Ajker Patrika

বিমানের দণ্ডিত অপরাধীরাও ফেরত চান চাকরি

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ২৬
বিমানের দণ্ডিত অপরাধীরাও ফেরত চান চাকরি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নানা স্তরের কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে মিশে এবার তৎপর হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে চাকরিচ্যুত বৈমানিক ও কেবিন ক্রুরাও, যাঁরা মূলত স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা কারবার, দায়িত্বে গাফিলতিসহ নানা অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে চাকরি হারিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে চাকরি ফিরে পেতে 

আবেদন করেন বৈমানিক আনোয়ার পারভেজ আকাশ। ২০১৯ সালের ৮ মে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দুর্ঘটনায় পর বিমানের ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের কো-পাইলট ছিলেন তিনি। ওই দুর্ঘটনায় ৩৪ জন আহত হন। দুর্ঘটনায় পুরো উড়োজাহাজই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন নজরুল ইসলাম শামীম। পরবর্তী সময়ে দুই বৈমানিককেই চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ।

ইয়াঙ্গুনের ওই দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, বৈমানিকদের ভুলেই উড়োজাহাজটি সে সময় দুর্ঘটনায় পড়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈমানিক অবতরণের সময়ে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেননি। উড়োজাহাজটি প্রথমে একবারে অবতরণ করতে না পেরে গো অ্যারাউন্ড (অবতরণ করতে না পেরে আবার উড্ডয়ন) করে। পরবর্তীকালে যখন অবতরণ করা হয়, তখন উড়োজাহাজের গতি ছিল অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজটি রানওয়ের নির্ধারিত জায়গা থেকে আরও বেশি দূরে চলে এসে বেশি গতিতে অবতরণ করে। এ ক্ষেত্রে বৈমানিকেরা উড়োজাহাজের ম্যানুয়াল এবং অবতরণের কোনো মানদণ্ডই অনুসরণ করেননি।

তবে বরখাস্ত আনোয়ার পারভেজ আকাশ চাকরি ফেরত চেয়ে করা আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘মাত্র ৪০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি ইতিপূর্বে কোনো প্রতিকূল অবস্থার শিকার হইনি। সেই দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ক্যাপ্টেনের নির্দেশে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে ফ্লাইট পরিচালনার চেষ্টা করেছি।’

আনোয়ার পারভেজ আকাশের চাকরি ফেরত চেয়ে করা আবেদনে সুপারিশ করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন) ক্যাপ্টেন মো. সিদ্দিকুর রহমান। সুপারিশে তিনি লিখেছেন, ‘আমি জোরালোভাবে বৈমানিক আনোয়ারকে পুনরায় নিয়োগের সুপারিশ করছি।’

চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু জিয়াউল হাসানও। গত বছরের (২০২৩) জুনে ৭ পিস সোনার বারসহ জেদ্দা বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটক করেন। পরবর্তী সময়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ জিয়াউলকে দেশে ফেরত পাঠালে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই তাঁকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার পর জিয়াউল হাসানকে চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ। তিনি ৯ বছর ধরে বিমানে ফ্লাইট স্টুয়ার্ড (কেবিন ক্রু) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীন তিনি ডিউটি রোস্টার নীতিমালা ভঙ্গ করে শিডিউল শাখার সহযোগিতায় জেদ্দা, রিয়াদ ও শারজাহর মতো স্বর্ণ চোরাচালানের রুটে দাপটের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছিলেন।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে জেদ্দা বিমানবন্দরে অবৈধ স্বর্ণ, মুদ্রাসহ আটক হন বিমানের কেবিন ক্রু রুহুল আমিন (শুভ)। জেদ্দা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় রুহুল আমিন শুভর লাগেজে স্বর্ণসহ অবৈধ পণ্যের উপস্থিতি ধরা পড়ে। তাঁকে আটক করে জেদ্দার পুলিশ। এ ঘটনার পর তাঁকে চাকরিচ্যুত করে বিমান কর্তৃপক্ষ। তিনিও চলতি মাসে চাকরি ফেরত পেতে আবেদন করেছেন।

মানবিক বিবেচনায় চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছেন ফ্লাইট স্টুয়ার্ড (কেবিন ক্রু) তৌহিদা কেয়া ও আসাদুজ্জামান শুভ। তাঁরা দুজন ঢাকায় ইয়াবাসহ পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীকালে বিমান কর্তৃপক্ষ তাঁদের চাকরিচ্যুত করে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অতীতেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকা ক্রুদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণসহ ধরা পড়লে সাময়িক বরখাস্তের পর পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বর্তমানে বিমানে চাকরি করছেন।

জানা গেছে, ১২ আগস্ট বিমানের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাহিদুল ইসলাম ভূঞা। সেখানে বৈমানিকসহ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চলমান মামলা, চাকরিসংক্রান্ত আবেদন, বিবিধ অভিযোগসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাকরি ফেরত চেয়ে যেসব আবেদন এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে পদ্ধতি মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ আবেদন করলেই যে চাকরি ফেরত পাবেন, বিষয়টি এমন নয়। প্রতিটি আবেদনের ক্ষেত্রেই দেখা হবে বিমানের আইন ও চাকরিবিধিতে কী আছে। সে অনুযায়ী প্রযোজ্য হলে কারও আবেদন বিবেচ্য হবে, কারওটি হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বুধবার সিইসির তফসিল ঘোষণা রেকর্ড হবে, বিটিভি–বেতারকে ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা রেকর্ড করার জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রস্তুতি নিতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) ভাষণ রেকর্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এই তথ্য জানান।

তফসিলের ভাষণ রেকর্ড প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিলের বিষয়ে ভাষণ দেবেন। এটা ১০ ডিসেম্বর (বুধবার) রেকর্ড করা হবে। এই বিষয়ে বিটিভি ও বেতারকে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

ইসি জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে কমিশন। ভাষণে সিইসি জনগণকে সংসদ ও গণভোট দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছিলেন, আজ সোমবার বিটিভি ও বেতারকে চিঠি পাঠানো হবে।

এদিকে, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে কমিশন। এরপর দিন বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবারও তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫০
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় পার্টিকে (জাপা) মাঠে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। দলটির কার্যালয় নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৭তম সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন তিনি।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। জাতীয় পার্টিকে মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না—এই অভিযোগ সঠিক নয়। জাতীয় পার্টির কার্যালয় নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ, বডি ওর্ন ক্যামেরা কেনা, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান প্রশিক্ষণ আগামী জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘যেকোনো প্রস্তুতি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রশিক্ষণ অনস্বীকার্য। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমরা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, নিরাপদ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ চলমান রেখেছি, যা আগামী জানুয়ারিতে সম্পূর্ণ শেষ হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে, যা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলবে। তাই এবার সূর্যের আলো চলে গেলেও ভোট গণনা করতে হবে। সে জন্য সব ভোটকেন্দ্রে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জুলাই জাদুঘর উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে নিরাপত্তার ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে আমরা এর নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করেছি, যাতে দর্শনার্থীরা নিরাপদে জাদুঘরে আসা-যাওয়া করতে পারে।’

রংপুরে এক পুলিশ সদস্যের বাবা-মাকে হত্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান’, ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চেয়ে বললেন ফজলুর রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখে ট্রাইব্যুনালের তলবে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান।

আজ সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বিচারকদের উদ্দেশে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি। এই কথা এমন হবে বুঝতে পারিনি।’

কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত এই প্রার্থী লিখিতভাবে আগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর আজ সশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাঁকে ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

গত ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে অতিথি হয়ে যান ফজলুর রহমান। টকশোর একপর্যায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে। এ সময় তিনি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেন, আদালতের নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপকারী ‘অভ্যন্তরীণ বন্দোবস্ত’ রয়েছে বলে দাবি এবং প্রসিকিউশন প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল তাঁকে তলব করেন এবং তাঁর সব একাডেমিক ও বার কাউন্সিলের সনদ সঙ্গে নিতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা ১১টার দিকে আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আসেন ফজলুর রহমান।

ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক এজলাসে আসেন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। ফজলুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

শুরুতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করবেন।’ পরে রুহুল কুদ্দুস কাজল দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ফজলুর রহমান সিনিয় আইনজীবী, পলিটিশিয়ান ও মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বক্তব্যের বিষয়ে আমরা লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

ফজলুর রহমান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, পরে আদালত তাঁকে বসার অনুমতি দেন। ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘প্রসিকিউশন আগে বলুক।’ এরপর প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘চ্যানেল ২৪-এর মুক্তবাক অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না। প্রতিদিন বলছি এই কোর্ট আমি মানি না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা একটু ফজলুর রহমানকে শুনতে চাই।’ ফজলুর রহমান দাঁড়ালে ট্রাইব্যুনাল তাঁর কাছে জানতে চান তিনি এসব কথা বলেছেন কি না? ফজলুর রহমান জবাবে বলেন, ‘আমি এভাবে বলিনি।’

এ সময় ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা ওনার কাছ থেকে শুনি। উনি যদি বলেন, এগুলো বলিনি, একভাবে কনসিডার করব, আর যদি বলেন বলেছি, আরও বলব, তাহলে অন্যভাবে কনসিডার (বিবেচনা) করব।’

কাজল বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘ওনাকে তো আমরা চিনি। তিনি সিনিয়ির পলিটিক্যাল লিডার, সিনিয়র আইনজীবী। কথা হলো তিনি আরও বলবেন কি না? তিনি যা বলেছেন, তা শুধু বাংলাদেশ না সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। তিনি এসব বললে মানুষ কি মনে করবে?’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়ের অপরাধেরই বিচার হবে না, আইনে বলা আছে আইন হওয়ার আগে-পরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে।’

ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালের বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তাই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’ ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘বাইরে আলোচনা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরে আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছি। আমার পরিবারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ‍দিয়েছি, কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে দেখিয়ে দিয়েছি, সহযোগিতা করেছি— আমরা মুক্তিযোদ্ধা না, যারা লন্ডনে ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা? কিন্তু আমরা কখনো এগুলো বলি না। এদেশে কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে না। তাই কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের টানবেন না।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন?’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি আপনাদের এত সম্মান করি, আল্লাহর পরই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। এরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি।’

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আমরা আশাকরি আপনারা জুডিশিয়ারিকে গাইড করবেন। ভালো-মন্দ দেখবেন। সরকারকে বলবেন, চিফ জাস্টিসকে বলবেন। যেখানে বলা দরকার সেখানে বলবেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘টকশোতে গেলে যা বলতে চাই না, অনেক সময় তাও মুখ থেকে বের করে ফেলে। এখন সিনিয়ির আইনজীবী বলেন আর মুক্তিযোদ্ধা বলেন—এখন আর সমাজে সম্মানটা পাওয়া যায় না। ফজলুর রহমান এরকম কথা বলবেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? আদালত সবার ওপরে। বিচার বিভাগ না থাকলে রাষ্ট্র বরবাদ হয়ে যাবে। তারপরও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।’

পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘অল দ্য বেস্ট। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জন ট্রাইব্যুনালে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে তাঁদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আজ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আজকে যাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রীরা হলেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প-বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

তাঁদের মধ্যে সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসানুল হক ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে আলাদা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দিয়েছে প্রসিকিউশন। হানাসুল হক ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে।

এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে নির্বিচার হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে কারফিউ দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর পৃথক মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে আজকের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওই দিন প্রসিকিউশনের পক্ষে দুই মাস সময় চাইলে এ আদেশ দেওয়া হয়। গত ২০ জুলাইও তদন্তের জন্য আরও তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করে প্রসিকিউশন। তবে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় নতুন করে সময় দেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে গত ২০ এপ্রিল মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জনকে হাজির করা হয়েছিল। সেদিন এ ঘটনায় তদন্তে আরও তিন মাস সময় চান প্রসিকিউশন। পরে ২০ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ আসামিদের আনা হয়। সব মিলিয়ে একসময়ের হেভিওয়েট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জ জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত