Ajker Patrika

টেস্টে ঘরের মাঠে ভারতের এই দুর্দশা কেন

ক্রীড়া ডেস্ক    
অধিনায়ক ঋষভ পন্তের হতশ্রী হয়ে মাঠ ছাড়ার এই দৃশ্য গুয়াহাটিতে ভারতের বাজে পারফরম্যান্সের প্রতীকী ছবি। ছবি: ক্রিকইনফো
অধিনায়ক ঋষভ পন্তের হতশ্রী হয়ে মাঠ ছাড়ার এই দৃশ্য গুয়াহাটিতে ভারতের বাজে পারফরম্যান্সের প্রতীকী ছবি। ছবি: ক্রিকইনফো

আইসিসি ইভেন্টে বারবার ফাইনাল খেলে ফিরে আসার বাধা ভারত অতিক্রম করতে পারছিল না অনেক দিন ধরেই। বার্বাডোজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল জিতে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারত। রোহিতের নেতৃত্বে ভারত এরপর জিতেছে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তবে বলের রংটা যখন সাদা থেকে বদলে লাল হয়ে যায়, তখন ভারতের সেই রকম দাপট দেখা যায় না।

গুয়াহাটিতে গতকাল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষের পর সামাজিক মাধ্যমে গৌতম গম্ভীরের মুন্ডুপাত চলছে। ৪০৮ রানে হেরে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ বড় ব্যবধানে পরাজয়ের লজ্জাজনক রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে ভারত। ২-০ ব্যবধানে হেরে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে ঋষভ পন্তের নেতৃত্বাধীন ভারত। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাইয়ের পর এবার প্রোটিয়াদের কাছে ধবলধোলাই—সবশেষ এক বছরে ঘরের মাঠে ভারত দুটি টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর এই সংস্করণে তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হতশ্রী পারফরম্যান্সের কারণে ভারতের ওপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ দিনেশ কার্তিক, ভেঙ্কটেশ প্রসাদরা। নিজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম লাইভে দিনেশ কার্তিক বলেন,

‘ভারতে টেস্ট খেলতে এলে অন্য দলগুলো সাধারণত ভয় পায়। কিন্তু এখন তাদের (ভারত) এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। ১২ মাসের মধ্যে দুইবার ধবলধোলাই হয়েছে ভারত। নিজেদের মাঠে ভারত সবশেষ তিন টেস্ট সিরিজ খেলে দুটিতেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’

দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ৪০৮ রানে হেরেছে ভারত।  ছবি: ক্রিকইনফো
দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় টেস্টে ৪০৮ রানে হেরেছে ভারত। ছবি: ক্রিকইনফো

১৯৩৪ সাল থেকে ভারতে চলছে রঞ্জি ট্রফি। প্রায় শতবর্ষব্যাপী প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পাশাপাশি ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও অনেক টুর্নামেন্ট হয়। এমনকি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভারতের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টও হয়। সৌরভ গাঙ্গুলী ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি থাকার সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের উপমহাদেশে তাদের ক্রিকেট কাঠামো যে অনেক শক্তিশালী, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদবরা

ঘূর্ণিজাদুতে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়েন। কিন্তু এবার তাঁদের (জাদেজা-কুলদীপ) দারুণভাবে সামলেছেন ত্রিস্তান স্টাবস-মার্কো ইয়ানসেনরা। কখনো সুইপ, কখনো স্লগ করে বল গ্যালারিতে আঁছড়ে ফেলেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার টেলএন্ডার ব্যাটার সেনুরান মুথুসামি সেঞ্চুরি করেছেন।

ঘরের মাঠে ‘স্পিন ট্র্যাক’ বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে খোদ ভারতই সেই গর্তে পড়ে যাচ্ছে। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল নিয়েছেন ১৫ উইকেট। এবার ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট নিয়েছেন সায়মন হারমার। তাঁর ঘূর্ণিতে চোখে রীতিমতো সর্যেফুল দেখেছে ভারত। গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট। কেশব মহারাজও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। দিনেশ কার্তিক যে ভীতির কথা বলেছেন, সেটা হয়তো এই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারত দুই টেস্ট খেলেছে দুই অধিনায়কের নেতৃত্বে। কলকাতায় প্রথম টেস্টের মাঝপথে ঘাড়ে ব্যথায় উঠে যান নিয়মিত অধিনায়ক শুবমান গিল। সেই টেস্টের বাকি অংশে তিনি খেলতে না পারায় পন্তকে অধিনায়কত্ব করতে হয়েছিল। পন্ত এরপর অধিনায়কত্ব করেছেন গুয়াহাটি টেস্টেও।

ভারতের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকার সায়মন হারমার। ছবি: ক্রিকইনফো
ভারতের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১৭ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক দক্ষিণ আফ্রিকার সায়মন হারমার। ছবি: ক্রিকইনফো

ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে ঘনঘন পরিবর্তনও হচ্ছে। কলকাতায় সিরিজের প্রথম টেস্টে তিন নম্বরে ব্যাটিং করেন ওয়াশিংটন সুন্দর। সেই ওয়াশিংটন গুয়াহাটি টেস্টে ব্যাটিং করেছেন আট নম্বরে। তাঁর ৪৯ রানের ব্যাটিংয়েই মূলত ভারত ২০০ ছাড়িয়েছে (২০১)। কার্তিক বলেন, ‘তিন নম্বরে কে ব্যাটিংয়ে নামবে আসলে? কলকাতায় ওয়াশিংটন তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছে। গুয়াহাটিতে তিন নম্বরে খেলেছে সাই সুদর্শন। ভারতীয় দলে যদি বারবার পরিবর্তন করা হয়, তাহলে স্থিতিশীলতা কীভাবে আসবে? এর সমাধান কী?’

এ বছরের মে মাসে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। রোহিতের পরিবর্তে টেস্টে অধিনায়ক করা হয়েছে শুবমান গিলকে। গিলের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ২-২ ব্যবধানে ড্র করেছে ভারত। সেখানে লর্ডস টেস্টে ১৯৩ রানের হাতের নাগালে থাকা লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভারত হেরেছে ২২ রানে। আক্রমণাত্মক বাজবলের ধরনে খেলতে গিয়ে ইংল্যান্ড এখন ম্যাচ হারছে নিয়মিত। কিন্তু নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা তেমন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। পরিস্থিতি বুঝে কীভাবে খেলতে হয়, সেটা নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা ভালোই জানেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হওয়াটা ভারতের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদ।নিজের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে প্রসাদ লিখেছেন, ‘রূপান্তরকালীন অবস্থার মধ্য দিয়ে ভারত যাচ্ছে, এমনটা বলে লুকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সুদর্শন, জুরেল, রেড্ডি ছাড়া সবাই ৭-৮ বছর ধরে খেলছে। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। এই সিরিজে ট্যাকটিকাল জায়গা থেকে অনেক ভুল হয়েছে। একের পর এক অলরাউন্ডার খেলানোর ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়ার ব্যাপারটি দেখা গেছে এখানে। লজ্জাজনক।’

রোহিত-কোহলি টেস্ট, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেও ওয়ানডেতে খেলছেন। এদিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন। চেতেশ্বর পূজারাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। আগে যে তিন-চার নম্বরে পূজারা ও কোহলি ব্যাটিং করতেন, এখন সে জায়গায় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। প্রোটিয়া সিরিজে ভরাডুবি পর টেস্টে ভারতের এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন অনিল কুম্বলে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে কুম্বলে বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচে ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে খেলতে হয়। আমার মতে এত বেশি অলরাউন্ডার থাকার দরকার নেই। ব্যাটিং অর্ডারে বারবার পরিবর্তন করলে ভারসাশ্য হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয় ম্যাচে নতুন খেলোয়াড়কে আনতে গিয়ে দুইজন ক্রিকেটারকে বাদ দিতে হয়। ভারতের বসে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এই ফলগুলো ভুলে গেলে চলবে না। ভারতের টেস্ট ক্রিকেট এগিয়ে নিতে আপনাদের আলোচনা করতে হবে। গত ৬-৮ মাসে তারকা ক্রিকেটাররা অবসরে গিয়েছেন।’

আইপিএলের জন্য বছরে প্রায় তিন মাসের জন্য আলাদা একটা উইন্ডো রাখা হয়। ২০২২ থেকে ১০ দলের টুর্নামেন্ট আইপিএল হওয়ার পর ম্যাচ সংখ্যা হয়ে গেছে ৭৪। এত বিপুল পরিমাণ ম্যাচ আয়োজন করতে সময় তো বেশি লাগবেই। ২০২৬ আইপিএলের সূচি এখনো চূড়ান্ত না হলেও মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। অভিষেক শর্মা, তিলক ভার্মা, শুবমান গিলরা আইপিএলে বিধ্বংসী ব্যাটিংটা টেনে আনছেন ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতেও। এ কারণে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারত খেলেছে দাপটের সঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে ভারত ধবলধোলাই হওয়ার পর হার্শল গিবস নিজের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে গতকাল লিখেছেন, ‘আইপিএলকে সংক্ষিপ্ত করুন ও বেশি বেশি টেস্ট খেলুন।’

২০২৩-২৫ চক্রের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা এক সময় খুব সহজ মনে হচ্ছিল ভারতের। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কাছে ধবলধোলাইয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-১ ব্যবধানে হার—দুই সিরিজে ভরাডুবির পর ফাইনালে উঠতে পারেনি ভারত। এবারও ভারতের জন্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল অনেক দূরের পথ। ৪৮.১৫ শতাংশ সাফল্যের হার নিয়ে পাঁচে গৌতম গম্ভীরের দল। এক ও দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্যের হার ১০০ ও ৭৫ শতাংশ। ভারত নতুন চক্রে এরই মধ্যে তিন সিরিজে ৯ টেস্ট খেলে ফেলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ