Ajker Patrika

তাপপ্রবাহের কারণে নয়াপল্টনের সমাবেশ স্থগিত করল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ৩৮
তাপপ্রবাহের কারণে নয়াপল্টনের সমাবেশ স্থগিত করল বিএনপি

দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ২৬ এপ্রিলের (শুক্রবার) সমাবেশ স্থগিত করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশটি রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। 

আজ সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পরবর্তী তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর জানানো হবে।

এর আগে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ ডেকেছিল দলটি। 

পরদিন রোববার (২১ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের ঘোষণা করে। এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ৩টা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

গৃহবধূ থেকে ধরেছিলেন দলের হাল। ইতিহাসের বাঁক বদলে তিনবার পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। এরপর মামলার রায়ে সাজা ভোগ। রোগশোকে জর্জরিত হয়ে শেষ বয়সে ছিলেন জেলের বাইরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুনয়-বিনয়ে সাড়া দেয়নি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। চব্বিশের জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের পর কারামুক্তি হলেও রোগমুক্তি ঘটেনি খালেদা জিয়ার। নানাবিধ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতেই নিভে গেল তাঁর প্রাণপ্রদীপ।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ২৩ নভেম্বর থেকে শেষবারের মতো এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন।

দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। শেষ দফায় হাসপাতালে ভর্তির পর দলের পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ বলা হয়েছে।

ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্বরে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, সংক্ষেপে বিএনপি নামে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন সেই সময়কার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে খুন হন জিয়া। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি গৃহবধূ খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মনোনীত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৪টি আসনে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি। জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে দলটি। ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়); তথ্য মন্ত্রণালয়; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি। একতরফা ওই নির্বাচনে ২৭৮টি আসনে জিতে ১৯ মার্চ সরকার গঠন করেন খালেদা জিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারেন তিনি। সেই সরকারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ নিজের হাতে রেখেছিলেন খালেদা জিয়া।

এরপর ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ২১৫টি আসনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া। ওই সরকারে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; সংস্থাপন মন্ত্রণালয়; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

খালেদা জিয়া দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর তিনি প্রথম সরকার গঠন করেন। পরে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেন এবং আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক যাত্রায় তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুনভাবে রূপ দিয়েছেন, বিশেষ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়।

স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করে তিনি দ্রুত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রীতে পরিণত হন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠে।

দীর্ঘ কারাবাস, স্বাস্থ্য সংকট ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর খালেদা জিয়া একাধিকবার কারাবন্দী ছিলেন। পরে অসুস্থতার কারণে সরকার তাঁকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়। মুক্তির পর থেকেই তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এবং রাজনৈতিক উত্তাপও সৃষ্টি হয়।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ২১
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবনাবসান হয়েছে। তিনি আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ফজরের পর ইন্তেকাল করেন। বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিএনপির পেজে শেয়ার করা পোস্টে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং সকলের নিকট তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চাচ্ছি।’

এ ছাড়া বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানও তাঁর ফেসবুক পেজে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় আল্লাহর মেহমান হয়েছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল জেএসডি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৫
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) মনোনীত প্রার্থীরা ৩১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
আজ সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন জেএসডির প্রার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

জেএসডির প্রার্থীরা হলেন তানিয়া রব (লক্ষ্মীপুর-৪), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজ মিয়া (নোয়াখালী-৩), অ্যাডভোকেট কে এম জাবির (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী (নোয়াখালী-৩), অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন (ঢাকা-১০), আজিজুর রহমান (রংপুর-২), মো. ফজলুর ইসলাম খান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), ইলোরা খাতুন সোমা, (সিরাজগঞ্জ-৬), আবু মুসা (যশোর-৪), আব্দুল লতিফ খান (বাগেরহাট-৩), হাবিবুর রহমান মাস্টার (বাগেরহাট-২), খালেকুজ্জামান মোস্তফা (টাঙ্গাইল-৫), মোহাম্মদ আমির উদ্দিন (জামালপুর-৫), শিরীন আকতার (কুমিল্লা-৫), অ্যাডভোকেট তৈমুর রেজা শাহজাদ ভূঁইয়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), ইউসুফ তালুকদার (চট্টগ্রাম-১), অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৯), মো. সোহরাব হোসেন (ঝালকাঠি-১), মাসুদ পারভেজ সোহেল (ঝালকাঠি-২), মোশারেফ হোসেন মন্টু (নোয়াখালী-২), আবদুল মোতালিব মাস্টার (নোয়াখালী-৬), ড. গিয়াস উদ্দিন (কুষ্টিয়া-১), অধ্যাপক রেহানা জিলানী (নোয়াখালী-১), হারুন উর রশিদ বাবুল (লক্ষ্মীপুর-৩), অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন মজুমদার (ফেনী-৩), অ্যাডভোকেট প্রসেনজিৎ দত্ত (খুলনা-১), আব্দুল্লাহ আল ওয়াকিং (বগুড়া-৬), শাহানা সুলতানা (ঢাকা-৭), নুরুল আমিন (ঢাকা-১৪), আরিফা আক্তার বেবী (ফরিদপুর-৩) ও ওবায়দুল করিম মোহন (কুমিল্লা-৬)।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপিতে তিন ধরনের বিদ্রোহী নেত্রী

অর্চি হক, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভেতরে অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর দলটির একাধিক নারী নেত্রী প্রকাশ্যেই আপত্তি তুলেছেন। কেউ পদত্যাগ করেছেন, কেউ প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আবার কেউ নির্বাচনকালীন সব কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকার কথা জানিয়েছেন। এতে তরুণদের এই দলের সাংগঠনিক ঐক্য ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ ও মধ্যপন্থী রাজনীতির প্রত্যাশা নিয়ে এনসিপির যাত্রা শুরু হয়। দলটি শুরুতে এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সেই ঘোষণার ভিত্তিতেই সারা দেশে মনোনয়ন সংগ্রহ ও প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম চলে। কিন্তু হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, যা দলের ভেতর বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

দুজনের পদত্যাগ

জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পর এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে এনসিপি। এর মধ্যে ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী হিসেবে তাসনিম জারা ও ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হিসেবে তাজনূভা জাবীনের নাম ছিল।

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি নির্বাচনী সমঝোতার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগের কথা জানান এই দুই নেত্রী।

গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাসনিম জারা নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর গতকাল রোববার দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাজনূভা জাবীন। তিনি পোস্টে লেখেন, ‘ভেবেছিলাম, জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর আমি পদত্যাগ দেবো। শেষ আশায় ছিলাম। কিন্তু গতকাল সবাই নিশ্চিত করেছে এই জোটে সীল পরেছে। আর আবারও বলি, আমার পদত্যাগের কারণ যতটা না জোট তার চেয়ে বেশি যে প্রক্রিয়ায় জোট হয়েছে। অবিশ্বাস, অনাস্থা মূল কারণ।’

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দুজন

দল থেকে পদত্যাগ না করলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এনসিপির আরও দুই নেত্রী। তাঁরা হলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক মনজিলা ঝুমা। মনিরা শারমিন নওগাঁ-৫ ও মনজিলা ঝুমা খাগড়াছড়ি থেকে এনসিপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

গতকাল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মনিরা শারমিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষায় গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী একমাত্র মধ্যপন্থী রাজনীতির ভরসাস্থল ছিল। এই দল থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ–৫ থেকে আমি মনোনীত প্রার্থী। তবে মনোনয়ন পাওয়ার আগে আমি জানতাম না, এই দল জামায়াতের সাথে ৩০ সিটের আসন সমঝোতা করবে। আমি জানতাম, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে একক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু এখন দলের পজিশন পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমি নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করছি। নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না। আমি এনসিপির স্বতন্ত্র শক্তিতে বিশ্বাসী। দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট আমি ভাঙি নাই। কিন্তু এই মুহূর্তে দলের প্রতি কমিটমেন্টের চেয়ে আমার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি কমিটমেন্ট ও দেশের মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এনসিপির এই নেত্রী আরও লেখেন, ‘আমি দল থেকে পদত্যাগ করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিই নাই। এনসিপি কারো একার সম্পত্তি না। এনসিপি যতখানি শীর্ষ নেতৃত্বের, তার থেকে অনেক বেশি আমার। আজ পর্যন্ত এমন কিছু বলি নাই বা করি নাই যাতে দল বিতর্কিত হয়। তবে নিজের নৈতিকতা বিক্রি করে রাজনীতি করতে চাই না, ক্ষমতায় যেতে চাই না।’

অন্য দিকে মনজিলা ঝুমা গতকাল রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘এনসিপি প্রাথমিকভাবে যেই ১২৫ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল তার মধ্যে খাগড়াছড়ি ২৯৮ নম্বর আসনে শাপলা কলি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে আমাকে মনোনীত করেছিল। ২৪ তারিখে আমার পক্ষে আমার দলের খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক মনোনয়ন উত্তোলন করেছে। আগামীকাল জমা দেওয়ার লাস্ট ডেইট। আজ প্রায় ২ ঘণ্টা আগেই দলের আহ্বায়ক জনাব নাহিদ ইসলামকে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি তরুণরা সংসদে যাবে, আজ নয়তো কাল।’

মনজিলা ঝুমা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও তিনি এর কারণ জানাননি। গত শনিবার তিনি ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলামের ওপর আস্থা রাখার কথা জানিয়েছিলেন।

নির্বাচনে নিষ্ক্রিয় থাকবেন একাধিক নেত্রী

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম গতকাল রাতে ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে জানান, তিনি নির্বাচনকালে নিষ্ক্রিয় থাকবেন। নুসরাত কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে এনসিপি থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। তবে প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।

ফেসবুক পোস্টে নুসরাত লেখেন, ‘আজ ২৮ ডিসেম্বর ঠিক ১০ মাস পর জামায়াতে ইসলামীসহ ১০–দলীয় জোটে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমি মনে করি এনসিপির সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দ এবং নীতিনির্ধারকেরা নিজেরাই এনসিপির মূল বক্তব্য থেকে চ্যুত হয়েছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে জনাব আহ্বায়ক (নাহিদ ইসলাম) মহোদয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদের আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী প্রদান করার ঘোষণা দিতে শুনেছি। এমতাবস্থায় তৃণমূল পর্যন্ত, বিশেষ করে মনোনয়ন নেওয়া ব্যক্তিগণের সাথে এই জোট ঘোষণার মাধ্যমে প্রবঞ্চনা করা হয়েছে বলে মনে করি। এ সমস্ত ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আমি নুসরাত তাবাসসুম, (যুগ্ম আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টি) নিজেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকালীন সময়ে পার্টির সব কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় করছি এবং অবস্থা পুনর্বিবেচনাক্রমে যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা করছি।’

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে এ কথা জানান তিনি।

ফেসবুক পোস্টে সামান্তা লিখেছেন, ‘মধ্যমপন্থায় পৌঁছানো কোনো সহজ বা তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। ভিন্ন মতাদর্শ ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে আসা মানুষদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) মতভিন্নতা ও অভ্যন্তরীণ বিতর্ক স্বাভাবিক ও অনিবার্য। পার্টির মাত্র দশ মাসের পথচলায় সাংগঠনিক মধ্যমপন্থার চূড়ান্ত রূপ নির্ধারিত হয়ে যাবে—এমন প্রত্যাশা বাস্তবসম্মত নয়। ফলত ‘‘ইনার পার্টি স্ট্রাগল’’ একটা অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।’

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সমঝোতার প্রসঙ্গ টেনে সামান্তা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনী কৌশল, বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট ও আসন সমঝোতার প্রশ্নে পার্টির ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আমি এই বিষয়ে আমার ভিন্নমত প্রকাশ করেছি। প্রত্যেকে নিজ নিজ রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও বাস্তবতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই অবস্থান নিয়েছে; কোনটি সঠিক, তা সময়ই নির্ধারণ করবে।’

অপর দিকে এনসিপির হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী। আজ এক ফেসবুক পোস্টে দ্যুতি লেখেন, ‘নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করছি না, সেটা আমার দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নয়। বরং আমার দলের সিদ্ধান্ত দলের বহু নেতা-কর্মীর স্বপ্নভঙ্গের কারণ বলে মনে করি।’

এ ছাড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা আপাতত পদত্যাগ করবেন না। তবে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারে তাঁরা অংশ নেবেন না।

জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ জন নেতা আপত্তি জানিয়ে দলের আহ্বায়ক বরাবর স্মারকলিপি দেন। এই ৩০ জনের মধ্যে পাঁচজন নারী নেত্রী। তাঁরা হলেন—যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা।

এনসিপি নেত্রী মনিরা শারমিন আজকের পত্রিকাকে জানান, জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর তাঁরা ছয়জন নেত্রী দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা করে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সেখানে মনিরা শারমিন ছাড়াও ছিলেন সামান্তা শারমিন, তাজনূভা জাবীন, তাসনিম জারা, নুসরাত তাবাসসুম ও নাহিদা সারওয়ার নিভা। তাঁরা সেদিন নাহিদ ইসলামকে জানিয়েছিলেন, জামায়াতকে সঙ্গী করলে এই নারী নেত্রীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

মনিরা শারমিন বলেন, নাহিদ ইসলাম এক মাস আগেও বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসের দায় রয়েছে। যাদের ইতিহাসের দায় রয়েছে, এনসিপি তাদের সঙ্গে জোটে যাবে না। অথচ এখন সেই জোটেই যাওয়া হলো। যদিও বলা হচ্ছে, এটা নির্বাচনী সমঝোতা, আদর্শিক জোট নয়। কিন্তু এই সমঝোতাও এনসিপির আদর্শের পরিপন্থী।

নারী নেত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, কেউ দলে থাকবে কি না বা নির্বাচন করবে কি না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

এনসিপির নারী নেত্রীদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোটের পক্ষে আস্থা রাখার কথা জানিয়েছে। গত শনিবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির ১১৪ জন নেতা জোট বা সমঝোতার প্রতি আস্থা জানিয়ে নাহিদ ইসলামকে চিঠি দেন। সেই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে সাতজন নারী নেত্রী রয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যাওয়ায় দলে বিভাজনের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, যেকোনো মতামতের ক্ষেত্রে কারও ভেটো (আপত্তি) থাকতে পারে, মতামত থাকতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি, সারা দেশের নেতা–কর্মীরা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা জোটের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, ‘যারা বিরোধিতা করছে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাদের আরও বোঝানোর চেষ্টা করব। আশা করি, তারা এনসিপির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গেই থাকবে।’

একাধিক নেত্রীর পদত্যাগ, সরে দাঁড়ানো ও নিষ্ক্রিয় থাকার ঘোষণায় স্পষ্ট, জামায়াতের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত এনসিপির ভেতরে গভীর বিভাজন তৈরি করেছে। সামনে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, এই সংকট দলটির সাংগঠনিক শক্তি ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে কোন পথে নিয়ে যায়, সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত