Ajker Patrika

যে কারণে বিচারিক ক্ষমতা হারালেন সেই বিচারক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৮
যে কারণে বিচারিক ক্ষমতা হারালেন সেই বিচারক

‘ধর্ষণ মামলার রায়ে অসাংবিধানিক পর্যবেক্ষণ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভুল বার্তা দেওয়ায়’ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পর আজ রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তবে তাঁকে বিচারিক ক্ষমতা থেকে সরাতে প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলেও সেই চিঠি এখানো আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়নি জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, (ওই বিচারকের) কিছুই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। আইনে যে প্রভিশনস দেওয়া আছে, আইনানুগভাবে তা করা হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটলে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা আছে, কিছুদিনের জন্য বিচারিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা।

আনিসুল হক বলেন, বিজ্ঞ বিচারকেরা প্রতিদিনই রায় দেন। রায়ে কেউ সন্তুষ্ট হন, কেউ অসন্তুষ্ট হন। যাঁরা অসন্তুষ্ট হন,, ফৌজদারি কার্যবিধি ও সংবিধান অনুযায়ী তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সাংবিধানিক কিছু বাড়তি ক্ষমতা আছে, সেগুলো তাঁরা প্রয়োগ করেন। রায় দিলেই যে কোনো বিচারকের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা নয়। মেরিটের ওপর, আইনের ওপর তাঁরা রায় দেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন।

‘কিন্তু এখানে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা হচ্ছে, একজন বিজ্ঞ বিচারক তিনি ওপেন কোর্টে রায় দেওয়ার সময় তাঁর পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছেন যে, ৭২ ঘণ্টা পরে কোনো ধর্ষণ মামলা যদি কেউ করতে আসে তাহলে সেই মামলা গ্রহণ না করতে। এটাই হচ্ছে আপত্তির জায়গা। কোনো ফৌজদারি অপরাধে মামলা করার ব্যাপারে তামাদি বারিত হয় না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে মামলা হয়নি। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর এই মামলা হয়। তিনি সে ক্ষেত্রে বলেছেন, ৭২ ঘণ্টা পরে এ মামলা নিয়েন না। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে এটা পরিষ্কার বলা আছে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক বা আপাতত বাংলাদেশে বসবাসরত একজন ব্যক্তি তিনি একমাত্র আইন দ্বারা এবং আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজ্ঞ বিচারক যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ফৌজদারি অপরাধে বিচার চাওয়ার ব্যাপারে, মামলা করার ব্যাপারে কখনো তামাদি বারিত হয় না। এ দুটো তিনি ভায়োলেট করেছেন।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, `অনেক রায় আছে, যেগুলো হয়তো বেআইনি হয়, আপিলে গিয়ে রায়টা সেট অ্যাসাইড (বাতিল) হয়। এখানে তিনি যে কথাটা বলেছেন, সেটার একটা ইমপ্লিকেশন আছে, কনসিকুয়েন্স আছে। সে কারণে আজকে বিচার বিভাগের প্রধানকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আইনমন্ত্রী হিসেবে নির্বাহী বিভাগ থেকেও আমি প্রধান বিচারপতির কাছেই বিচার চাইতে পারি। কারণ বিচার বিভাগ স্বাধীন। সে কারণে এই বক্তব্য বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য বিব্রতকর। এটা একটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়াটা প্রয়োজনীয় ছিল। সে জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁকে শোকজ করা হবে, তিনি কেন বলেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।'

নিয়মানুযায়ী প্রধান বিচারপতি ওই বিচারককে শোকজ পাঠাবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, `সেই শোকজ যখন আমাদের কাছে পাঠানো হবে আমরা সেটা তাঁর (বিচারকের) কাছে পাঠাব, চিঠি এখনো পাইনি। তাঁর বিচারিক কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের আমরা প্রজ্ঞাপন করব। স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রধান বিচারপতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'

বিচারক প্রভাবিত হয়ে রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলার রায় দিয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, `রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। রায়ে যাঁরা সংক্ষুব্ধ হন তাঁদের কিন্তু বিচারব্যবস্থার মধ্যেই আপিল করা সুযোগ থাকে। যেহেতু তাঁদের আপিল করার সুযোগ আছে, আমি বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলব না।' 

আলোচিত এই মামলার রায়ে বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেটি সরকার যদি পরিষ্কার না করত এবং বিচার বিভাগ যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেত বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী। নির্বাহী ও বিচার বিভাগ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব

দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠন দুটি।

আজ শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জ্ঞাপন ও শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।

এতে বলা হয়, এই হামলা শুধু গণমাধ্যমের ওপর নয়, এটা আমাদের সমাজের ওপর, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আক্রমণ। সর্বোপরি বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ। গভীর রাতের ওই হামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সম্পদহানির পাশাপাশি সংবাদকর্মীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্বহীনতারও স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব মনে করে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুরু থেকেই মব ভায়োলেন্স (সংগঠিত সহিংসতা) প্রতিরোধে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার যে ধারাবাহিকতা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সর্বশেষ ঘটনা তার আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা প্রমাণ করে যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

একই সঙ্গে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব ছায়ানটে হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ফোন করে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন এবং পাশে আছেন বলে জানান। তবে এই হামলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বিবৃতি বা আশ্বাস নয়, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারসহ সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তায় ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির মৃত্যুতে উদ্বেগ, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের ফলকার তুর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ১৭
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হাদির মৃত্যুর ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহি এবং আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।’

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাংলাদেশে বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফলকার তুর্ক সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘প্রতিহিংসা এবং প্রতিশোধ কেবল বিভাজন বাড়াবে এবং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টিকে অত্যন্ত সংবেদনশীল উল্লেখ করে ফলকার তুর্ক বলেন, ‘এই সময়ে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি, যেখানে জনজীবনে সবার নিরাপদ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনভাবে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকবে।’

ফলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ অস্থিরতা যাতে আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণমাধ্যমের ওপর হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সংঘটিত ও অভূতপূর্ব ধ্বংসাত্মক হামলার ঘটনাকে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি, নাগরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টার্গেটেড শুটিংয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা এবং পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতারই প্রতিফলন। এর ফলে গণরোষ থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি আরও বেড়েছে, যার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর বিজয়ের দাবিদার কিছু শক্তির আক্রোশপূর্ণ ও প্রতিশোধপ্রবণ আচরণ রাষ্ট্র ও সমাজে নতুন ধরনের দমনমূলক প্রবণতা তৈরি করছে। এর সরাসরি শিকার হচ্ছে মুক্ত গণমাধ্যম, ভিন্নমত ও বাক্‌স্বাধীনতা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কার্যকর অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে; বরং অতীতে অনুরূপ সংকটে নতজানু অবস্থান গ্রহণ করে রাষ্ট্র নিজেই অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে।

টিআইবি জানায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে আক্রমণ এবং কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দীপু চন্দ্র দাসকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন নয়। বরং এসবই মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত ও স্বাধীন মতপ্রকাশকে পরিকল্পিতভাবে দমনের জ্বলন্ত উদাহরণ।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে যেভাবে মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত হয়েছিল, আজ সেই একই দমনমূলক বাস্তবতা নতুন রূপে ফিরে আসছে। যারা বিগত ১৬ বছর অধিকার হরণের শিকার হয়েছেন এবং জুলাই আন্দোলনের বিজয়ী হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন, তাঁদেরই একাংশের হাতে আজ মুক্ত গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও মূল্যবোধ চরম হুমকির মুখে পড়ছে। বৈষম্যমুক্ত সমাজ, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও বহু সংস্কৃতির সহাবস্থানের যে স্বপ্ন একাত্তর ও জুলাই ধারণ করেছিল, তা আজ গভীর সংকটে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আবেগকে কাজে লাগিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহল পতিত শক্তির ইন্ধনে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি এবং মুক্ত গণমাধ্যম ও নাগরিক অধিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর, সমন্বিত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এসব পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং একাত্তর ও জুলাইয়ের মৌলিক আদর্শ আরও গভীর সংকটে পড়বে, যার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে শনিবার বেলা দুইটায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৩২
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজার সময় এগিয়ে এনে আগামীকাল শনিবার বেলা দুইটায় নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকাল বেলা দুইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে নামাজে জানাজা বেলা আড়াইটায় অনুষ্ঠিত হবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

শহিদ ওসমান হাদির নামাজে জানাজায় যারা অংশ নিতে আসবেন তারা কোনো প্রকার ব‍্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন‍্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন উড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত