Ajker Patrika

আইনশৃঙ্খলার অবনতি

পথে নামতে মনে ভয়

  • অপারেশন ডেভিল হান্টেও অপরাধ কমছে না।
  • পুলিশের টহল না থাকার সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের।
  • উপদেষ্টা দায়ী করছেন আ.লীগের সহযোগীদের।
 শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
সোমবার রাত ৯টায় ‘রামপুরা ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মশাল মিছিল করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোমবার রাত ৯টায় ‘রামপুরা ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মশাল মিছিল করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলাকালে বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, ডাকাতি, সড়কে ডাকাতি, গুলি, হামলা, ধর্ষণের ঘটনায় আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ। পুলিশের টহল তেমন না থাকায় সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বাইরে বের হতে ভাবতে হচ্ছে মানুষকে। সারা দেশেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা গতকাল আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও অস্বীকার করছেন না। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ জন্য দায়ী করেছেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীদের। বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোর কমিটির সভা শেষে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে পুলিশের তিনটি বিশেষায়িত ইউনিট শিগগির মাঠে নামছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। তিনি বলেছেন, ডিএমপি, র‍্যাব ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট যৌথ অভিযান চালাবে, যা রাত থেকে বাস্তবায়ন হবে।

পুলিশের পুরোদমে সক্রিয় না হওয়ার সুযোগে কয়েক মাস ধরেই ছিনতাই, ডাকাতি, গুলি, হামলার ঘটনা বেড়েছে। রাজধানীর উত্তরায় এক দম্পতিকে কোপানোর ও টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানির ঘটনার রেশ না কাটতেই গত রোববার রাতে ঢাকা শহরে একাধিক জায়গায় গুলি করে ছিনতাই ও ডাকাতি হয়েছে। বনশ্রী ডি ব্লকে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আনোয়ার হোসেন নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি সোনা ও ১ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর দুই ঊরুতে দুটি ও পাশে একটি গুলি লাগে। তাঁর হাত, পা ও ঊরুতে কোপানো হয়। মোবাইলে ধারণ করা এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শেয়ার হতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বনশ্রীর ওই ঘটনার কিছু আগে ধানমন্ডির শংকরে ১০-১২ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ডাকাতির জন্য মহড়া দেয়। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় মসজিদের মাইকে মহল্লায় ডাকাত দল প্রবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

শনিবার রাতে নওগাঁর পত্নীতলায় সড়কে গাছ ফেলে একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে ডাকাতি হয়। একই রাতে ঢাকার আশুলিয়ার জিরানী নিজ বাসায় ডাকাতের গুলিতে আহত হন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় তাঁর পায়ে তিনটি গুলি করা হয়। তাঁর মা ও স্ত্রীও আহত হন।

শুক্রবার ঝিনাইদহে তিনজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে একটি লিফলেটে লেখা ছিল ‘কালু, জাসদ গণবাহিনী’।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো অনেক কিছু করা যায়। আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধানমন্ডির একাংশ ও মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও বেসরকারি চাকরিজীবী এনামুল হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুরের কিছু এলাকায় ছিনতাইকারীদের এত দৌরাত্ম্য যে দিনের বেলায়ও যাওয়া যায় না। তিনি ছিনতাইয়ের ভয়ে অফিস ছুটির সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে দ্রুত বাসায় চলে আসেন।

রাজধানীর আরও অনেক এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। কেবল নীরব সড়কে নয়, যানজটে আটকে থাকা যানবাহনেও হচ্ছে ছিনতাই। যাত্রাবাড়ীর কাজলা পেট্রলপাম্প এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাতে জটে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী-চালক মাঝেমধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন। পথচারীরাও বাদ যাচ্ছেন না।

১৭ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী একটি বাস টাঙ্গাইলে পৌঁছালে যাত্রীবেশী ডাকাতেরা বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তারা বাসটি নিয়ন্ত্রণে রেখে যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার, মালামাল লুট করে। নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে। ধর্ষণের অভিযোগও শোনা গেছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি, তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে সারা দেশে ৭১টি ডাকাতি, ১৭১টি ছিনতাই, ২৯৪টি খুন, ১০৫টি অপহরণের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ঘটেছে ৮টি ডাকাতি, ৫৪টি ছিনতাই, ৩৬টি খুন ও ৩১টি অপহরণ। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অপরাধের সংখ্যা পরিসংখ্যানের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

আইনশৃঙ্খলার এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে রোববার গভীর রাতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর পর রাত ৩টায় বারিধারায় নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের দোসররা। তাদের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে। সেসব টাকা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই সুযোগ তারা পাবে না। তাদের সবার ঘুম হারাম করে দেব।’ নিজের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা চায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হোক। সেটাই করার চেষ্টা করছি। সফল হলে পদত্যাগের প্রসঙ্গ আসবে না।’

দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এমন পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ পুলিশ বাহিনীতে রয়েছে। তাদের গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। এ ছাড়া ওই সময়ে পুলিশে সুবিধাভোগীদের একটি অংশও আছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অনেক অপরাধী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশের যথাযথ টহল, নজরদারি, সক্রিয়তা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

পুলিশ-র‍্যাবের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী। গতকাল সাভার সেনানিবাসে ফায়ারিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, মাঝে মাঝে কাজ করতে গিয়ে কিছু বলপ্রয়োগ হয়ে যায়। বল প্রয়োগ করতে গেলেও অত্যন্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে যেন হয় এবং যত কম বল প্রয়োগ করা যায়, ততই ভালো।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘অপরাধীদের দৌরাত্ম্য যতটা বাড়ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যে কারণে পরিস্থিতি আর উন্নতি হচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও  উদীচী কার্যালয়ে হামলায় শনাক্ত ৩১
ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবন এবং ছায়ানট ও উদীচী কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন— মো. কাশেম ফারুকি, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, মো. সোহেল রানা এবং মো. শফিকুল ইসলাম। শনাক্তকৃত বাকি সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একটি বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে একদল লোক প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে যায়। তারা প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপর কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। ভবনের সামনে অগ্নিসংযোগও করা হয়। এর পরপরই ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ডেইলি স্টার ভবনে অগ্নিসংযোগের পর ভেতরে ৩০-৩৫ জন সাংবাদিক ও কর্মী আটকা পড়েন।

পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলার পরদিন ১৯ ডিসেম্বর ঢাকার তোপখানা সড়কে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

গতকালের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন, আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে গৃহীত নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

এ ছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে

  • ৫৪ শতাংশ স্কুলে নেই প্রতিবন্ধীবান্ধব পানির পয়েন্ট
  • নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে ৩৩ শতাংশ স্কুল
  • ৭১.৪ শতাংশ স্কুলে কোনো উন্নত শৌচাগার নেই
  • পানি-সাবানের ব্যবস্থা রয়েছে ৫% স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ৪৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। ৯৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্থা। ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে কোনো উন্নত শৌচাগারও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে গতকাল রোববার আয়োজিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি (ওআইসি) ফারুক আদরিয়ান ডুমন।

জরিপের তথ্য বলছে, দেশের মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত শৌচাগার রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলোর মান ও ব্যবহারযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে শৌচাগার রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে, এমন বিদ্যালয়ের হার ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়; মাত্র ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড পূরণ করছে।

জরিপে বলা হয়, উন্নত পানির উৎসে প্রবেশগম্যতার দিক থেকে দেশের বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসে প্রবেশাধিকার আছে। মৌলিক পানি সেবার মানদণ্ড; অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের ভেতরে উন্নত পানির উৎস থাকতে হবে—এই শর্ত পূরণ করতে পেরেছে এমন বিদ্যালয়ের হার ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ।

তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী পানির সুবিধার চিত্র হতাশাজনক। দেশের ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীবান্ধব উন্নত পানির পয়েন্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। জরিপে উঠে এসেছে, ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ অত্যন্ত সীমিত। মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ খাতে নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে।

হাত ধোয়ার সুবিধা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে থাকলেও পানি ও সাবানের অভাবে মৌলিক সেবার মানদণ্ড পূরণ করছে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয় এবং মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

নারীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বড় ঘাটতির চিত্র পাওয়া গেছে। মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে কিশোরীদের জন্য পৃথক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার রয়েছে। আর মাসিককালীন মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, এমন বিদ্যালয়ের হার মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষায় লৈঙ্গিকভিত্তিক বৈষম্য আরও তীব্র করে তুলছে।

জরিপে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য–উভয় খাতের ওয়াশ অবকাঠামোই ঝুঁকিপূর্ণ। গত এক বছরে ২৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ জলবায়ু সহনশীল ওয়াশ ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতনতা ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত সীমিত।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে সীমিত সম্পদের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’–এসডিজির এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়নে পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিতে বাংলাদেশের অর্জন অনেক দেশের তুলনায় ভালো। এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কার্যক্রম প্রভাবিত করতে মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে: গুম কমিশন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু সংবাদমাধ্যমে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’র নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কমিশন। এসব তথ্য কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং কমিশনের মতে, পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলকে ঘিরে মনগড়া তথ্য যুক্ত করে এ ধরনের বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য কমিশনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি বা প্রভাবিত করা।

আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) গুমসংক্রান্ত কমিশনের সচিব কুদরত-এ-ইলাহী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ‘গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি’-এর নাম জড়িয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য প্রচারিত হচ্ছে, যা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদন দাখিলের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সংগতি রেখে মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সংযুক্ত করে কমিশন সম্পর্কে যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, তা মূলত কমিশনের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি বা প্রভাবিত করার হীন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, কমিশনের বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমে খন্দকার রাকিব নামের কোনো ব্যক্তির উপস্থিতির যে দাবি প্রচার করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। ওই ব্যক্তি কখনোই গুমসংক্রান্ত কমিশনে কোনো পদে কর্মরত ছিলেন না এবং কমিশনের কোনো জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমেও তাঁর উপস্থিতি ছিল না।

কমিশনের মতে, এ ধরনের অস্পষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের মাধ্যমে একটি মহল কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রেখে কমিশন তার অর্পিত দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশপ্রেমিক সব নাগরিকের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এই অবস্থায় দেশবাসীকে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উসকানিমূলক তথ্যের প্রতি কর্ণপাত না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জনসচেতনতায় ‘ভোটের গাড়ির’ প্রচারণা শুরু সোমবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৬
জনসচেতনতায় ‘ভোটের গাড়ির’ প্রচারণা শুরু সোমবার

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট–২০২৬ সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে ‘ভোটের গাড়ি’ শীর্ষক প্রচারণা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে সোমবার (২২ ডিসেম্বর)।

এদিন বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এই প্রচারণার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলায় ‘গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন–২০২৬’ উপলক্ষ্যে ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে ‘ভোটের গাড়ি’ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ভোটের গাড়ি’ প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহর—সব স্তরের মানুষের কাছে নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে আগ্রহ ও সচেতনতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত