হুসাইন আহমদ

বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সেদিন বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিদেশি কোম্পানির আউটলেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাটা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার একাধিক স্থানে বাটার শোরুমে হামলা চালিয়ে জুতাসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। এর জন্য সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যে বাটা জড়িয়ে আছে, সেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিষয়টি জানেন না অনেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি ব্যক্তিটি ছিলেন বাটার তখনকার বাংলাদেশপ্রধান।
তাঁর নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক ঔডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের তালিকায় বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে ৩১৭ নম্বরে আছে তাঁর নাম।
১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানীর টাকা তিনি দান করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৮৪ বছর বয়সে ঔডারল্যান্ড মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ঔডারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্ম নেওয়া ঔডারল্যান্ড ১৭ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে বাটা শু কোম্পানিতে শু শাইনার বা জুতা পলিশের কাজ নেন। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশ নেন।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা শু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ঢাকায় আসেন ঔডারল্যান্ড। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরেক যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ঔডারল্যান্ড।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে টঙ্গীর মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শুরু হয় শ্রমিক-জনতার মিছিল। সেই মিছিলে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালায় ইপিআর বাহিনী। ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর প্রভাব পড়ে টঙ্গীর বাটা কোম্পানির কারখানাতেও। স্বচক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডব দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধের দুই দশক পর বন্ধু আনোয়ার ফারিদিকে লেখা এক চিঠিতে ঔডারল্যান্ড বলেন, ‘তাই ১৯৭১ সালের মার্চে যখন ট্যাংক ও পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ঢুকে পড়ে, আমি যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার যৌবনের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায়।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করলে ঔডারল্যান্ড প্রথম সুযোগেই শহরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলেন, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এমন একটি গণহত্যা; নাৎসি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখেছিলেন তিনি। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর গেরিলা সৈনিক হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। ঠিক ২৯ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা ও নির্মমতা তাঁর সৈনিক জীবনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বাটা কোম্পানির মতো বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঔডারল্যান্ডের। এই সুবিধা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ‘কারফিউ পাস’ পেয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। নিষিদ্ধ সময়েও শহরে চলাচল করতে পারতেন তিনি। নিজের ফোর্ড ফেয়ারলেন গাড়িতে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা ওড়াতেন বলে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন।
প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠতা। সেনানিবাসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরও অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সামরিক অফিসারদের সভায় অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।

ফলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ পান ঔডারল্যান্ড। সংগৃহীত সব তথ্য তিনি গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। পাকিস্তানিদের তাণ্ডবলীলা যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণের কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো হিসেবে তিনি ছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু অপারেশন সংঘটিত হতে থাকে। মেজর হায়দারের দেওয়া এক সনদে পাওয়া যায়, ঔডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, গরম কাপড় ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।
বাটার কিছু কর্মীকে নিয়ে গোপন দল গঠন করেন ঔডারল্যান্ড। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন বাটার পার্সোনেল ম্যানেজার এ কে এম আবদুল হাই, চিকিৎসক হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা আবদুল মালেক ও হুমায়ুন কবির খান।
ঔডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঔডারল্যান্ড বাঙালি ছিলেন না, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই তিনি এ দেশকে ভালোবেসেছিলেন।’
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে ঔডারল্যান্ডের পরামর্শে তিনি সপরিবার টঙ্গীর বাটা কারখানা এলাকায় চলে যান। পরে পাকিস্তানি বাহিনী পাশের টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (টিআইসি) দখল করে নিলে ঝুঁকি দেখে কারখানার মাঠে দুটো বাংকার তৈরি করেন ঔডারল্যান্ড। বাংকারগুলো পরে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সময় ৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচায়।

ঔডারল্যান্ডের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরে হাই বলেন, ‘আস্থা অর্জনের জন্য ঔডারল্যান্ড পাকিস্তানিদের প্রশংসা করতেন, আর বাঙালিদের সমালোচনা করতেন। তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করত। এই সব তথ্য আমরা ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গোপন আস্তানায় পাঠাতাম, যেখান থেকে তা ওসমানীর কাছে পৌঁছে যেত।’
স্ত্রী ও কন্যাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের বাসার দরজা খুলে দিয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তিনি; নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুতা, কম্বল এবং ওষুধ পাঠাতেন। নিজের একটি পিস্তল তিনি সেক্টর ২-এর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুলকে দেন। ডা. হাফিজুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করেছিলেন ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতাও পেতেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে তিনি আবার পুরোনো কর্মস্থল বাটায় যোগ দেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ দেশেই ছিলেন ঔডারল্যান্ড। পরে বাটার পক্ষ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ ঔডারল্যান্ড নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’
কেবল চাকরির সূত্রে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঔডারল্যান্ডের ত্যাগ অবর্ণনীয়। এই দেশ তাঁর জন্মভূমি নয়, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে। সেই ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। যদি ধরা পড়তেন, নেমে আসত অত্যাচারের নির্মম খড়গ, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে তাঁকে হত্যা করতেও দ্বিধা করত না হানাদারেরা। তবু নিজের আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতি তীব্র আবেগ ঔডারল্যান্ডকে উদ্বেলিত করেছিল। তাই তো এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাই উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড থাকবেন প্রত্যেক মুক্তিপ্রাণ বাঙালির প্রাণে। ঔডারল্যান্ড থাকবেন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ চিরশ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাঁকে। আর তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বাটা। বিনম্র শ্রদ্ধা এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা/ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা/ সোহরাব হাসান
তথ্যচিত্র: বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড/ মাহবুবুর রহমান
Tribute: A friend in need/ Prabir Barua Chowdhury
আরও খবর পড়ুন:

বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সেদিন বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিদেশি কোম্পানির আউটলেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাটা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার একাধিক স্থানে বাটার শোরুমে হামলা চালিয়ে জুতাসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। এর জন্য সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যে বাটা জড়িয়ে আছে, সেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিষয়টি জানেন না অনেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি ব্যক্তিটি ছিলেন বাটার তখনকার বাংলাদেশপ্রধান।
তাঁর নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক ঔডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের তালিকায় বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে ৩১৭ নম্বরে আছে তাঁর নাম।
১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানীর টাকা তিনি দান করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৮৪ বছর বয়সে ঔডারল্যান্ড মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ঔডারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্ম নেওয়া ঔডারল্যান্ড ১৭ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে বাটা শু কোম্পানিতে শু শাইনার বা জুতা পলিশের কাজ নেন। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশ নেন।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা শু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ঢাকায় আসেন ঔডারল্যান্ড। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরেক যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ঔডারল্যান্ড।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে টঙ্গীর মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শুরু হয় শ্রমিক-জনতার মিছিল। সেই মিছিলে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালায় ইপিআর বাহিনী। ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর প্রভাব পড়ে টঙ্গীর বাটা কোম্পানির কারখানাতেও। স্বচক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডব দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধের দুই দশক পর বন্ধু আনোয়ার ফারিদিকে লেখা এক চিঠিতে ঔডারল্যান্ড বলেন, ‘তাই ১৯৭১ সালের মার্চে যখন ট্যাংক ও পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ঢুকে পড়ে, আমি যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার যৌবনের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায়।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করলে ঔডারল্যান্ড প্রথম সুযোগেই শহরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলেন, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এমন একটি গণহত্যা; নাৎসি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখেছিলেন তিনি। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর গেরিলা সৈনিক হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। ঠিক ২৯ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা ও নির্মমতা তাঁর সৈনিক জীবনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বাটা কোম্পানির মতো বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঔডারল্যান্ডের। এই সুবিধা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ‘কারফিউ পাস’ পেয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। নিষিদ্ধ সময়েও শহরে চলাচল করতে পারতেন তিনি। নিজের ফোর্ড ফেয়ারলেন গাড়িতে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা ওড়াতেন বলে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন।
প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠতা। সেনানিবাসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরও অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সামরিক অফিসারদের সভায় অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।

ফলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ পান ঔডারল্যান্ড। সংগৃহীত সব তথ্য তিনি গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। পাকিস্তানিদের তাণ্ডবলীলা যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণের কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো হিসেবে তিনি ছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু অপারেশন সংঘটিত হতে থাকে। মেজর হায়দারের দেওয়া এক সনদে পাওয়া যায়, ঔডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, গরম কাপড় ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।
বাটার কিছু কর্মীকে নিয়ে গোপন দল গঠন করেন ঔডারল্যান্ড। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন বাটার পার্সোনেল ম্যানেজার এ কে এম আবদুল হাই, চিকিৎসক হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা আবদুল মালেক ও হুমায়ুন কবির খান।
ঔডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঔডারল্যান্ড বাঙালি ছিলেন না, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই তিনি এ দেশকে ভালোবেসেছিলেন।’
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে ঔডারল্যান্ডের পরামর্শে তিনি সপরিবার টঙ্গীর বাটা কারখানা এলাকায় চলে যান। পরে পাকিস্তানি বাহিনী পাশের টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (টিআইসি) দখল করে নিলে ঝুঁকি দেখে কারখানার মাঠে দুটো বাংকার তৈরি করেন ঔডারল্যান্ড। বাংকারগুলো পরে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সময় ৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচায়।

ঔডারল্যান্ডের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরে হাই বলেন, ‘আস্থা অর্জনের জন্য ঔডারল্যান্ড পাকিস্তানিদের প্রশংসা করতেন, আর বাঙালিদের সমালোচনা করতেন। তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করত। এই সব তথ্য আমরা ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গোপন আস্তানায় পাঠাতাম, যেখান থেকে তা ওসমানীর কাছে পৌঁছে যেত।’
স্ত্রী ও কন্যাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের বাসার দরজা খুলে দিয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তিনি; নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুতা, কম্বল এবং ওষুধ পাঠাতেন। নিজের একটি পিস্তল তিনি সেক্টর ২-এর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুলকে দেন। ডা. হাফিজুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করেছিলেন ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতাও পেতেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে তিনি আবার পুরোনো কর্মস্থল বাটায় যোগ দেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ দেশেই ছিলেন ঔডারল্যান্ড। পরে বাটার পক্ষ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ ঔডারল্যান্ড নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’
কেবল চাকরির সূত্রে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঔডারল্যান্ডের ত্যাগ অবর্ণনীয়। এই দেশ তাঁর জন্মভূমি নয়, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে। সেই ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। যদি ধরা পড়তেন, নেমে আসত অত্যাচারের নির্মম খড়গ, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে তাঁকে হত্যা করতেও দ্বিধা করত না হানাদারেরা। তবু নিজের আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতি তীব্র আবেগ ঔডারল্যান্ডকে উদ্বেলিত করেছিল। তাই তো এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাই উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড থাকবেন প্রত্যেক মুক্তিপ্রাণ বাঙালির প্রাণে। ঔডারল্যান্ড থাকবেন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ চিরশ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাঁকে। আর তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বাটা। বিনম্র শ্রদ্ধা এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা/ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা/ সোহরাব হাসান
তথ্যচিত্র: বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড/ মাহবুবুর রহমান
Tribute: A friend in need/ Prabir Barua Chowdhury
আরও খবর পড়ুন:
হুসাইন আহমদ

বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সেদিন বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিদেশি কোম্পানির আউটলেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাটা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার একাধিক স্থানে বাটার শোরুমে হামলা চালিয়ে জুতাসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। এর জন্য সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যে বাটা জড়িয়ে আছে, সেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিষয়টি জানেন না অনেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি ব্যক্তিটি ছিলেন বাটার তখনকার বাংলাদেশপ্রধান।
তাঁর নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক ঔডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের তালিকায় বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে ৩১৭ নম্বরে আছে তাঁর নাম।
১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানীর টাকা তিনি দান করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৮৪ বছর বয়সে ঔডারল্যান্ড মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ঔডারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্ম নেওয়া ঔডারল্যান্ড ১৭ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে বাটা শু কোম্পানিতে শু শাইনার বা জুতা পলিশের কাজ নেন। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশ নেন।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা শু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ঢাকায় আসেন ঔডারল্যান্ড। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরেক যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ঔডারল্যান্ড।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে টঙ্গীর মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শুরু হয় শ্রমিক-জনতার মিছিল। সেই মিছিলে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালায় ইপিআর বাহিনী। ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর প্রভাব পড়ে টঙ্গীর বাটা কোম্পানির কারখানাতেও। স্বচক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডব দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধের দুই দশক পর বন্ধু আনোয়ার ফারিদিকে লেখা এক চিঠিতে ঔডারল্যান্ড বলেন, ‘তাই ১৯৭১ সালের মার্চে যখন ট্যাংক ও পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ঢুকে পড়ে, আমি যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার যৌবনের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায়।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করলে ঔডারল্যান্ড প্রথম সুযোগেই শহরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলেন, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এমন একটি গণহত্যা; নাৎসি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখেছিলেন তিনি। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর গেরিলা সৈনিক হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। ঠিক ২৯ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা ও নির্মমতা তাঁর সৈনিক জীবনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বাটা কোম্পানির মতো বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঔডারল্যান্ডের। এই সুবিধা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ‘কারফিউ পাস’ পেয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। নিষিদ্ধ সময়েও শহরে চলাচল করতে পারতেন তিনি। নিজের ফোর্ড ফেয়ারলেন গাড়িতে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা ওড়াতেন বলে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন।
প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠতা। সেনানিবাসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরও অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সামরিক অফিসারদের সভায় অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।

ফলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ পান ঔডারল্যান্ড। সংগৃহীত সব তথ্য তিনি গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। পাকিস্তানিদের তাণ্ডবলীলা যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণের কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো হিসেবে তিনি ছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু অপারেশন সংঘটিত হতে থাকে। মেজর হায়দারের দেওয়া এক সনদে পাওয়া যায়, ঔডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, গরম কাপড় ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।
বাটার কিছু কর্মীকে নিয়ে গোপন দল গঠন করেন ঔডারল্যান্ড। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন বাটার পার্সোনেল ম্যানেজার এ কে এম আবদুল হাই, চিকিৎসক হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা আবদুল মালেক ও হুমায়ুন কবির খান।
ঔডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঔডারল্যান্ড বাঙালি ছিলেন না, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই তিনি এ দেশকে ভালোবেসেছিলেন।’
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে ঔডারল্যান্ডের পরামর্শে তিনি সপরিবার টঙ্গীর বাটা কারখানা এলাকায় চলে যান। পরে পাকিস্তানি বাহিনী পাশের টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (টিআইসি) দখল করে নিলে ঝুঁকি দেখে কারখানার মাঠে দুটো বাংকার তৈরি করেন ঔডারল্যান্ড। বাংকারগুলো পরে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সময় ৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচায়।

ঔডারল্যান্ডের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরে হাই বলেন, ‘আস্থা অর্জনের জন্য ঔডারল্যান্ড পাকিস্তানিদের প্রশংসা করতেন, আর বাঙালিদের সমালোচনা করতেন। তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করত। এই সব তথ্য আমরা ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গোপন আস্তানায় পাঠাতাম, যেখান থেকে তা ওসমানীর কাছে পৌঁছে যেত।’
স্ত্রী ও কন্যাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের বাসার দরজা খুলে দিয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তিনি; নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুতা, কম্বল এবং ওষুধ পাঠাতেন। নিজের একটি পিস্তল তিনি সেক্টর ২-এর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুলকে দেন। ডা. হাফিজুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করেছিলেন ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতাও পেতেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে তিনি আবার পুরোনো কর্মস্থল বাটায় যোগ দেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ দেশেই ছিলেন ঔডারল্যান্ড। পরে বাটার পক্ষ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ ঔডারল্যান্ড নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’
কেবল চাকরির সূত্রে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঔডারল্যান্ডের ত্যাগ অবর্ণনীয়। এই দেশ তাঁর জন্মভূমি নয়, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে। সেই ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। যদি ধরা পড়তেন, নেমে আসত অত্যাচারের নির্মম খড়গ, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে তাঁকে হত্যা করতেও দ্বিধা করত না হানাদারেরা। তবু নিজের আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতি তীব্র আবেগ ঔডারল্যান্ডকে উদ্বেলিত করেছিল। তাই তো এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাই উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড থাকবেন প্রত্যেক মুক্তিপ্রাণ বাঙালির প্রাণে। ঔডারল্যান্ড থাকবেন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ চিরশ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাঁকে। আর তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বাটা। বিনম্র শ্রদ্ধা এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা/ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা/ সোহরাব হাসান
তথ্যচিত্র: বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড/ মাহবুবুর রহমান
Tribute: A friend in need/ Prabir Barua Chowdhury
আরও খবর পড়ুন:

বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাটা এখন বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ৭ এপ্রিল ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সেদিন বাংলাদেশে বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক বিদেশি কোম্পানির আউটলেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেদিন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বাটা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনার একাধিক স্থানে বাটার শোরুমে হামলা চালিয়ে জুতাসহ জিনিসপত্র লুটপাট করে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ। এর জন্য সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ঘটনায় বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে যে বাটা জড়িয়ে আছে, সেই বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। বিষয়টি জানেন না অনেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধে ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পাওয়া একমাত্র বিদেশি ব্যক্তিটি ছিলেন বাটার তখনকার বাংলাদেশপ্রধান।
তাঁর নাম উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ওলন্দাজ নাগরিক ঔডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি, যিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভূষিত হন। স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধাদের তালিকায় বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে ৩১৭ নম্বরে আছে তাঁর নাম।
১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে ঔডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অসুস্থ থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। বীর প্রতীক পদকের সম্মানীর টাকা তিনি দান করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১৮ মে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৮৪ বছর বয়সে ঔডারল্যান্ড মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ঔডারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্ম নেওয়া ঔডারল্যান্ড ১৭ বছর বয়সে ১৯৩৪ সালে বাটা শু কোম্পানিতে শু শাইনার বা জুতা পলিশের কাজ নেন। দুই বছর পর চাকরি ছেড়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত রয়্যাল সিগন্যাল কোরে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪০ সালে তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ওলন্দাজ বাহিনীর গেরিলা কমান্ডো হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) অংশ নেন।

১৯৭০ সালের শেষের দিকে বাটা শু কোম্পানির প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ঢাকায় আসেন ঔডারল্যান্ড। কয়েক মাসের মধেই তিনি কোম্পানি ম্যানেজার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই আরেক যুদ্ধের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক ঔডারল্যান্ড।
১৯৭১ সালের ৫ মার্চ পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে টঙ্গীর মেঘনা টেক্সটাইল মিলের সামনে শুরু হয় শ্রমিক-জনতার মিছিল। সেই মিছিলে প্রশাসনের নির্দেশে গুলি চালায় ইপিআর বাহিনী। ঘটনাস্থলে ৪ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এর প্রভাব পড়ে টঙ্গীর বাটা কোম্পানির কারখানাতেও। স্বচক্ষে এ হত্যাকাণ্ড ও তাণ্ডব দেখে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধের দুই দশক পর বন্ধু আনোয়ার ফারিদিকে লেখা এক চিঠিতে ঔডারল্যান্ড বলেন, ‘তাই ১৯৭১ সালের মার্চে যখন ট্যাংক ও পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় ঢুকে পড়ে, আমি যেন আবার ফিরে গিয়েছিলাম আমার যৌবনের ইউরোপীয় অভিজ্ঞতায়।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করলে ঔডারল্যান্ড প্রথম সুযোগেই শহরের বিভিন্ন অংশের ছবি তোলেন, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল। এসব ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠান। বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও এমন একটি গণহত্যা; নাৎসি বাহিনীর বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখেছিলেন তিনি। সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীর গেরিলা সৈনিক হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। ঠিক ২৯ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতা ও নির্মমতা তাঁর সৈনিক জীবনের স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দেয়।
বাটা কোম্পানির মতো বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ঔডারল্যান্ডের। এই সুবিধা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারণী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে ‘কারফিউ পাস’ পেয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। নিষিদ্ধ সময়েও শহরে চলাচল করতে পারতেন তিনি। নিজের ফোর্ড ফেয়ারলেন গাড়িতে অস্ট্রেলিয়ার পতাকা ওড়াতেন বলে বাড়তি নিরাপত্তা পেতেন।
প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসের ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সুলতান নেওয়াজের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠতা। সেনানিবাসে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। একপর্যায়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লা খান নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিসহ আরও অনেক সামরিক অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, সামরিক অফিসারদের সভায় অংশগ্রহণের সুযোগও পেয়ে যান তিনি।

ফলে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোপন সংবাদ সংগ্রহ করার সুযোগ পান ঔডারল্যান্ড। সংগৃহীত সব তথ্য তিনি গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ২ নম্বর সেক্টরের ক্যাপ্টেন এ টি এম হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। পাকিস্তানিদের তাণ্ডবলীলা যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণের কাজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমান্ডো হিসেবে তিনি ছিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। তাঁর পরিকল্পনায় ও পরিচালনায় ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু অপারেশন সংঘটিত হতে থাকে। মেজর হায়দারের দেওয়া এক সনদে পাওয়া যায়, ঔডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, নগদ অর্থ, চিকিৎসাসামগ্রী, গরম কাপড় ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন।
বাটার কিছু কর্মীকে নিয়ে গোপন দল গঠন করেন ঔডারল্যান্ড। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন বাটার পার্সোনেল ম্যানেজার এ কে এম আবদুল হাই, চিকিৎসক হাফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং কর্মকর্তা আবদুল মালেক ও হুমায়ুন কবির খান।
ঔডারল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ আবদুল হাই দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ঔডারল্যান্ড বাঙালি ছিলেন না, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধার মতোই তিনি এ দেশকে ভালোবেসেছিলেন।’
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে ঔডারল্যান্ডের পরামর্শে তিনি সপরিবার টঙ্গীর বাটা কারখানা এলাকায় চলে যান। পরে পাকিস্তানি বাহিনী পাশের টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (টিআইসি) দখল করে নিলে ঝুঁকি দেখে কারখানার মাঠে দুটো বাংকার তৈরি করেন ঔডারল্যান্ড। বাংকারগুলো পরে ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানি ঘাঁটির ওপর ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার সময় ৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচায়।

ঔডারল্যান্ডের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কৌশল তুলে ধরে হাই বলেন, ‘আস্থা অর্জনের জন্য ঔডারল্যান্ড পাকিস্তানিদের প্রশংসা করতেন, আর বাঙালিদের সমালোচনা করতেন। তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের পরিকল্পনা তাঁর সঙ্গে শেয়ার করত। এই সব তথ্য আমরা ঢাকার জিঞ্জিরায় একটি গোপন আস্তানায় পাঠাতাম, যেখান থেকে তা ওসমানীর কাছে পৌঁছে যেত।’
স্ত্রী ও কন্যাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের বাসার দরজা খুলে দিয়েছিলেন ঔডারল্যান্ড। বাড়ির ছাদে পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখতেন তিনি; নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জুতা, কম্বল এবং ওষুধ পাঠাতেন। নিজের একটি পিস্তল তিনি সেক্টর ২-এর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুলকে দেন। ডা. হাফিজুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত করেছিলেন ঔডারল্যান্ড।
যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ঢাকায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতাও পেতেন তিনি। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ঢাকায় ফিরে তিনি আবার পুরোনো কর্মস্থল বাটায় যোগ দেন। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ দেশেই ছিলেন ঔডারল্যান্ড। পরে বাটার পক্ষ থেকে তাঁকে বদলি করা হয় অস্ট্রেলিয়ায়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রায়ই তিনি তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে বলতেন: ‘বাংলাদেশ আমাদের ভালোবাসা; পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও আবেগের এ ধারা অব্যাহত রেখো।’ ঔডারল্যান্ড নিজেই লিখেছেন, ‘ইউরোপের যৌবনের অভিজ্ঞতাগুলো যেন আমি নিজের মধ্যে ফিরে পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে, বিশ্ববাসীকে সেসব জানানো উচিত।’
কেবল চাকরির সূত্রে এসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ঔডারল্যান্ডের ত্যাগ অবর্ণনীয়। এই দেশ তাঁর জন্মভূমি নয়, তবু ভালোবেসে ফেলেছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষকে। সেই ভালোবাসা এত তীব্র ছিল যে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। যদি ধরা পড়তেন, নেমে আসত অত্যাচারের নির্মম খড়গ, গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে তাঁকে হত্যা করতেও দ্বিধা করত না হানাদারেরা। তবু নিজের আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতি তীব্র আবেগ ঔডারল্যান্ডকে উদ্বেলিত করেছিল। তাই তো এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তাই উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড থাকবেন প্রত্যেক মুক্তিপ্রাণ বাঙালির প্রাণে। ঔডারল্যান্ড থাকবেন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায়। এ দেশের মানুষ চিরশ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাঁকে। আর তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বাটা। বিনম্র শ্রদ্ধা এই কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা/ মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের ভূমিকা/ সোহরাব হাসান
তথ্যচিত্র: বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড/ মাহবুবুর রহমান
Tribute: A friend in need/ Prabir Barua Chowdhury
আরও খবর পড়ুন:

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১১ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেশাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’
অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’
পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।
আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’
অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’
পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বিদেশি, যিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই অস্ট্রেলীয়-ওলন্দাজ নাগরিক বাটা শু কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
০৯ এপ্রিল ২০২৫
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’
বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।
পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।
কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।
আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’
বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।
পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।
কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।
আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বিদেশি, যিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই অস্ট্রেলীয়-ওলন্দাজ নাগরিক বাটা শু কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
০৯ এপ্রিল ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১১ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৫ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।
বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বিদেশি, যিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই অস্ট্রেলীয়-ওলন্দাজ নাগরিক বাটা শু কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
০৯ এপ্রিল ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১১ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
১৬ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।
উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ঔডারল্যান্ড ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বিদেশি, যিনি ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই অস্ট্রেলীয়-ওলন্দাজ নাগরিক বাটা শু কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে এসেছিলেন বাংলাদেশে, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রত্যক্ষ করে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।
০৯ এপ্রিল ২০২৫
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।
১১ ঘণ্টা আগে
সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।
১৪ ঘণ্টা আগে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
১৫ ঘণ্টা আগে