তাপস মজুমদার
ডিসেম্বর চলে যাচ্ছে। বছর শেষ হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে খেলাপি ঋণের হিসাবকিতাবও তৈরি হবে এই ডিসেম্বরেই। বছরে চারবার ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়ে থাকে। মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে। ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় (গ্রেস পিরিয়ড) পরও যদি ঋণটি পরিশোধিত না হয়, তাহলে ঋণটিকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রেস পিরিয়ড বা বাড়তি সময়কাল কতটুকু হবে, তা ঋণের ধরনের ওপর নির্ভর করে। অতঃপর ঋণটি অশ্রেণীকৃত অথবা শ্রেণীকৃত—এ দুই ভাগের কোনো একটি ভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। শ্রেণীকৃত ঋণেরও আবার কিছু ভাগ আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের ওপর ভিত্তি করে সেগুলোকে নিম্নমান, সন্দেহজনক, ক্ষতিজনক ইত্যাদি মানে বিভক্ত করা হয়। এই সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে রিপোর্ট করা হয়ে থাকে। শাখাসমূহ থেকে সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ড্যাশবোর্ডে সরাসরি আপলোড করে থাকে।
কিছুদিন আগে একটি খবর জানা গিয়েছিল যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) ড্যাশবোর্ডে সরাসরি তথ্য আপলোড করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে (আজকের পত্রিকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে দেশের সব ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার তথ্য জমা থাকে। সেই তথ্য থেকেই জানা যায় ঋণ সম্পর্কিত সব রকম ডেটা, যেমন ঋণের পরিমাণ, প্রদানের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, ঋণের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ খেলাপি কি খেলাপি নয় এবং খেলাপি হলে তার মান (নিম্নমান, সন্দেহজনক, ক্ষতি ইত্যাদি), একই গ্রহীতার অনুকূলে অন্য কোনো ব্যাংকে ঋণ আছে কি না, যদি থাকে তার বর্তমান স্ট্যাটাস বা মান কী ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সব ডেটা বিশ্লেষণ করেই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়নসহ নানা রকম পলিসি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে এবং ব্যাংকগুলোকে নানান পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। পত্রিকার ওই খবরে আরও জানা যায়—সিআইবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সিআইবিতে অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানোর কৌশল করেছে। সিআইবির ড্যাশবোর্ডে সরাসরি তথ্য আপলোড করার সুযোগ থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাইলেই কোনো গ্রাহকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করতে পারে। অর্থাৎ, খেলাপি ঋণকে নিয়মিত হিসেবে দেখাতে পারে। ব্যাপারটি ভয়ানক। এ ধরনের অপকৌশল অবলম্বনের কারণে দেশের ঋণমানের সঠিক চিত্র পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। আর সঠিক চিত্র পাওয়া না গেলে ভুল পলিসি তৈরি হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু খবরে যে বলা হয়েছে—আগামী ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থাকা সিআইবির তথ্য হালনাগাদের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ফিরতে পারে! তার মানে, ব্যাংকগুলো ঋণের তথ্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ড্যাশবোর্ডে আপলোড করতে পারবে না। প্রথমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপলোড করবে। প্রশ্ন হলো, ব্যাপারটা কতটা সমীচীন? আর সত্যিকার অর্থে এটা কি কোনো সমাধান?
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুন ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার।
যেখানেই অনিয়ম হবে অথবা অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে, সেখানকার সব কার্যক্রম যদি গুটিয়ে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করা হয়, তাহলে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন—দক্ষ কর্মী তৈরি হয় না, ব্যবস্থাপনার ভার বেড়ে যায়, সেবা প্রদান বিলম্বিত হয়, সর্বোপরি সত্যের চর্চা সীমিত হয়ে পড়ে ইত্যাদি। তা ছাড়া, যে কৌশলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনিয়ম করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে গেলে সেখানেও যে সেই একই কৌশলে অনিয়ম করা হবে না, সেটাও শতভাগ নিশ্চিত করা কঠিন। সুতরাং, ক্ষমতা গুটিয়ে না এনে সিস্টেম বদল করাটাই আবশ্যক বলে মনে হয়।
বিকেন্দ্রীকরণ খারাপ বিষয় নয়। তাতে দক্ষতা বাড়ে, কাজও দ্রুত হয়। অনিয়ম তো হয় নিয়ম-নীতির ফাঁকফোকর দিয়ে। সেই ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করে ফেলতে পারলেই তো অনিয়ম দূর হয়। মাথাব্যথা বলে মাথা কেটে ফেলার তো কোনো অর্থ হতে পারে না। বিগত গভর্নরের আমলে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটার দুর্বলতা যেটুকু, সেটুকু দূর করলেই তো এই সমস্যার সমাধান হয়। এবং সেটা করাই বাঞ্ছনীয়। কড়া নির্দেশ, কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা এবং নির্দেশ অমান্যকারীর ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে কারও সাহস হবে না খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখানোর। কাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে এবং অনৈতিক ও অন্যায় কাজের শাস্তি প্রদান না করলে সিআইবিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত করেও অনিয়মিত ঋণকে নিয়মিত দেখানোর মতো অপকর্মের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীতের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির কথাই তো আমাদের জানা। স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী মহলের চাওয়া অনুযায়ী পলিসি তৈরির মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি।
সিস্টেম প্রণয়ন ও সুস্থতা চর্চার ক্ষেত্রে তুলনীয় একটি উদাহরণ টানা যায়। আমরা দেখেছি, যখন দলীয় সমর্থক দেখে চাকরি দেওয়া হয়, তখন তাদের ওপর নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হয় না। আবার নিজস্ব দলীয় স্বার্থে যাকে নিলেন, অন্য দল ক্ষমতায় এলে তার ব্যক্তিগত বিপদ বড় হয়ে দাঁড়ায়। তাতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভোগান্তি বৃদ্ধিসহ বড় দাগে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব, সেই পুরোনো কথাই সত্য—সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আর ব্যক্তিগত সততা আবশ্যক বটে। তবে তার চেয়ে বেশি আবশ্যক যথোপযুক্ত সিস্টেম।
এবার আরেকটি দৃষ্টি আকর্ষণী উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। আইবিবির ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা। এখানেও কার্যক্রমকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে, আইবিবি একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যেখানে ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক থেকে শুরু করে ডিজিএম পর্যন্ত কর্মকর্তারা পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করবেন। প্রকাশ থাকে যে, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা আইবিবি (ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ) নিয়ন্ত্রণ করলেও তার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমবেশি হাজার পঞ্চাশেক পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র সেট করা, মডারেট করা, পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র নিরীক্ষা করা, টেব্যুলেশন করা—সব কাজ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আগে এসব কাজ করতেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিজ্ঞ ও পারদর্শী প্রাক্তন ও বর্তমান নির্বাহী এবং নির্ধারিত কিছু কলেজশিক্ষক। সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও কিছু কিছু ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কার্যত ব্যাংকসমূহের ব্যাংক। রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের মুদ্রানীতি নিরূপণ ও পরিচালন, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ, বড় কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এ ছাড়া এটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে। এই সব কাজই গভীর মনোযোগ, সময় ও দক্ষতা দাবি করে। সে ক্ষেত্রে মূলধারার কাজের বাইরের একটি কর্মযজ্ঞ, যা মূলত একাডেমিক, সম্পাদন করতে যে সময় ও মনোযোগ দেওয়া এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, সেটা কি আদৌ সম্ভব? আর সম্ভব হলেও তাতে নিজের পেশাগত প্রধান কাজ কি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না?
এসব বিষয় সততার জায়গা থেকে বিবেচনা করলে দক্ষতা বাড়বে এবং সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে।
লেখক: সাবেক মহাব্যবস্থাপক, জনতা ব্যাংক
ডিসেম্বর চলে যাচ্ছে। বছর শেষ হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে খেলাপি ঋণের হিসাবকিতাবও তৈরি হবে এই ডিসেম্বরেই। বছরে চারবার ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়ে থাকে। মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে। ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় (গ্রেস পিরিয়ড) পরও যদি ঋণটি পরিশোধিত না হয়, তাহলে ঋণটিকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রেস পিরিয়ড বা বাড়তি সময়কাল কতটুকু হবে, তা ঋণের ধরনের ওপর নির্ভর করে। অতঃপর ঋণটি অশ্রেণীকৃত অথবা শ্রেণীকৃত—এ দুই ভাগের কোনো একটি ভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। শ্রেণীকৃত ঋণেরও আবার কিছু ভাগ আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের ওপর ভিত্তি করে সেগুলোকে নিম্নমান, সন্দেহজনক, ক্ষতিজনক ইত্যাদি মানে বিভক্ত করা হয়। এই সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে রিপোর্ট করা হয়ে থাকে। শাখাসমূহ থেকে সংগ্রহ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ড্যাশবোর্ডে সরাসরি আপলোড করে থাকে।
কিছুদিন আগে একটি খবর জানা গিয়েছিল যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) ড্যাশবোর্ডে সরাসরি তথ্য আপলোড করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে (আজকের পত্রিকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে দেশের সব ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার তথ্য জমা থাকে। সেই তথ্য থেকেই জানা যায় ঋণ সম্পর্কিত সব রকম ডেটা, যেমন ঋণের পরিমাণ, প্রদানের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, ঋণের বর্তমান অবস্থা, অর্থাৎ খেলাপি কি খেলাপি নয় এবং খেলাপি হলে তার মান (নিম্নমান, সন্দেহজনক, ক্ষতি ইত্যাদি), একই গ্রহীতার অনুকূলে অন্য কোনো ব্যাংকে ঋণ আছে কি না, যদি থাকে তার বর্তমান স্ট্যাটাস বা মান কী ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সব ডেটা বিশ্লেষণ করেই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়নসহ নানা রকম পলিসি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে এবং ব্যাংকগুলোকে নানান পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। পত্রিকার ওই খবরে আরও জানা যায়—সিআইবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সিআইবিতে অনেক ব্যাংক খেলাপি ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানোর কৌশল করেছে। সিআইবির ড্যাশবোর্ডে সরাসরি তথ্য আপলোড করার সুযোগ থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চাইলেই কোনো গ্রাহকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করতে পারে। অর্থাৎ, খেলাপি ঋণকে নিয়মিত হিসেবে দেখাতে পারে। ব্যাপারটি ভয়ানক। এ ধরনের অপকৌশল অবলম্বনের কারণে দেশের ঋণমানের সঠিক চিত্র পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। আর সঠিক চিত্র পাওয়া না গেলে ভুল পলিসি তৈরি হবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক।
কিন্তু খবরে যে বলা হয়েছে—আগামী ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে থাকা সিআইবির তথ্য হালনাগাদের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ফিরতে পারে! তার মানে, ব্যাংকগুলো ঋণের তথ্য সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ড্যাশবোর্ডে আপলোড করতে পারবে না। প্রথমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। অতঃপর বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপলোড করবে। প্রশ্ন হলো, ব্যাপারটা কতটা সমীচীন? আর সত্যিকার অর্থে এটা কি কোনো সমাধান?
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, জুন ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার।
যেখানেই অনিয়ম হবে অথবা অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে, সেখানকার সব কার্যক্রম যদি গুটিয়ে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করা হয়, তাহলে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন—দক্ষ কর্মী তৈরি হয় না, ব্যবস্থাপনার ভার বেড়ে যায়, সেবা প্রদান বিলম্বিত হয়, সর্বোপরি সত্যের চর্চা সীমিত হয়ে পড়ে ইত্যাদি। তা ছাড়া, যে কৌশলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনিয়ম করতে পারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে গেলে সেখানেও যে সেই একই কৌশলে অনিয়ম করা হবে না, সেটাও শতভাগ নিশ্চিত করা কঠিন। সুতরাং, ক্ষমতা গুটিয়ে না এনে সিস্টেম বদল করাটাই আবশ্যক বলে মনে হয়।
বিকেন্দ্রীকরণ খারাপ বিষয় নয়। তাতে দক্ষতা বাড়ে, কাজও দ্রুত হয়। অনিয়ম তো হয় নিয়ম-নীতির ফাঁকফোকর দিয়ে। সেই ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করে ফেলতে পারলেই তো অনিয়ম দূর হয়। মাথাব্যথা বলে মাথা কেটে ফেলার তো কোনো অর্থ হতে পারে না। বিগত গভর্নরের আমলে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটার দুর্বলতা যেটুকু, সেটুকু দূর করলেই তো এই সমস্যার সমাধান হয়। এবং সেটা করাই বাঞ্ছনীয়। কড়া নির্দেশ, কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা এবং নির্দেশ অমান্যকারীর ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে কারও সাহস হবে না খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখানোর। কাজে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে এবং অনৈতিক ও অন্যায় কাজের শাস্তি প্রদান না করলে সিআইবিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত করেও অনিয়মিত ঋণকে নিয়মিত দেখানোর মতো অপকর্মের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতীতের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির কথাই তো আমাদের জানা। স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী মহলের চাওয়া অনুযায়ী পলিসি তৈরির মতো ঘটনাও আমরা দেখেছি।
সিস্টেম প্রণয়ন ও সুস্থতা চর্চার ক্ষেত্রে তুলনীয় একটি উদাহরণ টানা যায়। আমরা দেখেছি, যখন দলীয় সমর্থক দেখে চাকরি দেওয়া হয়, তখন তাদের ওপর নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হয় না। আবার নিজস্ব দলীয় স্বার্থে যাকে নিলেন, অন্য দল ক্ষমতায় এলে তার ব্যক্তিগত বিপদ বড় হয়ে দাঁড়ায়। তাতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভোগান্তি বৃদ্ধিসহ বড় দাগে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব, সেই পুরোনো কথাই সত্য—সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। আর ব্যক্তিগত সততা আবশ্যক বটে। তবে তার চেয়ে বেশি আবশ্যক যথোপযুক্ত সিস্টেম।
এবার আরেকটি দৃষ্টি আকর্ষণী উদাহরণ দিয়ে শেষ করব। আইবিবির ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা। এখানেও কার্যক্রমকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে, আইবিবি একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যেখানে ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক থেকে শুরু করে ডিজিএম পর্যন্ত কর্মকর্তারা পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করবেন। প্রকাশ থাকে যে, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষা আইবিবি (ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ) নিয়ন্ত্রণ করলেও তার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমবেশি হাজার পঞ্চাশেক পরীক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নপত্র সেট করা, মডারেট করা, পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র নিরীক্ষা করা, টেব্যুলেশন করা—সব কাজ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আগে এসব কাজ করতেন বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অভিজ্ঞ ও পারদর্শী প্রাক্তন ও বর্তমান নির্বাহী এবং নির্ধারিত কিছু কলেজশিক্ষক। সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও কিছু কিছু ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং কার্যত ব্যাংকসমূহের ব্যাংক। রাষ্ট্রের পক্ষে এটি দেশের ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশের মুদ্রানীতি নিরূপণ ও পরিচালন, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ, টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ, বড় কাগুজে নোট মুদ্রণ এবং বাজারে প্রবর্তন এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এ ছাড়া এটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে। এই সব কাজই গভীর মনোযোগ, সময় ও দক্ষতা দাবি করে। সে ক্ষেত্রে মূলধারার কাজের বাইরের একটি কর্মযজ্ঞ, যা মূলত একাডেমিক, সম্পাদন করতে যে সময় ও মনোযোগ দেওয়া এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, সেটা কি আদৌ সম্ভব? আর সম্ভব হলেও তাতে নিজের পেশাগত প্রধান কাজ কি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না?
এসব বিষয় সততার জায়গা থেকে বিবেচনা করলে দক্ষতা বাড়বে এবং সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত হবে।
লেখক: সাবেক মহাব্যবস্থাপক, জনতা ব্যাংক
সহজ কথা বলা যেমন সহজ নয়, তেমনি সহজ নয় আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিষয়ে একমত হওয়া। আমাদের দেশে যত মাথা, তত মত—যে যার মতে অটল, নিজের বক্তব্যে অনড়। ফলে এখানে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই যেন যুদ্ধ জয়ের সমান। রাজনীতি তো আর গণিতের সূত্র নয়, যেখানে সবাই একই জবাব মেনে নেবে; এখানে আবেগ, স্বার্থ, বিশ্বাস আর...
৬ ঘণ্টা আগেকোনো মানুষ নিজের চোখে স্বর্গ দেখেছেন—এমন দাবি কেউ কখনো করেনি। পুরোটাই কল্পনায়। কিন্তু স্বর্গ যে অতীব মনোরম, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাই হয়তো হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। কাশ্মীরে যাঁরা গেছেন, তাঁরা এর সৌন্দর্যে মোহিত হননি, এমন লোক খুঁজে...
৬ ঘণ্টা আগেজোগাত দেশের আপামর মানুষের মনে, সেই গান শুনে ক্রুদ্ধ হলেন সরকারি কর্মকর্তারা! এর মধ্যে জেলা প্রশাসকও রয়েছেন! এ ঘটনাকে কী নামে আখ্যায়িত করা যায়? এই বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর সোনাগাজীতে, ২৬ এপ্রিলে। উপজেলা স্কাউটসের তিন দিনব্যপী সমাবেশের সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।
৬ ঘণ্টা আগেনেদারল্যান্ডসের নাগরিক পিটার ভ্যান উইঙ্গারডেন ও মিনকে ভ্যান উইঙ্গারডেন। তাঁরা ২০১২ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে বিজনেস ট্রিপে গিয়েছিলেন। সেখানে হারিকেন স্যান্ডির মুখোমুখি হন। হারিকেন স্যান্ডি ম্যানহাটানকে প্লাবিত করে। সেখানকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। ঝড়ের কারণে
১ দিন আগে