বাংলাদেশ নিয়ে ইন্টারনেটে ২৭১ ভুয়া তথ্য

ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে গত জানুয়ারিতে ইন্টারনেটে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের ২৭১টি প্রমাণ মিলেছে। ক্যাটাগরিভিত্তিক ভুল তথ্য শনাক্ত ছাড়াও ওই মাসে দুটি পরিসংখ্যান এবং একটি ফ্যাক্ট ফাইলও প্রকাশ করা হয়েছে।

গত রোববার রিউমার স্ক্যানারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাটি জানায়, গণনাকৃত এই সংখ্যার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ১১৪টি ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে, যা মোট ভুল তথ্যের ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া জাতীয় বিষয়ে ৬৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ে ২৯টি, ধর্মীয় বিষয়ে ১৮টি, বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ে ১৫টি, শিক্ষা বিষয়ে ৯টি, প্রতারণা বিষয়ে ৬টি, খেলাধুলা বিষয়ে ৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে।

ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাটি জানায়, এসব ঘটনায় তথ্যভিত্তিক ভুলই ছিল ১১৫টি। ছবিকেন্দ্রিক ভুল ছিল ৫৪টি এবং ভিডিওকেন্দ্রিক ভুল ছিল ১০২টি। শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যগুলোর মধ্যে মিথ্যা হিসেবে ১৭৫টি, বিভ্রান্তিকর হিসেবে ৬৫টি এবং বিকৃত হিসেবে ৩১টি ঘটনাকে শনাক্ত করা হয়েছে।

রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গত মাসে ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, যার সংখ্যা ২২৫টি। এ ছাড়া এক্সে ৫৬টি, টিকটকে ৪৪টি, ইউটিউবে ৪২টি, ইনস্টাগ্রামে ১৯টি, থ্রেডসে অন্তত ১টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভুল তথ্য প্রচারের তালিকা থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যমও। ১৬টি ঘটনায় দেশের একাধিক গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার হতে দেখেছে রিউমার স্ক্যানার।

ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাটি জানায়, গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জানুয়ারিতে এই ধারাবাহিকতা দেখা গেছে। গত মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে সাতটি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। ৯টি ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারের বিষয়টি কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে। জানুয়ারিতে এমন ৩২টি সাম্প্রদায়িক অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। এর মধ্যে ২৫টি ঘটনাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রিউমার স্ক্যানার টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গত মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে ১৩টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ভুল তথ্যগুলোর ধরন বুঝতে এগুলোকে রিউমার স্ক্যানার দুটি আলাদা ভাগে ভাগ করেছে। সরকারের পক্ষে যায় এমন ভুল তথ্যের প্রচারকে ইতিবাচক এবং বিপক্ষে যায় এমন অপতথ্যের প্রচারকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখেছে, ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রেই এসব অপতথ্য সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ রেখেছে। জানুয়ারিতে ১২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে। উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাহিদ ইসলাম ও আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

রিউমার স্ক্যানার গত মাসের ফ্যাক্টচেকগুলো বিশ্লেষণে দেখেছে, এ সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে দলটির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। এই সময়ে দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। বিএনপিকে জড়িয়েও ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে। গত মাসে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।

গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গত মাসে অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। তবে এসব অপতথ্য তাদের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টির সুযোগ রেখেছে বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাটি।

রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভুল তথ্যের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোও। গত মাসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জড়িয়ে দুটিসহ এই বাহিনীকে জড়িয়ে ১২টি ভুল তথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমার স্ক্যানার। এ ছাড়া পুলিশের ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে জড়িয়ে একটিসহ পুলিশের বিষয়ে ছড়ানো চারটি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জড়িয়ে দুটি ভুয়া তথ্যের প্রচার ছিল জানুয়ারিতে।

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের সময়কে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সংগঠনকে ও নেতাদের জড়িয়ে নিয়মিতই ভুয়া তথ্যের প্রচার শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাঁচটি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার। গত মাসে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ৩৩টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ২০টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ৩৯টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এসব প্রচার মিথ্যা ও ভুল তথ্য বলে শনাক্ত করেছে রিউমার স্ক্যানার।