Ajker Patrika

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: অমীমাংসিত বিষয়ে মতভেদ

  • দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।
  • একাত্তরের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান।
  • একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয় আগেই সমাধান হয়েছে: পাকিস্তান
  • দুই দেশের মধ্যে ছয় চুক্তি সমঝোতা সই।
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৫৯
অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এ সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায়। ছবি: প্রেস উইং
অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এ সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায়। ছবি: প্রেস উইং

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাঁর এ সফরে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে একাত্তর প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনাসহ অমীমাংসিত কয়েকটি বিষয় সমাধানের জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আগেই হয়ে গেছে। যদিও এ দাবি মানতে নারাজ বাংলাদেশ। সরকার মনে করে, পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন অপরাধগুলোর জন্য মাফ চাওয়া ও অন্য বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।

গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে এ বৈঠক। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উভয় পক্ষ একাত্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৈঠকে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকের পর ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসহাক দার বলেন, ‘অমীমাংসিত ইস্যু ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই সময় [সই হওয়া চুক্তিটি] দুই দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। এরপর ২০০০ সালের শুরুতে [পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট] জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখানে এসে প্রকাশ্যে ও খোলামনে পুরো [পাকিস্তান] জাতির পক্ষে বিষয়টির সমাধান করেছেন।’

পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারে ভাইদের মধ্যে কোনো বিষয় একবার মিটে গেলে সবার তা মেনে নেওয়া উচিত। ইসলাম, কোরআন ও নবী [হজরত] মুহাম্মদ (সা.) মন পরিষ্কার করে অগ্রসর হতে নসিহত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের মন পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগোতে হবে। দুই দেশের জনগণের উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া উচিত।’

তবে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে গেছে, ইসহাক দারের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই একমত নই।’

উপদেষ্টার দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনায় তোলা হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।

তৌহিদ হোসেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই যে হিসাবপত্র হোক এবং টাকাপয়সার বিষয়টি সমাধান হোক। আমরা চাই এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটির বিষয়ে তারা দুঃখপ্রকাশ করুক, মাফ চাক। আমরা চাই আটকে পড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নিয়ে যাক।’

আলোচনায় ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনটি বিষয়েই বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক পাকিস্তানের ১৯৫ জন সৈনিক ও অন্যদের দেশটিতে ফেরত পাঠানো ও বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক মেরামতের বিষয়ে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে ‘অতীতের অন্যায়’ ক্ষমা করে দিয়ে ভুলে যেতে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানও চেয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণ ‘অতীত’ ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করুক। ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে কী করে ক্ষমা করতে হয়’—শেখ মুজিবুর রহমানের এ উক্তিটি চুক্তিতে যুক্ত করা হয়। চুক্তিটি সইয়ের কিছুদিন আগে এক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ চুক্তিতে সই করেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, উভয় পক্ষ ঠিক করেছে সম্পর্ক বহুমাত্রিক উপায়ে মসৃণভাবে এগিয়ে নিতে ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো নিয়ে এমনভাবে কথা বলবে, যাতে এগুলো সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে গতকাল বিকেলে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, [অভিন্ন পাকিস্তানের] সম্পদ ভাগাভাগি, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আসা বৈদেশিক সহায়তা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর ত্বরিত সমাধান দরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনায় বাণিজ্য, সমুদ্র ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানো, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, কৃষি ও মৎস্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সার্কসহ আঞ্চলিক বিষয়গুলো জোরালোভাবে এসেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে।

ইসহাক দার বৈঠকে জানান, পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশের ৫০০ শিক্ষার্থীকে আগামী পাঁচ বছর বৃত্তি দেবে। এর এক-চতুর্থাংশ দেওয়া হবে চিকিৎসা খাতে পড়াশোনার জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে আহত ৪০ ব্যক্তির চিকিৎসা ও হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছে।

বেইজিং, ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি পাকিস্তান তুলেছে। বাংলাদেশ আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছে।

ছয় চুক্তি, স্মারক সই

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর দুই দেশ ছয়টি দ্বিপক্ষীয় দলিল সই করে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশ সফরে কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি; দুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি যৌথ কর্মকাঠামো (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ) তৈরি; দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তান সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।

দলিলগুলো সইয়ের সময় স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও তথ্য উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী একই সময়ে কিন্তু পৃথকভাবে ঢাকা সফর করেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের মন্ত্রীকে বলেন, সার্ক সক্রিয় করা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদার করা তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।

ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ফ্লাই জিন্নাহ আগামী অক্টোবরে পাকিস্তান থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে। পিআইএ বেসরকারি খাতে যাওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট দেবে।

সরকারি পর্যায়ে বৈঠকের বাইরে ইসহাক দার গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের আগ্রহে এ সফরগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১৩ বছর পর পাকিস্তান থেকে উচ্চপর্যায়ের এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের প্রায় নিশ্চল সম্পর্কে আবার গতি আসতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। শেখ হাসিনার প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক গতি হারায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের স্পিকার ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৮
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক ও ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠেয় জানাজায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকেরা। আজ বুধবার সকাল থেকেই বিদেশি অতিথিরা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে শুরু করেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশে পা রেখেছেন।

আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাকিস্তান সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় পা রাখেন দেশটির জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস কাউন্সিলর ফাসিহ উল্লাহ খান জানান, বিমানবন্দরে স্পিকারকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিমানবন্দরের মুখপাত্র ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাসুদ নিশ্চিত করেছেন যে, স্পিকারকে বহনকারী ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়েই অবতরণ করে।

এর কিছুক্ষণ আগে, বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ভারতের পক্ষ থেকে এই উচ্চপর্যায়ের জানাজায় অংশগ্রহণকে দক্ষিণ এশিয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভুটান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী লিয়নপো ডি. এন. ধুংগেল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম সামাদ জানান, বিমানবন্দরে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান।

আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার সাধারণ মানুষের সমাগম শুরু হয়েছে। বিদেশি প্রতিনিধিরা জানাজায় উপস্থিত থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই রাষ্ট্রীয় জানাজাকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘খালেদা জিয়াকে এভাবে বিদায় দিতে হবে ভাবিনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার বহন করেছিলেন তিনবার। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন নেত্রী। তাঁর শেষ বিদায়ে আজ দেশ শোকাহত। আর শোক ধারণ করে হাজারো মানুষের ভিড় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। যেখানে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা।

সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদেরও। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না, কেউ নীরবে বসে আছেন মন ভার করে। পুরো এলাকা জুড়ে শোক আর নীরবতার আবহ।

লালবাগ থেকে আসা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আজ একজন রাজনৈতিক অভিভাবককে হারালাম। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দোয়া করি, তারেক রহমান যেন দেশের হাল ধরতে পারেন।’

সংসদ-এলাকা

সাভার থেকে আসা দুই বন্ধু স্বপন শেখ ও মো. রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে এভাবে বিদায় দিতে হবে, ভাবিনি। তিনি জীবনে এত ত্যাগ করেছেন, অথচ কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলেন না। তাঁর একমাত্র প্রাপ্তি—বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা।’

বগুড়া থেকে জানাজায় অংশ নিতে আসা মনোয়ার হোসেন মামুন বলেন, ‘এ দেশ যাঁরা শাসন করেছেন, তাঁদের সবার গায়েই কোনো না কোনো কলঙ্ক আছে। কেবল বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কলঙ্ক নেই। তিনি ক্ষমতার লোভ করেননি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশেই ছিলেন। ”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিলে তিলে এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর বিচার জনসম্মুখে হতে হবে—যে সরকারই আসুক।’

জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহিদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে বেগম খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা, বিদেশি কূটনীতিক এবং বিএনপি মনোনীত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

দাফনকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। দাফনকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যান এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জুড়েই জানাজার আয়োজন করা হয়েছে। জানাজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব রাষ্ট্রীয় দপ্তর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে আশপাশের সড়কগুলোতেও অবস্থানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমানের পদত্যাগ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৪
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান পদত্যাগ করেছেন।

তাঁর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তিনি কী কারণে পদত্যাগ করেছেন সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু জানানো হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় নির্বাহী ক্ষমতা অনুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন।

গত বছরের ১০ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে নিয়োগ পান সায়েদুর রহমান। একই সঙ্গে তাঁকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৪
খালেদা জিয়ার জানাজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সংসদ ভবন এলাকা লোকারণ্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত