Ajker Patrika

শাহজালালের কার্গো ভিলেজে ছিল না ফায়ার অ্যালার্ম-ডিটেক্টর-হাইড্রেন্ট, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গত ১৮ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনে পুড়ে যায় আমদানি করা মালপত্রের বড় অংশ। প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে জ্বলা আগুনে ক্ষতির পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াতে পারে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কার্গো ভিলেজের ওই এলাকায় ছিল না ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর এমনকি ফায়ার হাইড্রেন্টও।

আজ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা জানান।

প্রেস সচিব বলেন, বিভিন্ন কুরিয়ার এজেন্সির জন্য নির্ধারিত ৪৮টি ছোট ছোট লোহার খাঁচার অফিস এলাকায় ফায়ার অ্যালার্ম, স্মোক ডিটেক্টর ও স্প্রিংকলার ছিল না বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ধরনের নিয়মের তোয়াক্কা ও সতর্কতা ছাড়াই পলিথিনে মোড়ানো কাপড়ের রোল, রাসায়নিক পদার্থ, সংকুচিত বোতলের পারফিউম ও বডি স্প্রে, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, ব্যাটারি এবং ওষুধজাত পণ্যের কাঁচামালের মতো অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ এলোপাতাড়িভাবে সেখানে স্তূপ রাখা হয়েছিল।

অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয় সে বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শফিকুল আলম জানান, দুপুর ২টা ৯ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। ধোঁয়া দৃশ্যমান হয় ২টা ১৫ মিনিটে। একজন আনসার কর্মী শনাক্ত করেন। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি আসে ২টা ২২ মিনিটে। দ্বিতীয় গাড়ি আসে ২টা ২৫ মিনিটে। ২টা ৫০ মিনিটে আসে উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ১৫০০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রাসহ সম্পূর্ণরূপে ছড়িয়ে পড়া আগুন, ঘন ঘন তালা লাগানো লোহার গ্রিল, ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকা এবং অজানা রাসায়নিক পণ্যের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ ব্যাহত হয়। এছাড়া অপর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপক ফোম, কাঠামোগত ধস এবং ধ্বংসাবশেষের ধসে পড়াও কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস, সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞ, এনএসআই বিস্ফোরক বিভাগ, ডেসকো, সিটিটিসি, বুয়েট, আফাত (তুরস্কের অগ্নিনির্বাপণী সংস্থা) মোকা কর্তৃক গঠিত ক্যাটালগিং কমিটির প্রতিবেদন, ৯৭ জন সাক্ষীর মৌখিক ও লিখিত সাক্ষ্য, সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ বিমান, কাস্টমস, এফএসসিডি কর্তৃক জমা দেওয়া নথি, ডিজিএফআই, বিমান, সিএবি, এনএসআই এপিবিএন, কুরিয়ার এজেন্সি, মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ মিলিয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

শফিকুল আলম প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডটি স্যাবোটাজ ছিল না। এটা বৈদ্যুতিক আর্কিং এবং শর্ট সার্কিটের কারণে লাগে। আর আর্কের পরবর্তীতে শর্ট সার্কিটের কারণে কুরিয়ার শেডের বর্ধিত অংশের উত্তর পশ্চিম কোণের পাশাপাশি অবস্থিত কয়েকটি কুরিয়ার এজেন্সির খাঁচাগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অগ্নিপাতের সূত্রপাত হয়।’

তুরস্ক থেকে আগত বিশেষজ্ঞ দল, বুয়েট বিশেষজ্ঞ, অগ্নিনির্বাপক বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডি ফরেন্সিকের প্রতিবেদনে উল্লেখিত অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আগুনের প্রধান ত্রুটির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের পরে কার্গো ভিলেজে সাতটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, যার অনেকগুলোর সংবাদ প্রকাশ হয়নি। তদন্তে উঠে এসেছে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ছিল না।

বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে সরে এসে বিমানবন্দর কার্যক্রমের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেবিচক শুধু নিয়ন্ত্রন্ত্রকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেপিআইয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সিএএপি কর্তৃক আইসিএও এবং বিএনবিসির বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম শুধুমাত্র ফ্লাইট পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধকরণ এবং সিএবি নিযুক্ত একজন দক্ষ অপারেটরের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অন্যান্য কার্যক্রমের দায়িত্বভার অর্পণ।

তদন্ত কমিটি আরও সুপারিশ করেছে, বেবিচক কর্তৃক ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে সমন্বয় করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি বিশেষ শ্রেণীর ফায়ার স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে বিপদজনক পণ্য এবং রাসায়নিক গুদাম উন্নত স্থানে স্থানান্তর, বিএনপিসির অনুসরণ করে উপযুক্ত স্থানে নিলামযোগ্য পণ্যের জন্য পৃথক কাস্টমস গুদাম স্থাপন এবং অ্যাপ্রন এলাকায় কোনো প্রকার মালামাল মজুদ নিষিদ্ধ করতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

ভারতে পা রাখলেন পুতিন, নিয়ম ভেঙে ‘কোলাকুলি’ করলেন মোদি

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ