Ajker Patrika

ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা

বোরহান জাবেদ ও সাহিদ রহমান অরিন, ঢাকা
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ৪৮
ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা

বাংলাদেশে ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের রক্তে মিশে গেছে ক্রিকেট। পাঁচ দশকে নানা চড়াই-উতড়াই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ ক্রিকেট বিশ্বে সমীহ জাগানিয়া দল। যদিও ওয়ানডের সাফল্য ঢাকা পড়েছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতায়। বিজয়ের ৫০ বছরে আজকের পত্রিকার তিন পর্বের আয়োজনের শেষ পর্বে আজ থাকছে ক্রিকেট।

১৯৭১-১৯৮০

ক্রিকেট বোর্ড গঠন
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রিকেটের বিকাশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল সবচেয়ে জরুরি। এ লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি)।  
বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। তবে মূল কাণ্ডারি ছিলেন কার্যনির্বাহী সম্পাদক রেজা-ই-করিম। তিনিই সে সময় প্রায় এক হাতে চালিয়েছেন দেশের ক্রিকেট।

রেজাবোর্ডের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের সর্বস্তরে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়া ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ক্রিকেট তুলে ধরা। শুরুটা খুব একটা সহজ ছিল না। কারণটাও অনুমেয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ক্রীড়ার আগে অন্য ক্ষেত্র বিনির্মাণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি বোর্ড প্রতিষ্ঠার সময় দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়াম) ছিল ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। স্টেডিয়ামেরই একটি কক্ষে ছিল বোর্ড কার্যালয়। আসবাবপত্র বলতে একটি করে টেবিল-চেয়ার আর স্টিলের আলমারি। সেখানেই রাখা হতো দেশের ক্রিকেটের সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। রেজা-ই-করিম বিদ্যুৎহীন বোর্ড অফিসে বসে মোমবাতির আলোয় কাজ চালিয়েছেন। আর্থিক দুরবস্থা মেটাতে কখনো ধর্ণা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সরকারের কাছে, কখনো ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে।

বাংলাদেশিদের ক্রিকেটপ্রীতি ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বে 
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নাম তখনো অনেকে শোনেননি। এ পরিস্থিতিতেই একজন মানুষ আঁচ করেছিলেন এ দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিনি ইংল্যান্ডের রবিন মারলার। এই ক্রিকেট সাংবাদিক ১৯৭৬ সালে ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় আগ্রহ নিয়ে লিখেছিলেন ‘উইদার বাংলাদেশ’ (যেখানে বাংলাদেশ) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদন আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্ব প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে বিশদ ধারণা পায়।  তাতে নড়চড়ে বসে বিসিসিবি। 

মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের বাংলাদেশ সফর
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ঘরোয়া লিগ শেষে রেজা-ই-করিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) একটি চিঠি পাঠান। চিঠির মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশকে আইসিসির সহযোগী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা। ১৯৭৬ সালের জুনে আইসিসির সভায় ওঠে বিষয়টি। আইসিসি বিসিসিবিকে পরামর্শ দেয় ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা  মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি) আমন্ত্রণ জানাতে। বিসিবি আমন্ত্রণ জানায় এমসিসিকে। সে বছরের ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসে এমসিসি। পরের বছরের শুরুতে ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে বিসিসিবির বিপক্ষে খেলে তিন দিনের ম্যাচ। সেটিই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রথম অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ।   

আইসিসির সদস্যপদ লাভ 
এমসিসির ওই সফরের সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পদচ্ছাপের সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনা সত্যি হয় পরের বছর। ১৯৭৭ সালে আইসিসির সহযোগী সদস্য হয় বাংলাদেশ। 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। টুর্নামেন্টটা অম্লমধুর কাটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। চার ম্যাচ খেলে দুটি করে জয়-হার। টুর্নামেন্টে দলকে নেতৃত্ব দেন রকিবুল হাসান। যিনি একাত্তরে একটি ম্যাচে ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে খেলতে নেমে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

১৯৮১-১৯৮৯

অভিষেক ওয়ানডের অধিনায়ক লিপু।বাংলাদেশের ওয়ানডে অভিষেক 
আইসিসির সদস্য হওয়ার ৯ বছর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। সেটিও বেশ নাটকীয়ভাবে। ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল শ্রীলঙ্কা। তবে লঙ্কানদের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের জেরে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। তাদের শূন্যস্থান পূরণ করে বাংলাদেশ। ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় বাংলাদেশের। ম্যাচটি তারা হেরে যায় ৭ উইকেটে। তবে ফল ছাপিয়ে ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে আছে ভিন্ন কারণে। বাংলাদেশের অধিনায়ক গাজী আশরাফ লিপুর সঙ্গে নাকি বাউন্ডারির বাইরেই টস সেরেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে তাতে বাংলাদেশকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার মতো কোনো ব্যাপার ছিল না। 

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ দল। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট
এশিয়া কাপের তৃতীয় আসর বসে বাংলাদেশে। সেটি ছিল স্বাধীন দেশে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। আসরে মোট সাতটি ম্যাচ হয় দুটি ভেন্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। এ টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশ পায়নি সাফল্যের দেখা। হেরেছে নিজেদের তিন ম্যাচের তিনটিতেই। 

১৯৯০-২০০০

প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচ 
গত এক দশকে কিংবা তারও আগে থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে দিবা-রাত্রির ম্যাচই দর্শকের চাহিদা তুঙ্গে। তবে বাংলাদেশ প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচের সাক্ষী হয় ১৯৯০ সালে। ঢাকা স্টেডিয়ামে বিসিবি অনূর্ধ্ব-২৫ (তখনকার বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড) বিপক্ষে খেলে ডেকান ব্লুস। দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানি। কপিল দেবের ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যেও ছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। 

সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের প্রথম স্বাগতিক 
এ বছরের ডিসেম্বরে প্রথম সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। কিন্তু বাবরি মসজিদ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিশীলতায় লিগ পর্বেই বাতিল হয়ে যায় টুর্নামেন্টটি। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। তবে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হারে স্বাগতিকেরা। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ৮ ওভার খেলা হওয়ার পরই ম্যাচসহ টুর্নামেন্ট বাতিল হয়। সার্কের পরের দুটি টুর্নামেন্টেরও স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৪ সালে দ্বিতীয় টুর্নামেন্টে ফাইনালে ভারতের কাছে শিরোপা স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। তৃতীয়টির শিরোপা যায় পাকিস্তানের ঘরে। 

আইসিসি ট্রফি জয়
এক-দুই-তিনবার নয়, ষষ্ঠবারের চেষ্টায় কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথমবার আইসিসি ট্রফি জেতার লালিত স্বপ্ন পূরণ হয় বাংলাদেশের। এর আগে টুকটাক সাফল্য পেলেও ক্রিকেটে পুরো জাতিকে এক করার এটাই প্রথম উপলক্ষ্য। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি গর্ডন গ্রিনিজের হাত ধরে বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের চেনানোর সেই শুরু। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠের গর্জন সেদিন পোঁছে গিয়েছিল টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। তবে তার চেয়েও বড় সুখবর বাংলাদেশ পেয়ে যায় সেমিফাইনালে। স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। 

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ প্রথম জয় পায় ২২ ম্যাচ হারের পর। ১৯৯৮ সালে মোহাম্মদ রফিকের অসাধারণ নৈপুণ্যে (৭৭ রান ও ৩ উইকেট) কেনিয়ার বিপক্ষে ভারতের মাটিতে জয় পায় বাংলাদেশ। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর এই দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে বিশ্বকে নিজেদের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছিল বাংলাদেশ। 

অভিষেক টেস্টে টসের আগ মুহূর্ত।আইসিসি পূর্ণ সদস্যের স্বীকৃতি ও টেস্ট অভিষেক 
প্রথম শ্রেণির জাতীয় ক্রিকেট লিগ দেশের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে যুক্ত হওয়ার পর ২০০০ সালের ২৬ জুন ক্রিকেটের কুলীন জগতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। তবে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলতে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। অভিষেকে যাই ঘটে সেটাই রেকর্ড-এই প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে টস জেতেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। আরও একটি রেকর্ডেও নাম তোলেন দুর্জয়। দেশের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকারী বোলার। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া টেস্ট সেঞ্চুরিতে প্রথমবার দলীয় ৪০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়ে বাংলাদেশ। 

২০০১-২০১০
প্রথম টেস্ট খেলতে নামা আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা বেশ দীর্ঘই বাংলাদেশের। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়র। এই দশকের প্রথম বিশ্বকাপটা (২০০৩) দুঃস্বপ্নের মতো কাটলেও পরের বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখে বাংলাদেশ। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের মঞ্চে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় হাবিবুল বাশারের সুমনের দল। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আরেকবার বিশ্বকে নিজেদের সক্ষমতার জানান দেয় বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপ দিয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের (সাকিব, তামিম, মুশফিক) পাদপ্রদীপের আলোয় আসার শুরু। ভারতের বিপক্ষে তিনজনই ফিফটি করেন। জহির খানকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে তামিমের সেই বিখ্যাত বনে যাওয়া ছক্কা কিংবা কাভার দিয়ে মুনাফ প্যাটেলকে মুশফিকের সেই ড্রাইভ-সবই স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। 

২০১১-বর্তমান

প্রথমবার বিশ্বকাপের স্বাগতিক 
২০১১ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাগতিক হয় বাংলাদেশ। জমকালো এক উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠের বাইরের আয়োজনেও নিজেদের সক্ষমতা দেখায় বাংলাদেশ। তবে মাঠের ক্রিকেটে মনে রাখার মতো মুহূর্ত খুব বেশি দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারানো ছাড়া গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। তবে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে নকআউটে যাওয়া হয়নি। এই দশকে বাংলাদেশের আক্ষেপের গল্পগুলোর একটি ২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল। ভারত-শ্রীলঙ্কাকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনানে জায়গা করে নেওয়া। সেখান থেকে পাকিস্তানের কাছে হৃদয় ভাঙার সেই হার। ২০১৪ সালে এককভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে পাওয়ার চেয়ে না পাওয়া আর হারানোর সমকক্ষ হয়ে থাকবে এই বিশ্বকাপ।

প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে
২০১৪ বিশ্বকাপের হতাশা মুছতে পরের বছর ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অন্য রূপে হাজির হয় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বপ্নের বিশ্বকাপ বলাই যায়। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল কিংবা ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেনের ‘বাংলাদেশ টাইগার্স হেভ নকড দ্য ইংলিশ লায়ন্স আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’ দশকের সেরা প্রাপ্তি হয়ে থাকবে। পরের বছর ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হার কিংবা একই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একই প্রতিপক্ষের কাছে এক রানের হার-সবই তীরে এসে তরী ডোবানোর গল্প হয়ে আছে। 

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর পতাকা হাতে সৌম্য-সাকিবদের উচ্ছ্বাস।২০১৫ বিশ্বকাপের পর আইসিসি টুর্নামেন্টের পর ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেদের আরেক ধাপ ওপরে নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরিতে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সোনালি সময় পার করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা আর ভারতকে সিরিজ হারায় মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। ওয়ানডেতে ভালো করলেও এই সময়ে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস অনেক সমালোচনা হয়েছে। তবে ২০১৭ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সব সমালোচনার জবাব দেয় বাংলাদেশ। 

অন্য খেলার সঙ্গে তুলনায় ক্রিকেট বাংলাদেশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিচয়, এশিয়ান গেমসের সোনা। কিন্তু সোনালি প্রজন্মের সারথি সাকিব, মাশরাফিরা একটি অতৃপ্তি রেখে দিচ্ছিলেন বারবার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপা জিতে উৎসবের সুযোগ করে দিতে পারেননি তাঁরা। ২০০৯ ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১২ এশিয়া কাপ, ২০১৬ এশিয়া কাপ-সবই এতো কাছে তবু এতো দূরের গল্প হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। ছেলেদের অতৃপ্তি ঘোচানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন মেয়েরা। রুমানা-আয়েশাদের হাত ধরে ২০১৮ সালের ১০ জুন এশিয়ার ক্রিকেটের হিমালয় সমদূরত্বে থাকা ভারতকে স্তব্ধ করে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ১৯৯৭ সালে পরম আকাঙ্ক্ষিত প্রথম আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। কাকতালীয়ভাবে সেই কুয়ালামাপুরেই এল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। ভারতকে ৩ উইকেটে হারানোর অন্যতম রুপকার রুমানা হন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়।

এশিয়া কাপের শিরোপা হাতে বাংলাদেশ নারী দল।বলা হয়ে থাকে, একটা সাফল্যে নাকি আরেকটা সাফল্যের দার উন্মুক্ত করে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ানডে-টি টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট ছয়টি ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোতে পরাজয়ের গ্লানির সঙ্গে একটা শিরোপার হাহাকার ততদিনে আক্ষেপ গাঁথায় রূপ নিয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ মে। অবশেষে সেই গোরো খোলে। বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। প্রথম শিরোপা জয়ের তারিখটাতে (১৭ মে) চাইলে আপনি স্মৃতিকাতর হতে পারেন। ২১ বছর আগে-পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেকটা পথ পেরিয়ে এলেও স্মৃতিতে অম্লান থাকে সব প্রথমই। ১৯৯৮ সালের ১৭ মে এমনই একদিনে ভারতের হায়দরাবাদে প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের ঠিক আগে আয়ারল্যান্ডে এই শিরোপা জিতে যতটা খুশি হয়েছিল বাংলাদেশ ততটাই হতাশ হতে হয়েছিল বিশ্বকাপে। আশার বেলুন ফুলিয়ে যাওয়া বিশ্বকাপটাই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি হতাশায় ডুবিয়েছে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল তো বটেই নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে ফেরে বাংলাদেশ। তবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে সাকিব বিশ্বকাপটা আপন আলোয় আলোকিত করেন এসেছিলেন। বলে-ব্যাটে সাকিবের ওমন পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের ইতিহাসেই বিরল। 

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়।যুবাদের বিশ্বজয়
ওপরেই বলছিলাম, একটা সাফল্যে আরেকটা সাফল্যের দার উন্মুক্ত করে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর শিরোপার দেখা পায়নি বাংলাদেশ। সেখানে গত তিন বছরে তিনটি শিরোপা জেতে। যার শেষটা আবার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সাফল্যে হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুনের কেতন উড়িয়ে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা স্বাদ পান আকবর আলী-রাকিবুলরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাকিবের রেকর্ড ভেঙে আইসিসির সেরাদের তালিকায় তাইজুল

ক্রীড়া ডেস্ক    
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি
আইসিসির মাসসেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ছবি: বিসিবি

টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটা এখন তাইজুল ইসলামের। সাকিব আল হাসানের ২৪৬ উইকেট ছাড়িয়ে টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গত মাসে গড়েছেন তাইজুল। আয়ারল্যান্ড সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সেরাদের তালিকায় নাম উঠে গেছে তাইজুলের।

আইসিসি আজ নিজেদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পুরুষ, নারী দুই বিভাগেই নভেম্বর মাসের সেরা ক্রিকেটারের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে। ছেলেদের ক্রিকেটে গত মাসের সেরাদের তালিকায় তাইজুলের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার সায়মন হারমার ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ। তাইজুল গত মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্টই খেলেছেন। আইরিশদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন সায়মন হারমার। এই ১৭ উইকেট তিনি পেয়েছেন ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। ভারতকে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিনার ম্যান অব দ্য সিরিজও হয়েছেন। নভেম্বর মাসের সেরা হওয়ার দৌড়ে থাকা পাকিস্তানের নাওয়াজেরও গত মাসটা দুর্দান্ত কেটেছে। বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। যার মধ্যে ১০টিই নিয়েছেন জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের পর ফাইনালসেরা, সিরিজসেরা দুটি পুরস্কারই তিনি পেয়েছেন। ব্যাটিংয়ে করেছেন ১৫৬ রান। যার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর একটি ফিফটি রয়েছে। নাওয়াজের সমান ১৫ উইকেট নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের জ্যাকব ডাফি।

আইসিসির নভেম্বরে মেয়েদের মাসসেরাদের তালিকাতেও তিন ক্রিকেটার তিন দেশের। ভারতের শেফালি ভার্মার সঙ্গে এই তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছেন থাইল্যান্ডের থিপাচা পুত্তাওয়াং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইশা ওঝা। শেফালি গত ২ নভেম্বর মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ভারতের নারী ক্রিকেটের

ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফাইনালে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে তিনি পেয়েছেন ফাইনালসেরার পুরস্কার। ৭৮ বলে ৮৭ রানের পাশাপাশি বোলিংয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচ সাকিব খেলেছেন গত বছরের অক্টোবরে কানপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে। গত ১৪ মাসে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার সুযোগ পাননি। যদি নিয়মিত হতে পারতেন, তাহলে তাঁর সঙ্গে তাইজুলের বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর লড়াইটা হতো সমানে সমানে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থাকলেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন নন সাকিব। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগ ক্রিকেট (এমআইএলসি) এই দুই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘রোনালদোর ক্ষুধা কখনোই শেষ হওয়ার নয়’

ক্রীড়া ডেস্ক    
প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে ৯৫০-এর বেশি গোল করে ফেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।  ছবি: এএফপি
প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে ৯৫০-এর বেশি গোল করে ফেলেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ছবি: এএফপি

বয়স শুধুই একটি সংখ্যা—ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে স্বাভাবিকভাবেই এই কথা মনে হবে সবার আগে। পর্তুগাল দল, আল নাসর—সব জায়গায় তিনি গোলের পর গোল করে চলেছেন। একের পর এক রেকর্ড গড়েও পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ক্ষান্ত হচ্ছেন না। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা রোনালদোকে দেখে রীতিমতো মুগ্ধ পর্তুগাল জাতীয় দলের কোচ রবার্তো মার্তিনেজ।

আল নাসরের হয়ে এ বছর রোনালদো সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ১২ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল। অ্যাসিস্ট করেছেন ২ গোলে। সৌদি প্রো লিগে সবশেষ তিন ম্যাচে করেছেন চার গোল। যার মধ্যে ২৩ নভেম্বর আল খালিজের বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে গোল করে চমকে দিয়েছেন তিনি। ৪০ বছর বয়সে শরীরটাকে শূন্যে ভাসিয়ে উল্টো দিকে গোল করা তো চাট্টিখানি কথা নয়। রোনালদোকে প্রশংসায় ভাসিয়ে এক পডকাস্টে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করেছেন মার্তিনেজ। পর্তুগিজ কোচ বলেন,‘আমার কাছে এ ব্যাপারে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে সে সফল হওয়ার পর থেমে যায় না। আরও কিছু করতে চায়। যখন আপনি কোনো কিছু জেতেন, পরের দিন আপনার ক্ষুধা কমে যায়। ক্রিস্টিয়ানো এমনই এক ব্যক্তি, গতকাল তার সঙ্গে যা ঘটেছে সেটা আজ প্রভাব ফেলে না।’

আন্তর্জাতিক ফুটবল ও ক্লাব ফুটবল মিলিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত রোনালদো করেছেন ৯৫৪ গোল। সংখ্যাটাকে ১০০০ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা রয়েছে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের। মাঝেমধ্যে সহজ গোল মিসের পর তৎক্ষণাৎ হতাশা প্রকাশ করেন ঠিকই। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে তাঁর বেশি সময় লাগে না। এ বছর পর্তুগালের হয়ে তিনি ৮ গোল করে ফেলেছেন। জুনে স্পেনকে হারিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন নেশনস লিগের শিরোপা।

মাঠে যখন রোনালদো নামেন, তখন ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ে থাকেন। ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে এমন সব গোল করেন, তখন গোলরক্ষকও শত চেষ্টা করে গোল ঠেকাতে পারেন না। চোটের কারণে ম্যাচ মিস করার ঘটনাও তাঁর খুব কম। রোনালদোর হার না মানা মানসিকতা দেখে মুগ্ধ মার্তিনেজ এক পডকাস্টে বলেন,

‘আমি জানি না এটা জিনগত কি না। এটাই বাস্তবতা। সে প্রতিনিয়ত নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যেতে চায়। সেটা অনুশীলন, চোট থেকে সেরে ওঠা, মাঠের পারফরম্যান্স—যেটা নিয়ে মনে হয় তার কাজ করা দরকার, তা নিয়ে যথেষ্ট মনোযোগী থাকে। সে হ্যাটট্রিক করল বা তিনটা সুযোগ মিস করল কি না, তাতে কিছু যায় আসে না। শেষ বাঁশি বাজার পর পরের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এটাই তাকে অনেক চঞ্চল করে রেখেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে আগামী বছর হতে যাচ্ছে ২৩তম ফুটবল বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে রোনালদোর বয়স হবে ৪১ বছর। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডকে এরপর আর ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’র মঞ্চে দেখা যাবে না। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক ক্যারিয়ারকে কবে বিদায় বলবেন, সেটা তিনি জানাননি। ৩৫-৩৬ বছর হলেই যেখানে অনেকে বুটজোড়া তুলে রাখেন, রোনালদোর এমন মানসিকতায় মুগ্ধ মার্তিনেজ। ফুটবলারদের অবসর নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাই রোনালদোর উদাহরণ দিয়েছেন তিনি (মার্তিনেজ)। পডকাস্টে পর্তুগিজ কোচ বলেন,‘‘ফুটবলাররা অবসরের সময় শরীর মস্তিষ্ককে বলে, ‘আমি আর পেরে উঠছি না।’ ক্রিস্টিয়ানোকে দেখে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। তার ব্যাপারে তার মস্তিষ্ক শরীরকে বলে এখনই থেমে যেতে হবে। তার প্রতিনিয়ত নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।’

লিওনেল মেসি, রোনালদো—দুজনেরই বিশ্বকাপে পথচলা ২০০৬ সালে। ২০২৬ বিশ্বকাপে তাঁরা দুজনই ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন। আজ এই দুজনের নিশ্চয়ই চোখ থাকবে ফিফার ওয়েবসাইটের দিকে। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় শুরু হবে ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম খেলতে যাচ্ছে ৪৮ দল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বীতশোক-ক্যাসপারদের লাতিন বাংলা সুপার কাপ দেখাবে না টিভিতে, দেখবেন কোথায়

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৫
লাতিন বাংলা সুপার কাপ শুরুর আগে অনুশীলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাতিন বাংলা সুপার কাপ শুরুর আগে অনুশীলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশে আসা প্রবাসী ফুটবলারদের খেলা দেখতে অপেক্ষায় আছেন অনেক ফুটবলপ্রেমী। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বীতশোক চাকমা, ইংল্যান্ডপ্রবাসী কাসপার হক, ইব্রাহীম নাওয়াজ ও অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ইশান মালিক—এই চার প্রবাসী ফুটবলার আছেন রেড গ্রিন ফিউচার স্টার দলে।

ব্রাজিলের সাও বার্নার্দো ক্লাবের বিপক্ষে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে রেড গ্রিন ফিউচার স্টার। এই ম্যাচ দেখতে অনেকে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করলেও তা কোনো টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে না। এএফ বক্সিং প্রমোশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, তাঁরা টি-স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেটা যে চূড়ান্ত হয়নি, তা তো বোঝাই গেল। এখন তারা খেলা দেখাবে তাদের অফিশিয়াল দুই পেজ আরটিভি স্পোর্টস ও এএফ বক্সিং প্রমোশন

লাতিন বাংলা সুপার কাপের চেয়ে বড় আকর্ষণ অপেক্ষা করছে রাত ১১টার সময়। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান ফিফা প্লাস সরাসরি সম্প্রচার করবে। ফুটবলে দুপুরে বাংলাদেশ ফুটবল লিগের ব্রাদার্স-বসুন্ধরা কিংস মুখোমুখি হবে। অ্যাশেজে গোলাপি বলের টেস্টের ব্রিসবেনে দ্বিতীয় দিনের খেলা চলছে। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩৩৪ রানে গুটিয়ে গেছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ২৬ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৬ রান করেছে। এক নজরে দেখে নিন টিভিতে কী কী খেলা রয়েছে।

ক্রিকেট খেলা সরাসরি

ব্রিসবেন টেস্ট: ২য় দিন

অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড

সকাল ১০টা

সরাসরি

স্টার স্পোর্টস ১

নারী বিগ ব্যাশ

মেলবোর্ন রেনেগেডস-সিডনি সিক্সার্স

বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট

সরাসরি

স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

ফুটবল খেলা সরাসরি

ফিফা বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র

রাত ১১টা

সরাসরি

ফিফা+

বাংলাদেশ ফুটবল লিগ

ব্রাদার্স-বসুন্ধরা

বেলা ২টা ৩০ মিনিট

সরাসরি

টি স্পোর্টস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুলারদের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিতে তর সইছে না মেসির

ক্রীড়া ডেস্ক    
থমাস মুলারের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে মুখিয়ে আসেন লিওনেল মেসি। ছবি: এএফপি
থমাস মুলারের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে মুখিয়ে আসেন লিওনেল মেসি। ছবি: এএফপি

লিওনেল মেসি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ট্রফির দিকে। কাছে এসেও পরম্য আরাধ্য বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁতে না পারার তীব্র আক্ষেপ কাজ করছে তাঁর। অনেকেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন ২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপে মারাকানায় মেসির রানার্সআপ হওয়ার গল্প শোনা যাচ্ছে। মেসি যখন আক্ষেপে পুড়ছিলেন, টমাস মুলার তখন চ্যাম্পিয়ন জার্মানির হয়ে উল্লাস করতে ছিলেন ব্যস্ত।

১১ বছর পর এবার মুলারের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় মেসি। এবারের মঞ্চ মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) কাপ ফাইনাল। চেজ স্টেডিয়ামে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টায় শুরু হবে এমএলএস কাপের ইন্টার মায়ামি-ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপস ফাইনাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগে মুলারকে এমএলএসে স্বাগত জানিয়েছেন মেসি। আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ী ফরোয়ার্ড বলেন, ‘সবার আগে এটা শুনে ভালো লাগলা যে মুলার মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) খেলতে এসেছে। ফাইনালে মুখোমুখি হতে পেরে ভালো লাগছে। আবারও ফের মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা ভ্যাঙ্কুভারের বিপক্ষে আগে খেলেছি। তারা কেমন দল, আমরা জানি।’

মেসি অবশ্য ২০১৪ সালের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের প্রতিশোধের দিকে ইঙ্গিত করেননি। এ বছরের ১ মে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ভ্যাঙ্কুভারের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছিল মায়ামি। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলে হেরে টুর্নামেন্টের সেমি থেকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল মেসির দলের। তখন মুলার ভ্যাঙ্কুভারে যোগদানও করেননি। জার্মান এই কিংবদন্তি এ বছরের আগস্টে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ভ্যাঙ্কুভারে এসেছেন।

আগামীকাল এমএলএস কাপ ফাইনালের আগে মে মাসে ভ্যাঙ্কুভারের কাছে হারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মেসি। একই সঙ্গে আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড ফের উল্লেখ করেছেন মুলারের আগেও। ভ্যাঙ্কুভারের বিপক্ষে ফাইনালের আগে গত রাতে মেসি বলেন,‘কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপে তারা (ভ্যাঙ্কুভার) আমাদের বিদায় করে দিয়েছিল। পুরো বছরজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছিল। সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শেষ অব্দি লড়ে গিয়েছিল। আশা করি, অনেক কঠিন একটা ম্যাচ হবে। মুলারের যোগ হওয়া দলকে আরও দারুণ করে তুলেছে। ম্যাচে কী করতে হবে, সেক্ষেত্রে দল (ইন্টার মায়ামি) আরও সচেতন থাকবে। বিশেষ একটা ফাইনাল হতে যাচ্ছে ও ফল আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশা করি।’

ভ্যাঙ্কুভারে আসার পর সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ১২ ম্যাচ খেলে মুলার করেছেন ৯ গোল। অ্যাসিস্ট করেছেন ৪ গোলে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছরে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে তিনি খেলেছেন ৭৫৬ ম্যাচ। জার্মান ক্লাবটির হয়ে করেছেন ২৫০ গোল ও অ্যাসিস্ট করেছেন ২৭৬ গোলে। বায়ার্নের হয়ে ১৩ বার বুন্দেসলিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছেন দুইবার। এদিকে মেসি আগামীকাল ইন্টার মায়ামির হয়ে তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে নামছেন। ২০২৩ লিগস কাপ, ২০২৪ সাপোর্টার্স শিল্ড জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাবটির জার্সিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত