
ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গণ-অভ্যুত্থানের পর এ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা ছিল কিছুটা রাজনৈতিক এবং কিছুটা অর্থনৈতিক। গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাংলাদেশ পেয়েছে। সুতরাং মানুষ আশা করেছিল সেই বিপর্যয় থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটবে। রাজনৈতিক দিকেও মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছু সংস্কার হবে। মানুষ প্রত্যাশা করেনি যে, রাতারাতি সব বদলে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল একটা ইতিবাচক দিকে যাবে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি। আমার কাছে মনে হয়, সেই প্রত্যাশার জায়গায় মানুষ বেশ কিছুটা হতাশ হয়েছে। যেমন, ছয় মাসের মধ্যেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তির এবং আস্থার জায়গা ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক দিকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক দিকেও আমরা নানা কথা শুনছি। আমি মনে করি, আগামী পথযাত্রায় এক উত্তরণের কথা মানুষ ভেবেছিল, কিন্তু সেই নির্দেশিকা মানুষ এখনো পায়নি। এ কারণে মানুষের মধ্যে একধরনের নৈরাশ্য কাজ করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াতেও ‘জেসমিন বিপ্লব’ হয়েছিল আমাদের জুলাই আন্দোলনের মতো করে। যে জন-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনটি হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে সেটা সফল হয়নি। তাহলে আমরাও কি তিউনিসিয়ার পথে হাঁটছি?
মাত্র ছয় মাস পরে এ রকম একটা চরম উপসংহারের কথাটা বলা ঠিক নয়। তবে, জন-আকাঙ্ক্ষার কতগুলো মাত্রিকতা থাকে। যেমন জনগণকে জানাতে হবে রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা কী। কিছু সংস্কার আছে যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের, সেসব জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া করা যায় না। আবার কিছু সংস্কার আছে যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব। সেই আশু সংস্কারগুলো এ সরকার করছে কি না—এইসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে খুব পরিষ্কারভাবে দিতে হবে। অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের মধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এরপর সবাই জানতে চাইবে, এইসব প্রস্তাবের ফলাফল কী।
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনার বিষয় কী হবে, দলগুলো কী ভূমিকা গ্রহণ করবে, নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রূপরেখা দেওয়া হবে কি না, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে কি না—এসব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মধ্যে। এগুলো যদি এ সরকার ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে অভ্যুত্থানের পরে যে আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটা বিঘ্নিত হবে।
তিউনিসিয়ায় পরিবর্তনের পর উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটেছিল। বাংলাদেশেও তো সে রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
একটা অভ্যুত্থানের পর যেকোনো গোষ্ঠী তাদের শক্তি সংহত করতে চাইবে। সেটা বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী শক্তি, যে-ই হোক না কেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোন পথ অবলম্বন করে, তারা নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে কি না এবং নিজেদের মধ্যে সক্রিয়তা বজায় রাখে কি না—তার ওপরই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথরেখা নির্ভর করবে। সুতরাং বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডানপন্থী, না মধ্যপন্থীরা সে জায়গায় ধীরে ধীরে অবস্থান নেবে, সেটা বলা যাবে না। এসব নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের গতিময়তার ভিত্তিতে।
সরকারের ছয় মাস পরেও জনজীবনে নাভিশ্বাস প্রশমিত হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান, আসছে না দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ। বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
এটার দুটি দিক আছে। একটি হলো, সরকার কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। রাজনীতি, সংবিধান, জনপ্রশাসনের বিষয়গুলো নিয়ে সরকার বেশি ব্যস্ত। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার চাকরি আছে কি না, কম মূল্যে তারা বাজার থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছে কি না, যানবাহন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে কি না—এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি চিন্তিত থাকে। এসব জায়গায় সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তারা কোন বিষয়গুলোর ওপরে কাজ করবে, সেটা পরের বিষয়।
আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে একটা বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিতে হবে, সেটা হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা কমছে না। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, পণ্য-আমদানি বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমছে না।
দ্বিতীয়ত, সরকার যে নীতিমালাগুলো গ্রহণ করছে, সেগুলো জনবান্ধব কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। উদাহরণ দিয়ে বলি, মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের বেশি। সে সময়েই সরকার ১০০টি পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করল। ফলে জনজীবনে আরও বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হলো। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য যে এইসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে, সেগুলো যে সঠিক বিবেচনাপ্রসূত, তা বলা যাবে না।
অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যে সরকার এখনো করতে পারছে না, তার কারণ হলো অগ্রাধিকারের বিষয়ে তাদের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যে নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো একে অন্যের পরিপন্থী। অর্থনৈতিক বিষয়ে যতখানি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, আমি মনে করি সরকার সেটা দিচ্ছে না।
নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। আমরা কেন পারছি না?
আমরা এর জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে একদিকে দায়ী করতে পারি। কিন্তু অন্যদিকে মানুষের দায়িত্বও এড়াতে পারি না। বিপ্লবের পরে শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থানের পরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০ শতাংশ। সেটা এখন তারা ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এর কারণ হলো সরকারের অঙ্গীকার ছিল। তারা সরকারসহ দল-মতনির্বিশেষে রাষ্ট্রটিকে আবার নতুন করে পুনর্গঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছে। একই সঙ্গে তারা নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেগুলো একে অপরের পরিপন্থী ছিল না। শ্রীলঙ্কার জনগণও তাদের ভূমিকা পালন করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব দিতে চাই। সেটা হলো, আমাদের এখানে একটা দাবি আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছয় মাস হয়ে গেল, কিন্তু দাবি-দাওয়ার কারও কোনো কমতি নেই। সরকারি কর্মচারী ভাতা বাড়ানোর দাবি, পদোন্নতির দাবি, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি—এভাবে যদি দাবি-দাওয়া চলতে থাকে, তাহলে সরকারের পক্ষে আসল বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এসব ব্যাপার ছিল না।
আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এ সরকারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাহলে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে এই আমল কীভাবে পৃথক?
আইএমএফ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত আরোপ করে থাকে। তারা যখন ঋণ দেবে তারা কিছু শর্ত দেবে। পৃথিবীর কোনো সংস্থাই শর্ত ছাড়া ঋণ দেয় না। কোনো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে তারা বড় করে দেখে। বর্তমানে আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে বা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আর শর্ত দিলেই যে তা মানতে হবে, তা তো হতে পারে না।
তবে সম্পদ আহরণের জন্য সরকার নানা পন্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকার সবচেয়ে সহজ পন্থাটি বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে কর বসিয়ে। কেন এসব করা হচ্ছে? প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আয়কর কি বাড়ানো যায় না? দেশের বহু মানুষ আয়কর দেন না। আয়কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংস্কার করতে হলে কোনো না কোনো গোষ্ঠী বা স্বার্থান্বেষী মহলকে আঘাত করতেই হবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ভাঙতে সাহায্য করবে। তারা তো অরাজনৈতিক একটি সরকার। সুতরাং সবার প্রত্যাশা যে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থ না দেখে জনগণের স্বার্থ দেখবে।
বাংলাদেশে তো বৈষম্য বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছেছে। এত তীব্র বৈষম্য জিইয়ে রেখে কীভাবে আমরা সামনে এগোতে পারব?
খুবই চমৎকার প্রশ্ন। যেকোনো বৈষম্য বজায় রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সামনে এগোনো সম্ভব নয়। এখন সবাই বলছে, গিনি সহগ শূন্য দশমিক পাঁচের কাছাকাছি, যেটা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে বৈষম্যের ক্ষেত্রে শুধু আয় আর সম্পদের বৈষম্য দেখলে হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের সুযোগের বৈষম্যও দেখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য আছে। বৈষম্য বজায় থাকলে কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। বৈষম্য থাকলে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কমানো সম্ভব না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈষম্য বজায় থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। কারণ, বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়তে
থাকলে জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জনগণের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি হবে। যারা সুবিধাভোগী নয় এবং সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নস্তরে অবস্থান করছে, তারা একসময় বিদ্রোহ করবে।
সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে সামাজিক মেরুকরণ অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। যাঁরা বিত্তবান তাঁরা এত বেশি বিত্তবান যে তাঁদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনিক শ্রেণির সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবার যাঁরা বিত্তহীন, তাঁরা এত বেশি বঞ্চনার মধ্যে আছে যে তাঁরা সবকিছুতেই অবহেলার শিকার। যদি এভাবে মেরুকরণ চলতে থাকে তাহলে সামাজিক সংহতি, সৌহার্দ্য, শান্তি ও স্থিরতা বিঘ্নিত হতে বাধ্য।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কীভাবে হতে পারে?
এ জন্য অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কার দরকার। কাঠামোগত সংস্কারের কতগুলো পন্থা আছে। যেমন যখন আমরা প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনের দিকে তাকাব, তখন দেখব আমাদের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া কি শুধু কৃষিতে, না বিরাট বিরাট শিল্পে? আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা কি শ্রমঘন প্রযুক্তি, নাকি পুঁজিঘন প্রযুক্তি? আমরা যদি কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রমঘন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে সাধারণ মানুষ বেশি উপকৃত হবে।
এরপর আমাদের নীতিমালায় কী আছে, সেটা দেখাও খুব বেশি জরুরি। আমরা পণ্য আমদানি করছি এবং নতুন নতুন পণ্যে কর বসাচ্ছি। আর পরোক্ষ করের কারণে এর অভিঘাত পড়ছে দরিদ্র মানুষের ওপর। কারণ, নতুনভাবে যখন কর বসানো হয়, তখন সেসব পণ্য এই দরিদ্র মানুষেরা কিনতে বাধ্য থাকে। এসব জিনিস ছাড়া তাদের জীবন চলে না। পোশাকের ওপর ১৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হলে বিত্তবানেরা সেটা কিনতে পারবেন, কিন্তু একজন দরিদ্র মানুষ সেটা কখনো কিনতে পারবেন না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সরকার পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য কমবে না। বৈষম্য কমানোর জন্য প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দিতে হবে। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের যে অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে, মানে ঢাকা শহরের মধ্যে ফুটপাতে যাঁরা বাস করেন, রাষ্ট্র তাঁদের কী ধরনের সাহায্য করছে, ঋণ দিচ্ছে কি না—সেটা খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে তাঁদের আবার উচ্ছেদও করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে এসব দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক নীতিমালা, উৎপাদনপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক একটা সমঝোতারও ব্যাপার আছে। এসব যদি একসঙ্গে করা সম্ভব হয়, তাহলে ধীরে ধীরে বৈষম্য কমে যাবে।
একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
গণ-অভ্যুত্থানের পর এ সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন জনগণের একটা প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা ছিল কিছুটা রাজনৈতিক এবং কিছুটা অর্থনৈতিক। গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাংলাদেশ পেয়েছে। সুতরাং মানুষ আশা করেছিল সেই বিপর্যয় থেকে ধীরে ধীরে উত্তরণ ঘটবে। রাজনৈতিক দিকেও মানুষের প্রত্যাশা ছিল কিছু সংস্কার হবে। মানুষ প্রত্যাশা করেনি যে, রাতারাতি সব বদলে যাবে। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল একটা ইতিবাচক দিকে যাবে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি। আমার কাছে মনে হয়, সেই প্রত্যাশার জায়গায় মানুষ বেশ কিছুটা হতাশ হয়েছে। যেমন, ছয় মাসের মধ্যেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।
মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বস্তির এবং আস্থার জায়গা ফিরে আসবে। অর্থনৈতিক দিকে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক দিকেও আমরা নানা কথা শুনছি। আমি মনে করি, আগামী পথযাত্রায় এক উত্তরণের কথা মানুষ ভেবেছিল, কিন্তু সেই নির্দেশিকা মানুষ এখনো পায়নি। এ কারণে মানুষের মধ্যে একধরনের নৈরাশ্য কাজ করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াতেও ‘জেসমিন বিপ্লব’ হয়েছিল আমাদের জুলাই আন্দোলনের মতো করে। যে জন-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আন্দোলনটি হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে সেটা সফল হয়নি। তাহলে আমরাও কি তিউনিসিয়ার পথে হাঁটছি?
মাত্র ছয় মাস পরে এ রকম একটা চরম উপসংহারের কথাটা বলা ঠিক নয়। তবে, জন-আকাঙ্ক্ষার কতগুলো মাত্রিকতা থাকে। যেমন জনগণকে জানাতে হবে রাষ্ট্র কোন দিকে যাচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা কী। কিছু সংস্কার আছে যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদের, সেসব জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া করা যায় না। আবার কিছু সংস্কার আছে যেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব। সেই আশু সংস্কারগুলো এ সরকার করছে কি না—এইসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে খুব পরিষ্কারভাবে দিতে হবে। অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের মধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এরপর সবাই জানতে চাইবে, এইসব প্রস্তাবের ফলাফল কী।
ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনার বিষয় কী হবে, দলগুলো কী ভূমিকা গ্রহণ করবে, নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রূপরেখা দেওয়া হবে কি না, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে কি না—এসব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেকের মধ্যে। এগুলো যদি এ সরকার ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবে অভ্যুত্থানের পরে যে আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটা বিঘ্নিত হবে।
তিউনিসিয়ায় পরিবর্তনের পর উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটেছিল। বাংলাদেশেও তো সে রকম অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
একটা অভ্যুত্থানের পর যেকোনো গোষ্ঠী তাদের শক্তি সংহত করতে চাইবে। সেটা বামপন্থী, মধ্যপন্থী ও ডানপন্থী শক্তি, যে-ই হোক না কেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো কোন পথ অবলম্বন করে, তারা নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে কি না এবং নিজেদের মধ্যে সক্রিয়তা বজায় রাখে কি না—তার ওপরই ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথরেখা নির্ভর করবে। সুতরাং বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডানপন্থী, না মধ্যপন্থীরা সে জায়গায় ধীরে ধীরে অবস্থান নেবে, সেটা বলা যাবে না। এসব নির্ধারিত হবে ভবিষ্যতের গতিময়তার ভিত্তিতে।
সরকারের ছয় মাস পরেও জনজীবনে নাভিশ্বাস প্রশমিত হয়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান, আসছে না দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগ। বিষয়গুলো কীভাবে দেখেন?
এটার দুটি দিক আছে। একটি হলো, সরকার কোন বিষয়টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। রাজনীতি, সংবিধান, জনপ্রশাসনের বিষয়গুলো নিয়ে সরকার বেশি ব্যস্ত। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সাধারণ মানুষের কাছে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তার চাকরি আছে কি না, কম মূল্যে তারা বাজার থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছে কি না, যানবাহন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে কি না—এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ বেশি চিন্তিত থাকে। এসব জায়গায় সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এরপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তারা কোন বিষয়গুলোর ওপরে কাজ করবে, সেটা পরের বিষয়।
আমার কাছে মনে হয়, এ মুহূর্তে একটা বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিতে হবে, সেটা হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা কমছে না। সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে, পণ্য-আমদানি বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমছে না।
দ্বিতীয়ত, সরকার যে নীতিমালাগুলো গ্রহণ করছে, সেগুলো জনবান্ধব কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। উদাহরণ দিয়ে বলি, মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের বেশি। সে সময়েই সরকার ১০০টি পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করল। ফলে জনজীবনে আরও বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হলো। এতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য যে এইসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে, সেগুলো যে সঠিক বিবেচনাপ্রসূত, তা বলা যাবে না।
অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান যে সরকার এখনো করতে পারছে না, তার কারণ হলো অগ্রাধিকারের বিষয়ে তাদের কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যে নীতিমালা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলো একে অন্যের পরিপন্থী। অর্থনৈতিক বিষয়ে যতখানি অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার, আমি মনে করি সরকার সেটা দিচ্ছে না।
নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। আমরা কেন পারছি না?
আমরা এর জন্য সরকার ও রাষ্ট্রকে একদিকে দায়ী করতে পারি। কিন্তু অন্যদিকে মানুষের দায়িত্বও এড়াতে পারি না। বিপ্লবের পরে শ্রীলঙ্কা আমাদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থানের পরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০ শতাংশ। সেটা এখন তারা ২ শতাংশে নিয়ে এসেছে। এর কারণ হলো সরকারের অঙ্গীকার ছিল। তারা সরকারসহ দল-মতনির্বিশেষে রাষ্ট্রটিকে আবার নতুন করে পুনর্গঠিত করতে প্রয়াসী হয়েছে। একই সঙ্গে তারা নীতিমালা এমনভাবে তৈরি করেছিল, যেগুলো একে অপরের পরিপন্থী ছিল না। শ্রীলঙ্কার জনগণও তাদের ভূমিকা পালন করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা বিষয়ের ওপরে গুরুত্ব দিতে চাই। সেটা হলো, আমাদের এখানে একটা দাবি আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছয় মাস হয়ে গেল, কিন্তু দাবি-দাওয়ার কারও কোনো কমতি নেই। সরকারি কর্মচারী ভাতা বাড়ানোর দাবি, পদোন্নতির দাবি, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি—এভাবে যদি দাবি-দাওয়া চলতে থাকে, তাহলে সরকারের পক্ষে আসল বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এসব ব্যাপার ছিল না।
আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এ সরকারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাহলে বিএনপি-জামায়াত-আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে এই আমল কীভাবে পৃথক?
আইএমএফ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঋণ দেওয়ার সময় শর্ত আরোপ করে থাকে। তারা যখন ঋণ দেবে তারা কিছু শর্ত দেবে। পৃথিবীর কোনো সংস্থাই শর্ত ছাড়া ঋণ দেয় না। কোনো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে তারা বড় করে দেখে। বর্তমানে আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে বা শর্ত চাপানোর চেষ্টা করছে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আর শর্ত দিলেই যে তা মানতে হবে, তা তো হতে পারে না।
তবে সম্পদ আহরণের জন্য সরকার নানা পন্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকার সবচেয়ে সহজ পন্থাটি বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে কর বসিয়ে। কেন এসব করা হচ্ছে? প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর সুযোগ আছে। আয়কর কি বাড়ানো যায় না? দেশের বহু মানুষ আয়কর দেন না। আয়কর আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংস্কার করতে হলে কোনো না কোনো গোষ্ঠী বা স্বার্থান্বেষী মহলকে আঘাত করতেই হবে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ভাঙতে সাহায্য করবে। তারা তো অরাজনৈতিক একটি সরকার। সুতরাং সবার প্রত্যাশা যে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থ না দেখে জনগণের স্বার্থ দেখবে।
বাংলাদেশে তো বৈষম্য বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছেছে। এত তীব্র বৈষম্য জিইয়ে রেখে কীভাবে আমরা সামনে এগোতে পারব?
খুবই চমৎকার প্রশ্ন। যেকোনো বৈষম্য বজায় রেখে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সামনে এগোনো সম্ভব নয়। এখন সবাই বলছে, গিনি সহগ শূন্য দশমিক পাঁচের কাছাকাছি, যেটা বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। তবে বৈষম্যের ক্ষেত্রে শুধু আয় আর সম্পদের বৈষম্য দেখলে হবে না। সেই সঙ্গে আমাদের সুযোগের বৈষম্যও দেখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য আছে। বৈষম্য বজায় থাকলে কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। বৈষম্য থাকলে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কমানো সম্ভব না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বৈষম্য বজায় থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। কারণ, বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বাড়তে
থাকলে জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকবে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও জনগণের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি হবে। যারা সুবিধাভোগী নয় এবং সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নস্তরে অবস্থান করছে, তারা একসময় বিদ্রোহ করবে।
সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে সামাজিক মেরুকরণ অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। যাঁরা বিত্তবান তাঁরা এত বেশি বিত্তবান যে তাঁদের সঙ্গে উন্নত বিশ্বের ধনিক শ্রেণির সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবার যাঁরা বিত্তহীন, তাঁরা এত বেশি বঞ্চনার মধ্যে আছে যে তাঁরা সবকিছুতেই অবহেলার শিকার। যদি এভাবে মেরুকরণ চলতে থাকে তাহলে সামাজিক সংহতি, সৌহার্দ্য, শান্তি ও স্থিরতা বিঘ্নিত হতে বাধ্য।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কীভাবে হতে পারে?
এ জন্য অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কার দরকার। কাঠামোগত সংস্কারের কতগুলো পন্থা আছে। যেমন যখন আমরা প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনের দিকে তাকাব, তখন দেখব আমাদের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া কি শুধু কৃষিতে, না বিরাট বিরাট শিল্পে? আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, সেটা কি শ্রমঘন প্রযুক্তি, নাকি পুঁজিঘন প্রযুক্তি? আমরা যদি কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রমঘন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ দিই, তাহলে সাধারণ মানুষ বেশি উপকৃত হবে।
এরপর আমাদের নীতিমালায় কী আছে, সেটা দেখাও খুব বেশি জরুরি। আমরা পণ্য আমদানি করছি এবং নতুন নতুন পণ্যে কর বসাচ্ছি। আর পরোক্ষ করের কারণে এর অভিঘাত পড়ছে দরিদ্র মানুষের ওপর। কারণ, নতুনভাবে যখন কর বসানো হয়, তখন সেসব পণ্য এই দরিদ্র মানুষেরা কিনতে বাধ্য থাকে। এসব জিনিস ছাড়া তাদের জীবন চলে না। পোশাকের ওপর ১৫ শতাংশ কর বৃদ্ধি করা হলে বিত্তবানেরা সেটা কিনতে পারবেন, কিন্তু একজন দরিদ্র মানুষ সেটা কখনো কিনতে পারবেন না। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্র, সরকার পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য কমবে না। বৈষম্য কমানোর জন্য প্রত্যক্ষ কর আদায়ে জোর দিতে হবে। আর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের যে অনানুষ্ঠানিক খাত রয়েছে, মানে ঢাকা শহরের মধ্যে ফুটপাতে যাঁরা বাস করেন, রাষ্ট্র তাঁদের কী ধরনের সাহায্য করছে, ঋণ দিচ্ছে কি না—সেটা খুব জরুরি। মাঝেমধ্যে তাঁদের আবার উচ্ছেদও করা হয়। খুব স্বাভাবিকভাবে এসব দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমি মনে করি, অর্থনৈতিক নীতিমালা, উৎপাদনপ্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক একটা সমঝোতারও ব্যাপার আছে। এসব যদি একসঙ্গে করা সম্ভব হয়, তাহলে ধীরে ধীরে বৈষম্য কমে যাবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল...
৮ ঘণ্টা আগে
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
৮ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন ববির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রহমান। ঘটনার শিকার ছাত্রী ৫ অক্টোবর অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর মামুন স্যারের নির্দেশে বিকেল সাড়ে ৪টায় থিসিসের প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য তাঁর কাছে যাই। সেখানে স্যারের পক্ষ থেকে অপ্রাসঙ্গিক এবং অনৈতিক আচরণের সম্মুখীন হই। আমাকে হুমকি দেন, বিভাগের কোর্সগুলোতে তিনি পরীক্ষক হিসেবে আছেন। সুতরাং অনেক কিছু করতে পারেন।’ ২০২৩ সাল থেকে ওই শিক্ষক তাঁকে বিরক্ত করছেন। এ জন্য তিনি মানসিক ট্রমায় আছেন। এদিকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অপূর্ব রায়কে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি মুখ খুলতে বারণ করেছেন।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ডিগ্রি অর্জনের স্থান নয়, বরং তা বিবেক ও নীতি-নৈতিকতা অর্জনের জায়গা। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস করানোর নামে একজন ছাত্রীকে যে ধরনের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তা লজ্জাজনক তো বটেই, উচ্চশিক্ষার নীতিনৈতিকতার বিরুদ্ধে অবস্থানও। আশঙ্কার বিষয় হলো, ওই ছাত্রী আড়াই মাস আগে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা বিভাগের সদিচ্ছাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্যমতে, ওই শিক্ষক তাঁকে একাডেমিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার হুমকিও দিয়েছেন। একজন শিক্ষক যখন নিজের পদমর্যাদাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে ‘পরীক্ষক’ হওয়ার ভয় দেখান, তখন তা সরাসরি ক্ষমতার অপব্যবহার। দুই বছর ধরে একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক ট্রমার মধ্যে রাখা কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়। যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে এবং বিভাগ তা আড়ালের চেষ্টা করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করবেন কোথায়?
আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশনা রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে সেটি পালন করতে হবে। পাশাপাশি অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষককে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিতে হবে, যাতে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ছাত্রীর একাডেমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা ও স্নেহের। কিন্তু সেই সম্পর্কের আড়ালে লালসা ও হুমকির সংস্কৃতি গড়ে উঠলে সেই বিদ্যাপীঠ তার গৌরব হারায়। আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন ববির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রহমান। ঘটনার শিকার ছাত্রী ৫ অক্টোবর অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘গত ১৬ সেপ্টেম্বর মামুন স্যারের নির্দেশে বিকেল সাড়ে ৪টায় থিসিসের প্রশ্নপত্র তৈরির জন্য তাঁর কাছে যাই। সেখানে স্যারের পক্ষ থেকে অপ্রাসঙ্গিক এবং অনৈতিক আচরণের সম্মুখীন হই। আমাকে হুমকি দেন, বিভাগের কোর্সগুলোতে তিনি পরীক্ষক হিসেবে আছেন। সুতরাং অনেক কিছু করতে পারেন।’ ২০২৩ সাল থেকে ওই শিক্ষক তাঁকে বিরক্ত করছেন। এ জন্য তিনি মানসিক ট্রমায় আছেন। এদিকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অপূর্ব রায়কে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি মুখ খুলতে বারণ করেছেন।
একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ডিগ্রি অর্জনের স্থান নয়, বরং তা বিবেক ও নীতি-নৈতিকতা অর্জনের জায়গা। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিস করানোর নামে একজন ছাত্রীকে যে ধরনের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তা লজ্জাজনক তো বটেই, উচ্চশিক্ষার নীতিনৈতিকতার বিরুদ্ধে অবস্থানও। আশঙ্কার বিষয় হলো, ওই ছাত্রী আড়াই মাস আগে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা বিভাগের সদিচ্ছাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্যমতে, ওই শিক্ষক তাঁকে একাডেমিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার হুমকিও দিয়েছেন। একজন শিক্ষক যখন নিজের পদমর্যাদাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে ‘পরীক্ষক’ হওয়ার ভয় দেখান, তখন তা সরাসরি ক্ষমতার অপব্যবহার। দুই বছর ধরে একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক ট্রমার মধ্যে রাখা কোনোভাবেই সাধারণ ঘটনা নয়। যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ওঠে এবং বিভাগ তা আড়ালের চেষ্টা করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করবেন কোথায়?
আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশনা রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কঠোরভাবে সেটি পালন করতে হবে। পাশাপাশি অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত শিক্ষককে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিতে হবে, যাতে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ছাত্রীর একাডেমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা ও স্নেহের। কিন্তু সেই সম্পর্কের আড়ালে লালসা ও হুমকির সংস্কৃতি গড়ে উঠলে সেই বিদ্যাপীঠ তার গৌরব হারায়। আমাদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল...
৮ ঘণ্টা আগে
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
৮ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগেসিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল, যুদ্ধক্ষেত্রের প্রথম সারির সেই সহযোদ্ধারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। শত্রুতাও দেখা দিয়েছে পারস্পরিক।
যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে খালেদ মোশাররফের ছিল অতুলনীয় সাহসী এক বিদ্রোহ। আর দেশবাসীর একটি অত্যন্ত সংকটময় ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুহূর্তে জিয়াউর রহমান বেতারে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর ভীষণ রকমের প্রয়োজনীয় যে ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, ইতিহাসে তা লেখা রয়েছে। যুদ্ধের কিছুদিন পরেই কিন্তু দেখা গেল, খালেদ মোশাররফ শিকার হয়েছেন অবিশ্বাস্য রকমের নির্মম এক হত্যাকাণ্ডের।
আবুল মঞ্জুর, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধ করেছেন। তবে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যুদ্ধের যিনি ধারেকাছেও ছিলেন না, যাঁর বিরুদ্ধে উল্টো গুঞ্জন ছিল পাকিস্তানিদের সঙ্গে সহযোগিতার। মঞ্জুর হত্যা নিয়ে মামলা একটা হয়েছিল, কিন্তু বিচার হয়নি।
যুদ্ধ করবেন বলে পাকিস্তান থেকে ছুটে এলেন আবু তাহের; যুদ্ধ করলেনও, যুদ্ধে একটি পা হারালেন। যুদ্ধশেষে তিনি তৎপর হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর ভেতর বিপ্লবী কর্মে; পরিণামে তাঁকে অভিযুক্ত হতে হলো সেনাবাহিনীর অফিসার ও তাঁদের পরিজনদের হত্যার প্ররোচনাদানকারী হিসেবে।
এম এ জলিল যুদ্ধ করেছেন দেশের ভেতরে থেকেই; যুদ্ধের পরে তিনি গ্রেপ্তার হলেন ভারতীয় বাহিনীর কিছু সদস্যের লুণ্ঠন তৎপরতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। জিয়াউদ্দিন আহমদ একজন দক্ষ সামরিক অফিসার ছিলেন, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধশেষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের নীতি সঠিক নয় বলে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন সর্বহারা পার্টিতে।
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে এসব ঘটনায় বোঝাই যাচ্ছিল, রাষ্ট্র স্থিতিশীলতা পায়নি। যুদ্ধের সময় কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, স্বাধীন বাংলাদেশে আবার সামরিক শাসন আসবে। কিন্তু সেই অপ্রত্যাশিত ও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। একবার নয়, কয়েকবার। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে দেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি। কথা উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য কোনো সামরিক বাহিনী থাকার আদৌ দরকার আছে কি না, তা নিয়েই। থাকলেও সেটা কেমন ধরনের এবং কোন মাত্রার হবে, সেটা নিয়েও। কিন্তু সে বিষয়ে ভাববার সময় পাওয়া যায়নি। নতুন শাসকদের উদ্বেগ ছিল পুরোনো ব্যবস্থাকে আপৎকালীন বন্দোবস্ত হিসেবে হলেও চালু রাখা যায় কি না, তা নিয়ে। সেটা সম্ভব হয়েছিল এবং সেটা করতে গিয়ে পুরোনো আইনকানুন, আদালত, আমলাতন্ত্র—সবই চালু থাকল।
সামরিক বাহিনীও আগের ধরনেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করা হলো। ফলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং না নেওয়া—এই দুই ভাগের ভেতর নীরব ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হলো। গঠিত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত সামরিক বাহিনীর একটি দ্বন্দ্বও দেখা দিল। সংবিধান প্রণীত হলো, কিন্তু দেখা গেল, তাতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্বের স্বীকৃতি নেই। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বের কথা ভুলে তাকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করা হলো। অনেকটা পাকিস্তানি কায়দাতেই।
যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুজিব বাহিনীর দ্বন্দ্ব ছিল, যুদ্ধের পরে সেটা প্রকট হলো এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমে প্রধানমন্ত্রিত্ব, পরে মন্ত্রিত্ব থেকেই অপসারিত হলেন। অব্যবস্থাপনার দরুন দেশে দুর্ভিক্ষের মতো একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। তাতে সরকারি হিসাবে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়; আর বেসরকারি হিসাবে অনেক বেশি। চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড, পরীক্ষায় নকল, সম্পদ লুণ্ঠন—এসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, এমন আশা ছিল সর্বজনীন। তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকল। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, এমন যুদ্ধাপরাধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলো। অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। অল্প পরে ১৯৭৫-এর শুরুতে এল একদলীয় শাসন। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটল না। শুরুতে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী, আর সেটা ছিল সরকারের জন্য বিরাট এক মূলধন। কিন্তু সময় যতই এগোতে থাকল, সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা ততই বাড়তে থাকল।
সবচেয়ে মর্মান্তিক এবং একেবারেই অবিশ্বাস্য যে ঘটনা ঘটল, সেটি হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা। সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারের নেতৃত্বে এটা ঘটল। সরাসরি না হলেও ঘটনার পেছনে যে আমেরিকার সমর্থন ছিল, এই ধারণা অন্যায্য নয়। ক্ষমতায় এলেন আওয়ামী লীগেরই মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ; তিনি যে মার্কিনপন্থী ছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমেরিকা বাংলাদেশের অভ্যুদয় সমর্থন করেনি, তবে মেনে নিয়েছিল এবং চেষ্টা করেছিল নিজের প্রভাববলয়ের ভেতরে তাকে দ্রুত নিয়ে আসতে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জায়গায় মোশতাকের ক্ষমতাপ্রাপ্তিতে আমেরিকার জন্য সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ ছিল। মোশতাক সরকারের চারিত্রিক ঝোঁকটা কোন দিকে, তা বোঝা গিয়েছিল ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গেই, তারা যখন ‘জয় বাংলা’র জায়গায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে এল, বাংলাদেশ বেতারের নাম দিল রেডিও বাংলাদেশ, রেডিও পাকিস্তানের আদলে, তখনই।
মোশতাকের সেই ‘বিপ্লব’ অবশ্য টেকসই প্রমাণিত হয়নি, তিন মাস হতে না হতেই তিনি এবং তাঁর ‘সূর্য-সন্তানেরা’ উৎখাত হয়েছেন। তবে ব্যাপার সুবিধার নয় দেখে জেলখানায় লোক পাঠিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের বন্দী চার শীর্ষ নেতাকে হত্যা করিয়েছেন। তারপরে ক্যু, পাল্টা ক্যু ঘটেছে।
তারপরে এরশাদ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। পরে ‘গণতন্ত্রে’র প্রত্যাবর্তন। মাঝখানে ছদ্মবেশী সেনাশাসন। এরপরে ভোটারবিহীন নির্বাচন। সবকিছুই হলো, কিন্তু রাষ্ট্রের মালিকানা এল না জনগণের হাতে। অধরাই থাকল ‘সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ’। আজও তাই বিজয়ের চুয়ান্ন বছরে সাধারণ মানুষ রহস্যাবৃত স্বাধীনতাকেই খোঁজে।

একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল, যুদ্ধক্ষেত্রের প্রথম সারির সেই সহযোদ্ধারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। শত্রুতাও দেখা দিয়েছে পারস্পরিক।
যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে খালেদ মোশাররফের ছিল অতুলনীয় সাহসী এক বিদ্রোহ। আর দেশবাসীর একটি অত্যন্ত সংকটময় ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় মুহূর্তে জিয়াউর রহমান বেতারে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর ভীষণ রকমের প্রয়োজনীয় যে ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, ইতিহাসে তা লেখা রয়েছে। যুদ্ধের কিছুদিন পরেই কিন্তু দেখা গেল, খালেদ মোশাররফ শিকার হয়েছেন অবিশ্বাস্য রকমের নির্মম এক হত্যাকাণ্ডের।
আবুল মঞ্জুর, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধ করেছেন। তবে মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, যুদ্ধের যিনি ধারেকাছেও ছিলেন না, যাঁর বিরুদ্ধে উল্টো গুঞ্জন ছিল পাকিস্তানিদের সঙ্গে সহযোগিতার। মঞ্জুর হত্যা নিয়ে মামলা একটা হয়েছিল, কিন্তু বিচার হয়নি।
যুদ্ধ করবেন বলে পাকিস্তান থেকে ছুটে এলেন আবু তাহের; যুদ্ধ করলেনও, যুদ্ধে একটি পা হারালেন। যুদ্ধশেষে তিনি তৎপর হয়েছিলেন সেনাবাহিনীর ভেতর বিপ্লবী কর্মে; পরিণামে তাঁকে অভিযুক্ত হতে হলো সেনাবাহিনীর অফিসার ও তাঁদের পরিজনদের হত্যার প্ররোচনাদানকারী হিসেবে।
এম এ জলিল যুদ্ধ করেছেন দেশের ভেতরে থেকেই; যুদ্ধের পরে তিনি গ্রেপ্তার হলেন ভারতীয় বাহিনীর কিছু সদস্যের লুণ্ঠন তৎপরতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। জিয়াউদ্দিন আহমদ একজন দক্ষ সামরিক অফিসার ছিলেন, পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে নেমেছিলেন। যুদ্ধশেষে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের নীতি সঠিক নয় বলে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিলেন সর্বহারা পার্টিতে।
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে এসব ঘটনায় বোঝাই যাচ্ছিল, রাষ্ট্র স্থিতিশীলতা পায়নি। যুদ্ধের সময় কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, স্বাধীন বাংলাদেশে আবার সামরিক শাসন আসবে। কিন্তু সেই অপ্রত্যাশিত ও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে। একবার নয়, কয়েকবার। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে দেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্রের চরিত্র বদলায়নি। কথা উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য কোনো সামরিক বাহিনী থাকার আদৌ দরকার আছে কি না, তা নিয়েই। থাকলেও সেটা কেমন ধরনের এবং কোন মাত্রার হবে, সেটা নিয়েও। কিন্তু সে বিষয়ে ভাববার সময় পাওয়া যায়নি। নতুন শাসকদের উদ্বেগ ছিল পুরোনো ব্যবস্থাকে আপৎকালীন বন্দোবস্ত হিসেবে হলেও চালু রাখা যায় কি না, তা নিয়ে। সেটা সম্ভব হয়েছিল এবং সেটা করতে গিয়ে পুরোনো আইনকানুন, আদালত, আমলাতন্ত্র—সবই চালু থাকল।
সামরিক বাহিনীও আগের ধরনেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। পাকিস্তান প্রত্যাগত সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করা হলো। ফলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া এবং না নেওয়া—এই দুই ভাগের ভেতর নীরব ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হলো। গঠিত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত সামরিক বাহিনীর একটি দ্বন্দ্বও দেখা দিল। সংবিধান প্রণীত হলো, কিন্তু দেখা গেল, তাতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্বের স্বীকৃতি নেই। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বের কথা ভুলে তাকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করা হলো। অনেকটা পাকিস্তানি কায়দাতেই।
যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুজিব বাহিনীর দ্বন্দ্ব ছিল, যুদ্ধের পরে সেটা প্রকট হলো এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমে প্রধানমন্ত্রিত্ব, পরে মন্ত্রিত্ব থেকেই অপসারিত হলেন। অব্যবস্থাপনার দরুন দেশে দুর্ভিক্ষের মতো একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। তাতে সরকারি হিসাবে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়; আর বেসরকারি হিসাবে অনেক বেশি। চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড, পরীক্ষায় নকল, সম্পদ লুণ্ঠন—এসব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে, এমন আশা ছিল সর্বজনীন। তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমাগত দূরে সরে যেতে থাকল। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই, এমন যুদ্ধাপরাধীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলো। অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। অল্প পরে ১৯৭৫-এর শুরুতে এল একদলীয় শাসন। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটল না। শুরুতে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী, আর সেটা ছিল সরকারের জন্য বিরাট এক মূলধন। কিন্তু সময় যতই এগোতে থাকল, সরকারের জনবিচ্ছিন্নতা ততই বাড়তে থাকল।
সবচেয়ে মর্মান্তিক এবং একেবারেই অবিশ্বাস্য যে ঘটনা ঘটল, সেটি হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা। সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারের নেতৃত্বে এটা ঘটল। সরাসরি না হলেও ঘটনার পেছনে যে আমেরিকার সমর্থন ছিল, এই ধারণা অন্যায্য নয়। ক্ষমতায় এলেন আওয়ামী লীগেরই মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ; তিনি যে মার্কিনপন্থী ছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমেরিকা বাংলাদেশের অভ্যুদয় সমর্থন করেনি, তবে মেনে নিয়েছিল এবং চেষ্টা করেছিল নিজের প্রভাববলয়ের ভেতরে তাকে দ্রুত নিয়ে আসতে।
শেখ মুজিবুর রহমানের জায়গায় মোশতাকের ক্ষমতাপ্রাপ্তিতে আমেরিকার জন্য সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ ছিল। মোশতাক সরকারের চারিত্রিক ঝোঁকটা কোন দিকে, তা বোঝা গিয়েছিল ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গেই, তারা যখন ‘জয় বাংলা’র জায়গায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ নিয়ে এল, বাংলাদেশ বেতারের নাম দিল রেডিও বাংলাদেশ, রেডিও পাকিস্তানের আদলে, তখনই।
মোশতাকের সেই ‘বিপ্লব’ অবশ্য টেকসই প্রমাণিত হয়নি, তিন মাস হতে না হতেই তিনি এবং তাঁর ‘সূর্য-সন্তানেরা’ উৎখাত হয়েছেন। তবে ব্যাপার সুবিধার নয় দেখে জেলখানায় লোক পাঠিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের বন্দী চার শীর্ষ নেতাকে হত্যা করিয়েছেন। তারপরে ক্যু, পাল্টা ক্যু ঘটেছে।
তারপরে এরশাদ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। পরে ‘গণতন্ত্রে’র প্রত্যাবর্তন। মাঝখানে ছদ্মবেশী সেনাশাসন। এরপরে ভোটারবিহীন নির্বাচন। সবকিছুই হলো, কিন্তু রাষ্ট্রের মালিকানা এল না জনগণের হাতে। অধরাই থাকল ‘সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ’। আজও তাই বিজয়ের চুয়ান্ন বছরে সাধারণ মানুষ রহস্যাবৃত স্বাধীনতাকেই খোঁজে।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
৮ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগেআসিফ

১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ। সংবাদপত্রের ভাষায় এটি একটি ‘কালো অধ্যায়’, যা জাতিকেই স্তব্ধ ও মর্মাহত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিশাল আর্কাইভ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দগ্ধ হয়েছে সাত দশকের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচী।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ইমারত নয়, এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। ছায়ানটের প্রাচীন বই, সংগীতচর্চার দলিল, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ—সবই ছাই হয়ে গেছে। উদীচীর সংগ্রহে থাকা গণসংগীত, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দলিল, নাট্যচর্চার নথি ও আর্কাইভও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সংরক্ষিত ফাইলগুলো ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। এসব নথির অনেকগুলোই হয়তো কখনো ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে যে ক্ষতির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তা শুধু বস্তুগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডারের অপূরণীয় ক্ষতি।
এই ঘটনাকে যদি বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তাহলে আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংসের স্মৃতি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ছিল হারানো জ্ঞানের প্রতীক। প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ছিল আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগারে কয়েক লাখ পাণ্ডুলিপি ও গ্রন্থ সংরক্ষিত ছিল বলা হয়। গ্রিক, মিসরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয়, চীনা—বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞান সেখানে একত্র হয়েছিল। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে মানবসভ্যতা কয়েক হাজার বছরের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা—অসংখ্য ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ইতিহাসবিদেরা বলেন, যদি আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার টিকে থাকত, তবে মানবসভ্যতা হয়তো আরও কয়েক শতাব্দী আগে আধুনিকতায় পৌঁছাত। আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে, তার মাত্রাগত হেরফের থাকতে পারে, তবে স্বরূপ সেই একই—জ্ঞান ও সংস্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত।
এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির ভান্ডার শুধু কাগজে বা বস্তুতে সীমাবদ্ধ থাকলে তা বিপদের মুখে পড়ে। অগ্নিকাণ্ড, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সবই মুহূর্তে সেই ভান্ডারকে ধ্বংস করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আরও কতগুলো গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রয়েছে। সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের নথি শুধু সংবাদপত্রের ইতিহাস নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দলিল। এগুলোতে রয়েছে মানুষের সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সাহিত্য ও শিল্পের খবর। ছায়ানটের বই ও নথি আমাদের সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতা, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলসংগীত সংরক্ষণের ইতিহাস বহন করত। উদীচী; যা গণসংগীত, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারক, তার নথিপত্র হারানো মানে আমাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতির এক বড় অংশ মুছে যাওয়া।
উদীচীর আর্কাইভে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন গণসংগীতের দলিল, গণ-আন্দোলনের গান, নাট্যচর্চার স্ক্রিপ্ট এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস। এগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের গণসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ক্ষতি। ছায়ানট যেমন রবীন্দ্রসংগীতের ধারক, উদীচী তেমনি গণসংগীত ও নাট্যচর্চার ধারক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নথি ধ্বংস হওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া।
এই ক্ষতি শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও। তারা হয়তো আর জানতে পারবে না, কীভাবে একটি সমাজ তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। যেমন আলেক্সান্দ্রিয়ার ধ্বংসের পরবর্তী প্রজন্মরা আর জানতে পারেনি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পূর্ণ জ্ঞান। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি হারানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের শূন্যতা তৈরি হওয়া। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের সেই সুরক্ষা দিতে পারে, যা আলেক্সান্দ্রিয়ার সময়ে অসম্ভব ছিল। আজকের পৃথিবীতে ‘তথ্য’ শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা মানেই তাকে ঝুঁকির মুখে রাখা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা এই ধরনের মানবসৃষ্ট নাশকতার হাত থেকে মূল্যবান সম্পদ রক্ষার একমাত্র পথ হলো ডিজিটাল রূপান্তর (ডিজিটাইজেশন)। যেমন—
ক্লাউড স্টোরেজ ও ডেটাবেইস: প্রতিটি বই, সংবাদপত্র ও পাণ্ডুলিপি ডিজিটাল স্ক্যান করে ক্লাউড সার্ভারে রাখা জরুরি।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: আমাদের আর্কাইভগুলোকে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত করলে তা সারা বিশ্বের গবেষকদের কাছে যেমন পৌঁছাবে, তেমনি ভৌগোলিকভাবে কোনো এক জায়গায় ধ্বংস হলেও তার প্রতিলিপি অন্য কোথাও নিরাপদ থাকবে।
বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো কাগজে নির্ভরশীল। ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ সীমিত। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় আমরা অমূল্য সম্পদ হারাই। এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাই এখনই আমাদের জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত ডিজিটাল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র—সবাইকে এতে যুক্ত করতে হবে।
আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংস আমাদের শেখায়, জ্ঞান সংরক্ষণে অবহেলা মানে সভ্যতার পশ্চাৎপদতা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডও একই সতর্কবার্তা বহন করছে। যদি আমরা এখনই ডিজিটাল সংরক্ষণে মনোযোগ না দিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মতোই ইতিহাসের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা হয়তো জানবে না আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সংগীতচর্চা, সংবাদপত্রের সংগ্রাম—সবই কেমন ছিল।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর নথি হারানো শুধু একটি অশুভ শক্তির আস্ফালন প্রদর্শন করা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের নথিপত্র শুধু কিছু কাগজের স্তূপ নয়; এতে ধরা আছে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস। ছায়ানট ও উদীচীর আর্কাইভ শুধু গানের সংকলন নয়; তা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তি। এই নথিগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করা। যেমনটা আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের পর পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও হয়তো জানবে না কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সুরের সাধনায় একটি জাতি তার পরিচয় গড়ে তুলেছিল। এই সংরক্ষণ পদ্ধতি শুধু নথি এবং গ্রন্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে না। এভাবেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডার উপহার দিতে পারব।

১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ। সংবাদপত্রের ভাষায় এটি একটি ‘কালো অধ্যায়’, যা জাতিকেই স্তব্ধ ও মর্মাহত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিশাল আর্কাইভ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দগ্ধ হয়েছে সাত দশকের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচী।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ইমারত নয়, এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। ছায়ানটের প্রাচীন বই, সংগীতচর্চার দলিল, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ—সবই ছাই হয়ে গেছে। উদীচীর সংগ্রহে থাকা গণসংগীত, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দলিল, নাট্যচর্চার নথি ও আর্কাইভও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সংরক্ষিত ফাইলগুলো ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। এসব নথির অনেকগুলোই হয়তো কখনো ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে যে ক্ষতির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তা শুধু বস্তুগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডারের অপূরণীয় ক্ষতি।
এই ঘটনাকে যদি বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তাহলে আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংসের স্মৃতি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ছিল হারানো জ্ঞানের প্রতীক। প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ছিল আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগারে কয়েক লাখ পাণ্ডুলিপি ও গ্রন্থ সংরক্ষিত ছিল বলা হয়। গ্রিক, মিসরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয়, চীনা—বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞান সেখানে একত্র হয়েছিল। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে মানবসভ্যতা কয়েক হাজার বছরের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা—অসংখ্য ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ইতিহাসবিদেরা বলেন, যদি আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার টিকে থাকত, তবে মানবসভ্যতা হয়তো আরও কয়েক শতাব্দী আগে আধুনিকতায় পৌঁছাত। আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে, তার মাত্রাগত হেরফের থাকতে পারে, তবে স্বরূপ সেই একই—জ্ঞান ও সংস্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত।
এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির ভান্ডার শুধু কাগজে বা বস্তুতে সীমাবদ্ধ থাকলে তা বিপদের মুখে পড়ে। অগ্নিকাণ্ড, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সবই মুহূর্তে সেই ভান্ডারকে ধ্বংস করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আরও কতগুলো গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রয়েছে। সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের নথি শুধু সংবাদপত্রের ইতিহাস নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দলিল। এগুলোতে রয়েছে মানুষের সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সাহিত্য ও শিল্পের খবর। ছায়ানটের বই ও নথি আমাদের সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতা, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলসংগীত সংরক্ষণের ইতিহাস বহন করত। উদীচী; যা গণসংগীত, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারক, তার নথিপত্র হারানো মানে আমাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতির এক বড় অংশ মুছে যাওয়া।
উদীচীর আর্কাইভে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন গণসংগীতের দলিল, গণ-আন্দোলনের গান, নাট্যচর্চার স্ক্রিপ্ট এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস। এগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের গণসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ক্ষতি। ছায়ানট যেমন রবীন্দ্রসংগীতের ধারক, উদীচী তেমনি গণসংগীত ও নাট্যচর্চার ধারক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নথি ধ্বংস হওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া।
এই ক্ষতি শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও। তারা হয়তো আর জানতে পারবে না, কীভাবে একটি সমাজ তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। যেমন আলেক্সান্দ্রিয়ার ধ্বংসের পরবর্তী প্রজন্মরা আর জানতে পারেনি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পূর্ণ জ্ঞান। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি হারানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের শূন্যতা তৈরি হওয়া। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের সেই সুরক্ষা দিতে পারে, যা আলেক্সান্দ্রিয়ার সময়ে অসম্ভব ছিল। আজকের পৃথিবীতে ‘তথ্য’ শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা মানেই তাকে ঝুঁকির মুখে রাখা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা এই ধরনের মানবসৃষ্ট নাশকতার হাত থেকে মূল্যবান সম্পদ রক্ষার একমাত্র পথ হলো ডিজিটাল রূপান্তর (ডিজিটাইজেশন)। যেমন—
ক্লাউড স্টোরেজ ও ডেটাবেইস: প্রতিটি বই, সংবাদপত্র ও পাণ্ডুলিপি ডিজিটাল স্ক্যান করে ক্লাউড সার্ভারে রাখা জরুরি।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: আমাদের আর্কাইভগুলোকে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত করলে তা সারা বিশ্বের গবেষকদের কাছে যেমন পৌঁছাবে, তেমনি ভৌগোলিকভাবে কোনো এক জায়গায় ধ্বংস হলেও তার প্রতিলিপি অন্য কোথাও নিরাপদ থাকবে।
বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো কাগজে নির্ভরশীল। ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ সীমিত। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় আমরা অমূল্য সম্পদ হারাই। এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাই এখনই আমাদের জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত ডিজিটাল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র—সবাইকে এতে যুক্ত করতে হবে।
আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংস আমাদের শেখায়, জ্ঞান সংরক্ষণে অবহেলা মানে সভ্যতার পশ্চাৎপদতা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডও একই সতর্কবার্তা বহন করছে। যদি আমরা এখনই ডিজিটাল সংরক্ষণে মনোযোগ না দিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মতোই ইতিহাসের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা হয়তো জানবে না আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সংগীতচর্চা, সংবাদপত্রের সংগ্রাম—সবই কেমন ছিল।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর নথি হারানো শুধু একটি অশুভ শক্তির আস্ফালন প্রদর্শন করা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের নথিপত্র শুধু কিছু কাগজের স্তূপ নয়; এতে ধরা আছে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস। ছায়ানট ও উদীচীর আর্কাইভ শুধু গানের সংকলন নয়; তা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তি। এই নথিগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করা। যেমনটা আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের পর পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও হয়তো জানবে না কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সুরের সাধনায় একটি জাতি তার পরিচয় গড়ে তুলেছিল। এই সংরক্ষণ পদ্ধতি শুধু নথি এবং গ্রন্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে না। এভাবেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডার উপহার দিতে পারব।

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল...
৮ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগেদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য।
আবু তাহের খান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

ড. সেলিম জাহান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগের সাবেক পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক তিনি। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের জগতে রয়েছে তাঁর সরব উপস্থিতি।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন এবং অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ছাত্রীর অভিযোগ, থিসিস (গবেষণাপত্র) করানোর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে ডেকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন ওই শিক্ষক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৮ ঘণ্টা আগে
একাত্তরের প্রস্তুতিবিহীন যুদ্ধে পূর্ববঙ্গে অবস্থানকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে হানাদার পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্ব পণ করে যুদ্ধ করেছেন, প্রাণ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে কেউ কেউ যোগ দিয়েছেন যুদ্ধে; কিন্তু যুদ্ধের পরে দেখা গেল...
৮ ঘণ্টা আগে
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
৮ ঘণ্টা আগে