
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
এর মধ্যে অন্যতম খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মুরাদ হাসান, পঙ্কজ নাথ, জাকির হোসেন, সাইফুজ্জামান শিখর, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন—ময়মনসিংহ–৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম খালিদ, খুলনা–৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং কুড়িগ্রাম–৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। খুলনা–৩ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থকেরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে, সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক এবং তাঁর আসনে মনোনয়ন পাওয়া এসএম কামাল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
নানা কারণে সমালোচিত হয়েছেন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ–বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর ছোট ভাইকে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং ভাতিজিকে মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলে সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরি দেওয়া নিয়েও সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
বাদ পড়াদের অনেককে নিয়েই বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল—তাঁরা আর আওয়ামী লীগের টিকিট পাবেন না। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল, দুর্নীতি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, বিতর্কিত মন্তব্যসহ নানা কারণে তাঁরা বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন জামালপুর–৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। শোবিজ তারকাদের সঙ্গে তাঁর অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সারা দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর জেরে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারিয়ে তিনি এলাকায় গিয়ে জনসংযোগে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না।
জামালপুর–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বাবা আবদুল মালেক একসময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফরিদপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সরকারের পরপর দুই মেয়াদে মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় অবশ্য ছিলেন না। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, নির্যাতন ও অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা রুবেল–বরকতের হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে মোশাররফ হোসেন আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও তিনি বারবার আলোচনায় এসেছেন।
ফরিদপুর–৩ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জামাতা হাবিবে মিল্লাতও মনোনয়ন পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য। এবার সেখানে নৌকার টিকিট পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী।
নানা সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত–সমালোচিত হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। নির্বাচনী এলাকার নেতা–কর্মীরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে অনুরোধ জানিয়ে দলীয় সভাপতি বরাবর আবেদন করেছিলেন কুড়িগ্রাম–৪ আসনভুক্ত রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা। তাঁরা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগে বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।’
জাকির হোসেনের নির্বাচনী এলাকা কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব ছাত্রলীগের সোহাগ–নাজমুল কমিটির উপ–আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
আলোচিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও একাদশ সংসদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন না। ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম–জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়। এটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর–১ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল–৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই নিজস্ব বলয় তৈরি করেন পঙ্কজ নাথ। গত ১০ বছর নানাভাবে দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। তাঁর বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া ও কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পঙ্কজ। তবে বাদ পড়েছেন। এ আসনে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
ঢাকা–১০সহ তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাগুরা–১ আসনে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাগুরা–১ আসন থেকে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব। তাঁর বাবা চারবার সংসদ সদস্য ছিলেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী পাপিয়াকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মানবজমিনের সম্পাদক ও আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় ছিলেন সাইফুজ্জামান শিখর।
মানিকগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্জয় ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, বখরাবাজি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় জমি দখলের অভিযোগও ওঠে। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সালাম।
আবাসন ব্যবসায়ী এনামুল হক নানা কারণে বারবার আলোচনায় এসেছেন। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাও রয়েছে তাঁর। রাজশাহী–৪ আসন থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। একাধিকবার নারী কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁস হয়েছে। যদিও তিনি বরাবর অস্বীকার করেছেন।
রাজশাহী–৪ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ।
রাজধানীর ধানমন্ডি–নিউমার্কেট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১০ আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি। দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ও কিশোরগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ এবার দলীয় মনোনয়ন খোয়ালেন পুলিশের আরেক সাবেক কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের কাছে। আবদুল কাহার আকন্দ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধের খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম এবার মনোনয়ন পাননি। তাঁর নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন, সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
নানা কারণে আলোচিত ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান (রিমন)। দলীয় নেতা–কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত তিনি। রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন ১৩ জন নেতা। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা।
নেত্রকোনা–৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সম্প্রতি আলোচনায় আসেন তাঁর স্ত্রীর করা একটি মামলা নিয়ে। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীকে প্রধান আসামি করে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৭৫ বছর বয়সী এই সংসদ সদস্যকে অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল ও নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। এই আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা–১৩ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় আসেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমিসংলগ্ন প্রধান বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাঁদাবাজি ও ছেলে ফাহিম খানের আধিপত্য বিস্তারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এবার তাঁকে সরিয়ে এ আসনের পুরোনো সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
হাওরে দখল, দুর্নীতির জন্য সমালোচিত হন সুনামগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (রতন)। এবার তাঁকে সরিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিৎ চন্দ্র সরকারকে।
এমপি হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে তলব করেছিল দুদক। জমি দখল, বিলাসবহুল বাড়ি, স্থানীয় নেতা–কর্মীদের অবমূল্যায়ন ইত্যাদি অভিযোগ নিয়ে আলোচিত ছিলেন তিনি।
সুনামগঞ্জ–২ আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন হারিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী। পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
সরকারি জমি দখলসহ নানা অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েন কুমিল্লা–১ আসনের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এখানে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর। বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন সুবিদ আলী। বিএনপির প্রতি তাঁর দুর্বলতার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
বনের জমি দখল ও অস্ত্রধারী নিয়ে মিছিল করে সমালোচিত হন কক্সবাজার–১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দীন আহমদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাফর ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিদখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা বিক্রি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে দুদকে অভিযোগ জমা পড়েছে। পুরো পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়।
চট্টগ্রাম এলাকার বিতর্কিত কয়েকজনও মনোনীতদের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখে পড়েন। চট্টগ্রাম–১২ আসনে এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম–৪ আসনে গত দুবারের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম। পাহাড় কেটে ইস্পাত কারখানা স্থাপনসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এবার সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন। তাঁর বাবাও একসময় এখানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে
২ ঘণ্টা আগে
বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্ব
৭ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে বিমানের টিকিট পাওয়া সম্ভব হয়নি বেশির ভাগের পক্ষে। এরই মধ্যে এ রুটের নির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ঢাকাগামী দুটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তারেক রহমান বিমানের ফ্লাইটেই ২৪ ডিসেম্বর দেশের পথে রওনা হবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ ডিসেম্বর বলেন, তারেক রহমান ঢাকা পৌঁছবেন ২৫ ডিসেম্বর। প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর থেকে বড়দিন ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে তিন দিন ছুটি। জনগণের ভোগান্তি এড়ানোর জন্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সফরের জন্য এ সময় বেছে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রতিবছরই লন্ডন-ঢাকা রুটে টিকিটের চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। বড়দিনের ছুটিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে আসেন। চলতি বছরও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে আগেভাগেই ডিসেম্বরের শেষ দিকের ফ্লাইটগুলোর অধিকাংশ টিকিট বুকিং হয়ে যায়।
বিএনপির একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ২০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে লন্ডনে যাবেন। এরপর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান এবং তাঁদের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। এই সফরে তাঁদের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া দুজন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য থাকার কথা রয়েছে। তবে তাঁরা সাদাপোশাকে থাকবেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে লন্ডন ত্যাগ করবেন। বাংলাদেশ বিমানের এদিনের ফ্লাইটটি হবে ড্রিমলাইনার বিমান দিয়ে। এ ফ্লাইটের আসনসংখ্যা—২৪৭টি ইকোনমি, ৩০টি বিজনেস ক্লাস এবং ২১টি প্রিমিয়াম ইকোনমি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফ্লাইটটির সব আসনের টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে।
সূত্র আরও জানায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা আসার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট কাটতে প্রবাসী নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, অনেকে যে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, তার জন্যই বুকিং দিচ্ছেন। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ কিংবা সৌদিয়ার টিকিট কিনছেন। সবার লক্ষ্য, ২৫ ডিসেম্বর সকালের মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানো।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরা উপলক্ষে তাঁর বাসভবন ও কার্যালয়ের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের পক্ষ থেকে তাঁর নিরাপত্তারব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। তখন থেকে সে দেশেই আছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আসছেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে বিমানের টিকিট পাওয়া সম্ভব হয়নি বেশির ভাগের পক্ষে। এরই মধ্যে এ রুটের নির্দিষ্ট কয়েকটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর ঢাকাগামী দুটি ফ্লাইটের সব শ্রেণির টিকিট ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, তারেক রহমান বিমানের ফ্লাইটেই ২৪ ডিসেম্বর দেশের পথে রওনা হবেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১২ ডিসেম্বর বলেন, তারেক রহমান ঢাকা পৌঁছবেন ২৫ ডিসেম্বর। প্রসঙ্গত, ২৫ ডিসেম্বর থেকে বড়দিন ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে তিন দিন ছুটি। জনগণের ভোগান্তি এড়ানোর জন্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সফরের জন্য এ সময় বেছে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিসেম্বরের শেষ দিকে প্রতিবছরই লন্ডন-ঢাকা রুটে টিকিটের চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। বড়দিনের ছুটিতে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি দেশে আসেন। চলতি বছরও সে ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে আগেভাগেই ডিসেম্বরের শেষ দিকের ফ্লাইটগুলোর অধিকাংশ টিকিট বুকিং হয়ে যায়।
বিএনপির একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ২০ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে লন্ডনে যাবেন। এরপর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান এবং তাঁদের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় ফিরবেন। এই সফরে তাঁদের সঙ্গে ঢাকা থেকে যাওয়া দুজন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য থাকার কথা রয়েছে। তবে তাঁরা সাদাপোশাকে থাকবেন।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে লন্ডন ত্যাগ করবেন। বাংলাদেশ বিমানের এদিনের ফ্লাইটটি হবে ড্রিমলাইনার বিমান দিয়ে। এ ফ্লাইটের আসনসংখ্যা—২৪৭টি ইকোনমি, ৩০টি বিজনেস ক্লাস এবং ২১টি প্রিমিয়াম ইকোনমি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফ্লাইটটির সব আসনের টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে।
সূত্র আরও জানায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা আসার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে টিকিট কাটতে প্রবাসী নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা জানান, অনেকে যে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, তার জন্যই বুকিং দিচ্ছেন। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ কিংবা সৌদিয়ার টিকিট কিনছেন। সবার লক্ষ্য, ২৫ ডিসেম্বর সকালের মধ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানো।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফেরা উপলক্ষে তাঁর বাসভবন ও কার্যালয়ের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের পক্ষ থেকে তাঁর নিরাপত্তারব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। তখন থেকে সে দেশেই আছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আসছেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্ব
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা বিশৃঙ্খলা করে—সন্ত্রাসী, ভোট চোর—আমাদের দেশে যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে, হাদি ভাইকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, নির্বাচন যারা বানচাল করতে চাইছে, দেশের পরিবেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চাইছে, সীমান্তে যারা আমাদের ভাই–বোনদের মেরে ঝুলিয়ে রাখে, তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ভারত।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করে না, যারা ভোটাধিকারকে বিশ্বাস করে না, মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এই দেশের সন্তানদেরকে বিশ্বাস করে না, আপনারা যেহেতু তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে, বাংলাদেশে আমরা তাদেরকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেব।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন বা স্থানীয় ঘটনা নয়। আগামীর বাংলাদেশে যদি কারও বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সহিংসতা চালানো হয়, তবে সেই বিদ্রোহের আগুন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
হাসনাত অভিযোগ করে বলেন, ভারত বাংলাদেশকে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের অপচেষ্টা কখনোই সফল হতে দেওয়া হবে না এবং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় প্রভাব বিস্তারকারী সুবিধাবাদী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে অপসারণ করার দাবি জানান হাসনাত।

বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের দেশে যারা বিশৃঙ্খলা করে—সন্ত্রাসী, ভোট চোর—আমাদের দেশে যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে, হাদি ভাইকে যারা হত্যার চেষ্টা করেছে, নির্বাচন যারা বানচাল করতে চাইছে, দেশের পরিবেশকে যারা অস্থিতিশীল করতে চাইছে, সীমান্তে যারা আমাদের ভাই–বোনদের মেরে ঝুলিয়ে রাখে, তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ভারত।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা আমার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না, যারা আমার দেশের সম্ভাবনাকে বিশ্বাস করে না, যারা ভোটাধিকারকে বিশ্বাস করে না, মানবাধিকারকে বিশ্বাস করে না, যারা এই দেশের সন্তানদেরকে বিশ্বাস করে না, আপনারা যেহেতু তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ভারতের যারা সেপারেটিস্ট আছে, বাংলাদেশে আমরা তাদেরকে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে আলাদা করে দেব।’
এনসিপির এ নেতা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন বা স্থানীয় ঘটনা নয়। আগামীর বাংলাদেশে যদি কারও বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সহিংসতা চালানো হয়, তবে সেই বিদ্রোহের আগুন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
হাসনাত অভিযোগ করে বলেন, ভারত বাংলাদেশকে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের অপচেষ্টা কখনোই সফল হতে দেওয়া হবে না এবং দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় প্রভাব বিস্তারকারী সুবিধাবাদী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে অপসারণ করার দাবি জানান হাসনাত।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে
২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
৫ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্ব
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
‘একটি রাজনৈতিক দলকে’ বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী করা হলেও তা ‘সঠিক ইতিহাস নয়’ নয় বলে তাঁর ভাষ্য। ওই রাজনৈতিক দলটি যাতে বর্তমান সরকারের কাছে ‘ইতিহাস সংশোধনের দাবি’ জানান, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
একই দিন রাজধানীর ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে দাবি করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বামপন্থি ও কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ভারতপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নাম জড়িয়ে আসছেন। তবে ইতিহাসের নানা তথ্য ও সত্য সামনে আসায় প্রমাণ হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। কারণ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের একই সুরে বিএনপি নেতা ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আজকেও পত্রিকা পড়লাম। পত্রিকার পাতার সম্পাদকীয় কলাম ও বিভিন্ন জায়াগায় লিখেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে আল-বদর, আল-শামস। আমাদের ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিএনপিরে দোষারোপ করে (আপনারা) অনেক কথা বলেন। যখন আপনাদের দোষারোপ করে ইতিহাস লেখা হয়, আপনারা কেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন না?’
তিনি আরো বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর তো কোনো আল-বদর, আল-শামস আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন নাই। হত্যা করেছিল (তারা), যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হবে কি হবে না বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল। যারা দেশ স্বাধীন হতে দেবে কি দেবে না...! সেদিন পার্শ্ববর্তী কোনো এক দেশের লোকেরা পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ বেঁধেছিল, সেটাকে টার্গেট করে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’
জামায়াতকে উদ্দেশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক দলগুলো যাদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বাম সংগঠন, বাম-মনা সাংবাদিক এখনো আপনাদেরকে টার্গেট করে কথা বলেন, আর ইতিহাসের পাতায় আপনাদেরকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। কেন আপনারা এটা সংশোধন করেন না, কেন আপনারা দাবি জানান না? শুধু কোনো জায়গায় স্টেজে উঠলেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে (কথা) বলেন, কিন্তু কোনোটা প্রমাণ করতে পারেন না। অতএব রাজনৈতিক ইসলামিক দল, এখানে কাদেরকে বলছি, উনারা ভালো করে বুঝতেছেন।’
টিপু আরো বলেন, ‘ইতিহাসটাকে সঠিক করে তুলে ধরার জন্য আপনারা সরকারের কাছে দাবি জানান। আগামী প্রজন্মের কাছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনারাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন। অতএব ইতিহাস সঠিক যেন লেখা হয়, কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন লেখা হয়।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
ওই সভায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
সভায় জামায়াতের মহানগর কমিটির আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার বিএনপি নেতা টিপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগামী সরকারের কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনার দাবি জানাই।’
এ সময় জামায়াত নেতাকে থামিয়ে দিয়ে টিপু বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর বা এর আগে স্বাধীনতার পর অনেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল...অতএব সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই আমি আহ্বান করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্যে কারও যদি গাত্রদাহ হয়, তাহলে আগামীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় আপনারাও বিএনপির যাতে গাত্রদাহ না হয়, সেইদিকে খেয়াল করে বক্তব্য দেবেন।’
এ সময় আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও বলেন টিপু।
বক্তব্যের শেষ দিকে আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবি জানিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আবারও বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস ডিসি সাহেবের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস, বিজয় দিবসের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস যেন সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়। ৫ অগাস্ট হয়ে গেল, অনেকে অনেক কথা বলি, কিন্তু এখনো স্বাধীনতার ঘোষকের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস, বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস- এখনো কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় নাই।’
আগামী বছরেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, এনসিপির জেলা কমিটির সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং গণঅধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি মো. নাহিদ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় তাৎক্ষণিক বিএনপি নেতা টিপুর বক্তব্য নিয়ে কেউ প্রতিবাদ বা বিরুদ্ধমত প্রকাশ না করলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান।
অথচ গতকাল তাঁর বিকালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।
‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
‘একটি রাজনৈতিক দলকে’ বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী করা হলেও তা ‘সঠিক ইতিহাস নয়’ নয় বলে তাঁর ভাষ্য। ওই রাজনৈতিক দলটি যাতে বর্তমান সরকারের কাছে ‘ইতিহাস সংশোধনের দাবি’ জানান, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন এই বিএনপি নেতা।
গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
একই দিন রাজধানীর ফার্মগেইটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের এক আলোচনা সভায় একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে দাবি করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বামপন্থি ও কলকাতাকেন্দ্রিক কিছু বুদ্ধিজীবী এবং ভারতপন্থিরা দীর্ঘদিন ধরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীর নাম জড়িয়ে আসছেন। তবে ইতিহাসের নানা তথ্য ও সত্য সামনে আসায় প্রমাণ হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ড ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাদের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। কারণ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের একই সুরে বিএনপি নেতা ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘আজকেও পত্রিকা পড়লাম। পত্রিকার পাতার সম্পাদকীয় কলাম ও বিভিন্ন জায়াগায় লিখেছে যে, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে আল-বদর, আল-শামস। আমাদের ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতারা আছেন, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিএনপিরে দোষারোপ করে (আপনারা) অনেক কথা বলেন। যখন আপনাদের দোষারোপ করে ইতিহাস লেখা হয়, আপনারা কেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন না?’
তিনি আরো বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর তো কোনো আল-বদর, আল-শামস আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেন নাই। হত্যা করেছিল (তারা), যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হবে কি হবে না বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল। যারা দেশ স্বাধীন হতে দেবে কি দেবে না...! সেদিন পার্শ্ববর্তী কোনো এক দেশের লোকেরা পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ বেঁধেছিল, সেটাকে টার্গেট করে আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।’
জামায়াতকে উদ্দেশ করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, ইসলামিক দলগুলো যাদেরকে টার্গেট করে বিভিন্ন বাম সংগঠন, বাম-মনা সাংবাদিক এখনো আপনাদেরকে টার্গেট করে কথা বলেন, আর ইতিহাসের পাতায় আপনাদেরকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। কেন আপনারা এটা সংশোধন করেন না, কেন আপনারা দাবি জানান না? শুধু কোনো জায়গায় স্টেজে উঠলেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে (কথা) বলেন, কিন্তু কোনোটা প্রমাণ করতে পারেন না। অতএব রাজনৈতিক ইসলামিক দল, এখানে কাদেরকে বলছি, উনারা ভালো করে বুঝতেছেন।’
টিপু আরো বলেন, ‘ইতিহাসটাকে সঠিক করে তুলে ধরার জন্য আপনারা সরকারের কাছে দাবি জানান। আগামী প্রজন্মের কাছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে আপনারাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন। অতএব ইতিহাস সঠিক যেন লেখা হয়, কারা হত্যা করেছে, সেটা যেন লেখা হয়।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন বিএনপি নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
ওই সভায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
সভায় জামায়াতের মহানগর কমিটির আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার বিএনপি নেতা টিপুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আগামী সরকারের কাছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনার দাবি জানাই।’
এ সময় জামায়াত নেতাকে থামিয়ে দিয়ে টিপু বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর বা এর আগে স্বাধীনতার পর অনেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিল...অতএব সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্যই আমি আহ্বান করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্যে কারও যদি গাত্রদাহ হয়, তাহলে আগামীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় আপনারাও বিএনপির যাতে গাত্রদাহ না হয়, সেইদিকে খেয়াল করে বক্তব্য দেবেন।’
এ সময় আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও বলেন টিপু।
বক্তব্যের শেষ দিকে আবারও বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার দাবি জানিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আবারও বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস ডিসি সাহেবের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে তুলে ধরবেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাস, বিজয় দিবসের ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস যেন সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়। ৫ অগাস্ট হয়ে গেল, অনেকে অনেক কথা বলি, কিন্তু এখনো স্বাধীনতার ঘোষকের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস, বুদ্ধিজীবীর ইতিহাস- এখনো কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় নাই।’
আগামী বছরেই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস সংশোধনেরও দাবি জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, এনসিপির জেলা কমিটির সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং গণঅধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি মো. নাহিদ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় তাৎক্ষণিক বিএনপি নেতা টিপুর বক্তব্য নিয়ে কেউ প্রতিবাদ বা বিরুদ্ধমত প্রকাশ না করলেও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান।
অথচ গতকাল তাঁর বিকালেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবী দিবসটি আমাদের কাছে খুব ভারাক্রান্ত। কারণ স্বাধীনতা পাওয়ার ঠিক দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, একটা নীল নকশার মাধ্যমে, একটা জাতিকে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত ছিল সেটা।
‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, যারা পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সেদিন যোগসাজশ করেছিল, তাদের প্রতিনিধি হয়ে এসে বাড়িতে বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারগুলোতে অথবা তাদের বাড়ি থেকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল কিন্তু বাঙালি সন্তান। আজকে আমরা খুব ভালো করে জানি যে, তারা কারা ছিলেন?’

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে
২ ঘণ্টা আগে
বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
৪ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্ব
৭ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি সংহতি জানিয়ে বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মাহফুজ বলেন, ‘আজকে বিচার চলমান আছে একদিকে, আরেক দিকে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে এই দেশ থেকে বেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেবেন, ভারত থেকে আপনারা বাংলাদেশে সন্ত্রাস করার উসকানি দেবেন এবং সন্ত্রাস চালাবেন; আমার ভাইয়ের ওপর গুলি চালাবেন, আমরা এটা বরদাশত করব না। এখানে, বাংলাদেশে, ভারতের ও ভিনদেশিদের যারা স্বার্থ রক্ষা করবে, তাদের নিরাপদে থাকতে দেওয়া যাবে না। আমরা যদি নিরাপদে না থাকি, এই দেশে আমাদের শত্রুরাও নিরাপদে থাকতে পারবে না— এটা হচ্ছে বেসিক কন্ডিশন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছর জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ হন মাহফুজ আলম। তাঁকে গণ-অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ আখ্যা দিয়েছেন ড. ইউনূস। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী আমাদের যে লড়াই করার কথা ছিল, সেই লড়াইয়ে আমরা পরাস্ত হয়েছি। এ কারণেই আজকে আমাদের মধ্য থেকে একজন জুলাইয়ের বীর শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের হাতে ৫ আগস্টের পরে যখন এই মুজিববাদীদের, এই আওয়ামী লীগ, এই ১৪-দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রতিটি বাড়ি চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, সেদিন আমরা নিজেদের সংবরণ করেছিলাম বলে আজকে তারা এ সাহস করতে পারছে। আমরা ক্ষমা করে যদি ভুল করে থাকি, তাহলে আমরা প্রতিজ্ঞা করব, আমরা আর ক্ষমা করব না।’
মাহফুজ আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে বলেছিলাম যে, মুজিববাদের মূল উৎপাটন করতে হবে। কিন্তু মুজিববাদের শিকড় এমন গভীরে প্রোথিত বাংলাদেশে যে, একে কালচারালি, ইন্টেলেকচুয়ালি, পলিটিক্যালি সকল অর্থেই মোকাবিলা করার যে শক্তি-সামর্থ্য, এই শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা অথবা লড়াইয়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা আমরা খুব কমই দেখেছি। এই ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার একটা উদ্যোগ। এর বাইরে আমরা খুব কমই উদ্যোগ দেখেছি।’

মাহফুজ আলম আরও বলেন, ৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে যেই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যে মুজিববাদের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলা হয়েছে এই স্বাধীন বাংলাদেশে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদকে বজায় রাখার জন্য এখানে কালচারাল অ্যাকটিভিস্টদের থেকে শুরু করে, এখানের বুদ্ধিজীবীদের থেকে শুরু করে, শিক্ষকদের থেকে শুরু করে, আইন অঙ্গনের লোকদের সবাইকে কবজা করে ফেলা হয়েছে।
‘ভিনদেশি অ্যাসেটরা হাদিকে মারার যুক্তি উৎপাদন’ করেছে দাবি করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘তাকে (হাদি) যখন মারা হয়েছে, তখন সবগুলো নীরব হয়ে বসে রয়েছে। কোনো কথা নেই, সবাই নাটক করতেছে আমাদের সঙ্গে।’
সাবেক এ তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, আমরা এই দেশের ভেতরের রাজনৈতিক লড়াইকে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে এই দেশের ভেতরে মোকাবিলা করব। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে, যদি এই দেশের লড়াই দেশের বাইরে যায়, তাহলে এই দেশের মুক্তির লড়াইও এই দেশের বাইরে যাবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য বিদায়ী তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘খুবই খুবই সংকটময় পরিস্থিতি সামনে, আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই। কারণ, অনেক হয়েছে, অনেক ধৈর্য হয়েছে।’ আজ সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চ আয়োজিত সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে তিনি সংহতি জানিয়ে বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মাহফুজ বলেন, ‘আজকে বিচার চলমান আছে একদিকে, আরেক দিকে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে এই দেশ থেকে বেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেবেন, ভারত থেকে আপনারা বাংলাদেশে সন্ত্রাস করার উসকানি দেবেন এবং সন্ত্রাস চালাবেন; আমার ভাইয়ের ওপর গুলি চালাবেন, আমরা এটা বরদাশত করব না। এখানে, বাংলাদেশে, ভারতের ও ভিনদেশিদের যারা স্বার্থ রক্ষা করবে, তাদের নিরাপদে থাকতে দেওয়া যাবে না। আমরা যদি নিরাপদে না থাকি, এই দেশে আমাদের শত্রুরাও নিরাপদে থাকতে পারবে না— এটা হচ্ছে বেসিক কন্ডিশন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছর জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ হন মাহফুজ আলম। তাঁকে গণ-অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ আখ্যা দিয়েছেন ড. ইউনূস। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন।

মাহফুজ আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী আমাদের যে লড়াই করার কথা ছিল, সেই লড়াইয়ে আমরা পরাস্ত হয়েছি। এ কারণেই আজকে আমাদের মধ্য থেকে একজন জুলাইয়ের বীর শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
মাহফুজ বলেন, ‘আমাদের হাতে ৫ আগস্টের পরে যখন এই মুজিববাদীদের, এই আওয়ামী লীগ, এই ১৪-দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রতিটি বাড়ি চুরমার করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল, সেদিন আমরা নিজেদের সংবরণ করেছিলাম বলে আজকে তারা এ সাহস করতে পারছে। আমরা ক্ষমা করে যদি ভুল করে থাকি, তাহলে আমরা প্রতিজ্ঞা করব, আমরা আর ক্ষমা করব না।’
মাহফুজ আরও বলেন, ‘আমরা প্রথম দিকে বলেছিলাম যে, মুজিববাদের মূল উৎপাটন করতে হবে। কিন্তু মুজিববাদের শিকড় এমন গভীরে প্রোথিত বাংলাদেশে যে, একে কালচারালি, ইন্টেলেকচুয়ালি, পলিটিক্যালি সকল অর্থেই মোকাবিলা করার যে শক্তি-সামর্থ্য, এই শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা অথবা লড়াইয়ের দিকে এগোনোর চেষ্টা আমরা খুব কমই দেখেছি। এই ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার একটা উদ্যোগ। এর বাইরে আমরা খুব কমই উদ্যোগ দেখেছি।’

মাহফুজ আলম আরও বলেন, ৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে যেই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যে মুজিববাদের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার মানুষের লাশ ফেলা হয়েছে এই স্বাধীন বাংলাদেশে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদকে বজায় রাখার জন্য এখানে কালচারাল অ্যাকটিভিস্টদের থেকে শুরু করে, এখানের বুদ্ধিজীবীদের থেকে শুরু করে, শিক্ষকদের থেকে শুরু করে, আইন অঙ্গনের লোকদের সবাইকে কবজা করে ফেলা হয়েছে।
‘ভিনদেশি অ্যাসেটরা হাদিকে মারার যুক্তি উৎপাদন’ করেছে দাবি করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘তাকে (হাদি) যখন মারা হয়েছে, তখন সবগুলো নীরব হয়ে বসে রয়েছে। কোনো কথা নেই, সবাই নাটক করতেছে আমাদের সঙ্গে।’
সাবেক এ তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, আমরা এই দেশের ভেতরের রাজনৈতিক লড়াইকে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে এই দেশের ভেতরে মোকাবিলা করব। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে, যদি এই দেশের লড়াই দেশের বাইরে যায়, তাহলে এই দেশের মুক্তির লড়াইও এই দেশের বাইরে যাবে।’

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনজন প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। সব মিলিয়ে এবার নৌকার মনোনয়ন খুইয়েছেন ৭১ জন এমপি। এর মধ্যে অনেকেই একাদশ সংসদের মেয়াদকালে নানা ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বিতর্কিতদের বেশির ভাগই এবার মনোনয়ন পাননি।
২৬ নভেম্বর ২০২৩
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার ঘোষণাকে ঘিরে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নেতার সঙ্গে একই দিনে দেশে ফেরার পরিকল্পনায় অনেকেই নিজ উদ্যোগে লন্ডন থেকে ঢাকা আসার টিকিট কাটার উদ্যোগ নেন। তবে নির্ধারিত সময়ে এ রুটে
২ ঘণ্টা আগে
বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা যারা করছে, ভারত তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যার জন্য ‘আল-বদর, আল-শামস’ দায়ী নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের লোকেরা তাঁদের হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
৫ ঘণ্টা আগে