Ajker Patrika

নতুন ১০ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পেও আ. লীগের সুবিধাপ্রাপ্তরা এগিয়ে

  • ১০টি কেন্দ্র স্থাপনে গত ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে
  • জমি ও অভিজ্ঞতার শর্তের কারণে সুবিধা পাবে আগের প্রতিষ্ঠান
  • সময়ের কারণে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়া কঠিন
আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৪১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫৯টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার এই বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাতিল করে। এগুলোর মধ্যে ৪০টি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে। ১০টি কেন্দ্রের জন্য গত ডিসেম্বরে দরপত্র আহ্বান করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু দরপত্রের শর্তের কারণে বিগত সময়ে বিদ্যুৎ খাতে সুবিধাপ্রাপ্ত ও এসব কেন্দ্র স্থাপনে অনুমতির শেষ পর্যায়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোই এবারও এগিয়ে।

বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগে গুঞ্জন রয়েছে, বিগত আমলে সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র পাইয়ে দিতে নেপথ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আলোচনা করছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪৮টি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ১০টি উৎপাদনে এসেছে, বাকিগুলো নির্মাণাধীন। এর মধ্যে সরকারি মালিকানার কেন্দ্র ৭টি, বাকিগুলো বেসরকারি মালিকানার। এসব কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বায়ু ও দুটি বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সূত্র জানায়, প্রতি মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৩ একর জমি প্রয়োজন। এ হিসাবে ৩০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজন ৯০ একর বা ২৭০ বিঘা জমি। তবে এই জমির পুরোটাই হতে হবে অকৃষি। এ শর্তের কারণে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের গতি শ্লথ। বিগত সরকার ৫৯টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমতি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ছিল। এসব কেন্দ্র নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ওই সময় জমি কেনা বা সংগ্রহের কাজ শেষ করেছিল। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ওই ৫৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিল করে। এগুলোর মধ্যে ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র আগে নির্ধারিত স্থানে নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম গতকাল শনিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসা করেন বা এই লাইনের লোক, তাঁদের সব ধরনের কাগজপত্রের প্রস্তুতি থাকে। আমরা আশাবাদী যে এই সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে পারবেন। যদি না পারেন, তখন বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে।’

পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, ৫ ডিসেম্বর দেশের ৯টি স্থানে ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, কেন্দ্র করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) উপকেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ একর জমি থাকতে হবে এবং কেন্দ্র চালানোর দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্দিষ্ট এলাকায় ১০০ থেকে ১৫০ একর অকৃষি জমি সংগ্রহ করা কঠিন। দেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুই বছর এমন কেন্দ্র চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। তাই বিগত সরকারের সময়ে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে দেশে একটি কোম্পানি গঠন করে সেই কোম্পানির নামে কেন্দ্র নিতে আবেদন করেছিল। কিন্তু এখন এত অল্প সময়ে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান এমন কোম্পানি করতে পারবে না।

পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি খুলতে অনেক সময় লাগবে। ৫০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যদি ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়, এর ২০ শতাংশ বৈধ অর্থ উদ্যোক্তাদের থাকতে হবে। বিদেশি বা লিড কোম্পানিকে আবার এই ২০ শতাংশ অর্থের অর্ধেকের বেশি দিতে হবে। এই শেয়ারের মালিকানা পেতে আগ্রহী বিদেশি কোম্পানিকে বিদেশ থেকে বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে মার্কিন ডলার দিতে হবে। সেই ডলার পাওয়ার সনদ নিয়ে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে জমা দিতে হবে। এরপর যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি গঠন করা যাবে। এরপর ওই বিদেশি কোম্পানির গত পাঁচ বছরের অডিট রিপোর্ট, আর্থিক রিপোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিতে হবে নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানবিশেষে এক বছরও লেগে যায়। ফলে এই দরপত্রে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং বিগত সরকারের সময়ে অনুমতি পাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোই অংশ নিতে পারবে।

শর্তপূরণে সক্ষম কেবল পুরোনোরা

যে ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নোয়াখালীর সুধারাম উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র। বিগত সরকারের আমলে সেখানে ১০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য গ্লোবাল গ্রিনজেন লিমিটেড অনুমতি পাওয়ার শেষ পর্যায়ে ছিল। শর্ত অনুযায়ী জমি থাকায় এবারও গ্লোবাল গ্রিনজেন দরপত্রে অংশ নেবে বলে জানা গেছে। সেখানে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে এই জমি নেই।

চট্টগ্রামের রাউজানে গত সরকারের আমলে ১৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি চূড়ান্ত হয়েছিল, যা ছিল চীনা রিসোর্স পাওয়ার হোল্ডিংস কোম্পানি লিমিটেড ও কর্ণফুলী এনার্জি লিমিটেড বাংলাদেশের। এখন সেখানে ১৮ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জমি ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকায় দরপত্রে অংশ নিলে তারাই অনুমতি পাবে।

কক্সবাজারের টেকনাফে ৩০ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে সেখানে একই ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতির শেষ পর্যায়ে ছিল, যেটি পেতে যাচ্ছিল প্রগতি কনসোর্টিয়াম ও পিডিএল গ্রিনি সোলার পাওয়ার লিমিটেডের কনসোর্টিয়াম। পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, দরপত্রের শর্তের কারণে এবারও ওই কনসোর্টিয়ামের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে বিগত সরকারের আমলে একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি প্রক্রিয়াধীন ছিল। এবারও সেখানে ২৫ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মৌলভীবাজারে ২৫ মেগাওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি বিগত সরকারের আমলে প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কেন্দ্রটি পেতে যাচ্ছিল ভিদুলঙ্কা, উইন্ড ফোর্স ও আইকোন এনার্জি নামের তিনটি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম। এবার সেখানে একই ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপত্র ডাকা হয়েছে। এই তিনটি কোম্পানির কনসোর্টিয়ামের কাছে কেন্দ্র করার প্রয়োজনীয় জমি আছে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর প্রতিষ্ঠান ডরিন পাওয়ারের মালিক এশিয়ান এনটেক পাওয়ার করপোরেশন এবং জাপানি প্রতিষ্ঠান এক্সিয়া পাওয়ার হোল্ডিং যৌথভাবে একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি পাওয়ার শেষ পর্যায়ে ছিল। সেখানে এবার একটি ৪৫ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাহজীব আলম সিদ্দিকী একটি হত্যাসহ তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ১ ডিসেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারছে না

দরপত্রে অংশ নিতে দুই বছর কেন্দ্র চালানোর অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এক থেকে দেড় বছরের অভিজ্ঞতা থাকায় সেগুলো এই দরপত্রে অংশ নিতে পারছে না। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্র চালানোর অভিজ্ঞতা মূলত বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কথিত জয়েন্ট ভেঞ্চার দেখিয়ে পূরণ করে। বিগত সরকারের আমলে যে কোম্পানিগুলোকে অনুমতির জন্য প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছিল, সেগুলোও ছিল দেশি ও বিদেশি কোম্পানির জয়েন্ট ভেঞ্চার। অভিযোগ রয়েছে, এই যৌথ মালিকানা মূলত কাগজ-কলমে, বাস্তবে মালিক হয় দেশি কোম্পানি।

প্রসঙ্গত, সারা বিশ্বে যখন সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় কমছে, তখন দেশে ব্যয় অনেক বেশি। ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে ব্যয় পড়ছে গড়ে ৫ দশমিক ৩ সেন্ট ও পাকিস্তানে ৩ দশমিক ২ সেন্ট। দেশে সৌরবিদ্যুতের যেসব চুক্তি করা হয়েছে বেসরকারি কেন্দ্রের সঙ্গে, তাদের উৎপাদন ব্যয় ১১ সেন্ট থেকে ১৯ সেন্ট পর্যন্ত। নতুন যে ১০টি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি হবে সেগুলোর উৎপাদন ব্যয় ৯ থেকে ১০ সেন্টের মধ্যে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিন্ডিকেট মুক্ত করতে না পারলে এই পরিবর্তনের কোনো মূল্য নেই। আর দরপত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই বিশেষ ব্যবস্থায় রাখতে হবে। এসব না করা হলে সবকিছু আগের মতোই চলছে, চলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত