Ajker Patrika

লুটপাটে গায়েব কৃষকের যন্ত্র কেনার টাকা

  • দুর্নীতির দায়ে সাবেক পিডিসহ ৮ কর্মকর্তা বরখাস্ত
  • বরখাস্ত হতে পারেন আরও ৫০ কর্মকর্তা
  • তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন
সাইফুল মাসুম, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৫০
লুটপাটে গায়েব কৃষকের যন্ত্র কেনার টাকা

কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকার ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’। যন্ত্র কেনার জন্য কৃষককে প্রদেয় ভর্তুকির টাকার বড় অংশ হয়েছে লুটপাট। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। তবে দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে এটি আর এগিয়ে নিতে আগ্রহী নন কর্মকর্তারা। তাই ব্যয় না করেই প্রকল্পে বরাদ্দ করা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছেন তাঁরা।

বাণিজ্যিকীকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করে তোলার উদ্দেশ্যে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। এই প্রকল্পে উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে কৃষকদের ১২ ধরনের ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র দেওয়ার কথা। কৃষিযন্ত্র কেনার জন্য হাওর ও উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের ৭০ শতাংশ এবং অন্য সব এলাকার কৃষকদের ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার কথা রয়েছে।

মাঠপর্যায়ের তথ্য থেকে জানা গেছে, বহু প্রকৃত কৃষক এ ভর্তুকির ছিটেফোঁটাও পাননি। টাকা জমা দিয়ে যন্ত্রের অপেক্ষায় বসে থাকার নজির যেমন আছে, তেমনি আছে কৃষি পেশার বাইরের লোককে যন্ত্র দেওয়ার ঘটনা। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের মোটা অঙ্কের ভর্তুকির সুবিধায় ভাগ বসিয়েছে তিনটি চক্র। চক্র তিনটি হচ্ছে অসাধু কৃষি কর্মকর্তা, যন্ত্র সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানি এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দালাল। এই দালালেরা মূলত তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের সুপারিশে উপজেলা কর্মকর্তারা কৃষকদের নাম সুবিধাভোগীর তালিকাভুক্ত করেন। ঘুষ হাতবদল হয়েছে তাঁদের মাধ্যমে। অনেক সময় দালালেরা নিজেদের নামেই ভর্তুকিতে যন্ত্র কিনে বাইরে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এমনকি একই যন্ত্র একাধিকবার বিক্রি করে বারবার ভর্তুকি নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে এই প্রকল্পে। কৃষিযন্ত্র নষ্ট হলে কোম্পানিগুলো বিক্রয়োত্তর সেবা দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক।

জানা গেছে, শেষ বছরে এসে দুর্নীতির দায়ে সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তারিক মাহমুদুল ইসলামসহ আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসছে কৃষককে ভর্তুকি দেওয়ার নামে অর্থ লোপাটের অনেক তথ্য। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, অনিয়মের অপরাধে বরখাস্ত হতে পারেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট আরও অন্তত ৫০ কর্মকর্তা। এমন পরিস্থিতিতে শেষ অর্থবছরে প্রকল্পের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। আগের দায় না নিতে এখন তড়িঘড়ি করে কাজ গোটাতে চাইছেন বর্তমান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সফিউজ্জামান। এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েক মাস হলো প্রকল্প পরিচালক হয়েছি। কোনো কাজ করতে পারিনি। এ সময়ে ভর্তুকিতে একটি যন্ত্রও সরবরাহ করিনি। আগের অনিয়ম আর দুর্নীতির জবাব দিতে দিতেই ক্লান্ত। শেষ সময়ে প্রকল্পের বাকি কাজ করাও সম্ভব নয়, তাই চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের ৪২১ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছি।’

প্রকল্পের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুসারে প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৫০৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের অর্ধেক পেরোলেও আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ১০ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাকি ছয় মাসের জন্য কিছু টাকা হাতে রেখে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অনিয়মের নানা কিসিম

২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার দরবেশ কাটা গ্রামের কৃষক আজম নুরের নামে একটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কাগজে-কলমে তাঁকে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা (৭০ শতাংশ)। কিন্তু আজম নুর টাকা দিয়েও যন্ত্র পাননি। তিনি বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ৯ লাখ টাকা দিয়েছি। মেশিন দেখিয়ে নিয়ে গেছে। এখনো মেশিন পাইনি, টাকাও ফেরত দেয়নি।’

দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক মো. মিজানুর রহমান ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে কম্বাইন হারভেস্টার কেনার আবেদন করেছিলেন। কাগজে-কলমে কৃষি অফিস তাঁকেও যন্ত্র বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু মিজানুর জানিয়েছেন, তিনি কোনো যন্ত্র পাননি।

সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত না থাকলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে টি সিডার (পাওয়ার টিলারের সঙ্গে বীজ বপনের যন্ত্র) পেয়েছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার পশ্চিম সোনাদিয়ার বাসিন্দা আমির হোসেন সাজু। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আমির পরে যন্ত্রটি বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান সাজুর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় অস্বীকার না করলেও দাবি করেন, তিনি (সাজু) নিজে আবেদন করেছিলেন। যন্ত্র পেয়েছেন বা বিক্রি করে দিয়েছেন কি না, তা তাঁর জানা নেই।

সরবরাহকারীর তালিকাসহ নানা অনিয়ম

অভিযোগ রয়েছে, ডিপিপিতে উল্লেখ করা প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অযোগ্য সরবরাহকারীদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ‘উন্নয়ন সহায়তা ব্যবস্থাপনা কমিটি’র সভায় মাঠের চাহিদার সঙ্গে এডিপির অর্থ বরাদ্দের সমন্বয় করে উপজেলা পর্যায়ে যন্ত্র বরাদ্দের সংখ্যা চূড়ান্ত করার কথা। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই কমিটির একটি সভাও হয়নি। তখনকার পিডি মো. তারিক মাহামুদুল ইসলাম তাঁর পছন্দমতো যন্ত্র বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

বেশি দামে যন্ত্র সরবরাহ

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন না করে কম্বাইন হারভেস্টারের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ভর্তুকির হারে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার জায়গায় প্রায় ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং ৫০ শতাংশ ভর্তুকির হারে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার জায়গায় প্রায় ১৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, এটি ডিপিপির আর্থিক শৃঙ্খলার মারাত্মক লঙ্ঘন। অনিয়ম ও দুর্নীতির জেরেই ১২ ক্যাটাগরির ৫১ হাজার ৩০০টি যন্ত্রের বিপরীতে ভর্তুকি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। অথচ যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার ৬৫৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামের যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম—১০ হাজার ৯৬৩টি। কৃষককে মোট দেওয়ার কথা ছিল ১৫ হাজার ৫০০টি। প্রকল্পের চতুর্থ বছরেই বরাদ্দ করা ভর্তুকির অর্থ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এ জন্য যন্ত্র সরবরাহের সঙ্গে ব্যয়িত অর্থের সংগতি পাচ্ছেন না প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে অযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা এবং ভুয়া বিল তৈরি করে অর্থ ভাগাভাগির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরও অভিযোগ ওঠা উপপ্রকল্প পরিচালক আলতাফুন নাহার, ঊর্ধ্বতন হিসাবরক্ষক আব্দুল খালেক সরকার ও সহকারী হিসাবরক্ষক আরমান মিয়ার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদকের তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী অন্য অপরাধীদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ টাকা ফেরতের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘প্রজেক্টের মেয়াদ আছে অল্প। কৃষককে ভর্তুকিতে যন্ত্র দেওয়ার বাস্তব চিত্র নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়াব না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে যেহেতু বড় ধরনের দুর্নীতি চিহ্নিত হয়েছে, তাই অপরাধী কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত বা বিভাগীয় ব্যবস্থা যথেষ্ট না। আইনি প্রক্রিয়ায় জরিমানাসহ সাজা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তি ও যন্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানিরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৪
খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত