জাহীদ রেজা নূর

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই প্রগাঢ় ছায়া দিতে থাকেন।
দুই.
সত্তরের দশকের শুরুর ঢাকা এখন স্বপ্নের মতো। কল্পনায় ধরা দেয় সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য। কংক্রিটের বস্তি তখনো এভাবে গড়ে ওঠেনি। ছোট ছোট একতলা, দোতলা বাড়িই বেশি। সরু রাস্তায় যানবাহন কম। রাস্তাঘাটে নিরন্ন মানুষের পাশাপাশি ফুলেফেঁপে অস্থির মানুষেরাও দৃশ্যমান।
কিছুদিন আগে, ১৬ ডিসেম্বর, ফাঁকা গুলির আওয়াজ জানান দিয়েছিল দেশ স্বাধীন হয়েছে। দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরছিলেন দেশে। স্টেনগান শোনাচ্ছিল মধুর সংগীত। আমাকে কোলে নিয়ে চামেলিবাগের মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক ভাই এক হাতে স্টেনগানের গুলি ছুড়েছিলেন নারকেল গাছ লক্ষ্য করে। কাঁদি ছিঁড়ে সে গাছের ডাব ছিটকে পড়েছিল আমাদের সামনে—মনে পড়ে। এবং তখনই একদিন দেখতে পাই একটা নতুন গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িবারান্দার কোল ঘেঁষে। সে গাড়িতে করে আমাদের ঢাকার রাস্তা ঘুরিয়েও আনেন একজন। পরে শুনতে পাই, এ গাড়ি হাইজ্যাক করে আনা হয়েছে।
গ্রামের চাষা–মজুর যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তারা কোনো কিছুর লোভ না করেই অস্ত্র জমা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল যে যার কাজে। শহুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ হাইজ্যাক, লুটতরাজ করছিল। দেশ তখন ভঙ্গুর। পাকিস্তানিরা এ দেশের শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে, সেতু পুড়িয়ে দিয়েছে, গাড়ি নষ্ট করেছে এবং মানুষ মেরেছে। বিধ্বস্ত এ দেশ তখন একটু একটু করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সবার পেট থেকে খিদে তাড়ানো যাচ্ছিল না। সে কী ভয়াবহ খিদে!
সে রকম একটা সময়েই অন্যরকম এক সুর ভেসে উঠল। আমরা অবাক হয়ে শুনলাম, আজম খান গাইছেন—‘রেললাইনের ওই বস্তিতে, জন্মেছিল একটি ছেলে, মা তাঁর কাঁদে, ছেলেটি মরে গেছে…!’
আমরা অন্য ঘরে অন্য স্বর শুনতে পেলাম। সে স্বর ক্রমশই হয়ে উঠতে থাকল নাগরিক জীবনের প্রবল সত্যের প্রকাশ।
তিন.
আমাদের পপ জামানার শুরুর কথা বলতে গেলে আজম খানের কাছে ফিরে যেতে হয় বারবার। ঢ্যাঙা, লম্বা, মেদহীন এক শরীর থেকে যখন বেরিয়ে আসত শব্দ, তখন মনে হতো, এ যেন আমারই কথা বলছেন তিনি। খুবই সহজ–সরল লিরিক, কোনো গভীর কথাও ঠেসে দেওয়া নেই ‘আলাল দুলাল’ নামের গানটিতে, কিংবা ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা, ওরে ফুলবানু পারলি না বাঁচাতে’ গানগুলোয়। কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন তা আত্মার আত্মীয় হয়ে পড়ে। জীবনের যে পাঠ নিজেকে চিনতে শেখায়, এই অস্থির গানগুলো যেন সেদিকেই নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু কোনো এক অচেনা পথে।
সুশীল মানুষেরা একটু খেপে ওঠেন। তাঁরা বলার চেষ্টা করেন, ‘সংগীতের বারোটা বাজাচ্ছে এরা। আমাদের দেশের সংগীতের খোলনলচে পাল্টে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়!’
ধন্য হই এ কথা ভেবে যে, এই ধরনের সমালোচনায় পিছিয়ে যাননি তাঁরা। আমরা যেন এলভিস প্রিসলির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিটলস হয়ে সংগীতের একটা খোলা ময়দান পেয়ে যাই ঢাকা শহরেই। ‘উচ্চারণ’ নামে নিজের দল গড়লেন আজম খান, আর আমরা দেখতে পেলাম গড়ে উঠেছে স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী—আমাদেরই নিউ ইস্কাটনে। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে। এ ব্যান্ড দলটি গড়ে তোলার মূল কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু–পুত্র শেখ কামাল।
চার.
স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর বাড়িটা এখনো চোখে ভাসে। দোতলা বাড়ি। বাইরে ছোট একটা সাইনবোর্ড—স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী। মৌচাক মার্কেটের কাছে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে যখন হেঁটে হেঁটে নিউ ইস্কাটনের বাড়িতে ফিরতাম, তখনই গিটার কিংবা বঙ্গ বা কঙ্গোর আওয়াজ শুনতে পেতাম। খুব লোভ হতো একবার সেখানে গিয়ে মহড়া শুনে আসতে। সাহসে কুলাত না। জানতাম, এখানেই আসেন ফিরোজ সাঁই, আর ফেরদৌস ওয়াহিদ। লাকী আকান্দ আর হ্যাপী আকান্দকে তখনো সেভাবে চিনতাম না। অনেক পরে লাকি ভাই একদিন ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে কত কোলে নিয়ে বেড়িয়েছি, তোমার মনে নাই?’
আর আজম খান? আজম ভাই তো আমাদের স্কুলের ছাত্র! আমরা আট ভাই সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকেই পাস করেছি এসএসসি, আজম ভাইও সে স্কুল থেকেই পেয়েছিলেন এসএসসির সনদ।
পাঁচ.
বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজম খানের ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ গানটিই বোধ হয় জনপ্রিয়তায় আকাশ ছোঁয়। এর পর পপ গানের জয়জয়কার আর ঠেকানো যায়নি।
এখানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নামটি আসবে অবধারিতভাবেই। তিনি আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন টিভি–দর্শকদের। কনসার্টগুলো জনপ্রিয় হচ্ছিল, কিন্তু টেলিভিশনের কল্যাণে তাঁরা হয়ে উঠলেন দেশের তারকা শিল্পী। গানের জগতে এত জনপ্রিয়তা বোধ হয় তাঁরাই প্রথম পেয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘সপ্তবর্ণা’ অনুষ্ঠানে কিংবা ঈদের আনন্দমেলায় এই শিল্পীদের দেখা যেত। মনে আছে, একবার ‘অন্তক্ষরী’রও আয়োজন করেছিলেন তিনি। যে শব্দ দিয়ে একটা গান শেষ করবে এক পক্ষ, অন্য পক্ষ সেই শব্দ অথবা শব্দের শেষ অক্ষর দিয়ে শুরু করবে নতুন গান। হয়তো আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট করা থাকত, কিন্তু আমরা যারা সে অনুষ্ঠান দেখতাম, তাদের মন আনন্দে ভরে যেত।
ছয়.
ফিরোজ সাঁই মূলত লোকগানকে পপ সংগীতে পরিণত করে গাইতেন। ‘ইশকুল খুইলাছেরে মওলা’, ‘মন তুই চিনলিনারে’, ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’ ইত্যাদি গানগুলো তখন ছিল তরুণদের মুখে মুখে। পিলু মমতাজের ‘একদিন তো চলে যাব’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘নানি গো নানি’ গানটিও কি প্রথম তিনি গেয়েছিলেন? মনে করতে পারছি না। ফেরদৌস ওয়াহিদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ‘এমন একটা মা দেনা’ গানটি দিয়ে। তবে তাঁর ‘পাপী আমি তা তো জানি’, ‘স্মৃতির সেই পথে আজও’, ‘পাগলার মন নাচাইয়া’ গানগুলোও জনপ্রিয় হয়েছিল।
থাকলেন ফকির আলমগীর। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে বলতে হবে ‘কে দিলো জ্বালা এ বলো’ গানটি দিয়েই তাঁকে চিনেছিলাম। আর ‘কামেলিরা কাম করিয়া কোথায় জানি লুকাইসে ’ গানটি গেয়ে তিনি পাগল করে তুলেছিলেন একটি প্রজন্মকে।
ষাটের দশকে তাঁরা কোন রাজনীতি করতেন, কোন গান করতেন, সে কথায় গেলাম না। কারণ, আমরা আসলে স্বাধীনতা–উত্তর পপ সংগীতের সেই সোনালি সময়টা নিয়েই কথা বলতে চাইছি।
সাত.
‘সখিনা’র গানগুলো আরও অনেক পরের। আফ্রিকা বা রাজনীতিবিষয়ক গান গেয়েছেন তিনি। পয়লা মে আসবে, অথচ ফকির আলমগীরের কণ্ঠে ‘জন হেনরির’ গান শোনো যাবে না, এ তো অবিশ্বাস্য কথা। নানা ধরনের গানের মধ্য দিয়ে ফকির আলমগীর তাঁর সংগীতযাত্রা চালিয়ে গেছেন। আর আমরা এ কথাও জেনে গেছি, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধে শব্দসৈনিক হিসেবে তিনি কাল কাটিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণের একটি বড় কারণ তাঁর দেশপ্রেমিক মনটি—এ কথা বললে কিছু বাড়িয়ে বলা হয় না।
আট.
ফকির ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম পারিবারিকভাবেই। হঠাৎ জানা গেল, তিনি আমাদের মায়ের দেশের লোক। ফরিদপুরের ভাঙ্গার মানুষ। আমার প্রয়াত মামাতো ভাই এম এম শাহরিয়ার রুমীর সঙ্গে তাঁর খুব যোগাযোগ। সেই থেকে তিনি তো একেবারে আপন করে নিলেন আমাদের। দেখা হতে থাকল নানা জায়গায়। আমার আগের কর্মস্থলেও তিনি আসতেন। যেহেতু বিনোদন সাংবাদিকতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তাই মূলত মে–মাসের এক তারিখে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার যেন ছাপা হয়, সে অনুরোধ করতেন। নানা কারণে সব সময় সে অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি, তবে কখনো কখনো রাখতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।
আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়। যেবার ভূপেন হাজারিকা এসেছিলেন গান করতে, সেবার আমার সদ্যপ্রয়াত মেজ ভাই শাহীন রেজা নূরের সঙ্গে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে গিয়েছিলাম। শাহীন ভাই তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। হঠাৎ করিডরে চিৎকার–চ্যাঁচামেচি। ভূপেন হাজারিকার অনুরোধ ছিল একসঙ্গে অনেক অতিথি নয়, তাই ফকির আলমগীরকে করিডরেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফকির ভাই চিৎকার করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনিও ভূপেনের মতোই একজন গণসংগীত শিল্পী!
শাহীন ভাইয়ের মধ্যস্থতায় ফকির আলমগীর এলেন। তারপর ভূপেনের একেবারে নাক বরাবর দাঁড়িয়ে গাইলেন—
‘বিপ্লব বিপ্লব, সামাজিক বিপ্লব’
ভূপেন তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই দৃশ্য এখনো আমার মনে গাঢ় হয়ে আছে।
নয়.
উচ্চারণ, স্পন্দন, ঋষিজ—ব্যান্ড সংগীতের বেড়ে ওঠা এই শিল্পীদের হাত ধরেই। তারপর একের পর এক ব্যান্ডের জন্ম হতে থাকে। অনেকেই আসতে থাকেন এই ধারায়। অনেকেই তরুণদের মন কেড়ে নেন। আর আমরা এই নতুনদের মেনে নিয়েও ফিরে যাই তাঁদের কাছে। পুরোনো গানগুলো শুনলে বুঝতে পারি, এ গানগুলোই আমাদের শৈশব আর কৈশোর গড়ে দিয়েছে, আমাদের তৈরি করেছে যৌবনের দিনগুলোর জন্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভাবনাজগতে যখন অবিশ্বাসের চারা থেকে বেড়ে উঠছে গাছ, তখনই বিট আন্দোলন, হিপি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন আন্দোলন নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তবে ইউরোপই সবচেয়ে বেশি দোলা খেয়েছিল তাতে। জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য তখন এমন সব সেবন শুরু হলো, যা লৌকিকতার মধ্যেই অলৌকিকের সন্ধান দেয়। নেশা আর সংগীতের কেমন যেন যূথবন্ধন তৈরি হলো। ইউরোপ এখনো সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
তার ছোঁয়া এসে লেগেছিল আমাদের দেশেও। সে অন্য ইতিহাস। তবে গণসংগীত, লোকসংগীত আর পপ সংগীতের গলিত–মিলিত–স্রোতোধারায় প্রাণ পেয়েছিল এই নতুন ধারা। টিকেও গেল সেই প্রাণশক্তির বলেই।
দশ.
২০১৮ সালের বইমেলায় বাংলা একাডেমি অংশে ফকির ভাই আমাকে পাকড়াও করলেন একদিন। বললেন, ‘মোবাইলের ক্যামেরা অন করো। আমি কিছু কথা বলব।’
প্রায় ১০ মিনিট একনাগাড়ে কথা বললেন তিনি। আমি এখন সে ভিডিওটি খুঁজছি। বইমেলায় তাড়াহুড়ার মধ্যে তিনি কী নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেটা এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে কোনো হার্ডড্রাইভে নিশ্চয়ই খুঁজতে খুঁজতে একদিন সেটা পেয়ে যাব। আর তখন আবার জীবন্ত হয়ে উঠবেন ফকির আলমগীর।
আরও পড়ুন

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই প্রগাঢ় ছায়া দিতে থাকেন।
দুই.
সত্তরের দশকের শুরুর ঢাকা এখন স্বপ্নের মতো। কল্পনায় ধরা দেয় সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য। কংক্রিটের বস্তি তখনো এভাবে গড়ে ওঠেনি। ছোট ছোট একতলা, দোতলা বাড়িই বেশি। সরু রাস্তায় যানবাহন কম। রাস্তাঘাটে নিরন্ন মানুষের পাশাপাশি ফুলেফেঁপে অস্থির মানুষেরাও দৃশ্যমান।
কিছুদিন আগে, ১৬ ডিসেম্বর, ফাঁকা গুলির আওয়াজ জানান দিয়েছিল দেশ স্বাধীন হয়েছে। দলে দলে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরছিলেন দেশে। স্টেনগান শোনাচ্ছিল মধুর সংগীত। আমাকে কোলে নিয়ে চামেলিবাগের মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক ভাই এক হাতে স্টেনগানের গুলি ছুড়েছিলেন নারকেল গাছ লক্ষ্য করে। কাঁদি ছিঁড়ে সে গাছের ডাব ছিটকে পড়েছিল আমাদের সামনে—মনে পড়ে। এবং তখনই একদিন দেখতে পাই একটা নতুন গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িবারান্দার কোল ঘেঁষে। সে গাড়িতে করে আমাদের ঢাকার রাস্তা ঘুরিয়েও আনেন একজন। পরে শুনতে পাই, এ গাড়ি হাইজ্যাক করে আনা হয়েছে।
গ্রামের চাষা–মজুর যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, তারা কোনো কিছুর লোভ না করেই অস্ত্র জমা দিয়ে ফিরে গিয়েছিল যে যার কাজে। শহুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ হাইজ্যাক, লুটতরাজ করছিল। দেশ তখন ভঙ্গুর। পাকিস্তানিরা এ দেশের শস্যক্ষেত্র জ্বালিয়ে দিয়েছে, সেতু পুড়িয়ে দিয়েছে, গাড়ি নষ্ট করেছে এবং মানুষ মেরেছে। বিধ্বস্ত এ দেশ তখন একটু একটু করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সবার পেট থেকে খিদে তাড়ানো যাচ্ছিল না। সে কী ভয়াবহ খিদে!
সে রকম একটা সময়েই অন্যরকম এক সুর ভেসে উঠল। আমরা অবাক হয়ে শুনলাম, আজম খান গাইছেন—‘রেললাইনের ওই বস্তিতে, জন্মেছিল একটি ছেলে, মা তাঁর কাঁদে, ছেলেটি মরে গেছে…!’
আমরা অন্য ঘরে অন্য স্বর শুনতে পেলাম। সে স্বর ক্রমশই হয়ে উঠতে থাকল নাগরিক জীবনের প্রবল সত্যের প্রকাশ।
তিন.
আমাদের পপ জামানার শুরুর কথা বলতে গেলে আজম খানের কাছে ফিরে যেতে হয় বারবার। ঢ্যাঙা, লম্বা, মেদহীন এক শরীর থেকে যখন বেরিয়ে আসত শব্দ, তখন মনে হতো, এ যেন আমারই কথা বলছেন তিনি। খুবই সহজ–সরল লিরিক, কোনো গভীর কথাও ঠেসে দেওয়া নেই ‘আলাল দুলাল’ নামের গানটিতে, কিংবা ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা, ওরে ফুলবানু পারলি না বাঁচাতে’ গানগুলোয়। কিন্তু কীভাবে কীভাবে যেন তা আত্মার আত্মীয় হয়ে পড়ে। জীবনের যে পাঠ নিজেকে চিনতে শেখায়, এই অস্থির গানগুলো যেন সেদিকেই নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু কোনো এক অচেনা পথে।
সুশীল মানুষেরা একটু খেপে ওঠেন। তাঁরা বলার চেষ্টা করেন, ‘সংগীতের বারোটা বাজাচ্ছে এরা। আমাদের দেশের সংগীতের খোলনলচে পাল্টে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়!’
ধন্য হই এ কথা ভেবে যে, এই ধরনের সমালোচনায় পিছিয়ে যাননি তাঁরা। আমরা যেন এলভিস প্রিসলির পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিটলস হয়ে সংগীতের একটা খোলা ময়দান পেয়ে যাই ঢাকা শহরেই। ‘উচ্চারণ’ নামে নিজের দল গড়লেন আজম খান, আর আমরা দেখতে পেলাম গড়ে উঠেছে স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী—আমাদেরই নিউ ইস্কাটনে। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে। এ ব্যান্ড দলটি গড়ে তোলার মূল কারিগর ছিলেন বঙ্গবন্ধু–পুত্র শেখ কামাল।
চার.
স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর বাড়িটা এখনো চোখে ভাসে। দোতলা বাড়ি। বাইরে ছোট একটা সাইনবোর্ড—স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী। মৌচাক মার্কেটের কাছে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে যখন হেঁটে হেঁটে নিউ ইস্কাটনের বাড়িতে ফিরতাম, তখনই গিটার কিংবা বঙ্গ বা কঙ্গোর আওয়াজ শুনতে পেতাম। খুব লোভ হতো একবার সেখানে গিয়ে মহড়া শুনে আসতে। সাহসে কুলাত না। জানতাম, এখানেই আসেন ফিরোজ সাঁই, আর ফেরদৌস ওয়াহিদ। লাকী আকান্দ আর হ্যাপী আকান্দকে তখনো সেভাবে চিনতাম না। অনেক পরে লাকি ভাই একদিন ডেকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে কত কোলে নিয়ে বেড়িয়েছি, তোমার মনে নাই?’
আর আজম খান? আজম ভাই তো আমাদের স্কুলের ছাত্র! আমরা আট ভাই সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকেই পাস করেছি এসএসসি, আজম ভাইও সে স্কুল থেকেই পেয়েছিলেন এসএসসির সনদ।
পাঁচ.
বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজম খানের ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ গানটিই বোধ হয় জনপ্রিয়তায় আকাশ ছোঁয়। এর পর পপ গানের জয়জয়কার আর ঠেকানো যায়নি।
এখানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নামটি আসবে অবধারিতভাবেই। তিনি আজম খান, ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন টিভি–দর্শকদের। কনসার্টগুলো জনপ্রিয় হচ্ছিল, কিন্তু টেলিভিশনের কল্যাণে তাঁরা হয়ে উঠলেন দেশের তারকা শিল্পী। গানের জগতে এত জনপ্রিয়তা বোধ হয় তাঁরাই প্রথম পেয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ‘সপ্তবর্ণা’ অনুষ্ঠানে কিংবা ঈদের আনন্দমেলায় এই শিল্পীদের দেখা যেত। মনে আছে, একবার ‘অন্তক্ষরী’রও আয়োজন করেছিলেন তিনি। যে শব্দ দিয়ে একটা গান শেষ করবে এক পক্ষ, অন্য পক্ষ সেই শব্দ অথবা শব্দের শেষ অক্ষর দিয়ে শুরু করবে নতুন গান। হয়তো আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট করা থাকত, কিন্তু আমরা যারা সে অনুষ্ঠান দেখতাম, তাদের মন আনন্দে ভরে যেত।
ছয়.
ফিরোজ সাঁই মূলত লোকগানকে পপ সংগীতে পরিণত করে গাইতেন। ‘ইশকুল খুইলাছেরে মওলা’, ‘মন তুই চিনলিনারে’, ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’ ইত্যাদি গানগুলো তখন ছিল তরুণদের মুখে মুখে। পিলু মমতাজের ‘একদিন তো চলে যাব’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘নানি গো নানি’ গানটিও কি প্রথম তিনি গেয়েছিলেন? মনে করতে পারছি না। ফেরদৌস ওয়াহিদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ‘এমন একটা মা দেনা’ গানটি দিয়ে। তবে তাঁর ‘পাপী আমি তা তো জানি’, ‘স্মৃতির সেই পথে আজও’, ‘পাগলার মন নাচাইয়া’ গানগুলোও জনপ্রিয় হয়েছিল।
থাকলেন ফকির আলমগীর। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে বলতে হবে ‘কে দিলো জ্বালা এ বলো’ গানটি দিয়েই তাঁকে চিনেছিলাম। আর ‘কামেলিরা কাম করিয়া কোথায় জানি লুকাইসে ’ গানটি গেয়ে তিনি পাগল করে তুলেছিলেন একটি প্রজন্মকে।
ষাটের দশকে তাঁরা কোন রাজনীতি করতেন, কোন গান করতেন, সে কথায় গেলাম না। কারণ, আমরা আসলে স্বাধীনতা–উত্তর পপ সংগীতের সেই সোনালি সময়টা নিয়েই কথা বলতে চাইছি।
সাত.
‘সখিনা’র গানগুলো আরও অনেক পরের। আফ্রিকা বা রাজনীতিবিষয়ক গান গেয়েছেন তিনি। পয়লা মে আসবে, অথচ ফকির আলমগীরের কণ্ঠে ‘জন হেনরির’ গান শোনো যাবে না, এ তো অবিশ্বাস্য কথা। নানা ধরনের গানের মধ্য দিয়ে ফকির আলমগীর তাঁর সংগীতযাত্রা চালিয়ে গেছেন। আর আমরা এ কথাও জেনে গেছি, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধে শব্দসৈনিক হিসেবে তিনি কাল কাটিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীতের প্রতি তাঁর আকর্ষণের একটি বড় কারণ তাঁর দেশপ্রেমিক মনটি—এ কথা বললে কিছু বাড়িয়ে বলা হয় না।
আট.
ফকির ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম পারিবারিকভাবেই। হঠাৎ জানা গেল, তিনি আমাদের মায়ের দেশের লোক। ফরিদপুরের ভাঙ্গার মানুষ। আমার প্রয়াত মামাতো ভাই এম এম শাহরিয়ার রুমীর সঙ্গে তাঁর খুব যোগাযোগ। সেই থেকে তিনি তো একেবারে আপন করে নিলেন আমাদের। দেখা হতে থাকল নানা জায়গায়। আমার আগের কর্মস্থলেও তিনি আসতেন। যেহেতু বিনোদন সাংবাদিকতার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, তাই মূলত মে–মাসের এক তারিখে তাঁর একটা সাক্ষাৎকার যেন ছাপা হয়, সে অনুরোধ করতেন। নানা কারণে সব সময় সে অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি, তবে কখনো কখনো রাখতে পেরেছি বলে ভালো লাগছে।
আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়। যেবার ভূপেন হাজারিকা এসেছিলেন গান করতে, সেবার আমার সদ্যপ্রয়াত মেজ ভাই শাহীন রেজা নূরের সঙ্গে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে গিয়েছিলাম। শাহীন ভাই তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। হঠাৎ করিডরে চিৎকার–চ্যাঁচামেচি। ভূপেন হাজারিকার অনুরোধ ছিল একসঙ্গে অনেক অতিথি নয়, তাই ফকির আলমগীরকে করিডরেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফকির ভাই চিৎকার করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তিনিও ভূপেনের মতোই একজন গণসংগীত শিল্পী!
শাহীন ভাইয়ের মধ্যস্থতায় ফকির আলমগীর এলেন। তারপর ভূপেনের একেবারে নাক বরাবর দাঁড়িয়ে গাইলেন—
‘বিপ্লব বিপ্লব, সামাজিক বিপ্লব’
ভূপেন তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই দৃশ্য এখনো আমার মনে গাঢ় হয়ে আছে।
নয়.
উচ্চারণ, স্পন্দন, ঋষিজ—ব্যান্ড সংগীতের বেড়ে ওঠা এই শিল্পীদের হাত ধরেই। তারপর একের পর এক ব্যান্ডের জন্ম হতে থাকে। অনেকেই আসতে থাকেন এই ধারায়। অনেকেই তরুণদের মন কেড়ে নেন। আর আমরা এই নতুনদের মেনে নিয়েও ফিরে যাই তাঁদের কাছে। পুরোনো গানগুলো শুনলে বুঝতে পারি, এ গানগুলোই আমাদের শৈশব আর কৈশোর গড়ে দিয়েছে, আমাদের তৈরি করেছে যৌবনের দিনগুলোর জন্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভাবনাজগতে যখন অবিশ্বাসের চারা থেকে বেড়ে উঠছে গাছ, তখনই বিট আন্দোলন, হিপি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন আন্দোলন নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। তবে ইউরোপই সবচেয়ে বেশি দোলা খেয়েছিল তাতে। জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য তখন এমন সব সেবন শুরু হলো, যা লৌকিকতার মধ্যেই অলৌকিকের সন্ধান দেয়। নেশা আর সংগীতের কেমন যেন যূথবন্ধন তৈরি হলো। ইউরোপ এখনো সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
তার ছোঁয়া এসে লেগেছিল আমাদের দেশেও। সে অন্য ইতিহাস। তবে গণসংগীত, লোকসংগীত আর পপ সংগীতের গলিত–মিলিত–স্রোতোধারায় প্রাণ পেয়েছিল এই নতুন ধারা। টিকেও গেল সেই প্রাণশক্তির বলেই।
দশ.
২০১৮ সালের বইমেলায় বাংলা একাডেমি অংশে ফকির ভাই আমাকে পাকড়াও করলেন একদিন। বললেন, ‘মোবাইলের ক্যামেরা অন করো। আমি কিছু কথা বলব।’
প্রায় ১০ মিনিট একনাগাড়ে কথা বললেন তিনি। আমি এখন সে ভিডিওটি খুঁজছি। বইমেলায় তাড়াহুড়ার মধ্যে তিনি কী নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেটা এখন আর মনে করতে পারছি না। তবে কোনো হার্ডড্রাইভে নিশ্চয়ই খুঁজতে খুঁজতে একদিন সেটা পেয়ে যাব। আর তখন আবার জীবন্ত হয়ে উঠবেন ফকির আলমগীর।
আরও পড়ুন

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই...
২৫ জুলাই ২০২১
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ দিন আগেঅরুণ কর্মকার

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই...
২৫ জুলাই ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ দিন আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই...
২৫ জুলাই ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ দিন আগেসাদিয়া সুলতানা রিমি

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ফকির আলমগীর মারা গেলে আমরা বহুদূরের এক জগতে চলে যাই। সে জগতে ছায়ার মতো দুলতে থাকে পাঁচটি মূর্তি। বাস্তবে ফিরে এলে দেখি, একা ফেরদৌস ওয়াহিদ পাহারা দিচ্ছেন সেই সময়কে। বাকি চারজন—আজম খান, ফিরোজ সাঁই, পিলু মমতাজ, আর ফকির আলমগীর ছায়া হয়েই থেকে যান আমাদের কতিপয় হৃদয়ে। এবং সেখানেই...
২৫ জুলাই ২০২১
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ দিন আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ দিন আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ দিন আগে