Ajker Patrika

জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় ১২ দলীয় জোট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চায় ১২ দলীয় জোট

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে আলোচনায় নীতিগতভাবে রাষ্ট্রপতির অপসারণে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার। তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি অপসারণের প্রক্রিয়া সম্পন্নের দিকেও জোর দিয়েছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ১২ দলীয় জোট প্রধানের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘নীতিগতভাবে রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কত দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। পুরো জাতি এক হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেন উপনীত হওয়া যায়, সেটি আমরা চাই। রাজনৈতিক দল এবং শক্তিগুলোর মধ্যে যেন এ নিয়ে কোনো সংশয় না থাকে, সেটা আমরা চাই। সবাই এক হয়ে আমরা যেন এ বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সে জন্য সময় লাগলেও তা করতে হবে।’

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের ব্যর্থতা সমগ্র দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণত ডেকে আনবে। এই সরকারের সাফল্য চাই। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চাই আমরা।’

গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে বিএনপিসহ যারা মাঠে ছিল, তাঁদের সবার মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠারও আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে চলে যেতে হবে। এ বিষয়ে সবাই নীতিগতভাবে একমত। তবে চলে যাওয়া বা অপসারণের প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যের দরকার আছে। সেই জায়গায় আলোচনা প্রয়োজন।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘বিএনপিকে আহ্বান জানাব জনগণের পাল্স বুঝুন। প্রেসিডেন্ট হাউসে যে গোখরা সাপ বসে আছে, তাঁকে বিদায় করতে সহযোগিতা করুন।’

এদিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের নেতা শাহাদত হোসেন সেলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির প্রতি আমাদের কোনো সহানুভূতি নাই। কিন্তু সাংবিধানিক সংকট, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে। এটা করতে গেলে হিতে বিপরীত হয় কিনা। এখানে জাতীয় ঐকমত্য দরকার এবং সেটা কতখানি সম্ভব হবে। বিএনপির মতো বিশাল একটি রাজনৈতিক দল যদি এ ব্যাপারে একমত না হয়, তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে পড়বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির সব পদ থেকে রুমিন ফারহানাকে বহিষ্কার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৭
রুমিন ফারহানা। ছবি: সংগৃহীত
রুমিন ফারহানা। ছবি: সংগৃহীত

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সিদ্ধান্ত অমান্যের কারণে রুমিন ফারহানাকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রুমিন ফারহানা বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি মনোনয়ন পাননি। এরপরও তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন, যা বিএনপির গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী বলে মনে করছে দলটি।

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত রুমিন ফারহানার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, রুমিন ফারহানা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে পরিচিত এবং বিএনপির রাজনীতিতে আন্তর্জাতিকবিষয়ক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর বহিষ্কারের ঘটনায় দলটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক সরকারপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাজনৈতিক দল, ছাত্রসংগঠন, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন নেতা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক শোকবার্তায় জানায়, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) শোকবার্তায় উল্লেখ করে, স্বৈরতন্ত্র ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। দীর্ঘ কারাবাস, নির্যাতন ও চিকিৎসাবঞ্চনার মধ্যেও তাঁর আপসহীন অবস্থান জনগণের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে জানায় সংগঠনটি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জনগণের আস্থার প্রতীক ছিলেন। এক-এগারোপরবর্তী গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, খালেদা জিয়াকে কখনো প্রতিহিংসামূলক আচরণ করতে দেখা যায়নি। তাঁর জনপ্রিয়তার মধ্যেও অহংকার ছিল না। সত্যিকার অর্থে জাতি একজন অভিভাবককে হারিয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক শোকবার্তায় বলেন, গণতন্ত্র ও বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শোকবার্তায় বলেন, দেশের কল্যাণে তাঁর আজীবন সংগ্রাম ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে থাকবে।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন আরিফ সোহেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০১
আরিফ সোহেল। ছবি: সংগৃহীত
আরিফ সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন। সংগঠনটির যুগ্ম সদস্যসচিবের পদে থাকা এই তরুণ নেতা ফেসবুকে দীর্ঘ এক বিবৃতির মাধ্যমে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বিবৃতিতে আরিফ সোহেল এনসিপির বর্তমান রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং গণমানুষের প্রকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে পুনরায় জনগণের কাতারে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে আরিফ সোহেল আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি এনসিপি নেতাদের ইতিমধ্যে মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

২০১৭ সাল থেকে বিপ্লবী ধারণা নিয়ে একটি গ্রুপে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা আরিফ সোহেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ‘বৈপ্লবিক’ রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ ও পরে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, তখন তিনি ও তাঁর সহযোদ্ধারা নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন।

আরিফ সোহেল তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হলেও আমলাতন্ত্র ও বৈদেশিক শক্তির ষড়যন্ত্রে পরিস্থিতি ‘নেগোশিয়েটেড সেটেলমেন্ট’ বা আপস-রফার দিকে গড়ায়।

পদত্যাগের প্রধান কারণ হিসেবে আরিফ সোহেল এনসিপির বর্তমান অবস্থানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী গণসংগ্রামের উদর থেকে প্রসব হওয়া নতুন গণরাজনীতি ও তৃতীয় শক্তিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির বাতাবরণে সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি।’

তাঁর মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে যে ‘রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী’ তৈরি হয়েছিল, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এনসিপি ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে বিভাজন আবার ফিরে এসেছে এবং ফ্যাসিবাদের দোসররা রাষ্ট্রকে পুনরায় গণবিরোধী করার সুযোগ পাচ্ছে।

পুরোনো ধারার দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করে ওই ফেসবুক পোস্টে আরিফ সোহেল বলেন, ‘প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ক্ষমতার কুরসীটাই প্রধান। রাষ্ট্রের চরিত্র যতো গণবিরোধীই থাকুক না কেন, তাতে এদের কিছুই আসে যায় না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত পুরোনো দলগুলোর সাথে আপসরফা করে পুরানো ক্ষমতার রাজনীতিতেই প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে, যা জুলাইয়ের গণশক্তির আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।’

পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আরিফ সোহেল তাঁর পূর্বতন সহকর্মীদের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, গণমানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি ও তাঁর কমরেডরা এখন থেকে প্রথাগত সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে সরাসরি সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করবেন।

বিবৃতির শেষে তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া ও শুভেচ্ছা কামনা করে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০০৭-২৫: ৩৭ মামলার সব কটি সশরীরে থেকে মোকাবিলা করেছেন খালেদা জিয়া

আশরাফ-উল-আলম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৯
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

২০০৭ সালে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে শুরু হয় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের। সে আমলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয় পাঁচটি। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত ১৬ বছরে তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হয় আরও ৩২টি মামলা। মোট ৩৭টি মামলার আসামি ছিলেন বিএনপির এই আপসহীন নেত্রী; যার একটিতেও পলাতক ছিলেন না তিনি।

এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া খালাস পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল ইসলাম সেদিন এ রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ৩৭টি মামলা থেকে খালাস ও অব্যাহতি পান তিনি।

দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়াকে প্রায় দুই বছর কারাভোগ করতে হয়। বাকি মামলাগুলোয় জামিন নেন তিনি। প্রত্যেকটি মামলায় হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লড়তে থাকেন। কোনো মামলায় পলাতক থাকেননি।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাজাপ্রাপ্ত দুই মামলায় রাষ্ট্রপতি তাঁকে ক্ষমা ঘোষণা করেন। তা সত্ত্বেও তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে যান। আপিল আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে ওই দুই মামলা থেকে খালাস পান তিনি।

২০০৭ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে ৩৭টি মামলার মুখোমুখি করা হয়। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে সাজা দেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়ার মামলা নিষ্পত্তি হতে থাকে। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলার সব কটি নিষ্পত্তি হয়।

এ বছরের ১৫ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া, তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারজনকে বেকসুর খালাস দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিলেও গত বছরের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এর আগে তিনি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন।

গত বছরের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর দারুস সালাম থানার ছয়টি ও যাত্রাবাড়ী থানার তিন মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।

নাশকতার এক মামলায় গত ২২ জানুয়ারি কুমিল্লার একটি আদালত খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেন। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন আদালতে থাকা পাঁচটি মামলায় খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার আদালতে করা রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলার কার্যক্রম গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট বাতিল করে দেন।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে থাকা কয়েকটি মামলা থেকেও খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বিভিন্ন সময়ে।

আওয়ামী লীগ আমলে কারাবাস

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও ২০১৮ সালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রথমে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন খালেদা জিয়া। অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে রাখা হয়।

দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় কার্যত কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন সরকার তাঁকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। তবে এটিও পুরোপুরি মুক্তি নয়, আইনি শর্তে বলতে গেলে গৃহবন্দী ছিলেন তিনি। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত