জাহীদ রেজা নূর

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।
জাহীদ রেজা নূর

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এসেছিল একই বছরের ১৫ আগস্টের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই তখন আত্মগোপন করেন, অনেকেই মোশতাকের অবৈধ ক্ষমতাদখল মেনে নেন। জেলহত্যার শিকার চার নেতা পালিয়ে যাননি, মোশতাক-মন্ত্রিসভায় যোগও দেননি। বঙ্গবন্ধুর পর তাঁরাই যে দেশের চালিকাশক্তি, সে কথা জানত এই অপশক্তি। তাই তারা এই চারজনকে বন্দী করে জেলখানায় রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল পাকিস্তানি জান্তা। সে সময় সুদক্ষভাবে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা করার কৃতিত্ব এই চার নেতার ওপরই বর্তায়। তাঁরা তা সফলভাবে পালন করেন।
মূলত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর আস্থা রেখেই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এনডিএফ থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৬৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হলো, তখন থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এ সময়েই শেখ মুজিব মূলত পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাতীয় নেতা হয়ে উঠছিলেন।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের ঔজ্জ্বল্য এতটাই ছিল যে, অন্য নেতারা সে আলোয় ম্লান হয়ে যেতেন। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগ আসলে ছিল তারুণ্যে ভরপুর এক আওয়ামী লীগ। শহীদ চার নেতাকে বুঝতে হলে এ কথাও বুঝতে হবে আগে।
সে সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন আতাউর রহমান খান, জহিরুদ্দিন হোসেন, আবদুস সালাম খান, আবদুল জব্বার খদ্দর, খাজা খয়রাত হোসেন, যশোরের মশিউর রহমান, রাজশাহীর মজিবুর রহমান, কুষ্টিয়ার সা’দ আহমদ প্রমুখ। তাঁদের অনেকেই চাননি আওয়ামী লীগ এনডিএফ থেকে বেরিয়ে একক দল হিসেবে আবার কাজ করুক। ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়াও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। শেখ মুজিব তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ইত্তেফাকের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা যাবে না। তিনি তাঁর বন্ধু ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আশঙ্কার কথা জানালেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন মানিক মিয়াকে এড়িয়েই আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবনের কথা ছেপে দিলেন। সে অন্য গল্প, কিন্তু ইতিহাসের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
১৯৬৬ সালের ১৮ থেকে ২০ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন হয়, তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে ১৫ বছর তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। দলের সহসভাপতি হন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। যশোরের মশিউর রহমান নয়া কর্মকর্তাদের নামের প্যানেল পাঠ করেন এবং পাবনার মনসুর আলী পূর্ণাঙ্গ প্যানেল সমর্থন করেন।
তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর নিখুঁত মেধা ও পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে রাজনীতির মাঠে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন পেরিয়ে জাতি যখন নতুন যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য এবং নিজেদের মেধাবী উপস্থিতি দিয়ে তাঁরা রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পর ইত্তেফাকের শিরোনাম হলো, ‘কেন্দ্রে শেখ মুজিব ও প্রদেশে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী নেতা নির্বাচিত’।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলন চলার সময় এই চার নেতাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গী।
দুই
ওপরের আলোচনার পথ ধরে এগোলে আমরা জেলহত্যার অর্থ বুঝতে পারব। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন না হলে এনডিএফের আওতায় থেকে দেশের বিরোধীদলীয় রাজনীতিতে দলটি তেমন কোনো অবদান রাখতে পারত না। পুনরুজ্জীবনের পথ ধরেই আওয়ামী লীগে এল নতুন নেতৃত্ব, তাঁরাই হাল ধরলেন, হয়ে উঠলেন
বঙ্গবন্ধুর ভরসাস্থল।
খন্দকার মোশতাক আহমদও ছিলেন এই দলে। কিন্তু তাঁর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। মার্কিনদের সঙ্গে আঁতাত করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিয়তির পরিহাস হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাজউদ্দীন আহমদকে দূরে সরিয়ে রাখলেন। এই ফাঁকে খন্দকার মোশতাক সরকারের মধ্যে থেকেই সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেন। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফল হিসেবে একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্য হত্যা করল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। খন্দকার মোশতাক হাতে তুলে নিলেন ক্ষমতা।
তিন
যে চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হলো, তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২৩ আগস্ট। সেই থেকে তাঁরা জেলে ছিলেন। কোনো কারণে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে এই নেতারা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সে কথা জানত এই খুনি চক্র। এ কারণেই অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের সময়টিতে ২ নভেম্বর পেরিয়ে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা পিকআপ থেমেছিল। নেমেছিল কয়েকজন সেনাসদস্য। জেলার আমিনুর রহমানকে কারা মহাপরিদর্শক ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছিলেন। মূল ফটকে সৈন্যদের দেখলেন তিনি। সেনাসদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটা কাগজ দিলেন। বেজে উঠল আমিনুল ইসলামের ঘরের ফোন। ও প্রান্ত থেকে বলা হলো, প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন আইজি সাহেবের সঙ্গে। আইজি সাহেবকে খবর দিলেন আমিনুর রহমান। আইজি সাহেবকে প্রেসিডেন্ট মোশতাক বলেছেন, ‘আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা করো।’
চার নেতাকে একত্র করার নির্দেশ আসে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদ কারাগারের এক কক্ষে ছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে অন্য কক্ষ থেকে এখানে আনা হয়। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী পোশাক পাল্টে নেন। তাজউদ্দীন আহমদ কোরআন পড়ছিলেন।
তাঁদের একত্র করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগলে গালিগালাজ করছিল সৈন্যরা।
তাঁদের এক ঘরে আনার পর মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হত্যা করা হয়। সেই অমানিশার আঁধার এখনো কাটেনি।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা।

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১ দিন আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১ দিন আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১ দিন আগেরাজিউল হাসান

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে পশ্চিম আফ্রিকার আরেক দেশ গিনি-বিসাউয়ে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই দুই দেশসহ আফ্রিকার ৯টি দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একটি মহাদেশে মাত্র পাঁচ বছরে এতগুলো অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা কেন ঘটল? কেন গণতন্ত্র এভাবে মার খাচ্ছে আফ্রিকায়?
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কস গ্রুপের বিশ্লেষক বেভারলি ওচিয়েং মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোয় যে অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টাগুলো ঘটছে, তার পেছনে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দুর্বল প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বেসামরিক সরকারকে নিয়ে নাগরিকদের হতাশাসহ নানা কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এসব সমস্যা বেশি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো হলো নাইজার, বেনিন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, ঘানা, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, মালি, আইভরি কোস্ট, টোগো, সিয়েরা লিওন, গিনি-বিসাউ, কেপ ভার্দে, মৌরিতানিয়া ও চাদ। এই দেশগুলো বিশেষভাবে পরিচিত সহিংস ঘটনার জন্য। এর মধ্যে আটলান্টিক সাগর-তীরবর্তী সেনেগাল, গিনি-বিসাউ, সিয়েরা লিওন এবং ভূখণ্ডবেষ্টিত মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারে সহিংসতার খবর বেশি আসে।
নিবিড়ভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার সহিংসতা-প্রবণ এই দেশগুলোয় সামরিক বাহিনী আর রাজনীতি একাকার হয়ে আছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতাও বেশ ভালোভাবে রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যা।
কেবল যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত অক্টোবরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোলিনার পদত্যাগের দাবিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। এই সুযোগে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। পরে প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালান, পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসিত করে। ২০২৩ সালে মধ্য আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন আলী বঙ্গোরই চাচাতো ভাই ব্রাইস অলিগুই। এই অভ্যুত্থান ঘটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলী বঙ্গোকে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই। অভ্যুত্থানের পর ব্রাইস অলিগুইকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে চাদে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মাহামাত ইদ্রিস দেবি। তিনি ক্ষমতা দখলের আগে দেশটির নেতা ছিলেন তাঁরই বাবা। তিনি অবশ্য বাবাকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেননি। বাবার মৃত্যুর পরপরই তিনি ক্ষমতা দখল করেন। আর এর মাধ্যমে তিনি নিজ পরিবারের তিন দশকের শাসন দখলে রেখেছেন। চাদের ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গিনিতে মামাদি দৌমবুয়ার নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য প্রেসিডেন্ট আলফা কনডেকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট আলফা কনডে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানে জেনারেল আবদেল-ফাত্তাহ বুরহানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সরকারপ্রধান ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর আগে ওমর ২৬ বছর দেশটি শাসন করেছেন। মালিতে ২০২০ সাল ও ২০২১ সালে দুই দফা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। বুরকিনা ফাসোয় ২০২২ সালে এবং নাইজারে ২০২৩ সালে অভ্যুত্থান ঘটেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আফ্রিকার দেশগুলোয় এমন সহিংসতা, অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা, দারিদ্র্য, আর্থসামাজিক বঞ্চনার মূল কারণ ব্যাপক হারে দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা। ঘানাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আফ্রোব্যারোমিটার নেটওয়ার্কের একটি জরিপের তথ্য বলছে, আফ্রিকা মহাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতন্ত্রকে বেশি পছন্দ করে। তবে তাদের দেশগুলোয় যেভাবে গণতন্ত্রের চর্চা চলে, সেই পদ্ধতি তাদের পছন্দ নয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত ব্যাপক হারে দুর্নীতি। সমাজে দুর্নীতি গেড়ে বসলে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ব্যাহত হয়। শাসনযন্ত্র যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যর্থতার সুযোগে এমনটা হয়। এ কথা শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই এটি প্রযোজ্য।
সমাজকে যদি আমরা একটি পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার একেবারে নিচের স্তরে থাকে সাধারণ মানুষ। পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের এই অংশটিই সবচেয়ে বড়। শাসনযন্ত্রের যত ওপরে ওঠা হয়, পিরামিড বা ত্রিভুজ তত সরু হতে থাকে। একেবারে চূড়ায় থাকেন শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে পিরামিড বা ত্রিভুজের একেবারে নিচের বৃহৎ স্তরের সদস্যদের, অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা যেখানে নেই, সেখানেও সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা হয়। বলা হয় জনগণই ঠিক করবে রাষ্ট্রে কী ঘটবে। কিন্তু আদতে জনগণের হাতে কিছু থাকে না। তারা কেবল ভোটের দিন নিজের ভোটটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বেশি কিছু করতে পারে না। যে দেশগুলোয় ভোট কারচুপির বা ভোট জালিয়াতির অবাধ চর্চা রয়েছে, সেসব দেশে তো ভোটের দিনও জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হতে পারে না। ভোট দিতে গিয়ে ভোটার দেখেন, তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন।
কিংবা ভোটার ভোট দেন ঠিকই, কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরে থাকে আগেই।
এমন ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোয়ই শাসনযন্ত্র কুক্ষিগত করতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকেরা নানা কৌশল আঁটেন, হাঁটেন দমন-পীড়নের পথে। এই উপসর্গগুলো আফ্রিকার দেশগুলোর রয়েছে। সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠী। দুর্বৃত্তগোষ্ঠীও সক্রিয় এসব দেশে। ফলে সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাব সরাসরি জনগণের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। এ কারণে বেসামরিক সরকারের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারায়। সে সুযোগ নেন ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল।
কিন্তু এমন হওয়া উচিত নয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় শীর্ষে থাকা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর গণতন্ত্রও কিন্তু শতভাগ ত্রুটিহীন নয়। তারপরও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার চেষ্টা এসব দেশে রয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশ তো কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টায় রয়েছে। তারা যদি পারে, তাহলে আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার দেশগুলো কেন পারবে না? আমরা সবাই তো একই গ্রহের মানুষ। দুর্নীতি নামক এ রোগের চিকিৎসা অতীতে সাধারণ মানুষকেই করতে হয়েছে, আজ এবং আগামীতেও সাধারণ মানুষকেই করতে হবে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক আজকের পত্রিকা

বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে পশ্চিম আফ্রিকার আরেক দেশ গিনি-বিসাউয়ে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এই দুই দেশসহ আফ্রিকার ৯টি দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একটি মহাদেশে মাত্র পাঁচ বছরে এতগুলো অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা কেন ঘটল? কেন গণতন্ত্র এভাবে মার খাচ্ছে আফ্রিকায়?
লন্ডনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কস গ্রুপের বিশ্লেষক বেভারলি ওচিয়েং মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোয় যে অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টাগুলো ঘটছে, তার পেছনে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দুর্বল প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বেসামরিক সরকারকে নিয়ে নাগরিকদের হতাশাসহ নানা কারণ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় এসব সমস্যা বেশি।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো হলো নাইজার, বেনিন, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, ঘানা, বুরকিনা ফাসো, সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি, মালি, আইভরি কোস্ট, টোগো, সিয়েরা লিওন, গিনি-বিসাউ, কেপ ভার্দে, মৌরিতানিয়া ও চাদ। এই দেশগুলো বিশেষভাবে পরিচিত সহিংস ঘটনার জন্য। এর মধ্যে আটলান্টিক সাগর-তীরবর্তী সেনেগাল, গিনি-বিসাউ, সিয়েরা লিওন এবং ভূখণ্ডবেষ্টিত মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারে সহিংসতার খবর বেশি আসে।
নিবিড়ভাবে লক্ষ করলেই বোঝা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার সহিংসতা-প্রবণ এই দেশগুলোয় সামরিক বাহিনী আর রাজনীতি একাকার হয়ে আছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতাও বেশ ভালোভাবে রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে আর্থসামাজিক বঞ্চনা, দারিদ্র্যসহ নানা সমস্যা।
কেবল যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতেই অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। গত অক্টোবরে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোলিনার পদত্যাগের দাবিতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়। এই সুযোগে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক বাহিনী। পরে প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালান, পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসিত করে। ২০২৩ সালে মধ্য আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনে সেনাবাহিনী দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করে। অভ্যুত্থানের নেতা ছিলেন আলী বঙ্গোরই চাচাতো ভাই ব্রাইস অলিগুই। এই অভ্যুত্থান ঘটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলী বঙ্গোকে বিজয়ী ঘোষণার পরপরই। অভ্যুত্থানের পর ব্রাইস অলিগুইকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের এপ্রিলে চাদে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল মাহামাত ইদ্রিস দেবি। তিনি ক্ষমতা দখলের আগে দেশটির নেতা ছিলেন তাঁরই বাবা। তিনি অবশ্য বাবাকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেননি। বাবার মৃত্যুর পরপরই তিনি ক্ষমতা দখল করেন। আর এর মাধ্যমে তিনি নিজ পরিবারের তিন দশকের শাসন দখলে রেখেছেন। চাদের ওই ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গিনিতে মামাদি দৌমবুয়ার নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য প্রেসিডেন্ট আলফা কনডেকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এর কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্ট আলফা কনডে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে সংবিধান সংশোধন করেছিলেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানে জেনারেল আবদেল-ফাত্তাহ বুরহানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সরকারপ্রধান ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এর আগে ওমর ২৬ বছর দেশটি শাসন করেছেন। মালিতে ২০২০ সাল ও ২০২১ সালে দুই দফা সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। বুরকিনা ফাসোয় ২০২২ সালে এবং নাইজারে ২০২৩ সালে অভ্যুত্থান ঘটেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, আফ্রিকার দেশগুলোয় এমন সহিংসতা, অভ্যুত্থান কিংবা অভ্যুত্থানচেষ্টা, দারিদ্র্য, আর্থসামাজিক বঞ্চনার মূল কারণ ব্যাপক হারে দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতা। ঘানাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আফ্রোব্যারোমিটার নেটওয়ার্কের একটি জরিপের তথ্য বলছে, আফ্রিকা মহাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতন্ত্রকে বেশি পছন্দ করে। তবে তাদের দেশগুলোয় যেভাবে গণতন্ত্রের চর্চা চলে, সেই পদ্ধতি তাদের পছন্দ নয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত ব্যাপক হারে দুর্নীতি। সমাজে দুর্নীতি গেড়ে বসলে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ব্যাহত হয়। শাসনযন্ত্র যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা ব্যর্থতার সুযোগে এমনটা হয়। এ কথা শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই এটি প্রযোজ্য।
সমাজকে যদি আমরা একটি পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার একেবারে নিচের স্তরে থাকে সাধারণ মানুষ। পিরামিড কিংবা ত্রিভুজের এই অংশটিই সবচেয়ে বড়। শাসনযন্ত্রের যত ওপরে ওঠা হয়, পিরামিড বা ত্রিভুজ তত সরু হতে থাকে। একেবারে চূড়ায় থাকেন শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে পিরামিড বা ত্রিভুজের একেবারে নিচের বৃহৎ স্তরের সদস্যদের, অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা যেখানে নেই, সেখানেও সাধারণ মানুষকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা হয়। বলা হয় জনগণই ঠিক করবে রাষ্ট্রে কী ঘটবে। কিন্তু আদতে জনগণের হাতে কিছু থাকে না। তারা কেবল ভোটের দিন নিজের ভোটটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বেশি কিছু করতে পারে না। যে দেশগুলোয় ভোট কারচুপির বা ভোট জালিয়াতির অবাধ চর্চা রয়েছে, সেসব দেশে তো ভোটের দিনও জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হতে পারে না। ভোট দিতে গিয়ে ভোটার দেখেন, তাঁর ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন।
কিংবা ভোটার ভোট দেন ঠিকই, কিন্তু ব্যালট বাক্স ভরে থাকে আগেই।
এমন ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশগুলোয়ই শাসনযন্ত্র কুক্ষিগত করতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে শাসকেরা নানা কৌশল আঁটেন, হাঁটেন দমন-পীড়নের পথে। এই উপসর্গগুলো আফ্রিকার দেশগুলোর রয়েছে। সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠী। দুর্বৃত্তগোষ্ঠীও সক্রিয় এসব দেশে। ফলে সাধারণ মানুষ একেবারেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাব সরাসরি জনগণের দৈনন্দিন জীবনে পড়ে। এ কারণে বেসামরিক সরকারের ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারায়। সে সুযোগ নেন ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেনারেল।
কিন্তু এমন হওয়া উচিত নয়। গণতান্ত্রিক চর্চায় শীর্ষে থাকা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর গণতন্ত্রও কিন্তু শতভাগ ত্রুটিহীন নয়। তারপরও গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার চেষ্টা এসব দেশে রয়েছে। ইউরোপের কোনো কোনো দেশ তো কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টায় রয়েছে। তারা যদি পারে, তাহলে আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার দেশগুলো কেন পারবে না? আমরা সবাই তো একই গ্রহের মানুষ। দুর্নীতি নামক এ রোগের চিকিৎসা অতীতে সাধারণ মানুষকেই করতে হয়েছে, আজ এবং আগামীতেও সাধারণ মানুষকেই করতে হবে।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
০৩ নভেম্বর ২০২১
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১ দিন আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১ দিন আগেআব্দুর রহমান

একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা। আর সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে।
দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে, তারা এখন চীন ও রাশিয়াকে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। এ জন্য তারা বিকল্প হিসেবে পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত এগিয়ে নিতে তৎপর। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে সামরিক তৎপরতা তারই ইঙ্গিত।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন নিজেকে বিশ্বের দায়িত্বশীল অভিভাবক বলে দাবি করলেও, সেই পুরোনো চরিত্র এবার ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে, তাদের এখনকার জাতীয় স্বার্থ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে একধাপ কম ‘শান্তির প্রতিষ্ঠাতা’, তবে একধাপ বেশি ‘শক্তির স্থপতি’ হয়ে উঠছে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধ তথা পুরো আমেরিকা মহাদেশে ‘মার্কিন প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে চাইছে। এটি করতে গিয়ে তারা মনরো মতবাদকে (Monroe Doctrine) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছে। মনরো মতবাদ হলো, ‘১৮০০ সালের দিকের এক মার্কিন নীতি, যা আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন ও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছিল।’ এই নীতি অনুযায়ী, তারা এখন বিদেশি প্রভাব ঠেকানো ছাড়াও, মাদক ব্যবসা ও অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করার ওপর জোর দেবে এবং ‘বেসরকারীকরণ’কে উৎসাহিত করবে।
‘আমরা এই অঞ্চলের সরকার, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনগুলোকে পুরস্কৃত এবং উৎসাহিত করব, যারা আমাদের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে ব্যাপক অর্থে সংগতিপূর্ণ থাকবে।’ ট্রাম্প ইতিমধ্যেই লাতিন আমেরিকায় রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এবং ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের অধীনে আর্জেন্টাইন অর্থনীতিকে ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে উদ্ধার করে এই কৌশল কার্যকর করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ‘এই-গোলার্ধের বাইরের প্রতিযোগীদের’ পশ্চিম গোলার্ধে ‘সামরিক বা অন্যান্য হুমকিমূলক সক্ষমতা স্থাপন করা কিংবা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অস্বীকার’ করবে। সোজা কথায়, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো শক্তিকেই প্রভাব বিস্তার করতে স্বাগত জানাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পদ পশ্চিম গোলার্ধের দিকে সরিয়ে আনা হবে। এ জন্য আমেরিকান জাতীয় সুরক্ষার কাছে যেসব রণাঙ্গনের আপেক্ষিক গুরুত্ব সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কমে এসেছে, সে সবকে সরিয়ে আনা হবে। এই ধারাবাহিকতায় যেন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মনোযোগ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্য এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত অগ্রাধিকার নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শক্তি উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওপর মনোযোগ দেওয়ার আমেরিকার ঐতিহাসিক কারণ কমে আসবে।’ কারণ এই অঞ্চলে সংঘাত ও সহিংসতাও কমছে। যদিও বলা হয়েছে, ‘সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ এই অবস্থাতেও মার্কিন প্রশাসন এই অঞ্চলের জন্য সোনালি ভবিষ্যতের কল্পনা করছে। ওয়াশিংটনের স্বার্থে আধিপত্য বজায় রাখার পরিবর্তে, মধ্যপ্রাচ্য ‘ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উৎস এবং গন্তব্যে পরিণত হবে’, যার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত। এটি এই অঞ্চলকে ‘অংশীদারত্ব, বন্ধুত্ব এবং বিনিয়োগের স্থান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সহিংসতায় জর্জরিত। গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সেটেলার ও সেনাদের মারাত্মক অভিযান বাড়ছে। ইসরায়েল লেবাননেও বিমান হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দুর্বল হিজবুল্লাহকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করতে দেশটির বিরুদ্ধে আরেকটি সর্বাত্মক হামলার ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের এক বছর পরেও, ইসরায়েলের দক্ষিণে অধিকৃত গোলান মালভূমির বাইরে সামরিক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অনুপ্রবেশ এবং হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থান আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। এই নথি স্বীকার করে যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এখনো রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ইসরায়েল যেন সুরক্ষিত থাকে’ তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি সরবরাহ ও শিপিং লেনগুলো রক্ষা করা।
ট্রাম্পের নতুন নিরাপত্তা কৌশলে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে রাখা হয়নি। এই নথিতে এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চীনকে মোকাবিলায় ভারসাম্য তৈরির জন্য এশীয় মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক (ও অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।’ এর মধ্য দিয়ে একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় সেটি হলো ভারত। আর এ কারণে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ান নিয়ে সংঘাত ঠেকানো’কে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এটি করতে তারা ‘আদর্শগতভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার’ পক্ষে। এটি নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের মার্কিন অংশীদারদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এ কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায়। ওয়াশিংটন ‘ইউরোপকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং এক সারিতে থাকা সার্বভৌম জাতিগুলোর একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে সক্ষম করাকে’ অগ্রাধিকার দেবে।
বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎসও। তিনি বলেছেন, ইউরোপকে এখন নিজের নিরাপত্তা নীতি ও প্রতিরক্ষায় আরও আত্মনির্ভর হতে হবে; যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা রাখা চলবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিরাপত্তা কৌশলে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ এবং ‘আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ’কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই নিরাপত্তা কৌশল দেশটিকে ইরাক-আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার পরিসর তৈরি করলেও, মাদক, অভিবাসন এবং অপরাধ ইস্যুতে সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর সম্ভাব্যতা খুলে রেখেছে। যার প্রথম শিকার হতে পারে ভেনেজুয়েলা।
লেখক: সাংবাদিক

একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা। আর সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে।
দেশটির নীতিনির্ধারণী মহল বুঝতে পেরেছে, তারা এখন চীন ও রাশিয়াকে সরাসরি মোকাবিলা করে পারবে না। এ জন্য তারা বিকল্প হিসেবে পশ্চিম গোলার্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনা ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত এগিয়ে নিতে তৎপর। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে সামরিক তৎপরতা তারই ইঙ্গিত।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন নিজেকে বিশ্বের দায়িত্বশীল অভিভাবক বলে দাবি করলেও, সেই পুরোনো চরিত্র এবার ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে, তাদের এখনকার জাতীয় স্বার্থ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এবং ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের দিকে তাকালে বোঝা যাবে। নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল থেকে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের চেয়ে একধাপ কম ‘শান্তির প্রতিষ্ঠাতা’, তবে একধাপ বেশি ‘শক্তির স্থপতি’ হয়ে উঠছে।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম গোলার্ধ তথা পুরো আমেরিকা মহাদেশে ‘মার্কিন প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করতে চাইছে। এটি করতে গিয়ে তারা মনরো মতবাদকে (Monroe Doctrine) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছে। মনরো মতবাদ হলো, ‘১৮০০ সালের দিকের এক মার্কিন নীতি, যা আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপন ও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছিল।’ এই নীতি অনুযায়ী, তারা এখন বিদেশি প্রভাব ঠেকানো ছাড়াও, মাদক ব্যবসা ও অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করার ওপর জোর দেবে এবং ‘বেসরকারীকরণ’কে উৎসাহিত করবে।
‘আমরা এই অঞ্চলের সরকার, রাজনৈতিক দল এবং আন্দোলনগুলোকে পুরস্কৃত এবং উৎসাহিত করব, যারা আমাদের নীতি ও কৌশলের সঙ্গে ব্যাপক অর্থে সংগতিপূর্ণ থাকবে।’ ট্রাম্প ইতিমধ্যেই লাতিন আমেরিকায় রক্ষণশীল রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে এবং ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের অধীনে আর্জেন্টাইন অর্থনীতিকে ৪০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে উদ্ধার করে এই কৌশল কার্যকর করতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ‘এই-গোলার্ধের বাইরের প্রতিযোগীদের’ পশ্চিম গোলার্ধে ‘সামরিক বা অন্যান্য হুমকিমূলক সক্ষমতা স্থাপন করা কিংবা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলো নিজেদের দখলে নেওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অস্বীকার’ করবে। সোজা কথায়, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো শক্তিকেই প্রভাব বিস্তার করতে স্বাগত জানাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পদ পশ্চিম গোলার্ধের দিকে সরিয়ে আনা হবে। এ জন্য আমেরিকান জাতীয় সুরক্ষার কাছে যেসব রণাঙ্গনের আপেক্ষিক গুরুত্ব সাম্প্রতিক দশকগুলোতে কমে এসেছে, সে সবকে সরিয়ে আনা হবে। এই ধারাবাহিকতায় যেন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মনোযোগ কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে।
কারণ, মধ্যপ্রাচ্য এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত অগ্রাধিকার নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নিজের শক্তি উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওপর মনোযোগ দেওয়ার আমেরিকার ঐতিহাসিক কারণ কমে আসবে।’ কারণ এই অঞ্চলে সংঘাত ও সহিংসতাও কমছে। যদিও বলা হয়েছে, ‘সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ এই অবস্থাতেও মার্কিন প্রশাসন এই অঞ্চলের জন্য সোনালি ভবিষ্যতের কল্পনা করছে। ওয়াশিংটনের স্বার্থে আধিপত্য বজায় রাখার পরিবর্তে, মধ্যপ্রাচ্য ‘ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উৎস এবং গন্তব্যে পরিণত হবে’, যার মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্তর্ভুক্ত। এটি এই অঞ্চলকে ‘অংশীদারত্ব, বন্ধুত্ব এবং বিনিয়োগের স্থান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও সহিংসতায় জর্জরিত। গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সেটেলার ও সেনাদের মারাত্মক অভিযান বাড়ছে। ইসরায়েল লেবাননেও বিমান হামলা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দুর্বল হিজবুল্লাহকে বলপূর্বক নিরস্ত্র করতে দেশটির বিরুদ্ধে আরেকটি সর্বাত্মক হামলার ভয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের এক বছর পরেও, ইসরায়েলের দক্ষিণে অধিকৃত গোলান মালভূমির বাইরে সামরিক আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অনুপ্রবেশ এবং হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে ইসরায়েলের ব্যাপারে মার্কিন অবস্থান আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। এই নথি স্বীকার করে যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এখনো রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘ইসরায়েল যেন সুরক্ষিত থাকে’ তা নিশ্চিত করা এবং জ্বালানি সরবরাহ ও শিপিং লেনগুলো রক্ষা করা।
ট্রাম্পের নতুন নিরাপত্তা কৌশলে বেইজিংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে রাখা হয়নি। এই নথিতে এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জেতা এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চীনকে মোকাবিলায় ভারসাম্য তৈরির জন্য এশীয় মিত্রদের সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারতকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক মহাসাগরীয় অঞ্চল সুরক্ষায় আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক (ও অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।’ এর মধ্য দিয়ে একটি ইঙ্গিত স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় সেটি হলো ভারত। আর এ কারণে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোর সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘তাইওয়ান নিয়ে সংঘাত ঠেকানো’কে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এটি করতে তারা ‘আদর্শগতভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার’ পক্ষে। এটি নিশ্চিত করতে এই অঞ্চলের মার্কিন অংশীদারদের সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
এ কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চায়। ওয়াশিংটন ‘ইউরোপকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং এক সারিতে থাকা সার্বভৌম জাতিগুলোর একটি গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে সক্ষম করাকে’ অগ্রাধিকার দেবে।
বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎসও। তিনি বলেছেন, ইউরোপকে এখন নিজের নিরাপত্তা নীতি ও প্রতিরক্ষায় আরও আত্মনির্ভর হতে হবে; যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা রাখা চলবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিরাপত্তা কৌশলে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ এবং ‘আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ’কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই নিরাপত্তা কৌশল দেশটিকে ইরাক-আফগানিস্তানের মতো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ থেকে বিরত রাখার পরিসর তৈরি করলেও, মাদক, অভিবাসন এবং অপরাধ ইস্যুতে সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর সম্ভাব্যতা খুলে রেখেছে। যার প্রথম শিকার হতে পারে ভেনেজুয়েলা।
লেখক: সাংবাদিক

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
০৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১ দিন আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১ দিন আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের ছায়া। ১৯৫২ সালে লাহোরের সম্ভ্রান্ত পশতুন পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই মানুষটি নিজের প্রতিভা, দৃঢ়সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে ক্রীড়া জগতের যে উচ্চশিখর স্পর্শ করেছিলেন, তা চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু শুধু মাঠের সীমাবদ্ধতায় তাঁকে বন্দী রাখা সম্ভব হয়নি। ক্রিকেটের পরিপূর্ণতা ছাড়িয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতির জটিল রাজপথে—যেখানে স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সংকল্পের সঙ্গে মিশে থাকে গণমানুষের আশা। খেলাধুলায় অর্জিত বিজয়ী মনোভাব এবং সাফল্যের জ্যোতি তাঁকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি শুধু একজন নেতা নন; তিনি হলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, সংস্কারক এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক—যিনি বিশ্বাস করতেন যে গণমানুষের শক্তিই সমাজের মূলচাকা। তাঁর জন্মভূমির ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং সংগ্রামের প্রভাব তাঁকে এমন এক চরিত্রে গড়ে তুলেছিল, যেখানে খেলাধুলার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের অস্থিরতাকে একসঙ্গে বহন করা সম্ভব হয়।
ইমরানের জীবন যেন এক জীবন্ত গল্প—মাঠের উচ্ছ্বাস এবং সাফল্যের উজ্জ্বলতা থেকে রাজনৈতিক নিপীড়নের করুণতম অধ্যায়। এই দ্বৈত পরিসরেই তিনি থাকলেন সংগ্রামের প্রতি অদম্য ধৈর্য ধারণ করে। ইমরান খানের ক্রীড়াজীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। তিনি তখন ছিলেন এক যুবক, যাঁর প্রতিভা, উৎসাহ ও অদম্য মনোবল তাঁকে ক্রিকেট জগতের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। মাঠে তাঁর উপস্থিতি শুধু বল ও ব্যাটের কৌশলের সমষ্টি ছিল না; এটি ছিল নেতৃত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বিজয় এনে দেওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। সেই জয়ের মাধ্যমে ইমরান শুধু জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেননি, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবেও অভিষিক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বের শৈলী, দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামলানোর দক্ষতা সমকালীন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটের উৎকর্ষই তাঁর জীবনের একমাত্র পরিমাপ নয়। খেলার পরিপূর্ণতা ছেড়ে তিনি মনোনিবেশ করেন মানবসেবায়। তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়; এটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মূলত সাধারণ মানুষের অনুদানের মাধ্যমে, আর এটি তাঁর সহানুভূতি, মানবিকতা এবং নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে ওঠে।
ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় যখন তিনি রাজনীতির জটিল পথে পা রাখেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি ছিল রাজনৈতিক মঞ্চের এক প্রান্তিক দল, কিন্তু ২০১০-এর দশকে হঠাৎ করেই এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুর্নীতির বিরোধিতা, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র—এই তিনটি মূল স্লোগান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মানুষের মনে নতুন আশা, নতুন বিশ্বাস এবং ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেন, তিনি ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়বেন। কিন্তু শাসনকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে আসে চ্যালেঞ্জের একটি বিশাল পাহাড়—অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, ঋণ এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের চাপ। কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা সহজ ছিল না। সেনা এবং ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য এবং এই দ্বন্দ্ব ক্রমে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাকে আরও জটিল করে তোলে।
২০২২ সাল থেকে শুরু হয় ইমরানের পতন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অবনতি, একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তার এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারে বন্দিত্ব—সবই একটি কঠোর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। অনেকের কাছে মনে হয়, এসব ঘটনা শুধু আইনের প্রয়োগ নয়; বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর প্রমাণ। এমন অবস্থায়, ইমরান খানের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইমরান খান একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক নেতা হলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল গভীর, বিশ্লেষণধর্মী ও মানবিক। তিনি শুধু ক্ষমতা বা জনপ্রিয়তার পেছনে দৌড়াননি; বরং প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং আলোচনায় যুক্তি ও সংবেদনশীলতার সমন্বয় ঘটাতেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে সাধারণ রাজনীতিকের চেয়ে আলাদা করত—একজন মানুষ যিনি চিন্তা, অনুভূতি এবং নৈতিক দৃঢ়তার সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়াতে পারতেন। ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়কে গভীর দ্বন্দ্ব ও বিরোধের গল্প বলা যায়। অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনের চ্যালেঞ্জ, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান—সবকিছুর মাঝেও তিনি ক্রমেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই দ্বন্দ্ব ছিল শুধু রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের শাসনকাঠামোর সঙ্গে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃঢ়তার সংঘর্ষ।
২০২৩ সালে তিনি কারাগারে বন্দী হন। তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা বন্ধ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—সবকিছু এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যেন তিনি সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় বলা যেতে পারে।
ইমরানের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয় জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথা—যিনি সেনা ও ক্ষমতার শক্তিশালী ছায়ার ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল্য দিতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ইমরানও সেই ইতিহাসের ছায়ায়, সেই একই চক্রের শিকার হয়েছেন বলে মনে হয়। কিন্তু এখানেই এক গভীর পাঠ নিহিত—যে সাহস, ন্যায় ও বিশ্বাসের জন্য সংগ্রাম করা যায়, তা কখনো ম্লান হয় না। ইমরান খানের জীবন তাই শুধু রাজনৈতিক বিবরণ নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক সাহসের, নৈতিকতার এবং অনমনীয় বিশ্বাসের অমর শিক্ষা হতে পারে।
এটি আমাদের আগামী প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়, তবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসই চিরকাল গৌরবময়। ইমরানের জীবন তাই শুধুই ইতিহাস নয়; এটি সতর্কতা, প্রেরণা এবং অবিচল বিশ্বাসের এক অমর উদাহরণ।
লেখক: আইনজীবী ও গবেষক

ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের ছায়া। ১৯৫২ সালে লাহোরের সম্ভ্রান্ত পশতুন পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই মানুষটি নিজের প্রতিভা, দৃঢ়সংকল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে ক্রীড়া জগতের যে উচ্চশিখর স্পর্শ করেছিলেন, তা চোখে পড়ার মতোই। কিন্তু শুধু মাঠের সীমাবদ্ধতায় তাঁকে বন্দী রাখা সম্ভব হয়নি। ক্রিকেটের পরিপূর্ণতা ছাড়িয়ে তিনি প্রবেশ করলেন রাজনীতির জটিল রাজপথে—যেখানে স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং সংকল্পের সঙ্গে মিশে থাকে গণমানুষের আশা। খেলাধুলায় অর্জিত বিজয়ী মনোভাব এবং সাফল্যের জ্যোতি তাঁকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি শুধু একজন নেতা নন; তিনি হলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, সংস্কারক এবং পুনর্জাগরণের প্রতীক—যিনি বিশ্বাস করতেন যে গণমানুষের শক্তিই সমাজের মূলচাকা। তাঁর জন্মভূমির ঐতিহ্য, শিক্ষা এবং সংগ্রামের প্রভাব তাঁকে এমন এক চরিত্রে গড়ে তুলেছিল, যেখানে খেলাধুলার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের অস্থিরতাকে একসঙ্গে বহন করা সম্ভব হয়।
ইমরানের জীবন যেন এক জীবন্ত গল্প—মাঠের উচ্ছ্বাস এবং সাফল্যের উজ্জ্বলতা থেকে রাজনৈতিক নিপীড়নের করুণতম অধ্যায়। এই দ্বৈত পরিসরেই তিনি থাকলেন সংগ্রামের প্রতি অদম্য ধৈর্য ধারণ করে। ইমরান খানের ক্রীড়াজীবনের পথচলা শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। তিনি তখন ছিলেন এক যুবক, যাঁর প্রতিভা, উৎসাহ ও অদম্য মনোবল তাঁকে ক্রিকেট জগতের নতুন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। মাঠে তাঁর উপস্থিতি শুধু বল ও ব্যাটের কৌশলের সমষ্টি ছিল না; এটি ছিল নেতৃত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। ১৯৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে বিজয় এনে দেওয়া তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত। সেই জয়ের মাধ্যমে ইমরান শুধু জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেননি, তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল প্রতীক হিসেবেও অভিষিক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বের শৈলী, দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সামলানোর দক্ষতা সমকালীন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে থাকবে। কিন্তু ক্রিকেটের উৎকর্ষই তাঁর জীবনের একমাত্র পরিমাপ নয়। খেলার পরিপূর্ণতা ছেড়ে তিনি মনোনিবেশ করেন মানবসেবায়। তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত শওকত খানুম মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়; এটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর গভীর সংযোগের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে মূলত সাধারণ মানুষের অনুদানের মাধ্যমে, আর এটি তাঁর সহানুভূতি, মানবিকতা এবং নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে ওঠে।
ইমরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় যখন তিনি রাজনীতির জটিল পথে পা রাখেন। ১৯৯৬ সালে তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি ছিল রাজনৈতিক মঞ্চের এক প্রান্তিক দল, কিন্তু ২০১০-এর দশকে হঠাৎ করেই এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দুর্নীতির বিরোধিতা, জাতীয় মর্যাদা এবং ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র—এই তিনটি মূল স্লোগান নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মানুষের মনে নতুন আশা, নতুন বিশ্বাস এবং ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা দেন, তিনি ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়বেন। কিন্তু শাসনকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সামনে আসে চ্যালেঞ্জের একটি বিশাল পাহাড়—অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি, ঋণ এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের চাপ। কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা সহজ ছিল না। সেনা এবং ‘ডিপ স্টেট’-এর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে ওঠে অনিবার্য এবং এই দ্বন্দ্ব ক্রমে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাকে আরও জটিল করে তোলে।
২০২২ সাল থেকে শুরু হয় ইমরানের পতন। অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অবনতি, একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তার এবং শেষ পর্যন্ত কারাগারে বন্দিত্ব—সবই একটি কঠোর রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। অনেকের কাছে মনে হয়, এসব ঘটনা শুধু আইনের প্রয়োগ নয়; বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার এক সূক্ষ্ম কিন্তু গভীর প্রমাণ। এমন অবস্থায়, ইমরান খানের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়। ইমরান খান একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক নেতা হলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল গভীর, বিশ্লেষণধর্মী ও মানবিক। তিনি শুধু ক্ষমতা বা জনপ্রিয়তার পেছনে দৌড়াননি; বরং প্রতিটি বিষয়কে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং আলোচনায় যুক্তি ও সংবেদনশীলতার সমন্বয় ঘটাতেন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁকে সাধারণ রাজনীতিকের চেয়ে আলাদা করত—একজন মানুষ যিনি চিন্তা, অনুভূতি এবং নৈতিক দৃঢ়তার সঙ্গে রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়াতে পারতেন। ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবনের এক অধ্যায়কে গভীর দ্বন্দ্ব ও বিরোধের গল্প বলা যায়। অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনের চ্যালেঞ্জ, ভারতের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির আকাঙ্ক্ষা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান—সবকিছুর মাঝেও তিনি ক্রমেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এই দ্বন্দ্ব ছিল শুধু রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার লড়াই নয়; এটি ছিল রাষ্ট্রের শাসনকাঠামোর সঙ্গে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও নৈতিক দৃঢ়তার সংঘর্ষ।
২০২৩ সালে তিনি কারাগারে বন্দী হন। তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা বন্ধ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন—সবকিছু এমনভাবে পরিচালিত হয়েছে যেন তিনি সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় বলা যেতে পারে।
ইমরানের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয় জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথা—যিনি সেনা ও ক্ষমতার শক্তিশালী ছায়ার ওপর দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল্য দিতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ইমরানও সেই ইতিহাসের ছায়ায়, সেই একই চক্রের শিকার হয়েছেন বলে মনে হয়। কিন্তু এখানেই এক গভীর পাঠ নিহিত—যে সাহস, ন্যায় ও বিশ্বাসের জন্য সংগ্রাম করা যায়, তা কখনো ম্লান হয় না। ইমরান খানের জীবন তাই শুধু রাজনৈতিক বিবরণ নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক সাহসের, নৈতিকতার এবং অনমনীয় বিশ্বাসের অমর শিক্ষা হতে পারে।
এটি আমাদের আগামী প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে ক্ষমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়, তবে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর সাহসই চিরকাল গৌরবময়। ইমরানের জীবন তাই শুধুই ইতিহাস নয়; এটি সতর্কতা, প্রেরণা এবং অবিচল বিশ্বাসের এক অমর উদাহরণ।
লেখক: আইনজীবী ও গবেষক

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
০৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১ দিন আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১ দিন আগে
বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে একেবারেই শ্রদ্ধা করেন না, এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান যে ধোঁয়াশায় ঘেরা, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পাওয়া মানুষেরা আজকাল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, নারী মুক্তি নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করে চলেছেন, তাতে দেশের গতি উল্টো দিকে বহমান কি না, সে প্রশ্ন মনে জাগতে বাধ্য।
চেষ্টা হয়েছে আগেও, কিন্তু বিজয়ের মাসে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা যেন বেড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে টকশোর মধ্যে এমন কাউকে কাউকে এমন কিছু কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের স্বাধীনতা-ভাবনাটিকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কেন এইসব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রমাণহীন কটাক্ষ করা মানুষদের জায়গা করে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার। স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা, স্বাধীনতা মানে সত্য-মিথ্যা সবকিছু সেরদরে বলার স্বাধীনতা নয়—এ কথা যারা বুঝতে অক্ষম, তাদেরই আস্ফালন দেখা যাচ্ছে বেশি। এখনই সতর্ক না হলে এই ভণ্ড-প্রতারকের দল গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারে সয়লাব করে দিতে পারে দেশ।
কারও চাপিয়ে দেওয়া বয়ানে স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নানা তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই স্বাধীনতার ইতিহাস লিখিত হবে। কে কোথায় কার নামে কটাক্ষ করল, আর সেটাই হয়ে উঠল স্বাধীনতার ইতিহাস—এ কথা যারা ভাবে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই। এমন একটি দেশ গড়ে উঠবে, যে দেশে শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না। নিজের হাতেই থাকবে নিজের নির্ভরতার চাবি। স্বাধীনতার পর সে আশা পূরণ হয়নি বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুর্গন্ধযুক্ত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানি মনোভাব পোষণ করে, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে?
আর বেগম রোকেয়া? নারী মুক্তির বিপক্ষে যারা দাঁড়ায়, তারা এই মহীয়সী নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেই থাকে। এটা আজকের ব্যাপার নয়। নারীকে যারা পুরুষের সম্পত্তি বলে মনে করে থাকে, তারা উদার দৃষ্টিতে মানুষের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে অপারগ। কথা বলার স্বাধীনতা থাকায় এরা মুক্তকচ্ছ শব্দাবলি উচ্চারণ করে যাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে, নারী মুক্তি প্রসঙ্গে কেউ যদি কটাক্ষ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
এসব উদ্ভট প্রসঙ্গ তুলে এনে যারা নিজেদের লাইমলাইটে আনতে চায়, তাদের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী, সেটা প্রকাশ করা জরুরি। কারণ, সরকার যদি এ ধরনের অন্যায্য, প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে না দাঁড়ায়, তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারি ভাষ্য জানা দরকার।

বেগম রোকেয়া সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন যিনি, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। জগৎ-সংসার সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ধ্যান-ধারণারই প্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। তিনি যে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে একেবারেই শ্রদ্ধা করেন না, এবং নারীর মর্যাদা রক্ষা করার ব্যাপারে তাঁর অবস্থান যে ধোঁয়াশায় ঘেরা, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পাওয়া মানুষেরা আজকাল মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে, নারী মুক্তি নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করে চলেছেন, তাতে দেশের গতি উল্টো দিকে বহমান কি না, সে প্রশ্ন মনে জাগতে বাধ্য।
চেষ্টা হয়েছে আগেও, কিন্তু বিজয়ের মাসে এসে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা যেন বেড়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে টকশোর মধ্যে এমন কাউকে কাউকে এমন কিছু কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, যা আমাদের স্বাধীনতা-ভাবনাটিকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে। কেন এইসব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রমাণহীন কটাক্ষ করা মানুষদের জায়গা করে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার। স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা, স্বাধীনতা মানে সত্য-মিথ্যা সবকিছু সেরদরে বলার স্বাধীনতা নয়—এ কথা যারা বুঝতে অক্ষম, তাদেরই আস্ফালন দেখা যাচ্ছে বেশি। এখনই সতর্ক না হলে এই ভণ্ড-প্রতারকের দল গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারে সয়লাব করে দিতে পারে দেশ।
কারও চাপিয়ে দেওয়া বয়ানে স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না। কিন্তু দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নানা তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই স্বাধীনতার ইতিহাস লিখিত হবে। কে কোথায় কার নামে কটাক্ষ করল, আর সেটাই হয়ে উঠল স্বাধীনতার ইতিহাস—এ কথা যারা ভাবে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই। এমন একটি দেশ গড়ে উঠবে, যে দেশে শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না। নিজের হাতেই থাকবে নিজের নির্ভরতার চাবি। স্বাধীনতার পর সে আশা পূরণ হয়নি বটে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে পাকিস্তানের ২৩ বছরের দুর্গন্ধযুক্ত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা এই স্বাধীন বাংলাদেশে বসে পাকিস্তানি মনোভাব পোষণ করে, তাদের ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কী-ইবা করার আছে?
আর বেগম রোকেয়া? নারী মুক্তির বিপক্ষে যারা দাঁড়ায়, তারা এই মহীয়সী নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতেই থাকে। এটা আজকের ব্যাপার নয়। নারীকে যারা পুরুষের সম্পত্তি বলে মনে করে থাকে, তারা উদার দৃষ্টিতে মানুষের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে অপারগ। কথা বলার স্বাধীনতা থাকায় এরা মুক্তকচ্ছ শব্দাবলি উচ্চারণ করে যাচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে, নারী মুক্তি প্রসঙ্গে কেউ যদি কটাক্ষ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
এসব উদ্ভট প্রসঙ্গ তুলে এনে যারা নিজেদের লাইমলাইটে আনতে চায়, তাদের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা কী, সেটা প্রকাশ করা জরুরি। কারণ, সরকার যদি এ ধরনের অন্যায্য, প্রতিক্রিয়াশীল আচরণের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে না দাঁড়ায়, তাহলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারি ভাষ্য জানা দরকার।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের অধিকাংশই ৬ দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এই প্রবল বিরোধিতার সময়ই সম্ভবত আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমরা সামনের সারির নেতা হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পাই।
০৩ নভেম্বর ২০২১
বেনিন পশ্চিম আফ্রিকার ফরাসিভাষী একটি দেশ। ৭ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন একদল সেনাসদস্য। তাঁরা ঘোষণা দেন, দেশে অভ্যুত্থান ঘটেছে। যদিও ঘণ্টাখানেক পর সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা আসে, বিপথগামী সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১ দিন আগে
একুশ শতকের শুরু থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতির পট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ক্রমেই বহু মেরুকরণ বিশ্বের ধারণা জোরালো হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের একাধিপত্য খর্ব হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের শেষ প্রকল্প হলো—তথাকথিত ‘নিজ আঙিনা’ কাবু করা।
১ দিন আগে
ইমরান খানকে বোঝার জন্য তাঁকে শুধু একজন ক্রিকেটার বা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। তাঁর জীবন যেন একপ্রকার দ্বৈত পরিসর—একদিকে বলের তীব্র গতি, মাঠের উচ্ছ্বাস এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো; অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক মঞ্চের অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র এবং ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ ইতিহাসের...
১ দিন আগে