Ajker Patrika

ফেসবুক রণক্ষেত্র নয়, রক্ষাকর্তাও নয়

বিধান রিবেরু
ফেসবুক রণক্ষেত্র নয়, রক্ষাকর্তাও নয়

মুখপুস্তক বা ফেসবুক আমাদের জনগোষ্ঠীর মনের অবস্থা বোঝার ক্ষুদ্র জানালা হলেও অগুরুত্বপূর্ণ নয়। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার-এক্স বা থ্রেডস নয়, এ দেশের আমজনতার কাছে জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। তারা এর ভেতর দিয়ে নিজেকে অবিরত প্রকাশ করে, আবার খবরাখবরও সংগ্রহ করে, অর্থাৎ তথ্য আদান-প্রদান করে। এই তথ্য ভুল কি সঠিক, সেই বিবেচনা আমাদের ব্যবহারকারীদের কম। তারা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু সর্বোচ্চ বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করছে না তথ্য গ্রহণ-বর্জনের ক্ষেত্রে। যে কারণে ফেসবুকে মিথ্যা খবর প্রচার করে বেশ ফল পাওয়া যায়। গুজব, বানোয়াট তথ্য, সাম্প্রদায়িক উসকানি, রাজনৈতিক মতাদর্শ দিয়ে অন্যকে ঘায়েল করা, কুৎসা রটান, ঘৃণা ছড়ান, এমনকি অর্ধসত্যকে সম্পূর্ণ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কাজটাও সংঘটিত হয় ফেসবুকে। এটা প্রযুক্তির সমস্যা নয়, প্রযুক্তি যে ব্যবহার করছে, তার সংকট। সভ্যতার সংকট।

অনেক সময় দেখা যায় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ গুটিকয়েক ব্যবহারকারীর জন্য এমন দিকে চলে যায়, যাতে ওই আলাপটি মূল বিষয় থেকে সরে যায় অনেক দূরে। জটিল বিষয়কে আবার অনেকে এতটা সরল করে উপস্থাপন করেন, যাতে বিষয়টি জনসাধারণের কাছে উপস্থাপিত হয় ভুলভাবে। যেহেতু অধিকাংশ ব্যবহারকারী বিষয় সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে পোস্ট দেন না, বেশির ভাগ সময়ই অন্যদের পোস্ট পড়ে অথবা ঘটনার উপরিভাগ দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান এবং নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে ফেলেন, তাই মূল ঘটনা ও তার বোঝাপড়ার ভেতর বিস্তর ফারাক তৈরি হয়। আর এটাই বাজে প্রভাব ফেলে অন্যদের ওপর।

সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্বাপর দেখে মনে হচ্ছে কয়েক হাজার সাইবার যোদ্ধা অক্লান্ত কাজ করে চলেছে ফেসবুকে। এদের ভেতর মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পোস্ট তৈরি করার প্রবণতা যেমন আছে, তেমনি আছে বিভিন্ন ধরনের মিম তৈরি করে প্রতিপক্ষকে হেয়প্রতিপন্ন করা বা ঘায়েল করার মিশন। এসব নানামুখী অ্যাজেন্ডার ভিড়ে সাধারণ ব্যবহারকারীরা ওসব মিশনের অংশ হয়ে পড়েন। তাঁরাও প্রপাগান্ডা খেলায় শামিল হয়ে যান নিজের অজান্তেই। অবশ্য পুরোটাই যে অজান্তে হন, তা-ও নয়, তাঁদেরও রাজনৈতিক অবস্থান থাকে। যাঁরা প্রপাগান্ডার অংশ হন তাঁদের ভেতর একাংশ আবার স্রেফ ‘মজা নেওয়া’র উদ্দেশ্যে নানাবিধ পোস্ট শেয়ার ও রিপোস্ট করেন। এটা অবশ্য তাঁদের অচেতন মনেরই পরিচয় বহন করে।

তো ফেসবুক এখন এমন এক জায়গায় চলে গেছে যে বিয়ের পাত্র-পাত্রী বলি কিংবা চাকরিপ্রত্যাশী—সবার ক্ষেত্রেই চরিত্র সনদ দিয়ে থাকে ফেসবুকের টাইমলাইন। ঠিক এই কারণেই আবার অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাঁরা চান না তাঁদের অন্দরমহলের খবর অন্য কেউ পড়ে ফেলুক। প্রশ্ন হলো, তাহলে লোকজন ফেসবুকে পোস্ট দেন কেন? দেন কারণ তাঁরা চান তাঁদের কথা কেউ না কেউ শুনুক। শুধু শুনবে না, কেউ না কেউ তাঁর মতামতকে সমর্থন দিক। বাহবা দিক।

একজন যখন ফেসবুকে পোস্ট দেন, তখন তাঁর মনের ভেতর বাসনা থাকে তাঁর আদর্শে বিশ্বাসী কারও সঙ্গে তিনি যুক্ত হবেন। এবং তাঁর মতামত যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা শোনার ভেতর দিয়ে তাঁর চিন্তার অনুমোদন আদায় হবে। অনেকে নিজের নাম উজ্জ্বল করার নিমিত্তেও পোস্ট দেন, অনেকে আবার লাইক-শেয়ার-কমেন্টের লোভ সামলাতে না পেরে যা-তা পোস্ট দিতে থাকেন রাতদিন।

পত্রিকায় দেখেছি ‘ডাটা রিপোর্টালে’র জরিপ অনুযায়ী ২০২৪ সালের শুরুতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা গোটা জনগোষ্ঠীর ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ। সংখ্যাটি কিন্তু অনেক বড়। এত মানুষ যেহেতু এটি ব্যবহার করে, তাই না চাইলেও এর গুরুত্ব বেড়ে যায় কয়েক শ গুণ। এইসব ব্যবহারকারীর ভেতর কতজন শিক্ষিত, তা নিয়ে স্বতন্ত্র জরিপ হতে পারে। তবে ফেসবুকের মাধ্যমে যে ধরনের পোস্ট ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্ট বা রিলস তৈরি হয়, সেগুলোর অধিকাংশই নিম্ন রুচির পরিচয় বহন করে।

ফেসবুকে যে কেবল নেতিবাচক ঘটনাই ঘটে, তা নয়। কেউ কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক চর্চার পথকে প্রশস্ত করেন। কেউ সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ মত তুলে ধরেন। গঠনমূলক পোস্ট দেন। সেগুলো যদিও সংখ্যায় কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো ঘটনা ঘটলে বায়বীয় ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নেমে যায় একদল মানুষ, তারপর তারা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে নানা ধরনের কুতর্কের দোকান খুলে বসে।

ইদানীং একদল ব্যবহারকারী সৃষ্টি হয়েছে, যারা পরমাণুবিজ্ঞান থেকে মহাকাশবিজ্ঞান, রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, কবিতা থেকে চলচ্চিত্র—সর্ব বিষয়ে পারদর্শী। কোন বিষয়ে তার কথা বলা সাজে, কোন বিষয়ে সাজে না বা কোন ব্যাপারে কথা বলা অনুচিত, এসব ঔচিত্যবোধ তাদের ভেতর কাজ করে না। যেন ফেসবুক মানেই হলো হরেদরে সব বিষয়ে নিজের মত জাহির করার উৎকৃষ্ট স্থান। এখন হোক সেই মত যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কিংবা উৎকট।

আপনার দ্বিমত থাকতে পারে। তৃতীয় মতও থাকবে। সবার সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে না। কারও পোস্টের মন্তব্যে সেই ভিন্নমত প্রকাশেও প্রয়োজন ভদ্রতা ও বিনয়। অনেকেই দেখবেন অযাচিতভাবে আক্রমণ করে বসেন। এতে বোঝা যায় ফেসবুক ব্যবহারের রীতি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। বলতে পারেন ব্লক করার অপশন তো রয়েছে। সেটা তো রইলই শেষ হাতিয়ার হিসেবে, কিন্তু মানুষ সভ্য আচরণ করবে না কেন? ফেসবুকে যে মানুষটি অন্যের বিরুদ্ধে চরম বাজে কথা বলছে, অন্যের পোস্টে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছে, সেই লোকটিই কিন্তু সভ্য দুনিয়ার সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ফেসবুক ‘চালাচ্ছে’, সে কেমন করে এমন অসভ্য আচরণ করে? আমার ধারণা, আমরা সার্বিকভাবে গণতন্ত্রচর্চা থেকে সরে গিয়েছি বলেই অন্যের মত বা পথের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারি না। সঠিক যুক্তিও উপস্থাপন করতে পারি না, ব্যক্তি আক্রমণ করে বসি। সবচেয়ে বড় কথা ‘চুপ’ থাকতে পারি না। অনেক সময় চুপ থাকাটাও তো প্রতিবাদ! বাচালের মতো সব জায়গায় বকবক করতে হবে কেন? তবে হ্যাঁ, অনেক সময় পুরোনো কথাও মানুষকে বারবার বলতে হয়, যদি সেই যৌক্তিক কথা ধীরে ধীরে দাবিতে রূপ নেয়, তাহলে সেটা আন্দোলিত করতে পারে কোটি হৃদয়। সে ক্ষেত্রে আপনার পোস্ট হয়ে উঠতে পারে সার্থক প্রচেষ্টা।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করে পোস্ট দিলে কারও না কারও বিরুদ্ধে যাবে, এটা ঠিক। এসব ক্ষেত্রে আপনাকে সাহস সঞ্চয় করে লিখে উঠতে হবে। অনেক উদাহরণ রয়েছে, ফেসবুকে লেখালেখির কারণেই সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই মাধ্যমটির ক্ষমতা তো রয়েছে, এ কারণে এর অপব্যবহারও কম নয়। অহরহই দেখবেন ফেসবুকে তাই ফাঁদ পাতা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদী ফাঁদ। প্রতিহিংসার ফাঁদ। তাই চট করে কিছু বিশ্বাস করে পোস্ট দিয়ে বসা অনুচিত। এমনিতেই বাস্তব জীবনে মানুষ প্রচণ্ড চাপে থাকে, তাকে আর চাপে ফেলার দরকার নেই। আমি জানি, ফেসবুকে ক্ষোভ ঝেড়ে মানুষ হয় তো শান্তি পেতে চায়, কিন্তু এটা শান্তি প্রাপ্তির সঠিক পথ নয়। বরং উল্টো, স্ক্রিন টাইম কমিয়ে, ফেসবুকে সময় কম ব্যয় করে যদি বই পড়া যায়, যদি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়, সেটাই বরং আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে। ভার্চুয়াল দুনিয়ার এই ফেসবুক দিয়ে মন শান্ত করা যাবে না। মনে রাখা ভালো, ফেসবুক রণক্ষেত্র নয়, রক্ষাকর্তাও নয়। এখানে জান ও প্রাণ ক্ষয় করার মানে নেই। একান্ত যদি ফেসবুক ব্যবহার করতেই হয় তাহলে এমন পোস্ট দেওয়া উচিত, যাতে অন্য অস্থির হৃদয় সেটা দেখে কিছুটা সুস্থির হয়। সৃজনশীল ও চিন্তাশীল বিষয় উপস্থাপনের ভেতর দিয়ে যদি ফেসবুক ব্যবহার করা যায়, তাতে আমি মনে করি সব দিকই রক্ষা পায়। আমার মতে সংকটের একটাই নিদান, মুখপুস্তকের বদলে মুখের সামনে পুস্তক ধরে পড়তে শুরু করা। তাহলেই মনের জানালা আরও অবারিত হবে। মন বড় হলে আমরা অপরের প্রতি সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠব।

লেখক: বিধান রিবেরু

প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আ. লীগকে যে পরামর্শ দিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেভাবে তুলে ধরল বিশ্ব গণমাধ্যম

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আইজিপির ৫ বছরের জেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে চালের বস্তায় পিস্তল, বুলেট ও ককটেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়...

সম্পাদকীয়
কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়...

সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমার ‘কত রঙ্গ দেখি দুনিয়ায় ভাই রে’ গানটি অনেকের মনে থাকার কথা। গানটির মর্মার্থ হলো, জীবনে নানা ধরনের অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, যা দেখে অবাক হতে হয়, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। আজকের পত্রিকায় ১৩ নভেম্বর ‘উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই ঠিকাদার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আলোচ্য গানের একটা মিল আছে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ছয়টি প্রকল্পের প্রায় ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজ সম্পন্ন করে পরবর্তী সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেছেন। এ ‘রঙ্গ’ নয় তো কী!

ঘটনাটি ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের। আমাদের কাছে সময়ের ব্যাপ্তিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশে নতুন ধরনের একটি সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এ সময়ে অতীতের মতো কিছু ঘটবে না। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা যে ভেঙে গেছে, এ ঘটনা তার উদাহরণ হতে পারে।

পেছনে শক্তিশালী কেউ না থাকলে যেকোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অপরাধ করতে পারেন না বলে আমরা ধরে নিতে পারি। আমাদের দেশে অহরহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অপরাধ করার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তাঁদের সেভাবে কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হয় না।

অনিয়ম করে সরকারি টাকা এভাবে আত্মসাৎ করা যায় না। কিন্তু এ দেশে এ রকম অপরাধ করে ছাড় পাওয়ার নজির দেখা যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অপরাধ করার পর বিভাগীয় আইনে শাস্তি পাওয়ার কথা অপরাধীর। আমাদের দেশে যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে কারও বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ওঠে, তখন ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্ত শুরু হলেও পরে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া বড় কর্মকর্তাদের আর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না। এসব ঘটনায় শাস্তি না পাওয়ার কারণ হলো ‘ছাড় দেওয়ার প্রবণতা’।

রাষ্ট্রের কাজ যাঁদের সুষ্ঠুভাবে দেখভাল করার দায়িত্ব, তাঁরাই যখন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন, তখন সিস্টেম বলে কিছু থাকে না। এই প্রকৌশলী দুটি অপরাধ করেছেন। প্রথমত, তিনি দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি করেননি। দ্বিতীয়ত, ঠিকাদারকে বঞ্চিত করেছেন। কারণ, সরকারি কাজ দরপত্রের মাধ্যমে, ঠিকাদারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু তিনি অনিয়ম করেছেন এবং একই সঙ্গে ঠিকাদার বনে গেছেন!

বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের অবক্ষয় সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশে ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। যদি বড় অপরাধে কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হতো, তাহলে এ রকম অপরাধ করার সাহস কেউ পেত না।

দেশে আইন ও বিচারব্যবস্থা বলে কিছু আছে। এখনো সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়নি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এ ধরনের অনিয়ম এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আ. লীগকে যে পরামর্শ দিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেভাবে তুলে ধরল বিশ্ব গণমাধ্যম

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আইজিপির ৫ বছরের জেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে চালের বস্তায় পিস্তল, বুলেট ও ককটেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আড়ালে সন্তর্পণে সাপলুডু খেলা

আজাদুর রহমান চন্দন
আড়ালে সন্তর্পণে সাপলুডু খেলা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চলমান একটি মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণা ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল। বিদেশে অবস্থানরত এক নেতা ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করলেও আগের দিন থেকে কোথাও কোথাও কিছু যানবাহনে আগুন দেওয়া আর ককটেলের বিস্ফোরণ ছাড়া রাজধানীতে আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন দলের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে আগের রাত থেকে রাজধানীর সড়কে যানবাহন কমে যায়। গণপরিবহন চলেছে তুলনামূলক কম। ১৩ নভেম্বর এর সংখ্যা ছিল আরও কম। রাস্তায় যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের কোনো সিগন্যালেই থেমে থাকতে হয়নি।

‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে এক নারীকে পিটিয়েছেন এনসিপির এক নারী কর্মী। লাঞ্ছিত নারীকে জুলাই হত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। একই রকম সন্দেহে এক রিকশাচালককেও মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়ির প্রকাশ ঘটে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে আটক করার ঘটনায়। গাজীপুর থেকে আসা ওই শিক্ষার্থীর অপরাধ—তার ব্যাগে ছিল মুক্তিযুদ্ধের বই এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে সংগ্রহ করা একটি ইট। ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশ্য ওই কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। চারটি প্রস্তাবের ওপর একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিতে হবে ভোটারদের। একই দিনে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশও জারি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি এই আদেশ জারি করলেন। জুলাই সনদের আলোকে গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপন করা প্রশ্নও নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রস্তাবগুলোর উল্লেখ ছিল। একটি প্রস্তাবে উল্লেখ থাকছে, আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ফলে মনে হতে পারে, সরকার বুঝি সাপও মারল, আবার লাঠিও ভাঙল না! কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলা বাহাস থামেনি। জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণাটি বিএনপির পক্ষে গেলেও সংসদের উচ্চকক্ষসহ কিছু বিষয়ে দলটি নাখোশ। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে জুলাই জাতীয় সনদ ‘লঙ্ঘিত’ হয়েছে। রাতে অবশ্য দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। বিএনপি আগে থেকে এমনটি চেয়ে আসছিল। অন্যদিকে, জামায়াত, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে সোচ্চার। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলেও সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আবার প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরে আদেশ জারির অবাস্তব চাওয়া পূরণ হয়নি।

গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দ্বিমত জানিয়েছে জামায়াতসহ আটটি দল। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, পুরো ভাষণ বিশ্লেষণ করলে জাতির স্বস্তি ও মুক্তির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, এটা বলা যায় না। ওই সময় পাঁচটি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আটটি ইসলামি দলের নেতারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বিএনপির সমালোচনা করে তাহের বলেন, জুলাই সনদে সই করার পরও বিএনপির পক্ষ থেকে সংস্কার ইস্যুতে নানামুখী কথা বলা শুরু হয়েছে। জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোটের কাঠামো এবং সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার আগে এনসিপি এতে সই করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। গত শুক্রবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, গণভোট এবং সংস্কারের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান সংস্কার বিষয়ে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং এই উদ্দেশ্যে গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার করার আবশ্যকতা রয়েছে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক আলোচনায় অংশ নেওয়া একজন রাজনীতিকের প্রশ্ন, ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ কোথা থেকে এল। এটা নিয়ে তো কোনো আলোচনাই হয়নি।’ এ ছাড়া এতগুলো প্রস্তাবের বিষয়ে একটিমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার বিষয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মরিয়ম আক্তার নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী এ প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমি যদি দুটি বিষয়ে “হ্যাঁ” মনে করি, আর দুটি বিষয়ে “না”, তখন আমি কী করব?’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে মনে হতে পারে, রাজনীতির আকাশে সব মেঘ কেটে গেছে এবং যথাসময়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। যেসব দল প্রকাশ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করছে, আড়ালে তারাই দলটির কাছে সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আসন ছাড় এবং পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিত্ব নিয়ে দর-কষাকষিতে লিপ্ত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, দৃশ্যের আড়ালে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিয়ে পরাশক্তিগুলোর টানাটানি। রাজনীতি, সংস্কার, নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে দলগুলোর বাহাস মূলত মেকি ও লোকদেখানো। সেই সঙ্গে মানুষকে মোহিত করারও প্রয়াস। আসল খেলা তো চলছে আড়ালে, সন্তর্পণে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে তার ইন্দো-প্যাসিফিক (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে টানার। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রতিরক্ষা চুক্তির রূপরেখায় সই করায় বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা খুবই কম। ওই রূপরেখায় সই করার দিন (৩১ অক্টোবর) ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তির লক্ষ্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা জোরদার করা।

এ ছাড়া এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্নির্ধারণেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ওই চুক্তির পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় কোনোভাবে বাংলাদেশেরও জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কি তাহলে বাড়েনি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আ. লীগকে যে পরামর্শ দিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেভাবে তুলে ধরল বিশ্ব গণমাধ্যম

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আইজিপির ৫ বছরের জেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে চালের বস্তায় পিস্তল, বুলেট ও ককটেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে এইচআইভি সংক্রমণ

শাহারিয়া নয়ন
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি (এইডস) সংক্রমণ, বিশেষ করে ১৭ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, গত তিন বছরে (২০২২-২৫) দেশে নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি এবং মারা গেছে অন্তত ৬০০ জন। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই শনাক্ত হয়েছে ৮৮২ জন।

যশোর ও রাজশাহীর সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ১৭ থেকে ২৩ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

২০২২ সালে দেশে নতুন করে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয় প্রায় ৯৪৭ জন। মৃত্যুবরণ করে ২৩২ জন। পরের বছর শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৭৬ জন এবং মৃত্যু হয় ২৬৬ জনের।

২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ১ হাজার ৪৩৮ জন। একই সময়ে মারা গেছে ১৯৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে; বিশেষ করে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যশোরে নতুন করে ৪০ জনের দেহে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২৫ জনই শিক্ষার্থী। আক্রান্তদের বয়স ১৭ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী। বর্তমানে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ২২০ জন এইচআইভি রোগী এ হাসপাতালের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের হার বর্তমানে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ইন্টারনেটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, কৌতূহল এবং যৌনশিক্ষার অভাবে অনেকে অনিরাপদ সম্পর্কে জড়াচ্ছে। সচেতনতা ছাড়া এই প্রবণতা ঠেকানো সম্ভব নয়।

সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় যশোরে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জেলার প্রায় ৩০ লাখ জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে একজনের বেশি এইডস রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে ২৮ জনের দেহে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে বর্তমানে ১৪ থেকে ১৭ হাজার মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছে। যদিও সামগ্রিক প্রাদুর্ভাব (১৫–৪৯ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে) ০.১ শতাংশের কম। তবু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীতে সংক্রমণ হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

তরুণদের মধ্যে এইচআইভি বাড়ার পেছনে কয়েকটি স্পষ্ট কারণ রয়েছে—যৌন সচেতনতা ও শিক্ষা ঘাটতি, কনডম ব্যবহার কম, অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, ড্রাগ বা ইনজেকশন ব্যবহার, সামাজিক ট্যাবু ও স্টিগমা।

সিরাজগঞ্জ জেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এইচআইভি পজিটিভ এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এইচআইভি সেন্টারের তথ্যমতে, জেলায় ২৫৫ জন পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার ৭৩ শতাংশই ইনজেকটিভ ড্রাগ ব্যবহারকারী। এতে শঙ্কায় রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে একই সিরিঞ্জে মাদক গ্রহণ, রোগের তথ্য গোপন, তরুণদের সচেতনতার অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ককে দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা।

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা নেশাজাতীয় ইনজেকশনের মাধ্যমে এই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আক্রান্তদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধের পাশাপাশি কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ইনজেকটিভ ড্রাগের ব্যবহার কমাতে নিয়মিত অভিযান চলছে।

এআরটি সেন্টারের কাউন্সিলর কাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাসুদ রানা বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় আক্রান্ত ২৫৫ জনের মধ্যে ইনজেকটিভ ড্রাগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮৭ জন। আর কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ জন। এ ছাড়া সাধারণ ৩৫ জন ও যৌনকর্মীর সংখ্যা চারজন। যে কারণে সিরাজগঞ্জ জেলাকে এরই মধ্যে রেড জোন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, যুবকদের মধ্যে এইডস-বিষয়ক সচেতনতা এখনো সীমিত। প্রায় ৬০ শতাংশ টেলিভিশন থেকে এ সম্পর্কে শুনেছেন, কিন্তু মাত্র ৪৫ শতাংশ জানেন, যৌন মিলন সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম।

দেশে বর্তমানে জাতীয় এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচির অধীনে বিনা মূল্যে এইচআইভি স্ক্রিনিং, কাউন্সেলিং এবং এআরটি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

সময়মতো পরীক্ষা এবং চিকিৎসা শুরু করলে এইচআইভিতে আক্রান্তরাও দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। তবে সামাজিক লজ্জা, বৈষম্য ও তথ্যের অভাব এখনো বড় বাধা হয়ে আছে।

সূত্র: এনএএসপি বার্ষিক রিপোর্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে জাতীয় এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচি, ইউএসএফপিএ ও ডব্লিউএইচও যৌথ প্রকাশনা, ইউএস এআইডিএস— কান্ট্রি ফ্যাক্টস বাংলাদেশ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আ. লীগকে যে পরামর্শ দিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেভাবে তুলে ধরল বিশ্ব গণমাধ্যম

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আইজিপির ৫ বছরের জেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে চালের বস্তায় পিস্তল, বুলেট ও ককটেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেধা পাচার রোধে করণীয়

সাদিয়া সুলতানা রিমি
মেধা পাচার রোধে করণীয়

বাংলাদেশের তরুণসমাজ আজ ক্রমেই বিদেশমুখী হচ্ছে। একসময় বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ মানে ছিল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে দেশে ফিরে কাজ করা, কিন্তু এখন সেটি পরিণত হয়েছে স্থায়ীভাবে প্রবাসে চলে যাওয়ার প্রবণতায়। দেশের সবচেয়ে মেধাবী ও যোগ্য তরুণেরা বিদেশে পড়াশোনা শেষে আর ফিরে আসছেন না। তাঁরা থেকে যাচ্ছেন উন্নত সুযোগ-সুবিধার দেশে। এ যেন এক নীরব মেধা পাচার, যা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও সম্ভাবনাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করছে।

মেধা হারানোর এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, দেশে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ এখনো সীমিত। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ল্যাব, গবেষণা তহবিল এবং আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিক পরিবেশের অভাব রয়েছে। যে তরুণেরা গবেষণা বা উদ্ভাবনে আগ্রহী, তাঁরা উন্নত পরিকাঠামো ও স্বাধীন চিন্তার পরিবেশের খোঁজে বিদেশে চলে যান। দ্বিতীয়ত, দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত। অনেক সময় যোগ্যতার সঙ্গে বেতনের সামঞ্জস্য থাকে না, আবার প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির কারণে মেধাবী তরুণেরা প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আর রাজনৈতিক প্রভাবে এবং দুর্নীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ না পাওয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যাচ্ছেন। ফলে তাঁরা এমন দেশে যেতে চান, যেখানে যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় এবং শ্রমের যথাযথ প্রতিদান মেলে।

এর পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, আইনের দুর্বল শাসন ও সামাজিক অনিরাপত্তাও মেধাবীদের নিরুৎসাহিত করছে। একজন তরুণ যখন দেখেন যে পরিশ্রম বা দক্ষতার চেয়ে দলীয় পরিচয় বা সম্পর্কই সাফল্যের পথ, তখন তাঁর মনে দেশে থাকার আগ্রহ কমে যায়। তা ছাড়া, উন্নত দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পরিবেশ ও জীবনের মান তুলনামূলক ভালো, যা পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অধিক নিরাপদ বলে মনে হয়। তাই অনেকে নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও বিদেশে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এই মেধা পাচারের প্রভাব জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীরভাবে পড়ছে। প্রশাসন, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবলের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। যাঁরা বিদেশে থেকে সফলভাবে কাজ করছেন, তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি, নেতৃত্ব ও উদ্যোগী মনোভাব দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য শিক্ষক ও গবেষকের অভাব শিক্ষার মানকে আরও নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে যাঁরা দেশে থেকে সংগ্রাম করছেন, তাঁরা দেখছেন যে এখানে যোগ্যতার চেয়ে সম্পর্ক ও তোষণই বেশি গুরুত্ব পায়। এতে হতাশা ও বঞ্চনার অনুভূতি বাড়ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যেও দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে।

তবে এখনই যদি বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া যায়, এই প্রবণতাকে অনেকটা রোধ করা সম্ভব। প্রথমেই প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ও প্রযুক্তিগত সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের পরিধি বাড়াতে হবে, বেসরকারি ও সরকারি খাতে মেধা অনুযায়ী বেতনকাঠামো ও পদোন্নতির স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে তরুণেরা নিজেদের যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন দেখতে পাবেন, যা তাঁদের দেশে থাকার অনুপ্রেরণা জোগাবে।

এ ছাড়া বিদেশে থাকা মেধাবীদের দেশে ফেরার জন্যও কার্যকর নীতি নেওয়া যেতে পারে। যাঁরা বিদেশে পড়াশোনা বা কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তাঁদের গবেষণা, নীতিনির্ধারণ বা শিক্ষা খাতে যুক্ত করার সুযোগ দিতে হবে। অনেক দেশ ‘রিভার্স ব্রেন ড্রেন’ নীতি গ্রহণ করে সফল হয়েছে, বাংলাদেশও তা অনুসরণ করতে পারে। অর্থাৎ মেধাবীদের দেশে নিয়ে এসে যোগ্যতম জায়গায় মানসম্পন্ন বেতন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, একটি দেশের আসল সম্পদ হলো তার মানুষ, বিশেষ করে মেধাবী মানুষ। যদি সেই মেধা অন্য দেশে চলে যায়, তাহলে উন্নয়নের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশকে সেই মেধা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সুযোগ, সুশাসন ও সম্মান। তরুণদের এমন পরিবেশ দিতে হবে, যেখানে তারা বিশ্বাস করবে যে এখানেই তাদের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব। কারণ, উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে তখনই, যখন দেশের মেধা, শ্রম ও ভালোবাসা এই মাটিতেই বিকশিত হবে।

শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে আ. লীগকে যে পরামর্শ দিলেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেভাবে তুলে ধরল বিশ্ব গণমাধ্যম

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড, সাবেক আইজিপির ৫ বছরের জেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনে চালের বস্তায় পিস্তল, বুলেট ও ককটেল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত