Ajker Patrika

জুলাই জাতীয় সনদ: বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদে সনদ স্বাক্ষরে অনিশ্চয়তা

তানিম আহমেদ, ঢাকা
জুলাই জাতীয় সনদ: বাস্তবায়ন নিয়ে মতভেদে সনদ স্বাক্ষরে অনিশ্চয়তা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অনড় অবস্থান থেকে সরছে না। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো সাংবিধানিক বিভিন্ন বিষয় নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে। অন্যদিকে সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনের পক্ষে অনড় জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল। বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা না থাকলে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানাচ্ছে দলগুলো।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনিশ্চয়তা শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই নয়; বরং নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে, আজ রোববারের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন, যাতে সনদ নিয়ে অস্বস্তি কাটবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক করতে গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে কমিশন। সেখানে সনদ বাস্তবায়নের চারটি পদ্ধতির কথা সুপারিশ করা হয়। যেগুলো হলো গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশ।

বিএনপিসহ তার সমমনারা সাংবিধানিক বিভিন্ন বিষয় ছাড়া অন্যগুলো অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নের পক্ষে। সাংবিধানিক বিষয়গুলো পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চায় দলটি।

তবে জামায়াতে ইসলামী বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ ও এনসিপি গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চেয়েছে। দলগুলো আইনি ভিত্তি না থাকলে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলেও জানিয়েছে একাধিকবার।

জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় না পৌঁছালে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শারমীন আহমেদ। সে ক্ষেত্রে বড় দল হিসেবে বিএনপি একমাত্র নির্বাচনের দাবিদার হিসেবে মাঠে থাকবে বলে মনে করেন তিনি। শারমীন আহমেদ বলেন, ‘জামায়াত ও এনসিপি, যারা দাবি করছে জুলাই আন্দোলনে তাদের বেশি অংশগ্রহণ ছিল, তারা রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি চাইবে। সেটা নিয়ে সমঝোতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে বিএনপিও নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবে। দুই ধরনের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। যেটা নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করবে, ভোটাররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিরাপদ মনে করবেন না।’

চূড়ান্ত জুলাই সনদ গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সনদের চূড়ান্ত ভাষ্যে সবার মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। এ জন্য সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে দুজন ব্যক্তির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিএনপি ও এনসিপিসহ ১৫টি দল নাম পাঠিয়েছে। কমিশন বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্ধারিত সময়ে সবকিছু হয় না। দু-এক দিনের মধ্যে সব দলের পক্ষ থেকে নাম পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা।

আজ রোববার সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠকে বসবে কমিশন। বেলা আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তিনি দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেবেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে দলগুলো মত বদলাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে বিএনপির পক্ষ থেকে দুজনের নাম পাঠানো হয়েছে বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। তাঁরা হলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

জামায়াত থেকে বলা হয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ঠিক হলেই তাঁরা স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সে সময় স্বাক্ষরের জন্য নাম পাঠাবে দলটি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো সনদ হয়নি। হলেই তো স্বাক্ষরের বিষয়টি আসবে। কমিশনের রোববারের (আজ) আলোচনার ধরন দেখেই আমরা স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে শুক্রবার রাতে এনসিপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। সেখানে জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দল ও কমিশনের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত কথা হয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনে দাবিতে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এটার জন্য রাজনৈতিক লড়াই বজায় রাখবে দলটি।

জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নাম এনসিপির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষর করব কি না, তা নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছি। তাদের মতামত জেনে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নপ্রক্রিয়ায় গণপরিষদ থাকবে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, তাঁর দল নাম পাঠাবে, তবে যেহেতু তাঁদের প্রধান দাবি (নিম্নকক্ষে পিআর) নিয়ে সনদে কিছু নেই, তাই এ দাবির পক্ষে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে ইসলামী আন্দোলন সনদে স্বাক্ষর করবে কি, করবে না।

বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ জানান, তাঁর দল সনদে কিছু সংশোধনের শর্ত উল্লেখ করে প্রতিনিধিদের নাম জানাবে। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের শর্ত পূরণ না করা হয়, তাহলে আমরা সনদে স্বাক্ষর করব না।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানও জানিয়েছেন, তাঁর দলও সনদের জরুরি কিছু সংশোধনের দাবি রেখে প্রতিনিধিদের নাম পাঠাবে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, তাঁর দল প্রতিনিধিদের নামের তালিকা পাঠাতে সময় চায়। তিনি বলেন, ‘কমিশনের কাছে আমাদের কিছু দাবি ছিল যেমন চার মূলনীতি অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। তা ছাড়া, চূড়ান্ত সনদের ভূমিকা এবং অঙ্গীকারনামা নিয়ে আমাদের দলের আপত্তি আছে। এসব বিষয় যদি কমিশন এড়িয়ে যায়, তবে সনদে স্বাক্ষর করব কি না, তা সময়ই বলে দেবে।’

নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বলেন, দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকার বাইরে থাকায় তাঁর দল এখনো প্রতিনিধির তালিকা বা সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আজ রাতের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি জানান।

বাসদ মার্ক্সবাদীর পক্ষে দুজন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর পাশাপাশি একাধিক আপত্তি জানানো হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সনদের সঙ্গে জুলাই সনদের তুলনা করা যাচ্ছে না। এই সনদের চরিত্র নির্ণয় করা না গেলে, ভবিষ্যতে এটি প্রশ্নের মুখে পড়তে বাধ্য।

কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা ঠিক হবে না। কারণ তাঁরা বাইরে অনেক কথা বলবেন। সেগুলো অনুসরণ করা আমাদের জন্য মুশকিল।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছুই সংসদ ছাড়া সম্ভব নয়। দেশের বিদ্যমান আইন ও চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু করা ঠিক হবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় মূল বিষয় ছিল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেটা না হওয়ার জন্য এত কিছু হয়েছে। তাই সবাইকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একমত হওয়া উচিত। কিন্তু জুলাই সনদের নামে নির্বাচনকে পেঁচিয়ে দেওয়া জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়া পরিবারের আর কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবে না: রিজওয়ানা হাসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট গণনায় সংশোধনী ও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত