Ajker Patrika

তিন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ মে ২০২২, ১৫: ৪০
তিন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩৯০ কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালী এস এস বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে শুধুমাত্র ভূমি ক্রয় ও অধিকাংশ ক্ষতিপূরণ প্রদানে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

আজ বুধবার ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। সেখানে বিষয়টি উঠে আসে।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে খাসজমির জাল দলিল তৈরি করে তা বিক্রয় বাবদ ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির জবরদখল ও অর্থ প্রদান না করা বাবদ ২ কোটি ৪১ লাখ টাকা দুর্নীতিসহ এই প্রকল্পে ১৫ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ব্যক্তিগত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ বাবদ মূল্য প্রদানে ২০০ কোটি টাকার কমিশন আদায় এবং ইজারাকৃত জমি ব্যবহারকারীদের ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে ৫৫ কোটি টাকা কমিশন আদায়সহ মোট ২৫৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

এ ছাড়া মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যক্তিগত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ বাবদ মূল্য প্রদানে ৮২ কোটি ৫ লাখ টাকার কমিশন আদায়সহ ১১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।

এই দুর্নীতিতে অর্থ গ্রহীতা ছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ, ডরপ এনজিও কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প বলে আইসোটেক কর্তৃক প্রশাসনের সহায়তায় জমির মালিকদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও ভূমি দখল করা হয়েছে। ক্রয়কৃত জমির চেয়ে বেশি জায়গা দখল এবং ক্ষেত্রবিশেষে জমি ক্রয় না করেই জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে। বাঁধে বসবাসকারী জেলে পরিবারের ওপর হামলা, মামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। দলিল ও ভুয়া মালিক তৈরি করে খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০টি রাখাইন পরিবারের ৭০ একর কৃষিজমি, উপকূলীয় বনসহ নদী ও খাল দখল করা হয়েছে। 

বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ২ কিলোমিটার সমুদ্রতট দখল করে লবণচাষিদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। খাসজমিসহ স্থানীয়দের প্রায় ১০০ একর জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে জমির মালিকদের নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে বলেও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ প্রদান করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক কম মূল্যে স্থানীয়দের কাছ থেকে জমি কিনে বেশি মূল্যে এস আলম কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে তথ্যদাতারা জানান। 

এ ছাড়া মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে স্থানীয়দের থেকে জোরপূর্বক ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জমির মূল্য পেতে ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদানে বাধ্য করা হয়েছে। লবণ ঘেরকে নাল জমি দেখিয়ে কম মূল্যে জমি ক্রয় করারও অভিযোগ রয়েছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, এসব প্রকল্পে প্রয়োজনের অধিক জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ০.২৩ একর এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ০.০৫৩ একর জমি প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে গবেষণার আওতাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ৯৪২ একর অতিরিক্ত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্বাচিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গড়ে ০.৬৯ একর এবং এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ০.৬৫ একর জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যু; মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও বিচার না হওয়াসহ অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালী মহলকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানে প্রকল্প অনুমোদন, বিবিধ চুক্তি সম্পাদন, ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ, বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ এবং বিদ্যুৎ কেনায় প্রতিযোগিতাভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে বিশেষ বিধানের আওতায় চুক্তি ও কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে।’ 

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে এবং পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশদূষণ এবং সংকটাপন্ন এলাকাসমূহে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেলেও পরিবেশ অধিদপ্তর বিদ্যমান আইন ও বিধি কার্যকরভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ; বন, নদী, খাসজমিসহ প্রাকৃতিক সম্পদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি সাধন হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিক আনিস আলমগীরের মুক্তি চায় অ্যামনেস্টি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে (এটিএ) গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ও আরও চারজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এই অভিযোগের পর ঢাকার একটি মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক রিহ্যাব মাহামুর বলেন, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার একটি উদ্বেগজনক ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সমর্থন রয়েছে—এমন ধারণার ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার না করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এসব অধিকার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) অধীনে নিজেদের দায়বদ্ধতার সম্মান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে আনিস আলমগীরকে মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে শুনানির সময় আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। আমি ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করি। গত দুই দশক ধরে আমি এই কাজই করছি। কারও কাছে মাথা নত করা আমার কাজ নয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সংশোধনের পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থনের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাও রয়েছেন।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ-নির্বিশেষে সবার মানবাধিকার সুরক্ষিত ও বিকশিত হয়। একটি মানবাধিকারসম্মত সমাজের জন্য অপরিহার্য স্বাধীনতাগুলো খর্ব করতে দমনমূলক আইনপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়াউলের বিরুদ্ধে শতাধিক ব্যক্তিকে গুম-খুনের অভিযোগ আমলে নিলেন ট্রাইব্যুনাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি

গুমের পর শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ আমলে নিয়ে ২১ ডিসেম্বর জিয়াউল আহসানকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে সকালে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। মামলায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গুম-খুনের কালচার শেখ হাসিনার আমলে শুরু হয়েছিল। সেটা সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে হতো। পরে নির্দেশ আসত তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে। এসব কিছুর বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউল আহসান। বাংলাদেশে এ রকম বীভৎস, নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে তাঁর যে স্পর্ধা, সে জন্য তাঁকে একক আসামি হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ-১: ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাতে গাজীপুরের পুবাইলের ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে জিয়াউল আহসানের পরিকল্পনায় ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সজল ও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে গুলি করে হত্যা।

অভিযোগ-২: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার পাথরঘাটা থানার চরদুয়ানীর নিকটবর্তী বলেশ্বর নদের মোহনায় নজরুল ইসলাম মল্লিক, আলকাছ মল্লিকসহ কমপক্ষে ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা ও লাশ গুম।

অভিযোগ-৩: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার বলেশ্বর নদ ও বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত বনদস্যু দমনের নামে মাসুদসহ ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা।

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‍্যাবে পোস্টিং হওয়ার পর থেকে জিয়াউল আহসান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে ২০২৪ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আগপর্যন্ত কখনোই তাঁকে সেনাবাহিনীতে ফেরত যেতে হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জিয়াউল আহসান র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ও এডিজি (অপস) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসংখ্য গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অগণিত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ তাঁর সরাসরি নির্দেশে বিশ্বস্ত র‍্যাব সদস্যরা ঘটাতেন।

হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হটস্পট ছিল বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী খাল বেয়ে অগ্রসর হয়ে বলেশ্বর নদের বিভিন্ন পয়েন্ট ও মোহনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সড়কপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার চরদুয়ানীতে রাত ১১টা কিংবা তারও পরে কালো কাচের মাইক্রোবাস, জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়িবহরে র‍্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে দু-একজন করে বন্দী থাকতেন, কখনো বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশিও হতো। বন্দীদের ট্রলারে উঠিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে শরীরের সঙ্গে (মাথা বা বুকে) বালিশ ঠেকিয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর পেট ছুরি দিয়ে ফেড়ে শরীরে (মাথা ও পায়ে) সিমেন্টের ব্লক বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনা ও পতেঙ্গা উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরেও এ ধরনের অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। এ ধরনের অপারেশনের অনেকগুলোয় জিয়াউল আহসান সশরীরে অংশ নেন এবং অনেকগুলোয় তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনার আলোকে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা অথবা তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য ব্যাটালিয়নের বাছাই করা সদস্যরা হত্যাকাণ্ড ঘটান।

অভিযোগে বলা হয়, গুম থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গভীর রাতে পাথরঘাটার চরদুয়ানী থেকে ট্রলারে করে বলেশ্বর নদ হয়ে সুন্দরবনের পূর্বনির্ধারিত নিজেদের সাজানো কথিত বনদস্যুদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হতো। ভুক্তভোগীদের চোখ, হাত-পা বেঁধে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধের আবহ তৈরি করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযানের সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হতো কিছু অনুগত সাংবাদিককে। তবে তাঁদের ঘটনাস্থলে না নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে ক্রসফায়ারের নামে ভুক্তভোগীদের হত্যা করা হতো। পরে তাঁদের ঘটনাস্থলে নিয়ে নিজেদের মনমতো ঘটনার বর্ণনা দিত। দস্যুনিধনের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগে থেকে আটক রাখা নিরপরাধ বন্দীদের হত্যা করা হতো।

অধিকাংশ অভিযানে জিয়াউল আহসান নিজেই অংশ নিতেন। এ ছাড়া তদন্তে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ জনকে হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার নামে কমপক্ষে ৬১ জনকে হত্যাসহ আরও অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউল আহসানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে পৃথক তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আজ বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে।

আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিফ প্রসিকিউটর।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে তুলে নেওয়ার কাজটি জিয়াউল আহসানের নির্দেশ ও তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে। ছাত্রশিবিরের নেতা গোলাম কিবরিয়া, হাফেজ জাকির, চৌধুরী আলম—এ রকম উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনার প্রতিটির পেছনের পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন জিয়াউল আহসান।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়া এবং পরে ভারতে পাচার করে দেওয়ার পেছনেও জিয়াউল আহসান ছিলেন। বিচারের স্বার্থে এগুলোকে আলাদা করা হয়েছে, যাতে আরও সুষ্ঠুভাবে সাক্ষী উপস্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা শতাধিক মানুষের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চার্জ দাখিল করেছি। বাকি আরও পাঁচ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এগুলোকে আলাদাভাবে দাখিল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বুধবার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান দেশটিতে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়েছিলেন।

রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন এবং হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।

প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।

১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত অটোরিকশায় হাদিকে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত