Ajker Patrika

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: বরখাস্তের দণ্ড বদলে বাধ্যতামূলক অবসর

  • আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করা হচ্ছে অধ্যাদেশ, খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন
  • কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালে দেওয়া হবে পেনশনসহ সব আর্থিক সুবিধা
  • অনানুগত্য ও অনুপস্থিতির ধারা বাদ যাচ্ছে, অভিযোগ যাচাই ৩ সদস্যের কমিটিতে
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৩: ০৯
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ: বরখাস্তের দণ্ড বদলে বাধ্যতামূলক অবসর

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন করে অসদাচরণের জন্য সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে অপসারণ ও বরখাস্তের বিধান বাদ দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পরিবর্তে পেনশনসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে যে কাউকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিধান করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলেছে, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই সংশোধন করা হচ্ছে।

লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টাপরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। অধ্যাদেশ সংশোধন করে কী কী পরিবর্তন আনা হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়ে তাঁদের চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যায়। তবে বিভাগীয় মামলা দিয়ে এভাবে দণ্ড দিতে দীর্ঘ সময় লাগে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ সংশোধন করে অল্প সময়ের মধ্যে যে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পথ তৈরি করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এরপর তা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে।

সূত্র জানায়, অধ্যাদেশটি সংশোধন করে অনানুগত্য এবং কোনো কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কাজ না করার জন্য উসকানি ও প্ররোচিত করার ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নোটিশ দিয়েই অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারবেন। সূত্র বলেছে, অধ্যাদেশের সংশোধনীতে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী রাখা হবে। তদন্তের আদেশ পাওয়ার পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন না দিলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের অদক্ষতা হিসেবে গণ্য করে তাঁদের এসিআরে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।

জানা গেছে, সংশোধনীতে এই অধ্যাদেশের আলোকে কাউকে দণ্ড দেওয়া হলে দণ্ড আরোপের আদেশ পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। বর্তমান অধ্যাদেশে আপিল-সংক্রান্ত বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, খসড়ায় অপসারণ ও বরখাস্তের দণ্ড বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে যেকোনো সময় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যাবে। তাঁকে পেনশনসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে।

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্যক্তি পেনশন সুবিধা পেলেও এক বছরের অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) এবং ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা পান না। এ ছাড়া সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরিতে নিয়োগের অযোগ্য হন তিনি। তবে সংশোধিত চাকরি অধ্যাদেশের খসড়ায় কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠালে পিআরএল এবং ছুটি নগদায়নের সুবিধা দেওয়া হবে কি না, উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার আলোকে সেই সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি জানান।

সরকারি চাকরি আইনের ৪৫ ধারা অনুযায়ী কারও চাকরির বয়স ২৫ বছর হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে সরকার জনস্বার্থে তাঁকে অবসরে পাঠাতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি পেনশন, পিআরএল এবং ছুটি নগদায়নের সুবিধাসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধা পান।

চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার বিধান রেখে গত ২৫ মে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন কর্মচারীরা। তাঁদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাদেশটি পর্যালোচনার জন্য আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ৪ জুন একটি কমিটি করে সরকার। কমিটির সদস্যরা আন্দোলনরত কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে দুই দিন বৈঠক করেছেন। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অধ্যাদেশ সংশোধন করা হচ্ছে।

বর্তমান অধ্যাদেশে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, সংশোধনীতে এ বিষয়ে নতুন একটি ব্যাখ্যা যোগ করা হচ্ছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কেউ যদি দাপ্তরিক কাজের বাইরে ব্যক্তিগত জরুরি কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে না বলে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকেন, সে জন্য চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করা সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর গতকাল আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘অনানুগত্যের ধারাটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি বাদ দিলে অধ্যাদেশটি এমনিতেই বাতিল হয়ে যায়। উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকেও আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছিল। বাকি যেগুলো আছে চাকরি আইন, ২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর সঙ্গে মিল রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কারণ দর্শানোর সুযোগ রাখা, তদন্ত কমিটি গঠন এবং নারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিটিতে একজন নারী রাখার বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব সরকার মেনে নিয়েছে। ফলে আমাদের শঙ্কার জায়গাগুলো নিরসন হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নির্দেশনার আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া করে। কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এখন সরকার অধ্যাদেশে যেসব সংশোধন করতে চায়, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনার আলোকে সংশোধিত খসড়া করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার মতো করে বিষয়টি সংশোধন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হবে সংক্ষিপ্ত সময়ে। বর্তমান অধ্যাদেশে আপিল রিভিউয়ে অসংগতি রয়েছে, সেটি সংশোধন করছে কি না, তা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মতো বিধিবদ্ধ সংস্থায় যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের জন্য এই অধ্যাদেশ প্রযোজ্য হবে না। তাহলে তো আইন দুই রকম হয়ে গেল। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল করে সব সরকারি কর্মচারীর বেআইনি আন্দোলন দমনের জন্য আলাদা একটি কঠোর আইন করা দরকার ছিল।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ দলের নেতারা আটকে যেতে পারেন তফসিলের শর্তে

তানিম আহমেদ, ঢাকা 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া প্রার্থীদের নিষিদ্ধ কিংবা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন—এমন অঙ্গীকার করতে হবে। সঙ্গে দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যও জমা দিতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন ফরমে এমন বিধান রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের এমন বিধানকে অস্পষ্ট মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, গত কয়েক দিনে একাধিক রাজনৈতিক নেতা দল বদল করেছেন। আবার কেউ কেউ দল বিলুপ্ত করে বড় দলে যোগ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্য কোনো দলে যোগ দিলে কী বিধান থাকবে, তা পরিষ্কার করা হয়নি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আবদুল আলীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন এবং কী কারণে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নির্বাচন কমিশনকে পরিষ্কার করতে হবে। যেহেতু এক দল থেকে আরেক দলে যোগদান করা নিষিদ্ধ নয়, এ রকম অনেক উদাহরণ গত কয়েক দিনে হয়েছে।’

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রার্থীকে বলতে হবে, তিনি কোনো নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন।

পরে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে বিষয়টি মিথ্যাচার হিসেবে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি মিথ্যাবাদী।

কেউ নিষিদ্ধ দলের সঙ্গে জড়িত কি না, ইসি কীভাবে সেটি প্রমাণ করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যম) জানিয়ে দেবেন, উনি (প্রার্থী) মিথ্যা কথা বলছেন। এরপর ইসি তদন্ত করে দেখবে, অভিযোগটি সত্য নাকি মিথ্যা।’ সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘সেটা নির্ভর করবে অপরাধের মাত্রার ওপরে।’

কী কারণে এমন বিধান ‍যুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ মনে করেছে, এবার এমন একটা অঙ্গীকারনামা থাকা ভালো।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীরা। যেখানে ২৩ পাতার মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে হবে প্রার্থীদের। যার শেষ দুই পাতার তফসিল-১ ও ২ প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হবে।

তফসিল-১ অঙ্গীকারনামায় দলীয় প্রার্থী নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা সমমর্যাদার পদধারী এমন দুজনকে স্বাক্ষর দিতে হবে। যেখানে রাজনৈতিক দলের নাম ও নিবন্ধন নম্বর দিতে হবে।

রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামার ক্ষেত্রে বলা আছে, ‘আমার দল এবং দল মনোনীত সব প্রার্থী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ বিধান মেনে চলব। দল বা দল মনোনীত কোনো প্রার্থী এই আচরণ বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে আইন ও বিধিমালার বিধান অনুযায়ী শাস্তি মেনে নিতে বাধ্য থাকব।’

প্রার্থীর অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, ‘আমি অঙ্গীকার করেছি, আমি কোনো নিষিদ্ধ বা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।’ প্রার্থীর স্বাক্ষরের সঙ্গে দুজন সাক্ষীর নাম, স্বাক্ষর ও এনআইডি নম্বর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইন সংশোধন করে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার অভিযোগপত্র গঠিত হলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন অভিযুক্ত। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা হয়েছে, ফেরারি আসামিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেরারি আসামিদের নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার প্রতিফলন হচ্ছে মনোনয়ন ফরমে নতুন বিধান যুক্ত করা। আর এখন যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তাই বিষয়টি বলা হয়েছে। দলটির নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতেই এমন বিধান রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছে আওয়ামী লীগের গত তিন সরকারের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ)। গতকাল দলের প্রার্থী ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন দলের মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

সংবাদ সম্মেলনে শামীম হায়দার বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলের কর্মীদের মনোনয়ন না দেওয়ার বিধান অসাংবিধানিক। দল নিষিদ্ধ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে অন্য যেকোনো দলে আসতেই পারেন এবং ভোট করতে পারেন। এটা তো সাংবিধানিক অধিকার। তিনি সাজাপ্রাপ্ত ও নির্বাচনে অযোগ্য নন। ইসির এমন তফসিলকে অবিবেচনাপ্রসূত ও অসাংবিধানিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা

সরকারের কোনো না কোনো অংশ এই হামলা ঘটতে দিয়েছে: নূরুল কবীর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫২
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বক্তব্য দেন সাংবাদিক নূরুল কবির। ছবি: সংগৃহীত
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বক্তব্য দেন সাংবাদিক নূরুল কবির। ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং সরকারের কোনো না কোনো অংশের মদদেই এটি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর।

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা কার্যালয়গুলোতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং ব্যাপক লুটপাট চালায়। বিশেষ করে প্রথম আলো কার্যালয় আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। একই রাতে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সংহতি জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন সম্পাদক নূরুল কবীর। সাংবাদিক সমাজ এই ঘটনাকে ‘গণমাধ্যমের জন্য কালো দিন’ হিসেবে অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

সম্মেলনে নূরুল কবীর বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে জানি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানটকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এক-দুই দিন আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কারা এই ঘোষণা দিয়েছে, তা এ দেশের মানুষ জানে এবং সরকারও জানে। ফৌজদারি অপরাধের এমন প্রকাশ্য ঘোষণার পরও সরকার তাদের গ্রেপ্তার করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সরকার হামলাকারীদের আগেভাগে থামায়নি বলেই আমরা মনে করি, সরকারের কোনো না কোনো অংশ এই ঘটনাটি ঘটতে দিয়েছে। একটি সংগঠিত শক্তি সেখানে গিয়ে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া গেছে।’

বিজেসি ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত বলে বর্ণনা করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন—সাবেক গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ডেইলি স্টারের কনসালটিং এডিটর কামাল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজেসি ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিজেসি উপদেষ্টা খায়রুল আনোয়ার।

বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার যেকোনো চেষ্টা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি। এই হামলার ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতা ঝুঁকির মুখে পড়বে।

হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিক নেতারা এই হামলার নেপথ্যের মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করার এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমান-জাইমার ভোটার হওয়া নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত রোববার: আখতার আহমেদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৭
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

তারেক রহমান ও জাইমা রহমানের ভোটার হওয়ার নথি রোববার কমিশনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আজ শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান সিনিয়র সচিব।

আখতার আহমেদ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর মেয়ে জাইমা রহমান গুলশান এলাকায় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার হওয়ার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। আজকেই হয়তো তাঁদের এনআইডি নম্বর দেওয়া হবে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর ভোটার হওয়ার জন্য কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তাই আগামীকাল তাঁদের ভোটার হওয়ার নথি কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর মেয়ে জাইমা রহমান ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। আজ শনিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রথমে জাইমা রহমান এবং পরে তারেক রহমান এ দুই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্সবাজার-হাতিয়ায় সমুদ্রে মিসাইল ফায়ারিং পরিচালনা, নৌযান চলাচলে সতর্কতা আইএসপিআরের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৭
কক্সবাজার-হাতিয়ায় সমুদ্রে মিসাইল ফায়ারিং পরিচালনা, নৌযান চলাচলে সতর্কতা আইএসপিআরের

২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজার ও হাতিয়ার মধ্যবর্তী সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযানকে অবস্থান ও চলাচল এড়িয়ে যেতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আগামী ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক কক্সবাজার ও হাতিয়ার মধ্যবর্তী সমুদ্র এলাকায় মিসাইল ফায়ারিং পরিচালিত হবে। এ সময় জানমালের নিরাপত্তায় সকল নৌযান, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উক্ত এলাকায় অবস্থান ও চলাচল পরিহার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত