Ajker Patrika

ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরেও আছে গৌরবের গল্প

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ৪৪
ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরেও আছে গৌরবের গল্প

জনপ্রিয়তার নিক্তিতে এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে এগিয়ে ক্রিকেট আর ফুটবল। তবে এ দুইয়ের বাইরে অন্য খেলাতেও গত পাঁচ দশকে আছে বলার মতো অনেক অর্জন। আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দেখে নেওয়া যাক সেসব অর্জন।

মুজিবর রহমান মল্লিক।মুজিবরের সোনার হাসি (১৯৮৪) 
নেপালের কাঠমান্ডু। সাউথ এশিয়ান (সাফ) গেমসের প্রথম আসর। ২০০ অ্যাথলেট নিয়ে যখন সোনা জিততে না পারার হতাশায় ডুবতে বসেছিল বাংলাদেশ, তখনই সতীর্থদের আলো দেখালেন এক অ্যাথলেট। ট্রিপল জাম্পে সোনা জিতলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এসএ গেমসে প্রথম সোনাজয়ীকে পেল বাংলাদেশ। 

শুধু একটি নয়, একই আসরে আরেকটি সোনাজয়ী ইভেন্টের অংশীদার ছিলেন মুজিবর রহমান। ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতেও সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। সাইদুর রহমান ডন, শাহ আলম ও আফতাব মোল্লার সঙ্গে চতুর্থ সঙ্গী ছিলেন মুজিবর রহমান। দেশে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা তো ছিলই, নিজের গ্রামের বাড়িতে দুই কিলোমিটারজুড়ে রাস্তা সাজিয়ে মুজিবরকে বরণ করে নিয়েছিল তাঁর গ্রামবাসী। 

শাহ আলমদ্রুতমানবের ট্র্যাজেডির বিদায় (১৯৯০) 
সাফল্যে তিনি এখনো দেশের সর্বকালের সেরা স্প্রিন্টার। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশের স্প্রিন্টারদের পেছনে হয়েছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার ‘দ্রুতমানব’। তা-ও একবার নয়, দুই দুইবার। শাহ আলমের কাছে আরও পাওয়ার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিজেই দিলেন নিজেকে ছুটি। 

ঢাকার মাঠে ১৯৮৫ সাফ গেমসের আসরে নতুন রেকর্ড ১০.৮০ সেকেন্ড সময়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতেছিলেন শাহ আলম। দুই বছর পর কলকাতা সাফ গেমসেও ধরে রাখলেন সোনা। সেটাও নিজের রেকর্ড ভেঙে। ১০.৭৯ সেকেন্ডে গড়লেন নতুন আরেক রেকর্ড। 

১৯৮৯ ইসলামাবাদ সাফ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শাহ আলম। তাতে পূরণ হয়নি হ্যাটট্রিক ‘দ্রুতমানব’ খেতাব জয়ের স্বপ্ন। সেই ব্যথা বুকে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন ১৯৯০ বেইজিংয়ে এশিয়ান গেমসের জন্য। গেমসের আগেভাগে ছুটিতে গিয়েছিলেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। ফেরার পথে ২৯ মে ট্রাকের ধাক্কায় নিভে যায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা অ্যাথলেটের প্রাণ। ঠিক ২০ বছর পর আরেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাদ্রাজ সাফ গেমসে ২০০ মিটারে সোনাজয়ী স্প্রিন্টার মাহবুব আলম। সেই দুর্ঘটনার ঘাতক ছিলও এক ট্রাক! 

শাহানা পারভীন।শাহানার সোনাজয়ী লক্ষ্যভেদ (১৯৯১) 
১৯৮৪ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে বাংলাদেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন মুজিবর রহমান মল্লিক। এর পরের আসরগুলোতে নিয়মিত সোনা এলেও অপূর্ণতা ছিল একটা জায়গাতেই, কোনো নারী অ্যাথলেটের কাছ থেকেই সোনা পাচ্ছিল না দেশ। 

সেই আক্ষেপ মিটেছিল ১৯৯১ সালে। কলম্বো সাফ গেমসে। সেই আসরে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল শুটিং। আর তাতেই দেশকে সাফল্য এনে দেন কাজী শাহানা পারভীন। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশি নারীর সেটাই ছিল প্রথম সোনা জয়। অংশ নেন ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম নারীও তিনি। ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সাফ গেমসেও তাঁর লক্ষ্যভেদে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। 

বিমল চন্দ্র তরফদার।বিমলের উত্থান-পতন (১৯৯৩) 
শাহ আলমের অকালপ্রয়াণে স্প্রিন্টে বাংলাদেশের আধিপত্য কমে যাবে কি না, এমন একটা সংশয় ছিলই। সেই সংশয় কেটে গেল ঢাকার মাঠে ১৯৯৩ সাফ গেমসে। ১০.৬১ সেকেন্ড সময়ে নতুন রেকর্ড গড়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনলেন ১৯ বছরের তরুণ বিমল চন্দ্র তরফদার। সোনা জিতলেও নিজের জীবনের অনিশ্চয়তায় ডুবতে বসেছিলেন বিমল। ১৯৯৮ আটলান্টা অলিম্পিকে অংশ নিতে গিয়ে আর দেশেই ফিরলেন না। পরিবার নিয়ে তিনি এখন নিউইয়র্কে থাকেন।

 আসিফ হোসেন খান কমনওয়েলথ জয়ী আসিফ (২০০২) 
বয়স মাত্র ১৫। বাংলাদেশ গেমসে শুটিংয়ে তৃতীয় হওয়া এক কিশোরকে নিয়ে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে খেলতে গিয়েছিল। কেউ ভাবেওনি আসিফ হোসেন খান নামের সেই কিশোর গড়বে ইতিহাস! 

খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না বলেই হয়তো ইতিহাস গড়তে পেরেছিলেন আসিফ। কিশোর বয়স চাঞ্চল্য, চাপকে পাত্তা না দিয়েই ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে পেছনে ফেলে কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে সোনা জিতেছিলেন আসিফ। ৬৯১ দশমিক ৯ স্কোরে গড়েন বিশ্ব রেকর্ড। 

কৈশোরের সেই সাফল্যের পর যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যান আসিফ। কমনওয়েলথের পর বড় সাফল্য বলতে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে সোনা জয়। ২০০৬ সালে পুলিশের কাছে মার খাওয়ার পর শুটিং থেকে যেন পুরোপুরি মুছে গেল আসিফের নাম। যাকে হারিয়ে জিতেছিলেন কমনওয়েলথ গেমসের সোনা, সেই অভিনব বিন্দ্রা ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে জিতলেন সোনা। আক্ষেপের নাম হয়ে রইলেন আসিফ। 

গলফার সিদ্দিকুর রহমান।সিদ্দিকুরের ব্রুনাই জয় (২০১০) 
ধনীদের খেলা গলফের সম্পর্কে এই দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের ধারণা খুব বেশি ছিল না বললেই চলে। বিশ্ব খেলাধুলার নিয়মিত যাঁরা খোঁজখবর রাখতেন তাঁরা হয়তো জানতেন যে এই গলফ খেলেই বিলিয়নিয়ার হয়েছেন টাইগার উডস নামের এক মার্কিন গলফার। এক টুর্নামেন্ট জিতলে ন্যূনতম আয় করা সম্ভব সেটাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্যাডিবয় থেকে পেশাদার গলফার সিদ্দিকুর রহমান। 

২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতে হইচই ফেলে দেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর সেই শিরোপায় দেশের মানুষের কাছে নতুন করে জন্ম নেয় গলফ নিয়ে আগ্রহ। প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ব্রুনাই এশিয়ান ট্যুর জিতেছিলেন সিদ্দিক। পুরস্কার হিসেবে পান ৫৪ হাজার ডলার। ২০১৩ সালে ভারতের দিল্লিতে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন জেতেন। পুরস্কার পেয়েছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খেলেন গলফ বিশ্বকাপে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রিও অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়ার কৃতিত্বটাও তাঁর দখলে। 

মাবিয়ামাবিয়া কাঁদলেন, কাঁদালেন (২০১৬) 
মাথার ওপর জাতীয় পতাকা। বাজছে জাতীয় সংগীত। সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে এক অ্যাথলেটের অঝোরে কান্না। ২০১৬ গুহাটি সাফ গেমসে মাবিয়া আক্তার সীমান্তের এই কান্না নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়।

কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে সাফল্যের হাসিতে না হেসে কেঁদেছিলেন মাবিয়া। ৬৩ কেজি শ্রেণিতে ভারোত্তলনে প্রথম নারী হিসেবে জিতেছিলেন সোনা। পদক, দেশ আর জাতীয় সংগীতের বাজনায় আবেগকে মানাতে পারছিলেন না মাবিয়া। সারা জীবনের দুঃখ, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের চিত্র হয়ে উঠেছিল মাবিয়ার সেই কান্না। 

রোমান সানারোমান সানার অলিম্পিকের টিকিট (২০১৯) 
অ্যাথলেটিকসে বড় কোনো সাফল্য নেই। ফুটবল যেন ডুবতে বসেছে। দেশের মানুষের সব চাওয়া তাই ক্রিকেটকে ঘিরেই। আড়ালে, নিভৃতে উঠে এসে হঠাৎই চমকে দিয়েছে আর্চারি নামের অজানা এক খেলা। ক্রিকেটের পর গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক সাফল্য এসেছে এই আর্চারি থেকেই। বিশেষ করে বললে রোমান সানা নামের এক তিরন্দাজ থেকে।

রোমান যে আসছেন তার নমুনা পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক বছর ধরেই। ২০১৫ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে এশিয়া কাপ স্টেজ-২ ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে রিকার্ভ এককে প্রথম সোনা জয়। ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে ঢাকায় প্রথম আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ইলিমিনেশন রাউন্ডের রিকার্ভ ডিভিশনের পুরুষ দলগত ইভেন্টে সানোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলামকে নিয়ে এবং মিশ্র দলগত ইভেন্টে বিউটি রায়কে নিয়ে সোনা জয় তো ছিলই। ২০১৯ সালে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে জেতেন রুপা। 

কিন্তু রোমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাফল্যটা আসে ২০১৯ সালের জুনে। নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি সরাসরি জায়গা পান টোকিও অলিম্পিকে। এই বছরের মে মাসে লোজানে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের স্টেজ-২ এর রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈত ইভেন্টে দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে জিতেছেন রুপাও।

পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাকিবের রেকর্ড ভেঙে আইসিসির সেরাদের তালিকায় তাইজুল

ক্রীড়া ডেস্ক    
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি

টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন তাইজুল ইসলামের। সাকিব আল হাসানের ২৪৬ উইকেট ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গত মাসে গড়েছেন তাইজুল। আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সেরাদের তালিকায় নাম উঠে গেছে তাইজুলের।

আইসিসি আজ নিজেদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পুরুষ, নারী দুই বিভাগেই নভেম্বর মাসের সেরা ক্রিকেটারের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। ছেলেদের ক্রিকেটে গত মাসের সেরাদের তালিকায় তাইজুলের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার সায়মন হারমার ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ। তাইজুল গত মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্টই খেলেছেন। আইরিশদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন সায়মন হারমার। এই ১৭ উইকেট তিনি পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। ভারতকে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিনার ম্যান অব দ্য সিরিজও হয়েছেন। নভেম্বর মাসের সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা পাকিস্তানের নাওয়াজেরও গত মাসটা দুর্দান্ত কেটেছে। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। যার মধ্যে ১০টিই নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর ফাইনালসেরা, সিরিজসেরা দুটি পুরস্কারই তিনি পেয়েছেন। ব্যাটিংয়ে করেছেন ১৫৬ রান। যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর একটি ফিফটি রয়েছে। নাওয়াজের সমান ১৫ উইকেট নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি।

আইসিসির নভেম্বরে মেয়েদের মাসসেরাদের তালিকাতেও তিন ক্রিকেটার তিন দেশের। ভারতের শেফালি ভার্মার সঙ্গে এই তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন থাইল্যান্ডের থিপাচা পুত্তাওয়াং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইশা ওঝা। শেফালি গত ২ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ভারতের নারী ক্রিকেটের

ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তিনি পেয়েছেন ফাইনালসেরার পুরস্কার। ৭৮ বলে ৮৭ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচ সাকিব খেলেছেন গত বছরের অক্টোবরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে। গত ১৪ মাসে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার সুযোগ পাননি। যদি নিয়মিত হতে পারতেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে তাইজুলের বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর লড়াইটা হতো সমানে সমানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন নন সাকিব। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগ ক্রিকেট (এমআইএলসি) এই দুই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘রোনালদোর ক্ষুধা কখনোই শেষ হওয়ার নয়’

ক্রীড়া ডেস্ক    
প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে ৯৫০-এর বেশি গোল করে ফেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।  ছবি: এএফপি
প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে ৯৫০-এর বেশি গোল করে ফেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ছবি: এএফপি

বয়স শুধুই একটি সংখ্যা—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে স্বাভাবিকভাবেই এই কথা মনে হবে সবার আগে। পর্তুগাল দল, আল নাসর—সব জায়গায় তিনি গোলের পর গোল করে চলেছেন। একের পর এক রেকর্ড গড়েও পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ক্ষান্ত হচ্ছেন না। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা রোনালদোকে দেখে রীতিমতো মুগ্ধ পর্তুগাল জাতীয় দলের কোচ রবার্তো মার্তিনেজ।

আল নাসরের হয়ে এ বছর রোনালদো সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ১২ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। অ্যাসিস্ট করেছেন ২ গোলে। সৌদি প্রো লিগে সবশেষ তিন ম্যাচে করেছেন চার গোল। যার মধ্যে ২৩ নভেম্বর আল খালিজের বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে গোল করে চমকে দিয়েছেন তিনি। ৪০ বছর বয়সে শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে উল্টো দিকে গোল করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। রোনালদোকে প্রশংসায় ভাসিয়ে এক পডকাস্টে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেছেন মার্তিনেজ। পর্তুগিজ কোচ বলেন,‘আমার কাছে এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে সে সফল হওয়ার পর থেমে যায় না। আরও কিছু করতে চায়। যখন আপনি কোনো কিছু জেতেন, পরের দিন আপনার ক্ষুধা কমে যায়। ক্রিস্টিয়ানো এমনই এক ব্যক্তি, গতকাল তার সঙ্গে যা ঘটেছে সেটা আজ প্রভাব ফেলে না।’

আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত রোনালদো করেছেন ৯৫৪ গোল। সংখ্যাটাকে ১০০০ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের। মাঝেমধ্যে সহজ গোল মিসের পর তৎক্ষণাৎ হতাশা প্রকাশ করেন ঠিকই। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে তাঁর বেশি সময় লাগে না। এ বছর পর্তুগালের হয়ে তিনি ৮ গোল করে ফেলেছেন। জুনে স্পেনকে হারিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন নেশনস লিগের শিরোপা।

মাঠে যখন রোনালদো নামেন, তখন ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে থাকেন। ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে এমন সব গোল করেন, তখন গোলরক্ষকও শত চেষ্টা করে গোল ঠেকাতে পারেন না। চোটের কারণে ম্যাচ মিস করার ঘটনাও তাঁর খুব কম। রোনালদোর হার না মানা মানসিকতা দেখে মুগ্ধ মার্তিনেজ এক পডকাস্টে বলেন,

‘আমি জানি না এটা জিনগত কি না। এটাই বাস্তবতা। সে প্রতিনিয়ত নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যেতে চায়। সেটা অনুশীলন, চোট থেকে সেরে ওঠা, মাঠের পারফরম্যান্স—যেটা নিয়ে মনে হয় তার কাজ করা দরকার, তা নিয়ে যথেষ্ট মনোযোগী থাকে। সে হ্যাটট্রিক করল বা তিনটা সুযোগ মিস করল কি না, তাতে কিছু যায় আসে না। শেষ বাঁশি বাজার পর পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এটাই তাকে অনেক চঞ্চল করে রেখেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে আগামী বছর হতে যাচ্ছে ২৩তম ফুটবল বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে রোনালদোর বয়স হবে ৪১ বছর। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে এরপর আর ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র মঞ্চে দেখা যাবে না। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারকে কবে বিদায় বলবেন, সেটা তিনি জানাননি। ৩৫-৩৬ বছর হলেই যেখানে অনেকে বুটজোড়া তুলে রাখেন, রোনালদোর এমন মানসিকতায় মুগ্ধ মার্তিনেজ। ফুটবলারদের অবসর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাই রোনালদোর উদাহরণ দিয়েছেন তিনি (মার্তিনেজ)। পডকাস্টে পর্তুগিজ কোচ বলেন,‘‘ফুটবলাররা অবসরের সময় শরীর মস্তিষ্ককে বলে, ‘আমি আর পেরে উঠছি না।’ ক্রিস্টিয়ানোকে দেখে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। তার ব্যাপারে তার মস্তিষ্ক শরীরকে বলে এখনই থেমে যেতে হবে। তার প্রতিনিয়ত নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।’

লিওনেল মেসি, রোনালদো—দুজনেরই বিশ্বকাপে পথচলা ২০০৬ সালে। ২০২৬ বিশ্বকাপে তাঁরা দুজনই ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন। আজ এই দুজনের নিশ্চয়ই চোখ থাকবে ফিফার ওয়েবসাইটের দিকে। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হবে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম খেলতে যাচ্ছে ৪৮ দল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বীতশোক-ক্যাসপারদের লাতিন বাংলা সুপার কাপ দেখাবে না টিভিতে, দেখবেন কোথায়

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৫
লাতিন বাংলা সুপার কাপ শুরুর আগে অনুশীলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাতিন বাংলা সুপার কাপ শুরুর আগে অনুশীলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশে আসা প্রবাসী ফুটবলারদের খেলা দেখতে অপেক্ষায় আছেন অনেক ফুটবলপ্রেমী। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বীতশোক চাকমা, ইংল্যান্ডপ্রবাসী কাসপার হক, ইব্রাহীম নাওয়াজ ও অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ইশান মালিক—এই চার প্রবাসী ফুটবলার আছেন রেড গ্রিন ফিউচার স্টার দলে।

ব্রাজিলের সাও বার্নার্দো ক্লাবের বিপক্ষে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে রেড গ্রিন ফিউচার স্টার। এই ম্যাচ দেখতে অনেকে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলেও তা কোনো টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে না। এএফ বক্সিং প্রমোশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, তাঁরা টি-স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেটা যে চূড়ান্ত হয়নি, তা তো বোঝাই গেল। এখন তারা খেলা দেখাবে তাদের অফিশিয়াল দুই পেজ আরটিভি স্পোর্টস ও এএফ বক্সিং প্রমোশন

লাতিন বাংলা সুপার কাপের চেয়ে বড় আকর্ষণ অপেক্ষা করছে রাত ১১টার সময়। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান ফিফা প্লাস সরাসরি সম্প্রচার করবে। ফুটবলে দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল লিগের ব্রাদার্স-বসুন্ধরা কিংস মুখোমুখি হবে। অ্যাশেজে গোলাপি বলের টেস্টের ব্রিসবেনে দ্বিতীয় দিনের খেলা চলছে। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩৩৪ রানে গুটিয়ে গেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ২৬ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৬ রান করেছে। এক নজরে দেখে নিন টিভিতে কী কী খেলা রয়েছে।

ক্রিকেট খেলা সরাসরি

ব্রিসবেন টেস্ট: ২য় দিন

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড

সকাল ১০টা

সরাসরি

স্টার স্পোর্টস ১

নারী বিগ ব্যাশ

মেলবোর্ন রেনেগেডস-সিডনি সিক্সার্স

বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট

সরাসরি

স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

ফুটবল খেলা সরাসরি

ফিফা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র

রাত ১১টা

সরাসরি

ফিফা+

বাংলাদেশ ফুটবল লিগ

ব্রাদার্স-বসুন্ধরা

বেলা ২টা ৩০ মিনিট

সরাসরি

টি স্পোর্টস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুলারদের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিতে তর সইছে না মেসির

ক্রীড়া ডেস্ক    
থমাস মুলারের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে মুখিয়ে আসেন লিওনেল মেসি। ছবি: এএফপি
থমাস মুলারের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে মুখিয়ে আসেন লিওনেল মেসি। ছবি: এএফপি

লিওনেল মেসি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ট্রফির দিকে। কাছে এসেও পরম্য আরাধ্য বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁতে না পারার তীব্র আক্ষেপ কাজ করছে তাঁর। অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে মারাকানায় মেসির রানার্সআপ হওয়ার গল্প শোনা যাচ্ছে। মেসি যখন আক্ষেপে পুড়ছিলেন, টমাস মুলার তখন চ্যাম্পিয়ন জার্মানির হয়ে উল্লাস করতে ছিলেন ব্যস্ত।

১১ বছর পর এবার মুলারের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় মেসি। এবারের মঞ্চ মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) কাপ ফাইনাল। চেজ স্টেডিয়ামে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় শুরু হবে এমএলএস কাপের ইন্টার মায়ামি-ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস ফাইনাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে মুলারকে এমএলএসে স্বাগত জানিয়েছেন মেসি। আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী ফরোয়ার্ড বলেন, ‘সবার আগে এটা শুনে ভালো লাগলা যে মুলার মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) খেলতে এসেছে। ফাইনালে মুখোমুখি হতে পেরে ভালো লাগছে। আবারও ফের মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা ভ্যাঙ্কুভারের বিপক্ষে আগে খেলেছি। তারা কেমন দল, আমরা জানি।’

মেসি অবশ্য ২০১৪ সালের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের প্রতিশোধের দিকে ইঙ্গিত করেননি। এ বছরের ১ মে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ভ্যাঙ্কুভারের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল মায়ামি। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলে হেরে টুর্নামেন্টের সেমি থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল মেসির দলের। তখন মুলার ভ্যাঙ্কুভারে যোগদানও করেননি। জার্মান এই কিংবদন্তি এ বছরের আগস্টে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ভ্যাঙ্কুভারে এসেছেন।

আগামীকাল এমএলএস কাপ ফাইনালের আগে মে মাসে ভ্যাঙ্কুভারের কাছে হারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মেসি। একই সঙ্গে আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড ফের উল্লেখ করেছেন মুলারের আগেও। ভ্যাঙ্কুভারের বিপক্ষে ফাইনালের আগে গত রাতে মেসি বলেন,‘কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে তারা (ভ্যাঙ্কুভার) আমাদের বিদায় করে দিয়েছিল। পুরো বছরজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছিল। সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শেষ অব্দি লড়ে গিয়েছিল। আশা করি, অনেক কঠিন একটা ম্যাচ হবে। মুলারের যোগ হওয়া দলকে আরও দারুণ করে তুলেছে। ম্যাচে কী করতে হবে, সেক্ষেত্রে দল (ইন্টার মায়ামি) আরও সচেতন থাকবে। বিশেষ একটা ফাইনাল হতে যাচ্ছে ও ফল আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করি।’

ভ্যাঙ্কুভারে আসার পর সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ১২ ম্যাচ খেলে মুলার করেছেন ৯ গোল। অ্যাসিস্ট করেছেন ৪ গোলে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছরে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে তিনি খেলেছেন ৭৫৬ ম্যাচ। জার্মান ক্লাবটির হয়ে করেছেন ২৫০ গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ২৭৬ গোলে। বায়ার্নের হয়ে ১৩ বার বুন্দেসলিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছেন দুইবার। এদিকে মেসি আগামীকাল ইন্টার মায়ামির হয়ে তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে নামছেন। ২০২৩ লিগস কাপ, ২০২৪ সাপোর্টার্স শিল্ড জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটির জার্সিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত