Ajker Patrika

ইয়েতি কি সত্যি আছে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৫: ১৬
ইয়েতি কি সত্যি আছে

ছোটবেলা থেকেই বরফে ঢাকা হিমালয়, এর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট, হিলারি-তেনজিং নোরগের এভারেস্ট জয়ের গল্পে মজে গিয়েছিলাম। আর হিমালয় নিয়ে নানা লেখা পড়তে পড়তে একসময় ইয়েতির কথাও জেনে গেলাম। ইয়েতি নিয়ে বই-পত্রিকায় যত পড়লাম, তত আবিষ্কার করলাম ইয়েতি হলো এক হিসাবে হিমালয়ের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি, যার জট ছোটাতে পারেননি কেউ। আর এতে এর প্রতি আগ্রহটা আরও ডালপালা মেলল। চলুন তাহলে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাই হিমালয়ের বরফরাজ্যে, ইয়েতির খোঁজে।

ইয়েতির মূল কাহিনি শুরুর আগে বরং ইয়েতি নিয়ে আমাকে আগ্রহী করে তুলতে ভূমিকা রাখা দুটি বইয়ের ব্যাপারে দু-চার কথা লিখি। শুরুতেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক’। কাঠমান্ডু থেকে ছোট্ট এক উড়োজাহাজে চেপে কাকাবাবু ও সন্তু চলে যায় হিমালয়ের দুর্গম এক এলাকায়। আমাদের বাসার ডাইনিং রুমের ছোট্ট খাটটায় শুয়ে স্কুলপড়ুয়া আমি ভরদুপুরে, প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও যেন সন্তুর সঙ্গে শীতে কাঁপছিলাম, কান পাতলেই যেন শুনতে পাচ্ছিলাম হিমবাহ পতনের কান ফাটানো আওয়াজ। কাকাবাবুর খুব সাবধানে আগলে রাখা ছোট্ট বাক্সের দাঁতটা কি তবে ইয়েতির? বরফের পাহাড়ের আড়ালে একমুহূর্তের জন্য দেখা যাওয়া ওই বিশাল ছায়ামূর্তিটা কী? শেষ পর্যন্ত কি ওরা দেখা পাবে ইয়েতির? এমন সব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে উত্তেজনায় টগবগ করছিলাম।

তারপর আসে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বের হওয়া টিনটিন ইন টিবেটের অসাধারণ অনুবাদ ‘তিব্বতে টিনটিন’। বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ এক বন্ধুর খোঁজ করতে ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও কুকুর স্নোয়ি বা কুট্টুসকে নিয়ে টিনটিন যায় তিব্বতে। রোমাঞ্চকর সেই অভিযানের পরতে পরতে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে ইয়েতি। সেই সঙ্গে ইয়েতিতে আরও বেশি করে মজে যাই আমি।

এভারেস্টসহ হিমালয় অভিযানে ইয়েতি কিংবা ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখার দাবি করেন শেরপা ও পর্বতারোহীরাএবার তাহলে মূল গল্পে প্রবেশ করা যাক। হিমালয় পর্বতশ্রেণির বিভিন্ন পাহাড়ে রহস্যময় এক প্রাণী বিচরণের খবর মেলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী বিশালদেহী গরিলা কিংবা ভালুকসদৃশ লোমশ এক জন্তু ওটা। শুরুতে এক পশ্চিমা সাংবাদিক ধারণা করেছিলেন, তিব্বতিরা একে যে নামে ডাকে তার অর্থ ‘অপরিষ্কার তুষারমানব’। এর সূত্র ধরেই পশ্চিমারা একে এবমিনেবল স্নোম্যান বা খারাপ তুষারমানব নামে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করে। আসলে গোটা ব্যাপারটাই ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি।

১৯২১ সালে হেনরি নিউম্যান নামের ওই সাংবাদিক এভারেস্ট অভিযান শেষে ফেরা একদল ব্রিটিশ অভিযাত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ওই অভিযাত্রীরা বিশাল আকারের পায়ের ছাপ দেখার বর্ণনা দেন পর্বতের সফেদ শরীরে, জানান তাঁদের গাইড বলেছে, এটা মেতোহ-কাংমি, অর্থাৎ ‘মেন-বিয়ার স্নোম্যান’-এর ছাপ। তবে নিউম্যান মেতোহর অর্থ ধরে নিলেন অপরিষ্কার। তাঁর মনে হলো, এর চেয়ে এবমিনেবল বা খারাপ তুষার মানবই বেশি জুতসই, ব্যাস আপাতত পরিচিতি পেয়ে গেল এবমিনেবল স্নোম্যান নামটি। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিকে যায়, নেপালিদের ডাকা নাম ইয়েতি, যার অর্থ বড় খাদক। এখন গোটা পৃথিবীর মানুষ এ নামেই চেনে একে।

কিন্তু সত্যি কি ইয়েতি আছে? এর উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করব এখন। বেশির ভাগের ধারণা, ইয়েতি হিমালয়ের কল্পকথার এক প্রাণী ছাড়া আর কিছু নয়। তবে কিংবদন্তি ও ইতিহাসের পাতা উল্টালে মনে হয় এ ধরনের কিছু একটা থাকাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। কথিত আছে, ইয়েতি রহস্য কৌতূহলী করে তোলে আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটকেও। সিন্ধু নদীর অববাহিকায় এসে রহস্যময় প্রাণীটির কথা শুনে দেখতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় লোকেরা অবশ্য তাঁকে নিরাশ করে, জানায়, এত নিচে ওই জন্তুটা বাঁচে না, তাই তাঁর সামনে হাজির করা সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, ইয়েতি আছে এ ব্যাপারে যাঁরা বাজি ধরতে রাজি, তাঁদের তুরুপের তাস কী? ওটা কি তবে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ও আলোকচিত্রী এরিক শিপটনের তোলা সেই ছবি। হিমালয় অঞ্চলের সংস্কৃতিতে ইয়েতি জড়িয়ে আছে বহু পুরোনো কাল থেকে। তবে একে ইউরোপ-আমেরিকার অভিযাত্রীদের সামনে নিয়ে আসায় মূল ভূমিকা এরিক শিপটনের।

পায়ের ছাপের এ ছবিটি ১৯৩৭ সালে ফ্রাঙ্ক এস স্মিথির তোলাসালটা ১৯৫১, এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর একটা বিকল্প পথের খোঁজ করছিলেন শিপটন ও তাঁর দলবল। ওই সময় অপ্রত্যাশিতভাবেই অদ্ভুত এক পায়ের ছাপের সামনে চলে আসেন। এর ছবিও তুলে নেন শিপটন। আর এভাবেই বলা, ইয়েতির কথা জানতে শুরু করে বিশ্ববাসী। সবচেয়ে বিখ্যাত ও অভিজ্ঞ হিমালয় অভিযাত্রীদের একজন বলে পরিচিত এরিক শিপটন ছবিটি তুলেছিলেন এভারেস্টের পশ্চিমে মেনলাং হিমবাহে, জায়গাটি সাগর সমতল থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায়। পায়ের ছাপটি ছিল ১৩ ইঞ্চি লম্বা। অনেকেই একে বিবেচনা করেন হিমালয়ে তোলা সবচেয়ে চমক জাগানো ছবি হিসেবে। ওই সময় ইয়েতি নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে যায়। নেপাল সরকার তো ১৯৫০-এর দশকে ইয়েতি শিকারের লাইসেন্স পর্যন্ত দিয়েছিল। যদিও একটি ইয়েতিকেও জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় হাজির করা সম্ভব হয়নি।

তবে ইয়েতি নিয়ে যাঁরা তর্কে জড়ান, তাঁদের বড় একটি অংশের ধারণা, তবে ইয়েতিপ্রেমীরা এটা মানতে নারাজ। শিপটন ওই ছবিটি তোলার আগেই ইয়েতির পায়ের ছাপ এমনকি জন্তুটাকে দেখার দাবি এসেছে হিমালয় অভিযাত্রী এবং শেরপাদের কাছ থেকে। পশ্চিমা বিশ্বেও এর খবর একটু একটু করে রটছিল।

ইউরোপীয়দের মধ্যে হিমালয়ের গহিনে এ ধরনের কিছু একটা থাকতে পারে বলে প্রথম যাঁরা ধারণা দেন, তাঁদের একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী চার্লস হওয়ার্ড-বারি। ১৯২১ সালের হিমালয় অভিযানে লাখপা লা পাসের কাছে ইয়েতির পায়ের ছাপ পাওয়ার কথা বলেন। তাঁর বই ‘মাউন্ট এভারেস্ট: দ্য রিকনিসনস, ১৯২১’-এ ঘটনাটির উল্লেখ করেন তিনি। বারি দাবি করেন, মানুষের মতো কোনো প্রাণীর বেশ বড় পায়ের ছাপ খুঁজে পান তিনি। পরে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন, হিমালয়ের গভীরে ঘুরে বেড়ানো বুনো, লোমশ এক রহস্যময় জন্তুর ছাপ এগুলো।

১৯২৫ সালে এন এ টমবাজি নামের এক আলোকচিত্রী ও রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির সদস্য দাবি করে বসেন, জেমু হিমবাহের কাছে ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় মানবসদৃশ আশ্চর্য এক প্রাণী দেখেছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে ফ্রাংক এস স্মিথি নামের এক অভিযাত্রীও ইয়েতির পায়ের ছাপের ছবি তোলার দাবি করেন। ১৯৫২ সালে পপুলার সায়েন্সে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪২ সালে দুই পর্বতারোহী এভারেস্ট অভিযানে তাঁদের পোয়া মাইল নিচে আট ফুটি কালো দুটো অবয়ব হেঁটে যাওয়ার কথা বলেন। ব্রায়ান বার্নি নামের অপর এক অভিযাত্রী আবার অরুণ উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ইয়েতির পায়ের ছাপ আবিষ্কারের কথা বলেন।

১৯৫৪ সালে ডেইলি মেইলের ‘স্নোম্যান’ অভিযানে ইয়েতির খুলির চামড়া বলে সন্দেহ করা জিনিসটিকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছেইয়েতিতে সবচেয়ে বেশি মোহিত হওয়া অভিযাত্রীদের তালিকা করলে ওপরের দিকে থাকবেন ইতালিয়ান পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার। ১৯৮৬ সালে তিব্বতের কোনো এক জায়গায় প্রথম ইয়েতি দেখার দাবি করেন মেসনার। সেদিন হাঁটতে হাঁটতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অন্ধকার নেমে এলে সামনে কালো, বিশাল এক ছায়ামূর্তি আবিষ্কার করেন। মানুষের মতোই হাঁটছিল, তবে আরও দ্রুতগতিতে, শক্তিশালী পদক্ষেপে। ওই রাতেই আবারও ওটাকে দেখেন, প্রায় সাত ফুট ছিল এর দৈর্ঘ্য। বলা চলে, এ ঘটনাই প্রাণীটির আচ্ছন্ন করে ফেলে। পরের এক যুগ ব্যস্ত থাকেন ইয়েতির সন্ধানে।

এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্যবার হিমালয়ে অভিযানে গিয়েছেন। বেশির ভাগ সময় হতাশাই জোটে তাঁর কপালে। অবশ্য লাসা আর কারাকোরাম এলাকায় আরও কয়েকবার ইয়েতি দেখার কথা বলেন তিনি। শেষমেশ অবশ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছান—ওগুলো পার্বত্য ভালুকই। এদিকে আর্নস্ট স্ক্যাফের নামের এক জার্মান অভিযাত্রীও ১৯৩৯ সালে জার্মান সরকারের সহায়তায় এক গোপন মিশন থেকে ফিরে একই যবনিকা টানেন ইয়েতি রহস্যের। স্ক্যাফেরের ভাষায় ইয়েতি একটা প্রমাণ সাইজের ভালুক ছাড়া আর কিছু নয়।

এমনকি ১৯৫৩ সালে স্যার অ্যাডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে এভারেস্ট অভিযানের সময় বড় কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখার কথা বলেন। নোরগেকে তাঁর প্রথম আত্মজীবনীতে লিখেছেন নিজে না দেখলেও তার বাবা রহস্যময় এই জন্তুকে দুই বার দেখেছেন। অবশ্য দ্বিতীয় আত্মজীবনীতে সন্দিহান মনে হয়েছে তাঁকে।

১৯৫৪ সালে ডেইলি মেইল ‘স্নোম্যান’ নামের অভিযানের আয়োজন করে ইয়েতির খোঁজে। তখন একটি গুম্ফা থেকে কোনো প্রাণীর মাথার খুলির কিছু লোমও পাওয়া যায়, স্থানীয়দের দাবি, ওগুলো ইয়েতির লোম। একটু অন্ধকারে একে কালো থেকে গাঢ় বাদামি এবং উজ্জ্বল আলোয় লালচে দেখাচ্ছিল। কিন্তু গবেষণায় উঠে আসে ওটা খুরওলা কোনো প্রাণীর কাঁধের লোম।

টিনটিনের সারা জাগানো বই, ‘টিনটিন ইন টিবেট’এদিকে স্যার হিলারির ১৯৬০ সালের অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল ইয়েতির ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। খুমজাং নামে এক গুম্ফা থেকে স্থানীয়রা ইয়েতির খুলির চামড়া বলে দাবি করা জিনিসটা লন্ডনে নিয়েও আসেন। অবশ্য বিজ্ঞানীরা পরে নিশ্চিত হোন ওগুলো অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী সেরোর লোম।

আপনি যদি ইয়েতিপ্রেমী হয়ে থাকেন, তবে অক্সফোর্ডের জিন বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান সাইকেসের পরীক্ষার ফলাফল আপনাকে হতাশই করবে। ২০১৩ সালে ইয়েতিভক্তদের ইয়েতির চুল, দাঁতসহ শরীরের অন্য কোনো অংশ হাজির করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি, পরীক্ষার জন্য। যে ৫৭টি নমুনা পান, এর ৩৬টি বাছাই করা হয় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। ওই এলাকায় বিচরণ করা বিভিন্ন প্রাণীর জিনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় ওগুলো। বেশির ভাগই মেলে ভালুকের সঙ্গে। অবশ্য এখানেও চমক ছিল। দুটি নমুনা, যার একটি পাওয়া গিয়েছে ভুটানে ও অপরটি ভারতে, এমন এক প্রজাতির ভালুকের সঙ্গে মিলে যায়, যেগুলো ৪০-১২০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে! পরে কয়েকজন বিজ্ঞানী ওই দুটি নমুনা পরীক্ষা করে দাবি করেন, ওগুলো সাধারণ ভালুকেরই নমুনা!

২০১৭ সালে আরেক দল গবেষক হিমালয় ও তিব্বত থেকে সংগ্রহ করা লোম, মল, দাঁত পরীক্ষা করে জানান, ওগুলো তিব্বতি ভালুকের নমুনা। তবে গবেষকদের এত সব যুক্তির পরও কিন্তু ইয়েতিপ্রেমীরা প্রাণীটি নেই এটা মানতে রাজি ছিলেন না। তবে বহু দিন ধরে ইয়েতি সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই ২০১৯ সালে ভারতীয় সেনারা হিমালয়ের মাকালু বেস ক্যাম্পে ইয়েতির পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়ার দাবি করার পাশাপাশি এর ছবিও প্রকাশ করে। আর এতে ইয়েতি বিশ্বাসীরা যেন হালে পানি পান।

ইয়েতি নিয়ে বানানো হয়েছে অনেক সিনেমা, টিভি সিরিজ, ভিডিও গেম এবং কার্টুন ছবি। শুরুতে যে পাহাড়চূড়ায় ‘আতঙ্ক’ নামে বইটির কথা বলেছিলাম, তার কাহিনি নিয়ে ইয়েতি অভিযান নামে একটি বাংলা সিনেমা তৈরি করেছেন কলকাতার নামি পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। ২০১৭ সালের ঘটনা এটি। কালক্রমে ইয়েতি পরিণত হয়েছে নেপাল, ভারত, ভুটান ও তিব্বত জুড়ে সংস্কৃতি ও ব্যবসার অনুষঙ্গে। ভুটানে ইয়েতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ডাক টিকিট। নেপালে আছে ইয়েতি এয়ারলাইনস, সম্প্রতি যাদের একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। মোদ্দা কথা বিশেষজ্ঞরা যাই বলুন, রোমাঞ্চপ্রেমীদের ইয়েতির প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়েনি একটুও। বরং যত দিন গড়িয়েছে, রহস্যে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা। কি ইয়েতির কথা আগে জানা না থাকলেও এখন নিশ্চয় ইয়েতি নিয়ে কৌতূহলীদের কাতারে ভিড়ে গেছেন আপনিও।

সূত্র. বিবিসি, উইকিপিডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কখনো চাকরিই করেননি, সেই প্রতিষ্ঠান থেকে পেলেন বরখাস্তের চিঠি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ই-মেইল চেক করছেন একজন নারী। ছবি: পেক্সেলস
ই-মেইল চেক করছেন একজন নারী। ছবি: পেক্সেলস

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, একটা ই-মেইল এসেছে যার ‘সাবজেক্ট’ অপশনে লেখা ‘টার্মিনেশন লেটার’। ঘুম ঘুম চোখে এই ই-মেইল দেখলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম তো থাক, অন্য সব ভাবনাও হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! তখন ভাবনায় আসবে ঠিক কি কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই হতে হলো! ভাবতে ভাবতে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় এ সময় চোখে পড়ল, যে কোম্পানি থেকে এই ই-মেইল এসেছে, সেখানে আপনি চাকরিই করেন না, কখনো করেনওনি! ভাবুন তো কেমন লাগার কথা।

এমনই ঘটনা ঘটেছে এক নারীর সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ সাইমন ইনগারি নামের একজন ক্যারিয়ার কাউন্সিলর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শেয়ার করেছেন।

সাইমন ইনগারি তাঁর টুইটে জানান, তাঁর স্ত্রী এমন একটি কোম্পানি থেকে ছাঁটাইয়ের ই-মেইল পেয়েছেন, যেখানে তিনি কখনো কাজই করেননি। ইমেইল পাওয়ার পর তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

ইনগারি বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভাবতে শুরু করেছিল, সে কি কোনো ডেডলাইন মিস করেছিল, নাকি তাঁর বড় কোনো ভুল হয়েছিল। পরে চেক করে দেখে ই-মেইল প্রেরক কোম্পানিটি তাঁর কর্মস্থলই নয়।’

ইনগারি তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘আমার স্ত্রী একটি টার্মিনেশন ইমেইল পেয়েছে। ইমেইলটি দেখেই তাঁর বুক ধক করে ওঠে। এক সেকেন্ডের জন্য সে থমকে যায়। কোনো ডেডলাইন মিস করেছে? কিছু ভুল বলেছে? শেষে জানা গেল, যে কোম্পানিতে সে কখনো চাকরিই করেনি, সেখান থেকেই তাঁকে “বরখাস্ত” করা হয়েছে।’

এই ঘটনার মাধ্যমে ওই কোম্পানির এইচআর বিভাগের অসতর্কতার বিষয়টি তুলে ধরে ইনগারি অনুরোধ জানান, ভবিষ্যতে ইমেইল পাঠানোর সময় যেন প্রাপকের আইডি আরও ভালোভাবে যাচাই করা হয়। তিনি লেখেন, ‘প্রিয় এইচআর, দয়া করে পরেরবার ইমেইল আইডিটা একটু ভালো করে দেখবেন। এমন ভুলে তো কারও সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’

এই পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ব্যবহারকারী এমন ভুলের সম্ভাব্য গুরুতর পরিণতির কথা তুলে ধরেন। কেউ কেউ ঘটনাটিকে হাস্যরসের চোখে দেখলেও, অন্যরা এটিকে আধুনিক করপোরেট দুনিয়ায় বাড়তে থাকা অসতর্কতা ও চাকরির অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তাঁর উচিত একটি অপ্রত্যাশিত এবং কঠোর জবাব দেওয়া। এতে করে অন্তত তাঁরা বুঝতে পারার আগেই যে ভুল ঠিকানায় ইমেইল পাঠানো হয়েছে, তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’

আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘এটা কোনো ছোটখাটো ভুল নয়। একটি ভুল ইমেইল কারও পুরো দিন, সপ্তাহ—এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এইচআর সারাদিন সহমর্মিতার কথা বলে, অথচ স্প্যামের মতো করে বরখাস্তের ইমেইল পাঠায়।’

আরেকজন বলেন, ‘মানবিক কোনো মান যাচাই ছাড়াই যখন কোম্পানিগুলো সব অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় করে ফেলে, তখনই এমনটা ঘটে। এটি অত্যন্ত নিম্নমানের পরিচালনা এবং ব্র্যান্ডের জন্য ক্ষতিকর। ভাগ্য ভালো যে এটি কেবল একটি ভুল সতর্কবার্তা ছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের গ্রামে লিভ টুগেদার ও গর্ভধারণ নিয়ে ‘অদ্ভুত’ আইন জারি, সমালোচনার ঝড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৭
গ্রাম মাতবরদের এই নতুন আইন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। ছবি: সংগৃহীত
গ্রাম মাতবরদের এই নতুন আইন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। ছবি: সংগৃহীত

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামের শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় গ্রাম কমিটি। ভাইরাল হওয়া ছবির ভিত্তিতে জরিমানার তালিকাটি নিচে দেওয়া হলো:

প্রাদেশিক বৈষম্য: ইউনান প্রদেশের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে দম্পতিকে ১ হাজার ৫০০ ইউয়ান (প্রায় ২৩,০০০ টাকা) জরিমানা দিতে হবে।

বিয়ের আগে গর্ভধারণ: কোনো নারী বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে তাঁকে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লিভ ইন রিলেশন: বিয়ে ছাড়াই কোনো যুগল একত্রে বসবাস করলে প্রতিবছর ৫০০ ইউয়ান জরিমানা দিতে হবে।

সন্তান জন্মের সময়: বিয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কোনো দম্পতি সন্তান জন্ম দিলে তাঁকে ‘অকাল গর্ভধারণ’ হিসেবে গণ্য করে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানা করা হবে।

পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে এবং তা মেটাতে গ্রাম কর্তাদের ডাকলে উভয় পক্ষকে ৫০০ ইউয়ান করে জরিমানা দিতে হবে।

সামাজিক আচরণ: মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা করলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ইউয়ান এবং গুজব ছড়ালে ১ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘উইবো’-তে এই নোটিশ শেয়ার হওয়ার পর নেটিজেনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রাম কমিটি কি এখন মানুষের শোবার ঘরের পাহারাদার হতে চায়?’ কেউ কেউ এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। সমালোচকদের মতে, আধুনিক চীনের আইনি কাঠামোয় এ ধরনের নিয়মাবলি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল।

বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে স্থানীয় মেংডিং টাউন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর রেড স্টার নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নোটিশটি গ্রাম কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে টাঙানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই নিয়মগুলো অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং ইউনিয়ন বা টাউন সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই নোটিশটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি এবং এটি এখন কার্যকর নেই।’

লিংক্যাং গ্রামটির জনসংখ্যা বা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম কমিটিগুলো নিজেদের ছোটখাটো ‘রাজা’ মনে করে এ ধরনের অবৈধ নিয়ম জারি করে থাকে। এই ঘটনাটি চীনের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের সীমাবদ্ধতা এবং সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্মে খুশিতে মাতোয়ারা ইতালির এক গ্রাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মা-বাবার কোলে লারা বুসি ত্রাবুক্কো। ছবি: দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে
মা-বাবার কোলে লারা বুসি ত্রাবুক্কো। ছবি: দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে।

লারা বুসি ত্রাবুক্কো নামের এই শিশুটির আগমনে গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। তার খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়েছিল। এমনকি ৯ মাস বয়সী লারা এখন ওই অঞ্চলের প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লারার মা সিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেন, ‘যারা আগে এই গ্রামের নামও জানত না, তারাও এখন লারাকে দেখতে আসছে।’

লারার জন্ম এক দিকে যেমন আশার প্রতীক, অন্য দিকে এটি ইতালির ভয়াবহ জনসংখ্যা হ্রাসের চিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইতালিতে জন্মহার সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে (৩,৬৯,৯৪৪ জন)। প্রজনন হার প্রতি নারী পিছু মাত্র ১.১৮, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।

২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের উপাত্ত অনুযায়ী, আব্রুজ্জো অঞ্চলে জন্মহার গত বছরের তুলনায় আরও ১০.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে—তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ও দেশত্যাগের প্রবণতা। কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার বা নার্সারির অভাব। অনেক নারী মা হওয়ার পর আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেন না। পুরুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব এবং অনেকের সন্তান না নেওয়ার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্যাক্স বেশি হলেও সেই অনুযায়ী সামাজিক সেবা বা উন্নত জীবনযাত্রার অভাব।

জর্জিয়া মেলোনির সরকার এই পরিস্থিতিকে ‘জনসংখ্যার শীতকাল’ (Demographic Winter) হিসেবে অভিহিত করেছে। সংকট মোকাবিলায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি শিশুর জন্মের পর এককালীন ১ হাজার ইউরো ‘বেবি বোনাস’ এবং প্রতি মাসে প্রায় ৩৭০ ইউরো শিশু ভাতা দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে লারার মায়ের মতে, শুধু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; পুরো ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।

এদিকে, জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক শহরে প্রসূতি বিভাগ (Maternity Unit) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পালিয়ারা দে মার্সি থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত সুলমোনা শহরের হাসপাতালটি এখন বন্ধের ঝুঁকিতে। নিয়ম অনুযায়ী বছরে অন্তত ৫০০ শিশুর জন্ম না হলে সেই ইউনিট চালু রাখা কঠিন। ২০২৪ সালে সেখানে মাত্র ১২০টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে গর্ভবতী নারীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে, যা জরুরি অবস্থায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

গ্রামের মেয়র জিউসেপিনা পেরোজি আশা প্রকাশ করেন, লারার জন্ম অন্যদেরও পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু লারার ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। গ্রামটিতে কয়েক দশক ধরে কোনো শিক্ষক নেই, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলগুলোও শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠল শিশু, অলৌকিক জন্ম দেখল ক্যালিফোর্নিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১১
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।

সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।

অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।

হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।

গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।

সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’

বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত