরু হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ভিডিওটা করেন এক লেব টেকনিশিয়ান, ২০০৭ সালে। লখ্নেস সেন্টারের মেরিন বায়োলজিস্টরাও একমত হন—এটা সবচেয়ে ভালো আলামতগুলোর একটি, তবে ভিডিওতে আসা বস্তুটি সিল বা বড় ধরনের ভোদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১১ সালে আবার বড়সড় একটা প্রাণীর এক নৌকাকে অনুসরণের সোনার ছবি তোলা সম্ভব হয়। ২০১৪ সালে অ্যাপল ম্যাপে নেসের জলের সমতলের ঠিক নিচে নব্বই ফুটি একটা কিছুর আভাস মেলে। 

২০১৮ সালে হ্রদে কী ধরনের জীবনের উপস্থিতি আছে জানতে ডিএনএ জরিপ চালান গবেষকেরা। সেখানে কোনো ধরনের প্রাগৈতিহাসিক জন্তুর নমুনা মিলল না। তবে প্রচুর ইলের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল। বিজ্ঞানীরা এবার ঘোষণা দিলেন, বিশাল আকারের কোনো ইলকেই নেসের দানব বলে ভুল করছে লোকেরা।

তবে এতে কৌতূহলী মানুষের বয়েই গেছে! লখ্নেসে তাদের আসা আর নেসিকে খোঁজাখুঁজি থেমে থাকল না। একে নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ।

লখ্নেসে দানব বাসের কাহিনি কিন্তু আধুনিক কালের নয়, সেই প্রাচীন আমল থেকেই এই গুজব আছেতবে কথা হলো লখ্নেসে দানব বাসের কাহিনি কিন্তু আধুনিক কালের নয়, সেই প্রাচীন আমল থেকেই এই গুজব আছে। এমনকি স্থানীয় পিচট লোকদের আঁকা বহু পুরোনো দেয়ালচিত্রেও পাখাসহ রহস্যময় এক জন্তুকে দেখা যায়।

প্রথম লিখিত প্রমাণটি সেইন্ট কলাম্বার ৫৬৫ সালের এক আত্মজীবনীতে। সেখানে লেখা ছিল—জন্তুটা সাঁতরাচ্ছিল লেকে এবং এক লোককে আক্রমণ করতে উদ্যত হচ্ছিল, তবে সাধক কলাম্বা ওটাকে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিলে তা পালন করে সে। তার পরের শতকগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ একে দেখার কথা দাবি করেছে কেউ কেউ। স্কটিশ উপকথায়ও এ ধরনের জলচর দানবের ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।

তবে সবকিছু মিলিয়ে লখ্নেসের পক্ষে কিন্তু বড় কোনো প্রাণীকে আশ্রয় দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এর সর্বোচ্চ গভীরতা ২৩০ মিটার। গড় গভীরতা ১৩২ মিটার। লখ্‌নেসের পর স্কটল্যান্ডের দ্বিতীয় গভীর লখ্ এটি। তবে যদি বিস্তৃতি আর গভীরতা দুটোকে বিবেচনায় নেন, একে শুধু স্কটল্যান্ড নয়, গোটা গ্রেট ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি পানি ধরে এমনকি সবচেয়ে বড় হ্রদও বলতে পারেন।

অনেকে আবার বলেন, রাতে আলোর কারসাজিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। কারও আবার দাবি, ত্রিশের দশকে ওই এলাকায় উপস্থিত সার্কাসের হাতি জলকেলি করতে গিয়েই প্রথম গুজবের জন্ম দেয়। তবে কথা হলো, যাঁরা নেসিকে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক উচ্চশিক্ষিত, সম্মানিত ও স্থির মস্তিষ্কের ব্যক্তিও আছেন।

সাম্প্রতিক কালে এক ঝড়ের সময় স্কটিশ এক সৈকতে বিশাল একটা কঙ্কাল আবিষ্কারের ঘটনাও তোলপাড় তুলেছিল। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা এক ছবি নতুন করে হাওয়া লাগিয়েছে নেসিবিশ্বাসীদের নৌকার পালে, ওই ছবিতে লখ্নেসের জলে বড়সড় একটা কিছু সাঁতরে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। নেসি ছাড়া এত্তো বিশাল কী হতে পারে!

আমার মতো রহস্যপ্রেমী মানুষের জন্য দুঃসংবাদ হলো, নেসি আছে এমন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি। আর আশার কথা, সে মারা গেছে কিংবা নেই এমন কোনো প্রমাণও কোনো অবিশ্বাসী হাজির করতে পারেননি।

সূত্র: হাইল্যান্ড টাইটলস ডট কম, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অফিসে ঘন ঘন টয়লেট যাওয়ায় চাকরি হারালেন প্রকৌশলী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৬
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: পিক্সাবে

কাজের মধ্যে ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার জন্য বিরতি নিয়ে চাকরি খুইয়েছেন এক চীনা প্রকৌশলী। চীনের পূর্বাঞ্চলের জিয়াংসু প্রদেশের ওই প্রকৌশলী ঘন ঘন এবং প্রতিবার এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে টয়লেটে সময় কাটাচ্ছিলেন। যদিও তাঁর দাবি ছিল, তিনি অর্শ বা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন।

হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে বলা হয়েছে জিয়াংসু প্রদেশের লি নামক ওই ব্যক্তি গত বছর এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে এক মাসে মোট ১৪ বার টয়লেট যাওয়ার জন্য বিরতি নেন। এর মধ্যে একবার তিনি চার ঘণ্টা টয়লেটে কাটান। এর জেরেই তাঁকে চাকরি হারাতে হয়।

এই খবর সম্প্রতি সাংহাই ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

ওই ব্যক্তি বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে বিষয়টি সামনে আসে। লি প্রমাণ হিসেবে গত বছর মে ও জুন মাসে তার সঙ্গীর কেনা অর্শের ওষুধ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তার হাসপাতালে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের নথিও পেশ করেন।

এরপর লি ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে বেআইনিভাবে চুক্তি বাতিলের দায়ে ৩ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। অন্যদিকে, কোম্পানি লি-এর ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিতে থাকার প্রমাণস্বরূপ সিসিটিভি ফুটেজ আদালতে জমা দেয়।

আদালতের বিশ্বাস, লি টয়লেটে যে সময় ব্যয় করেছেন, তা তাঁর ‘শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি’ ছিল। এ ছাড়া, লি যে ডাক্তারি নথি জমা দিয়েছেন, তা তাঁর বহুবার দীর্ঘ পানির বিরতির নেওয়ার পরের সময়ের। চুক্তিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও লি তাঁর অসুস্থতার কথা কোম্পানিকে আগে জানাননি বা অসুস্থতাজনিত ছুটির জন্য আবেদনও করেননি।

কোম্পানি লি-কে তাঁর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে প্রথমে একটি চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে, কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি। লি’র পদে কাজ করার জন্য তাকে সব সময় কাজের অনুরোধে সাড়া দিতে হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার পর কোম্পানি তাঁকে বরখাস্ত করে।

লি ২০১০ সালে কোম্পানিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ সালে একটি উন্মুক্ত-মেয়াদি চুক্তি নবায়ন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজের কর্মস্থল ত্যাগ করাকে অনুপস্থিতি বলে গণ্য করা হবে এবং ১৮০ দিনের মধ্যে মোট তিন কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে চুক্তি সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে।

বরখাস্ত করার আগে কোম্পানি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমতিও নিয়েছিল। দুই দফা বিচারপর্বের পর, আদালত অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে এবং লি’র কোম্পানিতে অবদানের কথা এবং বেকারত্বের পর তার অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কোম্পানিকে ৩০ হাজার ইউয়ান ভাতা দিয়ে মামলাটি মিটিয়ে নিতে রাজি করায়।

চীনে এ ধরনের বিরতি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। এর আগে, ২০২৩ সালেও, জিয়াংসু প্রদেশেরই আরেক ব্যক্তি একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর দীর্ঘতম বিরতি ছিল একদিনে ছয় ঘণ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত