সৌভিক রেজা

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি কমরেড চারু মজুমদার।
১৯৬৭ সালের ৫ জুলাই চিনের ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘প্রচণ্ড গর্জনে ভারতের বুকে ধ্বনিত হয়েছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ। দার্জিলিং অঞ্চলের বিপ্লবী কৃষকেরা বিদ্রোহে ফেটে পড়েছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বিপ্লবী অংশের নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী সশস্ত্র সংগ্রামের এক লাল এলাকা ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের পক্ষে এটি এক প্রচণ্ড তাৎপর্যপূর্ণ বিকাশ।’
এই বিকাশ সেদিন সম্ভব হয়েছিল কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে, যাঁর হাত ধরে নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান রণকৌশলগতভাবে একটি বিশেষ স্তরে উন্নীত হতে পেরেছিল। যে মতাদর্শ তাঁকে পথ চিনিয়ে দিতে পেরেছিল, সেটি হচ্ছে―মার্কসবাদ।
২.এই যে আজ নকশালবাড়ি আর চারু মজুমদার সমার্থক হয়ে উঠেছে, এর প্রধান কারণ কী? এই প্রশ্নে অনেকেই ব্যতিব্যস্ত থাকেন। খুব সহজ আর অল্প কথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন, তারপরও যদি দিতেই হয়, তাহলে বলা দরকার যে, চারু মজুমদার ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি কমরেড মাও সে-তুঙের মতাদর্শকে, দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিকে একেবারে সামনে টেনে এনেছিলেন। যাকে বলা যায়, নির্ভুল চিন্তাধারা, চারু মজুমদার, সেই শিক্ষাটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে?’ মাও সে-তুঙ ভারি চমৎকারভাবে এর জবাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে।’ তাঁর কথাটিকে আরও খানিকটা ব্যাখ্যা করে মাও জানিয়েছিলেন, ‘সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা―এই তিনটা অনুশীলন থেকেই সেগুলো আসে।’ এই যে আয়ত্তে আনা, এটি চারু মজুমদারের বিখ্যাত ‘আটটি দলিলে’র মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। প্রথম দলিলের শেষাংশে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক শিক্ষা কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, ‘ভারতবর্ষের বিপ্লবের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে হচ্ছে কৃষি বিপ্লব। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হবে―কৃষি বিপ্লব সফল কর।’ শুধুই তা-ই নয়, সেইসঙ্গে চারু মজুমদার জানাতে ভোলেননি যে, ‘কৃষি বিপ্লবের কার্যক্রমকে আমরা যতখানি শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রচার করতে ও তাঁদের শিক্ষিত করে তুলতে পারবো, ততোখানি তাঁরা রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবেন।’ আর রাজনৈতিক শিক্ষিতজনেরা গোটা দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেন, সেটি রাশিয়ায় কমরেড ভ. ই. লেনিন যেমন দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি কমরেড মাও দেখিয়েছিলেন তৎকালীন চীনে। ভারতবর্ষের মাটিতে কমরেড চারু মজুমদার সেই একই আগুন জ্বালানোর প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন।
৩.এটা তো ঠিক যে কমরেড চারু মজুমদার সশস্ত্র সংগ্রামের ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রক্তপাত অনিবার্য। আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানেও, রক্তপাত জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখন তাঁর রক্তপাত কেউই ঠেকাতে পারে না। এই রক্তপাত হচ্ছে একটি ইতিবাচক রক্তপাত, জীবনের জন্যে রক্তপাত। যে নারীর প্রতিমাসে রক্তপাত হয় না, বুঝতে হবে তাঁর সন্তানধারণের ক্ষমতা আর নেই।
কমরেড মাওয়ের মতে বিপ্লব হচ্ছে, সক্রিয়তার সঙ্গে শোষক শ্রেণিকে উৎখাত করা। সমাজের ৯৯ শতাংশের ক্ষমতা ও সম্পদ যখন এক শতাংশ শোষক শ্রেণির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, তখন তারাও তো বাধা দেবেই। সেই বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য যদি বিপ্লবীদের না থাকে, তাহলে তো বিপ্লব প্রাথমিক পর্যায়েই পরাস্ত হতে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে ‘খতমের রাজনীতির’ কথা সামনে চলে আসে। খুবই ভুলভাবে কমরেড চারু মজুমদারের খতমের রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। অথচ কমরেড চারু মজুমদার দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন, খতমের রাজনীতি মানে শুধুই ‘ব্যক্তিকে খতম করা নয়।’ সেই শত্রুটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তিকেও খতম করা।’
৪.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘অস্ত্র হচ্ছে যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু নির্ধারক উপাদন নয়।’ তাহলে নির্ধারক উপাদান কোনটি বা কারা? মাওয়ের মতে, ‘নির্ধারক উপাদান হচ্ছে মানুষ, বস্তু নয়।’ তিনি জনগণের শক্তিকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর এই কথা থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি। মাও বলেছিলেন, ‘জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টির চালক-শক্তি।’ শুধু এইটুকুতেই থামেননি তিনি, এ-ও বলেছিলেন যে, ‘জনসাধারণ হচ্ছেন প্রকৃত বীর’।
কেন জনসাধারণ প্রকৃত বীর? মাওয়ের মতে, এই জনসাধারণের মধ্যেই আছে ‘সীমাহীন সৃজনী শক্তি’। কমরেড চারু মজুমদার সেই জনগণের সৃজনী শক্তির উপর এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভরসা করেননি কখনো। তিনি দৃঢভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, ‘শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারাটাই কমিউনিস্ট হবার একমাত্র মাপকাঠি নয়।’ ‘কে প্রকৃত কমিউনিস্ট?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছিলেন, ‘যিনি জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন এবং এই আত্মত্যাগ বিনিময়ের কোনো প্রত্যাশা করে নয়।’ এসবের পাশাপাশি কোনো রকম ছাড় না-দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটো পথ―হয় আত্মত্যাগ, নয় আত্মস্বার্থ। মাঝামাঝি কোনো রাস্তা নেই।’ জনসাধারণের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া বিপ্লব যে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কোনোভাবেই পৌঁছোতে পারে না, সেটি চারু মজুমদার তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই শিখেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদেরও সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছেন।
৫.উপমহাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ক্ষেত্রে কমরেড চারু মজুমদারের আরও একটি বড় শিক্ষা এই যে, সংশোধনবাদকে চিহ্নিত করা এবং সেটির বিরুদ্ধে নিরন্তর ও আপোসহীন সংগ্রাম করে যাওয়া। সংশোধনবাদ কী? সংশোধনবাদ কখনোই একটি রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চায় না। সে অতীতের সংগ্রাম এবং সংগ্রামের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেয় না। একইসঙ্গে বিপ্লবী লক্ষ্য, আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অর্থনীতিবাদকেই বড়ো করে দেখে ও দেখায়।
এসবের বিপরীতে, নকশালবাড়ির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে, কমরেড চারু মজুমদার বলেছিলেন, ‘এই প্রথম কৃষক শুধু তার ছোট দাবির জন্য আন্দোলন করলেন না, তিনি আন্দোলন করলেন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলেন জন্য।’ নিজের এই বক্তব্যকে আরও খানিকটা বিস্তারে নিয়ে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছেন, ‘নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন থেকে যদি অভিজ্ঞতা নিতে হয়, তবে সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, জমি বা ফসল ইত্যাদির জন্য জঙ্গী সংগ্রাম নয়। জঙ্গী সংগ্রাম করতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য।’ তাঁর মতে এখানেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের নতুনত্ব। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কমরেড চারু মজুমদারের এই মূল্যায়নকে কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই।
৬.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন হলো উৎসাহী কিন্তু স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির। উত্তেজনাময় কিন্তু শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের।’ কমরেড চারু মজুমদার ছিলেন মাওয়ের সেই উৎসাহী ও স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির অধিকারী একজন মানুষ। যিনি একইসঙ্গে উত্তেজনা আর শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করতে চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের মাটিতে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ আর বিপ্লবের গানকে একইসূত্রে মেলাতে পেরেছিলেন। কতটা সফল হয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটিও উঠবে, উঠতে বাধ্য। কারণ সেটিকে অস্বীকার করে আজ এক পাও অগ্রসর হওয়া যাবে না।
১৫ই মে কমরেড চারু মজুমদারের জন্মদিন। তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও লাল সালাম!
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি কমরেড চারু মজুমদার।
১৯৬৭ সালের ৫ জুলাই চিনের ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘প্রচণ্ড গর্জনে ভারতের বুকে ধ্বনিত হয়েছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ। দার্জিলিং অঞ্চলের বিপ্লবী কৃষকেরা বিদ্রোহে ফেটে পড়েছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বিপ্লবী অংশের নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী সশস্ত্র সংগ্রামের এক লাল এলাকা ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের পক্ষে এটি এক প্রচণ্ড তাৎপর্যপূর্ণ বিকাশ।’
এই বিকাশ সেদিন সম্ভব হয়েছিল কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে, যাঁর হাত ধরে নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান রণকৌশলগতভাবে একটি বিশেষ স্তরে উন্নীত হতে পেরেছিল। যে মতাদর্শ তাঁকে পথ চিনিয়ে দিতে পেরেছিল, সেটি হচ্ছে―মার্কসবাদ।
২.এই যে আজ নকশালবাড়ি আর চারু মজুমদার সমার্থক হয়ে উঠেছে, এর প্রধান কারণ কী? এই প্রশ্নে অনেকেই ব্যতিব্যস্ত থাকেন। খুব সহজ আর অল্প কথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন, তারপরও যদি দিতেই হয়, তাহলে বলা দরকার যে, চারু মজুমদার ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি কমরেড মাও সে-তুঙের মতাদর্শকে, দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিকে একেবারে সামনে টেনে এনেছিলেন। যাকে বলা যায়, নির্ভুল চিন্তাধারা, চারু মজুমদার, সেই শিক্ষাটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে?’ মাও সে-তুঙ ভারি চমৎকারভাবে এর জবাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে।’ তাঁর কথাটিকে আরও খানিকটা ব্যাখ্যা করে মাও জানিয়েছিলেন, ‘সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা―এই তিনটা অনুশীলন থেকেই সেগুলো আসে।’ এই যে আয়ত্তে আনা, এটি চারু মজুমদারের বিখ্যাত ‘আটটি দলিলে’র মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। প্রথম দলিলের শেষাংশে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক শিক্ষা কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, ‘ভারতবর্ষের বিপ্লবের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে হচ্ছে কৃষি বিপ্লব। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হবে―কৃষি বিপ্লব সফল কর।’ শুধুই তা-ই নয়, সেইসঙ্গে চারু মজুমদার জানাতে ভোলেননি যে, ‘কৃষি বিপ্লবের কার্যক্রমকে আমরা যতখানি শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রচার করতে ও তাঁদের শিক্ষিত করে তুলতে পারবো, ততোখানি তাঁরা রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবেন।’ আর রাজনৈতিক শিক্ষিতজনেরা গোটা দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেন, সেটি রাশিয়ায় কমরেড ভ. ই. লেনিন যেমন দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি কমরেড মাও দেখিয়েছিলেন তৎকালীন চীনে। ভারতবর্ষের মাটিতে কমরেড চারু মজুমদার সেই একই আগুন জ্বালানোর প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন।
৩.এটা তো ঠিক যে কমরেড চারু মজুমদার সশস্ত্র সংগ্রামের ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রক্তপাত অনিবার্য। আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানেও, রক্তপাত জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখন তাঁর রক্তপাত কেউই ঠেকাতে পারে না। এই রক্তপাত হচ্ছে একটি ইতিবাচক রক্তপাত, জীবনের জন্যে রক্তপাত। যে নারীর প্রতিমাসে রক্তপাত হয় না, বুঝতে হবে তাঁর সন্তানধারণের ক্ষমতা আর নেই।
কমরেড মাওয়ের মতে বিপ্লব হচ্ছে, সক্রিয়তার সঙ্গে শোষক শ্রেণিকে উৎখাত করা। সমাজের ৯৯ শতাংশের ক্ষমতা ও সম্পদ যখন এক শতাংশ শোষক শ্রেণির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, তখন তারাও তো বাধা দেবেই। সেই বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য যদি বিপ্লবীদের না থাকে, তাহলে তো বিপ্লব প্রাথমিক পর্যায়েই পরাস্ত হতে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে ‘খতমের রাজনীতির’ কথা সামনে চলে আসে। খুবই ভুলভাবে কমরেড চারু মজুমদারের খতমের রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। অথচ কমরেড চারু মজুমদার দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন, খতমের রাজনীতি মানে শুধুই ‘ব্যক্তিকে খতম করা নয়।’ সেই শত্রুটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তিকেও খতম করা।’
৪.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘অস্ত্র হচ্ছে যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু নির্ধারক উপাদন নয়।’ তাহলে নির্ধারক উপাদান কোনটি বা কারা? মাওয়ের মতে, ‘নির্ধারক উপাদান হচ্ছে মানুষ, বস্তু নয়।’ তিনি জনগণের শক্তিকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর এই কথা থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি। মাও বলেছিলেন, ‘জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টির চালক-শক্তি।’ শুধু এইটুকুতেই থামেননি তিনি, এ-ও বলেছিলেন যে, ‘জনসাধারণ হচ্ছেন প্রকৃত বীর’।
কেন জনসাধারণ প্রকৃত বীর? মাওয়ের মতে, এই জনসাধারণের মধ্যেই আছে ‘সীমাহীন সৃজনী শক্তি’। কমরেড চারু মজুমদার সেই জনগণের সৃজনী শক্তির উপর এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভরসা করেননি কখনো। তিনি দৃঢভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, ‘শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারাটাই কমিউনিস্ট হবার একমাত্র মাপকাঠি নয়।’ ‘কে প্রকৃত কমিউনিস্ট?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছিলেন, ‘যিনি জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন এবং এই আত্মত্যাগ বিনিময়ের কোনো প্রত্যাশা করে নয়।’ এসবের পাশাপাশি কোনো রকম ছাড় না-দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটো পথ―হয় আত্মত্যাগ, নয় আত্মস্বার্থ। মাঝামাঝি কোনো রাস্তা নেই।’ জনসাধারণের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া বিপ্লব যে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কোনোভাবেই পৌঁছোতে পারে না, সেটি চারু মজুমদার তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই শিখেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদেরও সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছেন।
৫.উপমহাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ক্ষেত্রে কমরেড চারু মজুমদারের আরও একটি বড় শিক্ষা এই যে, সংশোধনবাদকে চিহ্নিত করা এবং সেটির বিরুদ্ধে নিরন্তর ও আপোসহীন সংগ্রাম করে যাওয়া। সংশোধনবাদ কী? সংশোধনবাদ কখনোই একটি রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চায় না। সে অতীতের সংগ্রাম এবং সংগ্রামের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেয় না। একইসঙ্গে বিপ্লবী লক্ষ্য, আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অর্থনীতিবাদকেই বড়ো করে দেখে ও দেখায়।
এসবের বিপরীতে, নকশালবাড়ির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে, কমরেড চারু মজুমদার বলেছিলেন, ‘এই প্রথম কৃষক শুধু তার ছোট দাবির জন্য আন্দোলন করলেন না, তিনি আন্দোলন করলেন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলেন জন্য।’ নিজের এই বক্তব্যকে আরও খানিকটা বিস্তারে নিয়ে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছেন, ‘নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন থেকে যদি অভিজ্ঞতা নিতে হয়, তবে সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, জমি বা ফসল ইত্যাদির জন্য জঙ্গী সংগ্রাম নয়। জঙ্গী সংগ্রাম করতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য।’ তাঁর মতে এখানেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের নতুনত্ব। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কমরেড চারু মজুমদারের এই মূল্যায়নকে কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই।
৬.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন হলো উৎসাহী কিন্তু স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির। উত্তেজনাময় কিন্তু শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের।’ কমরেড চারু মজুমদার ছিলেন মাওয়ের সেই উৎসাহী ও স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির অধিকারী একজন মানুষ। যিনি একইসঙ্গে উত্তেজনা আর শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করতে চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের মাটিতে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ আর বিপ্লবের গানকে একইসূত্রে মেলাতে পেরেছিলেন। কতটা সফল হয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটিও উঠবে, উঠতে বাধ্য। কারণ সেটিকে অস্বীকার করে আজ এক পাও অগ্রসর হওয়া যাবে না।
১৫ই মে কমরেড চারু মজুমদারের জন্মদিন। তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও লাল সালাম!
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সৌভিক রেজা

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি কমরেড চারু মজুমদার।
১৯৬৭ সালের ৫ জুলাই চিনের ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘প্রচণ্ড গর্জনে ভারতের বুকে ধ্বনিত হয়েছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ। দার্জিলিং অঞ্চলের বিপ্লবী কৃষকেরা বিদ্রোহে ফেটে পড়েছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বিপ্লবী অংশের নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী সশস্ত্র সংগ্রামের এক লাল এলাকা ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের পক্ষে এটি এক প্রচণ্ড তাৎপর্যপূর্ণ বিকাশ।’
এই বিকাশ সেদিন সম্ভব হয়েছিল কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে, যাঁর হাত ধরে নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান রণকৌশলগতভাবে একটি বিশেষ স্তরে উন্নীত হতে পেরেছিল। যে মতাদর্শ তাঁকে পথ চিনিয়ে দিতে পেরেছিল, সেটি হচ্ছে―মার্কসবাদ।
২.এই যে আজ নকশালবাড়ি আর চারু মজুমদার সমার্থক হয়ে উঠেছে, এর প্রধান কারণ কী? এই প্রশ্নে অনেকেই ব্যতিব্যস্ত থাকেন। খুব সহজ আর অল্প কথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন, তারপরও যদি দিতেই হয়, তাহলে বলা দরকার যে, চারু মজুমদার ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি কমরেড মাও সে-তুঙের মতাদর্শকে, দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিকে একেবারে সামনে টেনে এনেছিলেন। যাকে বলা যায়, নির্ভুল চিন্তাধারা, চারু মজুমদার, সেই শিক্ষাটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে?’ মাও সে-তুঙ ভারি চমৎকারভাবে এর জবাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে।’ তাঁর কথাটিকে আরও খানিকটা ব্যাখ্যা করে মাও জানিয়েছিলেন, ‘সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা―এই তিনটা অনুশীলন থেকেই সেগুলো আসে।’ এই যে আয়ত্তে আনা, এটি চারু মজুমদারের বিখ্যাত ‘আটটি দলিলে’র মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। প্রথম দলিলের শেষাংশে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক শিক্ষা কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, ‘ভারতবর্ষের বিপ্লবের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে হচ্ছে কৃষি বিপ্লব। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হবে―কৃষি বিপ্লব সফল কর।’ শুধুই তা-ই নয়, সেইসঙ্গে চারু মজুমদার জানাতে ভোলেননি যে, ‘কৃষি বিপ্লবের কার্যক্রমকে আমরা যতখানি শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রচার করতে ও তাঁদের শিক্ষিত করে তুলতে পারবো, ততোখানি তাঁরা রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবেন।’ আর রাজনৈতিক শিক্ষিতজনেরা গোটা দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেন, সেটি রাশিয়ায় কমরেড ভ. ই. লেনিন যেমন দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি কমরেড মাও দেখিয়েছিলেন তৎকালীন চীনে। ভারতবর্ষের মাটিতে কমরেড চারু মজুমদার সেই একই আগুন জ্বালানোর প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন।
৩.এটা তো ঠিক যে কমরেড চারু মজুমদার সশস্ত্র সংগ্রামের ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রক্তপাত অনিবার্য। আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানেও, রক্তপাত জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখন তাঁর রক্তপাত কেউই ঠেকাতে পারে না। এই রক্তপাত হচ্ছে একটি ইতিবাচক রক্তপাত, জীবনের জন্যে রক্তপাত। যে নারীর প্রতিমাসে রক্তপাত হয় না, বুঝতে হবে তাঁর সন্তানধারণের ক্ষমতা আর নেই।
কমরেড মাওয়ের মতে বিপ্লব হচ্ছে, সক্রিয়তার সঙ্গে শোষক শ্রেণিকে উৎখাত করা। সমাজের ৯৯ শতাংশের ক্ষমতা ও সম্পদ যখন এক শতাংশ শোষক শ্রেণির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, তখন তারাও তো বাধা দেবেই। সেই বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য যদি বিপ্লবীদের না থাকে, তাহলে তো বিপ্লব প্রাথমিক পর্যায়েই পরাস্ত হতে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে ‘খতমের রাজনীতির’ কথা সামনে চলে আসে। খুবই ভুলভাবে কমরেড চারু মজুমদারের খতমের রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। অথচ কমরেড চারু মজুমদার দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন, খতমের রাজনীতি মানে শুধুই ‘ব্যক্তিকে খতম করা নয়।’ সেই শত্রুটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তিকেও খতম করা।’
৪.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘অস্ত্র হচ্ছে যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু নির্ধারক উপাদন নয়।’ তাহলে নির্ধারক উপাদান কোনটি বা কারা? মাওয়ের মতে, ‘নির্ধারক উপাদান হচ্ছে মানুষ, বস্তু নয়।’ তিনি জনগণের শক্তিকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর এই কথা থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি। মাও বলেছিলেন, ‘জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টির চালক-শক্তি।’ শুধু এইটুকুতেই থামেননি তিনি, এ-ও বলেছিলেন যে, ‘জনসাধারণ হচ্ছেন প্রকৃত বীর’।
কেন জনসাধারণ প্রকৃত বীর? মাওয়ের মতে, এই জনসাধারণের মধ্যেই আছে ‘সীমাহীন সৃজনী শক্তি’। কমরেড চারু মজুমদার সেই জনগণের সৃজনী শক্তির উপর এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভরসা করেননি কখনো। তিনি দৃঢভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, ‘শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারাটাই কমিউনিস্ট হবার একমাত্র মাপকাঠি নয়।’ ‘কে প্রকৃত কমিউনিস্ট?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছিলেন, ‘যিনি জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন এবং এই আত্মত্যাগ বিনিময়ের কোনো প্রত্যাশা করে নয়।’ এসবের পাশাপাশি কোনো রকম ছাড় না-দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটো পথ―হয় আত্মত্যাগ, নয় আত্মস্বার্থ। মাঝামাঝি কোনো রাস্তা নেই।’ জনসাধারণের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া বিপ্লব যে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কোনোভাবেই পৌঁছোতে পারে না, সেটি চারু মজুমদার তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই শিখেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদেরও সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছেন।
৫.উপমহাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ক্ষেত্রে কমরেড চারু মজুমদারের আরও একটি বড় শিক্ষা এই যে, সংশোধনবাদকে চিহ্নিত করা এবং সেটির বিরুদ্ধে নিরন্তর ও আপোসহীন সংগ্রাম করে যাওয়া। সংশোধনবাদ কী? সংশোধনবাদ কখনোই একটি রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চায় না। সে অতীতের সংগ্রাম এবং সংগ্রামের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেয় না। একইসঙ্গে বিপ্লবী লক্ষ্য, আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অর্থনীতিবাদকেই বড়ো করে দেখে ও দেখায়।
এসবের বিপরীতে, নকশালবাড়ির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে, কমরেড চারু মজুমদার বলেছিলেন, ‘এই প্রথম কৃষক শুধু তার ছোট দাবির জন্য আন্দোলন করলেন না, তিনি আন্দোলন করলেন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলেন জন্য।’ নিজের এই বক্তব্যকে আরও খানিকটা বিস্তারে নিয়ে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছেন, ‘নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন থেকে যদি অভিজ্ঞতা নিতে হয়, তবে সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, জমি বা ফসল ইত্যাদির জন্য জঙ্গী সংগ্রাম নয়। জঙ্গী সংগ্রাম করতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য।’ তাঁর মতে এখানেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের নতুনত্ব। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কমরেড চারু মজুমদারের এই মূল্যায়নকে কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই।
৬.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন হলো উৎসাহী কিন্তু স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির। উত্তেজনাময় কিন্তু শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের।’ কমরেড চারু মজুমদার ছিলেন মাওয়ের সেই উৎসাহী ও স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির অধিকারী একজন মানুষ। যিনি একইসঙ্গে উত্তেজনা আর শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করতে চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের মাটিতে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ আর বিপ্লবের গানকে একইসূত্রে মেলাতে পেরেছিলেন। কতটা সফল হয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটিও উঠবে, উঠতে বাধ্য। কারণ সেটিকে অস্বীকার করে আজ এক পাও অগ্রসর হওয়া যাবে না।
১৫ই মে কমরেড চারু মজুমদারের জন্মদিন। তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও লাল সালাম!
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তিনি কমরেড চারু মজুমদার।
১৯৬৭ সালের ৫ জুলাই চিনের ‘পিপলস ডেইলি’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, ‘প্রচণ্ড গর্জনে ভারতের বুকে ধ্বনিত হয়েছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ। দার্জিলিং অঞ্চলের বিপ্লবী কৃষকেরা বিদ্রোহে ফেটে পড়েছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একটি বিপ্লবী অংশের নেতৃত্বে গ্রামাঞ্চলে বিপ্লবী সশস্ত্র সংগ্রামের এক লাল এলাকা ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় জনগণের বিপ্লবী সংগ্রামের পক্ষে এটি এক প্রচণ্ড তাৎপর্যপূর্ণ বিকাশ।’
এই বিকাশ সেদিন সম্ভব হয়েছিল কমরেড চারু মজুমদারের নেতৃত্বে, যাঁর হাত ধরে নকশালবাড়ি অভ্যুত্থান রণকৌশলগতভাবে একটি বিশেষ স্তরে উন্নীত হতে পেরেছিল। যে মতাদর্শ তাঁকে পথ চিনিয়ে দিতে পেরেছিল, সেটি হচ্ছে―মার্কসবাদ।
২.এই যে আজ নকশালবাড়ি আর চারু মজুমদার সমার্থক হয়ে উঠেছে, এর প্রধান কারণ কী? এই প্রশ্নে অনেকেই ব্যতিব্যস্ত থাকেন। খুব সহজ আর অল্প কথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন, তারপরও যদি দিতেই হয়, তাহলে বলা দরকার যে, চারু মজুমদার ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি কমরেড মাও সে-তুঙের মতাদর্শকে, দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতিকে একেবারে সামনে টেনে এনেছিলেন। যাকে বলা যায়, নির্ভুল চিন্তাধারা, চারু মজুমদার, সেই শিক্ষাটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কোথা থেকে আসে?’ মাও সে-তুঙ ভারি চমৎকারভাবে এর জবাবে বলেছিলেন, ‘মানুষের নির্ভুল চিন্তাধারা কেবলমাত্র সামাজিক অনুশীলন থেকেই আসে।’ তাঁর কথাটিকে আরও খানিকটা ব্যাখ্যা করে মাও জানিয়েছিলেন, ‘সমাজের উৎপাদন সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা―এই তিনটা অনুশীলন থেকেই সেগুলো আসে।’ এই যে আয়ত্তে আনা, এটি চারু মজুমদারের বিখ্যাত ‘আটটি দলিলে’র মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। প্রথম দলিলের শেষাংশে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক শিক্ষা কী হবে, সে সম্পর্কে তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন, ‘ভারতবর্ষের বিপ্লবের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে হচ্ছে কৃষি বিপ্লব। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান বক্তব্য হবে―কৃষি বিপ্লব সফল কর।’ শুধুই তা-ই নয়, সেইসঙ্গে চারু মজুমদার জানাতে ভোলেননি যে, ‘কৃষি বিপ্লবের কার্যক্রমকে আমরা যতখানি শ্রমিক ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রচার করতে ও তাঁদের শিক্ষিত করে তুলতে পারবো, ততোখানি তাঁরা রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবেন।’ আর রাজনৈতিক শিক্ষিতজনেরা গোটা দুনিয়ায় কীভাবে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারেন, সেটি রাশিয়ায় কমরেড ভ. ই. লেনিন যেমন দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনি কমরেড মাও দেখিয়েছিলেন তৎকালীন চীনে। ভারতবর্ষের মাটিতে কমরেড চারু মজুমদার সেই একই আগুন জ্বালানোর প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিলেন।
৩.এটা তো ঠিক যে কমরেড চারু মজুমদার সশস্ত্র সংগ্রামের ওপর জোর দিয়েছিলেন। আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে রক্তপাত অনিবার্য। আমরা যদি প্রকৃতির দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানেও, রক্তপাত জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে। একজন মা যখন সন্তানের জন্ম দেন, তখন তাঁর রক্তপাত কেউই ঠেকাতে পারে না। এই রক্তপাত হচ্ছে একটি ইতিবাচক রক্তপাত, জীবনের জন্যে রক্তপাত। যে নারীর প্রতিমাসে রক্তপাত হয় না, বুঝতে হবে তাঁর সন্তানধারণের ক্ষমতা আর নেই।
কমরেড মাওয়ের মতে বিপ্লব হচ্ছে, সক্রিয়তার সঙ্গে শোষক শ্রেণিকে উৎখাত করা। সমাজের ৯৯ শতাংশের ক্ষমতা ও সম্পদ যখন এক শতাংশ শোষক শ্রেণির হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হবে, তখন তারাও তো বাধা দেবেই। সেই বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য যদি বিপ্লবীদের না থাকে, তাহলে তো বিপ্লব প্রাথমিক পর্যায়েই পরাস্ত হতে বাধ্য।
এই প্রসঙ্গে ‘খতমের রাজনীতির’ কথা সামনে চলে আসে। খুবই ভুলভাবে কমরেড চারু মজুমদারের খতমের রাজনীতিকে ব্যাখ্যা করা হয়। অথচ কমরেড চারু মজুমদার দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন, খতমের রাজনীতি মানে শুধুই ‘ব্যক্তিকে খতম করা নয়।’ সেই শত্রুটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তিকেও খতম করা।’
৪.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘অস্ত্র হচ্ছে যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু নির্ধারক উপাদন নয়।’ তাহলে নির্ধারক উপাদান কোনটি বা কারা? মাওয়ের মতে, ‘নির্ধারক উপাদান হচ্ছে মানুষ, বস্তু নয়।’ তিনি জনগণের শক্তিকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেটি তাঁর এই কথা থেকেই আমরা বুঝে নিতে পারি। মাও বলেছিলেন, ‘জনগণ, কেবলমাত্র জনগণই হচ্ছেন বিশ্ব-ইতিহাস সৃষ্টির চালক-শক্তি।’ শুধু এইটুকুতেই থামেননি তিনি, এ-ও বলেছিলেন যে, ‘জনসাধারণ হচ্ছেন প্রকৃত বীর’।
কেন জনসাধারণ প্রকৃত বীর? মাওয়ের মতে, এই জনসাধারণের মধ্যেই আছে ‘সীমাহীন সৃজনী শক্তি’। কমরেড চারু মজুমদার সেই জনগণের সৃজনী শক্তির উপর এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভরসা করেননি কখনো। তিনি দৃঢভাবেই বিশ্বাস করতেন যে, ‘শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারাটাই কমিউনিস্ট হবার একমাত্র মাপকাঠি নয়।’ ‘কে প্রকৃত কমিউনিস্ট?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছিলেন, ‘যিনি জনগণের জন্য আত্মত্যাগ করতে পারেন এবং এই আত্মত্যাগ বিনিময়ের কোনো প্রত্যাশা করে নয়।’ এসবের পাশাপাশি কোনো রকম ছাড় না-দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দুটো পথ―হয় আত্মত্যাগ, নয় আত্মস্বার্থ। মাঝামাঝি কোনো রাস্তা নেই।’ জনসাধারণের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া বিপ্লব যে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কোনোভাবেই পৌঁছোতে পারে না, সেটি চারু মজুমদার তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকেই শিখেছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধাদেরও সেই শিক্ষাটাই তিনি দিতে চেয়েছেন।
৫.উপমহাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির ক্ষেত্রে কমরেড চারু মজুমদারের আরও একটি বড় শিক্ষা এই যে, সংশোধনবাদকে চিহ্নিত করা এবং সেটির বিরুদ্ধে নিরন্তর ও আপোসহীন সংগ্রাম করে যাওয়া। সংশোধনবাদ কী? সংশোধনবাদ কখনোই একটি রাষ্ট্রের বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চায় না। সে অতীতের সংগ্রাম এবং সংগ্রামের ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নেয় না। একইসঙ্গে বিপ্লবী লক্ষ্য, আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অর্থনীতিবাদকেই বড়ো করে দেখে ও দেখায়।
এসবের বিপরীতে, নকশালবাড়ির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে, কমরেড চারু মজুমদার বলেছিলেন, ‘এই প্রথম কৃষক শুধু তার ছোট দাবির জন্য আন্দোলন করলেন না, তিনি আন্দোলন করলেন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলেন জন্য।’ নিজের এই বক্তব্যকে আরও খানিকটা বিস্তারে নিয়ে গিয়ে চারু মজুমদার জানিয়েছেন, ‘নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলন থেকে যদি অভিজ্ঞতা নিতে হয়, তবে সে অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই যে, জমি বা ফসল ইত্যাদির জন্য জঙ্গী সংগ্রাম নয়। জঙ্গী সংগ্রাম করতে হবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য।’ তাঁর মতে এখানেই নকশালবাড়ি আন্দোলনের নতুনত্ব। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কমরেড চারু মজুমদারের এই মূল্যায়নকে কোনোভাবেই অস্বীকার করবার উপায় নেই।
৬.কমরেড মাও সে-তুঙ বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন হলো উৎসাহী কিন্তু স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির। উত্তেজনাময় কিন্তু শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের।’ কমরেড চারু মজুমদার ছিলেন মাওয়ের সেই উৎসাহী ও স্থিরচিত্ত মনোবৃত্তির অধিকারী একজন মানুষ। যিনি একইসঙ্গে উত্তেজনা আর শৃঙ্খলাপূর্ণ কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করতে চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের মাটিতে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ আর বিপ্লবের গানকে একইসূত্রে মেলাতে পেরেছিলেন। কতটা সফল হয়েছিলেন, সেই প্রশ্নটিও উঠবে, উঠতে বাধ্য। কারণ সেটিকে অস্বীকার করে আজ এক পাও অগ্রসর হওয়া যাবে না।
১৫ই মে কমরেড চারু মজুমদারের জন্মদিন। তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা ও লাল সালাম!
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তি
১৫ মে ২০২৩
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তি
১৫ মে ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেএম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তি
১৫ মে ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
৫ ঘণ্টা আগেড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

কার্তেজীয় পদ্ধতির জন্যে যিনি সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত, সেই ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত মনে করতেন, মানুষের ‘শুভবুদ্ধি থাকাটাই যথেষ্ট নয়, আসল হচ্ছে সেটাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।’ কথাটির গুরুত্ব সবার কাছে হয়তো একরকম নয়, তবে এই উপমহাদেশে একজন মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে দিয়ে সেটি মূর্ত হয়ে উঠতে পেরেছিল। তি
১৫ মে ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
৪ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
৫ ঘণ্টা আগে