চাইতিজি বাজপেয়ি
মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর পরিবর্তন ঘটেছে। গত আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি, এরপর অক্টোবরে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি এবং গত মাসে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ—প্রতিটি ঘটনাই এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের একজন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী ছিলেন। তাঁর বিদায়ের পর নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে। এর প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়—ঢাকার ঘোষণায় পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা নিয়ম শিথিল করা, করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথ চালু করা এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সহজ করা। এ ছাড়া চলতি মাসে করাচিতে অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানের ‘আমান’ নৌ-মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এই সম্পর্কের উন্নতির পেছনে রয়েছে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বিনিময়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চলতি মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর এবং গত মাসে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আসিম মালিকের ঢাকা সফর। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও এই ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ।
ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের সম্পর্ককে সরলভাবে শূন্য-যোগের সমীকরণে বিচার করা সঠিক হবে না। তবু এই ঘটনাবলি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে এটি ইসলামাবাদের জন্য একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি। হাসিনা সরকারের অধীনে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হয়েছে। বর্তমানে সেই একই দলগুলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ বা সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।
২০২০ সালের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর উত্তেজনা প্রশমনে চীন-ভারত সীমান্ত চুক্তি সহায়ক হয়েছে। চুক্তির আওতায় পূর্ব লাদাখ ও আকসাই চীনের দুটি বিতর্কিত এলাকায় টহল ও চারণাধিকার পুনরায় শুরু করা হবে। গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডংয়ের বৈঠকে ‘জনকেন্দ্রিক’ উদ্যোগ পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
চুক্তিটি দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ সমাধান করতে পারেনি; দুই পক্ষের কেউই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর দাবি থেকে সরে আসেনি এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) নামে পরিচিত পশ্চিম সীমান্তের সীমানা নির্ধারণে কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। উভয় পক্ষের উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে এবং নিকট ভবিষ্যতে সেনাসংখ্যা হ্রাসের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সীমান্ত চুক্তিটিতে অন্যান্য বিতর্কিত এলাকার উল্লেখ নেই। এ ছাড়া এটি পানিসংক্রান্ত বিরোধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও সমাধান করেনি, যা চীনের ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীতে (ভারতে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি সৃষ্টি করছে। তবে এই চুক্তি উভয় দেশকে এই চাপে রেখেছে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্তে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা তাদের জরুরি, যদিও দুটি দেশই নিজেদের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের চাপে আছে।
চীনের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, যেমন ভারত ও জাপান, উত্তেজনা প্রশমনের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ইঙ্গিত দেয় যে বেইজিং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতে চায়। কারণ তারা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও স্পষ্ট কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভারতের জন্য সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস করা বেইজিংয়ের সঙ্গে পুনরায় অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার পূর্বশর্ত। কারণ তারা স্বীকার করে যে চীন থেকে উপাদান ও কাঁচামাল ছাড়া ভারত বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির আফগান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ, ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্কের উন্নতির সর্বশেষ ইঙ্গিত। গত নভেম্বরে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় চালু করার পর মুম্বাইয়ে একটি ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নিয়োগ করে তালেবান।
ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লি তালেবানকে তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ এবং পাকিস্তানি সামরিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দূরে রেখেছিল। একসময় আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘কৌশলগত গভীরতা’ হিসেবে দেখা হতো।
এই উদ্বেগগুলো আফগানিস্তানে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর হামলার মাধ্যমে তীব্র হয়েছে। যেমন ২০০৯ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাস এবং ২০১৪ সালে হেরাতের কনস্যুলেটে হামলা। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে, আফগানিস্তান ইসলামাবাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
এই ঘটনাবলির পেছনে রয়েছে আরও বৃহত্তর কৌশলগত বিবেচনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক পরিচয় বদলের (প্রায়ই সহিংস) সঙ্গে সঙ্গে আত্মপরিচয়ের বিষয়টি যে দোলাচল তৈরি করে, তা একটা স্থায়ী সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠতে চায়। তারা চায় রাশিয়ার মতো ভারত এবং চীনও তাদের উন্নয়নে অংশীদার হোক। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, ভারতের জন্য তালেবান ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় একটি ‘কম ক্ষতিকর’ বিকল্প।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দুবাইয়ে তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এটি কাবুলের পতনের পর ভারত ও তালেবানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। বৈঠকে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও মানবিক সহায়তা এবং আফগানিস্তানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত তালেবান প্রতিনিধিকে মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে, যা আফগান শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করবে। এই পদক্ষেপগুলো ভারত ও তালেবানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়, যা আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন তার পররাষ্ট্রনীতির ওপর দ্বৈত প্রভাব ফেলছে। একদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায় পূর্বদিকে সম্পর্ক উন্নয়ন জটিলতায় পড়েছে, অপর দিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ভারতের মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সমর্থন করছে।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। এই নীতির আওতায় ভারত বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে এই নীতির বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পর্কের পুনর্গঠন চলছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে বাংলাদেশ, একই সঙ্গে দেশটি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও সুষম করতে চায়। আফগানিস্তান ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করছে, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। এদিকে চীন তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতে চায়, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রধান বাহ্যিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
(সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর পরিবর্তন ঘটেছে। গত আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি, এরপর অক্টোবরে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি এবং গত মাসে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ—প্রতিটি ঘটনাই এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের একজন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী ছিলেন। তাঁর বিদায়ের পর নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নিচ্ছে। এর প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়—ঢাকার ঘোষণায় পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা নিয়ম শিথিল করা, করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথ চালু করা এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সহজ করা। এ ছাড়া চলতি মাসে করাচিতে অনুষ্ঠেয় পাকিস্তানের ‘আমান’ নৌ-মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এই সম্পর্কের উন্নতির পেছনে রয়েছে ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বিনিময়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চলতি মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর এবং গত মাসে পাকিস্তানের আন্তবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আসিম মালিকের ঢাকা সফর। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও এই ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ।
ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের সম্পর্ককে সরলভাবে শূন্য-যোগের সমীকরণে বিচার করা সঠিক হবে না। তবু এই ঘটনাবলি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে এটি ইসলামাবাদের জন্য একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি। হাসিনা সরকারের অধীনে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলো পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হয়েছে। বর্তমানে সেই একই দলগুলো বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ বা সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।
২০২০ সালের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর উত্তেজনা প্রশমনে চীন-ভারত সীমান্ত চুক্তি সহায়ক হয়েছে। চুক্তির আওতায় পূর্ব লাদাখ ও আকসাই চীনের দুটি বিতর্কিত এলাকায় টহল ও চারণাধিকার পুনরায় শুরু করা হবে। গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডংয়ের বৈঠকে ‘জনকেন্দ্রিক’ উদ্যোগ পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
চুক্তিটি দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ সমাধান করতে পারেনি; দুই পক্ষের কেউই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর দাবি থেকে সরে আসেনি এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) নামে পরিচিত পশ্চিম সীমান্তের সীমানা নির্ধারণে কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি। উভয় পক্ষের উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রয়েছে এবং নিকট ভবিষ্যতে সেনাসংখ্যা হ্রাসের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সীমান্ত চুক্তিটিতে অন্যান্য বিতর্কিত এলাকার উল্লেখ নেই। এ ছাড়া এটি পানিসংক্রান্ত বিরোধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও সমাধান করেনি, যা চীনের ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীতে (ভারতে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির হুমকি সৃষ্টি করছে। তবে এই চুক্তি উভয় দেশকে এই চাপে রেখেছে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমান্তে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা তাদের জরুরি, যদিও দুটি দেশই নিজেদের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের চাপে আছে।
চীনের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে, যেমন ভারত ও জাপান, উত্তেজনা প্রশমনের সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা ইঙ্গিত দেয় যে বেইজিং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতে চায়। কারণ তারা ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও স্পষ্ট কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভারতের জন্য সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস করা বেইজিংয়ের সঙ্গে পুনরায় অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার পূর্বশর্ত। কারণ তারা স্বীকার করে যে চীন থেকে উপাদান ও কাঁচামাল ছাড়া ভারত বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির আফগান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ, ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্কের উন্নতির সর্বশেষ ইঙ্গিত। গত নভেম্বরে কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় চালু করার পর মুম্বাইয়ে একটি ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নিয়োগ করে তালেবান।
ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লি তালেবানকে তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ এবং পাকিস্তানি সামরিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে দূরে রেখেছিল। একসময় আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘কৌশলগত গভীরতা’ হিসেবে দেখা হতো।
এই উদ্বেগগুলো আফগানিস্তানে ভারতীয় নাগরিকদের ওপর হামলার মাধ্যমে তীব্র হয়েছে। যেমন ২০০৯ সালে কাবুলের ভারতীয় দূতাবাস এবং ২০১৪ সালে হেরাতের কনস্যুলেটে হামলা। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে, আফগানিস্তান ইসলামাবাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
এই ঘটনাবলির পেছনে রয়েছে আরও বৃহত্তর কৌশলগত বিবেচনা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক পরিচয় বদলের (প্রায়ই সহিংস) সঙ্গে সঙ্গে আত্মপরিচয়ের বিষয়টি যে দোলাচল তৈরি করে, তা একটা স্থায়ী সমস্যা হিসেবে থেকে গেছে।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠতে চায়। তারা চায় রাশিয়ার মতো ভারত এবং চীনও তাদের উন্নয়নে অংশীদার হোক। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, ভারতের জন্য তালেবান ইসলামিক স্টেটের মতো গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় একটি ‘কম ক্ষতিকর’ বিকল্প।
সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দুবাইয়ে তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এটি কাবুলের পতনের পর ভারত ও তালেবানের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম দ্বিপক্ষীয় আলোচনা। বৈঠকে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ভারতের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও মানবিক সহায়তা এবং আফগানিস্তানের চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত তালেবান প্রতিনিধিকে মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে, যা আফগান শিক্ষার্থী, রোগী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করবে। এই পদক্ষেপগুলো ভারত ও তালেবানের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দেয়, যা আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন তার পররাষ্ট্রনীতির ওপর দ্বৈত প্রভাব ফেলছে। একদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির আওতায় পূর্বদিকে সম্পর্ক উন্নয়ন জটিলতায় পড়েছে, অপর দিকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ভারতের মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সমর্থন করছে।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। এই নীতির আওতায় ভারত বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে এই নীতির বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্পর্কের পুনর্গঠন চলছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে বাংলাদেশ, একই সঙ্গে দেশটি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও সুষম করতে চায়। আফগানিস্তান ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করছে, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। এদিকে চীন তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতে চায়, কারণ তারা যুক্তরাষ্ট্রকে তার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রধান বাহ্যিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
(সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
বাঙালি মুসলমানের একটি বড় সমস্যা হলো, সে তার দীর্ঘদিনের ইতিহাসে নিজেকে প্রবলভাবে বাঙালি বলে ঘোষণা করেনি। বাংলার অন্য আরেকটি বড় সম্প্রদায় ছিল হিন্দু সম্প্রদায়, তারাও বাঙালি মুসলমানকে শুধুই মুসলমান হিসেবে দেখতে চেয়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
৯ ঘণ্টা আগেজল আর বায়ু—এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জলবায়ু শব্দটি। তেমনি আবহাওয়া শব্দটিও ‘আব’ ও ‘হাওয়া’ শব্দ দুটির সম্মিলনে সৃষ্টি। আব মানে পানি আর হাওয়া মানে বাতাস। তাই অর্থগতভাবে জলবায়ু ও আবহাওয়াকে একই রকম মনে হলেও বিজ্ঞানীরা এ দুটির মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে একটা সীমারেখা টেনে দিয়েছেন।
১০ ঘণ্টা আগে‘সারা দেশে উদ্যানগুলোকে প্রকৃতি সংরক্ষণস্থল হিসেবে গড়ে তুলবে সরকার’ শিরোনামে আজকের পত্রিকা অনলাইন সংস্করণে ৭ ফেব্রুয়ারি একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওইদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক বোটানিক্যাল কনফারেন্স ২০২৪-এ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান...
১০ ঘণ্টা আগে