Ajker Patrika

ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয়

ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয়

একদিকে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল; তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ছুটে আসা পানির তোড়। সব মিলিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা এখন পানির নিচে। কোথাও কোমরপানি, কোথাও ঘরের চালা ছুঁই ছুঁই। তলিয়েছে সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথও। ডুবেছে ফসলের মাঠ, ভেসে গেছে চাষের মাছ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে আকস্মিক এই বন্যায় কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে—তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে ওঠাই মুশকিল হয়ে গেছে সাধারণ মানুষের জন্য। 

গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের অন্তত ৯ জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনীর বাসিন্দারা আকস্মিক বন্যায় পড়েছে চরম দুর্ভোগে। তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাহাড়ধসের ঘটনা। ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক সড়ক। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের মানুষ তো বিপদে আছে আগে থেকেই। এবার নিয়ে গত তিন মাসে তৃতীয় দফায় বন্যাকবলিত হয়েছে তারা। 

এর মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও দুঃসংবাদ দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তাতে অধিদপ্তর বলেছে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে। 

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী ভারতের কয়েকটি রাজ্যে আজ শুক্রবারও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে।

কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালীতে পানি আর পানি
সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। সেখানকার গোমতী নদীর পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৩১ বছর পর মধ্য ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের (৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ল্যাপ গেটের’ তিনটি গেটের একটি খুলে দেওয়া হয়। এর জেরে গোমতীর বাংলাদেশ অংশ ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। 

বিশেষ করে কুমিল্লা ও ফেনীর মানুষ বলছেন, গত ৩৬ বছরে এমন বন্যা তাঁরা দেখেননি। কুমিল্লায় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বাঁধ ভেঙে পড়ার শঙ্কায় মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই মধ্যরাতে গোমতীপাড়ে পাহারায় ছিলেন স্থানীয়রা। টর্চ ও মশাল হাতে, মোবাইল ফোনের আলো জেলে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। সবার মনে শঙ্কা, এই বুঝি পানির তোড়ে গোমতী বাঁধ ভেঙে পড়ল। মূলত কুমিল্লা সদর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছে বেশি। বাঁধের দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগেই বালুর বস্তা ফেলছেন। 

কুমিল্লায় টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে গোমতীর পানি বেড়ে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিপৎসীমার ৭০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সদর উপজেলা, দেবিদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার নদীতীরবর্তী অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকার কোথাও কোথাও পানি ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই অবস্থা। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রশাসন থেকে মাইকিং করে স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। 
ব্রাহ্মণপাড়ার আলুয়া গ্রামের বাসিন্দা জাসমিন আক্তার বলেন, ‘বুধবার সকালেও বাড়িতে রান্না করছি। সন্ধ্যায় এত বেশি পানি এল যে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। এখন পর্যন্ত সহায়তার জন্য কেউ আসে নাই।’

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, জনসাধারণকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 

এদিকে ফেনী কবলিত হয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়। বিশেষ করে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের অবস্থা বেশি খারাপ। এসব উপজেলার পৌর শহরগুলোও প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী কয়েক লাখ মানুষ। এমনকি ফেনী শহরেও কোনো কোনো বাড়ির নিচতলা প্রায় পুরোটা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে সোনাগাজী উপজেলার বড় ফেনী নদীর মুহুরী রেগুলেটরের ৪০টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পানির তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক রাস্তা, বাঁধ ও সেতু। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে মুহুরীর পানি গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী শহরের পূর্ব উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, বুধবার রাত থেকে পৌর শহর প্লাবিত হয়েছে। তাঁদের বাসার নিচতলা পুরোপুরি পানিতে ডুবে গেছে। 

নোয়াখালীতেও একই অবস্থা। সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল ও সুবর্ণচর উপজেলায় গতকাল বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এই আট উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক বাড়িতেই ৩ থেকে ৫ ফুট পানি। নিচু এলাকাগুলোয় পানির উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুট। এদিকে মুহুরী নদীর পানি আরও বেড়েছে।

কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের নূর নবী বলেন, বুধবার দুপুরে মুহুরী নদীর বাঁধ উপচে ফেনী ছোট নদীর পানি বেড়ে যায়। নোয়াখালী খালও উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। 

টানা বর্ষণ ও মেঘনার জোয়ারে লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৬ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। এই জেলার চারটি পৌরসভা ও পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে রামগতির প্রায় ৪০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় জ্বলছে না চুলা। 
এদিকে খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫-৬টি গ্রামের পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত চট্টগ্রাম ও পার্বত্য তিন জেলা
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, বাকলিয়া, ডিসি রোড, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল হাঁটুপানি ছিল; কোথাও কোথাও কোমরসমান পানি। রাহাত্তারপুল এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের এলাকার অধিকাংশ বাসার নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে প্রায় এক লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। 
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি ইউনয়ন এবং কক্সবাজারের রামুর চার ইউনিয়নের এক লাখের বেশি মানুষ এখন পানিবন্দী। রামুতে পানির তোড়ে ভেসে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। 

এদিকে খাগড়াছড়িতে গতকাল সকাল থেকে চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। জেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের বাসিন্দা পানিবন্দী। এ নিয়ে গত দুই মাসে চারবার বন্যার কবলে পড়ল পার্বত্য জেলাটি। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, খাগড়াছড়ি সদরের ১৮টি এবং জেলায় মোট ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। 

রাঙামাটিতেও কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার তিনটি সড়কের ২১টি স্থানে ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ধসের শঙ্কায় স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন।

দুর্ভোগের শেষ নেই সিলেট অঞ্চলের মানুষের
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ এই অঞ্চলের মানুষ এবার নিয়ে তিন মাসে তিনবার বন্যাকবলিত হয়েছে। গত জুনের শেষ দিকে প্রথম দফায়, জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় এই অঞ্চল প্লাবিত হয়। দ্বিতীয় দফার পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। তার মধ্যেই তৃতীয় দফা বন্যা হানা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়েই চলেছে কুশিয়ারার পানি। হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার প্রায় ২০০ সেমি ওপর দিয়ে বইছে। বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে কালনী নদীর পানিও।

মৌলভীবাজারে পানিবন্দী ৩ লাখ মানুষ। বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর, সদর উপজেলায় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলার পানিবন্দী সাজিদ মিয়া বলেন, ‘রাতে মনু নদ ভেঙে আমার ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। আমার সবকিছু শেষ। জানি না, কোথায় যাব।’

এদিকে কিশোরগঞ্জের হাওরে খোয়াই নদীর পানি হু হু করে ঢুকছে। এতে অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বিদ্যুৎ নেই, নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগও বিপর্যস্ত
কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়াসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে এসব জেলার অনেক এলাকাই এখন বিদ্যুৎহীন। এমনকি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কও বিঘ্নিত হচ্ছে কোথাও কোথাও। বিশেষ করে ফেনী ও নোয়াখালীর বেশ কিছু এলাকায় কার্যত টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি ওঠায় যাতায়াতও বিঘ্নিত হচ্ছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেন গতকাল সকালে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। এতে সড়কের ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য মহাসড়কে পানি কমায় সীমিত পরিসরে যাতায়াত শুরু হয়েছে। নোয়াখালীতে জেলা শহর মাইজদীতে প্রধান সড়ক ডুবেছে। শুধু তা-ই নয়, জেলার ৮০ শতাংশ সড়ক এখন পানির নিচে। লক্ষ্মীপুরেও অনেক সড়ক তলিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকার সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। 

এদিকে ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতু তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে পাহাড় ধসে এই রুটেও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হবিগঞ্জে খোয়াই রেলসেতু তলিয়ে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে সিলেটেরও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

ভেঙেছে বাঁধ, ভেসেছে ফসল
বন্যাকবলিত সব জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে চাষের মাছ। এ ছাড়া মৌলভীবাজারে ধলাই ও মনু নদের ১৪টি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে।

কুমিল্লায় গোমতীতীরের কয়েক শ হেক্টর জমিতে আবাদ করা পাকা আউশ ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৪০ হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়েছে শরৎকালীন সবজি, আমনের বীজতলাসহ ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল। নোয়াখালীতে আউশ, আমনসহ প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাগড়াছড়িতেও আকস্মিক বন্যায় তলিয়েছে অনেক ফসলি জমি। মৌলভীবাজারে প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ও দেড় হাজারের বেশি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। খুলনায়ও বাঁধ ভেঙে ভেসেছে ফসলি জমি, ঘেরের মাছ। 

উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা
বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোয় প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি। স্বেচ্ছাসেবকেরাও আছেন মাঠে। খাগড়াছড়িতে বন্যায় আটকে পড়া শতাধিক মানুষকে নৌকায় করে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণ তৎপরতাও চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তবে অনেক এলাকার বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, সহায়তা নিয়ে তাঁদের কাছে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ যাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে কথা বললেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর এখন দেশের মাটিতে। আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় ৫৪ মিনিটে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রথমেই তিনি বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ধরেন। পরে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তারেক রহমানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কুশল-বিনিয়ম করেন। নিরাপত্তা ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার জন্য এ সময় তিনি সরকারপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কথোপকথনে তারেককে বলতে শোনা যায়, ‘জি জি...আমার জন্য আমার...জি জি...আপনার শরীর কেমন আছে?’

...

‘হ্যাঁ, দোয়া করবেন, দোয়া করবেন।’ ...

‘আমি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনি আপনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম আয়োজন করেছেন, বিশেষ করে আমার নিরাপত্তার জন্য। অ্যান্ড উই আর থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ...থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। সব রকম আয়োজনের জন্য।’

...

‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। জি নিশ্চয়ই...ইনশাল্লাহ...ইনশাল্লাহ।’

ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান।

এরপরই তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু ফুলের মালা পরিয়ে জামাতাকে বরণ করেন নেন। নাতনি জাইমাকেও আদর করতে দেখা যায়। তারেক রহমান এ সময় তাঁর পাশে কিছু সময় বসে থাকেন। এরপর বেলা ১২টা ২০ মিনিটে তারেক রহমানে স্ত্রী ও তাঁর মেয়ে সাদা রঙের একটি জিপ গাড়িতে উঠে বসেন।

দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান বেলা ১২টা মিনিটে ৩২ মিনিটে লাল সবুজ রঙে একটি বুলেটপ্রুফ বাসে উঠেন। ২ মিনিট পরে বাসটি বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চের দিকে যেতে শুরু করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
হাদি হত্যাকাণ্ড: ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীর দোষ স্বীকার

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তাঁর বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তুর ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনজন। একইদিনে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে জব্দ করা কার্তুজ ও বুলেট পরীক্ষার নির্দেশ দেন আদালত।

ঢাকার মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনজনের জবানবন্দি

গতকাল বুধবার সামিয়া, মারিয়া ও সিপুকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি। মামলার তদন্তকর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তিনজনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। পরে আসামি মারিয়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিনের আদালতে এবং সামিয়া ও সিপু ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম জুনাঈদের আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

জবানবন্দিতে তিনজন কী বলেছেন তা জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল কি করেছে এবং কি বলেছে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তিনজন।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর এই তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর তিনজনকে আবার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর সামিয়া ও সিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে আটক করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, এ মামলায় গ্রেফতার ফয়সালের মা ও বাবাও স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কার্তুজ-বুলেট ব্যালিস্টিক পরীক্ষা

বুধবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ ঘটনাস্থলে জব্দ করা ফায়ার কার্তুজ ও বুলেট সদৃশ বস্তু পরীক্ষার নির্দেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়, শরিফ ওসমান হাদি ওরফে ওসমান গণি (৩৩) গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটের দিকে পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট রোড সংলগ্ন ডিআর টাওয়ারের সামনে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরবর্তীতে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃতদেহ বাংলাদেশ বিমান যোগে দেশে এনে ২০ ডিসেম্বর সকালে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।

মামলায় ঘটনাস্থল হতে ফায়ার কার্তুজ ও ফায়ার বুলেট সদৃশ বস্তু আলামত জব্দ করা হয়। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আলামতসমূহ ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করে বিস্তারিত মতামত প্রদান করার জন্য সিআইডির ব্যালিস্টিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত