Ajker Patrika

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারকে খালাস দিলেন সুপ্রিম কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ২০: ৫৩
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়প্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। ফাইল ছবি
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়প্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। ফাইল ছবি

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়েছে আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেন। সেই সঙ্গে অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তিরও নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে আজহারের পক্ষে আপিলের শুনানি শেষে গত ৮ মে রায়ের জন্য আজ মঙ্গলবার দিন রাখা হয়। আপিল বিভাগে আজহারের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। এ টি এম আজহারুল ইসলামের পক্ষে ওই রায়ের রিভিউ বা পর্যালোচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

গতবছর ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পর চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে রিভিউ আবেদনের অনুমতি দেন। সেই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সারসংক্ষেপ জমা দিলে আপিল শুনানি হয়।

আজহারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যত অভিযোগ

মুক্তিযুদ্ধকালে রংপুরে আলবদর বাহিনীর যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাঁর বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনীর নেতা হিসেবে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১৪০০ লোককে হত্যা ও ১৪ জনকে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি। পদাধিকার বলেই আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডারও ছিলেন তিনি। বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল।

আজহারের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগের মধ্যে দুটি গণহত্যা, একটি ধর্ষণ, চারটি হত্যা এবং অপহরণ, আটক, নির্যাতনের তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর আজহারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

  • অভিযোগ ১

১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাসানী (ন্যাপ) নেতা ও রংপুর শহরের আয়কর আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলী ওরফে জররেজ মিয়াসহ ১১ জনকে অপহরণ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁদের সাতদিন আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। এরপর ৩ এপ্রিল তাদের রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্মশানে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে আজহারের লোকজন। এ সময় দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে মন্টু ডাক্তার আহত হলেও বেঁচে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার শরীরে সেই গুলির জখম ছিল।

এসব ঘটনায় এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

  • অভিযোগ ২

১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে করে নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ট্যাক্সেরহাট রেলগুমটিতে যান আজহার। সেখান থেকে ধাপপাড়া যাওয়ার পথে দুই পাশের একাধিক গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালান তাঁরা। ধাপপাড়ায় পৌঁছে মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে হত্যা করেন তাঁরা।

এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

  • অভিযোগ ৩

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল দুপুর ১২টা থেকে ৫টার মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সশস্ত্র সদস্য এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিলের আশেপাশের গ্রামে হামলা চালিয়ে এক হাজার দুইশর বেশি নিরীহ হিন্দু গ্রামবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে আজহারুল ইসলাম। এছাড়া আরো অন্তত ২০০ লোককে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এছাড়া গ্রামগুলোর বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে তাঁরা।

এই ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে আন্তুর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

  • অভিযোগ ৪

১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে আলবদর বাহিনীর সদস্য ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন আজহার।

এই ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

  • অভিযোগ ৫

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর শাখার সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যরা এবং স্থানীয় বিহারীরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনের তথ্য সংগ্রহ করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করত। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা অনেক পরিবারের সদস্যদের অপহরণ, আটক ও নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে রংপুর শহর এবং আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মনসুরা খাতুনসহ অসংখ্য নারীকে ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।

এই ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

  • অভিযোগ ৬

একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় শওকত হোসেন রাঙাকে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত এটিএম আজহার। এরপর রাঙার ভাই ও ছাত্রলীগের কারমাইকেল কলেজ শাখার ছাত্রলীগ কর্মী রফিকুল হাসান নান্নুকে রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের শহীদ মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন ও জখম করা হয়। পরে নাসিম ওসমান নামের এক অবাঙালির সহায়তায় নান্নুকে ছাড়িয়ে আনেন তার বড়ভাই সাজ্জাদ জহির।

এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) এবং ২০(২) ধারায় অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার শোক বইয়ে স্বাক্ষর করতে মানুষের ঢল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৭
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের আবহ বিরাজ করছে। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে রাখা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সর্বস্তরের জনগণ।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে খোলা হয় শোক বই। এর পর থেকে আসতে থাকেন দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আজ রাতে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তাঁরা রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শোক প্রকাশ করেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শোক বইয়ে স্বাক্ষর করে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। পরে তিনি বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন।

শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: সংগৃহীত
শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে। দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আজ সন্ধ্যায় শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

খালেদা জিয়ার প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানাতে শোক বইটি উন্মুক্ত রয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব ও সর্বস্তরের মানুষ স্বাক্ষর অব্যাহত রেখেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত