Ajker Patrika

সংলাপের সম্ভাবনায় রাজনীতিতে আবার নতুন হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ০৯
সংলাপের সম্ভাবনায় রাজনীতিতে আবার নতুন হাওয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশ গভীর রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থানের কারণে সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সংলাপেই সমাধান দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদে এবার আলোচনায় উঠে এসেছে সংলাপ।

আ.লীগ সংলাপে রাজি, তবে হতে হবে শর্তহীন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপে রাজি আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ সংলাপ হতে হবে শর্তহীন। দলটির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে বিএনপি সরে এলেই তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। 

সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের চাপ আছে সরকারের ওপর। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ চাপ বেশ স্পষ্ট। এ নিয়ে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের শর্ত প্রত্যাহার করে নিলে সংলাপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। 

শর্তমুক্তভাবে বিএনপি সংলাপ করতে চাইলে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তখন চিন্তা করে দেখা হবে। 

চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ ঢাকা সফর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) একটি যৌথ প্রতিনিধিদল। সফরকালে তাঁরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজ, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্র ফিরে পাঁচটি মতামত তুলে ধরেছে, যার একটি হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ করা। পাশাপাশি রাজনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন, নির্বাচনের সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সব নাগরিকের ভিন্নমতকে সম্মান জানাতেও বলেছে প্রতিনিধিদলটি। 

পশ্চিমাদের এসব পরামর্শের কারণে আওয়ামী লীগ সংলাপের প্রশ্নে আগের চেয়ে নমনীয় হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে দুই দল পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল হতে না পারলে কোনো সংলাপই ফলপ্রসূ হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য। 

জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংলাপ হতেই পারে, তবে কোনো শর্ত দিয়ে নয়। শর্তযুক্ত সংলাপে কোনো ফল হবে না। খোলামন নিয়ে আসতে হবে। আমরা খোলা মনে যাব, যাঁরা সংলাপ চান তাঁদেরও খোলা মনে আসতে হবে। আলোচনা তখন করব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য আলোচনা হতেই পারে।’

বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে সংলাপ প্রচলিত শব্দ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারনকোর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। তাতে কোনো সমাধান হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে আওয়ামী লীগ। সংলাপের কারণে তফসিল ঘোষণার পরে ভোটের তারিখ ঠিক রেখে মনোনয়ন দাখিলের সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পর বিএনপি অভিযোগ করে, আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে দেওয়া কথা রাখেনি। 

শর্ত দেওয়ার ক্ষমতা সরকারএখন রাখে না: বিএনপি
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার অনীহা রয়েছে বিএনপির। এরপরও বিরাজমান সংকট নিরসনে বৃহত্তর স্বার্থে সংলাপে বসতে আপত্তি নেই তাদের। তবে সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না বলে মনে করছে দলটি।

সংলাপ নিয়ে দুই পক্ষের কথা-চালাচালির মধ্যে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শর্তহীন সংলাপ করতে চাইলে তাতে আওয়ামী লীগ রাজি হতে পারে।’ এর আগে ‘সংলাপের পথ বিএনপি বন্ধ করেছে’ বলে মন্তব্য করেন কাদের। 

কাদেরের এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (ওবায়দুল কাদের) কথার কোনো মূল্য আছে নাকি? তিনি সকালে এক কথা বলেন, আবার বিকেলে আরেক কথা বলেন। আগে সংলাপের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করুক, আলোচনার বিষয় ঠিক করুক, পরিবেশ তৈরি হোক। তারপর এ ব্যাপারে ভাবা যাবে।’ 

তবে সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রতিক বক্তব্যকে খানিকটা নমনীয়তা বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতাদের অনেকে। তবে এ নমনীয়তা যথেষ্ট নয় মত দিয়ে তাঁরা বলছেন, বিদেশি শক্তি ও আন্দোলনের চাপে সরকার এখন নমনীয় হয়েছে এবং বাধ্য হয়েই সংলাপের কথা বলছে। সেদিক থেকে বিএনপি একটু সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় আগ বাড়িয়ে সংলাপের জন্য আপাতত কোনো ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে না বিএনপি। 

আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আত্মহত্যার শামিল বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। তাই ক্ষমতা ছাড়ার আগে তাদের সঙ্গে সংলাপ করাকে অর্থহীন বলেও মনে করছেন তাঁদের অনেকে। 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গতকাল রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকার বাধ্য হয়ে সংলাপের কথা বলছে। কিন্তু সেই সংলাপ শর্তযুক্ত না শর্তহীন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা সরকার এখন রাখে না।’ তবে তিনি এও বলেছেন, ‘রাজনীতি চলমান এবং আগামীতে আমাদের কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে, সেটাও এখনো নির্ধারিত নয়।’

দলগুলোর মধ্যে খোলামনে সংলাপ দরকার
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খোলামনে অর্থবহ সংলাপের তাগিদ দিয়েছে ঢাকা ঘুরে যাওয়া মার্কিন প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ তাগিদ দেয়।

নির্বাচনের অংশীজনদের বিবেচনার জন্য এনডিআই-আইআরআই দলটি বিবৃতিতে পাঁচ দফা সুপারিশসহ একটি রূপরেখা প্রস্তাব করে। সংলাপ ছাড়াও এতে অন্তর্ভুক্ত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। নাগরিকদের জন্য খোলামেলা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ভিন্নমতকে সম্মান দিতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সব দলের জন্য অর্থবহ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন পরিচালনাব্যবস্থাকে মজবুত করতে হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সক্রিয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণের সংস্কৃতি তৈরির আগ্রহ জাগাতে হবে। 

এনডিআই ও আইআরআইয়ের পাঠানো ছয় সদস্যের প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলটি ৭ অক্টোবর থেকে ছয় দিন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কয়েকজন মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি কূটনীতিকসহ অনেকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর এ রূপরেখাটি প্রকাশ করে। 

মার্কিন মিশনটি বলছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু এখানকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দলগুলোর মধ্যে ক্রমহ্রাসমান আস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় রকম প্রতিবন্ধকতা। দলগুলোর আপসহীন মানসিকতা, ভোটে জিতে নিজেরাই সবকিছু গ্রাস করার মনোভাব, আক্রমণাত্মক বক্তৃতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, ভয়ের পরিবেশ, নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হওয়া, দলগুলোর মধ্যে আস্থার ঘাটতি এমন বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তুলনামূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনকে নিবন্ধন না দিয়ে অচেনা সংগঠনকে নিবন্ধিত করে নির্বাচন কমিশন নিজের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। কাগজ-কলমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলেও তা কার্যকরভাবে ভোটের দিন নিরপেক্ষভাবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা আছে।

এমন বিরূপ পরিবেশ তৈরি হওয়ার পরিণতিতে নাগরিকেরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তাঁদের রাজনৈতিক পছন্দের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক সংলাপ না হলে উদ্বেগ-উত্তেজনা বাড়তে পারে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও আছে। 

মার্কিন সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী 
মার্কিন প্রাক্‌-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে মনে করে না সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল এ মন্তব্য করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা একটি ফরমাশি বিবৃতি দিয়েছে। সুপারিশগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেকেই অনেক ধরনের মত দেয়। কিন্তু এগুলো গ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা সরকারের বিষয়। 
মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের অনেক কূটনৈতিক এসে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলাপ করে। নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলে মজা পায়। এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৭
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিজেদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প, বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্যোগে ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভলান্টিয়াররাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভলান্টিয়ারদের আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সুবিধা না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা এ কাজের প্রতিদান শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও পাবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজারের বেশি ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকেরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হচ্ছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়ছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা বা বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে দুর্যোগ প্রশমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কি না—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। এই আইনও করা হয়েছে জনগণ যেন প্রকৃত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে। তিনি আশ্বস্ত করেন, পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে উপদেষ্টা পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদর্শিত মহড়া দেখেন এবং তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত