Ajker Patrika

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মোস্তাফা জব্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ২০: ৫৮
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মোস্তাফা জব্বার

যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। 

মন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই। তবে আমার ছোটখাটো বক্তব্য হচ্ছে এই, আমি যে ঘটনাগুলো শুনছি, সে ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দোষটা বোধহয় আইনের থেকে বহুগুণে বেশি আইন প্রয়োগকারী এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে। কারণ আমি এখানে যা দেখলাম, শুনলাম তাতে এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সব থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।’ 

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়োজনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভুক্তভোগী ও প্রকৃত অপরাধী’ শিরোনামে ভুক্তভোগীদের সম্মেলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। 

আইনটি তৈরির আগে আইন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হয়েছিল। সেখানে সাংবাদিকদের একটু ক্ষোভ ছিল। কিন্তু সেটাকে অযৌক্তিক দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি সংসদে যাওয়ার পরে পুলিশেরা একটি বিষয়ে আমাকে বললেন। স্যার, কোথাও যখন ঘটনা ঘটবে, আমরা আদালতে গিয়ে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা নিয়ে এসে তারপরে যদি আসামিদের ধরতে যাই তাহলে তো ঘটনা ঘটে শেষ হয়ে যাবে। তখন আমরা কী করব? এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে একটি সংশোধনী এসেছিল, সেই সংশোধনী আমি গ্রহণ করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে। যে, এটি পরিস্থিতি বুঝে সাব ইন্সপেক্টরের ওপরে যারা পুলিশ কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’ 

নারী ও শিশু নিরাপত্তা আইন, নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তার জন্য করা হলেও, এটির সবচেয়ে বেশি অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। তেমনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ রাজনৈতিক কারণে করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মোস্তাফা জব্বার। 

প্রয়োজনে এই আইনে পরিবর্তন আনা হবে ইঙ্গিত দিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘আইন কোনো চিরস্থায়ী দলিল নয়। সংবিধান পর্যন্ত যদি আমরা পরিবর্তন করতে পারি, আইন পরিবর্তন করা কোনো বিষয় না। আইন যদি পরিবর্তন করার দরকার হয়, তাহলে পর্যালোচনা ও অন্যান্য যে বিষয়গুলো করার দরকার আছে, যেতে পারে।’ 

মন্ত্রী বলেন, ‘মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবর্তনের চিন্তাভাবনা এসেছিল। এই আইনের কারণে এমন পরিস্থিতি হবে এমনটা আমি ভাবতেও পারিনি! তখন যদি ভাবতে পারতাম, তাহলে আমি চেষ্টা করতাম যে, এই যে লাইন ধরে তারা বসে আছে...।’ 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের দিকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা এক ধরনের সংখ্যালঘু নির্যাতন। এই নির্যাতনগুলো যেন না হতে পারে আইনের দোহাই দিয়ে। এটার জন্য একটা রক্ষাকবচ রাখা যায় কি না সেটার জন্য আমাদের ভাবা উচিত ছিল।’ 

আলোচনা সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। 

গত বছর দুর্গাপূজার সময় দেশের পূজামণ্ডপ, মন্দিরগুলোতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন সরকারি বদরুন্নেসা কলেজের সহকারী অধ্যাপক রোমা সরকার। এর কারণে তাঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এই আইনে মামলায় জড়িয়ে আমি চাকরিচ্যুত হয়েছি। এখনো চাকরিতে যোগদান করতে পারছি না। আমি অন্য দেশে গিয়ে উন্নত জীবনযাপন করতে পারতাম। কিন্তু দেশকে ভালোবাসি তাই সেটা করিনি। আমার কাছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই সমান। রাত আড়াইটায় দরজা ভেঙে আমাকে নিয়ে গেল। আমার সন্তান দুটো ঘুম থেকে উঠে এমন ভয়ানক পরিস্থিতি দেখল! পঁয়ত্রিশ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যখন কোনোভাবেই আমাকে দোষী প্রমাণ করতে পারল না, তখন তারা বলল, একে ছাড়া যাবে না, খুব ঘাউড়া। আমার মামলাটা যেন প্রত্যাহার করা হয়, আমি যেন শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারি। আমার বাচ্চারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে এই দাবি করি।’ 

সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে ছাত্রের সঙ্গে তর্কের জেরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকের পর জেলে যান মুন্সিগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘দেশে স্বাধীনতা নাই, স্কুলে বিজ্ঞান পড়াতে পারি না। পাঠ্যপুস্তকগুলো অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তা দিয়ে ভরে যাচ্ছে। আমি মহানবীকে জ্ঞানীগুণী বলেছিলাম কিন্তু সেটাকে “না” লাগিয়ে দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে, শোকজ করা হয়েছে। আমি ১৯ দিন কারাবাসে ছিলাম। আমি কী অপরাধ করেছিলাম? ধর্মের প্রশ্ন তারা টেনেছে, আমি শুধু উত্তর দিয়েছি। আমি এই হয়রানি থেকে মুক্তি চাই। দেশে সত্যিকারের স্বাধীনতা চাই।’ 

সুনামগঞ্জের ঝুমন দাশ বলেন, ‘স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলে, মামুনুল হকের ভাস্কর্য বিরোধী কথার প্রতিবাদ করে আমি ধর্ম অবমাননার মামলা খেয়েছি। এই কারণে আমি জেলেও নিরাপদ ছিলাম না। আমাকে কারাগারে জবাই করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল অন্য ধর্মান্ধ কয়েদিরা!’ 

মোবাইল ফোন অন্য একজন নিয়ে ইসলাম অবমাননার পোস্ট দিয়ে তাঁকে নির্যাতন ও জেল খাটিয়েছে বলে দাবি করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পটুয়াখালীর জয়দেব চন্দ্র শীল। তিনি বলেন, ‘আমার ফোন কেউ একজন কথা বলার জন্য নিয়ে সেটা দিয়ে এসব পোস্ট করে। তারপর সেই আবার দলবল নিয়ে এসে আমাকে বেদম প্রহার করে। আমি আমার মেসে মারধরের শিকার হই, থানায় ও কারাগারে অন্য কয়েদিদের মারধরের শিকার হই। আমি নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে গেলেও কারাগারের চিকিৎসকেরা আমাকে চিকিৎসা সেবা দিতেও অস্বীকৃতি জানান।’ 

ভুক্তভোগীদের মধ্যে আরও কথা বলেন কুমিল্লার স্কুলশিক্ষক শংকর দেবনাথ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৎস্যজীবী জশরাজ দাস। 

অনুষ্ঠানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং নির্যাতন এবং ভোগান্তির শিকার ভুক্তভোগীদের পরিত্রাণের বিষয়ে কথা বলেন বেশ কয়েকজন আলোচক। 

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন—একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার তাপস পাল, অ্যাডভোকেট নাসির মিয়া, কাজল দেবনাথ, এ্যারোমা দত্ত এবং সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষিণ সুদানে যাত্রা করলেন নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর
‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ নৌসদস্য। ছবি: আইএসপিআর

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ‘ইউনাইটেড নেশনস মিশন ইন সাউথ সুদান’ (আনমিস)-এ নিয়োজিত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১১’-এর দ্বিতীয় গ্রুপের ৭১ জন নৌসদস্য আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁরা দক্ষিণ সুদানের উদ্দেশে রওনা হন। এই কন্টিনজেন্ট সেখানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। এর আগে ৯ ডিসেম্বর প্রথম গ্রুপে ৯৯ জন নৌসদস্য এই মিশনে যোগ দিতে দেশ ছাড়েন।

দক্ষিণ সুদানের প্রতিকূল ও দুর্গম এলাকায় বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—নীল নদের নৌপথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও মানবিক সাহায্য বহনকারী বার্জসমূহের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা। নৌপথে জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণ ও তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। স্থানীয় জনগণের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা এবং বেসামরিক নাবিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ উদ্ধার এবং মিশনে নিয়োজিত সামরিক-বেসামরিক সদস্যদের রসদসামগ্রী দুর্গম স্থানে পৌঁছে দেওয়া।

এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর
এই কন্টিনজেন্ট সুদানে আগে থেকে কর্মরত ‘বাংলাদেশ ফোর্স মেরিন ইউনিট-১০’-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। ছবি: আইএসপিআর

গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। নীল নদের ১ হাজার ৩১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এখন পর্যন্ত ৭১টি লজিস্টিক অপারেশন (অপারেশন লাইফ লাইন) সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন নৌসদস্যরা।

দক্ষিণ সুদান ছাড়াও লেবাননের ভূমধ্যসাগরে উপমহাদেশের একমাত্র মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সংগ্রাম’ নিয়োজিত রয়েছে। নৌবাহিনীর এই গৌরবময় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম উজ্জ্বল করছে।

উল্লেখ্য, ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই-তে সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউএন ঘাঁটি আক্রমণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত ও আটজন আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানুয়ারির মাঝামাঝি সাংবাদিকদের মহাসম্মেলনের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৩
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখছেন সভাপতি এ কে আজাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝিতে সাংবাদিকদের মহাসম্মেলন আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ।

তিনি জানিয়েছেন, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, আগুন এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে এ মহাসম্মেলন করা হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আজ সোমবার প্রতিবাদ সভায় এ কে আজাদ এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি গণমাধ্যমের কার্যালয়ে যখন হামলা হলো, তখন ডেইলি স্টার সম্পাদক সরকারের সব সংস্থাকে অনুনয় করেছিলেন নিরাপত্তা দিতে। কিন্তু কারও সাহায্য তিনি পাননি।

সভায় নোয়াব সভাপতি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম আলোতে প্রথম আগুন দেওয়া হয়। তখনই ডেইলি স্টার সম্পাদক আশঙ্কা করেছিলেন এরপরে হামলাকারীরা ডেইলি স্টারে যাবে। তখন তিনি সরকারের এমন কোনো সংস্থা নাই, এমন কোনো ব্যক্তি নাই, যাকে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করেন নাই যে আপনারা ডেইলি স্টারের সামনে ‘প্রোটেকশন’ দেন। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য সাড়া পাননি। যখন পেয়েছেন পোড়ার পরে পেয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ কে আজাদ আরও বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক যখন অসহায়ের মতো নিচে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর সামনে দিয়ে লুটকারীরা কম্পিউটার, চেয়ার, মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে তখন আইনশৃঙ্খলার সমস্ত বাহিনী ছিল। কিন্তু বাহিনীগুলোর কেউ একটা প্রতিবাদ করেনি।

নোয়াব সভাপতি আরও বলেন, সেই রাতে ডেইলি সম্পাদক তাঁকে জানান, ভবনটিতে ২৮ থেকে ২৯ জন আটকা পড়েছিল। আর ১৫ মিনিট আগুন জ্বললে তাদের অনেকেই সেই ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেত।

একে আজাদ বলেন, আমরা এভাবে মারা যেতে চাই না। এভাবে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না।

প্রতিবাদ সভায় জানানো হয়, সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মহাসম্মেলন আয়োজন করা হবে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উদীচী, ছায়ানটে যারা আগুন দিয়েছে যত দিন তাদের বিচার না হবে, সাংবাদিকেরা যত দিন মত প্রকাশের স্বাধীনতা না পাবে, তত দিন পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে শুধু প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার নয়, আজকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। তাই গণতন্ত্রী সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার, প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন স্টাফ ভবনের ভেতরে আটকে ছিল, ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল।

প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার আহ্বান রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের

বাসস, ঢাকা  
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন সোমবার দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ সোমবার ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনা যত দ্রুত সম্ভব নিরসন করা প্রয়োজন। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, রাশিয়া দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। খোজিন বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হওয়া উচিত।’ বর্তমান পরিস্থিতিকে আর বাড়তে না দেওয়ার বিষয়েও তিনি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সতর্ক করেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে রাশিয়া। রাষ্ট্রদূত খোজিন আশা প্রকাশ করেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি নির্বাচনের আগে দেশে একটি অনুকূল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত জানান, রাশিয়া এ বিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য তারা এখন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের অপেক্ষায় রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

২০২৬ সালের হজে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধনকারীদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীক স্বাক্ষরিত হজ-১ শাখা থেকে জারিকৃত পত্রে বলা হয়েছে, ‘হজ ২০২৬-এর সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমাদানপূর্বক প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। হজ প্যাকেজ ও গাইডলাইন ২০২৬ অনুযায়ী প্রত্যেক হজযাত্রীকে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে জমা প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। বর্ণিতাবস্থায়, হজ ২০২৬ এর যে সকল হজযাত্রী নির্বাচিত প্যাকেজের সম্পূর্ণ অর্থ জমা প্রদান করেননি তাদের আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট সমুদয় অর্থ জমা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এ সময়ের মধ্যে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা জমা না দিলে সেই হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত