Ajker Patrika

ইয়েতি কি সত্যি আছে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৫: ১৬
ইয়েতি কি সত্যি আছে

ছোটবেলা থেকেই বরফে ঢাকা হিমালয়, এর সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট, হিলারি-তেনজিং নোরগের এভারেস্ট জয়ের গল্পে মজে গিয়েছিলাম। আর হিমালয় নিয়ে নানা লেখা পড়তে পড়তে একসময় ইয়েতির কথাও জেনে গেলাম। ইয়েতি নিয়ে বই-পত্রিকায় যত পড়লাম, তত আবিষ্কার করলাম ইয়েতি হলো এক হিসাবে হিমালয়ের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলোর একটি, যার জট ছোটাতে পারেননি কেউ। আর এতে এর প্রতি আগ্রহটা আরও ডালপালা মেলল। চলুন তাহলে কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাই হিমালয়ের বরফরাজ্যে, ইয়েতির খোঁজে।

ইয়েতির মূল কাহিনি শুরুর আগে বরং ইয়েতি নিয়ে আমাকে আগ্রহী করে তুলতে ভূমিকা রাখা দুটি বইয়ের ব্যাপারে দু-চার কথা লিখি। শুরুতেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক’। কাঠমান্ডু থেকে ছোট্ট এক উড়োজাহাজে চেপে কাকাবাবু ও সন্তু চলে যায় হিমালয়ের দুর্গম এক এলাকায়। আমাদের বাসার ডাইনিং রুমের ছোট্ট খাটটায় শুয়ে স্কুলপড়ুয়া আমি ভরদুপুরে, প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও যেন সন্তুর সঙ্গে শীতে কাঁপছিলাম, কান পাতলেই যেন শুনতে পাচ্ছিলাম হিমবাহ পতনের কান ফাটানো আওয়াজ। কাকাবাবুর খুব সাবধানে আগলে রাখা ছোট্ট বাক্সের দাঁতটা কি তবে ইয়েতির? বরফের পাহাড়ের আড়ালে একমুহূর্তের জন্য দেখা যাওয়া ওই বিশাল ছায়ামূর্তিটা কী? শেষ পর্যন্ত কি ওরা দেখা পাবে ইয়েতির? এমন সব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে উত্তেজনায় টগবগ করছিলাম।

তারপর আসে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বের হওয়া টিনটিন ইন টিবেটের অসাধারণ অনুবাদ ‘তিব্বতে টিনটিন’। বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ এক বন্ধুর খোঁজ করতে ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও কুকুর স্নোয়ি বা কুট্টুসকে নিয়ে টিনটিন যায় তিব্বতে। রোমাঞ্চকর সেই অভিযানের পরতে পরতে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে ইয়েতি। সেই সঙ্গে ইয়েতিতে আরও বেশি করে মজে যাই আমি।

এভারেস্টসহ হিমালয় অভিযানে ইয়েতি কিংবা ইয়েতির পায়ের ছাপ দেখার দাবি করেন শেরপা ও পর্বতারোহীরাএবার তাহলে মূল গল্পে প্রবেশ করা যাক। হিমালয় পর্বতশ্রেণির বিভিন্ন পাহাড়ে রহস্যময় এক প্রাণী বিচরণের খবর মেলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী বিশালদেহী গরিলা কিংবা ভালুকসদৃশ লোমশ এক জন্তু ওটা। শুরুতে এক পশ্চিমা সাংবাদিক ধারণা করেছিলেন, তিব্বতিরা একে যে নামে ডাকে তার অর্থ ‘অপরিষ্কার তুষারমানব’। এর সূত্র ধরেই পশ্চিমারা একে এবমিনেবল স্নোম্যান বা খারাপ তুষারমানব নামে পরিচয় করিয়ে দিতে শুরু করে। আসলে গোটা ব্যাপারটাই ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি।

১৯২১ সালে হেনরি নিউম্যান নামের ওই সাংবাদিক এভারেস্ট অভিযান শেষে ফেরা একদল ব্রিটিশ অভিযাত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ওই অভিযাত্রীরা বিশাল আকারের পায়ের ছাপ দেখার বর্ণনা দেন পর্বতের সফেদ শরীরে, জানান তাঁদের গাইড বলেছে, এটা মেতোহ-কাংমি, অর্থাৎ ‘মেন-বিয়ার স্নোম্যান’-এর ছাপ। তবে নিউম্যান মেতোহর অর্থ ধরে নিলেন অপরিষ্কার। তাঁর মনে হলো, এর চেয়ে এবমিনেবল বা খারাপ তুষার মানবই বেশি জুতসই, ব্যাস আপাতত পরিচিতি পেয়ে গেল এবমিনেবল স্নোম্যান নামটি। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিকে যায়, নেপালিদের ডাকা নাম ইয়েতি, যার অর্থ বড় খাদক। এখন গোটা পৃথিবীর মানুষ এ নামেই চেনে একে।

কিন্তু সত্যি কি ইয়েতি আছে? এর উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করব এখন। বেশির ভাগের ধারণা, ইয়েতি হিমালয়ের কল্পকথার এক প্রাণী ছাড়া আর কিছু নয়। তবে কিংবদন্তি ও ইতিহাসের পাতা উল্টালে মনে হয় এ ধরনের কিছু একটা থাকাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। কথিত আছে, ইয়েতি রহস্য কৌতূহলী করে তোলে আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটকেও। সিন্ধু নদীর অববাহিকায় এসে রহস্যময় প্রাণীটির কথা শুনে দেখতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় লোকেরা অবশ্য তাঁকে নিরাশ করে, জানায়, এত নিচে ওই জন্তুটা বাঁচে না, তাই তাঁর সামনে হাজির করা সম্ভব নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, ইয়েতি আছে এ ব্যাপারে যাঁরা বাজি ধরতে রাজি, তাঁদের তুরুপের তাস কী? ওটা কি তবে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ও আলোকচিত্রী এরিক শিপটনের তোলা সেই ছবি। হিমালয় অঞ্চলের সংস্কৃতিতে ইয়েতি জড়িয়ে আছে বহু পুরোনো কাল থেকে। তবে একে ইউরোপ-আমেরিকার অভিযাত্রীদের সামনে নিয়ে আসায় মূল ভূমিকা এরিক শিপটনের।

পায়ের ছাপের এ ছবিটি ১৯৩৭ সালে ফ্রাঙ্ক এস স্মিথির তোলাসালটা ১৯৫১, এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর একটা বিকল্প পথের খোঁজ করছিলেন শিপটন ও তাঁর দলবল। ওই সময় অপ্রত্যাশিতভাবেই অদ্ভুত এক পায়ের ছাপের সামনে চলে আসেন। এর ছবিও তুলে নেন শিপটন। আর এভাবেই বলা, ইয়েতির কথা জানতে শুরু করে বিশ্ববাসী। সবচেয়ে বিখ্যাত ও অভিজ্ঞ হিমালয় অভিযাত্রীদের একজন বলে পরিচিত এরিক শিপটন ছবিটি তুলেছিলেন এভারেস্টের পশ্চিমে মেনলাং হিমবাহে, জায়গাটি সাগর সমতল থেকে প্রায় ২০ হাজার ফুট উচ্চতায়। পায়ের ছাপটি ছিল ১৩ ইঞ্চি লম্বা। অনেকেই একে বিবেচনা করেন হিমালয়ে তোলা সবচেয়ে চমক জাগানো ছবি হিসেবে। ওই সময় ইয়েতি নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে যায়। নেপাল সরকার তো ১৯৫০-এর দশকে ইয়েতি শিকারের লাইসেন্স পর্যন্ত দিয়েছিল। যদিও একটি ইয়েতিকেও জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় হাজির করা সম্ভব হয়নি।

তবে ইয়েতি নিয়ে যাঁরা তর্কে জড়ান, তাঁদের বড় একটি অংশের ধারণা, তবে ইয়েতিপ্রেমীরা এটা মানতে নারাজ। শিপটন ওই ছবিটি তোলার আগেই ইয়েতির পায়ের ছাপ এমনকি জন্তুটাকে দেখার দাবি এসেছে হিমালয় অভিযাত্রী এবং শেরপাদের কাছ থেকে। পশ্চিমা বিশ্বেও এর খবর একটু একটু করে রটছিল।

ইউরোপীয়দের মধ্যে হিমালয়ের গহিনে এ ধরনের কিছু একটা থাকতে পারে বলে প্রথম যাঁরা ধারণা দেন, তাঁদের একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী চার্লস হওয়ার্ড-বারি। ১৯২১ সালের হিমালয় অভিযানে লাখপা লা পাসের কাছে ইয়েতির পায়ের ছাপ পাওয়ার কথা বলেন। তাঁর বই ‘মাউন্ট এভারেস্ট: দ্য রিকনিসনস, ১৯২১’-এ ঘটনাটির উল্লেখ করেন তিনি। বারি দাবি করেন, মানুষের মতো কোনো প্রাণীর বেশ বড় পায়ের ছাপ খুঁজে পান তিনি। পরে স্থানীয়দের কাছে জানতে পারেন, হিমালয়ের গভীরে ঘুরে বেড়ানো বুনো, লোমশ এক রহস্যময় জন্তুর ছাপ এগুলো।

১৯২৫ সালে এন এ টমবাজি নামের এক আলোকচিত্রী ও রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির সদস্য দাবি করে বসেন, জেমু হিমবাহের কাছে ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় মানবসদৃশ আশ্চর্য এক প্রাণী দেখেছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে ফ্রাংক এস স্মিথি নামের এক অভিযাত্রীও ইয়েতির পায়ের ছাপের ছবি তোলার দাবি করেন। ১৯৫২ সালে পপুলার সায়েন্সে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪২ সালে দুই পর্বতারোহী এভারেস্ট অভিযানে তাঁদের পোয়া মাইল নিচে আট ফুটি কালো দুটো অবয়ব হেঁটে যাওয়ার কথা বলেন। ব্রায়ান বার্নি নামের অপর এক অভিযাত্রী আবার অরুণ উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ইয়েতির পায়ের ছাপ আবিষ্কারের কথা বলেন।

১৯৫৪ সালে ডেইলি মেইলের ‘স্নোম্যান’ অভিযানে ইয়েতির খুলির চামড়া বলে সন্দেহ করা জিনিসটিকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছেইয়েতিতে সবচেয়ে বেশি মোহিত হওয়া অভিযাত্রীদের তালিকা করলে ওপরের দিকে থাকবেন ইতালিয়ান পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার। ১৯৮৬ সালে তিব্বতের কোনো এক জায়গায় প্রথম ইয়েতি দেখার দাবি করেন মেসনার। সেদিন হাঁটতে হাঁটতে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অন্ধকার নেমে এলে সামনে কালো, বিশাল এক ছায়ামূর্তি আবিষ্কার করেন। মানুষের মতোই হাঁটছিল, তবে আরও দ্রুতগতিতে, শক্তিশালী পদক্ষেপে। ওই রাতেই আবারও ওটাকে দেখেন, প্রায় সাত ফুট ছিল এর দৈর্ঘ্য। বলা চলে, এ ঘটনাই প্রাণীটির আচ্ছন্ন করে ফেলে। পরের এক যুগ ব্যস্ত থাকেন ইয়েতির সন্ধানে।

এই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্যবার হিমালয়ে অভিযানে গিয়েছেন। বেশির ভাগ সময় হতাশাই জোটে তাঁর কপালে। অবশ্য লাসা আর কারাকোরাম এলাকায় আরও কয়েকবার ইয়েতি দেখার কথা বলেন তিনি। শেষমেশ অবশ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছান—ওগুলো পার্বত্য ভালুকই। এদিকে আর্নস্ট স্ক্যাফের নামের এক জার্মান অভিযাত্রীও ১৯৩৯ সালে জার্মান সরকারের সহায়তায় এক গোপন মিশন থেকে ফিরে একই যবনিকা টানেন ইয়েতি রহস্যের। স্ক্যাফেরের ভাষায় ইয়েতি একটা প্রমাণ সাইজের ভালুক ছাড়া আর কিছু নয়।

এমনকি ১৯৫৩ সালে স্যার অ্যাডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে এভারেস্ট অভিযানের সময় বড় কোনো প্রাণীর পায়ের ছাপ দেখার কথা বলেন। নোরগেকে তাঁর প্রথম আত্মজীবনীতে লিখেছেন নিজে না দেখলেও তার বাবা রহস্যময় এই জন্তুকে দুই বার দেখেছেন। অবশ্য দ্বিতীয় আত্মজীবনীতে সন্দিহান মনে হয়েছে তাঁকে।

১৯৫৪ সালে ডেইলি মেইল ‘স্নোম্যান’ নামের অভিযানের আয়োজন করে ইয়েতির খোঁজে। তখন একটি গুম্ফা থেকে কোনো প্রাণীর মাথার খুলির কিছু লোমও পাওয়া যায়, স্থানীয়দের দাবি, ওগুলো ইয়েতির লোম। একটু অন্ধকারে একে কালো থেকে গাঢ় বাদামি এবং উজ্জ্বল আলোয় লালচে দেখাচ্ছিল। কিন্তু গবেষণায় উঠে আসে ওটা খুরওলা কোনো প্রাণীর কাঁধের লোম।

টিনটিনের সারা জাগানো বই, ‘টিনটিন ইন টিবেট’এদিকে স্যার হিলারির ১৯৬০ সালের অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল ইয়েতির ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। খুমজাং নামে এক গুম্ফা থেকে স্থানীয়রা ইয়েতির খুলির চামড়া বলে দাবি করা জিনিসটা লন্ডনে নিয়েও আসেন। অবশ্য বিজ্ঞানীরা পরে নিশ্চিত হোন ওগুলো অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণী সেরোর লোম।

আপনি যদি ইয়েতিপ্রেমী হয়ে থাকেন, তবে অক্সফোর্ডের জিন বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান সাইকেসের পরীক্ষার ফলাফল আপনাকে হতাশই করবে। ২০১৩ সালে ইয়েতিভক্তদের ইয়েতির চুল, দাঁতসহ শরীরের অন্য কোনো অংশ হাজির করার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি, পরীক্ষার জন্য। যে ৫৭টি নমুনা পান, এর ৩৬টি বাছাই করা হয় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য। ওই এলাকায় বিচরণ করা বিভিন্ন প্রাণীর জিনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় ওগুলো। বেশির ভাগই মেলে ভালুকের সঙ্গে। অবশ্য এখানেও চমক ছিল। দুটি নমুনা, যার একটি পাওয়া গিয়েছে ভুটানে ও অপরটি ভারতে, এমন এক প্রজাতির ভালুকের সঙ্গে মিলে যায়, যেগুলো ৪০-১২০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে! পরে কয়েকজন বিজ্ঞানী ওই দুটি নমুনা পরীক্ষা করে দাবি করেন, ওগুলো সাধারণ ভালুকেরই নমুনা!

২০১৭ সালে আরেক দল গবেষক হিমালয় ও তিব্বত থেকে সংগ্রহ করা লোম, মল, দাঁত পরীক্ষা করে জানান, ওগুলো তিব্বতি ভালুকের নমুনা। তবে গবেষকদের এত সব যুক্তির পরও কিন্তু ইয়েতিপ্রেমীরা প্রাণীটি নেই এটা মানতে রাজি ছিলেন না। তবে বহু দিন ধরে ইয়েতি সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই ২০১৯ সালে ভারতীয় সেনারা হিমালয়ের মাকালু বেস ক্যাম্পে ইয়েতির পায়ের ছাপ খুঁজে পাওয়ার দাবি করার পাশাপাশি এর ছবিও প্রকাশ করে। আর এতে ইয়েতি বিশ্বাসীরা যেন হালে পানি পান।

ইয়েতি নিয়ে বানানো হয়েছে অনেক সিনেমা, টিভি সিরিজ, ভিডিও গেম এবং কার্টুন ছবি। শুরুতে যে পাহাড়চূড়ায় ‘আতঙ্ক’ নামে বইটির কথা বলেছিলাম, তার কাহিনি নিয়ে ইয়েতি অভিযান নামে একটি বাংলা সিনেমা তৈরি করেছেন কলকাতার নামি পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। ২০১৭ সালের ঘটনা এটি। কালক্রমে ইয়েতি পরিণত হয়েছে নেপাল, ভারত, ভুটান ও তিব্বত জুড়ে সংস্কৃতি ও ব্যবসার অনুষঙ্গে। ভুটানে ইয়েতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ডাক টিকিট। নেপালে আছে ইয়েতি এয়ারলাইনস, সম্প্রতি যাদের একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। মোদ্দা কথা বিশেষজ্ঞরা যাই বলুন, রোমাঞ্চপ্রেমীদের ইয়েতির প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়েনি একটুও। বরং যত দিন গড়িয়েছে, রহস্যে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা। কি ইয়েতির কথা আগে জানা না থাকলেও এখন নিশ্চয় ইয়েতি নিয়ে কৌতূহলীদের কাতারে ভিড়ে গেছেন আপনিও।

সূত্র. বিবিসি, উইকিপিডিয়া, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশের খুঁটিতে ৩৩,০০০ ভোল্টের লাইন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যর্থ ব্যবসায়ী ফুড ডেলিভারি করে লাখপতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১১
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

সাধারণত অস্থায়ী পেশা হিসেবে ফুড ডেলিভারির চাকরি অনেকেই করেন। কেউ আবার মূল চাকরির ফাঁকে ফুড ডেলিভারি দেন অতিরিক্ত আয়ের জন্য। কিন্তু এ কাজ করেও যে লাখ টাকার মালিক হওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং নামের এক তরুণ।

ফুড ডেলিভারি করতে করতে মাত্র পাঁচ বছরে ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান সঞ্চয় করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান। প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ আর কঠোর মিতব্যয়িতাই তাঁকে লাখপতি বানিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

ব্যর্থ ব্যবসা, তারপর নতুন শুরু

ঝাংয়ের বাড়ি ফুজিয়ান প্রদেশের ঝাংঝো শহরে। ২০১৯ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে তিনি একটি নাশতার দোকান চালু করেন। শুরুতে কিছুটা আশাব্যঞ্জক হলেও কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসার অবস্থা হয়ে যায় টালমাটাল। লোকসান দিন দিন বাড়তে থাকে, ক্রেতা কমে যায় এবং প্রতিদিনের খরচ টানতে গিয়ে তিনি চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ করতে বাধ্য হন এবং তাঁর কাঁধে চাপে প্রায় ৫০ হাজার ইউয়ানের ঋণ।

চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন
চীনের সাংহাই শহরের ঝাং শুয়েচিয়াং। ফুড ডেলিভারি করতে মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সমান আয় করেন। ছবি: এসইটিএন

এ ব্যর্থতা তরুণ ঝাংকে মানসিকভাবে দমিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি পরিবারকে বিষয়টি বুঝতে দিতে চাননি। তাই সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে একাই রওনা দেন সাংহাইয়ের পথে। বড় শহরে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য সহজ ছিল না। তবুও লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শোধ করা, আবার উঠে দাঁড়ানোর মতো মূলধন জোগাড় করা এবং নিজের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা।

১৪ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং অবিশ্বাস্য পরিশ্রম

সাংহাইয়ের মিনহাং জেলায় উঝং রোডের একটি ডেলিভারি স্টেশনে তিনি কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টা ৪০ থেকে রাত ১টা পর্যন্ত বৃষ্টি, ঠান্ডা কিংবা গরম—সব পরিস্থিতিতেই তিনি মাঠে থাকেন ডেলিভারির কাজে। সবার আগে অর্ডার ধরতে এবং দ্রুত ডেলিভারি দিতে তিনি সব সময় ছুটে চলেন। ডেলিভারি স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ান বলেন, ‘ছেলেটা খুব কম কথা বলে, কিন্তু কাজ করে অবিশ্বাস্য পরিশ্রম দিয়ে। প্রতিদিনই দেখি সে সময় বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে।’

কাজের দক্ষতার কারণে সহকর্মীরা তাঁকে ডাকেন ‘অর্ডারের রাজা’ নামে। টানা দীর্ঘ শিফটের পরও তিনি প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নিশ্চিত করেন, যাতে পরদিন আবার পুরো শক্তিতে কাজ করতে পারেন।

কঠোর মিতব্যয়িতা

ঝাংয়ের সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মিতব্যয়ী জীবনযাপন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি কোনো খরচ করেন না। বাইরে খাওয়া, বিনোদন, ভ্রমণ—কোনো কিছুতেই ব্যয় করেন না তিনি। এমনকি চন্দ্র নববর্ষেও তিনি বাড়ি যান না। তখন শহরে থেকে উচ্চমূল্যের অর্ডার ডেলিভারি করেন। এই কঠোর জীবনযাপন ও পরিশ্রম মিলিয়ে পাঁচ বছরে তাঁর মোট আয় দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ইউয়ান। প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে সঞ্চয় হয় ১১ লাখ ২০ হাজার ইউয়ান।

ঝাং জানান, তাঁর পরিবার এখনো জানে না যে তিনি ঋণ শোধ করে বড় অঙ্কের সঞ্চয় করেছেন। তিনি বলেন, ‘একবার ব্যর্থ হয়েছি বলে থেমে থাকব না। ভবিষ্যতে আবার ব্যবসা শুরু করার পুঁজি হিসেবেই এ টাকা জমাচ্ছি।’

চীনের তরুণদের নতুন পেশা হিসেবে ডেলিভারি

অর্থনৈতিক ধাক্কা ও চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মধ্যে চীনে ডেলিভারি পেশা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ঝাওপিনের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটিতে ডেলিভারি কর্মীদের মধ্যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীর হার দুই বছরে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। আয়ও অনেক অফিসকর্মীর চেয়ে বেশি। বেইজিং বা সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে যেখানে সাধারণ একজন অফিসকর্মী মাসে গড়ে আয় করেন ৬ হাজার ইউয়ান, সেখানে ডেলিভারি ড্রাইভারদের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ৩৫০ ইউয়ান পর্যন্ত। ব্যস্ত দিনে ঝাংয়ের মতো পরিশ্রমী ডেলিভারি কর্মীরা দিনে হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারেন।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশের খুঁটিতে ৩৩,০০০ ভোল্টের লাইন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানের ডানায় আটকে গেল প্যারাস্যুট, অলৌকিকভাবে বাঁচলেন স্কাইডাইভার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৯
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত
বিমানটির ডানায় এভাবেই আটকে গিয়েছিলেন স্কাইডাইভার। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঘটে বিস্ময়কর সেই দুর্ঘটনাটি। সেদিন প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন এক স্কাইডাইভার। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ফার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের টুলি এয়ারপোর্টের আকাশে ১৭ জন প্যারাস্যুটার একটি ‘সিক্সটিন-ওয়ে ফরমেশন জাম্পে’ অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন যখন বিমান থেকে বের হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাঁর রিজার্ভ প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেলটি বিমানের উইং ফ্ল্যাপে আটকে যায়। এর ফলে মুহূর্তের মধ্যেই রিজার্ভ প্যারাস্যুট খুলে যায় এবং বাতাসের হঠাৎ টানে পেছনের দিকে ছিটকে গিয়ে বিমানের ডানায় ধাক্কা খান এবং আটকে যান ওই স্কাইডাইভার। এতে বিমানের ডানায় ও স্ট্যাবিলাইজারে গুরুতর ক্ষতি হয়।

প্যারাস্যুটের দড়ি স্ট্যাবিলাইজারের চারপাশে পেঁচিয়ে যাওয়ায় স্কাইডাইভার ঝুলন্ত অবস্থায় অচল হয়ে পড়েন। অন্য প্যারাস্যুটারেরা জাম্প সম্পন্ন করলেও দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছিলেন। ঝুলে থাকা প্যারাস্যুটার জীবন বাঁচাতে তাঁর হুক নাইফ বের করে রিজার্ভ প্যারাস্যুটের ১১টি লাইন কেটে নিজেকে মুক্ত করেন। এরপর তিনি মূল প্যারাস্যুট খুলতে সক্ষম হন, যদিও রিজার্ভ প্যারাস্যুটের কিছু লাইন তখনো তাঁকে জড়িয়ে ছিল।

এদিকে পাইলট হঠাৎ বিমানটিকে ওপরের দিকে ঢলে যেতে এবং গতি কমে যেতে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন বিমানটিতে ত্রুটি হয়েছে। পরে তাঁকে জানানো হয়, একজন স্কাইডাইভার বিমানের পেছনে ডানায় ঝুলে আছেন। এ অবস্থায় পাইলট জরুরি ‘মে ডে’ বার্তা পাঠান এবং প্রয়োজনে নিজেও বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

অবশেষে ২,৫০০ ফুট উচ্চতায় এসে পাইলট বুঝতে পারেন, বিমানটি তাঁর নিয়ন্ত্রণেই আছে। ছোট-খাটো আঘাত নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেন ওই স্কাইডাইভার এবং পাইলটও ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

এই ঘটনার পর স্কাইডাইভারদের প্রতি এক সতর্কবার্তায় ‘অস্ট্রেলিয়ান ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো’ বলেছে—বিমানের দরজার কাছে প্যারাস্যুটের হ্যান্ডেল সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্ক হতে হবে এবং জরুরি অবস্থার জন্য হুক নাইফ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। ব্যুরো আরও জানিয়েছে, বিমানের ওজন ও ভারসাম্য নির্ণয় স্কাইডাইভিং অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অতীতে এসব কারণে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশের খুঁটিতে ৩৩,০০০ ভোল্টের লাইন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সময়ের আগে অফিসে যাওয়ায় চাকরিচ্যুত নারী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৯
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক
কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীকী ছবি: ফ্রিপিক

নিয়ম শৃঙ্খলা বড়ই আজব জিনিস। যেমন, সময় মতো অফিসে উপস্থিত হওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সময়ের আগে যদি নিয়মিত নিয়ম নেমে অফিস করতে শুরু করেন, আর তাতে যদি অফিস আপত্তি জানায়, সেটা আবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের মধ্যে পড়তে পারবে! অন্তত স্পেনের একটি আদালত তাই বলছেন। নির্দিষ্ট সময়ে বা আগে অফিসে উপস্থিত হয়ে চাকরি হারিয়েছেন সে দেশের এক নারী কর্মী! চাকরি ফিরে পেতে তিনি গিয়েছিলেন আদালতে। আদালত জানিয়েছেন, তিনিই আসলে দোষ করেছেন!

স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলের একটি লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ২২ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর চাকরিচ্যুতি দেশটিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, তিনি নিয়মিত নির্ধারিত সময়ের আগেই অফিসে পৌঁছাতেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এই আচরণ বরং কাজের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর সেই নারী আদালতে মামলা করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে সময়ের আগে অফিসে হাজিরা দেওয়ার এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করার অভিযোগে তাঁকে বরখাস্ত করে। তিনি এই বরখাস্তের বিরুদ্ধে ভ্যালেন্সিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আদালতে তাঁর যুক্তি, অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে আগে আসা প্রমাণসাপেক্ষ না হওয়ায় গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। ফলে প্রাথমিকভাবে বরখাস্তের রায় শ্রম আইন অনুযায়ী বৈধ ধরা হয়েছে।

নিয়মিত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে অফিসে পৌঁছানো

নারী কর্মীর চাকরির চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, তাঁর কর্মঘণ্টা শুরু হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে অফিসে পৌঁছাতেন। এই অভ্যাস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এতে তাঁর সুপারভাইজারদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরক্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হতে থাকে। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাঁকে সতর্ক করার জন্য একাধিকবার মৌখিকভাবে এবং লিখিত নোটিশ জারি করে। নোটিশে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, কর্মীকে অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক সময় মেনে অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তবে এসব সতর্কতা উপেক্ষা করে তিনি আগেভাগে অফিসে আসা চালিয়ে যান, যা কর্মক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

সতর্কতার পরও অভ্যাস না বদলানো

প্রতিষ্ঠানের একাধিক সতর্কতা অগ্রাহ্য করে তিনি আরও ১৯ বার সময়ের আগে অফিসে এসে হাজিরা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি ডিউটি শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশনে লগইন করতেও উদ্যোগ নেন, যা প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম বিরোধী।

প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ

আদালতে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তি দিয়েছে, আগেভাগে আসাকে ইতিবাচক মনে হলেও বাস্তবে তা দলগত কাজে কোনো সুফল আনছিল না। প্রতিষ্ঠানটি জানায়—

  • ওই সময় সহকর্মীদের প্রস্তুতি ছাড়া তাঁকে কোনো কাজ দেওয়া যেত না।
  • কাজের প্রবাহ নির্দিষ্ট সমন্বয়ের ওপর নির্ভরশীল।
  • তাঁর আগাম উপস্থিতি কর্মপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করছিল।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আগাম কাজ শুরুর চেষ্টা দলগত সহযোগিতা ব্যাহত করছিল।

কর্মীর যুক্তি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি

কর্মী দাবি করেন, অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে তাঁর বেশি সময় প্রয়োজন ছিল। তবে আদালতে এই দাবি প্রমাণ করার মতো কোনো নথি তিনি দিতে পারেননি। সময়ের আগে অফিসে আসার বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত একটি গাড়ি বিক্রি করার গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

বিচারকের সিদ্ধান্ত

বিচারক রায়ে বলেন, কর্মকর্তার নির্দেশ অমান্য, নিয়মভঙ্গ এবং একই আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি স্প্যানিশ শ্রম আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করা আইনসম্মত।

শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ আলবের্তো পায়া মন্তব্য করেন, এই রায় প্রমাণ করে, কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক

ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পর স্প্যানিশ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘দেরি করলে শাস্তি, আগে এলে বরখাস্ত। তাহলে কর্মীর মূল্যায়ন কোথায়!’ অন্যদিকে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলছেন, নির্ধারিত নিয়ম ভাঙা কোনোভাবেই প্রশংসনীয় নয়।

সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশের খুঁটিতে ৩৩,০০০ ভোল্টের লাইন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাওরে বিদ্যুৎ সংযোগ: বাঁশের খুঁটিতে ৩৩,০০০ ভোল্টের লাইন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি

পটুয়াখালীর কলাপাড়া: এক রাখাইন পরিবারের ৪০ একর জমি দখল

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইমরান খানের জন্য ইলন মাস্কের কাছে জেমিমার আবেদন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত