Ajker Patrika

ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে হত্যা-অপহরণ আতঙ্ক

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ০৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি জেলেদের মূর্তিমান আতঙ্ক সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। পাঁচ মাসে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর থেকে ১৩টি ঘটনায় আরাকান আর্মি ও সে দেশের নৌবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের ১০৬ জন অপহৃত হন। গতকাল মঙ্গলবারও সেন্ট মার্টিনের অদূরে সাগরে মাছ ধরার সময় দুটি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে এএ।

এদিকে, ভারত সীমান্তে বিএসএফের হত্যা-নির্যাতন থামছেই না। বারবার মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা মানছে না বিএসএফ। সীমান্তবর্তী জমির ফসল কেটে নেওয়া, বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ঘটনা তো রয়েছেই। এভাবে দুঃসহ হয়ে উঠেছে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশিদের জীবন।

এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধি সূত্র জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের মানুষ বোমা আর গুলির আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছেন। বোমা ও গুলির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তে নতুন যুক্ত হয়েছে অপহরণ আতঙ্ক। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক জেলে সম্প্রদায় ও নৌযানের মালিকেরা।

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জেলে পরিবারের বাস। কিন্তু সাগরে নামতে তাদের আতঙ্ক আরাকান আর্মি। সাবারং ইউনিয়ন পরিষদের শাহপরীর দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখল করার পর জেলে অপহরণ ও আটক বেড়েছে। জেলেরা মাছ ধরে ফেরার পথে আরাকান আর্মিরা তাঁদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে জেলেরা আতঙ্ক নিয়ে সাগরে যাচ্ছেন।

indiaaa

আবদুস সালাম আরও বলেন, জেলেরা চর এড়িয়ে গভীর জল দিয়ে উপকূলে আসে। এই রুটটা মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি। এই সুযোগটাই নিচ্ছে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের নৌবাহিনী। এ পথ থেকে তাঁদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে অপহরণের শিকার হন শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়ার হাবীব নামের এক জেলে। ওই ঘটনার পর তিনি আর সাগরে মাছ শিকারে যাননি। তিনি বলেন, ‘মাছ শিকার করে আসার বোটগুলো আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার নৌবাহিনী টার্গেট (নিশানা) করে। তারা ট্রলারসহ জেলেদের নিয়ে যায়। মাছ নিয়ে যায়।’

এলাকার একটি সূত্র জানিয়েছে, কোনো কোনো নৌযানের মালিক আরাকান আর্মিকে টাকা দিয়ে জেলে ও নৌযান ছাড়িয়ে আনেন। টাকা না দিলে কয়েক দিন জেলেদের আটকে রাখে আরাকান আর্মি।

বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৬ মার্চ পর্যন্ত নাফ নদী ও সাগরে ১৩টি অপহরণে জড়িত আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার নৌবাহিনী। এর মধ্যে ১২টিই করেছে আরাকান আর্মি। এসব ঘটনায় জেলেসহ ৪৪ বাংলাদেশি ও ১৪ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে তারা। পরে আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের ফিরিয়ে আনে বিজিবি। গত পাঁচ মাসে তারা ইঞ্জিনচালিত ৭টি মাছধরার ট্রলার নিয়ে যায়। সেগুলোও ফেরত এনেছে বিজিবি।

আর মিয়ানমারের নৌবাহিনী গত ৫ মার্চ মাছ ধরার ছয়টি ট্রলার অপহরণ করে। এসব নৌযানে ৫৬ জল জেলে ছিলেন। ওই দিন রাতেই তাঁদের ফেরত আনে বিজিবি।

গতকাল সকালে কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের অদূরে সাগরে মাছ ধরার সময় দুটি ট্রলারসহ ১১ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা।

শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি বশির আহমেদ বলেছেন, ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে এখন জেলেদের আতঙ্ক রয়েছে। তবু পেটের দায়ে সাগরে ছুটতে হয় তাঁদের।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। বিএসএফ সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ওয়াদা করলেও তারা তা মানে না।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, অনুপ্রবেশ ও গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা নিয়ে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তখন পূর্বনির্ধারিত বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের সম্মেলন এক মাস পেছানো হয়। নয়াদিল্লিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহতের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোর আহ্বান জানান।

ওই সম্মেলনে সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিজিবি তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তবে ওই সম্মেলন শেষের এক সপ্তাহের মাথায় ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় বিএসএফের গুলিতে আল আমিন নামে এক যুবক নিহত হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, গত আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১২ মার্চ পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। একই সময় বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে সীমান্তে অন্তত অর্ধশত বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। এসব হত্যা, গোলাগুলি ও উত্তেজনার ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফ ২১ বার পতাকা বৈঠক করেছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তে গত বছরের (২০২৪) ২৬ এপ্রিল বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান আবুল কালাম (২৪)।

ওই ইউনিয়নের ঝালঙ্গী ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা এখনো শঙ্কিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় চাষাবাদ করা জমিতে কাজ করতেও ভয় হয়। বর্তমান রাত-দিন অনেক বিএসএফ সদস্য অস্ত্র হাতে বসে থাকেন। তাঁদের তুলনায় বিজিবি সদস্য অনেক কম, সীমান্তে টহলও কম দেন। বাড়িঘর, পরিবার ছেড়ে তো আমরা যেতে পারি না।’

আবুল কালাম মা মমতা বেগম (৫০) বলেন, ‘আমার ছেলেকে বিএসএফ বিনা দোষে গুলি করে মেরেছে। ওরা (বিএসএফ) খুবই নিষ্ঠুর। বর্তমান সীমান্তে বসবাস করতে আমাদের মতো সবারই অনেক ভয় হয়। না জানি বিএসএফ আবার গুলি করে কাউকে মারে নাকি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিরনগঞ্জে এবং আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সীমান্তে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার উপায় খোঁজা হয় ওই সম্মেলনে। সে সম্মেলনে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদলের পরিদর্শন ও যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ব্যাপারে একমত হয় দুই দেশ।

প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তের অস্থিরতা থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বিজিবি। এর মধ্যে সীমান্ত এলাকায় জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রচার, টহল এবং নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সাগরে মাছ ধরার সময় এবং আসা-যাওয়ার পথে পার্শ্ববর্তী দেশের জলসীমা এড়িয়ে চলাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে জেলেদের।

জানতে চাইলে বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল এস এম শফিকুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভারতীয় সীমান্তে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন নেই। তবে রাখাইন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির ভেতরে রয়েছে। তারপরও যত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোতে যাঁরা অপহৃত হয়েছিলেন, সেসব জেলেকে ফেরত আনা হয়েছে।

লে. কর্নেল শফিকুর রহমান আরও বলেন, জেলেরা যাতে বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম না করেন সে বিষয়ে তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে। যাতে এ ধরনের (অপহরণ) ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য বিজিবিসহ অন্যরা কাজ করছে। জেলা প্রশাসন ও বিজিবি শাহপরীর দ্বীপের ও টেকনাফের জেলেদের সঙ্গে একাধিকবার এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার বিজিবি তা করছে।

{প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম প্রতিনিধি আজিনুর রহমান আজিম}

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৪
খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত