Ajker Patrika

সেই থেকে নিখোঁজ লিয়াকত

কামরুল হাসান
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ১১
সেই থেকে নিখোঁজ লিয়াকত

২০০৩ সালের ১ অক্টোবর, বুধবার। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক থেকে ৩২ নম্বর ব্রিজ পর্যন্ত সর্বত্র অচেনা মানুষের আনাগোনা। কেউ ঝাড়ুদার, কেউ ট্যাক্সিচালক, কেউ বাদাম বিক্রেতা, কেউ-বা ভিক্ষুক। সবাই শ্যেনদৃষ্টিতে অপেক্ষা করছেন।

ছদ্মবেশ নেওয়া সবাই আসলে পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘র‍্যাট’-এর সদস্য। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজমুল হাসান ভালো করে দেখে নেন, ৪০ জনের এই দলের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। বিকেল ৪টা বেজে কয়েক মিনিট, রুপালি রঙের একটি গাড়ি ধানমন্ডি ২৭ থেকে ৩২ নম্বর সড়কের দিকে মোড় নিচ্ছে। সবাই বুঝতে পারেন, এই গাড়িতেই শিকার। দলের একটি ট্যাক্সিক্যাব কারটি অনুসরণ করতে থাকে। বেতারবার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সবাইকে, যাতে সতর্ক থাকেন।

একটু পর গাড়িটি ৩২ নম্বর সড়কের শেষ মাথা পেরিয়ে ব্রিজের ওপর ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি হলুদ ট্যাক্সিক্যাব এসে সামনে দাঁড়ায়। গাড়িচালক অবস্থা বুঝে ব্যারিকেড দেওয়া গাড়িকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে র‍্যাপিড অ্যাকশন টিমের সদস্যরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা কয়েকজন পুলিশ কমান্ডো স্টাইলে গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। গাড়ি থেকে বের করে আনা হয় যে ব্যক্তিকে, তাঁর নাম লিয়াকত হোসেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তিনি সরকারের তালিকাভুক্ত। লিয়াকত গ্রেপ্তারের খবর আসে সংবাদপত্র অফিসে। আমরা ছুটে যাই র‍্যাটের ধানমন্ডির অফিসে। তার আগে র‍্যাট প্রসঙ্গে একটু বলে রাখি।

২০০৪ সালে র‍্যাব গঠনের আগে চারদলীয় জোট সরকার আরেকটি বিশেষায়িত বাহিনী তৈরি করেছিল, যার নাম ছিল র‍্যাট বা র‍্যাপিড অ্যাকশন টিম। পুলিশ সুপার মাজহারুল হক ছিলেন র‍্যাটের প্রধান। শুরুতে এই বাহিনী বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু বাহিনীর নাম নিয়ে পুলিশের মধ্যে হাসাহাসি শুরু হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলতেন ‘ইঁদুর বাহিনী’।

পরে সেই নাম বদলে করা হয় র‍্যাব। তবে এটা বলা যেতে পারে, র‍্যাব গঠনের আগে র‍্যাট ছিল জোট সরকারের ‘টেস্ট কেস’।

তো আমরা র‍্যাট অফিসে গিয়ে দেখি, লিয়াকতের সঙ্গে তাঁর দেহরক্ষী ও চাচাতো ভাই সোহাগ সর্দার এবং গাড়িচালক বাদল হাওলাদারকে আটক করা হয়েছে। সাংবাদিকদের দাবির মুখে লিয়াকতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেন র‍্যাট কর্মকর্তারা।

লিয়াকত হোসেন আমাদের বলেন, অনেক দিন কলকাতায় ছিলেন। এক মাস আগে তাঁর মা মমতাজ বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় আসেন। এরপর থেকে মোহাম্মদপুরে বায়তুল আমান হাউজিংয়ে তাঁর খালাতো ভাইয়ের বাসায় ছিলেন। গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার জন্য এত দিন সাবধানে চলাফেরা করেছেন। মুকুল চৌধুরী নামে ধানমন্ডির এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর কাছে তিনি টাকা পেতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি টাকা না দিয়ে টালবাহানা করছিলেন। ঘটনার দিন ওই টাকা দেওয়ার কথা ছিল। টাকা আনতেই তিনি মুকুল চৌধুরীর বাসায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু মুকুল তাঁকে ধরিয়ে দেবেন, তা তিনি ধারণাও করতে পারেননি।

লিয়াকত বলেছিলেন, তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণার পর তিন মাস ঢাকায় ছিলেন। এ সময় তিনি উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের চেষ্টা করেন। কিন্তু আইনজীবীরা তাঁকে আশ্বাস না দেওয়ায় আত্মসমর্পণ না করে কলকাতায় চলে যান। সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হলেও পরে মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের জন্য তিনি যথেষ্ট ত্যাগ করেছেন। বছরের পর বছর কারাভোগ করেছেন। বিনিময়ে দল থেকে কিছু পাননি; বরং আওয়ামী লীগই তাঁর নামের সঙ্গে সন্ত্রাসী শব্দটা জুড়ে দিয়েছে। আর বর্তমান জোট সরকার সেই সুযোগ গ্রহণ করছে। এই সুবাদেই আজ তিনি ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন।

লিয়াকতের সেই গ্রেপ্তার বেশ লম্বা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের পর র‍্যাট সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৯টি মামলা ও চারটি জিডি আছে। কিন্তু এসব মামলার একটিতেও তাঁকে কখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। গ্রেপ্তারের পর পাঁচ বছরে ২২ দফা আটকাদেশ দিয়ে তাঁকে জেলে রাখা হয়। লিয়াকতের সেই আটকাদেশের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে তাঁর পরিবার রিট করে। ২০০৮ সালের আগস্টে আদালত তাঁর আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান লিয়াকত। কারা প্রশাসনের উপমহাপরিদর্শক মেজর সামসুল হায়দার ছিদ্দিকী তাঁর মুক্তির খবর আমাকে দিয়েছিলেন।

কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নিজের ইস্কাটনের বাড়ি ছেড়ে ধানমন্ডি ২৭ (পুরাতন) নম্বর রোডে শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন লিয়াকত। তিনি কারও সঙ্গে মিশতেন না, টেলিফোনে কথাও বলতেন না। দুই মাস এভাবে থাকার পর একদিন সাদা পোশাকের একদল লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যান। সেই গল্পে পরে আসছি।

মাদারীপুরের শিবচরের ভান্ডারিকান্দি গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে লিয়াকতের জন্ম। ছয় ভাই, এক বোন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। চাচা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। ছোট ভাই নান্নু নিজ গ্রামে কয়েক দফা ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। আরেক ভাই হান্নান যুবলীগের কমিটিতে কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। বোন পারুল আখতার যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ছিলেন।

গ্রামের স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হতে ঢাকায় আসেন লিয়াকত। এসেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সে সময় ঢাকা কলেজের ছাত্র না হলেও সঙ্গী হান্নানকে নিয়ে তিনি ঢাকা কলেজ হোস্টেলের দুটি কক্ষ দখল করে থাকতে শুরু করেন। তবে এরশাদ শাসনের আমল পর্যন্ত টানা দুই দশক লিয়াকত ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন। এরপর যুবলীগের হাল ধরেন। ঢাকাসহ দেশব্যাপী তাঁর নিজস্ব কর্মী বাহিনী ছিল। রাজনীতির মাঠেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় হেমায়েতউল্লাহ আওরঙ্গ ও আমির হোসেন আমুর।

১৯৯০-এর পরে ঢাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন লিয়াকত। সেই বাহিনীর লোকজন নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে শুরু করে। শুরুতে লিয়াকতের ভাই নান্নু নীলক্ষেত এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন। সেটা ধীরে ধীরে এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন হয়ে ইস্কাটন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ইস্কাটনে প্রতিবন্ধী স্কুলের পাশে একটি বাড়ি দখল করে সেখানে ক্লাবঘর করেন। সেই ক্লাবে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন। পরে থিতু হন বাংলামোটরে হেলেনা সেন্টারে। ইস্কাটনের মোনা টাওয়ারে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে একপর্যায়ে হুমায়ুন কবির মিলন ওরফে মুরগি মিলনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। সেই দলে যুক্ত হন মগবাজারের আরমান। তাঁরা বিমানবন্দরের সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। এতে বাদ সাধেন আরেক সন্ত্রাসী টোকাই সাগর। ফলে দুই পক্ষে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এরপর পাঁচ সন্ত্রাসীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ফাইভ স্টার বাহিনী। একে সামাল দিতে টোকাই সাগর ও সুব্রত বাইন মিলে গড়ে তোলেন সেভেন স্টার বাহিনী। এ দুই বাহিনীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি হতো। সেই বিরোধের মধ্যে ২০০০ সালের ১৮ মে ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় খুন হন মুরগি মিলন। এরপর আরমান গা ঢাকা দেন। একা হয়ে যান লিয়াকত। তবে তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত ছিল সরকার। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০০ সালের ২০ অক্টোবর রমনা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তি পান ২০০১-এর নির্বাচনের কিছুদিন আগে।

২০০১ সালে দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। লিয়াকতকে ধরিয়ে দিতে ঘোষণা করা হয় এক লাখ টাকার পুরস্কার। এই ঘোষণার পর ফেরারি হন লিয়াকত। পাড়ি জমান ভারতে। সেখানে থাকাকালীন কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার আদালত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেন। ফিরে আসেন ২০০৩ সালে, র‍্যাটের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন আগে।

পাঁচ বছর জেল খেটে বের হওয়ার পর ২০০৮ সালের ২৫ নভেম্বর সাদা পোশাকের একদল লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যান ধানমন্ডির শ্বশুরবাড়ি থেকে। লিয়াকতের স্ত্রী ফারহানা হোসেন আমাকে বলেছিলেন, ভোর পৌনে ৬টার দিকে সাদা পোশাকধারী ছয়-সাত জন বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের বাসায় আসেন। তাঁরা বাসায় ঢুকে লিয়াকত কোন কক্ষে থাকেন তা জানতে চান। এরপর লিয়াকতকে পেয়েই তাঁর মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে এবং হাত পিছমোড়া বেঁধে দ্রুত একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। লিয়াকতের পাঁচটি মোবাইল ফোনসেটও নিয়ে যান তাঁরা।

সেই যে গেলেন, আর ফিরে আসেননি লিয়াকত। কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘ক্ষমতাধর’ লিয়াকত, কেউ জানে না।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ: জেএমবির সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে পরিচালক গ্রেপ্তার হন দুবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৪
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় মাদ্রাসা ভবনে বিস্ফোরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।

আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’

গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’

মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’

ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’

ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’

ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’

পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’

পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৫৯৭

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

বিষয়:

অপরাধ
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ডেভিল হান্ট-২: এক দিনে আরও ৬৯৮ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত
হাদি হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত