ড. এম আবদুল আলীম

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, তা আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। শুধু কি তাই? ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। এমনকি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি সব শহীদের কবর। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই কি নির্মোহভাবে লেখা হয়েছে? এ আন্দোলনের দলিলপত্রই কি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হয়েছে? এককথায় উত্তর, এসব হয়নি। এটা যে কতটা লজ্জা ও পরিতাপের, তা পর্যালোচনা করলেই ধারণা পাওয়া যাবে।
ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক নানা শোষণ-বঞ্চনাজাত ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ। এ আন্দোলনের পথ ধরে ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করলেও; আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারিনি। সমাজে বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েছে বৈ কমেনি। ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের সুমহান লক্ষ্য পূরণ তো হয়ইনি, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা-সংকট আরও বেড়েছে। ফলে আকাশ ছোঁয়া ভোগ-বিলাসিতায় পূর্ণ অট্টালিকার পাশে ফুটপাতে দিনাতিপাত করা ছিন্নমূল মানুষের দেখা হরহামেশাই মেলে। সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ ভূখণ্ডে আজও আসেনি।
এটা তো গেল আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক দিক। বাংলা ভাষার মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিংবা সর্বস্তরে এ ভাষার প্রচলনই-বা কতটা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তক, অফিস-আদালত, বিচারালয়, গবেষণা—কোথায় বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার? উচ্চতর পঠন-পাঠনে তো বাংলা ভাষা আজ নির্বাসিত। দাপ্তরিক কাজেও একই অবস্থা। নামমাত্র আদেশ-নির্দেশ জারি হলেও এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আবেগে গদগদ হয়ে বক্তৃতামঞ্চে গালভরা কিছু বুলি আওড়ানো কিংবা দু-একটি মামলার রায় বাংলায় প্রকাশ করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ মাতৃভাষায় পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা দ্বারা উন্নতির শিখরে উঠলেও আমাদের ভাষিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৈন্যের কারণে দিন দিন পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ রাষ্ট্রের কর্ণধারদেরই গ্রহণ করতে হবে। কেবল সাংবিধানিকভাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতিদানের মধ্যে আত্মতুষ্টি না খুঁজে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও এর গৌরবগাথা। নতুন প্রজন্মকে শৈশব থেকেই মাতৃভাষা শিক্ষার ভিতটাও করতে হবে মজবুত।
আমাদের দেশে কাগজ-কলমে কিছু কার্যক্রম প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র খুব করুণ। স্কুল-কলেজ তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। তারা জানে না নারীদের ভাষা আন্দোলনে অবদানের কথা। কেনই-বা রাষ্ট্রভাষা মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল এবং রাজপথে রক্ত ঝরেছিল, সে ইতিহাসও। কারাইবা লেখনীর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে তারা জানে না বললেই চলে। শহীদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস তারা জানে না, এমনকি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নাম পর্যন্ত বলতে গলদঘর্ম হয়! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শহীদেরা আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ তো এ জন্য করেননি। বাস্তবে দায়টা কিন্তু নিজেদের তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের ওপরই বর্তায়। বিশেষ করে, আমরা যাঁরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করি, তাঁদের গাফিলতি ও ইতিহাসবিমুখতাই এর জন্য সর্বাংশে দায়ী। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরাও দায়মুক্ত নন। পরিবারগুলোর দায়বদ্ধতাও একেবারে উপেক্ষণীয় নয়। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের গৌরবময় এসব ঘটনা তুলে ধরতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির কাজ ও গবেষণায় এ ভাষাকে ব্যবহার-উপযোগী করতে হবে। বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে যুগের উপযোগী করতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ রাখতে হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলনের সব শহীদের (যাঁদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে) পরিচয় যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রচারমাধ্যমে তাঁদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে। সাধারণভাবে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর—ভাষা আন্দোলনের এসব শহীদ সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ ধারণা অনেকের থাকলেও, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল এবং কিশোর অহিউল্লাহ সম্পর্কে অধিকাংশের কোনো ধারণা নেই। ধারণা নেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পরিবার সম্পর্কেও। অথচ ওই সময়কার সরকারি নথিপত্র, পত্র-পত্রিকা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসগ্রন্থ ও দলিলপত্রে তাঁদের সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
আমাদের সবচেয়ে দৈন্য ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের কর্মী হিসেবে খুব কাছে থেকে এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করেছেন, তাঁরা সবাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকের নির্মোহ দৃষ্টির প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। ফলে কারও গ্রন্থে কমিউনিস্ট পার্টি ও এর ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠন; কারও লেখায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মী; কারও স্মৃতিচারণে তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের অবদান উজ্জ্বলরূপে ধরা পড়েছে। এসব দৃষ্টান্ত আবুল কাশেম, আবদুল মতিন, বদরুদ্দীন উমর, বশীর আল্হেলাল, আহমদ রফিক, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, এম এ বার্নিক, মোহাম্মদ হাননান প্রায় সবার লেখা বই-পুস্তক নিবিড়ভাবে পাঠ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। সময় সময় নিজ রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানকে বড় করে দেখাতে গিয়ে অন্য সংগঠন ও আদর্শের নেতা-কর্মীদের অবদানকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও এঁদের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। এর ফলে ইতিহাসের সাধারণ পাঠক তো বটেই, অনুসন্ধানী গবেষকদেরও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এসব দূরীকরণে প্রয়োজন ভাষা আন্দোলনের নির্মোহ ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইতিহাস রচনার। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে ইতিহাস-গবেষকদের।
সে ক্ষেত্রে যে কাজটি করতে হবে তা হলো, ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, তা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা প্রধান তিনটি রাজনৈতিক ধারা; যেমন ১. কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ; ২. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ; ৩. তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করে তাদের অবদান চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা আবেগ-ভারাক্রান্ত হই। লেখায়-কথায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার পাতা ও সভা-সেমিনারের পরিবেশ জমজমাট করে তুলি। ফেব্রুয়ারি গেলেই সব ভুলে বসে থাকি। জাতি তথা নতুন প্রজন্মের সামনে এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার কিছু দিক এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। সব নাগরিকের বাস উপযোগী শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে হবে। সার্বিকভাবে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্যে উজ্জীবিত হয়ে রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের যথাযথ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, তা আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। শুধু কি তাই? ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। এমনকি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি সব শহীদের কবর। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই কি নির্মোহভাবে লেখা হয়েছে? এ আন্দোলনের দলিলপত্রই কি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হয়েছে? এককথায় উত্তর, এসব হয়নি। এটা যে কতটা লজ্জা ও পরিতাপের, তা পর্যালোচনা করলেই ধারণা পাওয়া যাবে।
ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক নানা শোষণ-বঞ্চনাজাত ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ। এ আন্দোলনের পথ ধরে ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করলেও; আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারিনি। সমাজে বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েছে বৈ কমেনি। ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের সুমহান লক্ষ্য পূরণ তো হয়ইনি, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা-সংকট আরও বেড়েছে। ফলে আকাশ ছোঁয়া ভোগ-বিলাসিতায় পূর্ণ অট্টালিকার পাশে ফুটপাতে দিনাতিপাত করা ছিন্নমূল মানুষের দেখা হরহামেশাই মেলে। সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ ভূখণ্ডে আজও আসেনি।
এটা তো গেল আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক দিক। বাংলা ভাষার মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিংবা সর্বস্তরে এ ভাষার প্রচলনই-বা কতটা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তক, অফিস-আদালত, বিচারালয়, গবেষণা—কোথায় বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার? উচ্চতর পঠন-পাঠনে তো বাংলা ভাষা আজ নির্বাসিত। দাপ্তরিক কাজেও একই অবস্থা। নামমাত্র আদেশ-নির্দেশ জারি হলেও এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আবেগে গদগদ হয়ে বক্তৃতামঞ্চে গালভরা কিছু বুলি আওড়ানো কিংবা দু-একটি মামলার রায় বাংলায় প্রকাশ করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ মাতৃভাষায় পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা দ্বারা উন্নতির শিখরে উঠলেও আমাদের ভাষিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৈন্যের কারণে দিন দিন পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ রাষ্ট্রের কর্ণধারদেরই গ্রহণ করতে হবে। কেবল সাংবিধানিকভাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতিদানের মধ্যে আত্মতুষ্টি না খুঁজে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও এর গৌরবগাথা। নতুন প্রজন্মকে শৈশব থেকেই মাতৃভাষা শিক্ষার ভিতটাও করতে হবে মজবুত।
আমাদের দেশে কাগজ-কলমে কিছু কার্যক্রম প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র খুব করুণ। স্কুল-কলেজ তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। তারা জানে না নারীদের ভাষা আন্দোলনে অবদানের কথা। কেনই-বা রাষ্ট্রভাষা মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল এবং রাজপথে রক্ত ঝরেছিল, সে ইতিহাসও। কারাইবা লেখনীর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে তারা জানে না বললেই চলে। শহীদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস তারা জানে না, এমনকি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নাম পর্যন্ত বলতে গলদঘর্ম হয়! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শহীদেরা আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ তো এ জন্য করেননি। বাস্তবে দায়টা কিন্তু নিজেদের তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের ওপরই বর্তায়। বিশেষ করে, আমরা যাঁরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করি, তাঁদের গাফিলতি ও ইতিহাসবিমুখতাই এর জন্য সর্বাংশে দায়ী। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরাও দায়মুক্ত নন। পরিবারগুলোর দায়বদ্ধতাও একেবারে উপেক্ষণীয় নয়। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের গৌরবময় এসব ঘটনা তুলে ধরতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির কাজ ও গবেষণায় এ ভাষাকে ব্যবহার-উপযোগী করতে হবে। বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে যুগের উপযোগী করতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ রাখতে হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলনের সব শহীদের (যাঁদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে) পরিচয় যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রচারমাধ্যমে তাঁদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে। সাধারণভাবে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর—ভাষা আন্দোলনের এসব শহীদ সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ ধারণা অনেকের থাকলেও, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল এবং কিশোর অহিউল্লাহ সম্পর্কে অধিকাংশের কোনো ধারণা নেই। ধারণা নেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পরিবার সম্পর্কেও। অথচ ওই সময়কার সরকারি নথিপত্র, পত্র-পত্রিকা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসগ্রন্থ ও দলিলপত্রে তাঁদের সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
আমাদের সবচেয়ে দৈন্য ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের কর্মী হিসেবে খুব কাছে থেকে এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করেছেন, তাঁরা সবাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকের নির্মোহ দৃষ্টির প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। ফলে কারও গ্রন্থে কমিউনিস্ট পার্টি ও এর ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠন; কারও লেখায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মী; কারও স্মৃতিচারণে তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের অবদান উজ্জ্বলরূপে ধরা পড়েছে। এসব দৃষ্টান্ত আবুল কাশেম, আবদুল মতিন, বদরুদ্দীন উমর, বশীর আল্হেলাল, আহমদ রফিক, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, এম এ বার্নিক, মোহাম্মদ হাননান প্রায় সবার লেখা বই-পুস্তক নিবিড়ভাবে পাঠ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। সময় সময় নিজ রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানকে বড় করে দেখাতে গিয়ে অন্য সংগঠন ও আদর্শের নেতা-কর্মীদের অবদানকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও এঁদের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। এর ফলে ইতিহাসের সাধারণ পাঠক তো বটেই, অনুসন্ধানী গবেষকদেরও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এসব দূরীকরণে প্রয়োজন ভাষা আন্দোলনের নির্মোহ ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইতিহাস রচনার। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে ইতিহাস-গবেষকদের।
সে ক্ষেত্রে যে কাজটি করতে হবে তা হলো, ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, তা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা প্রধান তিনটি রাজনৈতিক ধারা; যেমন ১. কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ; ২. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ; ৩. তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করে তাদের অবদান চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা আবেগ-ভারাক্রান্ত হই। লেখায়-কথায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার পাতা ও সভা-সেমিনারের পরিবেশ জমজমাট করে তুলি। ফেব্রুয়ারি গেলেই সব ভুলে বসে থাকি। জাতি তথা নতুন প্রজন্মের সামনে এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার কিছু দিক এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। সব নাগরিকের বাস উপযোগী শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে হবে। সার্বিকভাবে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্যে উজ্জীবিত হয়ে রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের যথাযথ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে।
ড. এম আবদুল আলীম

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, তা আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। শুধু কি তাই? ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। এমনকি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি সব শহীদের কবর। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই কি নির্মোহভাবে লেখা হয়েছে? এ আন্দোলনের দলিলপত্রই কি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হয়েছে? এককথায় উত্তর, এসব হয়নি। এটা যে কতটা লজ্জা ও পরিতাপের, তা পর্যালোচনা করলেই ধারণা পাওয়া যাবে।
ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক নানা শোষণ-বঞ্চনাজাত ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ। এ আন্দোলনের পথ ধরে ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করলেও; আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারিনি। সমাজে বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েছে বৈ কমেনি। ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের সুমহান লক্ষ্য পূরণ তো হয়ইনি, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা-সংকট আরও বেড়েছে। ফলে আকাশ ছোঁয়া ভোগ-বিলাসিতায় পূর্ণ অট্টালিকার পাশে ফুটপাতে দিনাতিপাত করা ছিন্নমূল মানুষের দেখা হরহামেশাই মেলে। সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ ভূখণ্ডে আজও আসেনি।
এটা তো গেল আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক দিক। বাংলা ভাষার মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিংবা সর্বস্তরে এ ভাষার প্রচলনই-বা কতটা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তক, অফিস-আদালত, বিচারালয়, গবেষণা—কোথায় বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার? উচ্চতর পঠন-পাঠনে তো বাংলা ভাষা আজ নির্বাসিত। দাপ্তরিক কাজেও একই অবস্থা। নামমাত্র আদেশ-নির্দেশ জারি হলেও এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আবেগে গদগদ হয়ে বক্তৃতামঞ্চে গালভরা কিছু বুলি আওড়ানো কিংবা দু-একটি মামলার রায় বাংলায় প্রকাশ করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ মাতৃভাষায় পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা দ্বারা উন্নতির শিখরে উঠলেও আমাদের ভাষিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৈন্যের কারণে দিন দিন পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ রাষ্ট্রের কর্ণধারদেরই গ্রহণ করতে হবে। কেবল সাংবিধানিকভাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতিদানের মধ্যে আত্মতুষ্টি না খুঁজে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও এর গৌরবগাথা। নতুন প্রজন্মকে শৈশব থেকেই মাতৃভাষা শিক্ষার ভিতটাও করতে হবে মজবুত।
আমাদের দেশে কাগজ-কলমে কিছু কার্যক্রম প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র খুব করুণ। স্কুল-কলেজ তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। তারা জানে না নারীদের ভাষা আন্দোলনে অবদানের কথা। কেনই-বা রাষ্ট্রভাষা মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল এবং রাজপথে রক্ত ঝরেছিল, সে ইতিহাসও। কারাইবা লেখনীর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে তারা জানে না বললেই চলে। শহীদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস তারা জানে না, এমনকি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নাম পর্যন্ত বলতে গলদঘর্ম হয়! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শহীদেরা আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ তো এ জন্য করেননি। বাস্তবে দায়টা কিন্তু নিজেদের তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের ওপরই বর্তায়। বিশেষ করে, আমরা যাঁরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করি, তাঁদের গাফিলতি ও ইতিহাসবিমুখতাই এর জন্য সর্বাংশে দায়ী। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরাও দায়মুক্ত নন। পরিবারগুলোর দায়বদ্ধতাও একেবারে উপেক্ষণীয় নয়। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের গৌরবময় এসব ঘটনা তুলে ধরতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির কাজ ও গবেষণায় এ ভাষাকে ব্যবহার-উপযোগী করতে হবে। বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে যুগের উপযোগী করতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ রাখতে হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলনের সব শহীদের (যাঁদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে) পরিচয় যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রচারমাধ্যমে তাঁদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে। সাধারণভাবে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর—ভাষা আন্দোলনের এসব শহীদ সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ ধারণা অনেকের থাকলেও, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল এবং কিশোর অহিউল্লাহ সম্পর্কে অধিকাংশের কোনো ধারণা নেই। ধারণা নেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পরিবার সম্পর্কেও। অথচ ওই সময়কার সরকারি নথিপত্র, পত্র-পত্রিকা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসগ্রন্থ ও দলিলপত্রে তাঁদের সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
আমাদের সবচেয়ে দৈন্য ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের কর্মী হিসেবে খুব কাছে থেকে এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করেছেন, তাঁরা সবাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকের নির্মোহ দৃষ্টির প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। ফলে কারও গ্রন্থে কমিউনিস্ট পার্টি ও এর ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠন; কারও লেখায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মী; কারও স্মৃতিচারণে তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের অবদান উজ্জ্বলরূপে ধরা পড়েছে। এসব দৃষ্টান্ত আবুল কাশেম, আবদুল মতিন, বদরুদ্দীন উমর, বশীর আল্হেলাল, আহমদ রফিক, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, এম এ বার্নিক, মোহাম্মদ হাননান প্রায় সবার লেখা বই-পুস্তক নিবিড়ভাবে পাঠ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। সময় সময় নিজ রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানকে বড় করে দেখাতে গিয়ে অন্য সংগঠন ও আদর্শের নেতা-কর্মীদের অবদানকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও এঁদের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। এর ফলে ইতিহাসের সাধারণ পাঠক তো বটেই, অনুসন্ধানী গবেষকদেরও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এসব দূরীকরণে প্রয়োজন ভাষা আন্দোলনের নির্মোহ ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইতিহাস রচনার। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে ইতিহাস-গবেষকদের।
সে ক্ষেত্রে যে কাজটি করতে হবে তা হলো, ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, তা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা প্রধান তিনটি রাজনৈতিক ধারা; যেমন ১. কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ; ২. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ; ৩. তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করে তাদের অবদান চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা আবেগ-ভারাক্রান্ত হই। লেখায়-কথায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার পাতা ও সভা-সেমিনারের পরিবেশ জমজমাট করে তুলি। ফেব্রুয়ারি গেলেই সব ভুলে বসে থাকি। জাতি তথা নতুন প্রজন্মের সামনে এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার কিছু দিক এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। সব নাগরিকের বাস উপযোগী শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে হবে। সার্বিকভাবে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্যে উজ্জীবিত হয়ে রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের যথাযথ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার যে মর্যাদা, তা আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। শুধু কি তাই? ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। এমনকি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি সব শহীদের কবর। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসই কি নির্মোহভাবে লেখা হয়েছে? এ আন্দোলনের দলিলপত্রই কি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হয়েছে? এককথায় উত্তর, এসব হয়নি। এটা যে কতটা লজ্জা ও পরিতাপের, তা পর্যালোচনা করলেই ধারণা পাওয়া যাবে।
ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক নানা শোষণ-বঞ্চনাজাত ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ। এ আন্দোলনের পথ ধরে ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করলেও; আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারিনি। সমাজে বৈষম্য ক্রমাগত বেড়েছে বৈ কমেনি। ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের সুমহান লক্ষ্য পূরণ তো হয়ইনি, বরং সাধারণ মানুষের জীবনে সমস্যা-সংকট আরও বেড়েছে। ফলে আকাশ ছোঁয়া ভোগ-বিলাসিতায় পূর্ণ অট্টালিকার পাশে ফুটপাতে দিনাতিপাত করা ছিন্নমূল মানুষের দেখা হরহামেশাই মেলে। সামাজিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এ ভূখণ্ডে আজও আসেনি।
এটা তো গেল আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক দিক। বাংলা ভাষার মর্যাদা কতটুকু প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিংবা সর্বস্তরে এ ভাষার প্রচলনই-বা কতটা সম্ভব হয়েছে? পাঠ্যপুস্তক, অফিস-আদালত, বিচারালয়, গবেষণা—কোথায় বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার? উচ্চতর পঠন-পাঠনে তো বাংলা ভাষা আজ নির্বাসিত। দাপ্তরিক কাজেও একই অবস্থা। নামমাত্র আদেশ-নির্দেশ জারি হলেও এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আবেগে গদগদ হয়ে বক্তৃতামঞ্চে গালভরা কিছু বুলি আওড়ানো কিংবা দু-একটি মামলার রায় বাংলায় প্রকাশ করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশ মাতৃভাষায় পঠন-পাঠন ও জ্ঞানচর্চা দ্বারা উন্নতির শিখরে উঠলেও আমাদের ভাষিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৈন্যের কারণে দিন দিন পেছনে পড়ে যাচ্ছি। এ থেকে উত্তরণে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ রাষ্ট্রের কর্ণধারদেরই গ্রহণ করতে হবে। কেবল সাংবিধানিকভাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতিদানের মধ্যে আত্মতুষ্টি না খুঁজে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও এর গৌরবগাথা। নতুন প্রজন্মকে শৈশব থেকেই মাতৃভাষা শিক্ষার ভিতটাও করতে হবে মজবুত।
আমাদের দেশে কাগজ-কলমে কিছু কার্যক্রম প্রচলিত থাকলেও বাস্তব চিত্র খুব করুণ। স্কুল-কলেজ তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না। তারা জানে না নারীদের ভাষা আন্দোলনে অবদানের কথা। কেনই-বা রাষ্ট্রভাষা মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল এবং রাজপথে রক্ত ঝরেছিল, সে ইতিহাসও। কারাইবা লেখনীর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে তারা জানে না বললেই চলে। শহীদ মিনার নির্মাণের ইতিহাস তারা জানে না, এমনকি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নাম পর্যন্ত বলতে গলদঘর্ম হয়! এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। শহীদেরা আত্মত্যাগ ও জীবন উৎসর্গ তো এ জন্য করেননি। বাস্তবে দায়টা কিন্তু নিজেদের তথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের ওপরই বর্তায়। বিশেষ করে, আমরা যাঁরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করি, তাঁদের গাফিলতি ও ইতিহাসবিমুখতাই এর জন্য সর্বাংশে দায়ী। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরাও দায়মুক্ত নন। পরিবারগুলোর দায়বদ্ধতাও একেবারে উপেক্ষণীয় নয়। আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের গৌরবময় এসব ঘটনা তুলে ধরতে হবে। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনে এবং তথ্যপ্রযুক্তির কাজ ও গবেষণায় এ ভাষাকে ব্যবহার-উপযোগী করতে হবে। বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও সহায়ক গ্রন্থ প্রণয়ন করতে হবে। বাংলা ভাষাকে যুগের উপযোগী করতে হবে। কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণ রাখতে হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলনের সব শহীদের (যাঁদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে) পরিচয় যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রচারমাধ্যমে তাঁদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে হবে। সাধারণভাবে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর—ভাষা আন্দোলনের এসব শহীদ সম্পর্কে যৎকিঞ্চিৎ ধারণা অনেকের থাকলেও, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল এবং কিশোর অহিউল্লাহ সম্পর্কে অধিকাংশের কোনো ধারণা নেই। ধারণা নেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের পরিবার সম্পর্কেও। অথচ ওই সময়কার সরকারি নথিপত্র, পত্র-পত্রিকা এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসগ্রন্থ ও দলিলপত্রে তাঁদের সম্পর্কে স্পষ্ট বিবরণ রয়েছে।
আমাদের সবচেয়ে দৈন্য ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে। যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের কর্মী হিসেবে খুব কাছে থেকে এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ অবলোকন করেছেন, তাঁরা সবাই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকের নির্মোহ দৃষ্টির প্রকাশ ঘটাতে পারেননি। ফলে কারও গ্রন্থে কমিউনিস্ট পার্টি ও এর ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠন; কারও লেখায় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মী; কারও স্মৃতিচারণে তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সংগঠনের অবদান উজ্জ্বলরূপে ধরা পড়েছে। এসব দৃষ্টান্ত আবুল কাশেম, আবদুল মতিন, বদরুদ্দীন উমর, বশীর আল্হেলাল, আহমদ রফিক, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুল, মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান, আনিসুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, এম এ বার্নিক, মোহাম্মদ হাননান প্রায় সবার লেখা বই-পুস্তক নিবিড়ভাবে পাঠ করলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। সময় সময় নিজ রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবদানকে বড় করে দেখাতে গিয়ে অন্য সংগঠন ও আদর্শের নেতা-কর্মীদের অবদানকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও এঁদের মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। এর ফলে ইতিহাসের সাধারণ পাঠক তো বটেই, অনুসন্ধানী গবেষকদেরও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। এসব দূরীকরণে প্রয়োজন ভাষা আন্দোলনের নির্মোহ ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে ইতিহাস রচনার। এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে ইতিহাস-গবেষকদের।
সে ক্ষেত্রে যে কাজটি করতে হবে তা হলো, ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, তা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা প্রধান তিনটি রাজনৈতিক ধারা; যেমন ১. কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ; ২. পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ; ৩. তমদ্দুন মজলিস, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান করে তাদের অবদান চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা আবেগ-ভারাক্রান্ত হই। লেখায়-কথায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার পাতা ও সভা-সেমিনারের পরিবেশ জমজমাট করে তুলি। ফেব্রুয়ারি গেলেই সব ভুলে বসে থাকি। জাতি তথা নতুন প্রজন্মের সামনে এমন আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, যার কিছু দিক এ লেখায় তুলে ধরা হয়েছে। সব নাগরিকের বাস উপযোগী শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে হবে। সার্বিকভাবে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্যে উজ্জীবিত হয়ে রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের যথাযথ ও কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আমাদের দায়মুক্তি ঘটবে।

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১৭ ঘণ্টা আগে
গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য উঠেপড়ে লাগবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন একটি সুস্থির সমাজব্যবস্থার দিকে দেশকে পরিচালিত করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। এই দুই উপদেষ্টার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও সক্রিয় দেখা গেছে নানাভাবে। বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে তাঁরা যাচ্ছেন, কথা বলছেন। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। যে চাপের কথা তারেক রহমান নিজেই বলেছেন, সেই চাপ দেশের অভ্যন্তরের নাকি বিদেশি কোনো শক্তির তরফ থেকে—সে কথাও আলোচিত হয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোট সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল সরকার চালানোর অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ডাকসু নেতাদের কিছু কথা, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে মানুষের মনে। তফসিল ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এক নেতাকে একজন ডাকসু নেতার নেতৃত্বে হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়কদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অজস্র মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা হচ্ছে, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত করা, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলাসহ বহু অভিযোগ ছিল। যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্যাতিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে, তারাই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যে রূপে আবির্ভূত হয়েছে, তা মোটেই জনগণের প্রত্যাশিত রূপ নয়। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন দলের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পদ-বাণিজ্য, খুনোখুনির খবর ভেসে আসছে। যে ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখার কথা ভেবেছে তরুণ প্রজন্ম, সেই তরুণেরাও আজ দ্বিধান্বিত। এ রকম এক অস্থির সময়ে আসছে নির্বাচন। আশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যবসায়ীদের অবাধে কাজের সুযোগ, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধ, সাধারণ মানুষের জীবন ও কাজের নিরাপত্তাসহ কল্যাণকর কাজগুলো করবে নির্বাচিত সরকার। তবেই অস্থিরতা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে। প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য উঠেপড়ে লাগবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন একটি সুস্থির সমাজব্যবস্থার দিকে দেশকে পরিচালিত করবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সদ্য পদত্যাগকারী দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। এই দুই উপদেষ্টার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও সক্রিয় দেখা গেছে নানাভাবে। বিভিন্ন দলের নেতাদের কাছে তাঁরা যাচ্ছেন, কথা বলছেন। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছু সংকট তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন দেশে ফিরতে পারছেন না, তা নিয়ে জেগেছে প্রশ্ন। যে চাপের কথা তারেক রহমান নিজেই বলেছেন, সেই চাপ দেশের অভ্যন্তরের নাকি বিদেশি কোনো শক্তির তরফ থেকে—সে কথাও আলোচিত হয়েছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোট সরকারের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট, দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের মাধ্যমে প্যারালাল সরকার চালানোর অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এদিকে ডাকসু নেতাদের কিছু কথা, কিছু কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে মানুষের মনে। তফসিল ঘোষণার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের এক নেতাকে একজন ডাকসু নেতার নেতৃত্বে হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল নায়কদের নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলার প্রবণতা বেড়েছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করছেন। অজস্র মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা হচ্ছে, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনব্যবস্থা কলুষিত করা, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলাসহ বহু অভিযোগ ছিল। যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্যাতিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে, তারাই ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যে রূপে আবির্ভূত হয়েছে, তা মোটেই জনগণের প্রত্যাশিত রূপ নয়। সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত বিভিন্ন দলের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, পদ-বাণিজ্য, খুনোখুনির খবর ভেসে আসছে। যে ছাত্র নেতৃত্বের ওপর ভরসা রাখার কথা ভেবেছে তরুণ প্রজন্ম, সেই তরুণেরাও আজ দ্বিধান্বিত। এ রকম এক অস্থির সময়ে আসছে নির্বাচন। আশা থাকবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যবসায়ীদের অবাধে কাজের সুযোগ, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি বন্ধ, সাধারণ মানুষের জীবন ও কাজের নিরাপত্তাসহ কল্যাণকর কাজগুলো করবে নির্বাচিত সরকার। তবেই অস্থিরতা থেকে বের হওয়ার একটা উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১৭ ঘণ্টা আগে
গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
২ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে, কিন্তু ব্যারিস্টার বা উকিল হলেই দেশের ইতিহাস ভালো জানবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা কটাক্ষের ব্যাপারে তেমন কোনো কড়া কথা আমি অন্তত বলতে শুনিনি।
যতদূর স্মরণ করতে পারি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসকে ছোট করার জন্য সংঘটিত হয়নি। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে শামিল হয়েছিল দেশের আপামর মানুষ। এদের সবাই একই ভাবনা নিয়ে সামনের পথে এগোয়নি। সরকার পতন হলে কী হতে পারে কৌশল—এ রকম ভাবনাও কারও মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। দেশের ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল প্রাণের তাগিদে। যখন লাশ পড়ছিল একের পর এক, তখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এই প্রচণ্ড আলোড়নে সরকার পড়ে যাবে—এ রকম ভাবনা হয়তো তাদের ছিল না। ছিল না সে রকম কোনো প্রস্তুতি। তাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় কিছু প্রগাঢ় নীতিকথার জন্ম দিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিশা দেয়নি। শুধু কি নীতিকথা? অশ্রাব্য উচ্চারণ করে লাইক-কমেন্টে ছেয়ে যাওয়া একদল নেতার সন্ধান আজকাল পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা টিনের চালে কাউয়ার পাশাপাশি আরও কত কিছু দেখছেন! বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে করতে চাঁদাবাজি করার পথে শামিল হচ্ছেন। আর এই ধরনের অরাজকতা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রচার করছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভাবছেন, স্বাধীনতার সব অর্জনকে কটাক্ষ করতে পারলে এ দেশের মানুষ একদিন ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর সহযাত্রী হয়ে উঠবে আবারও।
কী হতে কী হয়ে গেল, এখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বা বিজয় শব্দগুলো কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল নাকি? গত বছর শিল্পকলা একাডেমি যখন বিজয় উৎসব পালন করছিল, তখন ভয়ে ভয়ে তারা ‘বিজয় উৎসব’কে ‘ডিসেম্বর উৎসব’ লিখেছিল, সে কথা কি মনে আছে কারও? পরে প্রবল আপত্তির মুখে আবার তারা ‘বিজয় উৎসব’-এ ফিরে এসেছিল। স্বাধীনতা আর বিজয় শব্দ দুটি উচ্চারণ করার মতো বুকের পাটা নেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের—এটা যে কত বড় দুর্ভাবনার ব্যাপার, তা কি বলে বোঝানো যাবে?
১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, তার ছাপ পাওয়া যায় সারা বিশ্বে। সে সময়কার বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, কোন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। মনে করিয়ে দিই, রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্বের কারণে কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভাঙন, পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনদের বিজয়যাত্রা, সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ, উপনিবেশগুলো ভেঙে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ গঠন এবং তার কোনো কোনো দেশের বাম দিকে ঘেঁষা রাজনীতি, কিছু কিছু দেশে নব্য স্বৈরাচারের আবির্ভাব ইত্যাদি নানা প্যাঁচে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছিল বৈশ্বিক রাজনীতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন আলোচনায় রয়েছে। এ রকমই একটা অবস্থায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন ৬ দফা। সেই ৬ দফা নতুন কিছু ছিল না। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে কিংবা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারেও এই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টির দেখা মেলে। ১৯৬৬ সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চালানো শোষণ-বঞ্চনার বিষয়টি আমূল প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা বাঙালির আবেগকে তাড়িত করেছিল। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের মানুষ জানান দিয়েছিল, মাথায় হাত বোলানোর রাজনীতি আর চলবে না এখানে।
এত বড় বড় দল থাকতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কী করে আওয়ামী লীগ এত বড় বিজয় পেল, সে ইতিহাস নানাভাবে লেখা হয়েছে। এটাই ছিল বাংলার রায়। দেশের জনগণ সেই রায়ে ক্ষমতা দিয়েছিল ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সলিমুল্লাহ খানদের গুরু আহমদ ছফার বিখ্যাত উক্তিটি এখানে প্রযোজ্য। ছফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্য অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমরা রাজি হব না।’ ভুল শোনেননি, ছফা এ কথাই বলেছেন। এবং এখানেই তা শেষ করেননি। তিনি যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম এমন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে, যত পণ্ডিত হোন না কেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিপুণতা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করতে পারবেন না।’
ছফাকে এসব কথা বলতে হলো কেন? তিনি তো তাঁর শিষ্যদের মতোই শেখ মুজিবকে অগ্রাহ্য করে অথবা জাতির ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করতে পারতেন। কেন ছফা সেটা করেননি? আমার মনে হয়, ছফা ভেবে দেখেছেন, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিলে ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা ধরা পড়বেই। তখন আত্মপরিচয়েই টান পড়বে। শেখ মুজিব সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ছফা স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নির্মোহ মতামত দিয়েছেন।
ইতিহাসবিমুখ পাকিস্তানপ্রেমী অর্বাচীনেরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। এতে আমাদের তরুণসমাজ কতটা বিভ্রান্ত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত পাওয়া যাবে না।
বিষয়টি বুঝতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। আমাদের সমাজে এই প্রতীকগুলো কীভাবে আছে, তা বুঝতে পারলেই স্বাধীনতা বা বিজয় আমাদের দেশে এখন কোন মর্যাদায় আছে, তা বোঝা যাবে। স্বাধীনতা বা দেশপ্রেমকে হুমকির মুখে ফেলতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যাতে শুরুতেই ভয় আর আতঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তারপর প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পতাকা, জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে কথা বলা—এভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে।
পাঠক, আপনি মনে করুন একটি পরীক্ষা দিতে বসেছেন। আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যাব, পাঠক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিজেই এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোয় নম্বর দেবেন। তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ।
প্রশ্নগুলো এমন: কেমন আছে দেশের বিচারব্যবস্থা? কেমন আছে নির্বাচন কমিশন? তারা কি স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে? সাংবাদিক-লেখক-গবেষকেরা কি নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে কাজ করার মতো পরিবেশ পাচ্ছেন?
সমাজে কোনো বড় সংঘাত নেই তো? ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। দেশের ডাকসাইটে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সেই ঐক্য কি দেখা যাচ্ছে? বিভাজনের রাজনীতিকে কি সরিয়ে দেওয়া গেছে? সন্দেহ-অবিশ্বাসের রাজনীতি কি আছে, নাকি বিদায় নিয়েছে?
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণ কি সন্তুষ্ট? মব বলুন আর চাপ প্রয়োগের রাজনীতি বলুন, সেগুলো কি জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে?
আপনি কি এমন কিছু লক্ষ করছেন, যেখানে সত্য ও মিথ্যাকে কাছাকাছি রেখে নাগরিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়?
আপনি কি সামাজিক বন্ধন ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করেছেন? আউল-বাউলের দেশে গানবাজনা কি হুমকির মুখে পড়েছে? ‘তৌহিদি জনতা’ আদতে কাদের কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে? সরকার কি এদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তেজনা ছড়ায় যারা, তাদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে, আর যারা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এ রকম কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?
সমষ্টিগত শক্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনো বাঁশিওয়ালা কি বাঁশি বাজাচ্ছে? আপনি কি লক্ষ করেছেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নয়, নানাভাবে যাঁরা সংখ্যালঘু, তাঁদের মারধর করে সংখ্যাগুরু অংশ আখের গুছিয়ে নিচ্ছে?
আপনি কি বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছেন, যাতে তাদের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণ একটি ‘সোনার বাংলা’য় বসবাস করবে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে লিখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করুন। যোগফল মেলান, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
আপনি তখন বুঝতে পারবেন, গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধিতার জায়গায় সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে তরুণেরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে, সে তরুণদের প্রতীক্ষায় আছি।

হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে, কিন্তু ব্যারিস্টার বা উকিল হলেই দেশের ইতিহাস ভালো জানবে—এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের দেশের কিছু আইন ব্যবসায়ী আমাদের বিজয় নিয়ে, বিজয়ের নায়কদের নিয়ে যেসব কথা বলে চলেছেন, তার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। তাঁদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও পরিষ্কার করা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল কারও কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করা কটাক্ষের ব্যাপারে তেমন কোনো কড়া কথা আমি অন্তত বলতে শুনিনি।
যতদূর স্মরণ করতে পারি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানটি স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসকে ছোট করার জন্য সংঘটিত হয়নি। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের অঙ্গীকারে শামিল হয়েছিল দেশের আপামর মানুষ। এদের সবাই একই ভাবনা নিয়ে সামনের পথে এগোয়নি। সরকার পতন হলে কী হতে পারে কৌশল—এ রকম ভাবনাও কারও মাথায় ছিল বলে মনে হয় না। দেশের ছাত্র-জনতা এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল প্রাণের তাগিদে। যখন লাশ পড়ছিল একের পর এক, তখন রাজপথকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু এই প্রচণ্ড আলোড়নে সরকার পড়ে যাবে—এ রকম ভাবনা হয়তো তাদের ছিল না। ছিল না সে রকম কোনো প্রস্তুতি। তাই গণ-অভ্যুত্থানের বিজয় কিছু প্রগাঢ় নীতিকথার জন্ম দিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কোনো দিশা দেয়নি। শুধু কি নীতিকথা? অশ্রাব্য উচ্চারণ করে লাইক-কমেন্টে ছেয়ে যাওয়া একদল নেতার সন্ধান আজকাল পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা টিনের চালে কাউয়ার পাশাপাশি আরও কত কিছু দেখছেন! বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করতে করতে চাঁদাবাজি করার পথে শামিল হচ্ছেন। আর এই ধরনের অরাজকতা চালানোর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে প্রচার করছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা ভাবছেন, স্বাধীনতার সব অর্জনকে কটাক্ষ করতে পারলে এ দেশের মানুষ একদিন ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’-এর সহযাত্রী হয়ে উঠবে আবারও।
কী হতে কী হয়ে গেল, এখন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস নিয়ে কথা বলতে ভয় পায় মানুষ। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বা বিজয় শব্দগুলো কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল নাকি? গত বছর শিল্পকলা একাডেমি যখন বিজয় উৎসব পালন করছিল, তখন ভয়ে ভয়ে তারা ‘বিজয় উৎসব’কে ‘ডিসেম্বর উৎসব’ লিখেছিল, সে কথা কি মনে আছে কারও? পরে প্রবল আপত্তির মুখে আবার তারা ‘বিজয় উৎসব’-এ ফিরে এসেছিল। স্বাধীনতা আর বিজয় শব্দ দুটি উচ্চারণ করার মতো বুকের পাটা নেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের—এটা যে কত বড় দুর্ভাবনার ব্যাপার, তা কি বলে বোঝানো যাবে?
১৯৭১ সালে যে ঘটনা ঘটেছিল এই ভূখণ্ডে, তার ছাপ পাওয়া যায় সারা বিশ্বে। সে সময়কার বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায়, কোন কোন ব্যাপার নিয়ে অস্থিরতা চলছিল। মনে করিয়ে দিই, রাশিয়া-চীনের দ্বন্দ্বের কারণে কমিউনিস্ট দুনিয়ার ভাঙন, পরাশক্তি হিসেবে মার্কিনদের বিজয়যাত্রা, সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ, উপনিবেশগুলো ভেঙে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ গঠন এবং তার কোনো কোনো দেশের বাম দিকে ঘেঁষা রাজনীতি, কিছু কিছু দেশে নব্য স্বৈরাচারের আবির্ভাব ইত্যাদি নানা প্যাঁচে পড়ে অস্থির হয়ে পড়েছিল বৈশ্বিক রাজনীতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন আলোচনায় রয়েছে। এ রকমই একটা অবস্থায় ষাটের দশকের মধ্যভাগে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন ৬ দফা। সেই ৬ দফা নতুন কিছু ছিল না। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে কিংবা ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারেও এই আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টির দেখা মেলে। ১৯৬৬ সালের দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের চালানো শোষণ-বঞ্চনার বিষয়টি আমূল প্রকাশিত হয়ে পড়লে তা বাঙালির আবেগকে তাড়িত করেছিল। ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ভূখণ্ডের মানুষ জানান দিয়েছিল, মাথায় হাত বোলানোর রাজনীতি আর চলবে না এখানে।
এত বড় বড় দল থাকতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে কী করে আওয়ামী লীগ এত বড় বিজয় পেল, সে ইতিহাস নানাভাবে লেখা হয়েছে। এটাই ছিল বাংলার রায়। দেশের জনগণ সেই রায়ে ক্ষমতা দিয়েছিল ক্যারিশম্যাটিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। সলিমুল্লাহ খানদের গুরু আহমদ ছফার বিখ্যাত উক্তিটি এখানে প্রযোজ্য। ছফা লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্য অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোনো রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমরা রাজি হব না।’ ভুল শোনেননি, ছফা এ কথাই বলেছেন। এবং এখানেই তা শেষ করেননি। তিনি যোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে শেখ মুজিবের নাম এমন অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছে, যত পণ্ডিত হোন না কেন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের নিপুণতা এবং যুক্তির মারপ্যাঁচ দেখিয়ে কোনো ব্যক্তি একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করতে পারবেন না।’
ছফাকে এসব কথা বলতে হলো কেন? তিনি তো তাঁর শিষ্যদের মতোই শেখ মুজিবকে অগ্রাহ্য করে অথবা জাতির ভিলেন বানিয়ে উপস্থাপন করতে পারতেন। কেন ছফা সেটা করেননি? আমার মনে হয়, ছফা ভেবে দেখেছেন, ইতিহাস নিয়ে মিথ্যে তথ্য দিলে ইতিহাসের কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে তা ধরা পড়বেই। তখন আত্মপরিচয়েই টান পড়বে। শেখ মুজিব সম্পর্কে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করলেও ছফা স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নির্মোহ মতামত দিয়েছেন।
ইতিহাসবিমুখ পাকিস্তানপ্রেমী অর্বাচীনেরা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছেন। এতে আমাদের তরুণসমাজ কতটা বিভ্রান্ত হবে, সে প্রশ্নের উত্তর এত দ্রুত পাওয়া যাবে না।
বিষয়টি বুঝতে চাইলে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। আমাদের সমাজে এই প্রতীকগুলো কীভাবে আছে, তা বুঝতে পারলেই স্বাধীনতা বা বিজয় আমাদের দেশে এখন কোন মর্যাদায় আছে, তা বোঝা যাবে। স্বাধীনতা বা দেশপ্রেমকে হুমকির মুখে ফেলতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হয়, যাতে শুরুতেই ভয় আর আতঙ্ককে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তারপর প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পতাকা, জাতীয় সংগীত নিয়ে বাজে কথা বলা—এভাবেই আস্তে আস্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাদের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে।
পাঠক, আপনি মনে করুন একটি পরীক্ষা দিতে বসেছেন। আমি কিছু প্রশ্ন রেখে যাব, পাঠক এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিজেই এই পরীক্ষার প্রশ্নগুলোয় নম্বর দেবেন। তাঁরাই নির্ধারণ করবেন, কেমন আছে আজকের বাংলাদেশ।
প্রশ্নগুলো এমন: কেমন আছে দেশের বিচারব্যবস্থা? কেমন আছে নির্বাচন কমিশন? তারা কি স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন অবস্থায় আছে? সাংবাদিক-লেখক-গবেষকেরা কি নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে কাজ করার মতো পরিবেশ পাচ্ছেন?
সমাজে কোনো বড় সংঘাত নেই তো? ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে সব জায়গা থেকে। দেশের ডাকসাইটে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সেই ঐক্য কি দেখা যাচ্ছে? বিভাজনের রাজনীতিকে কি সরিয়ে দেওয়া গেছে? সন্দেহ-অবিশ্বাসের রাজনীতি কি আছে, নাকি বিদায় নিয়েছে?
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ জনগণ কি সন্তুষ্ট? মব বলুন আর চাপ প্রয়োগের রাজনীতি বলুন, সেগুলো কি জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে?
আপনি কি এমন কিছু লক্ষ করছেন, যেখানে সত্য ও মিথ্যাকে কাছাকাছি রেখে নাগরিকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া হয়?
আপনি কি সামাজিক বন্ধন ভেঙে ফেলার প্রবণতা লক্ষ করেছেন? আউল-বাউলের দেশে গানবাজনা কি হুমকির মুখে পড়েছে? ‘তৌহিদি জনতা’ আদতে কাদের কোন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে? সরকার কি এদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তেজনা ছড়ায় যারা, তাদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে, আর যারা অত্যাচারিত হয়েছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে—এ রকম কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?
সমষ্টিগত শক্তি ভেঙে দেওয়ার জন্য কোনো বাঁশিওয়ালা কি বাঁশি বাজাচ্ছে? আপনি কি লক্ষ করেছেন শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুই নয়, নানাভাবে যাঁরা সংখ্যালঘু, তাঁদের মারধর করে সংখ্যাগুরু অংশ আখের গুছিয়ে নিচ্ছে?
আপনি কি বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোনো অঙ্গীকার দেখতে পাচ্ছেন, যাতে তাদের ইশতেহার অনুযায়ী জনগণ একটি ‘সোনার বাংলা’য় বসবাস করবে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজে লিখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ করুন। যোগফল মেলান, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসুন।
আপনি তখন বুঝতে পারবেন, গণ-অভ্যুত্থানকে কেউ কেউ স্বাধীনতাবিরোধিতার জায়গায় সুকৌশলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে তরুণেরা সেই অপচেষ্টা রুখে দিতে পারে, সে তরুণদের প্রতীক্ষায় আছি।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
১৭ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
২ দিন আগেড. মঞ্জুরে খোদা

গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। মোদি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। এই আস্থা ও হৃদ্যতা ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীর মাত্রাকেই নির্দেশ করে। পুতিন তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ২৫ বছরে ১০ বার ভারত সফর করেছেন। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভারত সফর।
পুতিনের এই ভারত সফর নিছক কোনো রুটিন বিষয় ছিল না। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে। তাঁদের সাক্ষাৎ ছিল বিশ্বরাজনীতির আগ্রহের বিষয়, কেননা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর শুল্ক নিয়ে মোদির সঙ্গে যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ও বরফ গলছিল, তখনই পুতিন ভারত সফর করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত-রাশিয়া এই বৈঠকে কে কী অর্জন করল, তার কয়েকটি দিক আলোচনা করা যাক।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
পুতিনের এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করল। রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান সমরাস্ত্রের সরবরাহকারী। যদিও ১৯৭০-৮০-এর দশকে ভারতের অস্ত্রের প্রায় ৮০ ভাগই রাশিয়া সরবরাহ করত। পুতিন এবারের সফরে ভারতকে এস ৫০০ আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম হস্তান্তর, অতিরিক্ত সামরিক প্ল্যাটফর্ম, হেলিকপ্টার ও ইঞ্জিন কো-প্রোডাকশনসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো নিয়ে আবারও তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে। ‘প্রিভিলেজ কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিকস পার্টনারশিপ’ চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভারতের যেকোনো স্থল, বিমান ও নৌবন্দরকে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। সামরিক প্রয়োজনে একে অন্যের ভূমিও ব্যবহার করতে পারবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভারত তাদের কৌশলগত নিজস্বতা নিশ্চিত করল।
জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সুবিধা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়া থেকে অনেক কম মূল্যে বিপুল তেল আমদানি করছে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের জ্বালানিনিরাপত্তা, পরিশোধন সক্ষমতা, দীর্ঘমেয়াদি তেল-গ্যাস চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করল। রাশিয়ার সস্তা অপরিশোধিত তেল ভারতের মুদ্রাস্ফীতি কমাতে, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও সঞ্চয় করতে এবং পরিশোধন মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে জ্বালানির বাজার অস্থিতিশীল হলে রাশিয়ার জ্বালানি শক্তি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখবে।
বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এই বাণিজ্য ভারসাম্যমূলক নয়। রাশিয়ায় ভারতীয় আমদানি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে পুতিন-মোদি শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যপণ্যের তালিকা সম্প্রসারণ ঘটবে।
রাশিয়া ভারতীয় সরঞ্জাম, কাঁচামাল এবং খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করার উপায়গুলো অনুসন্ধান করবে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ওপর ভারত-রাশিয়া আন্তসরকারি কমিশনও গঠিত হবে। মহাকাশ গবেষণা ও ভারত-রাশিয়ার যৌথ সামরিক যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং ভারত তা তৃতীয় কোনো দেশে নিজের উৎপাদিত পণ্য বলে বিক্রিও করার সুবিধা পাবে। ভারতে রুশ নকশায় দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
ভূরাজনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য চীন-রাশিয়া ব্লকের মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি করবে। ভবিষ্যতে চীন সীমান্ত সমস্যায় রাশিয়ার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়া, আর্কটিক, নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর—এইসব কৌশলগত এলাকায় সহযোগিতা বাড়ানো ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষায় সহজ হবে।
বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় রাশিয়া চীনের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং একে অন্যের বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ক তারা নিজেরাই ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ভারতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার মাধ্যমে চীনকেও জানিয়ে দেওয়া যে, রাশিয়া এখনো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।
রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের আগে ভারতের সাংবাদিকেরা পুতিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভকে প্রশ্ন করেছিলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যদি কোনো সংঘাত ও যুদ্ধ হয়, সে ক্ষেত্রে ভারত কি আশা করতে পারে যে রাশিয়া তাদের পাশে দাঁড়াবে? তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারতের সঙ্গে চীনের যে বিরোধগুলো আছে, সেগুলো তারা মিটিয়ে ফেলবে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া একটি প্রস্তাবও দিয়েছিল হিমালয়ের ওপর দিয়ে সীমান্ত রেখা নিয়ে যে সমস্যা, সেটাকে তারা জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাধান করতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া সহায়তা করতে পারে।’
পাকিস্তান রাশিয়া থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামরিক ও জ্বালানি সুবিধা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। পুতিনের ভারত সফর পরিষ্কার করে দিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার মূল অংশীদার এখনো ভারতই। এটি ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
ব্রিকস সম্প্রসারণের সময় ভারত-রাশিয়া সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্রিকসের নেতৃত্বে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যপদের ভারতের আকাঙ্ক্ষাকে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথাও জানা গেছে। গ্লোবাল সাউথে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ভারত দেখাতে চায় যে তার পশ্চিমা ও অ-পশ্চিমা উভয় ব্লকের ওপর প্রভাব আছে।
ভারতের যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হলেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে এই সংযোগ ও সম্পর্কের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে মিত্রতা মানেই নির্ভরতা নয়, নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেওয়া নয়। ভারতের এই অবস্থান ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট
বার্তা দেয় যে ‘India will cooperate, but not at the cost of its autonomy.’ ভারত-রাশিয়ার এই কৌশলগত সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সমীকরণে নতুন ভারসাম্য তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে দেখিয়েছে যে ভারত কারও বা কোনো বলয়ে আবদ্ধ বা দায়বদ্ধ নয়। ভারতের এই স্বতন্ত্র অবস্থান বলে দেয়, জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এবং এটি তাদের একটি মূলনীতির দৃঢ় প্রকাশ।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
পুতিনের ভারত সফর একটি ভূকৌশলগত বার্তা—ভারত তার বহুমুখী বৈদেশিক নীতি ও কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক প্রভাবশালী মধ্যম শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে। পুতিনের এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনীতিতে ঘনিষ্ঠ থাকবে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বও বজায় রাখবে। অর্থাৎ ভারত কারও পরনির্ভর নয়; বরং নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতে ‘ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতার রাজনীতি করবে। রাশিয়া এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে পশ্চিমা, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার একচেটিয়া কূটনীতির বিকল্প হিসেবে ভারতকে দেখছে।
কয়েক মাস ধরে আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতকে রাশিয়ার তেল আমদানি ও রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের চাপ তৈরি করেছে শুল্ক বৃদ্ধির অস্ত্রকে ব্যবহার করে। তা সত্ত্বেও ভারত তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের নিজস্ব নীতিতে অগ্রসর হয়েছে। রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদার—পাকিস্তান যত আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, ভারত তত কাছে পেয়েছে রাশিয়াকে। এ জন্যই দেশ দুটি সামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিগত অংশীদারত্বের অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুতিনের সফরের আগে এক ব্রিফিংয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে, তার সবই ভাগ করে নেওয়া হবে। পুতিনও এই সফরের মাধ্যমে রাশিয়াকে একঘরে করার যে পশ্চিমা প্রচার ছিল, তার অনেকটা ভুল প্রমাণ করেছেন।

গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়। মোদি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। এই আস্থা ও হৃদ্যতা ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের গভীর মাত্রাকেই নির্দেশ করে। পুতিন তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ২৫ বছরে ১০ বার ভারত সফর করেছেন। তবে ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটিই ছিল তাঁর প্রথম ভারত সফর।
পুতিনের এই ভারত সফর নিছক কোনো রুটিন বিষয় ছিল না। ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করে। তাঁদের সাক্ষাৎ ছিল বিশ্বরাজনীতির আগ্রহের বিষয়, কেননা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর শুল্ক নিয়ে মোদির সঙ্গে যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ও বরফ গলছিল, তখনই পুতিন ভারত সফর করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত-রাশিয়া এই বৈঠকে কে কী অর্জন করল, তার কয়েকটি দিক আলোচনা করা যাক।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
পুতিনের এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করল। রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান সমরাস্ত্রের সরবরাহকারী। যদিও ১৯৭০-৮০-এর দশকে ভারতের অস্ত্রের প্রায় ৮০ ভাগই রাশিয়া সরবরাহ করত। পুতিন এবারের সফরে ভারতকে এস ৫০০ আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম হস্তান্তর, অতিরিক্ত সামরিক প্ল্যাটফর্ম, হেলিকপ্টার ও ইঞ্জিন কো-প্রোডাকশনসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো নিয়ে আবারও তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেছে। ‘প্রিভিলেজ কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিকস পার্টনারশিপ’ চুক্তির আওতায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভারতের যেকোনো স্থল, বিমান ও নৌবন্দরকে তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। সামরিক প্রয়োজনে একে অন্যের ভূমিও ব্যবহার করতে পারবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভারত তাদের কৌশলগত নিজস্বতা নিশ্চিত করল।
জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সুবিধা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারত রাশিয়া থেকে অনেক কম মূল্যে বিপুল তেল আমদানি করছে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত তাদের জ্বালানিনিরাপত্তা, পরিশোধন সক্ষমতা, দীর্ঘমেয়াদি তেল-গ্যাস চুক্তিকে আরও শক্তিশালী করল। রাশিয়ার সস্তা অপরিশোধিত তেল ভারতের মুদ্রাস্ফীতি কমাতে, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও সঞ্চয় করতে এবং পরিশোধন মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বে জ্বালানির বাজার অস্থিতিশীল হলে রাশিয়ার জ্বালানি শক্তি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও ভূমিকা রাখবে।
বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও এই বাণিজ্য ভারসাম্যমূলক নয়। রাশিয়ায় ভারতীয় আমদানি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে পুতিন-মোদি শীর্ষ সম্মেলনে উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যপণ্যের তালিকা সম্প্রসারণ ঘটবে।
রাশিয়া ভারতীয় সরঞ্জাম, কাঁচামাল এবং খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসারিত ও বৈচিত্র্যময় করার উপায়গুলো অনুসন্ধান করবে। অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ওপর ভারত-রাশিয়া আন্তসরকারি কমিশনও গঠিত হবে। মহাকাশ গবেষণা ও ভারত-রাশিয়ার যৌথ সামরিক যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং ভারত তা তৃতীয় কোনো দেশে নিজের উৎপাদিত পণ্য বলে বিক্রিও করার সুবিধা পাবে। ভারতে রুশ নকশায় দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
ভূরাজনীতি ও কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি
রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য চীন-রাশিয়া ব্লকের মধ্যে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি করবে। ভবিষ্যতে চীন সীমান্ত সমস্যায় রাশিয়ার নিরপেক্ষতা বজায় রাখা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মধ্য এশিয়া, আর্কটিক, নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর—এইসব কৌশলগত এলাকায় সহযোগিতা বাড়ানো ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রক্ষায় সহজ হবে।
বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় রাশিয়া চীনের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে এবং একে অন্যের বন্ধুত্ব ও আস্থার সম্পর্ক তারা নিজেরাই ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ভারতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার মাধ্যমে চীনকেও জানিয়ে দেওয়া যে, রাশিয়া এখনো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার।
রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের আগে ভারতের সাংবাদিকেরা পুতিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকভকে প্রশ্ন করেছিলেন, ভারত ও চীনের মধ্যে যদি কোনো সংঘাত ও যুদ্ধ হয়, সে ক্ষেত্রে ভারত কি আশা করতে পারে যে রাশিয়া তাদের পাশে দাঁড়াবে? তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি, ভারতের সঙ্গে চীনের যে বিরোধগুলো আছে, সেগুলো তারা মিটিয়ে ফেলবে। এ ক্ষেত্রে রাশিয়া একটি প্রস্তাবও দিয়েছিল হিমালয়ের ওপর দিয়ে সীমান্ত রেখা নিয়ে যে সমস্যা, সেটাকে তারা জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার করে সমাধান করতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া সহায়তা করতে পারে।’
পাকিস্তান রাশিয়া থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামরিক ও জ্বালানি সুবিধা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। পুতিনের ভারত সফর পরিষ্কার করে দিয়েছে যে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার মূল অংশীদার এখনো ভারতই। এটি ভারতের আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
ব্রিকস সম্প্রসারণের সময় ভারত-রাশিয়া সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্রিকসের নেতৃত্বে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যপদের ভারতের আকাঙ্ক্ষাকে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির কথাও জানা গেছে। গ্লোবাল সাউথে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ভারত দেখাতে চায় যে তার পশ্চিমা ও অ-পশ্চিমা উভয় ব্লকের ওপর প্রভাব আছে।
ভারতের যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হলেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে এই সংযোগ ও সম্পর্কের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে যে মিত্রতা মানেই নির্ভরতা নয়, নিজেদের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেওয়া নয়। ভারতের এই অবস্থান ওয়াশিংটনের কাছে স্পষ্ট
বার্তা দেয় যে ‘India will cooperate, but not at the cost of its autonomy.’ ভারত-রাশিয়ার এই কৌশলগত সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সমীকরণে নতুন ভারসাম্য তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ থাকা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে দেখিয়েছে যে ভারত কারও বা কোনো বলয়ে আবদ্ধ বা দায়বদ্ধ নয়। ভারতের এই স্বতন্ত্র অবস্থান বলে দেয়, জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী তারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম এবং এটি তাদের একটি মূলনীতির দৃঢ় প্রকাশ।
সামগ্রিক মূল্যায়ন
পুতিনের ভারত সফর একটি ভূকৌশলগত বার্তা—ভারত তার বহুমুখী বৈদেশিক নীতি ও কৌশলগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক প্রভাবশালী মধ্যম শক্তি হিসেবে অবস্থান করছে। পুতিনের এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনীতিতে ঘনিষ্ঠ থাকবে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্বও বজায় রাখবে। অর্থাৎ ভারত কারও পরনির্ভর নয়; বরং নিজস্ব স্বার্থের ভিত্তিতে ‘ভারসাম্যপূর্ণ ক্ষমতার রাজনীতি করবে। রাশিয়া এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে পশ্চিমা, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার একচেটিয়া কূটনীতির বিকল্প হিসেবে ভারতকে দেখছে।
কয়েক মাস ধরে আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতকে রাশিয়ার তেল আমদানি ও রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের চাপ তৈরি করেছে শুল্ক বৃদ্ধির অস্ত্রকে ব্যবহার করে। তা সত্ত্বেও ভারত তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের নিজস্ব নীতিতে অগ্রসর হয়েছে। রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদার—পাকিস্তান যত আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে, ভারত তত কাছে পেয়েছে রাশিয়াকে। এ জন্যই দেশ দুটি সামরিক ও সামরিক প্রযুক্তিগত অংশীদারত্বের অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুতিনের সফরের আগে এক ব্রিফিংয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে, তার সবই ভাগ করে নেওয়া হবে। পুতিনও এই সফরের মাধ্যমে রাশিয়াকে একঘরে করার যে পশ্চিমা প্রচার ছিল, তার অনেকটা ভুল প্রমাণ করেছেন।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১৭ ঘণ্টা আগে
ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
এই দেড় বছরে মেট্রোরেল লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, তার নিক্ষেপের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনই যদি এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটা ভালো ব্যাপার যে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন যে রেললাইনে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থেমে যায়। এটি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ভালো দিক হলেও, মানবসৃষ্ট কারণে ঘন ঘন এই থমকে যাওয়া আধুনিক এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
জনগণ দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যাও যে আছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বারবার বিকল হওয়া বা খুলে পড়ার ঘটনাটি মেট্রোরেলের কারিগরি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এক সূত্র থেকে জানা যায়, এই নিহতের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেলে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেট্রোরেলের লাইনে বস্তু শনাক্ত করতে ‘অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর’ ও ‘এআই-চালিত সিসিটিভি’ স্থাপন করা, ড্রোন পড়া প্রতিরোধে ‘ড্রোন ডিটেকশন রাডার’ ও ‘জিওফেন্সিং সিস্টেম’ ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ ঠেকানো সম্ভব।
মেট্রোরেল দেশের সম্পদ। জনগণের মধ্যে সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএমটিসিএলকে প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলো দ্রুত সমাধান এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের সামান্য ভুল বা অসচেতনতা হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল মেট্রোরেলের মসৃণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব। এই আধুনিক পরিষেবা যেন মাঝে মাঝে থমকে যাওয়ার দুর্নাম থেকে মুক্তি পায়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। তবে এটা চালুর প্রায় দেড় বছরে এই আধুনিক গণপরিবহনব্যবস্থা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়েছে। সেটা একটা ভাবনার বিষয়। মূলত এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার মেট্রোরেল চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশির ভাগই জনগণের গাফিলতির কারণে হয়েছে।
এই দেড় বছরে মেট্রোরেল লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, তার নিক্ষেপের কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এখনই যদি এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটা ভালো ব্যাপার যে, মেট্রোরেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা এমন যে রেললাইনে সামান্যতম বাধা সৃষ্টি হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন থেমে যায়। এটি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ভালো দিক হলেও, মানবসৃষ্ট কারণে ঘন ঘন এই থমকে যাওয়া আধুনিক এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
জনগণ দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে এখনই ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যাও যে আছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে ফার্মগেট এলাকায় বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজনের নিহত হওয়ার ঘটনাটি এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে। বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় ১১ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটি হতেই পারে, তবে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বারবার বিকল হওয়া বা খুলে পড়ার ঘটনাটি মেট্রোরেলের কারিগরি তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। এক সূত্র থেকে জানা যায়, এই নিহতের ঘটনা এবং অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেলে আগের তুলনায় ১০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন মেট্রোরেলের লাইনে বস্তু শনাক্ত করতে ‘অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর’ ও ‘এআই-চালিত সিসিটিভি’ স্থাপন করা, ড্রোন পড়া প্রতিরোধে ‘ড্রোন ডিটেকশন রাডার’ ও ‘জিওফেন্সিং সিস্টেম’ ব্যবহার করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ ঠেকানো সম্ভব।
মেট্রোরেল দেশের সম্পদ। জনগণের মধ্যে সে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। ডিএমটিসিএলকে প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলো দ্রুত সমাধান এবং রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে তাদের সামান্য ভুল বা অসচেতনতা হাজার হাজার যাত্রীর ভোগান্তি এবং মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সচেতনতা ও প্রযুক্তিগত সুরক্ষা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই কেবল মেট্রোরেলের মসৃণ ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব। এই আধুনিক পরিষেবা যেন মাঝে মাঝে থমকে যাওয়ার দুর্নাম থেকে মুক্তি পায়, সেই প্রত্যাশা আমাদের।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ট্র্যাজিক ঘটনায় শহীদ হয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর, আউয়াল, অহিউল্লাহসহ অনেকে। ১৯৫২ সালের ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও মিলিটারির নির্মম গুলিবর্ষণ ও ট্রাকের চাপায় তাঁরা শহীদ হন। আহত হয়েছিলেন অগণিত নর-নারী। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পথরেখা বেঁধে দিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তফসিল নিয়ে তাদের মতামত জানিয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
হঠাৎ করেই বিজয়ের মাসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করছে একদল মানুষ। এই প্রবণতাকে পাত্তা না দিলেও চলত, কিন্তু সেগুলো যদি জাতীয় প্রচারমাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়, তখন সত্যিই একটু ভাবতে হয়। এর যে প্রতিবাদ হওয়া দরকার, সেটা অনুভব করতে হয়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করলে আইন ভালোভাবে শেখা হয় বটে...
১৭ ঘণ্টা আগে
গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফর ও উভয় নেতার শীর্ষ বৈঠক অনেক কিছুরই ইঙ্গিত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুতিনকে যেভাবে আলিঙ্গন করেছেন, স্বাগত জানিয়েছেন, একই গাড়িতে যাত্রা করেছেন, তা আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের সাক্ষাতের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
১৭ ঘণ্টা আগে