Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

এই প্রাপ্তিতে আমি খুব একটা খুশি নই

এই প্রাপ্তিতে আমি খুব একটা খুশি নই

নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথমবারের মতো টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। যদিও ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের শেষ টেস্টটা ভালো করতে পারেনি তারা। তবু সফরে প্রাপ্তি কম নয়। আগামীকাল দেশে ফেরার আগে এবার নিউজিল্যান্ড সফরটা ফিরে দেখলেন মুমিনুল হক। গতকাল ক্রাইস্টচার্চ থেকে ফোনে দেওয়া বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

রানা আব্বাস
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৮

প্রশ্ন: এবার নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা তাহলে কেমন হলো? 
মুমিনুল হক: জিতলে সব ঠিক, না জিতলে সব বেঠিক। সফরের অভিজ্ঞতা ভালো। ম্যাচ জিতলে সবই ভালো লাগে। একটা জিতেছি। তবে পরের টেস্টটা হেরে গেছি। 

প্রশ্ন: ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের আগে বলা হচ্ছিল টস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেটিতে জিতেছেন, আগে বোলিং নিয়েছেন। যে বোলিং বিভাগ আগের টেস্টে দুর্দান্ত করেছে, তারাই আবার হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটে হতাশ করেছে। কারণটা কী? 
মুমিনুল: এখানে দুটি কারণ হতে পারে। সিরিজের প্রথম টেস্ট জেতার পর সিরিজ জিততে হবে—এমন একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। সিরিজ জিতব এমন ভাবনায় যখন টসও জিতে গেলাম, তখন সবাই বেশ এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা অবশ্য জাতিগতভাবেই যেকোনো ব্যাপারে একটু এক্সাইটেড থাকি। ওখানেই নিজেদের আসল কাজের ব্যাপারে একটু ভুল করে ফেলেছি। আগের টেস্টে যেভাবে বোলিং করেছি, যে প্রক্রিয়ায় বোলিং করেছি, যে পরিকল্পনাটা ছিল—রান কম দিয়ে ওদের ওপর চাপ তৈরি করে বোলিং করব। ওই জায়গা থেকে সরে গিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো ভাবনায় ঢুকে গিয়েছিল, বলে বলে উইকেট নিতে হবে, ম্যাচ জিততে হবে। আমরা আসলে ফলকেন্দ্রিক চিন্তা বেশি করেছি দ্বিতীয় টেস্টে। আরেকটা কারণ হতে পারে, আমাদের পেস বোলারদের যদি দেখেন ৩–১০–১১টা টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা। তারা এতটা ঘাসের উইকেটে বোলিং করে অভ্যস্তও নয়। কোথায় বলটা ফেলতে হবে, কোন লেংথে, কত মিটারে বলটা পিচ করাব—এ ব্যাপারে তারা অনভিজ্ঞ কিংবা অভ্যস্ত নয়। যে কারণে তারা লেংথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমাদের যে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছিলাম, সেটা ধরে রাখতে পারিনি। এ কারণে টেস্টটা হাত থেকে বেরিয়ে গেছে।

প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড যখন প্রথম ইনিংসে ৫০০ রানের ওপর করে ফেলল, মনস্তাত্ত্বিকভাবে তখনই নিশ্চয়ই অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়েছে?  
মুমিনুল: হ্যাঁ, অবশ্যই, প্রতিপক্ষ যখন বড় স্কোর করে ফেলে তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে পড়ে যেতে হয়। সেটিও আবার এমন কন্ডিশনে। যদিও পরে আবার উইকেট ভালো হয়ে গেছে। অবশ্যই আমাদের বোলাররা ভালো বোলিং করতে পারেনি। পরে আমাদের ব্যাটিং বিভাগও ভালো করতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে আমরা যে ব্যাটিং করেছি, একেবারেই বাজে! বোলাররা প্রতিদিন ভালো বোলিং করবে না। আমাদের ব্যাটারদের কাজ ছিল ওদের ওই ব্যর্থতা পুষিয়ে দেওয়া। যদি ভালো একটা স্কোর গড়তে পারতাম, পরে উইকেট অনেক ভালো হয়ে গিয়েছিল। তাহলে ওটা (বাজে বোলিং) অনেক পুষিয়ে নেওয়া যেত। এতে বোলাররা দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ভালোভাবে ফিরে আসতে পারত। আমরা সেটা পারিনি। প্রথম ইনিংসেই আমরা ম্যাচের বাইরে চলে গেছি। প্রথম ইনিংস সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আপনি ব্যাটিং কিংবা বোলিং বলুন।  

প্রশ্ন: অথচ এই ব্যাটিং বিভাগই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ১৭৬ ওভার ব্যাটিং করেছে। ক্রাইস্টচার্চে তারাই টেস্টের ব্যাটিং ভুলে গেল! 
মুমিনুল: এটা দুইভাবে চিন্তা করতে পারেন। প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। আরেকটি হতে পারে, আমরা একটা টেস্ট জিতেছি, আমাদের মন ভরে গেছে, অনেক খুশি হয়ে গেছি। আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগেছি। অধিনায়ক হিসেবে আমার এটাই মনে হয়েছে। আমরা হয়তো একটা টেস্ট খুব ভালো খেলি কিংবা একটা ইনিংস খুব ভালো খেলি। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ, দুটি ইনিংসেই ভালো খেলতে হবে। দুটো ইনিংসেই ভালো বোলিং করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই আমরা বড় দল হওয়ার দিকে এগোব। একটা টেস্ট জিতে দুনিয়া উদ্ধার করে ফেললাম, বিষয়টা তা নয়। আমার সামনে আরও বড় বড় চ্যালেঞ্জ আছে। বড় বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। এসব চ্যালেঞ্জ জিততে হলে এক টেস্টে জিতে পরেরটাও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। একটা জিতেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগা যাবে না। একটা চ্যাম্পিয়ন দল এভাবে গড়ে ওঠে না। না হলে আজীবন আমাদের ৯ নম্বরে থাকতে হবে। 

প্রশ্ন: যে প্রক্রিয়ার কথা বলছিলেন, সেটি ঠিকঠাক ধারাবাহিক করতে আপনাদের আরও কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে? 
মুমিনুল: দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের ওই ক্ষুধা থাকতে হবে। দলের, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স—সব দিকেই ওই ক্ষুধা থাকতে হবে। যেটা বলছিলাম, প্রথম টেস্টে যে প্রসেসে ছিলাম পরেরটায় সেটিতে ছিলাম না। অনেক বেশি ফল নিয়ে ভেবেছি।  

প্রশ্ন: তবু সব মিলিয়ে প্রাপ্তি একেবারে কম নয় এই নিউজিল্যান্ড সফরে, তাই না? 
মুমিনুল: প্রাপ্তি একটু আছে। তবে এই প্রাপ্তিতে আমি খুব একটা খুশি নই। ৬ বছর, ১০ বছর পর একটা টেস্ট জিতবেন—এতেই খুশি হয়ে গেলেন আবার পরের টেস্টে বাজেভাবে হারলেন, তাহলে সেই একই কথা হলো। বিদেশের মাঠে একটা টেস্ট জিতেছেন, অবশ্যই এটা একটা প্রাপ্তি।  শেষ টেস্ট যদি ভালোভাবে শেষ করতে পারতাম...ম্যাচ হারতেই পারি, তবে খুব ভালোভাবে শেষ করতে পারলে বুঝতাম যে না, ভালো প্রাপ্তি আছে। এই সফরে আমাদের প্রাপ্তি এটাই, সিরিজটা ড্র করতে পেরেছি, লিটন দেশের বাইরে সেঞ্চুরি করেছে। ধারাবাহিক রান পেয়েছে। প্রাপ্তি এটাই, পেসাররা ম্যাচ জেতাতে পারে, এটা প্রমাণ হয়েছে। ইবাদত ৬ উইকেট নিয়েছে। 

প্রশ্ন: লিটনের ব্যাটিং নিয়ে আলাদাভাবে যদি বলতেন।  
মুমিনুল: লিটন গত তিনটা টেস্ট সিরিজেই ধারাবাহিক ভালো খেলছে। এখন অনেক বেশি মনোযোগী সে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর তার মনোযাগ আরও বেড়েছে। সে এখন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে অনেক ভাবে। এখন সে অনেক পরিণত। টেকনিক্যালিও অনেক ভালো। 

প্রশ্ন: কদিন আগে শেষ হওয়া ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মৌসুম দেখে মনে হলো, দেশের উইকেটে পেসারদের পুরোনো হাহাকারটা থেকেই গেছে। 
মুমিনুল: বিশ্বের সেরা পেসারদের যদি ফ্ল্যাট উইকেটে বোলিং করতে বলেন, সেখানে কোন লেংথে বোলিং করতে হবে, তারা সেটা জানে। সেরা পেসাররা জানে কোন উইকেটে কীভাবে বোলিং করতে হয়। ধীরে ধীরে আমাদের বোলাররাও শিখছে। হয়তো একটু সময় লাগবে। আরও ৫-১০ টেস্ট হয়তো লেগে যাবে। এতটুকু সময় একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা এই ধৈর্য ধরতে পারি না। দ্রুত বলে ফেলি—ওকে দিয়ে হচ্ছে না, চলে না ইত্যাদি। 

প্রশ্ন: অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এই বাস্তবতা থেকে আপনার শিক্ষাটা কী? 
মুমিনুল: কেউ চোটে পড়ল, কেউ বিরতি নিল—এসব আমার হাতে নেই। আমার হাতে যে রিসোর্স আছে, সেটা নিয়েই খেলতে হবে। ওই বিশ্বাসটাই রাখি, এই রিসোর্স নিয়েই আমাকে নামতে হবে, লড়তে হবে। এতে ফল অনেক সময় পক্ষে আসবে, কখনো আসবে না। 

প্রশ্ন: গত আড়াই বছরে অধিনায়ক হিসেবে কতটা গুছিয়ে নিতে পারলেন? 
মুমিনুল: আগেই বললাম, ম্যাচ জিতলে সব ঠিক থাকে। এখন মনে হচ্ছে, দলটা একটা স্থিতিশীল জায়গায় আছে। কারণ, যারা টেস্ট ক্রিকেট খেলে তারাই ঘুরেফিরে আসছে। খুব একটা পরিবর্তন হয় না। সামনে সিরিজে হয়তো সাকিব–তামিম ভাই ফিরবেন। দল তখন আরও শক্তিশালী হবে। 

প্রশ্ন: পরের সফর দক্ষিণ আফ্রিকায়, মার্চে। আরেকটি কঠিন সফর। সেখানে ভালো করতে এবার নিউজিল্যান্ড সফর থেকে কতটা আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন? 
মুমিনুল: আমরা যেটা দেখি, সেটাই সাধারণত বিশ্বাস করি। যেহেতু একটা টেস্ট জিতেছি, ফল দেখেছি, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) বিশ্বাস করেন কি না জানি না, আমরা খেলোয়াড়েরা বিশ্বাস করি যে আমরা পারি। বিদেশে ভালো খেলতে পারি, টেস্ট জিততে পারি—এই বিশ্বাস সবার মধ্যে এসেছে। এটাই দরকার ছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৩ দিনেই শেষ ৪ টেস্ট, অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি ২০৫ কোটি

ক্রীড়া ডেস্ক    
অস্ট্রেলিয়া। ছবি: ক্রিকইনফো
অস্ট্রেলিয়া। ছবি: ক্রিকইনফো

অ্যাশেজের প্রথম ৪ টেস্ট শেষে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। টানা ৩ জয়ে মর্যাদাপূর্ণ সিরিজটি জিতে নেয় স্বাগতিকেরা। এরপরও স্বস্তিতে থাকার অবস্থা নেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ)। প্রথম চারটি টেস্ট শেষ হয়েছে ১৩ দিনেই। তাতেই বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে সংস্থাটি। এর অঙ্কটাও বিশাল।

অ্যাশেজ নিশ্চিত হওয়ার পরও বক্সিং ডে টেস্টের প্রতি আগ্রহের ভাটায় কমতি পরেনি। প্রথম দিনই মেলবোর্নে হাজির হন সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার ১৯৯ দর্শক। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাতে বেশ খুশি হয়েছিল। সেই উন্মাদনা বেশিক্ষণ টেকেওনি। প্রথম দিনই পতন ঘটে ২০ উইকেট। আর দ্বিতীয় দিনে দাঁড়ি পড়ে যায় ম্যাচের। ফলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তো বটেই বোর্ডের অংশীদারদের মিলিয়ে টিকিট বিক্রি, খাবার ও পানীয় এবং সম্প্রচারস্বত্ব বাবদ ২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ২০৫ কোটি টাকা) রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে হয়েছে। এমনই তথ্য জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য এজ।

এই ঘাটতির মূল দায় দেওয়া হচ্ছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) উইকেটকে। যখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আইসিসি থেকে পিচ নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন তাদের সম্প্রচার সহযোগীরাও গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া প্রধান টড গ্রিনবার্গ বলেছেন যে, গভর্নিং বডি অন্তত ১০ মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব ক্ষতির অনুমান করছে। যার কিছুটা অংশ পরিচালন ব্যয় হ্রাসের মাধ্যমে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে আগেভাগে ম্যাচ শেষ হওয়ার প্রভাব অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইকোসিস্টেমের অন্যান্য অংশেও পড়বে।

সমালোচকেরা থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটাররা পর্যন্ত পিচে ১০ মিলিমিটার ঘাস রাখায় শূলে চড়াচ্ছেন পিচ কিউরেটর ম্যাথু পেজকে। যদিও পেজ নিজেও অবাক, ‘আমরা চার বা পাঁচ দিন ধরে ব্যাট ও বলের সেই লড়াইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি যা একটি টেস্টকে আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রথম দিনের ঘটনায় রীতিমত স্তব্ধ ছিলাম। আমি কখনোই আগে এমন টেস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আশা করি আগামীতেও কখনো থাকবে না। দুই দিন আমার জন্য রোলারকোস্টার রাইড ছিল।’

পেজ অবশ্য পাশে পাচ্ছেন মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের প্রধান স্টুয়ার্ট ফক্সকে। তিনি বলেন, ‘৮ বছর আগে আমরা ম্যাটকে নিয়োগ দিয়েছিলাম কারণ সে দেশের অন্যতম সেরা, এমনকি সেরা বলে বিবেচনা করা হয়। আমি এখনও তা বিশ্বাস করি এবং সবসময় করব। সে দারুণ কাজ করেছে। সে এবং তার দল এটি ঠিক করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিপিএল খেলেই পাকিস্তানে পরিচিত পেয়েছেন নাফি

ক্রীড়া ডেস্ক    
চলতি বিপিএলে রংপুরের হয়ে খেলছেন এই পাকিস্তানি ব্যাটার।  ছবি: সংগৃহীত
চলতি বিপিএলে রংপুরের হয়ে খেলছেন এই পাকিস্তানি ব্যাটার। ছবি: সংগৃহীত

বছরখানেক আগেও পাকিস্তান ক্রিকেটে অচেনা মুখ ছিলেন খাজা নাফি। কিন্তু দৃশ্যপট বদলেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) কল্যাণে। বাংলাদেশের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলার সুবাদে পাকিস্তান ক্রিকেটে এখন পরিচিত মুখ তিনি। তাই বিপিএলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না নাফি।

বিপিএলের গত পর্বে চট্টগ্রাম কিংসের হয়ে খেলেছেন নাফি। ব্যাট হাতে ৫ ম্যাচে করেন ২০১ রান। এমন পারফরম্যান্সের পর পাকিস্তান ক্রিকেটে দরজা খুলে যায় তাঁর। দেশটির ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপ, পিএসএল ও ‘এ’ দলের হয়ে খেলেছেন ২৩ বছর বয়সী এই ব্যাটার। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য পাকিস্তান দলে ডাক পেয়েছেন তিনি।

নাফি বলেন, ‘আমি আগেরবার বিপিএলের ভালো পারফর্ম করেছিলাম। এজন্য ক্রিকেটে সুযোগ পাই। বিপিএলে পারফর্ম করার পরই পাকিস্তানের মানুষ জানতে পারে যে নাফি নামেও একজন আছে। এরপরই আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি।’

বিপিএলের চলতি পর্বে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলছেন নাফি। এর আগে সবশেষ গ্লোবাল সুপার লিগেও (জিএসএল) খেলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। তাই মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তিনি, ‘রংপুরের হয়ে আমি জিএসএল খেলেছি। এই দলটা আমার জন্য নতুন নয়। বিপিএলে রংপুর আমার জন্য নতুন দল। নতুন লক্ষ্য হলো গত বছর যেমন পারফর্ম করেছিলাম, রংপুর রাইডার্সের জন্যও তেমন পারফর্ম করার চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ।’

প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশ উচ্ছ্বসিত নাফি। তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য গর্বের মুহূর্ত। জাতীয় দলের খেলার জন্য এতদিন কষ্ট করেছি। অবশেষে সে সুযোগ এসেছে। একাদশে সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শান্ত এবার ‘জবাব’ দিচ্ছে, বলছেন রাজশাহীর কোচ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ১৮
এবারের বিপিএলে সিলেট টাইটানসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: ফেসবুক
এবারের বিপিএলে সিলেট টাইটানসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ছবি: ফেসবুক

পারফরম্যান্স একটু এদিক-সেদিক হলেই নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর দিয়ে বয়ে যায় সমালোচনার বন্যা। লর্ড শান্ত তো বলা হয়ই, সামাজিক মাধ্যমে আরও বাজেভাবে বিদ্রূপ করা হয় বাংলাদেশের এই বাঁহাতি ব্যাটারকে। সমালোচকদের জবাব দিতে শান্ত যেন বেছে নিলেন ২০২৬ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকেই (বিপিএল)।

সবশেষ বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ১৪ ম্যাচ খেললেও শান্ত খেলেছিলেন পাঁচ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও সাত মাস ধরে ব্রাত্য তিনি। বাংলাদেশ এ বছর ৩০টি টি-টোয়েন্টি খেললেও শান্ত দেশের হয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে খেলেছেন এক ম্যাচ। এবারের বিপিএলে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক হওয়ার পরই বদলে গেলেন তিনি। দুই ম্যাচ খেলে ১৩৮ রান করে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তিনি। ব্যাটিং করেছেন ১৫৬.৮১ স্ট্রাইকরেটে। যার মধ্যে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পরশু সিলেট টাইটানসের বিপক্ষে ৬০ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন। পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

সিলেটে আগামীকাল শান্তর রাজশাহী ওয়ারিয়র্স খেলবে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের বিপক্ষে। ম্যাচের আগের দিন আজ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী কোচ রাজিন সালেহ। সাংবাদিকদের রাজিন বলেন, শান্ত আসলে তাঁর যে স্বাভাবিক খেলাটা, তাঁকে নিয়ে যে সমালোচনা হয়, সেটা নিতান্তই ভুল। শান্ত তা প্রমাণ করেছেন। স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলাটা খেলেছেন তিনি এবং পারফর্ম করেছেন।

এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচ খেলে রাজশাহী একটি করে ম্যাচ জিতেছে ও হেরেছে। প্রথম ম্যাচে সিলেটের বিপক্ষে ১৯২ রান তাড়া করে ২ উইকেটে জিতেছে রাজশাহী। তবে গতকাল ঢাকার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে রাজশাহী। ঢাকার বিপক্ষে আগে ব্যাটিং পেয়ে স্কোরবোর্ডে জমা করেছিল ১৩২ রান। যেখানে তানজিদ হাসান তামিম দুই ম্যাচেই ওপেনিং করেছেন। ১০ ও ২০ রান করে আউট হয়েছেন। তামিম পরের ম্যাচে জ্বলে উঠবেন বলে আশা রাজিনের। সিলেটে সাংবাদিকদের রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী কোচ বলেন, ‘আমাদের টপঅর্ডারে একটু ধস নামছে। সেখান থেকে কিছু রান এলে আমাদের জন্য ভালো হতো। আমাদের এখানে তামিম আছে। অবশ্যই সে পারফর্মার। সে পারফর্ম করবে। তার পারফরম্যান্স দেখতে উন্মুখ হয়ে আছি।’

আকবর আলীর নেতৃত্বে এনসিএল চার দিনের ক্রিকেট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট—দুই টুর্নামেন্টই জিতেছে রংপুর। তবে এবারের বিপিএলে দুই ম্যাচের কোনোটিতে রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের একাদশে সুযোগ মেলেনি আকবরের। পারফর্মারের চেয়ে দলকে বেশি গুরুত্ব দেন রাজিন, ‘আমাদের যারা বেঞ্চে বসে আছে, প্রত্যেক ক্রিকেটারই পারফর্মার। ঘরোয়া ক্রিকেটে সবাই পারফর্মার। অবশ্যই আকবর আলী ভালো ক্রিকেটার। তবে সমন্বয়ের জন্য আমাদের যে রকম চিন্তাভাবনা করা হয়, সেভাবে আমাদের দল করা হয়। আমরা ক্রিকেটারের চিন্তা না করে দলের চিন্তা করি।’

সিলেটে পরশু প্রথম দুই ম্যাচেই লড়াই করার মতো রান উঠেছিল স্কোরবোর্ডে। কিন্তু গতকালের দুই ম্যাচ মিলিয়ে দিনের সর্বোচ্চ ১৪৪ রানের ইনিংস খেলেছে সিলেট টাইটানস। রাজিনের মতে, দুই দিনে উইকেট ভিন্ন আচরণ করেছে। রাজশাহীর সিনিয়র সহকারী কোচ বলেন, ‘প্রথম ম্যাচটার দিকে দেখুন। দুইটা ইনিংসেই ভালো পারফরম্যান্স হয়েছে। উইকেট অনেক ভালো ছিল বলে ব্যাটিং ভালো হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচটায় আমি মনে করি না যে উইকেট ভালো ছিল। তবে যদি গতকালের দুইটা ম্যাচই দেখেন, রান বেশি হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে শরীফুল, এখন কী অবস্থা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩১
হাসপাতালে যেতে হয়েছিল শরীফুল ইসলামকে। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে যেতে হয়েছিল শরীফুল ইসলামকে। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টানা দুই দিন খেলার পর আজ চলছে বিরতি। এই সময় ক্রিকেটাররা নিজেদের মতো করে অনুশীলন করছেন। অনুশীলনের মাঝপথেই শরীফুল ইসলামকে যেতে হয় হাসপাতালে।

এবারের বিপিএলে চট্টগ্রাম রয়্যালসের হয়ে খেলছেন শরীফুল। অনুশীলনে ফুটবল খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির পরামর্শক হাবিবুল বাশার সুমন। শরীফুলকে নিয়ে আজকের পত্রিকাকে সুমন বলেন, ‘আল হারামাইন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন সে সুস্থ আছে। এখন সে ঘুমোচ্ছে।’

টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা ছেড়ে দেয়ে ট্রায়াঙ্গুলার সার্ভিস। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়েছে বিসিবি। মিজানুর রহমান বাবুলকে কোচ ও নাফিস ইকবালকে ম্যানেজার করা হয়েছে বিপিএলের এই ফ্র্যাঞ্চাইজির। সুমন প্রথমে টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্বে থাকলেও পরে এই পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রামের পরামর্শক পদে কাজ করার জন্য। সুমনের পরিবর্তে নান্নুকে নিয়ে আসা হয়েছে বিপিএলের টেকনিকাল কমিটিতে।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পরশু নবাগত নোয়াখালী এক্সপ্রেসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ১২তম বিপিএল শুরু করে চট্টগ্রাম রয়্যালস। ৬৫ রানের বিশাল জয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে চট্টগ্রাম। নোয়াখালীর বিপক্ষে ৩ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট নেন শরীফুল। আগামীকাল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে খেলতে নামবে চট্টগ্রাম রয়্যালস। রংপুরের এটা এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচ। চট্টগ্রামের জন্য এটা হচ্ছে দ্বিতীয় ম্যাচ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত