Ajker Patrika

ড. ইউনূস সাহেব কি আইনের ঊর্ধ্বে, প্রশ্ন কাদেরের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ০৯
ড. ইউনূস সাহেব কি আইনের ঊর্ধ্বে, প্রশ্ন কাদেরের

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গতকাল সোমবার গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কথা বলেছেন। তিনি ড. ইউনূস সাহেব আইনের ঊর্ধ্বে কি না—এমন প্রশ্ন তুলেছেন।

আজ মঙ্গলবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউনূসের রায় প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনার স্ট্যাটাস, পজিশন, ব্যক্তিত্বের উচ্চতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ড. ইউনূস সাহেব কি আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে? শাস্তি কি তাঁকে আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে? যে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, তাঁদেরই মামলা। সেই মামলায় আদালত তাঁকে শাস্তি দিয়েছে। এখানে সরকারের কী করণীয় আছে? সরকার কেন এখানে সমালোচনার মুখে পড়বে? এটা তো যথাযথ নয়।’ 

বিএনপির কর্মসূচিকে রহস্যময় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অবাক হচ্ছি যে তারা (বিএনপি) লিফলেট বিতরণ করতে যাচ্ছে ৪ তারিখ পর্যন্ত। পাশাপাশি কিছু কিছু খারাপ তথ্যও পাচ্ছি—হঠাৎ করে তারা গুপ্ত হত্যা, চোরাগোপ্তা হামলা, ভয়ংকরভাবে এসবের প্রতি ঝুঁকে পড়তে পারে। সেই জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন লিফলেট বিতরণের নামে নীরবতা বাইরে দেখানো হলেও, তারা হঠাৎ করে সরব হয়ে উঠবে সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে, যা নির্বাচনবিরোধী। এ রকম খবর আমরা পাচ্ছি।’ 
 
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, এখনো নীরবতার মধ্যে রয়েছে বিএনপি। তাদের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি তো নিরীহ। এটাকে আন্দোলন বলবেন? তাদের আন্দোলনও হবে না। কোনো লক্ষণও নেই। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগামীবার আমরা আরও শক্তভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনা করব।’ 

স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে কাদের বলেন, যদিও অশান্তির উপাদান এখানে আছে। অগ্নি-সন্ত্রাস আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে, বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়া আছে। নির্বাচনে জনগণ যেন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভোট দিতে না যায়, সে কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিএনপি ও তার দোসররা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন থেকে পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী যে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে, তা থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। যত বাধাই আসুক, যত সন্ত্রাস হোক, যা কিছু তারা করুক এবং লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে নির্বাচন থেকে বিরত করার চেষ্টা করুক, এর কোনোটাই এই নির্বাচন বন্ধ করতে পারবে না। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা অবিচল, অটল। এ নির্বাচন অনুষ্ঠান ইতিহাস অর্পিত দায়িত্ব, গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সংরক্ষণের দায়িত্ব। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সমাপ্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ভূমিকা পালনে যেকোনো সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর।’ 
 
জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না—এ বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বক্তব্য প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো টানাপোড়েন নেই। আমাদের সঙ্গে তাদের খুব ভালোভাবে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরের সহযোগী হব, একটা ভালো নির্বাচনে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আমার মনে হয় না তারা দলগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন নেতা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক শোকবার্তায় জানায়, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) শোকবার্তায় উল্লেখ করে, স্বৈরতন্ত্র ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। দীর্ঘ কারাবাস, নির্যাতন ও চিকিৎসাবঞ্চনার মধ্যেও তাঁর আপসহীন অবস্থান জনগণের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে জানায় সংগঠনটি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রতীক ছিলেন। এক-এগারোপরবর্তী গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, খালেদা জিয়াকে কখনো প্রতিহিংসামূলক আচরণ করতে দেখা যায়নি। তাঁর জনপ্রিয়তার মধ্যেও অহংকার ছিল না। সত্যিকার অর্থে জাতি একজন অভিভাবককে হারিয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক শোকবার্তায় বলেন, গণতন্ত্র ও বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শোকবার্তায় বলেন, দেশের কল্যাণে তাঁর আজীবন সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন আরিফ সোহেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০১
আরিফ সোহেল। ছবি: সংগৃহীত
আরিফ সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন। সংগঠনটির যুগ্ম সদস্যসচিবের পদে থাকা এই তরুণ নেতা ফেসবুকে দীর্ঘ এক বিবৃতির মাধ্যমে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে আরিফ সোহেল এনসিপির বর্তমান রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং গণমানুষের প্রকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে পুনরায় জনগণের কাতারে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে আরিফ সোহেল আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি এনসিপি নেতাদের ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

২০১৭ সাল থেকে বিপ্লবী ধারণা নিয়ে একটি গ্রুপে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা আরিফ সোহেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ‘বৈপ্লবিক’ রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ ও পরে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তখন তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

আরিফ সোহেল তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হলেও আমলাতন্ত্র ও বৈদেশিক শক্তির ষড়যন্ত্রে পরিস্থিতি ‘নেগোশিয়েটেড সেটেলমেন্ট’ বা আপস-রফার দিকে গড়ায়।

পদত্যাগের প্রধান কারণ হিসেবে আরিফ সোহেল এনসিপির বর্তমান অবস্থানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী গণসংগ্রামের উদর থেকে প্রসব হওয়া নতুন গণরাজনীতি ও তৃতীয় শক্তিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির বাতাবরণে সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি।’

তাঁর মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে যে ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছিল, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এনসিপি ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে বিভাজন আবার ফিরে এসেছে এবং ফ্যাসিবাদের দোসররা রাষ্ট্রকে পুনরায় গণবিরোধী করার সুযোগ পাচ্ছে।

পুরোনো ধারার দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করে ওই ফেসবুক পোস্টে আরিফ সোহেল বলেন, ‘প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ক্ষমতার কুরসীটাই প্রধান। রাষ্ট্রের চরিত্র যতো গণবিরোধীই থাকুক না কেন, তাতে এদের কিছুই আসে যায় না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত পুরোনো দলগুলোর সাথে আপসরফা করে পুরানো ক্ষমতার রাজনীতিতেই প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে, যা জুলাইয়ের গণশক্তির আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।’

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আরিফ সোহেল তাঁর পূর্বতন সহকর্মীদের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি ও তাঁর কমরেডরা এখন থেকে প্রথাগত সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে সরাসরি সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করবেন।

বিবৃতির শেষে তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও শুভেচ্ছা কামনা করে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০০৭-২৫: ৩৭ মামলার সব কটি সশরীরে থেকে মোকাবিলা করেছেন খালেদা জিয়া

আশরাফ-উল-আলম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৯
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

২০০৭ সালে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে শুরু হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের। সে আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয় পাঁচটি। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১৬ বছরে তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হয় আরও ৩২টি মামলা। মোট ৩৭টি মামলার আসামি ছিলেন বিএনপির এই আপসহীন নেত্রী; যার একটিতেও পলাতক ছিলেন না তিনি।

এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া খালাস পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল ইসলাম সেদিন এ রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ৩৭টি মামলা থেকে খালাস ও অব্যাহতি পান তিনি।

দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়াকে প্রায় দুই বছর কারাভোগ করতে হয়। বাকি মামলাগুলোয় জামিন নেন তিনি। প্রত্যেকটি মামলায় হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লড়তে থাকেন। কোনো মামলায় পলাতক থাকেননি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাজাপ্রাপ্ত দুই মামলায় রাষ্ট্রপতি তাঁকে ক্ষমা ঘোষণা করেন। তা সত্ত্বেও তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যান। আপিল আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে ওই দুই মামলা থেকে খালাস পান তিনি।

২০০৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে ৩৭টি মামলার মুখোমুখি করা হয়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে সাজা দেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়ার মামলা নিষ্পত্তি হতে থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলার সব কটি নিষ্পত্তি হয়।

এ বছরের ১৫ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারজনকে বেকসুর খালাস দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিলেও গত বছরের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এর আগে তিনি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর দারুস সালাম থানার ছয়টি ও যাত্রাবাড়ী থানার তিন মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।

নাশকতার এক মামলায় গত ২২ জানুয়ারি কুমিল্লার একটি আদালত খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন আদালতে থাকা পাঁচটি মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার আদালতে করা রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলার কার্যক্রম গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট বাতিল করে দেন।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থাকা কয়েকটি মামলা থেকেও খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়ে।

আওয়ামী লীগ আমলে কারাবাস

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও ২০১৮ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রথমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন খালেদা জিয়া। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে রাখা হয়।

দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় কার্যত কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন সরকার তাঁকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তবে এটিও পুরোপুরি মুক্তি নয়, আইনি শর্তে বলতে গেলে গৃহবন্দী ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এই দেশের মানুষই ছিল তাঁর পরিবার, তাঁর সত্তা, তাঁর অস্তিত্ব: তারেক রহমানের পোস্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৩ মিনিটে তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্টটি দেন। এই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’

তারেক রহমান লিখেছেন, ‘আমার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’

তিনি লিখেছেন, ‘অনেকের কাছে তিনি ছিলেন দেশনেত্রী, আপোষহীন নেত্রী; অনেকের কাছে গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের মা। আজ দেশ গভীরভাবে শোকাহত এমন একজন পথপ্রদর্শককে হারিয়ে, যিনি দেশের গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় অনিঃশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

একজন মমতাময়ী মা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খালেদা জিয়ার অবস্থান তুলে ধরে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য। আজীবন লড়েছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে; নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। ত্যাগ ও সংগ্রামে ভাস্বর হয়েও, তিনি ছিলেন পরিবারের সত্যিকারের অভিভাবক; এমন একজন আলোকবর্তিকা যাঁর অপরিসীম ভালোবাসা আমাদের সবচেয়ে কঠিন সময়েও শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়েছে। তিনি বারবার গ্রেফতার হয়েছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সর্বোচ্চ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও যন্ত্রণা, একাকিত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেও তিনি অদম্য সাহস, সহানুভূতি ও দেশপ্রেম সঞ্চার করেছিলেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে।’

খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘দেশের জন্য তিনি হারিয়েছেন স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান। তাই এই দেশ, এই দেশের মানুষই ছিল তাঁর পরিবার, তাঁর সত্তা, তাঁর অস্তিত্ব। তিনি রেখে গেছেন জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আপনারা সবাই আমার মা’র জন্য দোয়া করবেন। তাঁর প্রতি দেশবাসীর আবেগ, ভালোবাসা ও বৈশ্বিক শ্রদ্ধায় আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত