জিপিএস ছাড়াই ব্যাকটেরিয়া থেকে লোকেশন জানাবে এআই

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

জিপিএস প্রযুক্তির কারণে এখন লোকেশন ট্র্যাক করা অনেক সহজ। আপনি কোথায় আছেন বা কোন কোন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন সেসব জানতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আপনি সাম্প্রতিক সময়গুলোতে কোথায় ছিলেন, তা জানতে জিপিএসের বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। মাইক্রোবায়োম জিওগ্রাফিক পপুলেশন স্ট্রাকচার (এমজিপিএস) নামে এই প্রযুক্তি জিপিএস ডিভাইস ছাড়াই অবস্থান শনাক্ত করবে।

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমজিপিএস তৈরি করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই প্রযুক্তি প্রচলিত নেভিগেশন সিস্টেম থেকে ভিন্ন। এটি এআই ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সম্প্রতি কোন কোন স্থানে ছিলেন, সেসব স্থান চিহ্নিত করতে পারে।

জিনোম বায়োলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, শরীরের ব্যাকটেরিয়া, মরা কোষ, ছত্রাক, ফাঙ্গাস থেকে জানা সম্ভব একজন ব্যক্তি সম্প্রতি কোন কোন জায়গাগুলো ভ্রমণ করেছেন। সাগরপাড়, রেলস্টেশন বা পার্ক– যেখানেই ঘুরতে যান, কাউকে না জানালেও খুঁজে বের করা সম্ভব হবে আপনি কোথায় ছিলেন বা আছেন।

আপনার শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গি, ভাইরাস এবং অন্যান্য অণুজীবগুলো, সদ্য ঘুরে আসা স্থানগুলোর অণুজীবের সঙ্গে মিলে স্বতন্ত্র মাইক্রোবায়োম তৈরি করতে পারে। এটা অনেকটা মাইক্রোস্কোপিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো। মাইক্রোস্কোপিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট কোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে সাহায্য করে। প্রত্যেকটি মানুষের মাইক্রোস্কোপিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ভিন্ন হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের গতিবিধি বা অবস্থান ট্র্যাক বা শনাক্ত করা যায়।

লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং সহ-গবেষক এরান এলহাইক বলেন, ‘আমরা যখন যে পরিবেশে থাকি তার সঙ্গে মিশে মাইক্রোবায়োম ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এআইয়ের মাধ্যমে মাইক্রোবায়োমগুলো যাচাই করে জানা যাবে সম্প্রতি আপনি কোন কোন জায়গাগুলোতে অবস্থান করছিলেন।’

গবেষণাকালে বিভিন্ন পরিবেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোবায়োমের তথ্য এআই মডেলটিতে যুক্ত করা হয়। শহরের ও অন্যান্য স্থান থেকে মাইক্রোবিয়াল জিনোম, ১৮টি দেশ থেকে ২৩৭টি মাটির নমুনা এবং ৯টি জায়গা থেকে ১৩১টি সামুদ্রিক নমুনা ব্যবহার করা হয়েছে।

এলহাইক বলেন, ‘আমরা শহুরে পরিবেশ, মাটি ও সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করেছি। একটি এআই মডেলে সেগুলো যুক্ত করেছি। যাতে স্বতন্ত্র তথ্য পাওয়া যায় এবং ভৌগোলিক তথ্যের সঙ্গে যুক্ত করে কারও লোকেশন বা অবস্থান জানা যায়। এই প্রচেষ্টার ফলাফল খুবই চমৎকার।’

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরে কারও অবস্থান যাচাইয়ে এমজিপিএস প্রযুক্তি ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। নিউ ইয়র্ক, হংকং ও লন্ডনের তথ্য এই মডেলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে।

হংকংয়ে মাত্র ৫৬৪ ফুট (প্রায় ১৭১ মিটার) দূরত্বের দুটি পাতাল রেলস্টেশনের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়েছে এই মডেল। অন্যদিকে নিউ ইয়র্কে এক মিটারেরও কম দূরত্বে থাকা একটি কিয়স্ক এবং একটি হ্যান্ডরেল চিহ্নিত করতে পেরেছে এই প্রযুক্তি।

তবে লন্ডনের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির সফলতা কিছুটা কম, তথ্য যাচাইয়ে সফলতার হার ৫০ শতাংশ। এর কারণ ব্যাখ্যা করে গবেষকরা বলেন, লন্ডন থেকে নেওয়া নমুনার আকার অন্য জায়গার চেয়ে তুলনামূলক ছোট।

তাছাড়া লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনগুলোর নোংরা পরিবেশ, হ্যান্ডহোল্ড না থাকা এবং ভিড় বেশি হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। গবেষকরা বলেছেন, মানুষের গায়ে গায়ে লাগার কারণে মাইক্রোবায়োম মিলেমিশে একাকার হওয়ায় প্রত্যেকেরটা আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন ছিল। সেকারণে সেখানকার সফলতার হার কম।

গবেষক এরান এলহাইক বলেন, মাইক্রোবায়োম তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখতে পারলে এর কার্যকারিতা আরও উন্নত হবে। এই উদ্ভাবনটি চিকিৎসা, মহামারি এবং ফরেনসিক বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে। শরীরে থাকা রোগের বিস্তার, উৎস এবং এটির চিকিৎসার উপায় জানা সম্ভব। এছাড়াও অপরাধের তদন্তেও এই প্রযুক্তি বেশ কাজে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত