Ajker Patrika

১৫ বছরে সড়ক-সেতুতে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ৪১
১৫ বছরে সড়ক-সেতুতে ৫০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

গত ১৫ বছরে সড়ক ও সেতু খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি। 

এতে বলা হয়, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের মোট অর্থ বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর এই টাকার মধ্যে সার্বিকভাবে দুর্নীতির হার ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। 

গবেষণা সম্পন্ন করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো. জুলকার নাইন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। 

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পসমূহ এই গবেষণার আওতাভুক্ত (এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত)। এই গবেষণায় সড়ক নির্মাণ, সড়ক উন্নয়ন, সেতু নির্মাণ, সেতু উন্নয়ন (অনূর্ধ্ব ১৫০০ মিটার) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা, ধরন, বরাদ্দ ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১০টি জোনের ১৩টি সার্কেলের ২১টি বিভাগীয় দপ্তরের (জেলা পর্যায়) আওতাধীন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। 

গবেষণায় ৭৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। গবেষণায় ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় বিশ্লেষণ; ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি অবকাঠামো স্থানান্তর, বেতন, ভাতা, যানবাহন, স্টেশনারি, ইত্যাদি ব্যয় ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের শুধু নির্মাণ/উন্নয়নসংক্রান্ত কাজের প্রাক্কলিত গড় ব্যয়ের হার ৭৫ শতাংশ। শুধু নির্মাণ/উন্নয়নসংক্রান্ত কাজের প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। 

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিমাণ বেশি। প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেওয়া, কোনো ঠিকাদারের প্রাপ্ত কার্যাদেশ ক্রয়, নিয়মবহির্ভূতভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট নেওয়া, প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা বা স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যাদেশের মোট অর্থমূল্যের দুর্নীতি ২ থেকে ৬ শতাংশ। নির্মাণকাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষের পরিমাণ ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। নির্মাণকাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ। দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২ থেকে ৬ শতাংশ নির্মাণকাজে প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও সেতু নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে ঠিকাদার কর্তৃক চুক্তিমূল্যের ১০ থেকে ২০ শতাংশ। ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়ে প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ১২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। 

ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। 

ঠিকাদারগণ নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে বা বিভিন্ন উপকরণ কম দেন; সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক/প্রকৌশলীরা এই অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ করে দেন। পাথরের ঘনত্ব কম দেওয়া, নিম্ন মানের বিটুমিন ব্যবহার বা কম দেওয়া, ট্যাক কোট বিটুমিন না দেওয়া বরাদ্দ থাকলেও বৃক্ষরোপণ, রোড সেফটি সাইন, রক্ষাপ্রদ কাজ, আর্থ ওয়ার্ক এবং সার্ফেসিং না করা/অর্ধসমাপ্ত রাখা। 

বলা হয়েছে, একটি প্রকল্পে বৃক্ষরোপণে ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও একটি গাছও লাগানো হয়নি। সড়কে উন্নয়ন কার্যক্রম চলাকালে প্রাপ্ত স্যালভেজ (পরিত্যক্ত উপকরণ) কম মূল্য দেখিয়ে বিক্রয় বা পুনরায় ব্যবহার ডাইভারশন রোড যথাযথভাবে না করে শুধু মাটি ফেলে সড়ক নির্মাণ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহার না করা। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহির ঘাটতি
টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায় নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। 

ইজিপির তথ্য অনুসারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ঠিকাদারি কাজ পেতে জালিয়াতি করায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৩৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়; তবে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রদান। কয়েকজন ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত নেই। কিছু ঠিকাদারের রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চ পর্যায়ে যোগসাজশ থাকার কারণে সওজের কর্মকর্তা ঠিকাদারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। 

প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন ও মূল্যায়ন পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতি
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই নিম্ন মানের প্রকল্প প্রস্তাব ও ‘ফরমায়েশি’ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের নজির রয়েছে। 

প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে সওজের পরিকল্পনা উইংয়ের সম্পৃক্ততা কম; প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার জন্য সওজের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয় প্রধান কর্তৃক প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। কখনো কখনো খুব দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়নের চাপ আসে; প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর আগেই সুপারিশ চলে আসে। 

কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন এবং গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজের কোনো কোনো কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীদের ২-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়। 

প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন; এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত প্রাক্কলন হয়েছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পে পরিচালক বানানো হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে ১২টি প্রকল্পের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। বিগত পাঁচ বছরে সমাপ্ত প্রকল্পসমূহের ৩৮ দশমিক ৮ শতাংশ চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্প পাঁচ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বোচ্চ ১৭ বছরে একটি প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পসমূহের প্রাথমিক প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে পরবর্তীতে সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রকল্পে একজন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদানের ৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন পর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। 

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ২৫টি প্রকল্পের কোনটিতেই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ, অবস্থানগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। এর বিপরীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি। 

প্রতিবেদন উপস্থাপন শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত রয়েছে। একেবারে নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের ঘুষ লেনদেনে ৪০-৪৩ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। এখন ত্রিপক্ষীয় সিন্ডিকেট যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।’ 
 
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে অনেক তথ্য আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হলো-প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে হয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও কম-বেশি দুর্নীতি হয়েছে। এতে দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশ হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর হামলায় মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর হামলায় মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের নিন্দা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবনে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক বৈশ্বিক জোট মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন (এমএফসি)।

মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত রাতে সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে—মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন তার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে। এ ধরনের সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকারে সরাসরি আঘাত।’

মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন হামলায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনতে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সকল সংবাদকর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভয়ভীতি ছাড়া সাংবাদিকদের কাজ করার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া অপরিহার্য। আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং একটি উন্মুক্ত ও তথ্যসমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের জন্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

উল্লেখ্য, গত রাতে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উত্তেজিত একদল লোক কারওয়ান বাজারে অবস্থিত প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনের সামনে জড়ো হয়। একপর্যায়ে ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চালানো হয় এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে: ছায়ানট পরিদর্শন শেষে ফারুকী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: সংগৃহীত
আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: সংগৃহীত

ছায়ানট ভবনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানট ভবন পরিদর্শন করেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জায়গাগুলো দেখেন এবং ছায়ানটের সংগঠক পার্থ তানভীর নভেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন।

পরিদর্শন শেষে সংস্কৃতি উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। এই ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, অনেক ক্ষতিসাধন হয়েছে। আমি ছায়ানট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে যাবতীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে প্রতিষ্ঠানটি যেন দ্রুত চালু করা যায়, এ ব্যাপারে আর্থিকসহ সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে। ছায়ানট পরিচালনা কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এ বিষয়ে আমাদের জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, ‘এই ভবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছায়ানটের বাইরে বিজিবি ও পুলিশ কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। আমি উপদেষ্টা পরিষদের অন্যদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।’

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এটা অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র। আজ আমাদের কথা বলার কথা শহীদ ওসমান হাদিকে নিয়ে। আজ আমাদের শোকাতুর হওয়ার কথা। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়েছে কারা? কারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলা করেছে? যারা করেছে, তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় না।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই জাতীয় শোকের মুহূর্তে এক শ্রেণির হঠকারী লোক দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটে হামলা চালিয়ে ক্ষতিসাধন করেছে। মৃত্যুঞ্জয়ী হাদির মৃত্যুতে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলা কেবল একটি ফৌজদারি অপরাধই নয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনারও পরিপন্থী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় পৌঁছেছে ওসমান হাদির মরদেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৩
শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। ছবি: প্রেস উইং
শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। ছবি: প্রেস উইং

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। তাঁর মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-৫৮৫ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছানোর খবরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরে যান। বিমানবন্দরে হাদির কফিনের পাশে উপস্থিত ছিলেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম। এ সময় তাঁদের কয়েকজনকে কাঁদতে দেখা যায়।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, ‘শহিদ ওসমান হাদিকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে হিমাগার এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। সেখানে শহিদ ওসমান হাদিকে রেখে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে এসে অবস্থান নিবে। পরিবারের দাবির ভিত্তিতে শহিদ ওসমান হাদিকে কবি নজরুলের পাশে সমাহিত করার এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বাদ জোহর জানাজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আজকের পরিবর্তে আগামীকাল মিছিলসহ ভাইকে সেন্ট্রাল মসজিদে আনা হবে।’

ফাতিমা তাসনিম জুমা পোস্টে আরও লেখেন, ‘ছাত্রজনতা আজ ও আগামীকাল শৃঙ্খলার সাথে আন্দোলন জারি রাখবেন যেন কোনো গোষ্ঠি অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করতে না পারে একই সাথে সহিংসতা করার সুযোগও না পায়।’

পোস্টে বলা হয়, ‘মরদেহ দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না। সকলের নিকট শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং শহিদ ওসমান হাদির জন্য দোয়া পৌঁছানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।’

জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় ১২ ডিসেম্বর চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতার আশঙ্কায় বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য দূতাবাসের সতর্কবার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকাজুড়ে ব্যাপক জনসমাগম ও তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার এবং বড় ধরনের জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়ে একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তাঁর জানাজা আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা উপলক্ষে ওই এলাকা এবং সমগ্র ঢাকাজুড়ে অত্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।’

সম্ভাব্য এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দূতাবাস কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে—নাগরিকদের যেকোনো বড় জনসমাবেশ বা বিক্ষোভ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে আয়োজিত সমাবেশও যেকোনো সময় সংঘাতপূর্ণ বা সহিংস হয়ে উঠতে পারে। জনসমাবেশের আশপাশে চলাচলের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত