স্বাতী চৌধুরী
আমাদের ছোটবেলায় বর্ষাকালে গাজীর গানের দল আসত। কেউ একজন ‘গাজীর গান আইছে’ খবরটা দিলেই সেই গান শোনার জন্য আমরা পড়িমরি করে ছুটতাম। গাজীর গানের দলের মূল গায়ক পটচিত্র বের করে সুরে সুরে চিত্রের গল্প বর্ণনা করতেন। তার সঙ্গে দোহার দিতেন আরও এক-দুজন। তাদের বলা হতো গাজীর গায়েনের টুলটুইল্যা।নামে যতই তুচ্ছতা প্রকাশ পাক না কেন, টুলটুইল্যার দোহার না হলে গায়ক যত বড়ই হোন, সেটা জমত না। সে যাই হোক, গাজীর গানের বেশির ভাগ পটচিত্রের দৃশ্য ও বর্ণনা থাকত ভয়ংকর। তাই যে আনন্দ নিয়ে আমরা গাজীর গান দেখতে যেতাম, ওই সব ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আনন্দ উবে যেত। তবু একটা গা হিম করা ভয়ের উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম। হয়তো ভয়েরও সম্মোহন করার শক্তি আছে।
মনে পড়ে, গাজী-কালুর বীরত্বের কথা কিছুটা বলেই নরকে পাপীদের কী কী শাস্তি হয়, সেসব দৃশ্য দেখাতেন মূল গায়েন। দৃশ্যগুলো ছিল এ রকম—এক জায়গায় গনগনে আগুনের ওপর মস্ত একটা কড়াইয়ের গরম তেলে পাপীকে ভাজা ভাজা করছে যমের মা। অন্য জায়গায় হাঁড়ির মধ্যে সেদ্ধ করছে কারও টুকরা টুকরা শরীর। চুরি করার অপরাধে কারও কাটা হাত থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। মিথ্যা বলার অপরাধে কারও জিহ্বার মধ্যে তপ্ত লৌহশলাকা ঢোকানো। কোনো পাপীর চুল ধরে টেনে নিচ্ছে ভয়ালদর্শন যমের অনুচরেরা। এমন ভয়ংকর শাস্তির বর্ণনা ও ছবি আমাদের শিশুমনে ভীষণ ভয় ধরাত। তখন বড়দের মনে কী হতো জানি না, কিন্তু আমাদের শিশুদের মনে খুব অনুশোচনা হতো। পটচিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের কৃত পাপের নিরিখে কী কী শাস্তি হতে পারে, তা ভেবে আমরা ভয়ে কাঁপতাম। আমরা প্রতিজ্ঞা করতাম আর ওই সব পাপ করব না।
নিজেদের যেসব কাজকে পাপ বলে আমরা বুঝতাম, সেসব ছিল বাবার পকেট বা মায়ের কৌটা থেকে পাঁচ-দশ পয়সা চুরি করা, পিটুনির ভয়ে মিছে কথা বলা। কেবল গাজীর গান নয়, আমাদের পাঠ্যবইয়েও লেখা ছিল চুরি করা, মিথ্যা বলা মহাপাপ। বড় হতে হতে বুঝলাম, মানুষ মিথ্যা বলে ভয়ে আর লোভে। লোভই তাকে চুরি, হিংসা, বদমাইশি, খুনখারাবির মতো অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই একমাত্র ‘লোভ’ সামলালেই অধিকাংশ অপরাধ থেকে সে মুক্ত থাকতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে লোভ থেকে মুক্ত হওয়া মোটেই সহজ নয়। লোভ মানুষের মধ্যে থাকবেই। কিন্তু তাকে চেষ্টা করতে হবে দমন করার। সেটা সহজ হয় যদি মানুষের মধ্যে লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ থাকে। আর ধারণা থাকে অধিকারবোধ সম্পর্কে।
যেমন, আমরা যখন বাজারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, তখন দোকানের সাজানো কত লোভনীয় খাবার ও জিনিস দেখতে পাই। সাজানো খাবার ও সামগ্রী কখনো কি আমাদের প্রলুব্ধ করে না? অবশ্যই করে। কারণ, এটা প্রাকৃতিক। দেখেছি, খাবারের গল্প বলার সময় বা শোনার সময়ও অনেকের জিবে জল চলে আসে। তাই বলে কি আমরা অন্যের দোকান থেকে মিষ্টি, ফল ইত্যাদি তুলে নিয়ে আসি? আসি না তো! এই লোভ তাহলে কেন এবং কীভাবে দমন করি? দমন করি, কারণ আমরা জানি এই মিষ্টি বা ফল আমাদের নয়। এটা খেতে হলে আমাদের টাকা দিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু আমাদের হাতে টাকা না থাকলে আমরা তা কিনতে পারি না। আবার কিনতে পারি না বলে কেড়েও আনি না। আনলে লোকে চোর বলে বদনাম করবে। তাই বদনামের ভয় ও আত্মসম্মানবোধ থাকলে লোভ দমন না করে আমাদের উপায় নেই। কিন্তু যদি আত্মসম্মান বোধহীন কারও সামনে কেবল নীতিহীন ভয়ের সংস্কৃতি অর্থাৎ, কেবল শাস্তির ভয় থাকে, তবে সে চুরি-বাটপারিসহ সব রকমের অপরাধও করবে এবং শাস্তি এড়াতে মিছে কথা বলবে। এভাবে এক মিথ্যা আরেক মিথ্যার জন্ম দেবে। এক অপরাধ আরেক অপরাধের জন্ম দিতেই থাকবে। মিথ্যার বেড়াজাল ও অপরাধীর চক্র থেকে তার আর বেরোনোর সুযোগ থাকবে না।
ছোটবেলায় গাজীর গানে যেসব অপরাধের জন্য ভয়ংকর শাস্তির কথা জেনেছি, বড় হয়ে আমরা অনেকেই কিন্তু সেসব অপরাধ থেকে নিবৃত্ত হইনি। অথচ আমরা কমবেশি প্রায় সবাই ধার্মিক। নানা প্রকার ধর্মসভায় যাই। ধর্মগ্রন্থকে মান্য করি। কিন্তু ধর্মসভা ও ধর্মগ্রন্থগুলো কেবল কোন কাজ করলে কী অপরাধ হয়, তার শাস্তি কী হবে, সেসব বলে আমাদের প্রতিনিয়ত ভয় দেখায় আর আমরা ভয়ে সিটিয়েও থাকি। তবে ধর্মসভা ও ধর্মগ্রন্থ একই সঙ্গে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য করণীয় বিষয়ে প্রেসক্রিপশনও দেয়। কিন্তু মজার কথা হলো, আমরা সেই প্রেসক্রিপশন বা অনুশাসনের কিছু কিছু বিষয় কমবেশি অনুসরণ করলেও অপরাধ করা থেকে নিবৃত্ত হই না। বিষয়টা যেন অনেকটা ডায়াবেটিক রোগীদের একটা কমন আচরণের মতো। যেমন অনেক ডায়াবেটিক রোগী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ওষুধ খেলেও খাবারের চার্ট না মেনে ইচ্ছেমতো চিনিজাতীয় খাবার খায় এই ভেবে যে, অনেকটা হেঁটে কিংবা সুগার বাড়লে একবেলা ইনসুলিন নিয়ে ডায়াবেটিস কমিয়ে নেবে। যেহেতু ইনসুলিন আছে, তো চিনি বা অন্যান্য খাবার একটু বেশি খেলেও কী আর হবে! খেয়ে নেয় দুটো মিষ্টি বা তৈলাক্ত খাবার।
এ প্রসঙ্গে আমার প্রতিবেশী এক চাচা-চাচি ও এক বান্ধবীর স্বামীর কথা বলি। মনে আছে, সেই চাচি একদিন বলেছিলেন, তাঁরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছাড়াও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করেন গুনাহর আজাব থেকে মাফ পাওয়ার জন্য। অথচ সেই চাচি প্রায়ই ভোরের অন্ধকারে প্রতিবেশীদের লাউ-শিম আর পুকুরের মাছ চুরি করতেন। আর বান্ধবীর সেই স্বামী অফিসে ঘুষ থেকে আরম্ভ করে হেন অপকর্ম নেই যা করেননি। কিন্তু প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশনে তিনি প্রার্থনায় যান আর জিলিপির ভোগ দেন। আমার বান্ধবীর স্বামী বা প্রতিবেশী চাচা-চাচি অপকর্মের জন্য ভয়ে কাঁপলেও তাঁরা জানেন ঈশ্বর দয়ালু। তাই ঈশ্বরকে ব্ল্যাকমেল করে তাঁদের এই মাফ চাওয়া আর অপরাধ করা, অপরাধ করা আর মাফ চাওয়ার চক্র চলতেই থাকে। ওই লোভী ডায়বেটিক রোগীদের মতো—চিনি খায় আর ইনসুলিন নেয়। ইনসুলিন নেয় আর চিনি খায়। লোভ একই সঙ্গে তাদের নিষিদ্ধ কাজ বা অপরাধও করায় আবার তাদের মনে ভয়েরও জন্ম দেয়। এ ভয় শাস্তির। এ ভয় মৃত্যুর। আর ভয় থেকেই অলৌকিকতায় বিশ্বাস। অলৌকিক বিশ্বাস জ্ঞানবিজ্ঞানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে তাদের অন্ধকারে ধাবিত করে। আর কে না জানে, অন্ধকারই ভয়ের সূতিকাগার! তাই অলৌকিক বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন হয় আজগুবি গল্প তৈরি করা, যা মানুষকে ভয় দেখায়। ক্ষমতালোভীরাও তাকে মদদ দেয়। আর ক্ষমতার লোভ মানুষের সহজাত, আনন্দময় জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক নারীনেত্রী
আমাদের ছোটবেলায় বর্ষাকালে গাজীর গানের দল আসত। কেউ একজন ‘গাজীর গান আইছে’ খবরটা দিলেই সেই গান শোনার জন্য আমরা পড়িমরি করে ছুটতাম। গাজীর গানের দলের মূল গায়ক পটচিত্র বের করে সুরে সুরে চিত্রের গল্প বর্ণনা করতেন। তার সঙ্গে দোহার দিতেন আরও এক-দুজন। তাদের বলা হতো গাজীর গায়েনের টুলটুইল্যা।নামে যতই তুচ্ছতা প্রকাশ পাক না কেন, টুলটুইল্যার দোহার না হলে গায়ক যত বড়ই হোন, সেটা জমত না। সে যাই হোক, গাজীর গানের বেশির ভাগ পটচিত্রের দৃশ্য ও বর্ণনা থাকত ভয়ংকর। তাই যে আনন্দ নিয়ে আমরা গাজীর গান দেখতে যেতাম, ওই সব ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আনন্দ উবে যেত। তবু একটা গা হিম করা ভয়ের উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম। হয়তো ভয়েরও সম্মোহন করার শক্তি আছে।
মনে পড়ে, গাজী-কালুর বীরত্বের কথা কিছুটা বলেই নরকে পাপীদের কী কী শাস্তি হয়, সেসব দৃশ্য দেখাতেন মূল গায়েন। দৃশ্যগুলো ছিল এ রকম—এক জায়গায় গনগনে আগুনের ওপর মস্ত একটা কড়াইয়ের গরম তেলে পাপীকে ভাজা ভাজা করছে যমের মা। অন্য জায়গায় হাঁড়ির মধ্যে সেদ্ধ করছে কারও টুকরা টুকরা শরীর। চুরি করার অপরাধে কারও কাটা হাত থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। মিথ্যা বলার অপরাধে কারও জিহ্বার মধ্যে তপ্ত লৌহশলাকা ঢোকানো। কোনো পাপীর চুল ধরে টেনে নিচ্ছে ভয়ালদর্শন যমের অনুচরেরা। এমন ভয়ংকর শাস্তির বর্ণনা ও ছবি আমাদের শিশুমনে ভীষণ ভয় ধরাত। তখন বড়দের মনে কী হতো জানি না, কিন্তু আমাদের শিশুদের মনে খুব অনুশোচনা হতো। পটচিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের কৃত পাপের নিরিখে কী কী শাস্তি হতে পারে, তা ভেবে আমরা ভয়ে কাঁপতাম। আমরা প্রতিজ্ঞা করতাম আর ওই সব পাপ করব না।
নিজেদের যেসব কাজকে পাপ বলে আমরা বুঝতাম, সেসব ছিল বাবার পকেট বা মায়ের কৌটা থেকে পাঁচ-দশ পয়সা চুরি করা, পিটুনির ভয়ে মিছে কথা বলা। কেবল গাজীর গান নয়, আমাদের পাঠ্যবইয়েও লেখা ছিল চুরি করা, মিথ্যা বলা মহাপাপ। বড় হতে হতে বুঝলাম, মানুষ মিথ্যা বলে ভয়ে আর লোভে। লোভই তাকে চুরি, হিংসা, বদমাইশি, খুনখারাবির মতো অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই একমাত্র ‘লোভ’ সামলালেই অধিকাংশ অপরাধ থেকে সে মুক্ত থাকতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে লোভ থেকে মুক্ত হওয়া মোটেই সহজ নয়। লোভ মানুষের মধ্যে থাকবেই। কিন্তু তাকে চেষ্টা করতে হবে দমন করার। সেটা সহজ হয় যদি মানুষের মধ্যে লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ থাকে। আর ধারণা থাকে অধিকারবোধ সম্পর্কে।
যেমন, আমরা যখন বাজারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, তখন দোকানের সাজানো কত লোভনীয় খাবার ও জিনিস দেখতে পাই। সাজানো খাবার ও সামগ্রী কখনো কি আমাদের প্রলুব্ধ করে না? অবশ্যই করে। কারণ, এটা প্রাকৃতিক। দেখেছি, খাবারের গল্প বলার সময় বা শোনার সময়ও অনেকের জিবে জল চলে আসে। তাই বলে কি আমরা অন্যের দোকান থেকে মিষ্টি, ফল ইত্যাদি তুলে নিয়ে আসি? আসি না তো! এই লোভ তাহলে কেন এবং কীভাবে দমন করি? দমন করি, কারণ আমরা জানি এই মিষ্টি বা ফল আমাদের নয়। এটা খেতে হলে আমাদের টাকা দিয়ে কিনতে হবে। কিন্তু আমাদের হাতে টাকা না থাকলে আমরা তা কিনতে পারি না। আবার কিনতে পারি না বলে কেড়েও আনি না। আনলে লোকে চোর বলে বদনাম করবে। তাই বদনামের ভয় ও আত্মসম্মানবোধ থাকলে লোভ দমন না করে আমাদের উপায় নেই। কিন্তু যদি আত্মসম্মান বোধহীন কারও সামনে কেবল নীতিহীন ভয়ের সংস্কৃতি অর্থাৎ, কেবল শাস্তির ভয় থাকে, তবে সে চুরি-বাটপারিসহ সব রকমের অপরাধও করবে এবং শাস্তি এড়াতে মিছে কথা বলবে। এভাবে এক মিথ্যা আরেক মিথ্যার জন্ম দেবে। এক অপরাধ আরেক অপরাধের জন্ম দিতেই থাকবে। মিথ্যার বেড়াজাল ও অপরাধীর চক্র থেকে তার আর বেরোনোর সুযোগ থাকবে না।
ছোটবেলায় গাজীর গানে যেসব অপরাধের জন্য ভয়ংকর শাস্তির কথা জেনেছি, বড় হয়ে আমরা অনেকেই কিন্তু সেসব অপরাধ থেকে নিবৃত্ত হইনি। অথচ আমরা কমবেশি প্রায় সবাই ধার্মিক। নানা প্রকার ধর্মসভায় যাই। ধর্মগ্রন্থকে মান্য করি। কিন্তু ধর্মসভা ও ধর্মগ্রন্থগুলো কেবল কোন কাজ করলে কী অপরাধ হয়, তার শাস্তি কী হবে, সেসব বলে আমাদের প্রতিনিয়ত ভয় দেখায় আর আমরা ভয়ে সিটিয়েও থাকি। তবে ধর্মসভা ও ধর্মগ্রন্থ একই সঙ্গে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য করণীয় বিষয়ে প্রেসক্রিপশনও দেয়। কিন্তু মজার কথা হলো, আমরা সেই প্রেসক্রিপশন বা অনুশাসনের কিছু কিছু বিষয় কমবেশি অনুসরণ করলেও অপরাধ করা থেকে নিবৃত্ত হই না। বিষয়টা যেন অনেকটা ডায়াবেটিক রোগীদের একটা কমন আচরণের মতো। যেমন অনেক ডায়াবেটিক রোগী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতো ওষুধ খেলেও খাবারের চার্ট না মেনে ইচ্ছেমতো চিনিজাতীয় খাবার খায় এই ভেবে যে, অনেকটা হেঁটে কিংবা সুগার বাড়লে একবেলা ইনসুলিন নিয়ে ডায়াবেটিস কমিয়ে নেবে। যেহেতু ইনসুলিন আছে, তো চিনি বা অন্যান্য খাবার একটু বেশি খেলেও কী আর হবে! খেয়ে নেয় দুটো মিষ্টি বা তৈলাক্ত খাবার।
এ প্রসঙ্গে আমার প্রতিবেশী এক চাচা-চাচি ও এক বান্ধবীর স্বামীর কথা বলি। মনে আছে, সেই চাচি একদিন বলেছিলেন, তাঁরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ছাড়াও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করেন গুনাহর আজাব থেকে মাফ পাওয়ার জন্য। অথচ সেই চাচি প্রায়ই ভোরের অন্ধকারে প্রতিবেশীদের লাউ-শিম আর পুকুরের মাছ চুরি করতেন। আর বান্ধবীর সেই স্বামী অফিসে ঘুষ থেকে আরম্ভ করে হেন অপকর্ম নেই যা করেননি। কিন্তু প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশনে তিনি প্রার্থনায় যান আর জিলিপির ভোগ দেন। আমার বান্ধবীর স্বামী বা প্রতিবেশী চাচা-চাচি অপকর্মের জন্য ভয়ে কাঁপলেও তাঁরা জানেন ঈশ্বর দয়ালু। তাই ঈশ্বরকে ব্ল্যাকমেল করে তাঁদের এই মাফ চাওয়া আর অপরাধ করা, অপরাধ করা আর মাফ চাওয়ার চক্র চলতেই থাকে। ওই লোভী ডায়বেটিক রোগীদের মতো—চিনি খায় আর ইনসুলিন নেয়। ইনসুলিন নেয় আর চিনি খায়। লোভ একই সঙ্গে তাদের নিষিদ্ধ কাজ বা অপরাধও করায় আবার তাদের মনে ভয়েরও জন্ম দেয়। এ ভয় শাস্তির। এ ভয় মৃত্যুর। আর ভয় থেকেই অলৌকিকতায় বিশ্বাস। অলৌকিক বিশ্বাস জ্ঞানবিজ্ঞানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে তাদের অন্ধকারে ধাবিত করে। আর কে না জানে, অন্ধকারই ভয়ের সূতিকাগার! তাই অলৌকিক বিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন হয় আজগুবি গল্প তৈরি করা, যা মানুষকে ভয় দেখায়। ক্ষমতালোভীরাও তাকে মদদ দেয়। আর ক্ষমতার লোভ মানুষের সহজাত, আনন্দময় জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক নারীনেত্রী
কৃষিকে ঘিরেই নেদারল্যান্ডসের যত কাজকারবার। কৃষি গবেষণা, কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ থেকে শুরু করে কৃষি কর্মকাণ্ড ও কৃষি-বাণিজ্যের এক সূতিকাগার নেদারল্যান্ডস। কাজের সূত্রে বেশ কয়েকবার নেদারল্যান্ডস যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
২ ঘণ্টা আগে-গল্পটা এমন—লেনিনকে ঈশ্বরের মুখোমুখি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, তিনি স্বর্গে যাবেন না নরকে যাবেন, তা নির্ধারণ করা। ঈশ্বরের দূত খুব জোর গলায় বলছিলেন, লেনিন একজন পাপী। তাঁর মতে, লেনিন সারা জীবন ঈশ্বরের বদনাম করেছেন।
২ ঘণ্টা আগেনীলোৎপল সাধ্যের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১৭ মার্চ। তিনি তাঁর সংগীতজীবনের মধ্য গগনে খসে পড়েছিলেন শিল্পচর্চা ও শিল্পসাধনায় ব্রতী অনুগামী অনুজ পরম্পরা তৈরির কর্মযজ্ঞ পালন থেকে। হালে শিল্পপ্রসারে প্রযুক্তি অনেক সুযোগ ও সংযোগ তৈরি করেছে, সে কারণে শিল্পে স্নাত হওয়ার অনেক দরজা খুলে গেছে...
২ ঘণ্টা আগেবরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণকে কেন্দ্র করে যে ভয়াবহ দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১৬ মার্চ আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ মাদ্রাসার কোনো অস্তিত্ব নেই।
২ ঘণ্টা আগে